আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-১৯

0
370

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১৯

রূপন্তী চলে যেতেই গেইটের উপর থেকে আবারো কাল নামক প্রহরীটা বল্লম হাতে নিয়ে নিচে নেমে আসে।নিচে নেমে এসে বল্লমটা সোজা তড়িৎগতিতে আকাশের শরীরে ফিক্কা মারে।যার ফলে বল্লমটা আকাশের শরীর ছেদ করে একপ্রান্ত দিয়ে ঢুকে অপরপ্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে যায়!সবাই হতবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে!কিন্তু আকাশের কোনো কিছুই হয় না!সবাই পাশ থেকে দেখেছে কালের প্রহার করা বল্লমটা আকাশের শরীর ভেদ করেছে।কিন্তু সবার অগোচরে তার শরীরের উপরে নির্গত হওয়া শিল্ড তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।আকাশ নিজেও ভেবেছে সে হয়তো শেষ।কিন্তু তার ভাবনাও ভুল প্রমাণ হয়।এর মধ্যেই রূপন্তী আবার প্রকট হয়ে আকাশের কাছে আসে।রূপন্তী প্রকট হয়েই আগের ন্যায় সেই শব্দটা জোরে জোরে বলতে আরম্ভ করে।যার ফলে কাল মাটি থেকে উড়াল দিয়ে গেইটের উপরে দাঁড়িয়ে মূর্তির রূপ ধারণ করে।তখনি রূপন্তী আকাশকে বলে…

–এই ঘাউড়া ছেলে,তোমায় এতোবার বোঝানোর পরেও তো দমাতে পারিনি।তাই বাধ্য হয়ে তোমায় সাহায্য করছি।এই যে নাও ধরো এই মাটি গুলো।আমি এই মাটি গুলো আনতেই আমাদের রাজ মহলে গিয়েছিলাম।তুমি এবং তোমার সাথের সবাই এই মাটি গুলা নিজের শরীরে মেখে গেইটের ভিতরে প্রবেশ করো।তাহলে গেইটের তিন প্রহরীর কারোর কাছেই তুমি ধরা খাবে না।তারপর আমি তোমাদেরকে হাম্বলে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিব।পরে তোমরা তোমাদের মতন সফর করো।এখন আমি চললাম।শহরে দেখা হচ্ছে তোমাদের সাথে আমার।

–ওকেহ..
রূপন্তী আবার উধাও হয়ে গেলো।আর আমি
রূপন্তীর দেওয়া মাটি গুলো শরীরে মেখে নিলাম।এবং সবাইকে বললাম মেখে নিতে।তারপর বুকে সাহস নিয়ে গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলাম।প্রথম গেইট পেরিয়ে দ্বিতীয় গেইটের সামনে চলে আসলাম।দ্বিতীয় গেইট টাও বিশাল বড়।যার উপরে প্রথম গেইটের ন্যায় একটা মূর্তি আছে।তবে সেটা মানুষের আকৃতির নয়।সেটা হচ্ছে একটা চিলের।যার আকৃতি মানুষের আকৃতির চাইতে অনেক কয়গুন বড়।বুকে সাহস নিয়ে দ্বিতীয় গেইট টাও অতিক্রম করলাম।তৃতীয় গেইট টাও সেম।
তবে তার উপরে কোনো ধরনের মূর্তি নেই।না হয়তো প্রহরী নেই।সো তাড়াতাড়ি তৃতীয় গেইট দিয়ে প্রবেশ করে শহরের ঢুকে পড়লাম।শহরে ঢুকতেই রূপন্তীর দেখা পেলাম।সে আগ থেকেই আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।সে আমাদেরকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো…

–কি কোনো সমস্যা হয়নি তো গেইট অতিক্রম করতে?

–নাহ তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।দুইটা গেইট কোনো মতে মনে সাহস নিয়ে পাড় করে এসেছি।তবে তৃতীয় গেইটে কোনো প্রহরী ছিলো না।তাই নার্ভাসনেস টাও কম ছিলো।যার ফলে চুপচাপ তৃতীয় গেইট টা ক্রস করে শহরে ঢুকে পড়েছি।

–আরে আকাশ তৃতীয় গেইটেও প্রহরী ছিলো।

–কিন্তু আমি যে দেখলাম না!

–কারন সেই গেইট টাই প্রহরী।সে কোনো কিছুর আভাস পেলে একটা হোল করে তাঁকে তার মধ্যে টেনে নিয়ে চলে যায়।

–বাপরেহ কি বলো…

–হুম সত্যিই…

–আচ্ছা যাক ভালোয় ভালোয় তো পেরিয়ে এসেছি।সো তুমি এবার আমাদেরকে হাম্বলের রাস্তা দেখিয়ে দাও।

–হুম আমাকে ফলো করো।
আমি তোমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি।

–আচ্ছা..
রূপন্তীকে ফলো করে করে একটা পাহাড়ের চূড়ায় এসে পৌঁছালাম।সে আমাদেরকে বিশাল বড় একটা উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে এসেছে।যার পর আর কোনো রাস্তা নাই।সামনে বিশাল বড় খাদ দেখা যাচ্ছে।যেটা দেখে রূপন্তীকে জিজ্ঞেস করলাম রূপন্তী সামনে তো খাদ।তুমি আমাদের কোথায় নিয়ে এসেছো?সামনে তো আর কোনে রাস্তাই দেখছি না।

–আকাশ এই পাহাড় থেকেই হাম্বলে যেতে হয় সেটা আমার জানা।এর বাহিরে আর কোনোকিছু আমার জানা নেই।তবে আমার মনে হয় এই পাহাড় থেকে নিচে নামলেই তোমরা হাম্বলের পথ দেখতে পাবে।

–আচ্ছা ঠিক আছে আমরা দেখছি কি করা যায়।তবে তুমি এখন চলে যাও।না হয়তো দেখা যাবে তুমি আমাদের জন্য সমস্যায় পড়েছো।

–হুম চলে যাচ্ছি।তবে সাবধানে করো সব কিছু।
কারন এই হাম্বলের জন্যই আমাদের শহর টাকে নরক নামে নামকরণ করা হয়েছে।

–ঠিক আছে সাবধানেই যাবো।তুমি চলে যাও এখন।

–আচ্ছা…

–রূপন্তী আমাদেরকে রেখে চলে গেলো।আর আমরা সবাই পাহাড়ের নিচে নামার সিদ্ধান্ত নিলাম।কিন্তু কি করে নামবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না!কারন পাহাড়ের নিচের জমিন দেখা যাচ্ছে না মেঘের জন্য।আমরা যেই পাহাড়ে বর্তমানে অবস্থা করছি,সেই পাহাড়ের মাঝামাঝি অবস্থায় মেঘ বিচরণ করছে।তার মানে কয়েক হাজার ফিট নিচে নামতে হবে আমাদের।কিন্তু কি করে নামবো সেটাই তো মাথায় ধরছে না!নিচে নামার রাস্তা খোঁজ করছি।তখনি আতাউর বলে উঠলো…

–আকাশ নিচে নামার রাস্তা হয়তো তুমি খুঁজে পাবে না।

–তো কি করে নামবো এখান থেকে?রূপন্তী তো বলে গেলো এই পাহাড়ের নিচেই হয়তো হাম্বলের রাস্তা।

–কি করে নামবো তা জানি না!তবে জাদুই প্রয়োগ করবো।তুমি এবং বাকি সবাই নিজেদের মধ্যে সংযোগ করে নাও।আমি শক্তির প্রয়োগ করে হাওয়ায় উড়ে নিচে নামার প্রয়াস করছি।

–ওকেহ…
তারপর সবার সাথে সংযোগ করে নিলাম।
দারোয়ান আতাউর আমাদের সবাইকে পাহাড়ের নিচে খাদের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে সে নিজেও আমাদের সাথে সংযোগ করে লাফ দিলো।অনেক কয় মিনিট পর পাহাড়ের নিচে মরুভূমির বালুর মধ্যে গিয়ে সবাই আছড়ে পড়লাম।মরুভূমিতে আছড়ে পড়তেই ভয়ংকর এক ঘূর্ণিঝড়ের উৎপাত হলো মরুভূমিতে।মরুভূমির সমস্ত বালুকণা হাওয়ার বেগের সাথে মিশে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়েছে।চোখ মেলে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।দীর্ঘ ছয় থেকে সাত মিনিট এভাবে অতিক্রম করার পর মরুভূমির পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।এতো সময় সবারি চোখ বন্ধ ছিলো।পরিবেশ ঠিক হওয়ার পর চোখ খুলতেই দেখি আমাদের দুজন সঙ্গী গায়েব।আমার সাথে খালি আতাউর এবং তার সঙ্গী একজন আছে।
বাকি দুজন সঙ্গী উধাও হয়ে গিয়েছে।তিনজন মিলে আশেপাশে খুঁজতে আরম্ভ করলাম।কিন্তু বাকি দু’জনের খোঁজ কোনো মতেই বের করতে পারলাম না।তাই তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম সামনে অগ্রসর হবো।
তাই সামনের দিকে অগ্রসর হলাম তিনজন মিলে।ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়টা মরুভূমির মাঝ বরাবর একটা রাস্তার নকশা তৈরী করে দিয়ে গেছে।যেই নকশা আগে আমরা দেখতে পাইনি।তিনজন মিলে কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়া রাস্তার নকশাটা অনুসরণ করে হাঁটতে আরম্ভ করলাম।এভাবে কিছুটা পথ হাঁটার পর সামনে হটাৎ একটা বয়স্ক লোককে লাঠি হাতে নিয়ে ধীরগতিতে পথযাত্রা করলে দেখলাম।যেটা দেখে বেশ অবাক লাগলো!কারন এই পথে তো কারোর থাকার কথা না!তাহলে এই বয়স্ক লোক এখানে কি করছে।দারোয়ান আতাউরকে নিয়ে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বয়স্ক লোকটার কাছে গেলাম।আমরা তার কাছে যেতেই সে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলো…

–এই তোমরা কোথায় যাচ্ছো?

–আমরা হাম্বলের পথযাত্রায় বের হয়েছি।
হাম্বলের শেষ প্রান্তে আমাদের একজন লোককে আটক করে রাখা হয়েছে।আমরা তাঁকে মুক্ত করে আনতে হাম্বলের রাস্তায় পথযাত্রা শুরু করেছি।সো আপনি কি জানেন কি ভাবে হাম্বলের শেষসীমা কোথায়?

–জানি তবে তোমরা সেখানে না গিয়ে ফিরে যাও।
না হয়তো সবাই মারা পড়বে।

–মুরুব্বি মরতে তো একদিন সবার হবে।সো মৃত্যুকে আমরা ভয় করি না।এই যাত্রা আমরা শেষ করবোই।
আপনি যদি পারেন আমাদের একটু সাহায্য করেন।
.
আকাশের কথা শুনে বয়স্ক লোকটা ঘাড় বেঁকিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।সে এতোটা সময় নজর এড়িয়ে কথা বলছিলো।লোকটা আকাশের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই আকাশ থতমত খেয়ে যায়!কারন লোকটার চোখের মধ্যে আগুন জ্বলছে!যেটা দেখে আকাশ থতমত খেয়ে যায়।আকাশ লোকটার থেকে নিজের নজর সরাবে,এমন সময় লোকটা তার হাতে থাকা লাঠিটা দিয়ে মরুভূমির বালুর মধ্যে আঘাত করে।আর সাথে সাথেই পুরো মরুভূমি নরকে পরিণত হয়ে যায়!আকাশ যেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে,সেই জায়গা বাদে সমস্ত মরুভূমিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করে।মরুভূমির সমস্ত বালুকণা অগ্নি কুন্ডলীতে পরিবর্তন হয়ে গেছে।তখনি সেই বয়স্ক লোক ভয়ানক কন্ঠে বলে…

–এখনো সময় আছে নিজের বাসস্থানে ফিরে যা।না হয়তো তোদের জীবন আমি কেঁড়ে নিব।আমি প্রথম হাম্বলের রক্ষিতা।আর তোরা কিনা আমার কাছে এসেই সাহায্য চাচ্ছিস হাম্বলে যাওয়ার জন্য।তোদের কলিজা তো অনেক বড়।

–মুরুব্বি কলিজার এখনো কিছুই দেখেন নি।আর আপনার এই অশুভ মায়া আমাদের উপরে মোটেও কাজে আসবে না।এমন অগ্নি কুন্ডলী অতিক্রম করার প্রতিভা আমাদের মধ্যে বরাবরই আছে।সো আমরা অগ্রসর হচ্ছি,আপনি পারলে আঁটকে দেখান।
দারোয়ান সাহেব আপনারা চোখ বন্ধ করেন।আমি আপনাদেরকে নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে হচ্ছি।

–ঠিক আছে।
.
আকাশের কথা অনুযায়ী আতাউর এবং তার সঙ্গী চোখ বন্ধ করে।আর আকাশ চোখ বন্ধ করে তাঁদের হাত চেপে ধরে সামনে অগ্রসর হতে আরম্ভ করে।এভাবেই কিছুটা সময় অগ্রসর হওয়ার পর আকাশ চোখ খুলে।সে চোখ খুলতেই দেখতে পায় সে এবং বাকি দুজন সেই অবস্থানেই আঁটকে আছে।যেখান থেকে তারা চোখ বন্ধ করে যাত্রা শুরু করেছিলো।আকাশ একই জায়গায় নিজেকে দেখতে পেয়ে চমকিত হয়ে যায়!এবং দারোয়ানের হাত ছেড়ে দেয়।দারোয়ান আতাউর ও বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে।তাই সেও চোখ খুলে।আতাউর চোখ খোলার পর একই দৃশ্য দেখে সেও আশ্চর্য হয়ে যায়!তবে সে তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে…

–আকাশ বয়স্ক শয়তানটা আমাদেরকে টাইম ওয়ারে আঁটকে দিয়ে এখান থেকে চলে গেছে।সো তুমি সেই বয়স্ক লোকটার মাইন্ড ম্যানুপুলেট করে সব কিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করো।আশা করি এতে আমরা টাইম ওয়ার থেকে মুক্তি পেয়ে যাবো।এবং সামনে অগ্রসর হতে পারবো।
.
আকাশ আতাউরের কথা মতন সেই বয়স্ক লোকটাকে ম্যানুপুলেট করার ট্রাই করে।কিন্তু সে কোনো মতেই পরিস্থিতি নিজের কবলে আনতে পারে না।সব কিছুই আগের মতন রয়ে গেছে।তারা একই জায়গায় আঁটকে আছে।এবং চারপাশ দাউদাউ করে আগু জ্বলছে।যেটা দেখে আকাশ আতাউরকে বলে….

–দারোয়ান সাহেব বয়স্ক লোকটাকে তো ম্যানুপুলেট করতে পারছি না।এখন কি করবো?

–কি করবা তা তো আমিও বুঝে উঠতে পারছি না!
কিন্তু তোমার মাঝে তো যে কাউকেই ম্যানুপুলেট করার ক্ষমতা আছে।তাহলে এই হাম্বলের রক্ষিতা বয়স্ক শয়তানটার উপরে কেন তোমার শক্তির প্রভাব পড়ছে না সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছি না!আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?

–কেমন কাজ?

–আমার মনে হচ্ছে তুমি তোমার থেকে অধিকতর শক্তিশালী কাউকে ম্যানুপুলেট করে বা তোমার থেকে অধিকতর শক্তিশালী কারোর মনমানসিকতাকে নিজের জিম্মায় করে নিজের ইচ্ছা মতন কাজ করাতে পারবে না।সো তোমার তার জন্য সামনের ব্যাক্তিটা থেকে দ্বিগুণ শক্তি বা তার সমতূল্য শক্তি থাকা প্রয়োজন।

–তো আমি এখন কি করবো?আমি তো আমার সাধ্য মতন করে চেষ্টা করেছি।

–তোমার এখন আর কিছুই করার নেই।যা করার আমিই করছি।আমি আমার সোল তোমার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছি।তুমি সামনে অগ্রসর হও বাকি একজনকে নিয়ে।

–এটা কি করে সম্ভব?আপনি না থাকলে আমি সামনে এগোবো কি করে?তার উপরে আপনাকেই বা পরবর্তীতে ঠিক করবো কি করে?

–আমার সোল এখানেই পড়ে থাকবে।তুমি ফিরে এসে আমার আঙ্গুল চেপে ধরে আমার সোল ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেই আমার সোল আমার শরীরে প্রবেশ করবে।আর আমার সোল যেহেতু তোমার শরীরে প্রবেশ করাচ্ছি,তাহলে দেখবে তোমার ভাবনা-চিন্তা গুলোও আমার মতন কাজ করবে।

–আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।
.
তারপর দারোয়ান আতাউর তার সোল আকাশের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়।আকাশ তারপর চোখ বন্ধ করে সেই বয়স্ক লোকটাকে ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করলেই সে ম্যানুপুলেট হয়ে যায়।আকাশ সেই বয়স্ক লোকটাকে ম্যানুপুলেট করে মরুভূমিকে শান্ত করে।এবং সাথে টাইম ওয়ার থেকেও নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে সমানে এগিয়ে যায়।আকাশ সফর করতে করতে একটা চিনামাটির দ্বীপের মাঝে এসে পৌঁছে।আকাশ সেখানে এসেই দেখতে পায় সেই বয়স্ক লোকটা বিশাল একটা পাথরের উপরে বসে আছে।কিন্তু সে আকাশকে দেখে কিছুই বলে না।আকাশ ও তাঁকে কিছু না বলে সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্য পা বাড়ায়।তখনি সেই লোকটা আকাশকে বলে…

–আমাকে তুই যতোই ম্যানুপুলেট করিস না কেন,তোর জন্য সামনে অনেক ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে।মনে রাখিস আমার থেকে বেঁচে গেলেও তার থেকে তুই বাঁচবি না।

–আরেহ দেখা যাবে।
এটা বলে সামনে অগ্রসর হতে শুরু করলাম।
সমানের আরো অনেকটা পথ সফর করে বিশাল একটা জঙ্গলের মাঝে এসে পৌঁছেছি।জঙ্গলের মাঝে প্রবেশ করতেই অনেক বড় একটা রক্ত জবা ফুল আমাদের পথ আটকালো।সে আমাদের পথ আঁটকে বলতে লাগলো..

–আমি দ্বিতীয় হাম্বলের রক্ষিতা।কিন্তু তোর মাঝে অনেক শক্তিশালী একটা শিল্ড দেখতে পাচ্ছি।যার জন্য তোর কোনো ক্ষতি করতে পারছি না আমি।কিন্তু সামনে তোর জন্য অনেক ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে।

–ফুলের মুখে বুলি শুনে পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে।কিন্তু সেই হাসিটাকে চেপে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হলাম।এভাবেই সব কয়টা হাম্বল অতিক্রম করেছি।একেক হাম্বলে একেক রকমের দানবের সাথে সাথে দেখা হয়েছে আমার।কিন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে কেউ আমার কোনে ক্ষতি না করে একটাই কথা বলেছে,যে সামনে আমার জন্য অনেক ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে।কিন্তু সেই ভয়ংকর জিনিসটা কি সেটাই এখনো দেখতে পেলাম না।সব কয়টা হাম্বল শেষ করে গির্জার মতন অনেক বড় একটা ঘরের সামনে এসে পৌঁছালাম।যেই ঘরটা পুরোপুরি স্বর্ণ দিয়ে নির্মান করা।আমি কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়া আমার সাথের দারোয়ানকে নিয়ে ঘরটার মধ্যে প্রবেশ করলাম।ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে দেখি ঘরটার উচ্চতা আট- দশতলা বাড়ির সমান।তবে জিনিসটা বাহির থেকে বোঝা যায় না।ধুর আমার এতোসব দিয়ে কাজ নেই।আমার কাজ হচ্ছে আনহাকে খুঁজে বের করা।তাই আনহাকে খুঁজতে আরম্ভ করলাম।ঘরের চারপাশে নজর ঘুরিয়ে আনহাকে তালাশ করতে লাগতাম।তখনি দেখি ঘরের চারপাশে শয়তানের নকশা অঙ্কন করা।এবং ঘরের মাঝ বরাবর বিশাল একটা চেয়ার রাখা।যেটা কিনা বাড়িটার মতন স্বর্ণ দিয়ে নির্মান করা।যা দেখে আমার বুঝতে বাকি না,যে এই ঘরের যে কোনো একটা স্থানে আনহাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে।কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না!এটা যদি সত্যিই শয়তানের বাসস্থান হয়,তাহলে আশেপাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না কেন!আমি এতো লম্বা সফর করে আসলাম,আর সেই লম্বা সফরে এতো এতো দানবের সাথে দেখা হয়েছে,যারা কিনা এই হাম্বলের রক্ষা করছে।তাহলে এই হাম্বলটা এতো নির্জন কেন!এসব নিয়ে ভাবছিলাম,এরই মধ্যে ভার্সমান কিছু একটা দিয়ে উড়ে কয়েকজন ঘরের মধ্যে এসে নামলো।যাদের একজনের মাথায় স্বর্ণের মুকুট পড়া।ব্যাক্তিটাকে দেখে আমার চিনতে বাকি নাই,যে এটাই কাকাতুয়ার রাজা।তারা ঘরে প্রবেশ করে বলাবলি করতে লাগলো…

–আজ আমাদের প্রভু পরী-পালকের রাজার মেয়ে আনহার মস্তক আলাদা করে যৌগ্য করবে।তারপর পরী-পালককে আমরা দখল করে নিব সেই রাজার মেয়ের রক্তের মাধ্যমে।

–কাকাতুয়ার রাজার মুখে এমন কথা শুনে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো!দৌড়ে গিয়ে কাকাতুয়ার রাজার গলা চিপে ধরে বলতে লাগলাম,আমার আনহা কোথায়?আর তোদের শয়তান গডফাদার কোথায়?

–ওহ তুই তাহলে সেই মেয়ের পাগল প্রেমিক?

–হুম..
সো বল আনহা কোথায়।এবং তোদের শয়তান গডফাদার কোথায়।নাহলে কিন্তু তোর অবস্থা খারাপ করে ছেড়ে দিব।

–আরেহ পাগল ছেলে এতো উত্তেজিত হস না।কিছুক্ষণ ওয়েট কর।তাহলে দুজনকেই দেখতে পাবি।আমাদের প্রভু কিছু সময়ের মধ্যে এখানে প্রকট হবে।তারপর আমরা তার পুজায় বসবো।

–রাজার গলা ছেড়ে দিয়ে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ এঁদের হালত আমি খারাপ করে ছেড়ে দিব।খালি ওদের গডফাদার আসুক একবার।তারপর রাগ চেপে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।কিছুক্ষণ পাড় হতেই রাজা আমায় বললো…

–আমাদের প্রভু প্রকট হওয়ার আভাস পেয়ে গেছি আমরা।সো আমাদের সাথে মাথা নুইয়ে তিনাকে আপ্যায়ন করবি।

–তোরা কর তোদের আপ্যায়ন।আমি উপর ওয়ালা ছাড়া কারোর সামনেই মাথা নত করবো না।এটা বলতে না বলতেই অনেক দ্রুত গতিতে কিছু একটা প্রবেশ করলো ঘরের মধ্যে।যার পর রাজা সহ তার সাথের সবাই প্রভু বলে ঝুঁকে পড়লো।এবং আমার সাথে সফর করা দারোয়ানটাও তাঁদের মতন করে ঝুঁকে তাল মিলাতে আরম্ভ করলো।কিন্তু আমি মানুষটা ঘাউড়ার মতন দাঁড়িয়ে আছি।তখনি দেখি দ্রুত গতির সেই জিনিসটা স্বর্ণের চেয়ারে বসে একটা আকৃতি ধারণ করে সবাইকে হাতের ইশারায় ঠিক হতে বললো।এবং আমার দিকে তাকিয়ে আমার নাম বলে সজোড়ে হাসতে আরম্ভ করলো।যাকে দেখে কিনা আমার চোখ কপালে উঠে গিয়েছে!কারনটা হলো সেই চেয়ারে যে বসে আছে,সে আর অন্য কেউ না,সে হলো আমার যাত্রা পথের সঙ্গী এবং পরী-পালকের প্রধান দারোয়ান আতাউর….

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।