আমি ফাইসা গেছি পর্ব-২+৩

0
266

#আমি_ফাইসা_গেছি(০২)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

কুশান শরবত খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।সে সবাইকে কিভাবে শরবত খেতে বারণ করবে সেটাই ভাবছে।
কিন্তু মিসেস চামেলি বেগম কুশানকে এদিক ওদিক তাকানো দেখে বললো,

বাবা খাও শরবত টা।এভাবে এদিক ওদিক কি দেখছো?লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নাই।

কুশান সেই কথা শুনে বললো,
আসলে আম্মু আমি শরবত বেশি একটা পছন্দ করি না।

ইরা,মিরা,লিরা কুশানের মুখে আম্মু ডাক শুনে বললো,
আম্মু?কে তোর আম্মু হয়?বিয়ে না হতেই আম্মু ডাকছিস?

কুশান তখন চামেলি বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো, সরি সরি। ভুল করে মুখ থেকে বের হয়ে গেছে।আসলে আন্টি আমি শরবত পছন্দ করি না।

চামেলি বেগম তখন বললো ঠিক আছে বাবা, কোনো প্রবলেম নাই।তাহলে তুমি অন্য কিছু খাও।এই বলে মিসেস চামেলি বেগম কুশানের হাতে এক বাটি নুডলস তুলে দিলো।

কুশান বাটিটা হাতে নিয়ে নুডুলস গুলো শুধু চামুচ দিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো।বাট তার মুখে দেওয়ার সাহস হচ্ছে না কিছুতেই।কে জানে নুডলসের মধ্যেও আবার তোরা পেট খারাপের ঔষধ দিয়েছে কিনা?

এদিকে ইরা, মিরা, লিরা শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে আবার সেগুলো রেখেও দিয়েছে চুপচাপ ।তারা তিনজন ফুসুরফুসুর করে বলছে,
আমরা কিন্তু কেউ কিছুই খাবো না।কে জানে কোন পরিবেশে খাবারগুলো তৈরি করেছে এরা?এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের হজম হবে না।তাছাড়া মেয়েটার মতিগতি বেশি একটা সুবিধার মনে হলো না।যদি আমাদেরকে বশ করার ঔষধ মিশিয়ে দেয় খাবারে?

মিঃ গোলাপ সাহেব লক্ষ্য করলেন ব্যাপারটা।তখন তিনি ইরা,মিরা,আর লিরার সামনে গিয়ে বললেন,
মা! শরবত টা একটু টেস্ট করো তোমরা। একদম গাছের টাটকা লেবু দিয়ে বানানো।এই বলে গোলাপ সাহেব আবার শরবতের গ্লাস গুলো ওদের হাতে দিয়ে দিলো।
ইরা,মিরা আর লিরা কোনো উপাই না দেখে এক চুমুক করে খেয়েই নিলো শরবত টা।

অন্যদিকে কামিনী চৌধুরীর ডায়বেটিস থাকার কারণে তিনি শরবতের গ্লাসটি অনেক আগেই রেখে দিয়েছেন।

কুশান চামেলি বেগমের সাথে কথা বলতেই এদিকে মিঃ জারিফ চৌধুরী আর শাহিন,মাহিন,তুহিন আর বাকিরা এক গ্লাস করে শরবত খেয়ে আবার আরেক গ্লাস নেওয়ার মতলব করছে।

কুশান তা দেখে চিৎকার করে বললো, বাবা আর খাও না প্লিজ।আর কতই খাবে?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো, শরবত টা বেস্ট টেস্টি হয়েছে।একদম তাজা লেবু আর মাল্টা মিশ্রিত শরবতের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে ঘরটা।নে ধর।একটু খেয়ে দেখ তুইও।

কুশান তখন বললো, না খাবো না আমি।তুমি বেশি করে খাও।

এদিকে ইরা, মিরা, লিরা চোখ দিয়ে ইশারা করলো তাদের হাজব্যান্ডদের ,সেই ইশারায় ভয় পেয়ে শাহিন,মাহিন আর তুহিন খালি গ্লাসগুলো টেবিলে রেখে দিলো।তারা আরেক গ্লাস নেওয়ার আর সাহস পেলো না।

কিন্তু জারিফ চৌধুরী আরো এক গ্লাস খেয়ে নিলেন।এই গরমে ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত না খেয়ে কি আর থাকা যায়?

কুশান সবার শরবত খাওয়া দেখে মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলো। আর বলতে লাগলো,
আল্লাহ কারো যেনো কোনো অসুবিধে না হয়।তা না হলে সবার অবস্থা একদম খারাপ হয়ে যাবে।আর তার সাথে তোরাদের মানসম্মান ও একেবারে ধুলোয় মিশে যাবে।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরীর পেটে গুড়ুমগুড়ুম ডাকতে লাগলো। সেজন্য তিনি ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলেন।এখন কি করে সবার মধ্য থেকে তিনি ওয়াশরুমে যাবেন?সেজন্য কষ্ট করেই চেপে বসে থাকলেন।

কিন্তু হঠাৎ কুশানের কাজিন সুমন, চামেলি বেগমকে বললেন,
আন্টি, আপনাদের ওয়াশরুম টা কোন দিকে?

চামেলি বেগম হাত দিয়ে ওয়াশরুম টা দেখাতেই মিঃ জারিফ চৌধুরী উঠে দিলেন এক দৌঁড়।কারণ তিনি আর থাকতে পারছিলেন না।
এদিকে জারিফ চৌধুরী কে এভাবে দৌঁড়ানো দেখে কামিনী চৌধুরী বললেন,
এই তোমার কি হয়েছে?এভাবে দৌঁড়াচ্ছো কেনো?

জারিফ চৌধুরীর কি আর উত্তর দেওয়ার সময় আছে?তিনি ওয়াশরুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলেন।

এদিকে সুমন চিল্লায়ে বলতে লাগলো, আংকেল আমাকে আগে যেতে দিন।আমার খুব অসুবিধা হচ্ছে,এই বলে সুমন কাঁদতে লাগলো।

এতো বড় একজন জোয়ান পোলাকে কাঁদতে দেখে লুতফা চৌধুরী বললো, এ বাবা কি হয়েছে তোর?এভাবে কাঁদছিস কেনো?
সুমন তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,
মা আমার খুব পেট ব্যাথা করছে।আমাকে এখুনি ওয়াশরুমে যেতে হবে।

হঠাৎ লুতফা চৌধুরী খেয়াল করলেন তার ও পেটের মধ্যে কেমন যেনো করছে?এরকম কেনো হচ্ছে তার?তিনি তো বেশি কিছু খান নি।

অন্যদিকে শাহিন মাহিন আর তুহিন বউ দের ভয়ে এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।তারা এক দৌঁড়ে তোরাদের বাড়ির পিছনের বাঁশ ঝাড়ে চলে গেলো।

এদিকে ইরা, মিরা, লিরাও ওদের পিছু পিছু চলে গেলো আর ডাকতে লাগলো, কি হয়েছে তোমাদের?এভাবে দৌঁড়ে এলে কেনো?

শাহিন তখন তার পেট চেপে রেখে বললো, তোমরা যাও প্লিজ এখান থেকে।আমাদের এমারজেন্সি একটা কাজ আছে।

ইরা তখন বললো এখানে আবার তোমাদের কিসের ইমারজেন্সি কাজ?

শাহিন এবার আর উত্তর দিলো না।কারন তার উত্তর দেওয়ার সময় নাই এখন।সেজন্য সে ওদের সবার সামনেই বেল্ট খুলতে লাগলো।

ইরা তা দেখে চিৎকার করে বললো, এই এই কি করছো?

শাহিন তখন ধমক দিয়ে বললো তোমরা সবাই যাবে প্লিজ।এতো প্রশ্ন কেনো করছো?

শাহিনের ধমক শুনে ইরা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো আর বললো তুমি আমায় বকলে?

তুহিন তখন আর না লুকিয়ে বললো, আমাদের না এখন ভীষণ হাগু পাচ্ছে।তোমরা যদি দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের হাগু করা দেখতে চাও তাহলে দাঁড়িয়েই থাকো।যতসব আবালের দল।সারাক্ষণ পিছে পিছে শুধু ঘুরঘুর করে।একটু শান্তিমতো হাগতেও দিচ্ছে না তারা।
লাস্টের কথাগুলো তুহিন বিড়বিড়িয়ে বললো।কারণ জোরে বললে তার আজকে খবর ছিলো।

–ওয়াক!থু,থু,থু।এই চলো চলো।এই বলে ইরা মিরা লিরা নাকে মুখে কাপড় দিয়ে সেখান থেকে চলো গেলো।

কিন্তু তারা হঠাৎ তিনজনই খেয়াল করলো তাদের পেট টাও কেমন যেনো ব্যাথা করছে।কিন্তু তারা ভাবলো এমনি হয় তো এরকম করছে।
কিন্তু ইরা তখন হাসতে হাসতে বললো,
এদের হাগু করা দেখে তো আমারও হাগু পাচ্ছে।

মিরা তখন বললো, আমারও।

লিরা তখন বললো কি বলছিস কি?It’s very strange.Iam having the same problem.

এই বলে তিন বোন তোরাদের পাশের বাড়িতে চলে গেলো।

কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে বাথরুমে কে যেনো আগেই চলে গেছে?ইরা,মিরা লিরার তো আর তর সইছে না।সেজন্য তারা তিনজন যার যেদিকে মন চায় সেদিকেই চলে গেলো।

এদিকে জারিফ চৌধুরী এখনো বের হন নি ওয়াশ রুম থেকে।সুমন আর লুতফা চৌধুরী কে সেজন্য তোরাদের পাশের বাসার ওয়াশ রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কামিনী চৌধুরী সবার এরকম অবস্থা দেখে গোলাপ সাহেব কে বললেন,
সত্যি করে বলুন আপনারা খাবারে কি মিশিয়েছেন?আপনাদের দেওয়া নাস্তা খেয়ে সবার এরকম অবস্থা কেনো হলো?

গোলাপ সাহেব সেই কথা শুনে রাগ হয়ে বললো, মুখ সামলিয়ে কথা বলুন।কি বলছেন কি এসব?আমাদের খাবার খেয়ে এরকম হয়েছে মানে টা কি?

কামিনী চৌধুরী গোলাপ সাহেবকে উচ্চস্বরে কথা বলা দেখে বললো,
দোষ করেছেন আবার চোখ রাঙ্গিয়ে কথাও বলছেন?আপনাদের খাবারে ভেজাল আছে দেখেই তো বলছি।

কুশান এবার কথা বলে উঠলো।আর কামিনী চৌধুরী কে বললো,
আম্মু মাথা ঠান্ডা করো।তুমি হাই প্রেশারের রোগী আম্মু।এতো উচ্চস্বরে তোমাকে কথা বলতে নিষেধ করেছে ডক্টর।

কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,
তুই চুপ থাকতে বলছিস কুশান?সবার কি হাল হয়েছে দেখছিস না?তোর আব্বু এখনো ওয়াশরুম থেকেই বের হয় নি।

কুশান তখন বললো এতে এনাদের কি দোষ?হয় তো এদের সবার পেটে আগে থেকেই প্রবলেম ছিলো । এজন্য এমনটা হয়েছে।আমিও তো এই খাবারই খেয়েছি কই আমার তো কিছু হলো না।তাছাড়া দেখো না সনিয়া এখনো খেয়েই যাচ্ছে, ওর ও তো কিছু হচ্ছে না।

সনিয়া হলো কুশানের আরেক কাজিন।সুমনের বোন।সনিয়া নাস্তা খাওয়া শেষ করে যেই শরবতের গ্লাসে হাত দিয়েছে ঠিক তখনি কুশান ওর হাত থেকে শরবতের গ্লাস টা কেড়ে নিয়ে বললো, আর কতই খাবি সনিয়া?রেখে দে।বাসায় যাবো এখন আমরা।

সনিয়া তখন বললো আমি তো শরবত খাই নি ভাইয়া।একটু খাই।

কুশান তখন ফিসফিসিয়ে বললো চুপ থাক বোন।তুই আর আমি হলাম একমাত্র সাক্ষী। এই বলে কুশান তার পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে সনিয়ার হাতে দিয়ে বললো সবাইকে বলবি তুই ও সবকিছুই খেয়েছিস।তবুও তোর কিছুই হয় নি।

সনিয়া একশো টাকার নোটটা কুশানের হাত থেকে নিয়ে হেসে হেসে বললো আচ্ছা বলবো।
সনিয়া হলো টাকার পাগল।তাকে এক দুইটা নোট দিলেই চুপ করে রাখা যায়।

সবার এ অবস্থা দেখে তোরা তার আম্মুকে বললো,আম্মু সবার জন্য স্যালাইন বানাও।আর আব্বুকে ডাক্তার ডেকে আনতে বলো।

চামেলি বেগম তোরার কথা শুনে তাকে টেনে নিয়ে ঘরের মধ্যে গেলো।আর বললো,সত্যি করে বল দেখি তুই আবার শয়তানি করে খাবারে কিছু মিক্সড করিস নি তো?

তোরা সেই কথা শুনে বললো,আমি আবার কখন কি মিক্সড করতে গেলাম?

চামেলি বেগম তখন বললো,
তাহলে যে পাত্রপক্ষই আসে সবাই কিছু না কিছু সমস্যায় ভোগে কেনো?
একদিন খাবারে লবণ বেশি হয়,কোনোদিন আবার শরবতের মধ্যে চিনির বদলে শুধু লবণ থাকে।সেদিন পানির মোটর নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।যার জন্য কেউ খাবার খেয়ে হাত ধোয়ার জন্যও পানি পায় নি।আর আজ সবাই দৌঁড়ে দৌঁড়ে শুধু বাথরুমে যাচ্ছে।

তোরা তার মায়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নিজেই স্যালাইন বানাতে গেলো।
এদিকে মিঃ জারিফ চৌধুরী হাঁপাতে হাঁপাতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বললো,
কেউ একটু এক গ্লাস স্যালাইনের পানি দিবে আমাকে?

কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তোমার আসলেই লজ্জা শরম নাই।এতোকিছুর পরও আবার ওনাদের হাতের খাবার চাচ্ছো?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো,ওনাদের খাবার খেয়ে এমন হয় নি আমার।আসলে আমি বাড়ি থেকে আসার সময় ফ্রিজে রাখা দই এর হাড়া টা শেষ করে এসেছি।সেজন্য মনে হয় এমন হয়েছে।
কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে জারিফ চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো, তোমাকে না দই খেতে বারণ করেছি?তারপরেও চুরি করে কেনো খেয়েছো দই?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো এখন তর্ক করার সময় নাই গিন্নী।আগে আমাকে বাঁচাও আগে।এই বলে জারিফ চৌধুরী চিৎকার করে আবার ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
এদিকে তোরা স্যালাইনের পানি নিয়ে এসে দেখে জারিফ চৌধুরী আবারও ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে।

এবার ইরা মিরা লিরা হাঁপাতে হাঁপাতে এলো।আর বললো মা আমাদের বাঁচাও।আমরা তো শেষ হয়ে গেলাম।এই বলে তিন বোন মেঝেতেই শুয়ে পড়লো।

কামিনী তার মেয়েদের এমন অবস্থা দেখে বললো, ও আল্লাহ, কি হবে এখন?আমার মেয়েরা এমন করছে কেনো?নিশ্চয় এরা খাবারে কিছু মিশিয়েছে।

কামিনী চৌধুরী তখন চিৎকার করে শাহিন, মাহিন আর তুহিন কে ডাকতে লাগলো।

ইরা তখন হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,মা, ওদের অবস্থাও খারাপ।ওরা তো পাশের এক বাঁশের ঝাঁড়ে গিয়ে বসে আছে।

কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, ছিঃ ছিঃ ছিঃ। কি লজ্জাজনক ব্যাপার?মানসম্মান তো একেবারে ধুলোয় মিশে গেলো।

তোরা এবার ইরা,মিরা,লিরার কাছে স্যালাইনের পানি নিয়ে আসলে তারা রাগ করে ফেলে দিলো গ্লাসগুলো।
আর চিৎকার করে কুশানকে বললো,
কুশান তুই এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?দেখছিস না আমাদের অবস্থা?শিঘ্রই ডাক্তার ডেকে আন।

চামেলি বেগম সেই কথা শুনে বললো, আপনারা প্লিজ শান্ত হন।সবাই ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবেন।তোরার আব্বু ডাক্তার আনতে গেছে।

এবার মিসেস লুতফা চৌধুরী আর সুমন গোঙরাতে গোঙরাতে এলো।আর এসেই একটা বিছানায় দুইজনই ধপাস করে শুয়ে পড়লো।
তোরা তখন তাদের কে এক গ্লাস স্যালাইনের পানি খেতে বললো।লুতফা আর সুমন স্যালাইনের কথা শোনামাত্র ঢকঢক করে খেতে লাগলো।আর বললো,আল্লাহ এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও। আর খাবো না বাসি ভাত।আল্লাহ বাঁচাও আমাদের।

কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তোরা বাসি ভাত আবার কখন খেলি?

লুতফা তখন বললো, বুবু, আমি সুমন আর সনিয়া আসার সময় মাংস দিয়ে বাসি ভাত খেয়ে এসেছিলাম।সেজন্যই হয় তো এরকম সমস্যা হচ্ছে।

কামিনী তখন বললো তোদের সবার যে কি হয়েছে কিছুই বুঝছি না।তোরা বুঝতে কেনো পারছিস না সহজ ব্যাপার টা।বাসি ভাত খেয়ে পেট খারাপ হয় নি তোদের।এ বাড়ির অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এরকম হয়েছে।

লুতফা সেই কথা শুনে বললো, জানি না কিছু আমি।আগে আমাকে ভালো করো বুবু।এই বলে মাও বেটা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো।

এবার শাহিন,মাহিন আর তুহিন ও ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
তোরা তখন ওদের তিনজনকেই স্যালাইনের পানি দিলো।
শাহিন,মাহিন,তুহিন ও স্যালাইনের পানি খেয়েই শুয়ে পড়লো বিছানায়।

কামিনী চৌধুরী তখন চিৎকার করে বললো, এই তোমরা সবাই এভাবে শুয়ে পড়লে কেনো?বাড়ি যাবে কখন?চলো আমরা বাড়ি যাই।আর এক মুহুর্ত থাকতে চাই না এ বাড়িতে।
কিন্তু শাহিন,মাহিন,তুহিন একদম নেতিয়ে পড়েছে।সেজন্য কেউ কোনো উত্তর দিলো না।

কামিনী বেগম তখন কুশানের উপর রাগ দেখিয়ে বললো,তুই এভাবে হাবলু দের মতো দাঁড়িয়ে থেকে কি দেখছিস?তোর জ্ঞান বুদ্ধি কবে হবে বল তো?সবাই কে ধরে ধরে গাড়িতে ওঠা।

কুশান যেই তার দুলাভাইদের ওঠাতে লাগলো তখনি
জারিফ চৌধুরী হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বললো, আমি আজ আর বাড়ি যেতে পারবো না।এখানেই বোধ হয় আজ থাকতে হবে আমাকে।আমার শরীরে আর কোনো শক্তি নাই।এই বলে তিনিও ধপাস করে শুয়ে পড়লেন।

কিছুক্ষন পর গোলাপ সাহেব ডাক্তার নিয়ে আসলেন।আর ডাক্তার সকল কে চেকাপ করে ঔষধ দিলেন।তোরা,মিসেস চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব সবার বেশ খাতির যত্ন করলেন।তাদের সবাইকে ঔষধ খাওয়ালেন।বিপদে পড়ে সবাই আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো ঔষধ। কারণ তাদের সুস্থ হওয়া দিয়ে কথা।সবাই ঔষধ খেয়ে আবার রেস্ট নিলো।

সবাই যখন মোটামুটি সুস্থ হলো তখন কামিনী চৌধুরী সবার উদ্দেশ্যে বললো,সত্যি করে বলো দেখি এবার?এখানে আসার আগে কে কে পেট খারাপ নিয়ে এসেছিলে?আর কার কার পেট ভালো ছিলো?তাহলেই প্রমান হয়ে যাবে।

সুমন তখন বললো, চাচি আমার আগে থেকেই একটু পেটে প্রবলেম ছিলো।
শাহিন বললো,আম্মা আমার পেট তো ভালোই ছিলো।মনে হয় এই বাড়ির খাবার খেয়েই পেটে এরকম প্রবলেম হয়েছে।

কুশান তখন বললো কিন্তু দুলাভাই আমি আর সনিয়াও তো এই খাবারই খেয়েছি।কই আমাদের তো কিছু হলো না?

ইরা,মিরা লিরা তখন কুশান কে ধমক দিয়ে বললো,
আমরা তো ভালো মানুষ ই এসেছিলাম।কিন্তু আমাদের সবার এমন হাল কেনো হলো?
আর তুই আমাদের বাড়ির ছেলে হয়ে সেই থেকে এই বাড়ির পক্ষে কথা বলছিস?তোর হয়েছে টা কি কুশান?

শাহিন তখন বললো তুই আবার এই বাড়ির মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছিস নাকি?
মাহিন বললো,কি রে কথা বলিস না কেনো?তোর কি মেয়ে পছন্দ হয়েছে?

কুশান তার দুলাভাইদের প্রশ্নে বোবার মতো চুপ হয়ে রইলো।সে কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছিলো না।সে চিন্তা করতে লাগলো যদি সে হ্যাঁ বলে তাহলে তোরার সাথে তার বিয়ে হয়ে যাবে।আর তোরাকে বিয়ে করা মানে জেনে শুনে বিষ পান করা।অন্যদিকে যদি সে না বলে তাহলে তোরার সাথে তার বিয়ে হবে না।কিন্তু তবুও তো তোরা তার পিছু ছাড়বে না।আবার সেই আগের মতো ঘুরঘুর করবে। আর সারাদিন শুধু বিয়ে করো বিয়ে করো বলে ঘ্যানঘ্যান করবে।এখন কি করা যায়?
কুশান তখন ভাবলো হ্যাঁ ই বলি।বিয়ের পর হয় তো তার পাগলামি কিছু টা হলেও কমবে?তাছাড়া আমাদের বাড়িতে এতোগুলো মানুষের মধ্যে সে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না কিছুতেই।আর আজকের এই পাত্রী দেখতে আসাকে সারপ্রাইজড হিসেবে রাখা যাবে।তা না হলে এই ঘটনাকে ইস্যু করে নিশ্চিত আজ আবার তার মাথা ফাটিয়ে দেবে।

তুহিন কুশানকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো,নীরাবতাকে কি সম্মতির লক্ষ্মণ ধরে নিবো শালাবাবু?

কুশান তো এবার আরো বেশি সুযোগ পেয়ে গেলো।এমনিতেও তো সে তার আর তোরার সম্পর্কের কথা জীবনেও বলতে পারতো না।এই সুযোগে কুশান বলেই ফেললো, হ্যাঁ,মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে।

কুশানের কথা শুনে ইরা,মিরা আর লিরা একসাথে বলে উঠলো কি?এতো কিছুর পরও তুই বলছিস তোর মেয়ে পছন্দ হয়েছে?

কুশান তখন আবারও বললো হ্যাঁ হয়েছে।

তোরা তখন হঠাৎ তার রুম থেকে বের হয়ে এসে বললো,আপনার পছন্দতেই তো আর হবে না বিয়ে।আমারও একটা নিজস্ব মতামত আছে।

তোরার কথা শুনে সবাই অবাক।এই মেয়ে বলে কি এসব?
কুশান তখন বললো কি মতামত?

তোরা তখন বললো, আমার আপনাকে পছন্দ হয় নি।আর আপনাদের ফ্যামিলিকেও না।আপনাদের ফ্যামিলিতে বউ হয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই আমার।

মিসেস চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব সেই কথা শুনে তোরার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, মা কি বলছিস এসব?

–হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি।আমি এই ছেলেকে বিয়ে করবো না।

কামিনী চৌধুরী তোরার কথা শুনে হঠাৎ তোরার কাছে এগিয়ে এসে বললো,
তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।তুমি আমাদের বাড়ির ছেলেকে রিজেক্ট করে দিলে?আজ পর্যন্ত এমন কোনো মেয়ের জন্ম হয় নি যে আমার ছেলেকে অপছন্দ করবে।আর এমন কেনো পরিবারের সৃষ্টি হয় নি যে আমাদের পরিবারের সাথে আত্নীয়তা করতে চায় না।যেখানে আমরা তোমাকে রিজেক্ট করবো সেখানে তুমি আমাদের মুখের উপর না করে দিলে?
আমার না ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে ঠিক কি কারণে আমাদের পরিবারকে তুমি অপছন্দ করছো?আর কি কারনে কুশান কে পছন্দ না তোমার?

কুশান তার মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে ঢোক গিলতে লাগলো।সে মনে মনে ভাবলো এ কোন নতুন ঝামেলার সৃষ্টি করলো তোরা?সে এখন কি উত্তর দেবে?ভুল করে যদি তাদের রিলেশনের কথা বলে ফেলে?তখন কি হবে তার?

চলবে,

#আমি_ফাইসা_গেছি(০৩)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

আপনাদের বাড়ির ছেলে একজন প্রতারক। নাম্বার ওয়ান ধোঁকাবাজ।সে এতোদিন লুকিয়ে লুকিয়ে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করেছে।আর আজ বিয়ে করার জন্য নাচতে নাচতে আপনাদের সাথে পাত্রী দেখতে এসেছে।এই রকম দুই নাম্বার লুচ্চা ছেলেকে আমি কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না।

তোরার কথা শুনে কুশানের আবার ১০১ ডিগ্রি জ্বর এসে গেলো।সে যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো ঠিক সেটাই ঘটে গেলো।

এদিকে তোরার কথা শুনে কুশানের ১০১ ডিগ্রি জ্বর আসলেও তার পরিবারের প্রতিটা সদস্যের ২০০ ডিগ্রি জ্বর এসে গেলো।এমনিতেই ওয়াশরুমে যেতে যেতে প্রত্যেকের শরীর ভীষণ ভাবে দূর্বল তার মধ্যে তোরার এমন উদ্ভট কথা শুনে তারা আরো বেশি দূর্বল হয়ে গেলো।

কিন্তু কুশানের তো এভাবে চুপ থাকা যাবে না।তোরাকে এখনি না থামালে এই মেয়ে সবকিছু প্রকাশ করে দিবে।তখন তার মানসম্মানের তেরো টা বেজে যাবে।তার পরিবারের প্রতিটা সদস্যের তাকে নিয়ে করা গর্ব মুহুর্তের মধ্যে সাগরের অতল গহবরে তলিয়ে যাবে।তাদের বংশের মানসম্মান একেবারে
ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।কারন তাদের পরিবারের কোনো ছেলে মেয়েই বিয়ের আগে প্রেম করতে পারে না।বিয়ের আগে কেউ প্রেম করলে তাকে বাড়ি থেকে একদম ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হয়।

সেজন্য কুশান তোরার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

আমার সোনাপাখি,আমার জানপাখি,আমার টুনটুনি টা।তুমি তো সবসময় এটাই চাইতে যে আমি তোমাকে যাতে বিয়ে করি।তাহলে আজ এমন করতেছো কেনো?প্লিজ আমার নামে আর উল্টাপাল্টা কথা বলো না।রাজি হয়ে যাও বিয়ে করতে আমাকে।তাহলেই ঝামেলা মিটমাট হয়ে যাবে।

তোরা তখন চিৎকার করে বললো,না আমি রাজি হতে পারবো না।তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছো।তুমি বলেছো তোমার ফ্যামিলি তোমাকে এক্ষুনি বিয়ে করাবে না।কিন্তু তুমি ঠিকই দলবল নিয়ে অন্য কোনো মেয়েকে দেখতে এসেছো?

কুশান তো পড়ে গেলো মহা বিপদে।সে এখন কিভাবে তোরাকে বুঝায় যে তার দুলাভাই রা তাকে চালাকি করে নিয়ে এসে এখানে।সে জানতো না তারা আজ মেয়ে দেখতে আসবে।তার দুলাভাই রা বলেছে তারা কোনো এক রিলেটিভের বাড়ি যাবে।
কিন্তু যে করেই হোক এখন তোরার মুখ বন্ধ করতেই হবে।তা না হলে এই মেয়ে আজ তার মানসম্মানের তেরো টা বাজিয়েই ছাড়বে।
কিন্তু কিভাবে করবে সেটা?

এদিকে তোরার মুখে কুশানের নামে এসব আজগুবি কথা শুনে সবাই কুশানের কাছে এগিয়ে আসলো আর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো।
কিন্তু ইরা, মিরা,লিরা চুপ করে থাকতে পারলো না।তারা তিনজন একসাথে বললো,

এ ভাই?এই মেয়ে এসব কি বলছে?একবার বলছে তুই অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করিস আবার এখন বলছে তুই ওর সাথে প্রতারণা করেছিস?ব্যাপার কি ভাই?তুই কি এই মেয়েকে আগে থেকে চিনিস নাকি?

কুশান তার বোনদের প্রশ্নের কি উত্তর দেবে সেটাই ভাবতে লাগলো।
এদিকে কুশানকে চুপচাপ থাকা দেখে সবাই ভাবলো সত্যি কুশান এই মেয়েকে আগে থেকেই চিনতো তা না হলে কুশান কোনো রিয়্যাক্ট করছে না কেনো?

কুশান আর কোনো উপাই না দেখে সে তোরার কাছে গিয়ে বললো,

এই মেয়ে তোমার প্রবলেম মাথায় না বিয়েতে?যদি মাথাতে প্রবলেম থাকে তাহলে সেটা বলে দিতে পারো।পাবনা পাগলা গারদে আমি নিজে অভিভাবক সেজে রেখে আসবো।আর যদি বিয়েতে প্রবলেম হয়ে থাকে তাহলে এক কথায় বলে দাও যে তুমি রাজি না বিয়েতে।তাহলেই আমরা ভালোই ভালো চলে যাই।তবুও আমার নামে এসব মিথ্যা বদনাম দিও না।আমি কত টা সহজ সরল আর ভদ্র ছেলে জানো?এই বলে কুশান কামিনী চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো,
আম্মু তুমি কিছু বলছো না কেনো?

কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে তোরার কাছে গিয়ে বললো,হ্যাঁ।আমাদের কুশান যথেষ্ট ভদ্র ছেলে।

কুশান তখন বললো, শুধু এটুকুই?আমাকে নিয়ে তোমার সেই বিখ্যাত কয়েকটা উক্তি এই মেয়েটাকে শুনিয়ে দাও তো।তাহলেই আমার নামে এসব বদনাম করা অফ করবে।

কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে তার শাড়ির আঁচল দিয়ে কুশানের মুখমন্ডল মুছিয়ে দিয়ে বললো,

কুশানের মতো ছেলে আজকাল দেখাই যায় না।সে ভুল করেও কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না।বরং মেয়েরাই তোকে দেখে শিস দিতে থাকে।তাকে এখনো আমাকেই ঘুম পাড়িয়ে দিতে হয়।মাঝে মাঝে তো আমাদের ঘরেই ঘুমায়,আমার হাতের মাখানো ভাত না খেলে তার পেটই ভরে না।আমার পারমিশন ব্যাতিত সে এক কদমও হাঁটে না।আর হ্যাঁ আমার মাথায় তেল দিয়ে দেওয়া,চুল আঁচড়িয়ে দেওয়া,আমাকে সকাল বেলা হাঁটতে নিয়ে যাওয়া সব কাজ আমার এই ভদ্র আদরের ছেলেটা করে থাকে।এই ছেলে অসভ্য কি করে হতে পারে?এক কথায় আমার ছেলে একদম মা ভক্ত ছেলে।তাই না বাবা?

কুশান তার মায়ের কথা শুনে একদম ভদ্র ছেলেদের মতো ঠোট উল্টিয়ে শান্ত কন্ঠে মাথা নাড়িয়ে বললো হ্যাঁ মা।

তোরা কুশানের এমন ঢং করা দেখে চিৎকার করে বললো, কুশান?অভিনয় করা বাদ দিবে?। না আমি তোমার সবকিছু ফাঁস করে দিবো?আমার কিন্তু মেজাজ এখন টপে আছে।

কুশান সেই কথা শুনে জারিফ চৌধুরীর কাছে গিয়ে ন্যাকামো কন্ঠে বললো বাবা,
এই কোন মেয়েকে তোমরা দেখতে নিয়ে এসেছো?যে আমার নামে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করছে।চলো তো আমরা তাড়াতাড়ি চলে যাই এখান থেকে।চলো বাবা চলো।এই বলে কুশান সবাইকে নিয়ে যেতে ধরলো।কারণ তোরার সামনে থাকলেই কুশানের বিপদ দ্বিগুন গতিতে বাড়তে থাকবে।পরে সে তোরাকে মেনেজ করে নিবে।এখন আগে তার নিজের প্রাণ বাঁচাতে হবে।

কিন্তু জারিফ চৌধুরী বললো,
দাঁড়া দাঁড়া।এতো তাড়াহুড়ো করছিস কেনো?এখনি যাবো নাকি আমরা?এই মেয়ে তোর ব্যাপারে এসব ভুলভাল কথা বলার সাহস পেলো টা কিভাবে?তার বিচার আগে করতে হবে না?

কুশান তার বাবার কথা শুনে আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো।তার বাবা আবার না জানি কেঁচো খুড়তে কেউটো বের করে নিয়ে আসে?

কিন্তু জারিফ চৌধুরী কুশানকে অবাক করে দিয়ে বললো,
আমাকেও একটু তোর সম্পর্কে দুই এক লাইন বলতে দে?আমিও একটু বুঝিয়ে দেয় আমার ছেলে কেমন?

জারিফ চৌধুরী এমনিতেই ভীষণ অসুস্থ বোধ করছেন। তার ইচ্ছা করছে না কথা বলতে।কিন্তু যেখানে তার ছেলের চরিত্র নিয়ে টানাটানি হচ্ছে সেখানে তিনি কি করে চুপ থাকেন?সেজন্য কষ্ট করেই তোরার সামনে গিয়ে আঙুল দেখিয়ে বললেন,

এই মেয়ে মুখ সামলিয়ে কথা বলো।আমার ছেলের নামে কি সব ভুলভাল বকছো?তুমি বোধ হয় জানো না আমার ছেলে কতটা ভদ্র?আর সে করবে এসব ফালতু প্রেম পিরিতি?যে ছেলেকে এখনো আমি গোসল করে দেই,আমার পারমিশন ব্যাতিত যে বাথরুমে পর্যন্ত যায় না,যার জন্য অফিস থেকে ফেরার সময় এখনো চিপস আর চকলেট নিয়ে আসতে হয়ে সেই ছেলে এসব অসভ্য কাজ কি করে করতে পারে?

এদিকে গোলাপ সাহেব আর চামেলি বেগম কুশানের বাবা মার কথা শুনে তো বেঁহুশ হয়ে পড়ে যেতে ধরলেন।এ কোন ছেলের সাথে তারা তাদের মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে?এই ছেলে তো এখনো মায়ের আঁচল আর বাবার লুঙ্গি ধরে ঘুরে বেড়ায়।এই ছেলে বিয়ে করে করবে টা কি?এ ছেলে তো পুরাই ভাদাইমা টাইপের।এই ছেলে কিছুতেই তাদের মেয়েকে কন্ট্রোল করতে পারবে না।

হঠাৎ ইরা মিরা লিরা একসাথে আসলো তোরার সামনে।ইরা এসে বললো,

আচ্ছা এমন নয় তো তুমিই অন্য ছেলের সাথে প্রেম পিরিতি করে বেড়াচ্ছো?

মিরা বললো,
আর সেজন্যই আমার সোনার টুকরো ভাই টাকেও তোমার মতোই ভাবছো?

লিরা তখন বললো,My brother is a piece of diamond.Not a bad girl like you. Do you understand?

তোরা কুশানের বোনদের কথা শুনে একদম কেঁদে ফেললো।সে ছলছল নয়নে কুশানের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,
কুশানের বোনরা তাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলছে তবুও কুশান কোনো প্রতিবাদ করছে না?এখনো সে তার অভিনয় চালিয়েই যাচ্ছে।এই ছেলের সাথে সে এতোদিন ধরে প্রেম করছে।যার নিজের কোনো ক্ষমতা নাই গার্লফ্রেন্ডের মানসম্মান রক্ষা করার?

কুশান তার বোনদের মুখে তোরার নামে এসব কথা শুনে নিজেও ভীষণ কষ্ট পেলো।সামান্য একটা মিথ্যা ঢাকতে গিয়ে কতগুলো মিথ্যা কথা বলতে হচ্ছে তাকে।তার উপর এখন তার ফ্যামিলির লোকজন তোরাকেই গালমন্দ করছে।না তার আর চুপ থাকা চলবে না।সত্য টা তাকে প্রকাশ করতেই হবে।এতে যা হবার হবে।তাকে তো আর মেরে ফেলবে না কেউ।হয় তো দু চারটা চড়ই মারবে সবাই মিলে।এরকম চড়,ঘুষি,খামচি তো সে রোজ রোজই তোরার হাতের খায়।ফ্যামিলির লোকদের হাতের কিল ঘুষি খেলে কি এমন হবে?

কুশান যেই বলতে যাবে সত্য কথা টা ঠিক তখনি গোলাপ সাহেব আর চামেলি বেগম চিৎকার করে বলে উঠলো,

আপনারা কি শুরু করেছেন বলেন তো?আপনারা আমার বাড়িতে এসে আমার মেয়েকেই গালমন্দ করছেন?আপনারা এতো বড় সাহস পেলেন টা কোথায়?আমাদের মেয়েটাকে কি পাগল পাইছেন যে যা মুখে আসছে তাই বলছেন।সবাই দয়া করে চলে যান আমাদের বাড়ি থেকে।এরকম ফ্যামিলিতে আমরা আমাদের মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে দিতে পারবো না।আমাদের মেয়ে কিন্তু হাজার টা নয়।একটা মাত্র মেয়ে আমাদের।আর আমাদের মেয়েও কিন্তু কম না।কুটিতে একটা পাওয়া যাবে এমন মেয়ে।আমাদের মেয়েকে অপছন্দ করবে এমন বাপের বেটার এখনো জন্ম হয় নি।আর আমাদের ফ্যামিলির যে সুনাম দশ কদম হেঁটে সবার মুখে শুনে আসুন।

ইরা মিরা লিরা তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো, তা তো দেখতেই পেলাম কেমন ফ্যামিলি আপনাদের?শরবত আর একটু নাস্তার আয়োজন করেছেন।সেটাও আবার অস্বাস্থ্যকর ছিলো।যা খেয়ে আবার সবাইকে বার বার বাথরুমে যেতে হয়েছে।আর যে মেয়ের এতো প্রশংসা করছেন সে তো এক নাম্বারের আনস্মার্ট আর অভদ্র।আমাদের পছন্দ হয় নি তাকে।এই চলো চলো সবাই।কার মুখ দেখে যে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেছি?

ইরা,মিরা লিরার কথা শুনে তোরা শুধু রাগে ফোসফাস করছে।সে মোটেও অন্য মানুষের কথা হজম করার মেয়ে নয়।কেউ কিছু বললে সে তার উলটো দুই চারটা বেশি কথা শুনিয়ে দেয়।কিন্তু আজ সে কোনো প্রতিবাদ করতে পারছে না।এই দুঃখ কি মেনে নেওয়া যায়?সেজন্য তোরার মনে ভীষন জিদ উঠলো।সে ঠিক করলো কুশানকে বিয়ে করে ওদের পরিবারে ঢুকে সবার জীবন সে ত্যানাত্যানা করে ছাড়বে।
আর এই কুশান বেটাকে তো রাম ধোলাই তাকে দিতেই হবে।যে একের পর এক মিথ্যা বলেই যাচ্ছে।কি সুন্দর অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে।ওই কুশান যদি নাটক করতে পারে তাহলে সে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা শুরু করে দিবে এখন।
কিন্তু তার আগে তো তাদের ফ্যামিলিকে এই মিথ্যা অপবাদ থেকে বাঁচাতে হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।

তোরা তখন বললো, আপনাদের যখন সন্দেহই হচ্ছে আমাদের খাবার নিয়ে।তাহলে আপনাদের সামনে আমরা সেই খাবার খেয়ে দেখাচ্ছি।

এই বলে তোরা হঠাৎ ঢকঢক করে এক জগ শরবত খেয়ে নিলো।আর তার বাবা মাকেও খাওয়ালো।তারপর একটু করে নাস্তাও খেলো।
তোরা তখন বললো,নিন আমরাও এই শরবত আর নাস্তা খেয়ে নিলাম।যদি খাবারে প্রবলেম থেকেই থাকে তাহলে আমাদের সবার অসুবিধা হবে।আর যদি আমাদের কিছু না হয় তাহলে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার কারণে আমরা আপনাদের উপর উলটো মানহানির মামলা করবো।

কুশান তোরার শরবত খাওয়া দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো।তোরা এটা করলো টা কি?এইভাবে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কি দরকার ছিলো?যেখানে সবাই ওয়াশরুমে যেতে যেতে একদম নেতিয়ে পড়েছে সেখানে জেনেবুঝে কি করে তোরা এই কাজ করলো?

কিন্তু এতোগুলো শরবত খেয়েও তোরার কিছুই হলো না।যখন তোরার কিছুই হলো না।গোলাপ সাহেব আর চামেলি বেগমও ঠিকঠাকভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেন,
তখন তোরা বললো,
এরপরেও বলবেন আমাদের খাবারে ভেজাল ছিলো?আসলে ভেজাল তো আপনাদের মনে?আপনারা নিজেদের কে নিয়ে খুব বড় কিছু ভাবেন।শুনে রাখুন তোরাও খন্দকার বংশের মেয়ে।
যারা আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলছে আর আমাদের পরিবারের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে সে পরিবারে বউ হয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই আমার।সেই পরিবারে গিয়ে আমি কখনোই ভালো থাকতে পারবো না।

তোরার কথা শুনে জারিফ চৌধুরী এগিয়ে এসে বললেন,মা,তোমার দেখি খুবই সাহস।যে খাবার খেয়ে সবাই শুধু বাথরুমের দিকে দৌঁড়াতে লাগলো তুমি সেই খাবার নির্ভয়ে খেয়ে ফেললে?একবারও ভয় লাগলো না যদি সত্যি সত্যি তোমারও পেট খারাপ হয়ে যেতো?

তোরা তখন বললো আংকেল আমি জানি আমাদের খাবারে কোনো ভেজাল নাই।আপনারা অযথাই ভুলভাল ভাবছেন আমাদের নিয়ে।সেজন্য নির্ভয়ে খেয়ে ফেললাম।এখন তো প্রমাণ হলো?

ইরা মিরা লিরা তখন নিজেরাই ফুসুরফাসুর করেতে লাগলো।ইরা বললো,
কি রে তাহলে কি আমাদের পেটে আগে থেকেই প্রবলেম ছিলো?এটা কি করে হতে পারে?মিরা তখন বললো কি জানি বুঝতে পারছি না। আমি তো এখানে আসার আগে বাদাম খেয়ে এসেছিলাম।লিরা তখন বললো,আমি তো কিছুই খাই নি।তাহলে আমার কেনো প্রবলেম হলো?
ইরা তখন বললো, মেয়েটা বড্ড চালাক।নিশ্চয় চালাকি করেছে।
অন্যদিকে শাহিন মাহিন তুহিন ও চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।তারা তিনজন ইরা মিরা লিরার কাছে গিয়ে বললো,এটা কি ধরনের আজগুবি কথা?সবার একসাথে কি করে পেট খারাপ হতে পারে?যদি এ বাড়ির খাবারে প্রবলেম থাকতোই তাহলে তোরার কিছু হলো না কেনো?
ইরা তখন বললো, এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ওরা অভ্যস্ত। এজন্য বোধ হয় ওদের কিছু হলো না।

কামিনী হঠাৎ এগিয়ে এসে বললো, সবই বুঝলাম।কিন্তু তুমি কুশানের নামে এসব বদনাম কেনো করলে?আমার ছেলের নামে কেনো এসব ভুলভাল বকলে?

কুশান তার মায়ের প্রশ্ন শুনে মনে মনে বললো, আবার বিপদ?এ যাত্রায় আর তার রক্ষা নাই।কুশান সেজন্য চোখ বন্ধ করে থাকলো।

কিন্তু তোরা হঠাৎ তার আসল রুপ পালটিয়ে ফেললো।সে ভাবলো তাকে যে করেই হোক এখন সবার মন জয় করতেই হবে।সে হঠাৎ বাঘিনী থেকে এবার ভেঁজা বিড়াল হয়ে গেলো।
তোরা সেকেন্ডের মধ্যেই তার রুপ পালটিয়ে হঠাৎ সে তার শাড়ির আঁচল মাথায় দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,

সরি সবাইকে।আমার আচরনে মন খারাপ করলে ক্ষমা করে দিয়েন প্লিজ।আমি আসলে এতোক্ষণ পাত্রর সাথে অভিনয় করছিলাম।আমি দেখতে চাইছিলাম পাত্রের নামে এসব মিথ্যা অপবাদ দিলে পাত্র কেমন আচরণ করে?আর আপনারা আপনাদের ছেলেকে কত টা বিশ্বাস করেন?

সবাই একসাথে অবাক হয়ে বললো,মানে?

তোরা তখন কুশানের সামনে গিয়ে তার চোখে চোখ রেখে মায়াবি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
যে ছেলে তার নামে এমন মিথ্যা অভিযোগ শুনেও তার রাগ কে কি সুন্দর কন্ট্রোল রাখতে পারে সে ছেলে কখনো খারাপ হতেই পারে না।আর আপনাদের ছেলের নামে যেসব কথা শুনলাম খুব ভালো লাগলো শুনে।এমন ভদ্র ছেলে আসলেই দেখা যায় না।আর আপনারা তাকে কত ভালোবাসেন?সত্যি আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি।যারা তাদের ছেলেকেই এতো ভালোবাসে না জানি ছেলের বউ কে আরো কত ভালোবাসবেন?

কুশান এতোক্ষন অন্য জগতে ছিলো।
কিন্তু তোরার এমন কথা শুনে সেই জগত থেকে ফিরে এলো।আর ভাবতে লাগলো হঠাৎ তোরার মুখে এতো মধু কই থেকে এলো?তোরা নিশ্চয় অন্য কোনো মতলব করছে।

জারিফ চৌধুরী এবার তোরার কাছে এগিয়ে এসে বললো,বাহঃ দারুন বুদ্ধিমতি তো তুমি?সত্যি প্রশংসা না করে পারলাম না।তোমার এমন আজেবাজে কথা শুনে আমরা কুশানের সাথে কেমন আচরণ করি আর কুশান কেমন রিয়্যাক্ট করে সেটাই দেখতে চেয়েছিলে তাই না?

তোরা লক্ষ্ণী মেয়ের মতো বললো হ্যাঁ আংকেল।আপনিও বেশ বুদ্ধিমান।কত সহজে বুঝতে পারলেন আমার টেকনিক।

কামিনী চৌধুরী তোরার এমন ন্যাকামি দেখে বললো, তোমার যাচাই করা শেষ হয়ে গেছে?

তোরা মাথা নাড়িয়ে বললো, হ্যাঁ শাশুমা।যাচাই করে দেখলাম আপনার মতো এমন সুন্দরী শাশুমা পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।আপনি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি আপনার কথাবার্তাও বেশ ঝাঁঝালো।আমি তো এমনটাই চাই।যে আমার শাশুমা সারাক্ষণ আমাকে শাসনের সাথে আদর করবে।

ইরা,মিরা,লিরা তখন এগিয়ে এসে বললো, এই মেয়ে তুমি আমাদের আম্মুকে শাশুমা বলে ডাকছো কেনো?
তোরা তখন কুশানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো এই সহজ বিষয় টা বুঝতে পারলেন না ননদিনীরা?

ইরা মিরা লিরা তিনজনই তোরার কথা শুনে অবাক।তাদেরকে তোরা ননদিনী বললো?

তোরা তখন বললো, আপনারা তিনবোনও ভীষণ ভালো।আপনাদের মতো এতো ভালো মানুষ এই দুনিয়ায় দেখাই যায় না।কত ভালোবাসেন আপনাদের এই ভাইকে?এই রকম একটা পরিবারে বউ হয়ে যেতে পারলে সত্যি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবো আমি।কি সুন্দর বাবার মতো একজন শশুড়।আহাঃ প্রথম দেখাতেই বুঝতে পেরেছি কত টা ভালো মানুষ তিনি?ওনার মতো সহজ সরল মানুষ মনে হয় এই দুনিয়াতে আর কেউ নাই।

জারিফ চৌধুরী তোরার কথা শুনে একদম গদগদ হয়ে গেলো।তিনি তো ধরেই নিলেন তোরাই তার কুশানের বউ।এই মেয়ে ছাড়া তিনি কিছুতেই অন্য কারো সাথে কুশানের বিয়ে দিবেন না।কি সুন্দর করে তার প্রশংসা করছে।এরকম কদর কেউ করে নি তার।কামিনী তো সারাক্ষণ তার সাথে ঘ্যানঘ্যান করে।তার ভালো দিকটা তো কামিনীর চোখেই পড়ে না।

অন্যদিকে ইরা মিরা লিরা কামিনী চৌধুরীর কানে কানে গিয়ে বললো, মা এই মেয়ে কিন্তু বড্ড চালাক।আমাদের সবাইকে পটানোর চেষ্টা করছে।বাবা কিন্তু ইতোমধ্যে পটেও গেছে।বাবাকে না থামালে তিনি কিন্তু কথা দিয়ে ফেলবেন।

কামিনী চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, মেয়েটা তো দেখতে ভালোই আছে।আর কি সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে দিয়ে কথাবার্তা বলছে।বাড়ির বউ এরকম হলে কিন্তু মন্দ হয় না।

ইরা মিরা লিরা তখন বললো, আম্মু তুমিও পটে গিয়েছো?

চলবে,