আরশি পর্ব-০২

0
3048

#আরশি
#Part_02
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

— আরশি তুই?

ভাইয়া আমায় জড়িয়ে ধরতেই বুকটা কেমন হাহাকার করে উঠে। কন্ঠস্বর ভারী হয়ে আসে।গলার মধ্যে কান্নাগুলো জোটপাকিয়ে আসতে শুরু করে। নয়ন দুটিও কেমন জ্বালা পোড়া করতে শুরু করে। অনুভূতিগুলো আঁচড়ে পড়ে মনের ভিতরে। দূর্বল হয়ে পড়ছি আমি। হুট করে আমার সাথে এমন কেন হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম না। এতক্ষণ আমি এমন কিছু আমি অনুভব করি নি। বেশ শক্ত আর কঠোরই ছিলাম আমি। তাহলে এখন এমন কেন হচ্ছে? নিজেই নিজেকে প্রশ্নটি করলাম। অতঃপর ভাইয়ার কথা মনে হতেই মনে হলো অনুভূতিগুলো হয়েতো আপন কোন মানুষটির সামনেই নিজেকে প্রকাশ করতে চাইছে। সেও হয়তো বুঝে তুচ্ছ মানুষের সামনে অনুভূতি গুলো প্রকাশ করা মানেই তাকে গুরুত্ব দেওয়া আর নিজেকে দূর্বল প্রমাণিত করা। তাই তো সে কখনই কোন তুচ্ছ মানুষের সামনে বেড়িয়ে আসে না। কিন্তু আফসোস আমরা সেটা বুঝি না। বার বার আমরা সেই তুচ্ছ ব্যক্তিকেই জোর করে আমাদের অনুভূতিগুলো বুঝানোর বৃথা চেষ্টা করতে থাকি। অথচ আমরা বুঝি এই না অনুভূতিগুলো তার সামনে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছুক না।

ভাইয়ার আলিঙ্গন থেকে ছাড়া পেতেই আমি ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসি৷ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি সে ঠোঁটের কোনে প্রশস্ত এক হাসি ঝুলিয়ে অহনার দিকে এগিয়ে যায়। অহনাকে নিজের কোলে নিয়ে ওর গালে ছোট একটা চুমু খেয়ে বলে,

— আমার মামনীটা কেমন আছে শুনি?

অহনা ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

— সবসময়ের মত অনেক ভালো মামু। তুমি কেমন আচো?

ভাইয়া মিষ্টি হেসে বলে,

— এতক্ষণ ভালো ছিলাম না কিন্তু এখন তো তুমি এসে গিয়েছ তাই না। আমি কি এখন ভালো না থেকে থাকতি পারি?

ভাইয়ার কথায় অহনা খিলখিল করে হেসে উঠে। অহনা হেসে উঠতেই আমি এক ধ্যানে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। কতটা না উচ্ছ্বাস ভরা হাসিটা। ও হাসলে গালে টোল পড়ে যা ওর হাসিকে কয়েকগুণ মিষ্টি করে তুলে। এই হাসি যে কেউ দেখলে তার মন অনায়েসে ভালো হয়ে যাবে। ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে চাইবে। ওর তুলতুলে গালে চুমু খেতে চাইবে। কিন্তু ফাহাদ হয়তো ওর এই হাসিটা কখনো দেখেই নি। দেখলে হয়তো কখনো ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারতো না। ওই বাসায় থাকতে ও কখনো ফাহাদের সামনে হাসেই নি। ও তো সবসময় ফাহাদের ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকতো। এই বুঝি ও কোন শব্দ করলো আর ফাহাদ এসে ওকে বকে দিল। ফাহাদ চেঁচামেচি একদম পছন্দ করে না। যার ফলে অহনা ফাহাদের সামনে যখনই শব্দ করে খেলতো বা দুষ্টুমি করতো তখনই ফাহাদ ওকে বকে দিত। মাঝে মত হাত তুলতে গিয়েও তুলে না। আবার দুই একসময় হাত তুলেও ফেলতো। ফাহাদের ভয়ে অহনা ওর সামনে সবসময় চুপসে থাকতো। দরকার না পড়লে ওর সামনেও যেত না। ফাহাদও কখনো ওকে নিচ থেকে কাছে টেনে নেই নি। আদরমাখা কন্ঠে দুটো কথা বলে নি। আদৌ কি সে বাবা হওয়ার যোগ্য?

আমার ভাবনার মাঝেই ভাইয়া আনন্দমাখা কন্ঠে বলে উঠে,

— কিরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভিতরে আয়।

কথা বলে নিচে তাকাতেই তার নজরে পড়ে আমার হাতে থাকা সুটকেসটা। সাথে সাথে সে ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে আমার দিকে তাকায়। চেহেরায় তার চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। কিছু হয়তো আন্দাজও করতে পারছে। কিন্তু মুখে তা প্রকাশ না করে ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বলে,

— আয় ভিতরে আয়। জিনিয়া! এই জিনিয়া দেখ কে এসেছে।

ভাবীকে ডাকতে ডাকতে ভাইয়া ভিতরের দিকে যায়। আমি ধীর সুস্থে বাসায় ঢুকে দরজাটা দিয়ে দেই। অতঃপর ভাইয়ার পিছন পিছন সোফার রুমে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পারি ভাবী রান্নাঘর থেকে ওড়নার কোনে হাত মুচতে মুচতে এইদিকে আসছে। ভাইয়া অহনাকে নিয়ে সোফায় বসে পড়েছে। ভাবী দূর থেকে আমাকে দেখতে পেয়েই সে হাসি মুখে বলে উঠে,

— আরেহ আরশি তুমি?

আমি কিছু না বলে স্মিত হাসি। ভাবী আমার সামনে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,

— কেমন আছো তুমি?

প্রশ্নটি শুনে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি, “আসলেই আমি কেমন আছি? ভালো নাকি খারাপ?” শত চেষ্টা করেও উত্তরটা জানতে পারলাম না। অতঃপর দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলি,

— এইতো তুমি?

ভাবী আমায় ছেড়ে দিয়ে খুশি খুশি কন্ঠে বলে,

— আলহামদুলিল্লাহ! তা তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি চা করে আনছি।

আমি কিছু না বলে স্মিত হাসি। ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

— তা তুমি এইবার সময় নিয়ে এসেছ তো? এইবার কিন্তু তোমায় জলদি ছাড়ছি না। আজ কত বছর পর যে তুমি বাসায় এলে। এত জলদি যেতে দিব না তোমায়।

কথাটা তিনি সরল মনে বললেও কথাটি আমাকে তীরের মত আঘাত করে। হৃদয়টা যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। জোটপাকানো কান্নাগুলো আবার জীবন্ত হয়ে যায়। কন্ঠস্বর পুনরায় ভারী হয়ে আসে। আমি নিজেকে কোন মতে সামলে ভারী কন্ঠে বলি,

— এইবার অফুরন্ত সময় নিয়ে এসেছি ভাবী। এই সময়ের শেষ নেই। বলতে পারো একবারের জন্যই চলে এসেছি।

আমার কথা শুনে ভাবী চমকে উঠে। কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। চিন্তার ভাঁজ নাকি বিষ্ময়ের ভাঁজ তা বুঝে উঠতে পারি নি। ভাইয়াও আমার কথা শুনে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। তার দৃষ্টিতে রয়েছে এক রাশ কৌতূহল। ভাবী আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই ভাইয়া বলে উঠে,

— আরশি যা তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। অহনাকেও ফ্রেশ করিয়ে আন। বাকি কথা না হয় পড়েই হবে।

আমি কিছু না বলে সুটকেসের হ্যান্ডেলটা চেঁপে ধরি। অহনার দিকে তাকাতেই ও এক লাফে ভাইয়ার কোল থেকে নেমে পড়ে আর আমার দিকে ছুটে আসে। আমি ওর হাত ধরে আমার রুমের দিকে যেতে থাকি। এর মধ্যেই ভাবীর চাপা কন্ঠ কানে আসে। সে বলছে,

— আরিফ আমার না খুব ভয় করছে। আরশির সাথে খারাপ কিছু হয় নি তো? ওই ফাহ…

বাকিটা শ্রবণ করার আগেই আমি অহনাকে রুমে ঢুকে পড়ি। রুমে ঢুকেই একবার চোখ বুলিয়ে নেই। রুমটা সেই আগের মত নেই। বেশ খানিকটা বদলেছে। আগের পর্দার জায়গায় নতুন পর্দা এসেছে। ফার্নিচারের জায়গায় বদল হয়েছে। গুছানোর ধরনও বদলেছে। শুধু মাত্র একটা জিনিস বদলায় নি। আমার বুকশেলফের বইয়ের বিন্যাসটা। সেই আগের মতই আছে। যা দেখে মনের এক কোনে প্রশান্তির ঢেউ খেলে যায়। যাক কিছু তো একটা আছে যা দেখে নিজের বলে মনে হচ্ছে।

___________________________________________

বিছানার এক প্রান্তে বসে আছি। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে স্থির চোখে সামনে তাকিয়ে আছি। অপর প্রান্তেই ভাইয়া ভাবী বসে আছে। নিজেদের মধ্যেই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। হয়তো কোন কথা থেকে শুরু করবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। অহনা পাশের রুমে আদ্র এর সাথে খেলছে। আদ্র ভাইয়ার ছেলে। এইবার ৭ এ পা দিল। আমরা যখন এসেছি তখন ওয়াশরুমে ছিল যার জন্য জানতে পারে নি আমরা এসেছি। যখন জানলো অহনার সাথে খেলার আসর জমিয়ে দিল।

বেশকিছুক্ষণ পর নিরবতা পেরিয়ে ভাইয়া বলে উঠে,

— কি হয়েছে আরশি? ফাহাদ কি কোন ঝামেলা করেছে?

আমি একবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নেই। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। কথাগুলো গলার মাঝে আটকে আসছে। স্বল্প পরিমাণে কষ্ট অনুভব করছি। কিন্তু কিসের কষ্ট জানি না। শুধু বলতে পারি এইটা বিচ্ছিন্নের কষ্ট নয়। অন্যকিছুর! তা এইটা সংসারের মায়া নাকি অন্যকিছু সেটা জানি না। আমি লম্বা এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলি,

— ফাহাদ আর আমার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে।

কথাটা শুনার সাথে সাথে ভাইয়া আর ভাবী আঁতকে উঠে। কথা বলার বাক্য হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু চোখ দুইটিতে পুরো কাহিনী জানার কৌতূহল রয়ে যায়। তা দেখে আমি তাদের পুরো ঘটনাটা খুলে বলি। হঠাৎ দুই চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে শুরু করে। এই কান্না কিসের জানি না৷ শুধু বুঝছি চোখ দুটো বেশ জ্বালা করছে। একে শান্ত করতে হলেও এই পানিগুলো আমায় ঝড়াতে হবে। আমি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলি,

— অহনার কথা ভেবেই চুপ ছিলাম এতটা বছর। নিজের কথা ভাবলে হয়তো ফাহাদকে তখনই ছেড়ে দিতাম যখন নাকি ও আমার গায়ে প্রথম হাত উঠিয়েছিল। অহনা ছিল বলেই আমি প্রতিবাদটা করতে পারি নি। সেপারেশন হওয়ার পর দুইটা মানুষ ঠিকই পৃথক হয়ে যায় কিন্তু মাঝ দিয়ে সন্তানেরা দোটানায় পড়ে যায়। সাফার করতে ওদেরকেই। বিব্রতকর প্রশ্ন ও পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদের। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে তারা। সমাজও এই সেপারেশনের উপর বাচ্চার চরিত্র জার্জ করে। কিন্তু ফাহাদ ওকে এইভাবেই ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দিচ্ছিল। মেয়ে আমার বাবার ভালবাসা কি কখনো বুঝেই নেই। আদর মাখা কন্ঠে ওর সাথে কথাও বলেছিল কি না জানি না। ও সর্বদা ফাহাদকে ভয়ই পেয়ে এসেছে।
যখন ফাহাদ ডিভোর্স পেপারটা দিয়েছিল সত্যি বলতে আমার একটুর জন্যও মন খারাপ হয় নি। বরং খুশিই লাগছিল। শুধু মনের কোনে চিন্তা ছিল অহনাকে নিয়ে। কিন্তু ও যখন বললো, ওর অহনাকে চাই না। অহনা ওর জন্য প্রবলেম। তখন আর আমার মনে এই ডিভোর্স নিয়ে কোন দ্বিধাই ছিল না। এমন বাবা থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। সমাজের চিন্তা করে এতবছর চুপ থাকলেও এইবার আর থাকলাম না। যেখানে ও নিজ থেকেই আমাকে মুক্ত করতে চাইছে সেখানে দ্বিতীয় কোন কথা আসে না।

এইদিকে সব শুনে ভাইয়া রেগে যায়। রাগান্বিত কন্ঠে বলে,

— আগে কেন বলিস নি এইসব? এত কষ্ট কেন সহ্য করেছিস এতদিন? তিলে তিলে মরে গিয়েছিস অথচ আমাদের একবারের জন্য জানাসও নি।

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলি,

— বললে কি হতো? আগেই নিয়ে আসতি আমায়? তা নিয়ে আসলেও কি হতো? বোঝাপড়া করে ঠিকই ফাহাদের বাবা-মা আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেত। মাঝ দিয়ে নিচু হতে হতো তোকে। দোষ হতো বাবা-মায়ের। প্রশ্ন উঠতো তাদের শিক্ষা নিয়ে। না আছে মা, না আছে বাবা। জোর দিয়ে কথা বলার কেউ নেই। তার উপর এই সমাজে ছেলে পক্ষরাই হয় শক্তিশালী। মেয়ে পক্ষ নয়। তারা যা বলবে তাই মানতে হবে,করতে হবে। যদি বলে মেয়ের দোষ তাহলে মেয়েরই দোষ। এইখানে আর দ্বিতীয় কোন কথা উঠে না। অশান্তি চাই নি তাই নি বলে নি।

ভাইয়া আমার কথায় চুপসে যায়। কিন্তু দমে যায় না। সে ফুসফুস করতে করতে বলে,

— ফাহাদ যে অমানুষ তা জানতাম কিন্তু ও সে এক নাম্বার এর জা*** তা জানতাম না। নর্দামার কিট একটা। ভালোই হয়েছে ও তোকে ছেড়ে দিয়েছে। তা না হলে তোর বাকি জীবনটা নষ্ট তো হতোই অহনার জীবনও শুরু হওয়ার আগে শেষ হয়ে যেত।

ভাবী ভাইয়াকে শান্ত করতে করতে বলে,

— যা হওয়ার হয়েছে। এইসব নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই। এখন আগে কি হবে তা ভাবো।

ভাইয়া রাগান্বিত কন্ঠে বলে,

— আগে কি হবে তা নিয়ে ভাবার মত কিছু নেই। ও এখন থেকে এইখানেই থাকবে। আর অহনাও ওর মায়ের পরিচয়ে বড় হবে। এই সমাজ কি করে তা শুধু আমি দেখবো।

ভাবী ভাইয়াকে শান্ত করার জন্য বলে,

— আরিফ শান্ত হও তো। এইসব কথা পরেও হবে। এখন তুমি চল। আরশিকে আরাম করতে দাও। আজ বেশ দখল গিয়েছে ওর উপর দিয়ে।

ভাই একবার আমার ক্লান্তি ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে হনহনিয়ে চলে যায়। ভাবী আমার মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে সেও চলে যায়। কিন্তু অবাক করার বিষয় তখনও আমার চোখ পানি ঝড়তেই আছে। নিজেই নিজেকে আবার প্রশ্ন করি,

— আমি কাঁদছি কেন? ফাহাদের জন্য? কিন্তু ফাহাদ আর আমার মধ্যে তো কোন টান থাকার কথা না। আমাদের সম্পর্ক তো নাম মাত্র সম্পর্ক ছিল। যেখানে না ছিল কোন ভালবাসা, না ছিল কোন শ্রদ্ধা। যা ছিল দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের বেড়াজালে আটকে পড়েছিলাম এতটা বছর। তাহলে এই কান্না কিসের? এই কষ্ট কিসের? সংসারের মায়ার?

____________________________________________

সকাল হয়েছে আরও ৫ ঘন্টা আগে। এখন প্রায় বেলা হতে চলেছে। আমি এখনো বিছানায় শুয়ে আছি। অহনা আগেই বাইরে চলে গিয়েছে আদ্র এর সাথে খেলতে। মাঝে মধ্যে একটু উঁকি মেরে দেখে গিয়েছে আমি কি করছি। মেয়েটা বড্ড মা ভক্ত। মায়ের কিছু হলে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। মায়ের অসুস্থতা ওকে বড্ড পুড়ায়। আল্লাহ তায়ালা হয়তো সেই মায়ের কষ্ট মোচন করতেই এই ছোট পরীকে তার কোলজুড়ে দিয়ে গিয়েছেন। তাকে কাছে পেয়ে যে কেউ তার কষ্ট ভুলিয়ে দিবে।
বেশ বেলা করেই বিছানা ছাড়লাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে ১১ টা বাজে। দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস নিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসি। বাইরে এসে দেখি অহনা আর আদ্র ভাইয়ার রুমে খেলছে। চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারি ভাইয়া অফিসে চলে গিয়েছে। আমি ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখি দুইজন মহিলা বসে আছে। তার মধ্যে একজনকে আমি চিনি। আমেনা আন্টি।
আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন। অনেক পুরানো প্রতিবেশী আমাদের। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই মেয়েরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুইজনই বাইরে দেশে সেটেল। ছেলেও বিয়ে করেছে। তার সাথে থাকে কি না বলতে পারি না। আশেপাশে তাকাতেই দেখি ভাবী এদের জন্য ট্রে-তে চা আর বিস্কুট নিয়ে আসছে। আমি ভাবছিলাম এইখান থেকে কেটে পড়বো। জনমানসের সামনে পড়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই। এই মূহুর্তে তো একদমই নেই। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। আমেনা আন্টি আমায় দেখে ফেললেন। এবং দেখে বেশ চমকেই উঠলেন। হয়তো আমাকে আশা করে নি। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি মুখে আমাকে তার কাছে ডাকে। আমিও বাধ্য হয়ে নিজের গায়ের ওড়না মাথায় দিয়ে তাদের সামনে যাই। আমেনা আন্টির দিকে তাকিয়ে মলিন একটা হাসি দিয়ে সালাম দেই। সেও সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করে,

— কত বছর পর আসলে আরশি। সেই কবে দেখেছিলাম তোমায়। ঠিক মনেও নেই। বেশ শুকিয়ে গেছ দেখছি। খাওয়া-দাওয়া করো নাকি?

আমি মলিন হাসি হেসে বলি,

— খাই তো।

— মনে তো হয় না। নিজের প্রতি যত্ন নিতে শিখ। এই বয়সে দূর্বল হয়ে পড়লে হবে না বুঝলে। তা না হলে অল্প বয়সেই বিছানায় পড়তে হবে।

আমি কিছু না বলে মাথা দুলালাম। সে সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বলে,

— তা একাই এসেছ নাকি? তোমার জামাই আসে নি?

#চলবে