আষাঢ়ে প্রণয় সন্ধি পর্ব-০৪

0
231

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪

নিশীথ আহমেদ নামটা চেনা চেনা লাগলো চিত্রার। তবে মনে করতে পারছে না।সাজিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,,
“চল ক্লাস শুরু হবে।পাঁচ মিনিট বাকি আছে ক্লাস শুরু হতে।ওহ ভুলে গিয়েছি আমি,খেয়েছিস তুই?”

চিত্রা হাসলো। মেয়েটি এতো কিছুর পর ও তার খেয়াল রাখছে।এই মেয়েটি তার খুব কাছের।প্রাণ প্রিয় বান্ধবী। যাকে সে বিশ্বাস করে।চিত্রা হাত বাড়ির সাজিয়ার হাতটি শক্ত করে ধরে বলল,,
“খেয়ে এসেছি আমি।এখন চল ক্লাস করে তোকে আরো কথা বলবো”

“গতকাল মিহি মন খারাপ করেছিলো তুই আসলি না কেনো চিত্রা।মেয়েটা তোর কাছে এতটুকু আশা করেছিলো আর তুই তাও আসতে পারলি না”

“আমার কিছু করার ছিলো না সাজি।”

চিত্রা খুলে বলল সব সাজিয়াকে।দু’জন ক্লাস করলো। এরপর বেরিয়ে এলো ক্লাস থেকে।আজ একটা ক্লাসই ছিলো।দু’জন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।যদিও চিত্রার সাজিয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে। তবে সে কিছু করতে ও পারবে না। সাজিয়া মানা করে গিয়েছে।নিশীথ আহমেদ নামটা কয়েকবার আওড়ালো চিত্রা।বাড়িতে চলে আসলো।রিকশা থেকে নেমে আনমনে হেঁটে বাড়ির ভেতরে ঢুকছিলো।সাজিয়ার কথা ভেবে ভীষণ চিন্তিত সে। নিশীথ কেমন হবে সে নিয়ে ভীত মেয়েটি। কাছের মানুষ,আপনজনের খারাপ কেউ চায় না। সাজিয়া তার অতি প্রিয় একজন।সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় ধাক্কা লাগে প্রহরের সাথে চিত্রার।প্রহর লাফিয়ে লাফিয়ে সিড়িঁ বেয়ে নামছিলো।প্রহর মাথা উঁচু করে বোনকে দেখে জোরপূর্বক হেসে বলে,,

“দুঃখিত আপু।দেরি হয়ে যাচ্ছিল তাই খেয়াল করিনি। যাচ্ছি”

প্রহর দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।পরনে তার স্কুল ড্রেস ছিলো।হয়তো টিফিন টাইমে এসেছে।স্কুল পাশেই তাই প্রায় দিনই প্রহর বাড়িতে চলে আসে।ওই স্কুলের শিক্ষকই চিত্রার বাবা আরমান রহমান।বাড়িতে এসে বিশ্রাম নিলো কিছুক্ষণ। এরপর রান্নাঘরে আসলো।আম্মা রান্না করছেন।পেছন থেকে মাকে ঝাপটে ধরলো চিত্রা।মরিয়ম সুলতানা হাসলেন।
“আম্মা নানুকে দেখতে ইচ্ছে করছে।নানুকে আসতে বলো না”

মরিয়ম সুলতানা হেসে বলেন,,,“তোকে তো একটা কথা বলাই হয়নি।আম্মা আসছে পরশু।”

চিত্রা খুশি হলো।নানুকে সে ভীষণ ভালোআবাসে।নানুও তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।এক সময় নানুকে ছাড়া থাকতে পারতো না চিত্রা।আর এখন মাসেও দেখা হয় না,কথা হয় না।চিত্রা চলে আসে নিজের রুমে।ক্লান্ত লাগছে বেশ।এখন একটু ঘুমাবে।দুটো টিউশনিই ছেড়ে দিয়েছে। এখন পড়াতে যাওয়ার কোনো তাড়াও নেই।আর খাওয়া সে যখন উঠবে তখন খেয়ে নিবে।তবে বিকালে যে নিশীথকে খুঁজতে হবে।খোঁজ খবর নিয়ে জানতে হবে ছেলেটি কেমন!

চিত্রা ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের খেলা দেখছে।বিকাল হলেই রাস্তাতে বাচ্চারা সব খেলতে নামবে।অরিহাও ছাদে উঠেছে আজ। তার ভালো লাগে না মোটেও একা একা।তাদের বাড়িতে ভাড়াটিয়ারাও অদ্ভুত। একটাও তার বয়সী না।স্কুলেও যেতে পারছে না।চিত্রা আপুকে পায়নি সেদিনের পর।চিত্রাদের বাড়ি চিনলেও যায়নি।ছাদে উঠে চিত্রাকে দেখে ছাদের কিনারায় আসে।

“চিত্রা আপু।”

চিত্রা কারো মুখে নিজের নাম শুনে পেছনে ঘুরলো।অরিহাকে দেখে হাসলো।কাছে আসতেই অরিহা বলল,,
“আপু কেমন আছো?কতদিন পর দেখলাম তোমায়”

“আমি ভালো আছি অরিহা।তুমি কেমন আছো?”

“আমিও ভালো আছি।দাঁড়াও আমি আসছি তোমার কাছে”

চিত্রা কিছু বলবে তার আগেই অরিহা দৌড়ে নিচে নেমে গেলো।চিত্রাদের ছাদে চলে আসলো।অরিহা তাড়াতাড়ি করে ছুটে আসলো চিত্রার কাছে।চিত্রা মৃদু হাসলো।
“এরকম পাগলামি করে কেউ?যদি ব্যাথা পেতে।এরকম আর করবে না।মনে থাকে যেন”

অরিহা হেসে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো সে এরকম করবে না আর।বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো দু’জন। মানে অরিহা বলছিলো আর চিত্রা শুনছিলো।মাঝে মধ্যে হু হা করে উত্তর দিচ্ছিলো। চিত্রা এতো কিছুর মাঝে ভুলতে বসেছিলো নিশীথের কথা।পরক্ষণে মনে পরতেই সে চিত্রা অরিহাকে বলল,,,
“অরিহা আমার একটু বেরোতে হবে”

“তুমি কি এলাকা ঘুরতে বের হবে চিত্রা আপু।যদি তাই হয় তবে আমায় ও নিয়ে চলো।আমিও যেতে চাই”

চিত্রা কিছুক্ষণ ভাবলো।এরপর ঠিক করলো অরিহাকে নিয়েই যাবে।একা একা যেতে ভালো লাগছিলো না তার।সাথে করে ভাবলো প্রহরকেও নিবে।প্রহরের চেনার কথা।চিত্রার নিজের ও নিশীথকে পরিচিত লাগছিলো তবে কে মনে করতে পারছে না।অরিহাকে নিয়ে নিচে নামলো।প্রহর আজও ক্রিকেট খেলছিলো।চিত্রা প্রহরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,,

“খেলা রেখে আমার সাথে চল।দরকারি কাজ আছে। দ্রুত”

প্রহর আর কি করবে। খেলা রেখে চিত্রার সাথে যাওয়া লাগলো।প্রহর চিত্রাকে বড্ড ভয় পায়।জানে কিছু হলেই চিত্রা তার গাল লাল করে দিবে যা মোটেও করতে ইচ্ছুক নয় প্রহর।চিত্রা বেশ কিছু পথ হাঁটলো দু’জনকে নিয়ে।অরিহা বকবক করেই চলেছে।এতে প্রহর ভীষণ ক্ষিপ্ত। এতো কথা বলতে পারে এই মেয়ে।তাও সব আজাইরা কথা।প্রহর ধমক দিয়ে অরিহাকে বলে,
“এই মেয়ে এতো কথা বলো কিভাবে তুমি?সেই তখন থেকে বকবক করেই চলেছো?”

চিত্রা চোখ পাকিয়ে তাকালো প্রহরের দিকে।প্রহর নির্বাক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।অরিহা রেগে বললো,,
“আমার মুখ আমি কথা বলবো এতে তোমার কি?না শুনতে মন চাইলে কান বন্ধ করে থাকো”

প্রহর কিছু বলতে যাবে তার আগে চিত্রা ধমক দিয়ে তাকে বলে,,“চুপ কর প্রহর।ও তোর থেকে বড় প্রহর তাই সম্মান দে ওকে।এটা কি ধরণের ব্যবহার হ্যাঁ?”

প্রহর রেগে অরিহার দিকে তাকিয়ে এক পলক আবার মাথা নিচু করে হাঁটছে।চিত্রা প্রহরের রাগার বিষয়টি বুঝতে পারলেও পাত্তা দিলো না।চিত্রা প্রহরকে বলল,,
“নিশীথ আহমেদ টা কে প্রহর। তুই চিনিস তাকে?”

প্রহর কথা বললো না।অরিহার নামটা পরিচিত লাগলো।কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে পরলো এটা তার ভাইয়ার বন্ধু। সে কিছু বলবে তার আগেই প্রহর বললো,,
“হ্যাঁ চিনি আমি।এই তো সামনের বাড়িটা তাদের।কেনো কি হয়েছে আপু?”

“কিছু না বাড়িতে গিয়ে বলবো।চল এখন।”

প্রহর বিরক্ত হয়ে হাঁটছে।অরিহার কথা তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।আষাঢ় ভাইকে যতটা ভালো লেগেছে তার থেকে দ্বিগুণ বিরক্ত লাগছে এই মেয়েকে।হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির কাছাকাছি আসতে দেখা হলো আষাঢ়ের সাথে।ফরমাল লুকে সে।অরিহা ভাইকে দেখে চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“চিত্রা আপু ওই যে আমার ভাইয়া।চলো পরিচয় করিয়ে দেই”

চিত্রা সামনে তাকিয়ে আষাঢ়কে দেখতে পেলো।আষাঢ় ঘেমে জবজব হয়ে গিয়েছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পরে আছে।শার্টের হাতা কনুই অব্দি ফোল্ড করা।চিত্রাকে টেনে নিয়ে আসে অরিহা।আষাঢ় সামনে তাকিয়ে বোন এবং চিত্রাকে দেখে চমকায়।চিত্রাকে দেখে ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি ফুটে ওঠে।যা দু’জন খুব ভালো করেই খেয়াল করে।চিত্রা এবং প্রহর বিষয়টি খেয়াল করে।প্রহর এটাও বুঝতে পারে আষাঢ় ভাইয়ের তার বোনকে ভালোই লেগেছে।এতে মনে মনে সে ভীষণ খুশি হয়।তবে তার বোন যে এই সব পছন্দ করে না তা সম্পর্কে সে অবগত।

“আষাঢ় ভাই কেমন আছেন?”

প্রহরকে দেখে হাসলো আষাঢ়। প্রহরকে সে প্রথম দিন থেকেই চিনে।এখানে আসার সময়ই পরিচিত হয়েছে।তবে সে এখনো জানে না প্রহর চিত্রার ভাই।
“আমি ভালো আছি।তা তুমি মেয়েদের সাথে যে”

প্রহর মুখ গোমড়া করে বলল,,,“চিত্রা আপু জোর করে খেলা থেকে টেনে নিয়ে এসেছে।”

“ভাইয়া তুমি এই বাঁদর ছেলেকে চেনো।এই ছেলেটা আমার সাথে শুধু ঝগড়া করে”

“অরিহা এমন করে বলতে হয় না।তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”

“চিত্রা আপুর সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলাম।এটা চিত্রা আপু”

“হ্যালো মিস চিত্রা”

চিত্রা ছোটদের সামনে ভদ্রতার খাতিরে উত্তর দিলো।এরপর প্রহরকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো।প্রহর তো আষাঢ়ের প্রশংসা করতে করতে চিত্রার কান ঝালাপালা করে ফেলেছে।চিত্রা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে।প্রহর নিজের রুমে এসে উড়াধুড়া নাচলো কতক্ষণ।আষাঢ় ভাই তার বোনকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।প্রথম দিন দেখেই তার আষাঢ়কে পছন্দ হয়েছে বেশ।এরপর পরতে বসলো সে।না হলে বাবার হাতের থাপ্পড় যে কতগুলো খেতে হবে বলতে পারছে না।কোচিং বন্ধ এ ক’দিন তাই বিকালে খেলতে পারছে।স্যার অসুস্থ বিধায় বন্ধ দিয়েছে।

আষাঢ় ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় আসলো।আজ পরপর তিনটে ক্লাস ছিলো।যার কারণে প্রচুর ক্লান্ত সে।চিত্রার কথা মাথায় ঘুরঘুর করছে।চিত্রার কথা একটু বেশিই ভেবে ফেলছে সে।মাথাটা ধরেছে বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন তার।বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাত নয়টার দিকে খেতে আসলো।সবাই মিলে খেয়ে যার যার রুমে চলে গেলো। আষাঢ়ের চোখে এখনো চিত্রার মুখখানি ভেসে উঠছে।কি নিষ্পাপ সেই মুখখানি। তবে সে যতটা শক্ত নিজেকে দেখায় সে কি আদেও তেমন।কফিতে চুমুক দিতে দিতে বারান্দায় প্রবেশ করলো।তখনই চোখ পরলো তার সামনের বারান্দায়।যেখানে আগে থেকেই চিত্রা বসে আছে।তাকে দেখে উঠে চলে যায়।আষাঢ় মৃদু হাসে।

”আপনার এই ব্যক্তিত্বই আমার মনে ধরেছে চিত্রা।আমি আপনার প্রেমে পরেছি।ভয়ংকর ভাবে প্রেমে পরতে চলেছি।তবে আপনায় মানানো কি ততোটা সোজা?”

#চলবে