আসক্তিময়_ভালবাসা পর্ব-২৬

0
3396

#আসক্তিময়_ভালবাসা
#Part_26
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

৬ মাস পর,

গোধূলির শেষ প্রহর। ধীরে ধীরে চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। এমন সময় আমি ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাসায় ঢুকছি। চোখে মুখ একদম মলিন হয়ে আছে। আমি দুই এক পা এগিয়ে যাচ্ছি ভিতরে যাচ্ছি। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে আজ। আমার মলিন চেহারা দেখে রেনু আন্টি বলে,

— কি রে! আজ তোকে এমন লাগছে কেন?

আমি অলস ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বলি,

— আজ অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই হয়তো।

— যা গিয়ে দ্রুত হাতমুখ ধুয়ে আয়। আমি খাবার নিয়ে আসছি।

আমি রুমের দিকে যেতে যেতে বলি,

— খেতে ইচ্ছে করছে না।

রুমে এসে ব্যাগটা পড়ার টেবিলে রেখে এপ্রোণটা খুলে চেয়ারে ছুঁড়ে রেখে দেই। শরীর থেকে কেমন বিশ্রী গন্ধ আসছে। গন্ধে গা কেমন গুলাচ্ছে। এখন শাওয়ার না নিলে হয়তো মরেই যাব। আমি আর দেরি না করে কাপড় নিয়ে ঢুকে পড়ি ওয়াশরুমে।

শাওয়ার নিয়ে এসে টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে এসে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ি। শরীর পুরো ছেড়ে দিয়েছে। ক্লান্তিতে দুইচোখ লেগে আসছে। ইতি মধ্যে শরীরও ম্যাজম্যাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি এমন সময় দরজা ঠেলে রেনু আন্টি রুমে আসে। হাতে তার খাবারের প্লেট। সে আমাকে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলে,

— না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিস কেন? আগে খেয়ে নে কিছু। সারাদিন তো মনে হয় না ঠিক মত কিছু খেয়েছিস। এখন একটু খেয়ে নে।

আমি আন্টির আওয়াজ শুনে ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশ ফিরে তাকাই। ছোট ছোট চোখে বলি,

— ইচ্ছে করছে না তো। ঘুম পাচ্ছে খুব।

আন্টি তেতে উঠে বলে,

— দেব এক কানের নিচে। কয়েকদিন ধরে দেখছি ঠিক মত কিছুই খাচ্ছিস না। দিন দিন কিভাবে শুকিয়ে যাচ্ছিস। আর রাতে কি ঘুমাস না নাকি? চোখের নিচেও কেমন কালি পড়ে গিয়েছে।

— পড়ার চাপ বেড়ে গিয়েছে। তার উপর কয়েকদিন যাবৎ ধরে ওইসব কাটাকাটি দেখে অভক্তি চলে এসেছে। খেতে গেলেই ওইসব মনে পড়ে আর বমি আসে।

আন্টি আমার পাশে এসে বসে বলে,

— একটু তো খেতে হবে নাকি। উঠ! আমি খায়িয়ে দিচ্ছি।

এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে আমাকে তুলে বসালো। অতঃপর পরম যত্নে খায়িয়ে দিতে থাকল। তার খায়িয়ে দেওয়ার মধ্যেও লুকিয়ে ছিল অপার মমতা। একে আর আমাকে দেখে যে কেউ বলবে আমরা মা ও মেয়ে। অথচ তার সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্কই নেই। কথাটা ভেবে আমি আনমনে হেসে ফেলি।

___________________________________________

একটু আগেই পায়েল মেডিক্যাল থেকে ফিরে এসেছে। ঘরে এসে সে কোন মতে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের দিকে দৌঁড় দেয়। রান্না ঘরের সামনে আসতেই সে ইসমি বেগম মানে ওর শ্বাশুড়িকে দেখতে পায়। সে চুলায় চায়ের জন্য পানি বসাচ্ছে। পায়েল তাকে দেখে তারাতারি ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নেয়। অতঃপর রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

— মা আমি করে দিচ্ছি আপনি যান।

ইসমি বেগম পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে,

— সমস্যা নেই। আমি করে নিব।

পায়েল মাথা নিচু করে বলে,

— আমার উপর কি কোন বিষয়ে রেগে আছেন? না মানে ইয়ে…

ইসমি বেগম কিছুক্ষণ পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে,

— মাত্র মেডিক্যাল থেকে এসেছ নিশ্চয়ই ক্লান্ত হবে। তাই বলছিলাম আমি করি।

পায়েল এইবার মাথা তুলে মিষ্টি হাসি হেসে বলে,

— তেমন তো কিছু করতে চাইছি না। শুধু চা-টা করতে চাইছি। আর এইভাবেও সকাল ও সন্ধ্যার চা-টা বাবা আর আপনি আমার হাতেরই খান। এই দুই বেলা কিন্তু আমার ডিউটি ফিক্সড থাকে। আর আমি আবার কামাই কম দেই।

ইসমি বেগম হেসে পায়েলের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন,

— আচ্ছা ঠিক আছে তুমিই করো। আমি বরং যাই।

— আচ্ছা! আমি ক্ষণেক মাঝেই চা করে নিয়ে আসছি।

ইসমি বেগম হাল্কা হেসে রুমে চলে আসেন। রুমে আসতেই দেখেন বিছানায় বসে আমির সাহেব বই পড়ছেন। সম্ভবত কোন উপন্যাস। ইসমি বেগমও বিছানার অপর পাশে এসে বসেন। অতঃপর আমির সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

— মেয়েটা বড্ড ভালো।

আমির সাহেব বইয়ের পাতার দিকেই দৃষ্টি রেখে বলে,

— কোন মেয়ে?

ইসমি বেগম সুরু চোখে আমির সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,

— পায়েলের কথা বলছি আমি।

আমির সাহেব এইবার বইয়ের পাতার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ইসমির বেগমের দিকে তাকিয়ে বলেন,

— তা কি আজ বুঝলে? শুরু থেকেই তোমায় বলে আসছি মেয়েটা ভালো। ওকে কষ্ট দিও না। কিন্তু না, কে শুনে কার কথা। শুরুর দিকে যদি এইটা বুঝতে তাহলে মেয়েটা এতটা কষ্ট পেত না।

ইসমি বেগম মাথা নিচু করে বলে,

— হুট করে সব মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। কেন যেন ওকে নিজের বউমা হিসাবে নিতে পারচ্ছিলাম না। আদিবের উপর রাগ হচ্ছিল। কিন্তু কিছু বলতে পারছিলাম না। তাই ঘোরের মধ্যে এসে ওর সাথে কর্কশ ব্যবহার করে ফেলি। কিন্তু পড়ে বুঝতে পেরেছি মেয়ে হিসাবে ও খুব লক্ষী। দেখলে না কিছুদিনের মধ্যেই কেমন সংসারী হয়ে উঠেছে। আসলেই বলতে হচ্ছে, আদিব নিজের জন্য যে মেয়ে পছন্দ করেছে তা হয়তো বা আমি নিজে খুঁজেও আনতে পারতাম না।

— নিজের ভুল বুঝতে পেরেছ এইটাই অনেক। কিন্তু মেয়েটার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে দিও না। ওর উপর কিন্তু পড়ার চাপ অনেক। মেডিক্যালের পড়ালেখা এত সহজ না বুঝলে। কোন মানসিক চাপ দিও না ওর উপর।

ইসমি বেগম তেতে উঠে বলে,

— আমাকে কি তোমার জি বাংলার মূর্খ বা অত্যাচারী শ্বাশুড়ি মনে হয়?

আমির সাহেব চশমা ঠিক করতে করতে বলেন,

— সারাদিন যদি ওইসবই দেখতে থাক তাহলে তা মনে হতে বেশি দেরি নি।

— এই কি বললে?

আমির সাহেব না শুনার ভান করেন বইয়ের দিকে মনোযোগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। এই মূহুর্তে যেন বইটি না পড়লে খুব বড় কিছু হয়ে যাবে। ইসমি বেগম তা দেখে রেগে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই পায়েল ট্রে তে চা করে নিয়ে আসে।

পায়েল ইসমি বেগম আর আমির সাহেবকে চা দিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। বিছানায় বসতেই চোখ দিয়ে দুই ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ঠোঁটের কোনে ঝুলতে থাকে তৃপ্তির হাসি। না এই কান্না দুঃখের না খুশির। চা দিতে গিয়ে পায়েল ইসমি বেগম আর আমির সাহেবের কথা শুনে নেয়। ইসমি বেগম যে ওকে মেনে নিয়েছে তা ভাবতেই পায়েল খুশিতে আপ্লূত হয়ে যায়। কিন্তু তা তখন প্রকাশ করে না৷ কিন্তু এখন রুমে এসে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছে। আজ সে অনেক খুশি। সে যেন আজ সব পেয়ে গিয়েছে সব। আদিবকে আজ জড়িয়ে ধরে এতগুলো থেংকিউ দিতে ইচ্ছে করছে। ওর জন্যই সব হয়েছে। ও যদি সর্বদা ওর পাশে না থাকতো তাহলে হয়তো এর কিছুই সম্ভব হতো না। সে কবে ভেঙ্গে যেত। আল্লাহ এর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাচ্ছে যে, সে তাকে আদিবের মত জীবনসঙ্গী দিয়েছে।

পায়েল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে আদিবকে ফোন দিয়ে ফেলে। দুইবার রিং হতেই আদিব ফোন ধরে। ফোন রিসিভ হতেই পায়েল বলে উঠে,

— আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ আ লোট।

পায়েলের কথা শুনে আদিব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। চোখ দুইটো বড় বড় হয়ে আসে। ফোন রিসিভ করতেই আদিব এমন কিছু শুনবে তা মোটেও আশা করে নি। আদিব কান থেকে ফোন সরিয়ে নিয়ে একবার ভালো করে নাম্বারটা দেখে নে। এইটা কি আদৌ পায়েলের নাম্বার কি না, ভুলে অন্য কাউরো নাম্বার রিসিভ করে ফেলে নি তো সে আবার। কিন্তু না! নাম্বার তো ঠিকই আছে। আদিব অবিশ্বাস্য সুরে বলে,

— প্রেয়সী তুমি ঠিক আছো তো? শরীর খারাপ করেছে নাকি?

আদিবের কথা শুনে পায়েল ছোট ছোট চোখ করে বলে,

— আমার আবার কি হবে? আমি একদম ঠিক আছি।

— তাহলে ফোন দিয়ে যে এইভাবে আই লাভ ইউ বললে।

— বিকোজ আই লাভ ইউ। হিহি! বায়!

এই বলে ফোন খট করে কেটে দেয়। আদিব যেন এইবার আরেক দফা অবাক হয়। সে কিছুক্ষণ ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,

— এই মেয়ে নির্ঘাত আমায় একদিন পাগল বানিয়ে ছাড়বে। কখন কি করে কিছু বুঝি না। আসলেই মানুষ ঠিকই বলে, মেয়ে মানুষের মন বুঝা বড় দায়। এদের মনে কখন কি চলে কে জানে।

____________________________________________

আনিশা মুখ ফুলিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। একটু পর পরই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মারুফের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু এতে মারুফের কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। সে চুপচাপ মেনু দেখে চলেছে। আনিশা এইবার কাঠ কাঠ গলায় বলে,

— এইখানে কেন এনেছেন আমায়?

মারুফ আনিশার কথা শুনে চোখ তুলে তাকিয়ে বলে,

— রেস্টুরেন্টে মানুষ কি জন্য আসে? ডাফার!

— কিন্তু হুট করে এইসবের মানে?

মারুফ আনিশার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওয়েটারকে ডাক দিয়ে ওর্ডার দেয়। অতঃপর আনিশার দিকে তাকিয়ে বলে,

— নিজেকে একবার আয়নায় দেখছ? শুকিয়ে নিজের কি হাল করেছ? মনে হচ্ছে যেন জামাই এর টাকার আকাল পড়েছে আর তুমি এর জন্য দুঃখী অভাগী নারী হয়ে ঘুরছো।

আনিশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে,

— আর আপনি শ্যাম হয়ে ঘুরছেন।

মারুফ ভাব নিয়ে বলে,

— শ্যামরা কি স্বাদে স্বাদে ঘুরে নাকি? শ্যামলতাদের চাহনিই তাদের ঘুরতে বাধ্য করে।

আনিশা ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে বলে,

— কিভাবে?

— শ্যামলতাদের চাহনিতে একধরনের মাদকতা থাকে। যা শ্যামদের আসক্ত করে ফেলে। যার ফলে শ্যামরা শ্যামলতাদের পিছে আসক্ত হয়ে ঘুরে। বুঝেছ? অবশ্য এইসব তোমার মত বাচ্চা মেয়েরা বুঝে না।

আনিশা এতক্ষণ যতটা না মুগ্ধ হয়ে কথা গুলো শুনছিল শেষের কথাটা শুনে সে ফুসে উঠে। তিক্ত কন্ঠে বলে ,

— তো এই বাচ্চা মেয়ের পিছে ঘুরেন কেন?

মারুফ মিষ্টি হাসি হেসে বলে,

— কারণ সে আমার শ্যামলতা তাই।

আনিশা এই কথার প্রত্যুত্তরে কি উত্তর দিবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না সে। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয় মারুফের দিকে।

__________________________________________

ঘড়িতে বারোটা বাজতে আর কিছু সময় বাকি। চারদিকে পিন পিন নিস্তব্ধতা। ঘড়ির কাটা শব্দ কানে আসছে। মাঝে মধ্যে দুই একটা কুকুরের মিছিমিছি ডাক শুনা যাচ্ছে। আমি নিজের রুমের বসেই পড়ছি। চোখে বিন্দু মাত্র ঘুম নেই। সন্ধ্যায় আন্টি খায়িয়ে দিয়ে যাওয়ার পর লম্বা একটা ঘুম দেই। আর সেই ঘুম গিয়ে ভাঙ্গে ঠিক রাত ১০ টায়। এরপর রাতের খাবার পড়তে বসে পড়ি। আঙ্কেল আর আন্টি তো খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন।

রাত একটার নাগাদ আমি বই বন্ধ করে সোজা হয়ে বসি। আড়মোড়া ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকাই। টেবিলে মাথা হেট করে চোখ বন্ধ করে রাখি। আজ কাউকে তীব্রভাবে মনে পড়ছে। স্মৃতি গুলো মস্তিষ্কের কোনে কোনে ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে মনটা যেন ব্যাকুল হয়ে উঠছে। আমি তড়িৎ গতিতে চোখ খুলে ফেলি। উঠে বসে কয়েকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই। নিজেকে শান্ত করার পর বার বার চোখ চলে যাচ্ছে টেবিলের নিচের ড্রয়ারটায়। হাতও যেন বেসামাল হয়ে ড্রয়ারের দিকে ছুটে চলে যেতে যাচ্ছে। মন বার বার আকুপাকু করছে। মন বার বার বলছে, “ড্রয়ারটা খুল। তোর সব সমস্যার সমাধান এইখানেই আছে। খুল তুই খুল!” কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে, ” ড্রয়ার খুলার কোন দরকার নেই। খুললেই তুই দূর্বল হয়ে পড়বি।”
মন ও মস্তিষ্কের টানাপোড়েনে অবশেষে মন জিতে যায়। আমি ড্রয়ার টান দিয়ে খুলি ফেলি। ড্রয়ারের এক কোনে একটা ছোট সাদা রঙের খাম পড়ে আছে। খামটা আমি হাতে নিয়ে টেবিলের উপর রাখি। অতঃপর খামটা খুলে দেখি। তাতে ছোট একখান চিঠি আর একটা চাবি। ৬ মাস আগে পাওয়া এই খামটি আমি আজ খুলছি। হয়তো আজও খুলতাম না যদি না মনটা এতটা ব্যাকুল হয়ে উঠতো। এই মন এত বেহাইয়া কেন কে জানে? যা তার চাই মানে তার চাই এই চাই। কক্ষনো এই মনের সাথে পেরে উঠা যায় না।

আমি ধীর গতিতে খামটা বের করি। এমন একটা ভাব করি যেন চিঠিটা পড়া আমার জন্য মোটেও কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। না পড়লেও চলবে। কিন্তু মন? সে তো ব্যাকুল হয়ে আছে। তার যেন কৌতূহলের শেষ নেই এই চিঠিতে কি আছে। সেকেন্ড কয়েকের মধ্যে হাজারো জল্পনা-কল্পনা এঁকে বসে আছে মনে। আমি ধীরে ধীরে চিঠির ভাজটা খুলি। অতঃপর পড়তে শুরু করি,

রিয়ুপাখি,

কি অবশেষে আমার কথা পড়লো বুঝি? তা কতদিন পর মনে পড়লো? এক সেকেন্ড,এক মিনিট, এক ঘন্টা, একদিন, এক সপ্তাহ,এক মাস, এক বছর পর নাকি মনেই পড়ে নি। যদি মনে পড়ে তাহলে নিশ্চয়ই এখন চিঠিটা পড়ছো। আর যদি না মনে পড়ে তাহলে তো এই চিঠির পাতায় ধূলোর স্তুপ জমে রইবে। এত কিছু বলে ফেললাম। অথচ এইটাই জিজ্ঞেস করলাম না কেমন আছ। তা প্রশ্নটা কি এখন জিজ্ঞেস করবো? না থাক এই প্রশ্নও সেই প্রশ্নের সাথে তুলা রইলো। কেমন? আচ্ছা চিঠিটার কি কোন চাবি পেয়েছ? চাবিটা কিন্তু এমন তেমন চাবি মনে করো না আবার। এইটা হচ্ছে মন ভালো করার চাবি। এখন এই মন ভালোটা আসলে কি তা তোমায় খুঁজে বের করতে হবে৷ আমি কিন্তু কিছুই বলছি না। তুমি না আমাকে খুব ভালো করে বুঝ। তাহলে এই কথাটাও বুঝে নিও।

চিঠিটা আর বড় করতে চাইছি না। চাইছি না তা বললে ভুল হবে। আসলে আর শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে ইতি টানছি। শেষে শুধু এতটুকুই বলতে চাই, নিজের যত্ন নিও। আমি তো নেই তোমাকে দেখার জন্য, তাই নিজের খেয়াল নিজেই রেখ।

ইতি
………..

চিঠিটা পড়ে আমি কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে রইলাম। বুঝার চেষ্টা করছিলাম রিয়ানের কথাটা। কিসের চাবি এইটা? বার বার মনে মনে রিপিট করছিলাম একটা কথা, “মন ভালো করার চাবি, মন ভালো করার চাবি।” অতঃপর যখন বুঝতে পারি তখন লাফিয়ে উঠি। বড়বড় চোখ করে চাবিটির দিকে তাকিয়ে রই।

#চলবে