শুধু তুই পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0
567

শুধু তুই
পর্ব-২ (শেষ পর্ব)
সৈয়দা সিরাজুম মনিরা

২.
চারদিন আগে জানতে পারি আমাকে দেখতে আসবে। পাত্র বাইরের কেউই হবে এমন বদ্ধমূল ধারণা আমার কেন হয়েছিল জানি না।
প্রথমে ফুরফুরে মেজাজেই ছিলাম। কিন্তু শেষের দিকে পরিস্থিতি দৃশ্যত আমার হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল। ছেলেপক্ষ চলে এসেছে অথচ আমি কিছুই করতে পারিনি। মনে হচ্ছিল শেষ, সব শেষ। ভয়ে আশঙ্কায় বিধ্বস্ত আমি যখন দেখলাম পাত্র অন্য কেউ নয় আশিষই তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস তো ফেললাম, সাথে সাথে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো শক্তিও খুইয়ে ফেললাম। মা পাশে ছিল বলে রক্ষা। কেউ বোঝার আগেই মা আমাকে ধরে বসিয়ে দিলো। কিছু সময়ের মধ্যে আমি সামলে গেলাম। মন এখন শান্তিতে ভরপুর। আমার চেহারার ঔজ্জ্বল্য আবার ফিরে এসেছে সাথে ঠোঁটে স্বাভাবিক মৃদু হাসি।

আংটি বদলের পর আশিষকে কায়দা করে দেখার চেষ্টা করলাম। সরাসরি কী আর তাকানো যায়! মেরুন রঙের পাঞ্জাবী, সাদা পাজামা পরনে, চোখে চশমা। চশমা তার নিত্যসঙ্গী। সে হাসিমুখে আমার বাবার সাথে কথা বলছে। আজ তাকে আরো বেশি সুদর্শন লাগছে যেন। আজ আমিও মেরুন শাড়ি পরেছি। আমাদেরকে একসাথে কেমন লাগছে কে জানে। এখানে এমন কেউ নেই যে বলব একটা ছবি তুলে দেখাও আমাদের একসাথে কেমন লাগছে। অবশ্য আমার বরাবরের বিশ্বাস ছিল আশিষের সঙ্গে অন্য কাউকে নয় শুধু আমাকেই মানায়। আমি আপনমনে হাসলাম।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে মা আমাকে ঘরে রেখে যাওয়ার পর অনেক ভাবলাম। ভেবে মনে হলো যা যা ঘটেছে সব পরিকল্পিত। আমার থেকে ছেলে কে, ছেলের নামধাম সব ইচ্ছা করে চেপে যাওয়া হয়েছে। মা অবধি শেষ পর্যন্ত রহস্যই করে গেছে। কিন্তু এটা কোনো নাটক বা সিনেমা নয় যে আদরের মেয়েকে খুশি করার জন্য পুরো পরিবার মিলে এমন সারপ্রাইজ প্ল্যান করবে। তাছাড়া কেউ জানেও না আমি যে আশিষকে পছন্দ করি। তাহলে এসবের পেছনে কারণ কী হতে পারে? মনে হয় বড়রা মনে করেছিল কাজিন হয় বলে আমি গোলমাল বাঁধাতে পারি তাই তারা এই পরিকল্পনা করেছিল। হায়রে! আমাকে নিয়ে এত ভয় সবার! আমি হেসে ফেললাম।

এই হাসি আনন্দের মাঝেই আচমকা মনের মধ্যে খচখচানি আরম্ভ হয়ে গেল। আশিষ কি তবে আমাকে ভালোবাসে? না বাসলে বিয়ে করছে কেন? কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যে অস্থির ভাবে পায়চারি করে যখন বারান্দায় গেলাম সেই সময় আশিষও বসার ঘর থেকে বের হলো। হঠাৎ করে তাকে দেখে রীতিমত চমকে উঠলাম। কিন্তু সে আমাকে দেখলোই না! ফোন কানে ধরে উঠানের দিকে নেমে গেল। আমিও মুখ কালো করে বাইরে বের হলাম। বাড়িতে থেকে আর কী করব? আমার খেয়াল কি কারো আছে? আমার দিকে তাকানোর সময় পর্যন্ত নেই সেখানে আমার সাথে গল্প করবে আশা করছি! হাস্যকর!

আমরা বিলপাড়ের রাস্তা দিয়ে আমবাগানে যাচ্ছি। আমরা মানে আমি আর আমার দুই বান্ধবী দিশা আর নিরা। আমার বান্ধবী আরও তিনজন আছে- পায়েল, তানহা আর সাওদা। ওরা ট্যুরে গেছে। এই পাঁচজন আমার ইংরেজীতে বলে না ক্রাইম পার্টনার সেটাই। ওদের মধ্যে দিশা আমাদের উপদেষ্টা। কারণ ওর বুদ্ধি বিবেচনা আমাদের সবার চেয়ে বেশি।

চারদিকের মৃদুমন্দ বাতাস আমাদের তীব্র ঝংকারে স্পর্শ করছে। আমরা যেদিক দিয়েই যাচ্ছি বউ-ঝি যারা দেখছে তারাই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে অথচ এরা সবাই আমাকে চেনে। হয়ত আমাকে এমন শান্ত রূপে দেখে তারা হতভম্ব। বেচারারা! অনেক বিরক্ত করেছি তোমাদের। আর করব না। তবে হাদি কাক্কুকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর কোনো উপায় বের করতেই হবে। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে কয়েকবার বাবাকে আমার নামে বিচার দিয়েছেন। তার একটা পুরষ্কার অবশ্যই পাওয়া উচিত।

আমরা বাগানে বাঁশের মাচায় বসলাম। এ জায়গাটা নিরিবিলি থাকে সবসময়, আমরা কী বলছি না বলছি কেউ শুনতে আসে না। তাই এটা আড্ডার আদর্শ জায়গা।
দিশা প্রথমে কথা বলল। “তোর হয়েছে কী? তোর আজ খুশিতে লাফানোর কথা। অথচ এমন মুখ গোমড়া করে আছিস।”

“মুখ গোমড়া করে থাকব না তো কী করব? আমি এখনো জানিই না ও আমাকে কেন বিয়ে করছে।”

“কেন বিয়ে করছে এখনো জানি না – এ আবার কেমন কথা?”

নিরা আমাকে ইঙ্গিত করে বলল,”মাথা পুরাটা গেছে!”

আমি অধৈর্য হয়ে বললাম,”তোরা বুঝলি না কথাটা। আমি বলতে চাচ্ছি ও আমাকে ভালোবাসে কি না এখনো তো কিছু বলল না। ভালো না বাসলে আমাকে বিয়ে কেন করছে আমার জানতে হবে না?”

নিরা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,”বিয়ে যে করছে এটা নিয়েই খুশি থাক তুই। আমার তো মনে হয় আশিষ ভাইয়ার মাথা বিগড়ে গেছে!”

আমি কপাল কুঁচকে বললাম,”এ কথা কেন বলছিস?”

“মাথা বিগড়ে গেছে বলেই না তোকে বিয়ে করছে। মাথা ঠিক থাকলে কি আর করত নাকি? আমি একটা ভালো পরামর্শ দিচ্ছি শোন, তুই না আজই বিয়ে করে নে। ভাইয়ার বিগড়ানো মাথা যখন তখন ঠিক হয়ে যেতে পারে।”

এ কথা শুনে দিশা হেসে কুটিকুটি।
আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,”নিরা তুই সবসময় আমার সাথে এমন করিস। তোর সাথে কথাই বলব না যা।”

“আমি সবসময় ঠিক কথা বলি দেখেই আমি খারাপ।”

দিশা হাসি চেপে বলল,”প্রতিটা ফ্রেন্ড সার্কেলে এমন রসকসহীন কেউ একজন থাকবেই।‌ তুই ওর কথা শুনিস না তো।”

“তুই নিজেও তো খুব হাসছিস। আমি নিজের জ্বালায় বাঁচি না আর তোরা ফাজলামো শুরু করেছিস। আমি বাড়ি গেলাম তোরা থাক।”

“আচ্ছা আর হাসব না।”

“আমার কি ইচ্ছা করছে জানিস গিয়ে বিয়ের জন্য না করে দিতে।”

“এ মা।”

“আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমার সামনে ও সবসময় ভ্রু কুঁচকে থাকে। আমাকে পাত্তাই দেয় না। ও কোনোদিন আমার সাথে হাসিমুখে কথা বলেছে? কথা বললে এমনভাবে বলে যেন ধমকাচ্ছে!”

দিশা বলল,”শোন মোহর তুই এত অস্থির হোস না। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে ।”

নিরা আবার কথার মধ্যে বা হাত ঢুকিয়ে দিলো-“কথায় আছে না খেতে দিলে বসতে চায়, বসতে দিলে শুতে চায়? এর হয়েছে সেই অবস্থা। আরে ভাই কি সুন্দর কোনো ঝামেলা ছাড়াই পারিবারিকভাবে বিয়ে হচ্ছে করে ফেল, তা না। এখন চাচ্ছে আশিষ ভাইয়া হাঁটু গেড়ে ওকে প্রপোজ করুক। তারপর কিছুদিন প্রেম করবে তারপর বিয়ে। ছিঃ কি চিন্তা ভাবনা তোর! তুই লজ্জা শরম কি পানির সাথে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছিস মোহর? তোকে আমি বলেছিলাম এসব প্রেমের নাটক সিনেমা দেখিস না মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এরপর থেকে আমার মতো সবসময় সাসপেন্স থ্রিলার মুভি দেখবি বুঝেছিস?”

আমি একেবারেই মেজাজ হারিয়ে ফেললাম। দিশা নিরাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,”আরে ও প্রেম করবে এমন বলেনি। ও শুধু আশিষ ভাইয়ার মনের কথাটা জানতে চাচ্ছে।”
তারপর আমাকে বলল,”শোন মোহর আমার না মনে হয় ভাইয়া এখনই কিছু বলতে চাচ্ছে না। একেবারে বিয়ের পর বলবে।”

“কেন এখন বললে কী সমস্যা?”

“সেটা তো আমি বলতে পারব না। ভাইয়া ভালো বলতে পারবে।”

আমি মুখ কালো করে বললাম,”আচ্ছা এমনও তো হতে পারে বিয়েটা ও বাধ্য হয়ে করছে। হতে পারে ও অন্য কাউকে পছন্দ করে কিন্তু বাধ্য হয়ে..”

“আরে ধুর। আশিষ ভাইয়া কী মিনমিনে টাইপের ছেলে যে নিজের পছন্দের মানুষের জন্য স্ট্যান্ড নিতে পারবে না?

“আচ্ছা তোর কী সত্যিই মনে হয় ও আমাকে পছন্দ করে?”

দিশা মুচকি হেসে বলল,”আমার তো তাই মনে হচ্ছে ।”

“আমাকে যদি পছন্দ করে তাহলে কেন দেরি করছে? এখনই বলে দিচ্ছে না কেন?'”

দিশার মাথায় হাত।

নিরা রেগেমেগে দিশাকে বলল,”ঘুরেফিরে সেই একই কথা বলছে দেখ। ওকে বুঝিয়ে লাভ নেই। ও যা বুঝবে তাই। চল তো ন্যাকাকে বাড়ি দিয়ে আসি।”

“দিয়ে আয়। তোদের মিথ্যা সান্ত্বনাও আমার ভালো লাগছে না।”

বাড়ি ফেরার পর মা প্রথমে বকলো কেন আমি আবার কাউকে কিছু না বলে বেরিয়েছি। তারপর মা আসল কথাটা বলল। বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কালই বিয়ে। আপাতত পড়িয়ে রাখা হবে। পরবর্তীতে অনুষ্ঠান করা হবে। শুনে আমার চোখে যে জল এলো তা দুঃখের না সুখের কে জানে!

৩.
রাতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো। সাথে ঝড়ো হাওয়া। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।‌ কোথায় যেন বাজ পড়লো ফলস্বরূপ ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। আমি অন্ধকারে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরতে চেষ্টা করলাম।‌ তবে বেশিক্ষণ জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা গেল না। বৃষ্টির ঝাপটা এসে গা ভিজিয়ে দিচ্ছে।‌ অন্যদিন হলে দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টির ঝাপটা গায়ে মাখতাম। কিন্তু আজ তা সম্ভব নয় কারণ আমার পরনে বিয়ের শাড়ি,জুয়েলারি।

জানালা আটকে এসে মোমবাতি জ্বালালাম। ঘরের আঁধার মোমের আলোয় তো দূর করে দিলাম, কিন্তু মনের আঁধারের কী করব? আজ আমি বিয়ের খুশি মন থেকে উপভোগ করতে পারিনি। আমার মনের আঁধার কাটিয়ে আলোয় উদ্ভাসিত করে দিতে পারবে শুধুমাত্র আমার বর আশিষ। এতক্ষণে তার আমার পাশে থাকার কথা। কিন্তু সে নেই। এখন বৃষ্টির মধ্যে সে কোথায় যে হারিয়েছে তাও বলতে পারব না।

আমি অপেক্ষায় আছি তার মুখ থেকে কিছু শুনতে। ভালো হোক বা মন্দ আজ কিছু তো অন্তত বলবে। যদি আমাকে পছন্দ না করে তাহলে রাগ আমার উপরেই ঝাড়বে। আমি এ সবকিছুর জন্য প্রস্তুত।

বৃষ্টির গতি অনেকটা কমেছে। হঠাৎ শুনি দরজায় ঠকঠক শব্দ। আমি শুয়ে ছিলাম। দ্রুত উঠে বসলাম। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে আশিষ। জনাবের গা, মাথা প্রায় ভেজা। আমি দ্রুত নেমে তোয়ালে এগিয়ে দিলাম। মোমের আলোয় তার উজ্জ্বল মুখ দেখে বরাবরের মতো হৃদস্পন্দন মিস করলাম।
মাথা মুছতে মুছতে সে বলল,”চা খেতে দোকানে গিয়েছিলাম আমরা সবাই। বৃষ্টি জন্য দোকানে আটকে গেলাম। বৃষ্টি কমতেই বেরিয়ে পড়েছিলাম। আসতে আসতে ভিজে গেছি।”

অদ্ভুত হলেও সত্যি কাল থেকে এখন পর্যন্ত এটাই তার আমার সাথে বলা প্রথম কথা। আমি কিছুক্ষণের জন্য বাক্যহারা হয়ে থেকে আস্তে করে বললাম,”রাত করে দোকানে যাওয়ার কী দরকার ছিল। মাকে বললেই তো চা করে দিত।”

“মামি কাল থেকে পরিশ্রম করছেন। যখন চায়ের কথা উঠলো তিনি তখন মাত্র রান্নাঘরের কাজ সেরে এসে সবার শোবার ব্যবস্থা করছিলেন। সেসময় আবার নতুন করে কাজ দেওয়া যায়?”

আমি খাটের কিনারায় বসে ছিলাম। সে এসে আমার পাশে বসলো। বারবার মনে হচ্ছে এই কথা বলবে, এই কথা বলবে কিন্তু বলছে না। আমার ইচ্ছা হলো বলি, আমার ধৈর্যের পরীক্ষা আর নিও না আশিষ। সেও আর ধৈর্যের পরীক্ষার সময়কাল আর বাড়ালো না।
সে ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”মোহর তুমি প্রথমে ঠিকই ধরেছিলে।”

“কী?”

“এটাই যে প্রথমে অন্য একজন তোমাকে দেখতে আসছিল।”

আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।
সে বলতে থাকলো,”খবরটা পাওয়ার পর এত রাগ হয়েছিল না আমার! দেরি না করে আমি মা-বাবার সাথে বসি। আমি তাদের স্পষ্ট করে বলি আমি তোমাকে ভালোবাসি আর বিয়ে করতে চাই; যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা ব্যবস্থা করতে। সত্যি বলতে আমার এখনই বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এই কাহিনীর পর মনে হয়েছে, না, আর দেরি করা ঠিক হবে না। নাহলে এমন ঝামেলা আসতেই থাকবে আর সেটা আমি মানতে পারব না।
যাইহোক,বাবা তৎক্ষণাৎ মামা-মামির সাথে কথা বলে। স্থির হয় আমাদের আসা। তারপর আমি তাদেকে বলি তোমাকে আগেই যাতে কিছু না জানানো হয়। আমি গেলে একেবারে সরাসরি দেখতে পাবে।
কাল আসার পথে তুমি আমাকে দেখে ফেলার পরও কেন যে বুঝতে পারো নি তাই ভাবছি। আমি মনে করেছিলাম তুমি বুঝে ফেলেছো।‌”

যেটা আমি শুনতে চেয়েছিলাম অবশেষে শুনতে পেলাম। সেইসাথে আরো কিছু জানতে পারলাম। চোখের কোলে জমা জল‌ টুপ করে গড়িয়ে পড়লো। নিজেকে সামলাতে কিছুটা সময় লাগলো। তারপর আমি মুখ খুললাম,”আচ্ছা,তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলে ভালো কথা। কিন্তু তোমার এই সারপ্রাইজের চক্করে আমার যে জান বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল সেটা জানো?
তোমার সারপ্রাইজ পর্ব তাও শেষ হলো না। কাল থেকে কোনো কথা বললে না, এমনকি আমার দিকে তাকালে পর্যন্ত না, আমি তোমার আশেপাশে গেলে তুমি সরে যাচ্ছিলে। অন্যের দৃষ্টিতে এমন আচরণ হয়ত খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমার এই আচরণের কারণে আমার কত রকমের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে আন্দাজ করতে পারো? এই তোমার ভালোবাসার নমুনা!
তুমি ভেবো না তোমার এসব কর্মকাণ্ডে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার রাগ হচ্ছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে।”

আশিষ হেসে ফেললো। তারপর আমার হাত দুটো তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,”স্যরি। আসলে আমি চেয়েছিলাম বিয়ের রাতে তোমাকে সবকিছু বলব। এরচেয়ে পারফেক্ট সময় আর হয় বলো?”

“ভালোবাসো আগে বলে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো?”

“আমি তোমাকে আগে বলিনি কারণ আমি চাইনি বিয়ের আগে আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক তৈরি হোক। তাছাড়া তোমাকে ভালোবাসি এটা বুঝতেই আমার বেশ সময় লেগেছিল। এই কয়েকদিন আগে হঠাৎ বুঝতে পারি। অথচ দেখো আগে আমি মনে করতাম প্রেম- টেম আমার দ্বারা হবে না। অবশ্য আমি আগেই জানতাম তুমি আমাকে পছন্দ করো। তাই একটু দুরত্ব বজায় রাখতাম।”

“তুমি আসলে খুব নিষ্ঠুর। আমি বেশ বুঝতে পারছি সারাজীবন জ্বালিয়ে মারবে। আগে জানলে বিয়েই করতাম না।”

আশিষ আবার হেসে ফেলল।
আমি তার কাছে সরে এসে তার বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলাম!
(সমাপ্ত)