আসক্তিময়_ভালবাসা পর্ব-২৭

0
2863

#আসক্তিময়_ভালবাসা
#Part_27
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

চিঠিটা পড়ে আমি কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে রইলাম। বুঝার চেষ্টা করছিলাম রিয়ানের কথাটা। কিসের চাবি এইটা? বার বার মনে মনে রিপিট করছিলাম একটা কথা, “মন ভালো করার চাবি, মন ভালো করার চাবি।” অতঃপর যখন বুঝতে পারি তখন লাফিয়ে উঠি। বড়বড় চোখ করে চাবিটির দিকে তাকিয়ে রই। কিছুক্ষণ সেইভাবেই তাঁকিয়ে থেকে আমি দ্রুত চাবিটা হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসি। তীব্র এক অস্বস্তি ও সংশয় নিয়ে আমি ছুটে যাই পূর্ব দিকে থাকা রুমটির দিকে। দরজাটির সামনে এসে দাঁড়াতেই সবার আগে চোখে পড়ে ” No one is allowed to go inside.”- লিখা বোর্ডটি। সাথে সাথে কিছু স্মৃতি মনের ভিতরে ঝাঁক দিয়ে বসে। মনে মনে হাসলাম আর বললাম,

— নিজে থাকুক বা নাই থাকুক রুমের বাইরে বোর্ডটা ঝুলা আবশ্যক। পাগল একটা!

আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেই কেউ আছে কি না। না কাউকে চোখে পড়লো না। আমি একবার হাতে থাকা চাবিটির দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার দরজার দিকে। বুক ভরা নিঃশ্বাস নিয়ে রুমের লকের ভিতরে চাবিটা ঢুকাই। চাবিটা ঘুরাতেই দরজার লকটা খুলে যায়। সাথে সাথে ঠোঁটের কোনে সরু এক হাসির রেখা ফুটে উঠে। আমি চাবিটা খুলে লকে মোচড় দিতেই দরজা খুলে যায়। আজও রুমটা সেইদিনের মত ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু আজ নাকে কোন সুগন্ধযুক্ত ঘ্রাণ নাকে আসছে না বরং গুমোট এক গন্ধ নাকে আসছে। বুঝাই যাচ্ছে রুমটা ৬ মাস যাবৎ বদ্ধ থাকার কারণে ফেঁপে আছে। আমি আলতো হাতে দরজাটা লাগিয়ে দেই। দেয়ালে হাতরে হাতরে লাইটের সুইচগুলো খুঁজে বের করার ক্ষুদ্র চেষ্টা করি। খানিকক্ষণ বাদে পেয়েও যাই। কিন্তু কোনটা লাইটের সুইচ তা বুঝতে না পেরে এক এক করে সকল অন আর অফ করতে থাকি। অবশেষে লাইট জ্বলতেই আমি প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেই। পিছে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পাই বেশ পরিপাটি একটি রুম। রুমটা বেশ বড়ও বটে। আমি সুক্ষ্ম চোখে সব পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। রুমের ঠিক মাঝে বিছানাটি। তার উপর কালো চাদর। বিছানার সাথে লেগে থাকা দেয়ালে রিয়ানের একটা ছবি ঝুলছে। বিছানার এ পাশে কাবার্ড ও অপর পাশে বারান্দা। বারান্দার দরজাটি বিশাল বড় আর পুরাই কাঁচের। দরজাটি থেকে ঠিক ২ হাত দূরে পড়ার টেবিল। তার পাশেই সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি গিটার। পড়ার টেবিলের ঠিক বিপরিত পাশে ড্রেসিংটেবিল। বিছানার ঠিক বরাবর ওয়াশরুম। বিছানার সাথেই দুই ড্রয়ারের একটি বেড সাইড টেবিল। তার উপর একটা ফ্রেম আর ল্যাপশেড। ফ্রেমে রিয়ানের একটা ছবি লাগানো। দূর থেকে বুঝতে পারলাম সকল আসবারপত্রে বেশ ধূলো জমেছে। জমবার কথাই! ৬ মাস ধরে রুমটি বন্ধ। কেউ আসে না রুমটিতে। যার জন্য পরিষ্কারও করা হয় না।

আমি দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাই বারান্দার দিকে। ফেঁপে থাকা রুমটিতে একটু সতেজ বায়ুর প্রয়োজনবোধ করছি তাই বারান্দার গ্লাসটা খুলে দিলাম। সাথে সাথে এক মুঠো বাতাস এসে বারি খেল আমার মুখের সাথে। এমন লাগছিল যেন বাতাসটি এতক্ষণ ভিতরে আশার জন্যই আকুপাকু করছিল। আমি মুচকি হেসে পড়ার টেবিলের দিকে চলে যাই। টেবিলে বইগুলো বিন্যস্ত আকারে সাজানো। আমি সেইগুলোই নেড়েচেড়ে দেখতে থাকি। হঠাৎ চোখ যায় দুইটি বইয়ের নিচে থাকা একটা স্কেচবুকের দিকে। হুট করে স্কেচবুকটি দেখার তীব্র আগ্রহ জাগে। স্কেচবুকটি হয়তো বা চোখে পড়তো না কিন্তু স্কেচবুকের উপরের কাভারটা অতি সুন্দর যার জন্য এইটি সহজেই আমার চোখ কাড়ে। কথায় আছে, ” মানুষ সুন্দরের পূজারি।”
একই কথাটা আমার জন্য প্রযোজ্য হয়ে দাঁড়াল। কভারের সৌন্দর্যটি আমাকে তার দিকে আকর্ষিত করতে সক্ষম হয়ে গেল। আমি সেটি হাতে নিয়ে টেবিলে সাথে থাকা চেয়ারটি হাত দিয়ে ধূলোগুলো সরিয়ে বসে পড়ি। আলতো হাতে স্কেচবুকটি খুলে দেখতে থাকি। প্রথম কয়েক পৃষ্ঠায় প্রকৃতির বেশ কয়েকটা স্কেচ আঁকা। এরপর ব্যস্ত শহরের কিছু দৃশ্য। স্কেচগুলো এতটাই সুক্ষ্ম যে কেউ বলতে পারবে না এইটা হাতে কলমে আঁকা। স্কেচের নিচে বা দিকটায় ছোট করে তারিখ দেওয়া সাথে একটা সিগনেচার। বলা বাহুল্য, সিগনেচারটা রিয়ানের। তার সিগনেচার আমি এর আগেও বহুবার দেখেছি যার জন্য আমার চিনতে অসুবিধে হলো না। আমি বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আনমনে বলি,

— উনার আর কত গুণ আছে কে জানে?

এই বলে আমি পরবর্তী স্কেচটি দেখার জন্য পৃষ্ঠা উল্টাতেই থমকে যাই। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি স্কেচটির দিকে। সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে স্কেচটা পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। স্কেচটি একটি মেয়ে এর। এলোমেলো চুল তার। হাত দিয়ে সে সেই এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে ব্যস্ত। ঠোঁটের কোনে চওড়া হাসি। চোখদুটো যেন স্নিগ্ধতায় ঘেরা। হাল্কা বোচা নাকটিতে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হাসির কারণে গাল দুটো আরও ফুলা উঠেছে। রাস্তার পাশে থাকা সোডিয়াম লাইটের আলো তার মুখ বরাবর এসে পড়ছে। গলার একটু নিচে হাল্কা আলো পড়েছে আর সেই আলোয় তার গলায় থাকা ছোট কালো কুচকুচে তিলটি ঝলঝল করে উঠেছে। স্কেচটি দেখা যে কেউ বলবে এইটি পুরোই জীবন্ত। এতটাই নিখুঁত এই স্কেচটি। আমার স্কেচটি দেখে বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না যে এইটা আমারই স্কেচ। আমি মুগ্ধ চোখে আমাকেই দেখছি। নিজেকে যেন এই স্কেচে নতুন রুপে আবিষ্কার করছি। কিছু কিছু জিনিস আছে যা মুখে বলে এর সৌন্দর্য প্রকাশ করা যায়। এই স্কেচগুলোও ঠিক সেইরকমই একটা বস্তু। আমি একেক করে সকল স্কেচ দেখতে লাগলাম। সবগুলোই আমার। কিন্তু একেক স্কেচে আমার মুখভঙ্গি একেক রকম। কোনটাতে আমি রেগে আছি তো কোনটাতে মুখ ফুলিয়ে। শেষের দিকে আমার একটা ছবি দেখে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রই। আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি। গোলগাল গাল দু’টো একদম লাল হয়ে আছে। নাকের ডগাও লাল হয়ে আছে। গালের মধ্যে হাল্কা কান্নার পানি জমে আছে। ঠোঁট উল্টিয়ে কোনমতে কান্না চেপে আছি আমি। ছবিটা অতিসাধারণ হলেও এর চোখদুটো যেন জীবন্ত। এই বুঝি টুপ করে চোখ দুই জল গড়িয়ে পড়বে। ছবিটি দেখার সাথে সাথে থার্টি ফাস্ট নাইটের সেইঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। স্কেচের পাশে তাকাতেই দেখি কিছু লিখা আছে। আমি উৎসুক দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকিয়ে পড়তে শুরু করে,

” সে কি জানে?
তার চাহনি যে মাদকতায় ঘেরা,
যা অন্যকে তীব্রভাবে আসক্ত করে।

সে কি জানে?
তার হাসি মাদকাসক্তিতে পূর্ণ,
একবার দেখলেই নেশা ধরে যায়।

সে কি জানে?
কার কল্পকথার কল্পলতা সে?
কার পাড়ে তার বসবাস?

সে কি জানে?
কেউ তার প্রতি আসক্ত?
তীব্র ভাবে আসক্ত? ”

কথাগুলো পড়া সাথে সাথে গা শিহরণ দিয়ে উঠে। হাতের লোমগুলো যেন কেঁপে উঠে। বেশ কিছুক্ষণ লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঠোঁটের কোনে এক প্রশস্ত হাসি ফুটে উঠে। আমি আরও কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখি কিছু কথা লিখা। আমি সেগুলো এইবার মনোযোগ সহকারে পড়তে শুরু করি,

” স্কেচবইটা তুমি পাবে কি না জানি না। এই রুমে আসবেও কি না জানি না। কিন্তু তাও লিখছি। কেন না আমার মন বলছে তুমি একবার হলেও ঠিক এই রুমটিতে আসবে আর স্কেচবইটা পাবে। তুমি যাতে স্কেচবইটা পেতে পারো সেই জন্য টেবিলে বইয়ের ভাজে রেখে গেলাম। মাকেও মানা করে এসেছি আমি না আসা পর্যন্ত যাতে সে এই রুমে না আসে। যদি বাই এনি চান্স তার হাতে স্কেচবইটা পড়ে আর তোমার আগে সে এই বইটা দেখে ফেলে। দেখলে বইটা তুমি আগে দেখবে অন্যথায় আর কেউ না।
তা তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো যেই আমি আমার রুমে কাউকে ঢুকতে দেই না সেই আমি তোমাকে কেন আমার রুমের চাবি দিয়ে আসলাম? তাই তো! তুমি কি বুঝতে পেরেছ কেন দিয়েছি চাবিটা নাকি না? যদি আমাকে সত্যি বুঝে থাক তাহলে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছ কেন। তা এই ‘কেন’-টা, খুঁজে বের করে নাও। আর হ্যাঁ, অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হবে বলে যাচ্ছি। এই দীর্ঘ সময় যে শুধু মাসে আবদ্ধ থাকবে তা না। মাস পেড়িয়ে বছরেও গড়াতে পারে। তাই আবার বলছি, নিজের খেয়াল রেখ।
আর পারলে এই ‘কেন’-টা খুঁজে নিও। হয়তো ‘কেন’ এর রহস্যও কোন এক বইয়ের পাতায় লুকিয়ে আছে। ”

আমি এইবার স্থির হয়ে বসে রইলাম। আনমনে বলতে থাকি,

— রিয়ান এর মধ্যে মেয়েদের চেয়েও ডাবল প্যাঁচ নিয়ে ঘুরে। একবার বলেছি কি আমি তাকে ভালো মত বুঝি তাই বলে কি এখন এর সত্যতা যাচাই জন্য কি বার বার পরীক্ষা জারি করবে নাকি? উফফ! এখন এত রাতে বসে বসে এই “কেন” এর উত্তর খুঁজো।
এক মিনিট! শেষে রিয়ান যেন কি বললেন? “হয়তো ‘কেন’ এর রহস্যও কোন এক বইয়ের পাতায় লুকিয়ে আছে।” ওনি কি ইন্ডাইরেক্টলি স্কেচবুকের কথাই বলছেন।

আমি দ্রুত স্কেচবুকের বাকি পৃষ্ঠাগুলো উল্টাতে লাগলাম। একদম শেষ পৃষ্ঠায় গিয়ে দেখি একটা চাবিকে সেলোটেপ দিয়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। আমি সেলোটেপটা খুলে চাবিটা নেই। বুঝার চেষ্টা করি কিসের চাবি। আমি সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে রুমের চারদিকে তাকাতে থাকি। মূলত উদ্দেশ্য দেখা কিসে কিসে লক আছে। অতঃপর কাবার্ডের দিকে চোখ যেতেই আমি সেইদিকেই আগে যাই। প্রথম পার্টটা খুলার চেষ্টা করি কিন্তু খুলে না। দ্বিতীয় পার্টটে চাবি ঢুকিয়ে ঘুরাতেই খুলে যায়। সাথে সাথে আমার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠে। আমি কাবার্ডটা খুলতেই দেখতে পাই একটা মাঝারি সাইজের কালো শপিং ব্যাগ। আমি উৎসুক চোখে সেটা হাতে নেই। অতঃপর ভিতরে উঁকি দিতেই ছোট একটা টেডিবিয়ার চোখে পড়ে সাথে একটা বক্স। আমি বক্সটা আগে বের করে হাতে নিয়ে খুলে দেখি। তাতে একজোড়া পায়েল। পায়েলের পুরো গায়ে ছোট ছোট সাদা পাথর বসানো। সাধারণ হলেও এর মধ্যে অসাধারণ একটি ব্যবহার ফুটে উঠেছে। আমি বাক্সটা রেখে টেডিবিয়ার হাতে নিলাম। বেবি পিংক কালারের একটি টেডিবিয়ার। টেডিবিয়ারটি হাতে একটা লাভটাইপ কোসন ধরে আছে। আমি সেটা বুকে জড়িয়ে নিতেই সেটা বেজে উঠে। আমি অবাক চোখে টেডিবিয়ারটির দিকে তাকিয়ে থাকি। সেটা বএ উঠছে, ” রিয়ুপাখি! রিয়ুপাখি! রিয়ুপাখি!”

একটা সময়ের পর বলা বন্ধ হয়ে গেল। আমি হাল্কা হেসে মনে মনে বলি,

— আসলেই চাবিটা মন ভালো করার চাবি ছিল। কিন্তু আপনি কবে আসবেন? না আছে কোন যোগাযোগ, না কোন খবর। ৬ মাস তো হলো সিডনি গিয়েছেন। আচ্ছা অপেক্ষার প্রহর কি সত্যি খুব লম্বা হবে? যা একসময় আমার সকল সহ্যের বাঁধ ভেঙে দিবে।

প্রশ্নের জবাব সেইদিন পাই। কিন্তু প্রতিনিয়ত এই প্রশ্ন মনের মধ্যে নিয়েই ঘুরঘুর করছিলাম। দেখতে দেখতে যে কিভাবে আরও ৮ মাস পেড়িয়ে গেল বুঝাই গেল না। হয়তো পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলে বুঝে উঠতে পারি নি।

সেইদিন আমি ক্লাস শেষে বাসায় এসেছি মাত্র। ক্লান্ত শরীর নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল টিপছি। একটু পর আন্টি এসে দরজা খুলে দেয়। আন্টি দরজার খুলার সাথে সাথে ভিতরে চলে গেলেন। প্রথমত আমি আন্টির এই কাজে বিষ্মিত হলাম। কেন না আন্টি এমন কখনো করে না। আমি কৌতূহল নিয়ে বাসায় ঢুকলাম। চারদিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম কি হয়েছে। নজরে দেখা গেল আন্টি আজ বেশ ব্যস্ত। বার বার এইদিক সেইদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি করছেন। এত ব্যস্ততার কারণ বুঝে উঠতে পারলাম না। দেখে মনে হচ্ছে যেন বাসায় এক ঝাঁক মেহমান আসবে। আমি দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলাম। কৌতূহলী দৃষ্টিতে আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম,

— তোমাকে আজ এত ব্যস্ত দেখাচ্ছে কেনো? বাসায় কি কোন মেহমান আসবে নাকি?

আন্টি ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

— আসবে না এসে গেছে।

আমি জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,

— কে এসেছে?

— রিয়ান এসেছে। রুমেই আছে ঘুমাছে।

কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। দম বন্ধ হয়ে আসবে এমন অবস্থা। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারচ্ছি না কথাটা। মনে মনে বলছি, “সত্যি কি তিনি এসেছেন? এইটা কি স্বপ্ন না সত্য?”
আজ প্রায় এক বছর পর তিনি দেশে ব্যাক করেছেন। এই একবছরে একবারের জন্যও আমাদের মাঝে কোন যোগাযোগ হয় নি। দেখা সাক্ষাৎ তো দূরের কথা। আমি স্থির চোখে আন্টির মুখপানে তাকিয়ে আছে। তার ব্যস্ততা এই কথার প্রমাণ দিচ্ছে যে রিয়ান এসেছে। আমি কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে রুমে চলে আসি। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলি। বুঝতে পারছিলাম না আমার অপেক্ষার প্রহর কি সত্যি শেষ হতে চলেছে? সকল প্রশ্নের উত্তর কি আমি খুব জলদি পেতে চলেছি? তার সাথে দেখা হলে আগে কি জিজ্ঞেস করবো আমার উত্তর গুলো দেন নাকি অন্য কিছু? না আর ভাবতে পারছি না। আমি দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ি। ইতিমধ্যে আমি আবিষ্কার করি আমি রিয়ানের ছোট এক ঝলক দেখার জন্য মন আমার ছটফট করছে। একটা বছর যাকে না দেখে,কথা না বলে সহজেই কাটিয়ে দিয়েছি আজ তাকে দেখার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। মনের মধ্যে এখন তোলপাড় চলছে। আমি দরজার সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। নিজেকে অশান্ত মনকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করতে থাকি। না জানি আজ কি হতে চলেছে।

#চলবে