আষাঢ়ে প্রণয় সন্ধি পর্ব-৫+৬

0
231

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৫

আষাঢ় আনমনে হেসে উঠলো।আষাঢ়ের যে প্রেমিকা ছিলো না তা নয়।সেও প্রেম করেছে জীবনে।তবে তাদের বিচ্ছেদ দু’জনের মতেই হয়েছে।আষাঢ় সম্মান করে মেয়েটির সিদ্ধান্ত।প্রেমটা ছিলো কলেজ লাইফে।একই ব্যাচের ছিলো দু’জন।আষাঢ়ের ভালো লেগেছিলো মেয়েটিকে।তবে প্রথমে মেয়েটি তাকে প্রপোজ করেছিলো।আষাঢ়ের যেহেতু ভালো লাগতো মেয়েটিকে তাই রাজি হয়েছিলো।এরপর এক বছরের মাথায় দু’জন বুঝতে পারে তাদের পথ চলা ওই পর্যন্তই ছিলো তাই দু’জনে বসে বিচ্ছেদটাকেই বেছে নিয়েছে।তবে এখন মনে হয় মেয়েটি তার ভালোলাগা ছিলো ভালোবাসা নয়।এরপর আর এসবে জড়ানো হয়নি।মেয়েটি এখন ভালো আছে একটা বাচ্চা ও আছে।সে এটা শুনে খুশি হয়েছে বেশ।

“আমি আপনায় ভালোবাসতে চাই চিত্রা। ভয়ংকর রকম ভালোবাসতে চাই। এই যে আপনার পুরুষদের প্রতি অনীহা,অবিশ্বাস সব কিছু ভেঙে দিতে চাই।আপনাকে বোঝাতে চাই সব পুরুষ সমান নয়।কিছু কিছু পুরুষ এখনো এক নারীতেই আবদ্ধ থাকতে ভালোবাসে।আপনিও আমায় ভালোবাসবেন এবং সেটা আমি যতটুকু বাসবো তার থেকেও বেশি।”

আষাঢ় চিত্রার রুমে দৃষ্টি রেখে কথাগুলো আওড়ালো।চিত্রা তো সেই কখন পর্দা টেনে দিয়েছে।আষাঢ় কফি শেষ করে পকেটে হাত গুঁজে আরো কিছুক্ষণ দাঁড়ালো সেখানে।যদি চিত্রা আসে।সে জানে চিত্রা আসবে না তবুও মনের কোথাও একটা বলছে চিত্রা আসবে।চিত্রা আসলো,তবে সে কিছু একটা নিতে এসেছিলো যদিও দেখেনি আষাঢ় কি নিয়েছে চিত্রা।অন্ধকারে চিত্রাকে ছাড়া সে কিছুই দেখছে না।চিত্রা আসায় সে খুশি।যা তার চোখ মুখে ফুটে উঠেছে।

“আমি ভাবিনি চিত্রা আপনি আবারও আসবেন যদিও কিছু নিতে এসেছিলেন তবুও এসেছেন তো!”

আষাঢ়রা এখানে এসেছে এক সপ্তাহ পার হলো। আষাঢ় কলেজে জয়েন করেছে।দিনকাল ভালোই কাটছে। এ ক’দিন বেশ ব্যস্ত ছিলো সে। নতুন জায়গা, নতুন সব কিছু, বোনের স্কুল ট্রান্সফার সব মিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলো।আজ শুক্রবার। বাড়িতেই আছে সে।আজ চিত্রারা তাদের দুপুরে দাওয়াত দিয়েছে।আষাঢ় এটা ভেবে খুশি যে আর চিত্রাকে দেখতে পাবে।বেশ কিছুদিন হলো চিত্রার দেখা নেই।দুপুরের কিছুক্ষণ আগেই বেলী বেগম এবং অরিহা চিত্রাদের বাড়িতে চলে এসেছে।আষাঢ় এমনিতেই আসেনি এতো তাড়াতাড়ি। কি করবে গিয়ে চিত্রা তো আর তার সামনে আসবে।বেলী বেগম এবং অরিহা এসে কলিংবেল বাজায়।চিত্রা দরজা খুলে দেয়।বেলী বেগমকে দেখে মৃদু হেসে বলে,

“ আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন?”

বেলী বেগম ভেতরে প্রবেশ করে বলেন,,,“ওয়ালাইকুম আসসালাম চিত্রা মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?তোমাকে কতবার বললাম আমাদের বাড়িতে এসো তুমি তো যাওনি”

“আসলে আন্টি একটু ব্যস্ত ছিলাম তো।আপনি বসুন আমি আম্মুকে ডাকছি”

“আম্মা বেলী আন্টি এসেছেন কোথায় তুমি এদিকে আসো”

মরিয়ম সুলতানা দৌড়ে আসেন।বেলী বেগমকে দেখে কথা বলেন টুকটাক। এরপর দু’জন মিলে চলে যায় রান্নাঘরে।যদিও মরিয়ম সুলতানা মানা করেছিলেন তবে বেলী বেগম শুনেননি।সাহায্য করতে চলে গিয়েছেন।চিত্রা ও নিজের রুমে চলে গিয়েছে।অরিহা একা একা বসে আছে।এর জন্য বাড়িটা দেখতে পা বাড়ালো।বেশ বড় ফ্ল্যাট চিত্রাদের।অরিহা একটা রুমে ঢুকে পরলো।রুমে ঢুকে বুঝলো এটা প্রহরের ঘর।অরিহা বুঝলো প্রহর গোসলে। বিছানায় টিশার্ট দেখে সয়তানি বুদ্ধি মাথায় চেপে বসেছে।প্রহরের পড়ার টেবিল থেকে একটা মার্কার নিয়ে পেছন পাশে লিখে দেয় ‘পাগল আমি’ এরপর আবার বেরিয়ে যায় রুম থেকে।ভদ্র মেয়ের মতো বসার ঘরে এসে সোফায় বসে পরে।

প্রহর গোসল সেরে বের হয়।সে আবার প্রচুর ভাব ওয়ালা।পরিপাটি না হয়ে বের হয় না বাড়ি থেকে।টিশার্টটা পরে নেয়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে বের হয় রুম থেকে।এখন বাইরে বের হবে একটু সে।বসার ঘরে আসতে অরিহাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অরিহা ওকে দেখে ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকায়।প্রহরও সেই সবে পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে যায়।প্রহর বের হতেই মুখ চেপে হেসে উঠে অরিহা।জোরে হাসলে রান্নাঘর থেকে মা এসে বকবে তাই মুখ চেপে হাসছে।এবার বুঝবে ঠেলা প্রহর।তার সাথে লাগতে আসে।
প্রহর শিস বাজাতে বাজাতে নিচে নামে।রাস্তায় আসতেই কাউকে চোখে পরে না।এই ভর দুপুরেও বা বাইরে কে থাকে।ভাবলো আষাঢ় ভাইয়ের কাছে যাওয়া যাক।অরিহাকে দেখলেও আষাঢ়কে দেখেনি সে তাই বুঝতেই পেরেছে আষাঢ় ভাই এখনো আসেনি।

“দোস্ত আম্মা তো বিয়ে ঠিক করেছে”

নিশীথের কথায় কিছুটা অবাক হয় আষাঢ়। নিশীথের ও তার মতো বাবা নেই।তবে তাদের সংসার ভালো মতোই চলে যায়।দোতলা বাড়িটা ভাড়া দেওয়া।এই বছর নিশীও একটা ব্যাংকে ম্যানেজার হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে।ভালোই বেতন।সংসার ভালো চলছে।আষাঢ়ের ভাবনার মাঝেই নিশীথ বলে,

“কি রে দোস্ত কথা বলিস না কেনো?”

“আরে শুনছিলাম।যাই হোক মেয়ে পছন্দ হয়েছে তোর দেখেছিস?”

“হ্যাঁ মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। ভার্সিটিতে পরে তৃতীয় বর্ষে। মেয়ে ভদ্র আছে,প্রেমের সম্পর্ক ও নেই।ভাবছি এখানেই বিয়েটা সেরে ফেলবো”

“হ্যাঁ করে ফেল বিয়েটা, আমিও একটা বিয়ে খাই”

চিত্রা গোসল সেরে ভেজা গামছা বারান্দায় নাড়তে এসেছে।আষাঢ় ফোনে কথা বলছিলো।চিত্রার বারান্দায় চোখ পরতেই চোখ আটকায় তার।আষাঢ় এই দৃশ্য দেখে থম মেরে যায়।মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয় তার পানে।এতোটা স্নিগ্ধ লাগছে চিত্রাকে।মাত্র গোসল করে বের হয়েছে তা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।ভেজা চুলগুলো থেকে পানি পরছে টপটপ করে।ফোনে থাকা নিশীথ হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল নেই আষাঢ়ের।নিশীথ শেষে লাইন কেটে দেয়।চিত্রা চলে যেতেই খেয়াল আসে আষাঢ়ের।এই মেয়ে তাকে একেক রূপে ঘায়েল করছে। দ্রুত রুমে আসে সে।নিঃশ্বাস দ্রুত গতিতে ছুটছে। তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো।আষাঢ় নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুললো।প্রহরকে দেখে হেসে বলল,,

“আরে প্রহর যে আসো আসো”

প্রহর ভেতরে প্রবেশ করে বলে,, “তুমি এখনো যাওনি কেনো আষাঢ় ভাই।চলো চলো। তোমাকে নিতে এসেছি আমি”

“একটু পরেই যেতাম।তুমি বসো আমি চেঞ্জ করে আসছি”

প্রহর বসার রুমে বসলো।সেখানে একটা ড্রয়িং খাতা দেখলো।খুলে বুঝলো এটা অরিহার।প্রহর দুষ্টমি করে সেখানের একটা ড্রয়িং এ কলমের দাগ দিয়ে দেয়।এরপর সুন্দর করে রেখে দেয়। আষাঢ় আসতেই প্রহর উঠে দাঁড়ায়। আষাঢ় খেয়াল করে প্রহরের টিশার্টে আমি পাগল লেখাটা।প্রহরের কাছে এসে বলে,,

“তোমার টিশার্টে এটা কে করেছে প্রহর?”

প্রহর চমকালো তার টিশার্টে কে কি করবে।দ্রুত খুলে ফেললো টিশার্টটি।পেছনে আমি পাগল লেখাটি দেখে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।তবে প্রকাশ করলো না আষাঢ়ের সামনে।কাজটি যে অরিও বিস্কুটের তা বুঝতে বাকি নেই।আষাঢ়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,
“আষাঢ় ভাই একটা টিশার্ট দাও না।এটা পরে বের হতে পারবো না”

আষাঢ় নিজের একটা টিশার্ট এনে দিলো।প্রহর আষাঢ়ের কান অব্দি। একটু ঢিলা হয়েছে তবে খারাপ দেখাচ্ছে না।দু’জন বাড়ি থেকে বের হয়ে চিত্রাদের বাড়িতে চলে আসলো।দরজা খুললো এবার অরিহা।অরিহাকে দেখে কটমট চোখে তাকালো প্রহর।এরপর সোজা নিজের রুমে চলে আসলো।টিশার্ট বদলে নিজের একটা টিশার্ট পরে আসলো।বসার ঘরে বসে আরমান সাহেব এবং আষাঢ় গল্প করছেন।প্রহর এসে বাবার পাশে বসলো।মরিয়ম সুলতানা কত করে বেলী বেগমকে সবার সাথে গিয়ে গল্প করতে বললেন তবে বেলী বেগম কিছুতেই রাজি হননি।চিত্রাকে আসতে না দেখে আরমান সাহেব প্রহরকে পাঠালো চিত্রাকে ডেকে আনতে।

প্রহর চিত্রার রুমে এসে দেখে চিত্রা শুয়ে আছে।চোখ তার বন্ধ। প্রহর কাছে এসে বলল,,,“এই আপু উঠো ঘুমাচ্ছো কেনো আব্বু ডাকছে”

চিত্রা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।শুয়ে থাকতে থাকতে কখন চোখ লেগে গিয়েছিলো টেরই পায়নি সে।প্রহরকে দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকালো।এরপর বিছানা থেকে উঠে সোজা হাঁটা শুরু করলো।প্রহর ও পিছু পিছু আসলো।চিত্রা এবার ও বাবার সামনে ভদ্রতার খাতিরে কিছু কথা বললো। আষাঢ় বুঝলো তাই আর কথা বাড়ালো না। সে কখনোই চায় না চিত্রা তার জন্য অস্বস্তিতে পরুক।
সবাই মিলে এক সাথে খেয়ে নেয়।মরিয়ম সুলতানা কিছুতেই তাদের যেতে দেয়নি।একেবারে রাতের খাবার খেয়ে যেতে হবে।অগত্যা বেলী বেগম এবং সবাইকে থেকে যেতে হলো। আষাঢ় প্রহরের রুমে আছে আর অরিহা চিত্রার।বিকালের সময়টাতে চিত্রা সাজিয়াকে কল করে ডাকে।সাজিয়াদের বাড়ি দুই এলাকা পরেই।

সাজিয়া এসে কলিংবেল বাজায়।প্রহর দরজা খুলে সাজিয়াকে দেখে মৃদু হাসে সরে দাঁড়ায়।সাজিয়া কেমন আছো বলতে বলতে ভেতরে প্রবেশ করে।ভেতরে ঢুকে অপরিচিত মানুষ দেখে থতমত খেয়ে যায়। আষাঢ় অরিহা আর প্রহর ড্রয়িংরুমে বসে লুডু খেলছিলো।বেলী বেগমকে গেস্টরুমে বিশ্রাম করতে বলেছেন।তিনি সেখানে।চিত্রা নিজের রুমে।আষাঢ় এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়েছে।প্রহর বুঝতে পেরে সাজিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“সাজি আপু চিত্রা আপু নিজের রুমে তুমি সেখানে যাও”

সাজিয়া ধীর পায়ে হেঁটে চিত্রার রুমে আসে।চিত্রা শুয়ে ছিলো।সাজিয়া এগিয়ে যায়।ধপাস করে বসে পরে চিত্রার পাশে।চিত্রা মৃদু হেসে বলে,
“আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো সাজি”

“নাহ তবে বাড়িতে মেহমান আছে তবুও আসতে বললি কেনো?”

চিত্রা উঠে বসে। সাজিয়া যে আষাঢ়দের কথা বলছে তা সে জানে।চিত্রা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।এরপর চুলগুলো আলগোছে খোঁপা করে নিলো।সাজিয়ার কথায় প্রতিউত্তর না দিয়ে সোজা বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।সাজিয়া বলদ হয়ে গেলো।মেয়েটা কিছু না বলে গেলো কেনো?

#চলবে~

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৬

চিত্রা রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।আষাঢ়রা খেলছিলো।প্রহরের একটা গুটি কাটা গিয়েছে তাই সে চিল্লাচ্ছে।চিত্রা বসার ঘরে আসতে পা থেমে গেলো তার।সে ভাবতে পারেনি এখানে আছে সবাই। আষাঢ়ের হঠাৎ চোখ পরলো নীল রঙা সেলোয়ার-কামিজ পরিহিতা চিত্রার দিকে। আষাঢ়ের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা চালালো সে।আষাঢ় মৃদু হেসে খেলায় মনোযোগ দিলো।চিত্রা প্লেটে খাবার নিয়ে নিজের রুমে আসলো।সাজিয়া চিত্রাকে দেখে ক্ষিপ্ত কন্ঠে শুধালো,,,,

“তুই আমাকে ডেকেছিস এখানে বসিয়ে রাখার জন্য?কোথায় হাওয়া হয়ে গেছিলি?”

চিত্রা খাবারের প্লেট সাজিয়ার সামনে রেখে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,,,“খেয়ে নে?”

সাজিয়া হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো চিত্রার পানে।চিত্রা বুঝলো বোধহয়।সাজিয়ার সোজাসুজি বিছানায় বসলো।এরপর শান্ত কন্ঠে শুধালো,,,
“খেয়ে নে আম্মা আজ ভালো মন্দ রান্না করেছে।দুপুরেই বলতাম তবে মেহমান আছে বলে আর বলিনি। না করবি না মোটেও।তোর মামি যে কেমন তা সম্পর্কে আমি অবগত।ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নে”

সাজিয়ার চোখে অশ্রুকণা চিকচিক করছে।মা মরা এতিম মেয়ে সে।বাবা বিয়ে করেছে। এরপর ঠাই হয়েছে মামার বাড়িতে।মামি একবেলা খেতে দিলে সে নিয়েও ভয়ংকর রকম খোটা দেয়।এতো বছর মুখ বুঁজে সহ্য করেছে সে। এতোদিন যাবত বহু কষ্টে নিজের পড়ালেখা চালিয়েছে তবে এখন আর বিয়ে আটকানো সম্ভব নয়। কলেজ জীবনে তার সাথে চিত্রার দেখা। সেখান থেকে বন্ধুত্ব।মেয়েটি তাকে নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করার চষ্টা করে।এই যে আজ শুক্রবার আজ যে তার কপালে ভালো মন্দ জুটেনি তাও ধারণা করে ফেলেছে।সাজিয়া প্লেটটি একটু দূরে থেকে ঝাপটে ধরলো প্রিয় বান্ধবী। কাঁদছে মেয়েটি।

চিত্রা শান্ত কন্ঠে বলল,,,“অনেক কেঁদেছিস এখন খেয়ে নে।”

সাজিয়া চিত্রাকে ছেড়ে হাত বাড়িয়ে চোখ মুছলো।এখনো ফোঁপাচ্ছে।চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে শুধালো,,,
“অনেক ভাগ্য করে পেয়েছি তোকে।বাপ মার ভালোবাসা না পেলেও তোর ভালোবাসায় যথেষ্ট আমার জন্য।”

“কথা না বলে খেয়ে নে সাজিয়া”

সাজিয়া খাওয়া শেষ করলো।হাত ধুয়ে এসে বসলো চিত্রার পাশে।চিত্রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“তোকে কত করে বললাম বিয়েটা করার প্রয়োজন নেই। আমাদের তিনতলার রুমটায় থাক।টিউশনি তো করছিস যা পারিস তাই দিস তবে রাজি কেনো হলি না সাজি”

”তুই আর কতো করবি চিত্রা আমার জন্য অনেক হয়েছে আর না। নিশীথ ছেলেটা বোধহয় ভালো, যেদিন দেখতে গেলো সেদিন তো তার সাথে কথা বলে ভালো মনে হলো”

“তবুও সাজি।আমি পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করি না। ভয়ংকর হয় এরা। মন বদলাতে দু সেকেন্ড ও সময় নেয় না।আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ছেলেকে বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ তার সাথে আমি কথা বলছি,বা বুঝতে পারছি ছেলেটা তোর জন্য সঠিক”

“তুই একটা কথা ভুল বললি চিত্রা, সব পুরুষ ভয়ংকর নয়। তাহলে তোর বাবাকে তুই সেই কাতারে ফেলছিস? ভালো খারাপ সব কিছুতেই আছে।কিছু নারীও ছলনাময়ী হয়,তেমনি কিছু পুরুষ ও আছে।সবাই এক নয় কথাটা মাথায় রাখবি।তোর ধারণা খুব দ্রুতই পাল্টাবে,তোর জীবনে সুন্দর পুরুষ আসবে।যে তোকে তোর থেকেও অধিক ভালোবাসবে।”

চিত্রা তোয়াক্কা করলো না সাজিয়ার কথাগুলো।অবুঝকে বোঝানো যায়,তবে বুঝমানকে বোঝানো সম্ভব নয়।সাজিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল।চিত্রা নির্বিকার ভঙ্গিতে উত্তর দিলো,,,
”চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।ফুসকা খাবো,পার্কে হাঁটতে যাবো।কিছুদিন ধরে আমার একঘেয়েমি লাগছে সব কিছু”

“হ্যাঁ চল।আমিও বেশ কিছুদিন হলো কোথাও হাঁটতে বের হই না।টিউশনি করে বাড়িতে চলে আসি।আর ভার্সিটি যাই।এরপর থেকে তো আবার এগুলোও করতে পারবো না বলা যাচ্ছে না”

শেষের কথাগুলো হতাশ হয়ে বললেও নিজেকে সামলে নেয় সাজিয়া।চিত্রার দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।নিশীথ ছেলেটা ভালো খবর নিয়েছে সে প্রহরকে দিয়ে।যথেষ্ট নম্র ভদ্র,সুশীল,দায়িত্ববান একজন পুরুষ নিশীথ।তবুও ভয় হয় তার।চিত্রা এই সব বাদ দিয়ে তৈরি হলো।চুলগুলো সুন্দর করে বেনি করলো।এরপর পার্স নিয়ে বের হলো।ড্রয়িংরুমে এসে অরিহাকে উদ্দেশ্য করে শুধালো,,

“অরিহা তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?আমরা বের হচ্ছি”

অরিহা চটজলদি হ্যাঁ বলে দেয়।প্রহর ও সাথে সাথে বলে উঠে,,,“আপু আমি আর আষাঢ় ভাই ও আসি”

চিত্রা শক্ত কন্ঠে সাথে সাথে জবাব দিলো,,,“প্রয়োজন নেই তার।আমরা মেয়েরা যাচ্ছি তো”

অরিহাকে সাথে করে বেরিয়ে পরলো চিত্রা এবং সাজিয়া।চিত্রার ব্যবহারে দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রহর তার সাথে আষাঢ় ও। এই রমনীকে পেতে হলে যে তার বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে সে তা ভালোই বুঝতে পারছে। [লেখিকা ইশা আহমেদ]প্রহরের খারাপ লাগলো নিজের বোনের ব্যবহারে।সে আষাঢ়কে উদ্দেশ্য করে অনুনয় করে বললো,,,

“আষাঢ় ভাই তুমি কিছু মনে করো না।আপু একটু এরকম।আমরা বরং ঘুরে আসি দু’জন”

আষাঢ় এসব আমলে নিলো না। এই রমনী যে অন্যদের থেকে আলাদা সে খুব ভালো করেই বুঝেছে।একবার ভাবলো জিজ্ঞেস করবে প্রহরকে,তবে অস্বস্তিতে জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠলো না। ওরা দু’জন ও বেরোলো বাড়ি থেকে।আষাঢ়ের মাথায় এখন একটি নামই ঘুরছে সেটি চিত্রা।আষাঢ় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলো। তবে তখনই চোখের সামনে ভেসে উঠছে চিত্রার সেই স্নিগ্ধ নিষ্পাপ মুখ খানি।

অরিহা পার্কের কিছু বাচ্চাদের সাথে খেলছে।সাজিয়া এবং চিত্রা পাশে থাকা বেঞ্চিতে বসে আছে।দু’জনের দৃষ্টি অরিহার দিকে নিবন্ধ।চিত্রা সব বলেছে সাজিয়াকে। ঘৃণায় চোখ মুখ কুঁচকায় সাজিয়া।এইসব পুরুষদের জন্যই পুরো পুরুষ জাতিকে ভুল বোঝে সবাই।চিত্রাকে সাজিয়া নরম কন্ঠে শুধালো,,,

“তখনকার পুরুষটি কে ছিলো চিত্রা”

চিত্রা নির্লিপ্ত কণ্ঠে শুধালো,,“অরিহার বড় ভাই। আষাঢ় মাহমুদ। এখানের সিটি কলেজের শিক্ষক।”

“তার সাথে এমন ব্যবহার কেনো করলি লোকটিকে তো ভদ্রই মনে হয়েছে।এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি তোর।”

“তুই সবটা জানিস”

আর কিছু বললো না সাজিয়া।আসলেই সে এই সম্পর্কে অবগত। তিনজন পার্ক থেকে বেরিয়ে ফুসকার দোকানে আসে।ফুসকা খেলো তিনজন।সেখান থেকে এলাকাতে কিছুক্ষণ ঘুরে বাড়ি ফিরলো। তার আগে সাজিয়াকে চিত্রা রিকশায় তুলে দিয়েছে।সন্ধ্যার পর বাইরে থাকলে যে সাজিয়ার মামি তাকে কথা শোনাবে তার চিত্রা অজানা নয়।বাড়িতে আসতেই দেখলো প্রহর এবং আষাঢ় ও বাড়িতে প্রবেশ করছে।অরিহা গল্প জুড়ে দিলো ভাইয়ের সাথে।প্রহর বিরক্ত হয়ে হাঁটা দিলো।চিত্রাও দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে উঠছে।কলিংবেল বাজাতেই আরমান সাহেব এসে দরজা খুলে দেন।সবাইকে একসাথে দেখে হাসেন।বসার ঘরে সবাই এসে বসে চিত্রা বাদে।সে তো বাসায় প্রবেশ করে বাবার সাথে টুকটাক কথা বলে নিজের রুমে চলে গিয়েছে।

আষাঢ় আরমান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,,, “আঙ্কেল আপনাদের স্কুলে কি সিট ফাঁকা আছে।আসলে অরিহাকে নিয়ে একটু চিন্তিত। দূরের স্কুলে দিতে চাইছি না।এখন একটু ঝামেলা হচ্ছে ট্রান্সফার নিয়ে”

“আমি কথা বলে দেখছি। তুমি চিন্তা করো না”

“ধন্যবাদ আঙ্কেল”

আরমান সাহেব এবং আষাঢ় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে।অরিহা আর প্রহর চোখে চোখে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।চিত্রা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।এখন আবার আষাঢ়ের সামনে বসে থাকতে হবে।এটা তার কাছে অতন্ত্য বিরক্তিকর কাজ। তবে আজ না সহ্য করেই নিলো। একটা দিনই তো।চিত্রা বসার ঘরে আসতেই দেখলো আরমান সাহেব এবং আষাঢ় হেসে হেসে কথা বলছেন।চিত্রা বাবার পাশে এসে বসলো।আরমান সাহেব মেয়েকে দেখে হেসে বললেন,,,

“এতো সময় পর তোমার আমাকে মনে পরলো আম্মা।আজ সারা দিনই তো আমার কাছে আসোনি”

কি হলো চিত্রা,শক্ত কঠিন হওয়া চিত্রা দু সেকেন্ডে পাল্টে গেলো।এ যেনো বাবার আদুরে কন্যা।আষাঢ় অবাক হয়ে দেখছে।চিত্রা শান্ত সুরে বলল,,,
“তুমিই তো ব্যস্ত ছিলে আব্বু তাই আসিনি। এই যে দেখো এখন চলে এসেছি।খুশি তো তুমি?”

“হ্যাঁ আম্মা আমি অনেক খুশি”

আষাঢ়ের ভালো লাগলো বাবা মেয়ের কান্ড।কত বছর হয়ে গেলো বাবা নেই।দেখা হয় না।সেগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আষাঢ়।তখনই মরিয়ম সুলতানা এবং বেলী বেগম নাস্তা নিয়ে আসলেন।বেলী বেগম এবারও মরিয়ম সুলতানাকে একা কাজ করতে দেননি।দু’জন গল্প করেছে এবং একসাথে কাজগুলো করেছে।সবাই খাচ্ছে আর হাসি ঠাট্টায় মেতে আছে।বেলী বেগম কথায় কথায় বললেন,,,

“মেয়েকে একটা টিচার দেওয়া দরকার।পড়তে চায় না মোটেও”

মরিয়ম সুলতানা বললেন,,,“হ্যাঁ প্রহরটাও একই কাজ করে। কোচিং ও যেতে চায় না।এতো ফাজিল”

প্রহর মাথা নিচু করে খাচ্ছে। তার মা সবার সামনে তার মান সম্মানের ফালুদা বানিয়ে ফেললো।ইশ কি লজ্জা।সাথে অরিও বিস্কুট ও আছে।বেলী বেগম হঠাৎ বলে উঠলেন,,
“চিত্রা মা তুমি তো পড়াতে পারো আমার মেয়েটাকে।ও তোমায় ভীষণ পছন্দ করে।তুমি কি পড়াবে ওকে?”

চিত্রা থতমত খেলো।মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা চললো বসার রুমে।সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চিত্রার পানে।বেশ কিছুক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো সে।

“জি আন্টি সমস্যা নেই পড়াবো আমি অরিহাকে”

অরিহা তো পারলে খুশিতে নাচতো। তবে আরমান আঙ্কেল এবং বড়রা আছে বিধায় নিজেকে সামলে নিলো সে। প্রহর তো অরিও বিস্কুটের উপর মহা বিরক্ত। দু’জন পাশাপাশি কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে আছে এক সোফায়।আষাঢ় ও বেশ খুশি প্রতিদিন এখন সে চিত্রাকে দেখবে। নিজেকে সেই উনিশ বিশ বছরের যুবক মনে হচ্ছে। তাদের মতোই করছে সে।প্রেমিকাকে নৃত্য দিন দেখার জন্য কত বাহানা।

#চলবে