আষাঢ়ে প্রেমের বর্ষণ পর্ব-০৪

0
5873

#আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ
#হাবিবুল্লাহ_হাবিব_ফুয়াদ
#পর্ব_৪
একটা মেয়ে আদ্র-কে খুব বাজে ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে।এটা দেখে আমি সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে নিলাম।কেননা এসব আমার একদমই সহ্য হচ্ছে না।মনের কোথাও একটা কেমন কেমন লাগতেছে আর আদ্র ভাইয়ার ওপর অনেক রাগ হচ্ছে।কিন্তু কেনো এমনটা হচ্ছে সেটা আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না।আশেপাশে কি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য প্রায় সাথে সাথেই চোখ খুললে দেখতে পাই,আদ্র ভাইয়া মেয়েটার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে অনেকটা রেগে কি যেনো বলছে।এটা দেখে আমি আদ্র ভাইয়াকে মনে মনে একটা ধন্যবাদ দিলাম কিন্তু কেনো দিলাম সেটা জানি না।তারপর আর ঐদিকে না গিয়ে অদ্রিদের কাছে ফিরে আসলাম।

কিছুক্ষন পর আদ্র ভাইয়া আমাদের কাছে আসলে আমরা বিয়ের কেনা-কাটা শুরু করলাম।বিয়ের জিনিসপত্রের কাছে যতই যাচ্ছি ততই আমি কিছুতেই মনকে স্বাভাবিক রাখতে পারছিনা।অনেক চেষ্টা করতেছি কিন্তু কিছুতেই পারছিনা।আমার অনেক কান্না পাচ্ছে মন চাচ্ছে চিৎকার করে কান্না করতে কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সেটাও পাচ্ছি না কিন্তু তারপরও কি কান্না থেমে আছে? ভিতরে ভিতরে তো আমার মন ভালোবাসার তীব্র বেদনার আগুনে পুড়ে দগ্ধ হচ্ছে।
________________________________________________
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বিছানার এক পাশে একটা চিঠি দেখতে পেলাম যেটা একটা লাল টকটকে গোলাপ ফুল দিয়ে চাপা দেয়া।চিঠিটা দেখার সাথে সাথেই আমার মনের মধ্যে ধক করে উঠলো। এ যে আমার পত্রপুরুষ এর চিঠি।পূর্বের ন্যায় আজকেও ঠিক একইভাবে রাখা,পূর্বের ন্যায় ঠিক একই সময় যার আবির্ভাব শুধু পার্থক্য একটাই পূর্বের ন্যায় আজকে আর সেই পত্র ভালোবাসার টানে উৎফুল্ল হয়ে পড়তে পারছি না।মন তো পড়ার জন্য আনচান করতেছে।কিন্তু সব সময় যে মনের কথা শুনতে নেই।কোনো কোনো সময় পরিস্থিতির কথা ও শুনতে হয়।আর আমি আজ সেই পরিস্থিতির শিকার।তাই,আমি চাইলেও যে আর এর বাহিরে যেতে পারবো না।তাই আর মনের কথা না শুনে,পরিস্থিতির সাথে নিজেকে পুরোপুরিভাবে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেছি।তারপর চিঠি-টাকে আগের চিঠিগুলোর সাথে রেখে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
________
“আপু তোমার কি কিছু হয়েছে?তুমি কি কোনো কারণে মন খারাপ করছো?” মনের বেদনা কমানোর জন্য গল্পের বই পড়ছিলাম এমন সময় হটাৎ অদ্রি এসে উপরের কথাটা বলল।

আমি এইভাবে হটাৎ কথা বলায় কিছুটা চমকে গেলাম।তারপর অদ্রিকে দেখে স্বাভাবিক হয়ে বললাম,
–‘আরে আমার আবার কি হবে?আমি তো ঠিকই আছি।’

আমার এমন কথায় অদ্রি কিছুটা আশাহত হলো।হবেই না বা কেনো?তার থেকে যে বারবার আমি বিষয়টাকে লুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।অদ্রি এবার আশাহত কণ্ঠে বলল,
–‘তোমাকে মনমরা দেখতে আমার একটুও ভালো লাগে না।কিছু হলে বলো আমাকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো’

অদ্রির এমন কথায় আমি বললাম,
–‘আরে না কিছুই হয় নি।আমি ঠিকই আছি।’
তারপর কথা কাটানোর জন্য বললাম,
–‘তা কিছু বলবি নাকি?’

আমার কথার জবাবে অদ্রি বলল,
–‘হুম আপু,কিছুক্ষন পর মেহেদী অনুষ্ঠান শুরু হবে তাই তোমাকে বলার জন্য আসলাম।’

অদ্রির কথা শুনে বললাম,
–‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি রেডি হয়ে থাকবো এখন।’

–‘ঠিক আছে আপু,আমি তাহলে যাই?’

–‘আচ্ছা আয়’

অদ্রি চলে গেলে আমি ওর পানে চেয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম,”বোনরে ক্ষমা করে দিস।আমার যে তোর কাছ থেকে লুকানো ছাড়া কোনো উপায়ই ছিল না”
_______________________________________________
সকাল থেকেই সারাবাড়ি বিয়ের আমেজে গমগম করছে।বাড়ির বড় ছেলে-মেয়ের বিয়ে বলে কথা।চারদিকে লোকজন ছোটাছুটি করছে,আনন্দ করছে,বিভিন্ন খোশগল্প করছে,কেউ কেউ আবার আড্ডায় মেতে উঠেছে।কিন্তু এত কিছুর মাঝেও নিজেকে সামলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে।বার বার মনে হচ্ছে,এইতো আর কিছু সময় পরই আমি যে আমার পত্রপুরুষকে নিয়ে ভাবার অধিকার চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলবো।তখন চাইলেও যে ভাবতে পারবো না কেননা আমি যে তখন অন্যের অধিকার।আমি না চাইলেও যে আমি তার।এইদিকে যখন আমি ভাবনাতে মগ্ন তখন কেউ যে
দূর থেকে আমার গতি বিধির ওপর আমার অজান্তে কড়া নজর রাখতেছে সেটা আমার কিছুতেই ভাবতে পারি নি।

*বাসর ঘরে বসে আছি মনে একরাশ অপ্রাপ্তির ছোঁয়া নিয়ে।সাথে হাজার ও বিষাদময় স্মৃতির পদচারণায় নিজেকে সামলে নেয়ার প্রবল চেষ্টা করতেছি।কিন্তু এই বাসররাত নিয়েই ছিল আমার ছিলো হাজারও স্বপ্ন,হাজারও আশা প্রত্যাশা,বিভিন্ন পরিকল্পনা যা আজকে আমার কাছে মরীচিকার ন্যায়।

দরজায় টোকা পড়ার শব্দটা আমার ভিতরে যেনো তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি করলো।মনে হতে লাগলো,এইতো আর কিছুক্ষন পরেই আমাকে নাচাইলেও অন্য কারো অস্তিত্বে বিলীন হতে হবে,অনাকাঙ্ক্ষিত সেই পুরুষের অধিকার রক্ষায় দিনের পর দিন নিজের সাথে সংগ্রাম করে যেতে হবে।
“আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই ফারিহা” হটাৎ আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমার ভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটলো।

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি কিছুটা অবাক হলাম।কেননা এই প্রথম তিনি আমাকে তুমি করে বলতেছে।বিষয়টাকে ততটা পাত্তা না দিয়ে আমি বললাম,
–‘তার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আপনাকে আদ্র ভাই তারপর নাহয় আপনি যা বলার বলিয়েন’

আদ্র ভাইয়া আমার কথা শুনে কিছুটা মুচকি হেসে বলল,
–‘এখনতো আমাদের বিয়ে হয়েছে ফারু এখনও কি ভাই বলা ছাড়বেনা? সারাজীবন শুধু ভাই ভাই করেই গেলে এখন অন্তত ছেড়ে দাও।’

আমি আদ্র ভাইয়ের কথায় তেমনটা পাত্তা না দিয়ে হালকা রাগের সুরে বললাম,
–‘আপনাকে আমার কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে।করবো কি?’

আমার কথা শুনে আদ্র ভাইয়া পুনরায় মুচকি হেসে বলল,
–‘হুম অবশ্যই,যা ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করতে পারো।তুমি আমার বিয়ে করা নববিবাহিত বউ বলে কথা আর তাছাড়াও বাসররাতে তো একেওপরকে ভালোভাবে জানতে হয়।’

আদ্র ভাইয়ার মুখে বাসররাত কথাটা শুনে আমার মনে শিহরণ বয়ে গেলো।সারা শরীর কাঁপতে শুরু করলো আর মনে হতে লাগলো,”আদ্র ভাই কি আমার ওপর অধিকার দাবি করবে নাকি? বাসররাতে তো…..”

–‘তোমার কি আমাকে এমন মনে হয় ফারু?’ হটাৎ আদ্র ভাইয়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমার ধ্যান ভাঙলে আমি চমকে গেলাম।তিনি কিভাবে আমার মনের কথা বুঝতে পারলেন?আমি তো জোরে বলি নাই তাহলে কিভাবে?

–‘মনের কথা যদি কেউ এত জোরে ভাবতে পারে তাহলে পাশের লোক সেটা শুনতে পারবে না কেনো?’ আদ্র ভাই মুচকি হেসে বলল।

আদ্র ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।আর ভাবতে লাগলাম,
–‘আমি জোরে বলে ফেলেছি। তাও আবার আদ্র ভাইয়ার সামনে আদ্র ভাইয়াকে নিয়ে এমন বাজে বাজে কথা।আমি আদ্র ভাইয়ার সামনে আমার মুখ দেখাবো কিভাবে?’

–‘এখন যেভাবে মুখ দেখাচ্ছ ঠিক সেভাবেই।’ আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বলল।আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি কিছুক্ষন তারদিকে হা করে তাকিয়ে থাকলাম।

আমাকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্র খোঁচা দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
–‘এভাবে হা করে তাকিয়ে গিলতে থাকলে আমার তো হাপানি রোগেতে ধরবে আমি শিওর।তাই এই ভাবে হা করে না দেখে অল্প অল্প করে দেখো।আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না।’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেললাম।আমার এমন লজ্জা পাওয়া দেখে আদ্র ভাই মুচকি হেসে বলল,
–‘থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।লজ্জায় যেভাবে লাল হয়ে যাচ্ছ কখন যে তোমাকে টুপ করে খেয়ে ফেলবো আমি নিজেও জানি না তখন যেনো আবার আমাকে দোষ দিতে পারবে না।’

ওনার এমন কথায় আমার লজ্জা যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেল।লজ্জায় আর অসস্তিতে মনে হতে লাগলো আমি যেনো মাটির সাথে মিশে যাই।আমার কেনো এতো লজ্জা লাগতেছে আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না।আমার তো এখন আদ্র ভাইয়ার ওপর রাগ হওয়ার কথা।আমার এমন অবস্থা দেখে আদ্র ভাইয়া কথা ঘুরানোর জন্য বলল,
–‘আচ্ছা তখন কি যেনো জিজ্ঞাসা করতে চাইছিলে?এখন কি জিজ্ঞাসা করবেন ম্যাডাম?নাকি ওটা কালকের জন্য রেখে দিবেন?’

আদ্র ভাইয়ার এমন কথায় আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম।আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে বলতে লাগলাম,
–‘আপনি আমার সাথে কেনো এমন করলেন আদ্র ভাই?কেউ না জানুক আপনি তো জানতেন আমাদের কোনো বিয়েই হয়নি।তাহলে কেনো আপনি আমার সাথে এমন নাটক করলেন? উত্তর দেন আদ্র ভাই উত্তর দেন’

আদ্র ভাইয়া আমার কাছ থেকে যেনো এমন প্রশ্ন শুনে যেনো অবাক হয়ে গেলো।অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
–‘তুমি এখনও বুঝতে পারো নাই? এটা কিভাবে সম্ভব’

আদ্র ভাইয়ার মুখ থেকে এমন অবাস্তব কথা শুনে আমার অনেক রাগ হতে লাগলো।আমি হালকা রেগে বললাম,
–‘না আমি কিছুই বুঝতে পারি নাই।আপনি কেনো আমার সাথে এমন করলেন আমার সাথে?আজকে আপনার জন্য আমার জীবন এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।কেনো এমন করলেন আদ্র ভাই কেনো?’

এবার আদ্র ভাইয়া এমন কথা বলল না শুনে আমার রাগে সারা শরীর কাঁপতে লাগলো।আমার প্রশ্নের জবাবে আদ্র ভাইয়া বলল,
–‘……..
.
.
.
চলবে………..
~~ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।