আষাঢ়ে প্রণয় সন্ধি পর্ব-১০

0
201

#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১০

চিত্রা এবং সাজিয়া বাড়িতে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ। চিত্রার রুমে বর্তমানে তাদের অবস্থান।দু’জন ক্লান্ত তাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। চিত্রা উঠলো গোসল করার জন্য। দুপুর ২টা বাজে।সে এই সময়ই সাধারণত গোসল করে থাকে। সাজিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি ঘুমিয়ে পরেছে।সে মৃদু হেসে জামা কাপড় নিয়ে গোসল করতে গেলো।গোসল সেরে বের হতেই দেখলো সাজিয়া উঠে পরেছে। চিত্রা মৃদু হেসে বলল,,,,

“উঠেছিস কখন?গোসল করবি?চাইলে করতে পারিস”

সাজিয়া বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,,,“মাত্র উঠেছি। গোসল বাড়ি যেয়েই করে নিবো। এখন আর করার প্রয়োজন নেই”

“আচ্ছা তাহলে যা ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি আম্মার কাছ থেকে আসছি। দেখি রান্না হলো কি না এসেই তো ঘুমিয়ে পরেছিলাম। একা কি করছে কে জানে। ফ্রেশ হয়ে তুই ও চলে আয়। ”

সাজিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।এরপর সাজিয়া ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে মরিয়ম সুলতানা এবং চিত্রার কাছে চলে আসে।মরিয়ম সুলতানা রান্না করছেন এবং চিত্রা টুকটাক সাহায্য করছে। মরিয়ম সুলতানা সাজিয়াকে দেখে মৃদু হেসে বললেন,,,
“ঘুম ভালো হয়েছে সাজিয়া তোর?”

“হ্যাঁ আন্টি ভালো হয়েছে। বলো কি সাহায্য লাগবে আমিও করে দেই। একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।”

মরিয়ম সুলতানা গ্যাসের উপর থেকে তরকারি নামিয়ে বললেন,,“যা তুই আর চিত্রা খাবারগুলো টেবিলে সাজা। আমি বরং গোসল সেরে আসি। নামাজটাও পরে আসবো। এখনো পড়া হয়নি”

সাজিয়া মাথা নাড়ায়। মরিয়ম সুলতানা স্থান ত্যাগ করেন।সাজিয়া এবং চিত্রা মিলে সব কিছু টেবিলে রাখে। এরপর বসার রুমে এসে সোফায় বসে পরে।টিভি চালিয়ে টিভি দেখছে দু’জন। হুট করে সাজিয়া বলে উঠে,,,
“নিশীথ কি আসলেই ভালো চিত্রা। উনি কি আমায় ভালোবাসবেন?আমায় নিজের বক্ষ পিঞ্জিরায় আগলে রাখবেন?আমার না ভয় হচ্ছে”

“কিছু হবে না সাজি। হয়তো নিশীথ ছেলেটা ভালো।তার কথাবার্তা শুনে আমার ভালো লেগেছে। এখন দেখা যাক কেমন হয়।আর কিছু হলে আমাকে বলবি। আমি ব্যবস্থা করে দিবো”

মরিয়ম সুলতানা আধা ঘন্টার মধ্যে চলে আসেন। তিনজন একসাথে খেতে বসেন। খাওয়ার মাঝে মরিয়ম সুলতানা সাজিয়াকে উদ্দেশ্য করে শুধালেন,,,
“সাজিয়া মা আমি বুঝতে পারছি তুই বিয়ের বিষয়টা নিয়ে ভয়ে আছিস। তবে ভয় পাস না। আমরা যতটুকু তাদের চিনি তোকে কখনো কষ্ট দিবেন না তারা।নিশীথ ছেলেটাও ভালো।তুই সুখে থাকবি। চিন্তা করিস না”

“ধন্যবাদ আন্টি তোমাকে। দোয়া করো আমার জন্য। এবার যদি কপালে একটু সুখ লেখা থাকে”

“এইভাবে বলা উচিত না সাজিয়া। তুই যথেষ্ট ভালো আছিস। যারা রাস্তায় থাকছে,একবেলা খেতে পারছে না,একটু খাবার পাওয়ার আশায় কতো কি করছে। তাদের কি বলবি তুই?”

সাজিয়া ভাবলো আসলেই সেই হিসাবে সে বড্ড সুখী। হোক মামী ভালোবাসে না তবে মামাতো ভাইরা আর মামা তো তাকে কম ভালোবাসে না। সাথে চিত্রা ও আছে। সেই হিসাবে সে সুখী। অনেক সুখী।মরিয়ম সুলতানা সাজিয়ার মনোভাব বুঝে হাসলেন। মেয়েটাকে সে চিত্রার মতোই ভালোবাসে। কতোবার বলেছেন এখানে এসে থাকতে তবে মেয়েটি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে প্রতিবার।মেয়েটিকে তার ভালো লাগে। ভদ্র নম্র একটি মেয়ে। সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্রার।

আসরের আযান দিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।নিশীথ বাড়ি থেকে বের হয় আষাঢ়দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। সমুদ্রকে কল করে হাঁটতে হাঁটতে। রিসিভ করতেই নিশীথ শুধালো,,
“আষাঢ়দের বাড়িতে চলে আয়। কোনো কথা না। তোর ব্যস্ততার গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়বো কিন্তু সমুদ্র না আসলে”

সমুদ্র মুখ বাঁকিয়ে বলে,,,“আসছি আমি। অপেক্ষা কর।”

নিশীথ কল কেটে মৃদু হেসে পা বাড়ায় আষাঢ়দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কলিংবেল চাপতেই অরিহা এসে দরজা খুলল।নিশীথকে দেখে হেসে বলল,,,“ভালো আছো নিশীথ ভাইয়া। তোমার নাকি বিয়ে?আমাকে এখনো বলোনি তুমি। তোমার সাথে কথা নেই যাও”

নিশীথ হেসে অরিহার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,,,“ভালো আছি আমি পাকনা বুড়ি তুই কেমন আছিস?আন্টি কোথায়?আষাঢ় কি এসেছে কলেজ থেকে?”

“এসেছে তো ভাইয়া। আর আম্মু ঘুমাচ্ছে। তুমি কিন্তু উত্তর দিলে না নিশীথ ভাইয়া”

“অফিসে কাজের চাপ ছিলো বুড়ি তাই জানাতে পারিনি তবে দেখ আজ সোজা চলে এসেছি।তুই খুশি হোসনি?”

“হয়েছি। যাও ভাইয়া নিজের রুমেই আছে”

নিশীথ মৃদু হেসে পা বাড়ালো আষাঢ়ের রুমের দিকে।রুমে ঢুকতেই দেখলো আষাঢ় মাত্র গোসল সেরে বের হয়েছে। নিশীথকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলো।কারণ নিশীথ তাকে জানায়নি সে আসবে।আষাঢ় টিশার্ট পরে নিলো।নিশীথ ততক্ষণে রুমে থাকা সিঙ্গেল সোফায় বসে পরেছে।আষাঢ় বিছানায় বসলো।নিশীথকে উদ্দেশ্য করে আষাঢ় শুধালো,,
“তুই হঠাৎ আমার বাড়ি?তোকে তো হেরিকেন দিয়ে খুঁজলেও এলাকায় পাওয়া যায় না। আর সেই তুই আমার বাড়িতে।বাহ বেশ ভালো।”

নিশীথ বিরক্ত হয়ে বলল,,
“ঢং কম কর।আমি বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছি।তোর সাথে আজাইরা পেঁচাল কে শুনবে বল তো।”

“আমার বউ শুনবে।সমস্যা তোর।যাহ যাবো না তোর বিয়েতে।”

“আচ্ছা তোর যাওয়া লাগবে না। আন্টি আর অরিহাকে পাঠিয়ে দিস।তোকে আমার কোনো কাজেই লাগবে না। তুই গেলে বরং সবাই আমাকে রেখে তোকে দেখবে”

কথাটা বলেই নিশীথ হেসে ফেললো সাথে আষাঢ়ও। তখনই রুমে সমুদ্র প্রবেশ করলো।আষাঢ় এবং নিশীথকে হাসতে দেখে সে ভ্রুু কুঁচকালো।সে সোজা এসে আষাঢ়ের পাশে ধপাস করে বসে পড়লো।এতে আষাঢ় এবং নিশীথ দুজনেই বিরক্ত হলো।এই ছেলে সব সময় এমন করে।আষাঢ় বিরক্ত হয়ে বলল,,,
“তুই কি শান্ত হবি না। এসেই ধুপধাপ করে বসে পড়িস কেনো ভাই। ধীরে সুস্থে বসবি তা না।”

“চুপ থাক।নিশীথ বিয়ে কইরে ফেলছে আর এই দিকে আমি সিঙ্গেল মরি এখনো এই ২৮ বছরের জীবনে কি করলাম ভাই।একটা গার্লফ্রেন্ড ও নেই। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি?আগের গার্লফ্রেন্ডটাও গেছে”

“থামবি তুই?অনেক বলেছিস এখন চুপ যা”

আষাঢ়ের উত্তর শুনে সমুদ্র মুখ বাঁকিয়ে বলে,,,“নিজে তো একটা অকর্মা। কাউকে পছন্দ ও করতে পারিস না।সেই কোন কালে একটা প্রেম করেছিলি, আবার আমাকে থামতে বলে!”

“কে বলেছে কাউকে পছন্দ করতে পারিনি। পছন্দ করি আমি একজনকে।সে আমার কাছে বিশেষ কেউ।”

সমুদ্র এবং নিশীথ অবাক হলো আষাঢ়ের কথা শুনে। যদিও নিশীথ একটু একটু ধারণা করতে পেরেছে মেয়েটি কে!তবে সমুদ্রের এ সব কিছু অজানা। তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। এই ক’দিন কাজের অনেক চাপ ছিলো বিধায় সে দেখাও করতে পারিনি।আর আজ আষাঢ়ের মুখে এমন কথা শুনে সে অবাক হয়েছে ভীষণ।সমুদ্র বিষ্ময়কর কন্ঠে শুধালো,,,
“কিহ!তুই পছন্দ করিস একজনকে।কে সে?কোথায় থাকে?তোর কাউকে পছন্দ হয়েছে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে রে আষাঢ়”

আষাঢ়ের বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকালো কিঞ্চিৎ।এই ছেলে কিছু হলেই একটু বেশিই করে ফেলে।সে বলল,,
“হ্যাঁ সেদিন বললাম না চিত্রাকে আমার ভালো লেগেছে। ওকেই পছন্দ করি আমি। বলতে পারিস ভালোবাসতে শুরু করেছি আমি তাকে”

“চিত্রাকে!আমি তো সেদিন ভেবেছিলাম তুই মজা করছিস।তুই সত্যিই চিত্রাকে পছন্দ করিস তা আমি কিভাবে জানবো বল তো?”

“বাদ দে। তবে আমি যে তার প্রেমে পরেছি। নিজেকে কেমন ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে। কিছু ভালো লাগছে না। কি করবো আমি বল তো”

নিশীথ মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তার প্রিয় বন্ধু যে খুব বাজে ভাবে মেয়ের মায়ায় জড়িয়েছে তা বুঝতে পারছে।সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,“তুই খুব বাজে ভাবে ওর প্রেমে পরেছিস। প্রেম খুবই ভয়ংকর আষাঢ়। কাউকে বাজে ভাবে শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখ।আর চিত্রা সম্পর্কে তো আমাদের সবারই কম বেশি ধারণা আছে। সে কেমন?”

“আমি জানি নিশীথ। তবে আমি ওর মায়ায় পরেছি। ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠেছে। এমন তো আগে হয়নি। ইউসার সাথে সম্পর্ক থাকার সময় ও তো এমন হয়নি। তবে এতো কেনো পুড়ছি আমি।আমি কি ওকে ভালোবাসি নিশীথ।হ্যাঁ হয়তো।”

“আচ্ছা ভালোবাসা এতো সহজ? ক’দিনের পরিচয়ে ভালোবাসিস তুই তাকে?এটা সম্ভব?”

সমুদ্রের কথায় নিশীথ জবাব দিলো,,,“হ্যাঁ সম্ভব। কার জীবনে কখন ভালোবাসা আসে বলা যায় না। কেউ বছরের পর বছর কারো সাথে থেকে ভালোবাসতে পারে না আবার কেউ কিছু দিনের পরিচয়ে কাউকে অসম্ভব ভালোবাসতে পারে?”

সমুদ্র ওসব কথা কানে না তুলে বলল,,,“বাদ দে। চল ছাদে যাই। রুমে ভালো লাগছে না। ছাদে গিয়ে প্রকৃতির খোলা হাওয়ায় আড্ডা দেই।নিশীথ তো দুদিন পর বিবাহিত ট্যাগ লাগাবে। আমাদের আর সময় ও দিতে পারবে না।”

আষাঢ় এবং নিশীথ হেসে ফেললো।এরপর সম্মতি দিলো।ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো তিনজন। আষাঢ় তবুও অন্যমনষ্ক রইলো।তার চিন্তায় এখন শুধু চিত্রার বিচরণ।কিভাবে নিজের করে পাবে সে ওই রমনীকে।চিত্রা নামক রমনীকে যে পাওয়া বেশ দুষ্কর। তবুও সে চেষ্টা করবে।

#চলবে~