আহনাফ চৌধুরী পর্ব-১৮

0
72

#আহনাফ_চৌধুরী
#পর্ব_১৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________
অর্ষার ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান আছে। এজন্য কিছু কেনাকাটা করা লাগবে। আহনাফের অফিস আছে বিধায় অর্ষা সম্পাকে নিয়ে বের হয়েছে। তাছাড়া সম্পারও কেনাকাটা বাকি। তাই দুই বান্ধবী কেনাকাটার পাশাপাশি একটু ঘুরবে, ফিরবে বলে ঠিক করল। দুজনে রিকশায় ওঠার আগে দুই প্লেট ফুচকা খেয়ে নিল। সম্পা বলল,

“তোকে তো একটা কথা বলা হয়নি।”

“কী কথা?” জানতে চাইল অর্ষা।

“বাসা থেকে বিয়ের কথা বলছে।”

“এটা তো খুব ভালো। সবাই বিয়ে করে ফেলছে। তুই আর কত বসে থাকবি?”

“বসে তো থাকতে চাই না। বিয়ে আমিও করতে চাই। কিন্তু যাকে তাকে কি বিয়ে করা যায়?”

“যাকে তাকে কেন বিয়ে করবি? তোর যাকে পছন্দ হবে তাকেই করবি। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর না হয় এক মাস সময় নিবি। ততদিনে দুজন দুজনকে চেনার সুযোগ হয়ে যাবে।”

“এটা অবশ্য ভালো আইডিয়া। তাহলে বাসায় কি ছেলে দেখতে হ্যাঁ বলে দেবো?”

“অবশ্যই।”

সম্পা হেসে বলল,

“তোর একটা দেবর থাকলে কত ভালো হতো তাই না? দুই বান্ধবী এক বাড়ির বউ হতাম।”

অর্ষাও তখন হেসে বলল,

“দারুণ হতো।”

শপিংমলের সামনে এসে রিকশা থেকে নামল দুজন। ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে গেল। প্রথমেই গেল ওরা শাড়ি কিনতে। অকেশনে সবাই শাড়িই পরবে। ভার্সিটি থেকে রঙ সিলেক্ট করে দিয়েছে। শুভ্র রঙের শাড়ি পরতে হবে। দুজনে ঘুরে ঘুরে অনেকগুলো শাড়ি দেখল। কোনো শাড়িই তাদের মনঃপুত হচ্ছে না। অনেকগুলো দোকান চক্কর দিয়ে নিজেরাই হাঁপিয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে বিরক্তও তারা নিজেদের ওপর। সম্পা বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলল,

“এরচেয়ে অনলাইনে অর্ডার করলেই বোধ হয় ভালো হতো। বাসার সামনে এসে দিয়ে যেত। আরামসে রিসিভ করতাম পার্সেল। এমন গাধার খাটুনি খাটতে হতো না।”

“এসেছি যখন শাড়ি কিনেই বাড়ি ফিরব। কিন্তু শেষে। এখন চল জুতা কিনব।”

সম্পা অবাক হয়ে বলল,

“আগেই জুতা?”

“হ্যাঁ, চল। তারপর অর্নামেন্টস। এবং শেষে শাড়ি।”

সম্পা রাজি হলো। দুজনে ঢুকল এপেক্সের শো-রুমে। ঘুরে ঘুরে জুতা দেখছিল ওরা। একটা জুতা অর্ষার বেশ ভালো লেগেছে। সে জুতাটা ট্রায়াল দেওয়ার জন্য সোফায় বসল। তখনই পাশ থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,

“অর্ষা! কেমন আছো?”

অর্ষা জুতা পরার জন্য ঝুঁকে ছিল। মাথা উঁচু করে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে গেল তার। সানগ্লাস ও মাস্ক পরা লোকটাকে চিনতে তার একটুও অসুবিধা হলো না। তবুও সে না চেনার ভান ধরেই বলল,

“কে আপনি?”

রিহান চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বলল,

“আমায় চিনতে পারছ না?”

অর্ষার সোজাসাপ্টা উত্তর,

“না।”

রিহান আশেপাশে তাকাল। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। কেউ এখন তাকে লক্ষ্য করবে বলে মনে হয় না। সে মাস্ক খুলে ফেলল। অর্ষা তাও তাকিয়ে রইল ফ্যালফ্যাল করে যেন শত চেষ্টা করেও সে এই মানুষটাকে চিনতে পারছে না। অর্ষাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিহান বলল,

“এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?”

“আপনাকে চেনার চেষ্টা করছি।”

“মজা করছ?”

“মজা করব কেন? আপনার সাথে কি আমার মজা করার কোনো সম্পর্ক আছে?”

সম্পা অন্য সাইডে জুতা দেখছিল। অর্ষা কোথায় আছে দেখার জন্য এপাশে তাকাতেই রিহানকে দেখে সে চমকে গেছে। তাই জুতা রেখেই এগিয়ে এলো। তার মেজাজ চটে আছে রিহানকে দেখে। অর্ষাকে জিজ্ঞেস করল,

“কী হয়েছে?”

অর্ষা বেশ স্বাভাবিক থেকেই বলল,

“সে আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আমি তাকে চিনি নাকি! কিন্তু আমি তাকে চিনতে পারছি না। তুই কি চিনতে পারছিস দোস্ত?”

সম্পা জবাব দিল না। রিহানের দিকে তাকাল। সে থমথমে মুখে অর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে, অর্ষার আচরণে সে বেশ অপমানবোধ করছে। অর্ষা বেশ কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলল,

“ওহ হ্যাঁ! মনে পড়েছে। চিনতে পেরেছি আমি আপনাকে। আপনি তো বেশ সুপরিচিত গায়ক ও সুরকার হিসেবে। পাবলিক ফিগার! কী একটা অবস্থা বলুন তো! আমি তো আপনাকে চিনতেই পারিনি। সরি, সরি ভুল হয়ে গেছে আমার। একটা অটোগ্রাফ দেবেন?”

“তুমি আমাকে অপমান করছ!”

অর্ষা বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। বিদ্রুপের সুরে বলল,

“তাই? অপমান? খুব লাগছে গায়ে? আমারও লেগেছিল সেদিন, যেদিন আপনি আমায় দেখেও উপেক্ষা করে গেছিলেন। এমন একটা ভান ধরেছিলেন যেন, আপনি না; আমি আপনাকে চিট করেছিলাম। আর এটা তো যেমন-তেমন বাদই দিলাম। সবচেয়ে বড়ো আঘাতটা আপনি আমায় দিয়ে গেছেন। প্রচন্ড বাজেভাবে ঠকিয়েছেন আমাকে। মাঝপথে ছেড়ে গেছেন। আপনি সুরকার ও গায়কের পাশাপাশি একজন ভালো অভিনেতাও হতে পারবেন। নেক্সট টাইম অবশ্যই ট্রাই করবেন প্লিজ। বেশ নাম কামাবেন ড্যাম শিওর। আর একজন প্রতারকের পিওর ফ্যান হিসেবে আপনার ফ্যান আমি। আফটারঅল আমিই আপনার প্রতারণার শিকার হয়েছি কিনা! অভিনেতা হিসেবে ফার্স্ট অটোগ্রাফ কিন্তু আমাকেই দেবেন।”

রিহান মাথা নত করে ফেলল। অর্ষা বলল,

“প্রতারকদের মাথা নত করা মানায় না তো!”

“অনেকদিন পর তোমায় দেখে কথা না বলে থাকতে পারছিলাম না। তাই যেচেই কথা বলতে এসেছিলাম। ভাবিনি, তোমার প্রতিক্রিয়া এমন হবে।”

অর্ষা নিজের মেজাজ ধরে রাখতে পারছিল না। সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“কেন তুমি কি ভেবেছিলে এতদিন পর কথা বলতে আসবে বলে তোমায় বরণডালা দিয়ে বরণ করে নিয়ে কথা বলব? শুনেছি, বিয়ে করেছ। বউ নিয়ে সুখে থাকো। অযথা আমার প্রতি আলগা দরদ দেখাতে এসো না।”

রিহান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। অর্ষা যে তার সাথে এভাবে কথা বলবে এটা সে কল্পনাও করেনি। করলে হয়তো কথা বলার সাহস করত না। মেয়েটি কতটা বদলে গেছে! এক সময় এই মেয়েই কিনা রিহান বলতে অজ্ঞান ছিল। আর এখন! রিহানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ষা বলল,

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? চিনতে কষ্ট হচ্ছে আমায়? তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসা আমিটা এখন তোমায় অসম্ভব ঘৃণা করি! বুঝতে পারছ আঘাত কতটা প্রবল ছিল?”

রিহানের কথা বলার মতো ভাষা নেই। সম্পা অর্ষার হাত ধরে বলল,

“চল এখান থেকে। এসব মানুষদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো।”

অর্ষাও আর দাঁড়াল না সেখানে। প্রতারকের মুখ দেখার আর ইচ্ছে নেই তার। সে সম্পার সাথে দোকান থেকে বেরিয়ে একটা কফিশপে বসল। মেজাজ ঠান্ডা করে এরপর আবার কেনাকাটা শুরু করল দুজনে। এরমাঝে রিহানকে নিয়ে তারা কোনো কথাই তুলল না। পিছুটান, মরিচিকাকে কথোপকথনেও গুরুত্ব দিতে নেই। অর্ষার ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছিল। গয়নার দোকানে ঢুকে লকেট দেখতে দেখতে সে আহনাফকে কল করল। আহনাফ কল কেটে কলব্যাক করল। অর্ষা বলল,

“ফ্রি তুমি?”

“তোমার জন্য আমি সবসময়ই ফ্রি। বলো কী বলবে? কেনাকাটা শেষ?”

“উঁহু! চলছে এখনো। একটা কথা বলতাম।”

“বলো না জান।”

অর্ষা এদিক-ওদিক তাকাল একবার। এরপর বেশ শান্তকণ্ঠে বলল,

“ভালোবাসি।”

ফোনের ওপাশে মুচকি হাসল আহনাফ। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলল,

“ভালোবাসি আমার পাগলি বউটা।”

চলবে…