আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব-৪৭

0
918

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৪৭]

‘যেমন দেখেছিলে তেমনই আছি।’

রাজের কথাটার মধ্যে নিজের প্রতি তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার ছোঁয়া পেলো নুরা। নিরবে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চোখ ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই সময় দেখলো রাত এগারোটা বারো। রাজকে আর কি বলবে কিছুই খোঁজে পেলো না। তাই মৌনতার সঙ্গে মোবাইল কানে ধরেই বিছানার হেডসাইডে হেলান দিয়ে বসে আছে।

রাজের পারসোনালিটি যেমন স্ট্রং ; খেলার দিক থেকেও তেমনই দূর্দান্ত মস্তিষ্ক। পুল খেলায় আজও তাকে কেউ হারাতে পারলো না। বিপরীত পাশের বন্ধু তার প্রশংসায় পঞ্চমুখর হলো। খেলা শেষ হতেই আরেকজন বললো, ‘চল আরেকবার খেলি।’

রাজ হাত ঘড়িতে সময় দেখলো। তারপর পুল ক্লাব থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বললো, ‘আজ আর না। রাত হয়েছে। বাড়ি ফিরতে হবে নাহলে আম্মু টেনশন করবে।’

বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে এলো পুল-ক্লাব থেকে। আশেপাশের টুকটাক শব্দ ও তাদের কথোপকথন শুনে নুরা বলে উঠলো, ‘আপনি কি ব্যস্ত? তাহলে রেখেই দেই।’

‘নাহ্! খেলা শেষ। বেড়িয়ে এসেছি ক্লাব থেকে। এখন রাস্তায় হাঁটছি।’

‘ওহ্।’

আবারো নিশ্চুপ হয়ে গেলো নুরা। রাজকে কল দেবার আগে হাজারটা কথা মনে সাজিয়ে রেখেছিলো। কল দেওয়া অব্দি সেই কথা গুলো মনে ঘুরপাক খেয়েছে। কিন্তু যখুনি রাজের কন্ঠ কর্ণপাত হলো তখুনি সব ভুলে গেলো। কি থেকে কি বলবে বুঝে আসছে না। নিজেকে হঠাৎ অগুছালো লাগলো তার। উত্তেজনা কাজ করতে লাগলো মনে। চোখ বন্ধ করে লম্বা দম নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো নুরা। তারপর প্রশ্ন করলো, ‘কলেজে আসছেন না কেন?’

প্রশ্নটা শুনেই রাজ মৃদু শব্দে হেসে ফেললো। ফোনের অপর পাশে থেকেও স্পষ্ট শুনতে পেলো নুরা। রাজের এই হাসির শব্দ শুনেই বুকে জমে থাকা শত কষ্ট কর্পূরের মতো উড়ে গেলো। হালকা হলো মন। কিন্তু এখানে হাসার কি হলো?

রাজ ঠোঁটে হাসি রেখেই উত্তর দিল, ‘কারণ টা কি তোমার অজানা নুরা?’

‘আমি যতোটুকু জানি আপনি অনেক স্ট্রং। কোনো একদিন ক্লাসে কথার প্রসঙ্গে বলেছিলেন পালাতে নয় প্রতিকূলের সঙ্গে লড়াই করতে। তাহলে কেন ছোট একটা কারণে নিজেকে আড়ালে নিচ্ছেন?’

ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আবছা সাদা কালো আলো আঁচড়ে পরছে। পাশে এক ব্যতিত কুকুর বসে আছে। গাছের পাতা নড়বড়ে। ধরনী জ্যোৎস্নায় মুখরিত। কালো মেঘের মতো বিষন্নতায় ছেঁয়ে আছে রাজের হৃদয়। এ হৃদয়ের হাহাকার সহ্যের ক্ষমতার বাহিরে। বুক ভারি হয়ে আসে। দীবার মায়াবী মুখখানি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই তীরের মতো ধারালো ছু/ড়ি আচড় কাটে কলিজায়। ভালোবাসা বুঝি অন্যায়? চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো রাজ। নিরব নিস্তর রাস্তার এক পাশ ধরে হাঁটা শুরু করলো। নুরার কথার প্রত্যুত্তর মৃদু গলায় দিলো, ‘আমি অনেক দুর্বল মনের মানুষ। নিজেকে কোনো ভাবেই স্বাভাবিক রাখতে পারবো না। আমার দ্বারা হবে না নুরা।’

‘আপনি চেষ্টা করেছেন?’

নুরার পালটা প্রশ্ন শুনে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো রাজ। আসলেই সে চেষ্টা করে নি। চেষ্টা করেনি সব কিছু ভুলে যাবার। চেষ্টা করেনি দীবার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার। দীবা তার প্রথম ভালোবাসা। প্রথম আবেগ। এই সুন্দর অনুভূতির মুহূর্ত গুলো সে কখনোই ভুলতে চায় না। তাই তো ভুলে থাকার চেষ্টাও করে না।

রাজকে চুপ থাকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো নুরা। চোখের কার্নিশে জমে এলো বিন্দু বিন্দু জলের কণা। রাজ তাহলে দীবাকে ভুলে থাকার চেষ্টা কখনোই করবে না। কখনোই রাজের ভালোবাসা পাবার আকুতি সে করতে পারবে না। বুক ভার হয়ে আসলো তার। কান্না পেলো ভীষণ। তবুও নিজেকে ঠিক রাখলো। তুই অনেক স্ট্রং নুরা। অল্পতে এভাবে ভেঙ্গে পরলে হবে না। সব কিছু সুন্দর ভাবে গুছাতে হবে তোর। সব কিছু! মনে মনে নিজেকে এই বলে শান্ত্বনা দিতে লাগলো। নিষ্প্রভ কন্ঠে বললো, ‘আপনি সত্যি চলে যাবেন?’

প্রথমের মতোই রাজের একরোখা জবাব, ‘হ্যাঁ।’

বুকটা ধক করে উঠলো নুরার। ঢিপঢিপ করে হৃদযন্ত্রটা দ্রুত চলতে লাগলো। শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। ঢোক গিলে কষ্ট গুলো কোনো রকমে হজম করার চেষ্টা করলো। ঠোঁট নাড়িয়ে মলিন কন্ঠে বললো, ‘না গেলে হয় না?’

মোবাইলের অপর পাশে থাকা রাজ একদম নিশ্চুপ। নুরার মলিন কন্ঠের অনুরোধ বাক্যটা শুনে হাঁটার গতিবেগ কমিয়ে ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে পরলো তাৎক্ষনাৎ। হঠাৎ করে রাজের মন অদ্ভুত কিছু ইচ্ছে জাগলো। ইচ্ছে জাগলো নুরার মতো সহজ-সরল মেয়েটার কথা রাখতে। নুরার কাছে নিজের মনের সকল দুঃখ প্রকাশ করতে। নুরার কাছে মনের শান্তি খুঁজতে। নুরাকে নিয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে যেখানে থাকবে না কোনো বাধাবিপত্তি। থাকবে না কোনো দুঃখ অভিলাষ। কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? নুরার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে কেন-ই বা নুরা তার একাকিত্বের সঙ্গি হবে? রাজের হঠাৎ মনে পরলো নুরা তার জন্য না। নুরা আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিরবে। নিজের এমন চিন্তাভাবনা গুলো কুৎসিত বলেই চালিয়ে দিলো। নুরার কথার প্রত্যুত্তর না করে বললো, ‘অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পরো। পরে কথা হবে।’

নুরাকে কিছু বলতে না দিয়েই লাইন কেটে দিলো রাজ। চোখ বন্ধ করে বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিলো। রাস্তার পাশেই ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে পরলো। মাথা তুলে খোলা আকাশটার দিকে তাকালো এক দৃষ্টিতে। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগলো তার। কষ্ট গুলো নিরবে নিজেই সহ্য করতে লাগলো।

মোবাইলটা পাশে রেখেই পাশ ফিরে চুপচাপ শুয়ে আছে নুরা। চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো নোনাজল। রাজকে নিয়ে তার মনের অনুভূতি গুলো হঠাৎ তৈরি হয়নি। ধীরে ধীরে ছোটছোট অনুভূতি গুলো প্রগাঢ় হয়েছে। এই অনুভূতি গুলো নিয়েই সে বাঁচতে চায়। কিন্তু নিয়তি তার জন্য এতো বিষণ্ণ যন্ত্রণা কেন রেখেছে? ভাবতেই ফুঁপিয়ে উঠলো মন। বালিশ জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো নুরা। কান্নার শব্দ গুলো রুমের চার দেয়ালেই বন্ধি রইলো। টের পেলো না কেউ। টের পেলো না রাতের আধারে নিশ্চুপ থেকে কতশত মানুষ দুঃখবিলাস করছে।
______________________

শুক্রবার মানেই ছুটির দিন। পড়াশোনার চাপ একদম কম। সারাদিন ফ্রি মুডে চলাফেরা করার আনন্দ। যদিও এই কয়েকটা দিন নানান পরিকল্পনা করতে করতেই কেটে যাচ্ছে। কারণটা অবশ্য রাইমার বিয়ে। কে কি পরবে, কেমন ডিজাইনের লেহেঙ্গা হবে, সঙ্গে কি ধরনের জুয়েলারি, আর হেয়ার স্টাইলই বা কি দিবে। মেয়েদের স্বভাবগত ভাবে এইসব ছাড়া পরিকল্পনা করার মতো কিছু নেই।

দেয়ালে ঘড়ির কাটা দশটার ঘরে। বিছনার হেড সাইডে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে দীবা। হাতে তার আইপড। সেখানে বিভিন্ন ডিজাইনের লেহেঙ্গা কালেকশন দেখছে। রাইমার হলুদ আর মাত্র একদিন বাকি। যদিও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কে কি পরবে সেটা ডিসাইড করে নিয়েছে। তিনজন একই ডিজাইনের লেহেঙ্গা বানিয়েছে গায়ের হলুদ, বিয়ে ও রিসিপশনের পরার জন্য। তবুও সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে লেহেঙ্গা ডিজাইন দেখছে সে। হঠাৎ-ই আবরার কোত্থেকে এসে দীবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। তার এমন কান্ডে বিস্মিত হলো দীবা। হতভম্ব হয়ে বলে উঠলো, ‘আরে এখানে শুলেন কেন?’

আবরার দীবার কোলে মাথা রেখে দুই হাতে দীবার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। চোখ দুটো বন্ধ করে বললো, ‘আমি এখানে ঘুমাতে চাই।’

দীবা আবরারের মাথা নিজের কোল থেকে সরিয়ে দিতে চেয়ে বললো, ‘বালিশ থাকতে এখানে কেন ঘুমাবেন?’

আবরার সরলো না। বরঞ্চ উলটো ঘুরে দীবার পেটের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করলো। মৃদু গলায় আমোদিত হয়ে বললো, ‘তুমি মানুষটাই আমার ভীষন প্রিয়। যেখানে আমি শান্তি খুঁজে পাই। তাই তো ঘুমানোর জন্য বালিশ থাকতেও তোমার কোলটা খুঁজে বেড়াই।’

আলতো শব্দ তুলে মিষ্টি করে হাসি দিলো দীবা। আবরারের চুলে নিজের কোমল নরম ডান হাত দিয়ে বুলাতে বুলাতে হেসে বললো, ‘এতো কবি কবি ভাব কবে থেকে আসলো?’

আবরার কোল মাথা তুলে দীবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘যবে থেকে তোমাকে কাছে পেলাম।’

লাজুক হাসলো দীবা। নিজের মাথাটা এগিয়ে আবরারের গালে আদুরে দুই হাত রাখলো। তারপর কপালে গভীর একটা চুমু দিয়ে বললো, ‘ঘুমাবেন?’

আবরার দীবার কোমড় জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আহ্লাদী গলায় বললো, ‘হ্যাঁ কাল রাতে একদম ঘুম হয় নি তোমাকে ছাড়া। এখন ঘুমাবো। মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।’

হাত বুলাতে লাগলো দীবা। পরম যত্নে। আদুরে দুই হাতে। মানুষটাকে যতো কাছে পায় ততোই অনুভূতি গুলো তার গাঢ় হয়। অদ্ভুত কিছু অনুভব হয় বক্ষস্থলে। তবে কি এই অনুভূতির নাম-ই ভালোবাসা? হ্যাঁ। ভালোবাসা এমনি। বলে কয়ে আসে না। হুট করেই মনে ভালোলাগা তৈরি হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই মানুষটার জায়গা হয়ে যায় মনে। আবরারের সঙ্গে তার সম্পর্ক বৈধ। সে আবরারের অর্ধাঙ্গিনী! ভাবতেই লাজুকলতা হানা দিলো দীবার মাঝে। চোখ ঘুরিয়ে আবরারের দিকে তাকাতেই দেখলো আবরার ঘুমে বিভোর। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো দীবা। ভাবলো এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলো? সত্যি কি কাল রাতে ঘুমাতে পারে নি? নিশ্চয় কাজের চাপ বেশি ছিলো। তাই ঘুম কম হয়েছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো দীবা। নড়াচড়া একদম বন্ধ করে দিয়েছে যেন আবরারের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে। আলতো দুই হাতে আবরারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আবরারের ঘুমন্ত মুখখানি দেখতে দেখতে কখন যে অনেকটা সময় পেড়িয়ে গেছে মোটেও টের পায় নি দীবা। রুমের দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো তার। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো রিমি দাড়িয়ে আছে।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় রিমি। হুট করে রুমে এসে দুজনকে এমতাবস্থায় দেখবে ভাবে নি। তবে ব্যাপার টা অপ্রীতিকর লাগলো না তার কাছে। উলটো কপাট রাগ দেখিয়ে দিলো দীবাকে, ‘আহাম্মক, প্রাইভেসি বলতে কিছু নেই? দরজা খোলা রেখেছিস কেন? এখন যদি বড়রা চলে আসতো? তখন কি করতে? লজ্জায় লাল নীল বেগুনী গোলাপি সব রঙ হয়ে যেতে।’

রিমির আগমনে প্রথমে লজ্জা পেলেও রিমির কথাটা শুনে রাগ শরিরে রিনরিনিয়ে উঠলো। বিরক্ত হয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে কণ্ঠস্বর নিচু করে কটমট করে বললো, ‘ভেড়ার মতো ভ্যানভ্যান না করে কি জন্য এসেছিস বলে বের হো রুম থেকে।’

রিমি দীবার কথাটা সম্পূর্ণ ভাবে ঠোঁট বাঁকিয়ে ব্যঙ্গ্য করে বললো, ‘তোমার রুমে নাচতে আসি নি। তোমরা তো আবার বিজি মানুষ। পারসোনালি কথা বলার জন্য টিকেট কাটা লাগবে।’

ভ্রুঁ জোড়া কিঞ্চিৎ বাঁকা করলো দীবা। তার সাথে পারসোনালি এমন কি কথা আছে রিমির? নিশ্চয় জরুরি কিছু। কিংবা নুরাকে নিয়ে? নুরার কথা মাথায় আসতেই সকচকিত হলো দীবা। উঠে আসতে চাইলে রিমি বাধা দিলো, ‘থাক পরে কথা বলবো। ভাই ঘুমাক।’

এইটুকু বলেই রিমি বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। চিন্তিত হলো দীবার মস্তিষ্ক। কি বলবে রিমি? সেটা কি ভালো খবর নাকি খারাপ? ভিতরটা অস্থির হয়ে উঠলো তার। ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো কি করবে। চোখ নামিয়ে আবরারের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আবরার। দীবা খুব সাবধানতার সঙ্গে আবরারের মাথাটা নিজের কোল থেকে নামিয়ে বালিশে রাখলো। তারপর ধীর পায়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। মোবাইল ও পার্স হাতে নিয়ে কোনো প্রকার শব্দ না করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। ঘুমিয়ে রইলো আবরার। টের পেলো না কিছু।

রুম থেকে বেড়িয়েই রিমির রুমের দিকে যাচ্ছিলো দীবা। তাকে দেখে পিছন থেকে রাইমা ডেকে উঠলো, ‘কিরে হাতে পার্স কেন? কোথায় যাচ্ছিস?’

হঠাৎ-ই রাইমার প্রশ্ন শুনে ভড়কে গেলো দীবা। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো তাৎক্ষনাৎ। কি বলবে এখন? মস্তিষ্ক তার নানান চিন্তায় একদম বাকহারা হয়ে গেছে। তাই প্রত্যুত্তর করার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। তাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে সন্দিহান চোখে তাকালো রাইমা। এগিয়ে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিমিও হাতে ব্যাগ নিয়ে দীবার পাশে দাঁড়িয়ে হেসে উত্তর দিলো, ‘আসলে কুরিয়ার থেকে কল এসেছিলো। সেটাই আনতে যাচ্ছি।’

ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভাবে নিলো রাইমা। সন্দেহ দূর করে জানতে চাইলো, ‘কি অর্ডার করেছিস?’

‘নুরা তো ডাইরী লিখতে পছন্দ করে। অনলাইনে সুন্দর পিকাচুর কভারে একটা ডাইরী দেখে ওর জন্য নিয়েছি।’

‘ওহ। তাড়াতাড়ি চলে আসিস।’

কথাটা বলেই রাইমা চলে গেলো। এবার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দীবা। তারপরই দুইজন নিশিতার থেকে অনুমতি নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে গেলো।
_____________________

একটা ডাইরী হাতে নিয়ে পাশাপাশি পার্কে বসে আছে দীবা ও রিমি। দুই জনের চেহারা মলিন। মাথায় ঘুরছে হাজারো দুশ্চিন্তা। বেশ কিছুসময় নিরবতার পর দীবা বললো, ‘কিছু তো হয়েছে। নাহলে হুট করে কেন চেঞ্জ হয়ে যাবে নুরা?’

রিমি বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতো চিন্তিত কন্ঠে বললো, ‘যা কিছুই হোক। আই থিংক সেটা তোর সাথে রিলেটেড।’

বিস্মিত হলো দীবা। অবাক চোখে রিমির দিকে তাকালো। রিমি প্রথমের মতো ভাবলেশহীন ভাবে সামনে তাকিয়ে আছে। বললো, ‘ওইদিন রাতের কথা মনে আছে? নুরা রাতে এসেই তোকে যে থা/প্প/ড় মা’র’লো? আর কিসব বলেছিলো তার প্রিয় জিনিসটা নাকি অন্য কেউ কেড়ে নেয়। উফফ উফফ ইয়ার আমার মাথা ধরে গেছে। নুরার সাথে কথা বলার আগ পর্যন্ত কিছুই বুঝতে পারবো না। ভাল্লাগে না একদম।’

প্রচণ্ড হতাশ হয়ে শেষের কথা গুলো বললো রিমি। দীবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে। প্রতিক্রিয়াহীন সে। তার জন্য নুরা কি হারিয়েছে? নুরার প্রিয় জিনিস তার কারণে হারিয়ে যাবার মতো কোনো কারণ খুঁজে পেলো না। দীর্ঘশ্বাস ব্যতিত দুইজনের মাঝে অবশিষ্ট কিছু রইলো না আর।

চলমান…