আষাঢ়ে প্রণয় সন্ধি পর্ব-০৮

0
196

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮

চিত্রা বাড়ি ফিরে মরিয়ম সুলতানার কাছে শুনে তার আব্বু বাড়িতে। এই সময়ে সাধারণত বাড়িতে থাকেন না আরমান সাহেব।তবে আজ বাড়িতে আছেন শুনে চিত্রা বেশ অবাক হলো। ফ্রেশ হয়ে এসে আব্বুর রুমের দিকে যায় সে।রুমের সামনে এসে বলে,,
“আসবো আব্বু”

আরমান সাহেব উঠে বসলেন।নিজের অসুস্থতার কথা জানাতে ইচ্ছে হয় না তার।চিত্রাকে আসার অনুমতি দিলেন। চিত্রা রুমে ঢুকে দেখে দেখে তার আব্বু বসে আছে।সে এগিয়ে এসে বসলো সোফায়।মিহি কন্ঠে শুধালো,,
“তুমি আজ এই সময়ে বাড়িতে যে। অসুস্থ তুমি আব্বু?”

আরমান সাহেব মুচকি হাসলেন।মেয়েটা কিভাবে যেনো তার চেহারা দেখেই বুঝে ফেলে সে অসুস্থ নাকি সুস্থ। মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসেন তিনি।তার রাজকন্যা।মনে ভয় হয় তার সে যখন না থাকবে কি করবে মেয়েটা। নিজেকে যতই শক্ত দেখাক না কেনো সে তো জানে তার মেয়েটা মনের দিক থেকে বড্ড নরম মানুষ। তবে সেসব ঢাকা পরে গিয়েছে শক্ত খোলসের আবরণে।চিত্রার কপালে হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করলো জ্বর এসেছে কি না তার আব্বুর।

“একটু অসুস্থ আম্মা।বুকে ব্যাথা বেড়েছে!”

“নির্ঘাত তুমি ঠিকমতো ওষুধ খাওনি। তোমাকে নিয়ে আর পারা গেলো না। এখনো ঠিক মতো ঔষধ খাও না। দুপুরে খেয়েছো?”

আরমান সাহেব মুচকি হেসে বলেন,,,“আমি খেয়েছি আম্মা দুপুরে সাথে ওষুধ ও খেয়েছি। তুমি চিন্তা করো না।তোমার আব্বু একেবারে ঠিক আছে।”

চিত্রা হেসে ফেলে। আরমান সাহেব তাকিয়ে দেখেন মেয়ের মুক্তোর মতো ঝড়া হাসি।এ হাসি সব সময় থাকে না। তার চঞ্চল,প্রাণবন্ত মেয়েটি আজকের চিত্রা।আরমান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।চিত্রা কিছুক্ষণ কথা বলে বের হয়ে যায়।চিন্তুত সে আব্বুকে নিয়ে। হুট করে অসুস্থ হওয়া ব্যাপারটা সে বুঝতে পারলো না। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে,ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।

আষাঢ় আজ ছুটি নিয়েছে।বোনকে স্কুলে ভর্তি করাবে আজ। আরমান সাহেব সব ঠিক করে রেখেছেন।শুধু আজ গিয়ে ফর্মালিটিস পূরণ করে আসতে হবে। আষাঢ় তাড়া দিচ্ছে অরিহাকে। অরিহাও একটা ওয়ান পিস পরে বাইরে আসে।দু’জন বের হয়ে যায়।রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে দু’জন। চিত্রাও তখনই বাড়ি থেকে বের হয়। অরিহা দৌড়ে চিত্রার কাছে আসে। চিত্রা তাকায় অরিহার দিকে।

“চিত্রা আপু আমি স্কুলে ভর্তি হতে যাচ্ছি আজ”

“প্রচুর এক্সাইটেড বুঝি?”

“হ্যাঁ প্রচুর। নতুন স্কুল, নতুন বন্ধু। আমার তো ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। আমি আগামী কাল থেকেই স্কুল করবো। আর তুমি কবে থেকে পড়াবে চিত্রা আপু?”

“এক তারিখ থেকে তোমাকে পড়াবো তোমাকে অরিহা। আর শোনো কোনো সমস্যা হলে আব্বুকে বা প্রহরকে বলো। ওরা তোমাকে সাহায্য করবে”

অরিহা প্রহরের নাম শুনে মনে মনে কয়েকটা গালি দেয়। সেদিন ওর কতো সুন্দর আর্টটা নষ্ট করে এসেছে। একবার পেলে চিবিয়ে খাবে।অরিহা হেসে মাথা নাড়ায়। ততক্ষণে আষাঢ় রিকশা পেয়ে গিয়েছে। দুটো রিকশা থামিয়েছে সে। একটায় নিজেরা উঠে বসলো। আরেকটা চিত্রার জন্য। চিত্রা কিছু না বলে চড়ে বসলো তাতে। আষাঢ় রা স্কুলে পৌঁছে যায় তাড়াতাড়ি। বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের পথ রিকশায়।বেশি দূরে না। অরিহা আষাঢ় টিচার্স রুমে আসে। সেখানে বসে ছিলেন আরমান রহমান। আষাঢ়কে দেখে হাসেন। এরপর সব কিছু কম্পিলিট করে আষাঢ়।আরমান সাহেব প্রহরকে ডেকে অরিহাকে ক্লাসে দিয়ে আসতে বলে।প্রহরের ইচ্ছে না থাকা শর্তেও যেতে হবে। দু’জন পাশাপাশি হাঁটছে। প্রহরকে অরিহা জিজ্ঞেস করে,,

“আচ্ছা স্কুলে কি খুব মজা করো তোমরা? আমি প্রচুর এক্সাইটেড। আগের স্কুলে আমার তেমন বন্ধু-বান্ধবী ছিলো না। তবে আমি ভেবে রেখেছি এখানে অনেক গুলো বন্ধু বান্ধবী বানাবো।”

প্রহর বিরক্ত হয়ে বলল,,,“আমি শুনতে চেয়েছি তোমার কাছে?এতো কথা কেনো বলো তুমি?মুখ ব্যাথা হয় না।আমার আপুকে দেখেছো কত কম কথা বলে”

অরিহা দাঁড়িয়ে পরে। প্রহর ভ্রু কুঁচকে তাকায় অরিহার পানে।অরিহা কোমড়ে হাত দিয়ে প্রহরের দিকে তাকিয়ে বলে,,
“ওই তুমি কি বল্লা আমি বেশি কথা বলি?তুমি কি হ্যাঁ ফাজিল কোথাকার। তোমার বড় আমি সম্মান করো আমাকে!”

প্রহর ঝুঁকে বলল,,“তোমার হাইট দেখো আমার কাঁধ সমান তুমি।আমার কাঁধের ও সমান না আবার কথার তেজ দেখো! তোমাকে বড় বলে কে মানে।”

“তুমি কিন্তু বেয়াদবি করছো প্রহর”

প্রহর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,,“বেয়াদপি বড়দের সাথে করা হয়। তুমি কি বড়। যেই না হাইট”

“তুমি তুমি একটা রাম ছাগল।আমার সাথে কথা বলবে না আর। তোমাকে যেনো আমার চোখের সামনে আর না দেখি। চিত্রা আপুর কাছে নালিশ করবো বিকালে”

অরিহা হাঁটা দেয়। প্রহর থতমত খেয়ে যায়। এই মেয়ে কথায় কথায় চিত্রা আপাকে বলে দেওয়ার ভয় দেখায়। দৌড়ে এলো অরিহার কাছে। পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল ,,,“তুমি বড্ড বলদ অরিও বিস্কুট”

“তুমি কিন্তু আবারও আমাকে অরিও বিস্কুট বলছো।তুমি নিজে কি হ্যাঁ একটা রাম ছাগল কোথাকার।”

কথা বলে না দু’জন আর। অরিহা নিজে স্কুল ঘুরে দেখে।প্রহর বিরক্ত হয়ে পিছন পিছন ঘুরেছে। যদি একা রেখে যায় তাহলে আবার আব্বুর কাছে বকুনি ফ্রি।এই মেয়েটা তার জীবনে আসার পর থেকেই তার জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে ফেলেছে।প্রহর এবার বিরক্ত হয়ে বলে,,,

“হয়েছে তোমার?দেখা হলে চলো আষাঢ় ভাই অপেক্ষা করছে”

অরিহা মুখ বাঁকিয়ে আবারও টিচার্সরুমের সামনে আসলো। আষাঢ় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো তার জন্য। [লেখিকা ইশা আহমেদ ]অরিহা এবং আষাঢ় প্রহরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।অরিহার স্কুলটা ভীষণ পছন্দ হয়েছে।বেশ বড় স্কুল।প্রহর নিজের ক্লাসে চলে আসে। অরিহার জন্য কতক্ষন হাঁটতে হয়েছে তাকে।

সাজিয়া বাড়ি থেকে বের হতে হতে তার মামিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,“মামি আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি”

সাজিয়ার মামি রতনা বেগম দৌড়ে এসে বলেন,,,“এই ক’দিন আর ভার্সিটিতে যাওয়ার প্রয়োজন নাই।বিয়ে শুক্রবার। এখন ভার্সিটিতে গিয়ে কি করবি। এমনিতেও মনে হয় ওরা পড়াবে না তোরে”

সাজিয়ার রতনা বেগমের কথাগুলো শুনে ভীষণ খারাপ লাগে।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,,,
“মামি যেই ক’দিন বিয়ে না হয় সেই ক’দিন যাই।প্লিজ মানা করো না। তোমাদের আর জ্বালাবো না।আর তো মাত্র ৪ দিন আছে”

“আচ্ছা ঠিক আছে যা। তবে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবি।”

সাজিয়া মাথা নাড়িয়ে বের হয় বাড়ি থেকে।তার মামাদের চারপাশে দেওয়াল এবং উপরে টিন দেওয়া চার রুমে একটা ঘর।মামাতো দুটো ভাই আছে তার ছোট ছোট। একটা কলেজে আরেকটা পঞ্চম শ্রেনীতে পরছে।দু’জন তাকে যথেষ্ট ভালোবাসে।ছোটজন সে বলতে পাগল।ছেলেটা সাজি আপু সাজি আপু করে বাড়ি মাথায় তুলে।সাজিয়া হেঁটে এসে মেইন রোড থেকে সিএনজিতে উঠে।দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার।ভার্সিটির সামনে এসে নামে সে। চিত্রাকে কল করে সাজিয়া।

“সাজি আমি এসে পরেছি তুই দুই মিনিট অপেক্ষা কর”

“আচ্ছা ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করছি। তুই দ্রুত আয়।”

চিত্রা রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে আসলো সাজিয়ার কাছে। দু’জন টুকটাক কথা বলে ভার্সিটিতে প্রবেশ করলো।ক্যাম্পাসে ছেলে মেয়েতে পরিপূর্ণ।কেউ হেঁটে ক্লাসে যাচ্ছে তো কেউ বসে গল্প করছে।দু’জন ক্লাস করে বের হয়।চিত্রা সাজিয়াকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে।মরিয়ম সুলতানা নিয়ে যেতে বলেছেন।মেয়েটার বিয়ে ক’দিন পর। তাই এখন একটু ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়াবেন।

“সাজি আমাদের বাসায় যাবি তুই এখন।আম্মা যেতে বলেছে।”

“কিন্তু চিত্রা মামি আজ তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। ভার্সিটিতেই আসতে দিতে চাইছিলো না। এক প্রকার জোড় করে এসেছি। আবার যদি দেরি করে বাড়িতে যাই তাহলে আর আমায় আস্ত রাখবে না”

“আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি”

সাজিয়া কথা বাড়ালো না।সে জানে এখন কিছু বললেও চিত্রা শুনবে না।ফোন করলো রতনা বেগমকে।রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর শোনা গেলো,,,

“কি রে কোথাই তুই?তাড়াতাড়ি আসবি বলে এখনো আসা হয়নি। তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানলে কি ভাববে বুঝতে পারছিস। তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়”

“মিসেস রতনা বেগম আমি চিত্রা বলছি। সাজিয়া এখন যাবে না। আমার বাসায় যাচ্ছে। সন্ধ্যায় পৌঁছে যাবে। আর কে কি ভাবলো তাতে আমার বা সাজিয়ার কিছু যায় আসে না। বাড়ি ফিরলে ওকে একটা কথাও শোনাবেন না”

রতনা বেগম থতমত খেলেন। এই মেয়েটাকে তিনি শুরু থেকেই ভয় পান। চিত্রা সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা আছে তার।তাই জোরপূর্বক হেসে বললেন,,,
“আচ্ছা ঠিক আছে মা।”

রতনা বেগম দ্রুত ফোন কাটলো।বেশি কথা বাড়ালে এই মেয়ে নির্ঘাত তাকে ধুয়ে ছেড়ে দিতো।চিত্রা সাজিয়ার দিকে তাকিয়ে শুধালো,,,
“তো এবার কি যাওয়া যাবে”

সাজিয়া মাথায় নাড়ায়। দু’জন রিকশা চেপে রওনা হয় চিত্রার বাড়ির উদ্দেশ্যে। চিত্রা ভেবে নিয়েছে আজকের দিনটা সে ভীষণ ভালো করে কাটাবে সাজিয়ার সাথে।নিশীথ যদি পরে বেঁকে বসে তার সাথেও মিশতে না দেয় তখন কি চিত্রার।এই মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসে সে।একটু বেশিই ভালোবাসে।

#চলবে~