আষাঢ়ে প্রণয় সন্ধি পর্ব-০৯

0
175

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৯

নিরব,শান্ত পরিবেশ।সবুজ গাছপালায়ঘেরা বাড়িটিতে শব্দের কোনো চিহ্ন নেই।কোলাহল ছাড়া শান্তিময় দোতলা বাড়ি।নিশীথ এবং তার মা তাদের বড় বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন।চায়ের কাপটি নিঃশব্দে টেবিলে রেখে জান্নাত ইসলাম শান্ত কন্ঠে নিশীথকে উদ্দেশ্য করে শুধালেন,,
“তোমার সাজিয়া নামক মেয়েটিকে পছন্দ তো নিশীথ।যদি অপছন্দ হয় তাহলে বলতে পারো আমি বিয়েটি ভেঙে দিবো।তোমার অমতে বিয়ে আমি কখনোই দিবো না।”

নিশীথ বুঝলো না কেনো তার মা এই অসময়ে এসে জিজ্ঞেস করছে তার সাজিয়াকে পছন্দ কি না। বেশ অদ্ভুত!বিয়ের তিন থেকে চারদিন বাকি। তার ছুটি নেওয়া ও শেষ।আর এখন এই কথা বলছে। যদিও আগে নিশীথকে জান্নাত ইসলাম জিজ্ঞেস করেছেন। তখন নিশীথ বলেছিলো তার পছন্দ হলেই বিয়ে করবে সে। তার আপত্তি নেই। নিশীথের জীবনে কোনো কালেই কেউ ছিলো না। তাই বিয়ে করতে তার কোনো সমস্যা নেই।

“আম্মা আমার সাজিয়াকে পছন্দ হয়েছে। মেয়েটির শান্তশিষ্ট স্বভাবটি বিশেষ করে মন কেড়েছে আমার।তবে আম্মা তুমি তাকে কোথায় পেলে।”

“চিত্রার সাথে বেশ কয়েকবার দেখেছি আমি।এরপর খোঁজ খবর নিলাম। মেয়েটিকে ভালো লাগলো। কষ্ট পেয়েছি তার অতীত জেনে ভীষণ।”

নিশীথের মনটা খারাপ হলো।মেয়েটা জীবনে কতো কিছুই না সহ্য করেছে।সে সব কিছুই জানে। সাজিয়ার মামা তাদের জানিয়েছে।নিশীথের ভাবনার মাঝে জান্নাত ইসলাম আবারও বললেন,,,
“আগামীকাল তুমি সাজিয়াকে নিয়ে শপিং করে এসো।ওর যা যা পছন্দ তাই কি দিবে।মেয়েটাকে নিজের ইচ্ছে মতো শপিং করাবে বুঝলে”

“ঠিক আছে আম্মা”

দু’জন কথা বাড়ালো না আর। আগামীকাল থেকে বাড়িতে মেহমান আসা শুরু করবে।নিশীথ একটু বেরোবে বিকালে।আষাঢ়দের বাড়িতে যাবে আরকি।এই ক’দিন সময়ই পাইনি যাওয়ার। সমুদ্রকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। সে তার কাজে ব্যস্ত তাই আজ নিজেই যাবে ভেবেছে।বিয়ের দাওয়াত ও করে আসবে একেবারে।নিশীথ মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলো।

স্কুলের করিডোর দিয়ে হাঁটছিলো অরিহা।আজই প্রথম স্কুলে এসেছে।ভাইয়া তাকে দিয়ে গিয়েছে।এখনও ক্লাস শুরু হয়নি। একটু পরে শুরু হবে।প্রথম পিরিয়ডে গনিত ক্লাস হয়েছে।অনেকগুলো বান্ধবী হয়েছে তার।সবাই খুব ভালো।বিশেষ করে নাজিফা নামক মেয়েটি বেশি ভালো।বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে।নাজিফা এবং সে গল্প করছিলো হঠাৎ ই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেলো সে।হাতে ব্যাথা পেয়েছে সে।সামনে তাকিয়ে প্রহরকে দেখে মেজাজটা খারাপ হলো তার।নাজিফা দ্রুত এগিয়ে এসে ধরলো তাকে।প্রহর নিজেও থতমত খেয়ে গিয়েছে।সে তো ভাবেই নি এমন হবে।দ্রুত অরিহার কাছে এসে বলে,,,

“তুমি ঠিক আছো তো অরিও বিস্কুট”

অরিহা আরো রেগে যায়।উঠে দাঁড়িয়ে প্রহরের দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,,,“তুমি আমায় ধাক্কা কেনো মেয়েছো।আর তোমাকে না বলেছি অরিও বিস্কুট বলবে না আমাকে”

নাজিফা হা করে দেখছে দু’জনকে।প্রহরকে কে না চিনে।প্রহর হলো স্কুলের সব থেকে দুষ্ট ছেলেদের মধ্যে একজন।দেখতে সুদর্শনও বটে।অরিহা এবং প্রহরের কথাবার্তা শুনে সে বুঝলো দু’জন পূর্বপরিচিত।প্রহর অরিহার কথায় পাত্তা না দিয়ে নাজিফাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,

“আপু আপনি একটু অরিহাকে নিয়ে ক্লাসে যান পায়েও ব্যাথা পেয়েছে বোধহয়। আর তুমি স্কুল ছুটি হলে দাঁড়াবে আমি বাসায় নিয়ো যাবে।আষাঢ় ভাই তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।”

প্রহর কথাটা বলে এক মুহুর্ত ও দাঁড়ালো না।পকেটে হাত গুঁজে শিস বাজাতে বাজাতে স্থান ত্যাগ করলো। অরিহা রাগে ফুঁসছে। এই ছেলেটা তাকে সম্মানই করতে চায় না মোটে।নাজিফাকে কত সুন্দর আপু বলে সম্মান করলো।বেয়াদপ ছেলে।নাজিফা অরিহার ভাবনার মাঝে বিষ্ময়কর কন্ঠে শুধালো,,,
“অরিহা তোমার মানে তোর সাথে প্রহরের কি সম্পর্ক বলতো।”

“ওদের পাশের বাড়িটি আমাদের। ওর আপু আমায় এক বাজে পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়েছিলো এবং সে অনেক ভালো।এই ফাজিল ছেলেটার মতো নাহ।এই ছেলে তো ভাবওয়ালা। ঢং দেখে বাঁচি না”

নাজিফা অরিহাকে ধরলো। অরিহা নাজিফার কাঁধে ভর দিয়ে ক্লাসে চলল।বড্ড বদমাশ এই ছেলে।অরিহা কতগুলো গালি দিলো প্রহরকে।এই ছেলে সব সময় তার পিছে লেগে থাকে।টিফিন টাইমে ছুটি নেয় অরিহা।যদিও একা যেতে ভয় করছে। তবে সেও সাহসী হতে চায়। তাই একা যাওয়ারই চিন্তা ভাবনা করলো।ক্লাস রুম থেকে ব্যাগ নিয়ে নাজিফাকে বিদায় জানিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বের হলো স্কুল থেকে।কিছুদূর যেতেই টের পেলো তাকে কেউ ফলো করছে।পেছনে ঘুরে প্রহরকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।প্রহর এগিয়ে এসে বলল,,

“ছুটি নিলে কেনো তুমি?প্রথম দিন এসেই ছুটি নিলে।এতো ফাঁকিবাজ তুমি। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ভালো মেয়ে”

অরিহা ভ্রু কুচকে তাকালো প্রহরের দিকে।অতঃপর নাক মুখ কুঁচকে শুধালো,,,“ছুটি নেওয়ার সাথে ভালো মেয়ের কি সম্পর্ক?”

“অবশ্যই এর সাথে সম্পর্ক আছে। কখনো দেখেছো কোনো ভালো মেয়ে প্রথম দিন এসেই স্কুল থেকে ছুটি নেয়?”

“আমি নেই তোমার সমস্যা। সমস্যা থাকলে আমার কিছু যায় আসে না বুঝেছো। তুমি না আমাকে বাঁচাল বলো তাহলে তুমি নিজে কি। আজ এতো কথা বলছো?”

“আমি কি তোমাকে ধরবো?তুমি তো হাঁটতে পারছো না।”

অরিহা মুখ বাঁকিয়ে বলল,,, “তার কোনো প্রয়োজন নেই বুঝেছো!আমি একাই হাঁটতে পারি। তুমি আমার পেছন পেছন কেনো আসছো?”

“আষাঢ় ভাই আমাকে বলেছেন তোমাকে নিয়ে যেতে তাই তোমার পেছনে পেছনে হাঁটছি। চলো অটো বা রিকশাতে করে যাই তুমি তো ঠিকমতো হাঁটতে পারছো না”

“দরকার নেই তার আমি হেঁটেই যাবো।অনেকটা কাছেই চলে এসেছি। আর পায়ে ব্যাথা তো আমি তোমার জন্যই পেয়েছি ফাজিল ছেলে।বড়দের সম্মান করতে জানো না”

“অন্যদের সম্মান করতে জানলেও তোমাকে জানি না
অরিও বিস্কুট”

অটো দেখে দাঁড়াতে বললো প্রহর। অরিহা হেঁটে যাচ্ছিলো।প্রহর পেছন থেকে ব্যাগ টেনে ধরে। অরিহা দাঁড়িয়ে পরে।প্রহর পেছন থেকে বলে,
“তুমি যদি অটোতে না উঠো তাহলে কিন্তু আমি জোর করে উঠাবো।”

অরিহা প্রহরকে মনে মনে গালি দিয়ে উঠে বসলো।পায়ে প্রহর বসেছে তার সামনের সিটে।দু’জন বাড়ির সামনে এসে নামলো।প্রহর ভাড়া মেটালো।এরপর অরিহার ব্যাগটা নিজের কাছে নিলো।অরিহাকে উদ্দেশ্য করে শুধালো,,
“তুমি একা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারবে না আমি সাহায্য করবো?”

“তোমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার। আমি একাই উঠতে পারবো। নিজে ফেলে দিয়ে এখন ডং দেখাতে এসেছে গরু কোথাকার”

“এই তুমি কি বললে আমি গরু। তুমি গরু অরিও বিস্কুট কোথাকার।”

অরিহা ফিক করে হেসে ফেললো।অতঃপর হাসি থামিয়ে বলল,,,“তুমি নিজেই তো নিজেকে বললে গরু?”

প্রহর থতমত খেলো।কি বলে ফেললো সে। অস্বীকার করে বলল,,,
“আমি মোটেও বলি নি তুমি মিথ্যা বলছো”
“ না না আমি মোটেও মিথ্যা বলছি না। তুমি বলেছো যে আমি গরু”

প্রহর দাঁত কেলিয়ে বলল,,“আমি না বললেও তুমি তো মাত্র বললে তুমি গরু।যাই হোক কলিংবেল বাজাও বাসায় যাও আমি যাচ্ছি”

প্রহর এক মুহুর্ত ও না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। অরিহা হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজালো।বেলী বেগম এসে দরজা খুললেন।দরজা খুলে এই সময় মেয়েকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলেন। আজই প্রথম স্কুলে গেলো আর কিছুক্ষণের মাঝেই ফিরে আসলো।কিছু হয়েছে নাকি এই নিয়ে চিন্তায় পরে গেলেন। অরিহা খুড়িয়ে খুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।পায়ে সে ভালোই ব্যাথা পেয়েছে।সোফার কাছে এসে ধপাস করে বসে পরলো।বেলী বেগম দরজা আটকে অরিহার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,,,

“তুই এখন বাড়িতে কেনো?”

“প্রহরের বাচ্চা ফেলে দিয়েছে। পায়ে হাতে ব্যাথা পেয়েছি”

বেলী ছুটে এসে অরিহার পাশে বসলেন।এরপর হাত দেখতে দেখতে বললেন,,,“কোথায় কি হয়েছে দেখি?প্রহর ফেলে দিয়েছে কেনো তোকে?একা এসেছিস কেনো তুই। ফোন করতি অফিস রুম বা তোর আরমান আঙ্কেলের কাছ থেকে আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম”

অরিহা মায়ের এতোগুলো প্রশ্ন শুনে বললো,,,“ উফ আম্মু এতোগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর আগে দিবো বলো তো”

“একেক করে সবগুলোর উত্তর দে”

“পায়ে লেগেছে আমার। প্রহর বজ্জাত দৌড়ে কোথা থেকে আসতে গিয়ে আমায় ও ধাক্কা মেরেছে এবং নিজে আমায় বাসায় দিয়ে গিয়েছে ভাইয়া নাকি দিয়ে যেতে বলেছে প্রহরকে”

“আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। তুই হাত মুখ ধুয়ে আয় ততক্ষণে”

অরিহা মাথা নেড়ে হাত মুখ ধুতে যায়। প্রহর তাকে এগিয়ে দিয়েছে কেনো তা সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। তার কারণেই সে পড়ে গিয়েছিলো বিধায় প্রহর বাড়িতে দিয়ে গেলো।অরিহা বিরবির করে বলল, আস্ত খাটাশ একটা।

#চলবে~