আসল সম্পর্ক পর্ব-০৯

0
144

#আসল_সম্পর্ক
#পর্ব৯
#ইশরাত_জাহান

Surprise 🥰🦋
অনুপম রেগে গেলো প্রিয়তার উপর। কোথায় সে ভাবছে সম্পর্ক স্ট্রং রাখবে।তাই তো আজ রুহির সাথে কথা বলে নিলো।রুহি নিজেই কল করেছিলো তাকে।প্রয়োজনীয় কথা বলবে। অনুপমও সুযোগ পেলো আজ।তাই রুহির সাথে পার্মানেন্ট কন্টাক্ট অফ করেছে।এদিকে প্রিয়তা কি না তার কথাটা বাবা মাকে বলে দিলো।ঘরে এসে প্রিয়তাকে খুঁজতে থাকে অনুপম।পায় না কোথাও।খুঁজে না পাওয়ার ফলে খাটের উপর বসে পড়ে।কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করার পর দেখতে পেলো টেবিলের উপরে একটি পেপার রাখা। পেপারের উপরে ‘ডিভোর্স’লেখা নিচে প্রিয়তার সই।কিছুক্ষণের জন্য নিরব হয়ে গেলো অনুপম। পরে মনে পড়লো ডিভোর্স পেপার রেডি হতে তো প্রায় মাস লাগবে বলা হয়েছিলো।সাথে সাথে কল দিলো সীমান্তকে।সীমান্ত রিসিভ করলো কল।

সীমান্ত বলে,”হেলো”
অনুপম ক্ষিপ্ত সুরে বলে,”রাখ তোর হেলো।তুই আমাকে বলেছিলি ডিভোর্স পেপার রেডি হতে মাসখানিক সময় লাগবে।আমিও রাজী হয়ে ফিরে আসি।তাহলে এখন বাসায় ডিভোর্স পেপার আসলো কিভাবে?”
অনুপমের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না সীমান্ত।তাই বলে,”কিসের ডিভোর্স পেপার?আমিতো কোনো পেপার তোদের হয়ে এখনও একসেপ্ট করিনি।বরং আংকেল আন্টিকে কল দিয়ে আমিই আসতে বলেছিলাম।শুধু রুহির কথা বলিনি আংকেল আন্টিকে।”

অনুপম অবাক হলো।বাবা মাকে তাহলে সীমান্ত আসতে বলে।সাথে সাথে অনুপম জিজ্ঞাসা করে,”কেনো আসতে বলেছিস তুই?”

ওপাশ থেকে সীমান্ত বলে,”কারণ তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।তোর কেসটা আমি অন্যদের মত করে দেখিনি।অন্যদের ক্ষেত্রে আমরা মোটা অঙ্কের টাকা নেই। যা পারে করুক।আমরা আমাদের কাজের বিনিময়ে টাকা নিয়ে শেষ।শুধু তোর বেলায় মনে হয়েছিলো তোর সংসার সুন্দরভাবে গড়া উচিত।তুই আর প্রিয়তা যেভাবে চলতি ওটা কোনো চেষ্টার ভিতরে ছিলো না।ওটাকে বলা হয় দূরত্বের বৃদ্ধি।সাথে ছিলো তোদের ইগো।আংকেল আন্টি আসাতে তোদের দূরত্বের ফারাক হবে।আমি এটাই ভেবেছি।”

“এতই যখন আমাদের এক করতে চেয়েছিলি,তাহলে এই ডিভোর্স পেপার কেনো পাঠিয়েছিস? বউ আমার সই করে দিয়ে হারিয়ে গেছে।”

“তুই যেনো ভুলেও সই করবি না।আমি দেখছি ব্যাপারটা।”বলেই কল কেটে দিলো সীমান্ত।এদিকে অস্থির হয়ে গেছে অনুপমের মন।

কিছুক্ষণ ভেবে সীমান্ত কল দেয় তার অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাছে।অ্যাসিস্ট্যান্ট রিসিভ করলে সীমান্ত বলে,”তুমি অনুপম ও প্রিয়তার ডিভোর্স পেপার তৈরি করে ওদের বাসায় গিয়েছিলে?”

“জী স্যার,আপনি তো বলেছিলেন অনুপম বোসের ডিভোর্স পেপার রেডি করে ওনার বাসায় যেতে।আমি গিয়েছিলাম বাসায়।অনুপম সাহেবের মা বাবা যেনো তাদের বউমাকে বেশি ভালোবাসে।আমার মনে হয় কি স্যার!এখানে অনুপম সাহেবের পরকীয়া আছে।ওনার বউকে দেখলাম আরো কষ্ট পেলো।”

রেগে গেলো সীমান্ত।সাথে সাথে বলে,”ইডিয়েট, আমি তোমাকে অনুপম বোসের কথা বলেছিলাম।আমার বন্ধু অনুপম নয়। আর অনুপম বোস হিন্দু।তোমার কোন দিক থেকে আমার বন্ধুকে হিন্দু মনে হয়?”

“আসলে স্যার আমি তো আপনার বন্ধুকে তেমন চিনতাম না।আপনাদের কথা যতটুকু শুনেছিলাম মনে হয়েছিলো উনি ডিভোর্সের জন্য উত্তেজিত। আর কাল আমি তো ওনার স্ত্রীর নাম জানি না।আপনি বলেছিলেন অনুপম বোসের ডিভোর্স পেপার রেডি করতে।ওনার বউ পরকীয়া বেড়েই চলেছে। আর ওনার উপরেও প্রেসার দিচ্ছে।তাই ডিভোর্স পেপার তাড়াতাড়ি রেডি করি।আমি কি করে বুঝবো এখানে দুইটা অনুপম।আমি তো কাগজ ঘেটে একটা অনুপমের পেপার পেয়েছিলাম।”

সীমান্ত বুঝলো এটা একটি মিস্টেক।তাই বলে,”অনুপম মানে আমার বন্ধু ও সেদিন অফিস থেকে যাওয়ার পর আমি ফরমটি ডাস্টবিনে ফেলে দেই। আর আংকেল আন্টিকে কল দেই আসার জন্য।আমি তো আমার বন্ধুকে চিনি।ও আবেগে ছিলো।বাবা মায়ের সঙ্গ পেলে ও সংসার জিনিসটি বুঝতো।ওদের ব্যাপারটা নরমাল ছিলো।কিছু সাপোর্টের অভাবে দূরত্ব ছিলো অনেক। আর অনুপম বোস যে,তার বউ পরকীয়ায় জড়িত।তিনি টাকার লোভে অনুপম বোসকে বিয়ে করেন। অনুপম বোস বুঝে যায় কোনো এক ভাবে।প্রমাণের সমস্যা তাই কিছুদিন চুপ ছিলো।ডিভোর্স দেওয়ার জন্য আমার কাছে আসে।তুমি ছিলেনা ওই সময়।অন্য কাজে তোমাকে পাঠিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি আমার বন্ধু অনুপমের বাড়ি খুঁজে পেলে কিভাবে?”

ওপাশ থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট বলে,”আপনি একদিন বলেছিলেন গল্পের ভিতর উনি পুরন ঢাকার কয় নাম্বার গলিতে থাকেন।আমি সেখানে যেয়ে ওনার চাকরির কথা বলে পরিচয় দেই।ওরা চিনতে পারে আমাকে বাড়ি দেখিয়ে দেয়।”

সীমান্ত বলে ওঠে,”আচ্ছা তাহলে তুমি ফোন রাখো।আমি অনুপমের সাথে কথা বলি। আর হ্যা,অনুপম বোসের পেপার আবার রেডি কর।তোমার জন্য আজ আমার দুই অনুপমের থেকে কথা শুনতে হবে।”বলেই ফোন কেটে দেয় সীমান্ত।

~~~~~~~~~
প্রিয়তা বাসায় চলে এসেছে।বাবা মায়ের সাথে বসে সবকিছু শেয়ার করলো প্রিয়তা।কোনো কিছুই গোপন রাখেনি।প্রিয়তার বাবা রেগে গেছেন।বাড়ি মাথায় করে বলে ওঠে,”আমার মেয়েকে মিথ্যা অভিযোগ দেয়।কত্ত বড় সাহস।ও আমার বোনের ছেলে তো কি হয়েছে। ওর একটা শিক্ষা দিতেই হবে।”
চুপ থাকে প্রিয়তা।বাবা তো তার জায়গায় ঠিক আছে।কোন বাবা তার সন্তান সম্পর্কে বাজে মন্তব্য শুনতে পারে?

প্রিয়তার বোন রুবিনা এসেছে।মায়ের কল পেয়েই ছুটে আসে বোনকে দেখতে।এসব কথা শুনে তেতে ওঠে রুবিনা নিজেও।বাবার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বলে,”তুমি উত্তেজিত হইয়ো না বাবা।প্রিয়তা একদম ঠিক কাজ করেছে।ওর তো উচিত ছিলো দুটো থাপ্পড় মেরে আসা।তুই নিজে প্রেম করিস রুহি নামের এক মেয়ের সাথে।দোষ দিস আমার বোনকে।তোকে আমরা আমাদের কাছেই রেখে দিবো বোন।অনুপমের সাথে তোকে আর সংসার করতে দিবো না।”

প্রিয়তার মা প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।প্রিয়তা চুপচাপ বসে আছে।মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে মা।মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় মুহূর্ত ছিলো বিয়ের দিন।ওইদিনই হলো তার বিরহের দিন।প্রেমিক পুরুষকে পেতে পেতেও পেলো না। বিয়ের দিন দেখতে হলো তার প্রেমিক পুরুষের লাশ।আবার সেই দিনই বিয়ে করতে হয় অনুপমকে।আজ সেই সংসারও টিকলো না।

~~~~~~
অনুপম খাটের উপর বসে কপাল চাপড়াচ্ছে।এমন সময় সীমান্ত ফোন দিলো।অনুপম ফোন ধরে বলে ওঠে,”বলে কি বলবি?”

“অন্ধ,বাকপ্রতিবন্ধী,বউ পাগলা আরো কি কি বলে তোকে গালাগালি দেওয়া যায় বলতো?”

“আমি আবার কি করেছি?দেখ ভাই বউ চলে গেছে আমার।তুই আমাকে গালাগালি দিচ্ছিস কেনো?উল্টো তোকে গালাগালি দিতে হবে।”

“গালাগালি পরে দিবি।আগে দেখ পেপারে কাদের নাম লেখা।”

অনুপম তাকালো পেপারের দিকে।পুরোটা পড়লো অনুপম বোস ও রুকমিনি বোস।পড়েই বেক্কল হয়ে গেলো।সাথে সাথে অনুপম বলে ওঠে,”ভাই তুই আমাদের হিন্দু বানিয়ে দিলি!আর প্রিয়তাকে পরকীয়ায় ফাঁসিয়ে দিলি?এটা কেমন অন্যায় বুঝতে পারছিস তুই?বউ আমার বাপের বাড়ি যাবেনা কেনো?এতবড় মিথ্যা মামলা!তোর সাহস কি করে হয় প্রিয়র নামে মিথ্যা মামলা দিতে?”হুংকার দিয়ে বলে।

ফোনের ওপাশ থেকেই কেপে ওঠে সীমান্ত।বলে,”শান্ত হো ভাই।আমার বলদ অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে।ওর নামের সাথে কাজেরও মিল ‘মফিজ’।ও অন্য এক অনুপম কে তুই ভেবেছিলো।”

“আমার বউ গেছে ভেগে।অন্যের ডিভোর্স পেপারে আমার বউ সই করেছে। যার সাথে হলোনা বিয়ে তাকে দিলো তালাক।এটা কেমন বিচার!এখন আমি কি করবো?”

“কি করবি মানে কি?চলে যা তোর বউয়ের কাছে।আচল ধরে টেনে নিয়ে আয়।আরে বেডা বউকে যত পাম পট্টি দিবি বউ তত গোলে যাবে।তোর ভাবীও রাগ করে বাড়ি চলে যায়।এই আমাকে বিনা দোষে মাফ চেয়ে আনতে হয়।তুইও যা নিয়ে আয় বউকে।”

“যাবো আমি কাল।নিয়ে আসবো আমার বউকে।”

“সাব্বাস বেটা। শোন প্রিয়তা যদি তোকে দশবার না করে তুই সেই দশবার তার কাছে যাবি।মেয়ে মানুষ না করাতে এক্সপার্ট।”

“হুম,বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা রাখ তুই।প্ল্যান করি আমি।”
বলেই কল কেটে দেয়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবে অনুপম। পরে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”আমি আসছি বউ।”

চলবে,