আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব

0
1009

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#অন্তিম_পর্ব

“বীজ গুলা গাছে রুপান্তরিত হয়ে সেই লোকটাকে গাছের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলে।যেটা দেখে সবাই হতবাক হয়ে যায়!কিন্তু আনহা হতবাক না হয়ে সজোড়ে হাসতে আরম্ভ করে।আনহার হাসি দেখে তার বাবা তাকে জিজ্ঞাস করে,

–মাসুদা তুই এভাবে হাসছিস কেন?
আর কি ধরনের সিনক্রিয়েট করতে শুরু করেছিস তুই?

–বাবা আমার হাসার কারন তুমি মিনিট কয়েকের মধ্যে জেনে যাবে।আর আমি কোনো ধরনের সিনক্রিয়েট করছি না।সে নিজেই সিনক্রিয়েট করতে এসে ফেঁসে গেছে।

–মানে কি মাসুদা?

–বাবা তুমি গাছের বীজ সম্পর্কে কি জানো না?

–হুম জানি।এটা আমাদের রাজ দরবারের জাদুই ক্যাকটাস বীজ।যেটা অসাধু মতলবিকে ট্রাপে ফাঁসিয়ে দেয়।আর এই বীজ শুধু আমাদের রাজ দরবারেরর মানুষরা’ই ব্যবহার করে।

–এই তো বুঝতে পেরেছো।
আমি আমাদের রাজ দরবারেরর জাদুই বীজ টাকে ব্যবহার করেছি আসল শয়তান কে খুঁজে বের করার জন্য।কিন্তু এখানে তো আমাদের পরী-পালকের সব চাইতে বড় পন্ডিত এই ফেঁসে গেছে।যে কিনা বহু বছর আগ থেকে আমাদের সমাজে বসবাস করে আমাদের সমাজ টাকে ধ্বংস করতে চাইছে।

–কিহহহ তার মানে পন্ডিত এই শয়তান?

–হুম বাবা।পন্ডিত এই শয়তান।কারন আকাশ যখন আতাউরকে মারে,তখন সে নিজের মুখে বলেছে আমাদের পরী-পালকে তার থেকেও বড় শয়তান ছদ্মবেশে লুকিয়ে আছে।শুরুতে আমার পন্ডিতের উপরে সন্দেহ হয়নি।কিন্তু গতকাল যখন আমার আকাশকে নিয়ে সে এটা সেটা বলে,তখনি আমার মাথার টনক নড়ে উঠে।তারপর আমি গিয়ে আকাশের সাথে কথা বলি।তখন আকাশ আমায় আসল শয়তানকে ধরতে হবে কি করে সেই পদ্ধতি বলে দেই।কিন্তু আমার পুরোপুরি সন্দেহ ছিলো না পন্ডিতের উপরে।আমি এসেছি আসল শয়তানকে ধরার জন্য।কিন্তু এখন দেখি সেই আসল শতয়ান টাই হলো পন্ডিত।সো এবার তুমি যা করার করো।আমি তাকে ক্যাকটাসের জাদুই বীজ দাড়া গাছের ভিতরে বন্দী করে ফেলেছি।তবে তার শরীর কিন্তু এখন একটা কালো ছায়া।যেই ছায়াটা আগেও আমাদের দু’জনের সামনে এসেছে।এবং আমাদের জাদুই নহরের পানির কারনে তার শরীরের আকৃতি বদলে গিয়ে তার আসল রূপ ধারণ করেছে।সো তুমি তাকে বন্দী করো।না হয় তো সে যে কোনো সময় বেরিয়ে যাবে।কারন তার মধ্যে শয়তানি অনেক শক্তি আছে।

–তাই তো বলি এই পন্ডিত কেন এমন নিরীহ একটা ছেলেকে ফাঁসাচ্ছে।যেই ছেলে কিনা আমাদেরকে বাঁচিয়েছে।তার কিছু করার হলে তো সে বহু আগেই করতো।তার আমাদেরকে বাঁচানোর কোনো প্রয়োজন ছিলো না।আর তাছাড়া আমি ছোট কালে আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে দেখেছি মানুষের সাথে পরীর মিলন করিয়ে দিতে।তখন তো কোনো সমস্যা হয়নি।কিন্তু এখন এসে কিনা এই পন্ডিত নতুন করে ফতুয়া দিচ্ছে।

–বাবা এখন এতো সময় নেই।তুমি তাকে বন্দী করো।

–হুম করছি।তবে তার আগে আরেকটা বিষয় ক্লিয়ার করে নেই।এই মজমায় যতো কয়জন পন্ডিত আছেন,সবাই কিতাব দেখে একটু বের করেন তো মানব-পরীর মিলনে এমন কোনো সংকেত আছে কিনা।এবং পন্ডিত যেই ভবিষ্যৎ বানী করেছে,সেই বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত আছে কিনা।
.
আনহার বাবার কথায় সবাই নিজেদের কিতাবাদী খুলে দেখতে আরম্ভ করে।কিছুক্ষণ পর সবাই একত্রে হয়ে জানায়,কিতাবে এমন কিছুই লিখা নেই,যেখানে একজন ব্যাক্তি আমাদের সমাজে বিচরণ করবে,এবং আমরা তাকে ভালো ভাবে গ্রহণ করবো।কিন্তু পরিশেষে সেই আমাদের ক্ষতি করে বসবে।আর তাছাড়া মানব আর পরীর মিলনে কোনো সমস্যা নেই।তবে মানবকে আমাদের পরী-পালকে থাকায় অভ্যস্ত হতে হবে।তাহলে আর কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
.
বাকি পন্ডিতদের কথা শুনে আনহার বাবার মাথা পুরোপুরি চোটে যায়।তাই সে নিজের জাদুই লাঠিটা বের করে গাছের দিকে ইশারা করে।যেটার ভিতরে পন্ডিত নিজের শয়তানি রূপ নিয়ে বন্দী হয়ে আছে।আনহার বাবা গাছের দিকে তার জাদুই লাঠিটা ইশারা করতেই লেজার লাইটের মতন সরল একটা আলোকরশ্মি গিয়ে গাছটার উপরে পরে।যার ফলে গাছটা ছোট হয়ে একদম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের কড় বরাবর হয়ে যায়।তারপর আনহার বাবা একজন সিপাহীকে দিয়ে একটা বোতল আনিয়ে তার মধ্যে সেই গাছটাকে ঢুকিয়ে ভালো করে বোতলের ঢাকনা আঁটকে দেয়।এবং পরবর্তীতে সেই বোতল টাকে সে নিজের কাছে রেখে দেয়।কারন সেটাকে সে নিজের মতন করে সুরক্ষিত জায়গায় দাফন করে দিবে।যাতে করে এই শয়তান পন্ডিত আজীবন বন্দী অবস্থায় আঁটকে থাকে বোতলের মধ্যে।”অপরদিকে আনহা তো বেশ খুশি।কারন তার আর আকাশের মিলনে এবার আর কেউ বাঁধা দিতে পারবে না।তাই আনহা তার বাবাকে বলে,

–বাবা আমি এই মজমার মধ্যেই আকাশকে বিয়ে করতে চাই।

–ঠিক আছে এই মজমায় তোদের বিয়ে হবে।কিন্তু তোর আকাশ কি এই পরী-পালকে থাকতে অভ্যস্ত কিনা সেটা একটু যাচাই করা উচিৎ।কারন না হয়তো তোর আকাশের ক্ষতি হবে।

–বাবা তুমি তার এসব নিয়ে চিন্তা করো না।কারন সে এই পরী-পালকে বহু কয়বায় এসেছে।এবং সে পুরোপুরি ভাবেই অভ্যস্ত পরী-পালকে থাকার জন্য।তাকে আমি শিখিয়ে দিয়েছি কি করে এই পরী-পালকে টিকে থাকতে হবে।

–বাহ তাহলে তো আর কোনো সমস্যাই নেই।
এই পন্ডিত মশাই,আপনারা সবাই আমার মেয়ের বিয়ের কাজ এই মজমায় সম্পূর্ণ করেন।আমি সিপাহিদেরকে দিয়ে সবাইকে মিষ্টি মুখ করার ব্যবস্থা করছি।

–জ্বি মহারাজ।
.
আনহার বাবার কথা মতন তৎক্ষনাৎ সেখানে আকাশ আর আনহার বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়।আনহা তো বেশ খুশি।কিন্তু কেন জানি আকাশ মন মরা হয়ে আছে।
আকাশের মন মরা হয়ে থাকার বিষয়টা আনহার চোখ এড়ায় না।তাই সে আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–আকাশ কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেন?
তোমার তো খুশি থাকার কথা।

–কারন আমি আমার মা’কে না জানিয়ে তোমায় বিয়ে করেছি।তার উপরে তোমার শহরের লোকরা এখন আমায় জমিনে যেতে দিবে কিনা সেটা নিয়ে ভয় হচ্ছে।কারন আমি বইপুস্তকে পড়েছি পরীরা নাকি কাউকে নিয়ে গেলে বা বিয়ে করলে তাকে নাকি আর জমিনে ফিরে আসতে দেয় না।তোমার শহরের লোক এবং তোমার বাবার লোকেরা হয়তো আমাকে আর জমিনে যেতে দিবে না।

–এই পাগল ছেলে একটা উল্টাপাল্টা চিন্তা আনবে না মাথায়।আমি থাকতে তোমায় জমিনে যেতে কে আটকাবে হুম?মনে রেখো তোমার বউ এই পরী-পালকের ভবিষ্যৎ রানী।আর তুমি হলে রাজা।তোমায় জমিনে যেতে বাঁধা দিবে এমন বুকেরপাঠা এখনো কারোর হয়নি।আমার জামাইয়ের যা খুশি সে করবে।আমি থাকতে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ মতবিরোধ করবে,এটা কোনোদিন এই হবে না।পুরো পরী-পালকের লোকদের জন্য নিয়ম হবে এক রকম।আর আমার বরের জন্য নিয়ম হবে আরেক রকম।
আমার বর টা যেমন খুশি তেমনটাই করতে পারবে।
সো তুমি একদম চিন্তা করবে না।

–আনহার কথা শুনে খুশিতে নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে।তবে ইচ্ছে করলেও বর্তমানে সেটা দেওয়া সম্ভব নয়।কারন প্রথমত অনেক ময়মুরুব্বি রয়েছে এখানে।দ্বিতীয়ত দুই দিন আগে লিটন দাসের খেলা দেখে বাংলার মানুষ পুরো শোকাহত।এখন আমি নাগিন ডান্স দিলে আমার পাঠক-পাঠিকারা ক্ষিপ্ত হয়ে যাবে আমার উপরে।কারন সবাই বলবে লিটন দাসের খেলা দেখে সবার মাথা বিগড়ে আছে।আর এই হারামজাদা আকাশ কিনা পরী-পালকে গিয়ে পরীকে বিরে করে নাগিন ডান্স দিতে ব্যস্ত।তাই আর নাগিন ডান্স করা হলো না।(উপরের প্রথম কথাটা গল্পের সাথে রিলেটেড।তবে দ্বিতীয় কথাটার সাথে গল্পের কোনো সাঁমজস্য নেই।দুই দিন আগের খেলা দেখে লিটন স্যারকে বাঁশ দিতে ইচ্ছে করলো,তাই গল্পের মাধ্যমে বাঁশটা দিয়ে দিলাম)চুপচাপ বসে আছি।আমার আর আনহার বিয়েটা হয়ে গেছে।সবাই আনন্দ-উল্লাস করছে।বিয়ের মজমা শেষ করে আনহাকে বললাম জমিনে যাবো।সে আমায় কথার
প্রতিত্তোরে বললো…

–আকাশ দুটো দিন এখানে কাটিয়ে জমিনে যেও।কারন সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে।আর তাছাড়া তোমার জমিনে এখনো সেই টাইম চলছে,তুমি যেই টাইমে এখানে এসেছো।আর হলে হয়তোবা দুই এক মিনিট এদিক সেদিক হবে।

–ঠিক আছে দুনিন পরেই যাবো।তবে তখন কিন্তু তোমারো আমার সাথে নিচে যেতে হবে।

–আচ্ছা যাবো.
.
তারপর আনহা আর আকাশ রাতটা একসাথে অতিবাহিত করে।সকাল হতেই আনহার বাবা আনহাকে তার সাথে দেখা করার জন্য খবর পাঠায়।আনহা আকাশকে ঘুমে রেখেই তার বাবার কাছে যায়।

–মা এসেছিস।

–হুম।

–আচ্ছা তোর সাথে অনেক জরুরী একটা কথা ছিলো।

–কি কথা?

–দেখ অনেক তো হলো।এবার আমি চাই আমার বদলে তুই সিংহাসনের দায়িত্ব নিয়ে পুরো পরী-পালক শাসন কর।আর আমি রিটায়ার্ড করে নেই।তার উপরে তোর বিয়েও হয়ে গেছে।তুই এখন পরী-পালককে শাসন করার যোগ্যতা রাখিস।

–বাবা ঠিক আছে দায়িত্বটা আমি নিব।কারন তোমার বয়স হয়েছে।তবে একটা জিনিস,তোমার মাথার মুকুট টা তুমি আমায় না পড়িয়ে আমি চাই তুমি সেটা তোমার মেয়ের জামাইয়ের মাথায় পড়িয়ে দাও।কারন সে মানব,তার উপরে সে আমার জামাই।আমি চাইনা কোনো অবস্থানে তার উপরে যেতে।আমি চাই সব সময় সে আমার উপরে থাকুক।এবং তাকে সবাই সম্মান দিক।

–মাসুদা তুই অনেক বেশি ভালোবাসিস তাই না ছেলেটাকে?

–হুম বাবা।আমি ওকে অনেক বেশি ভালোবাসি।তার সম্মান এই আমার সম্মান।

–ঠিক আছে আমি আমার মাথার মুকুটটা তাকেই পড়িয়ে দিব।তোরা আজ বিকালে রেডি থাকিস।আবারো একটা জনসভা করে সবার সামনেই আমার সিংহাসন আমি তোদের দু’জনের কাছে শপে দিব।

–আচ্ছা বাবা।
.
তারপর আনহা আকাশের কাছে চলে যায়।বিকাল হতেই বিশাল বড় একটা জনসভা করে আনহার বাবা দু’জনের কাছে সিংহাসন বুঝিয়ে দেয়।তবে তার মাথার মুকুটটা সে আনহার কথা মতন আকাশের মাথায় পড়িয়ে দেয়।যেটা দেখে আকাশ খুশিতে কান্না করে দেয়।কারন সে বুঝে গেছে আনহাই তাকে সবার উপরে দেখতে চায়।তাই সে সকলের সামনেই আনহাকে জড়িয়ে ধরে নিজের বাহুডোরে আগলে নেয়।পাশ থেকে আনহার বাবা এসব দেখে সেও খুশিতে চোখের জ্বল ছেড়ে দেয়।কারন সে একটা মনের মতন জামাই পেয়েছে।এভাবেই জনসভা শেষ হয়।”পরের দিন আকাশ আনহাকে নিয়ে জমিনে নামে।সে জমিনে নেমে দেখে তিন মিনিট অতিবাহিত হয়েছে।তারপর আনহাকে তার নিজের রূপ ধারণ করিয়ে মায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে সব কথা খুলে বলে।তার পরী-পালকের যাত্রার প্রথম দিন থেকে নিয়ে শুরু করে আনহাকে বিয়ে করা পর্যন্ত।আকাশের মা প্রথমে অনেকটা শকট হয়!তবে পরে তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে দু’জনকেই আপন করে নেয়।কারন এতোদিন তিনি একা ছিলো।কিন্তু বর্তমানে তিনার হারানো ছেলেরর পাশাপাশি ছেলের বউকেও পেয়েছে।যার কারনে এখন আর এক্সট্রা করে আকাশকে বিয়ে দিতে হবে না।মা,ছেলে এবং ছেলের বউ।সবাই খুশিতে আত্মহারা।এই খুশির মধ্যে দিয়েই রাতটা কেটে যায়।পরেরদিন আকাশের আসল মা তার পালিত মা-বাবাকে খবর দিয়ে বাসায় আসতে বলে।বাসায় আসার পর আকাশের বিয়ের কথা তিনি আকাশের পালিত মা-বাবাকে বলে।তবে আনহার বিষয় খোলাসা করে না।আনহাকে দেখেশুনে বিয়ে করিয়েছে এমনটাই বলে।আকাশের পালিত বাবা আকাশের বর্তমান অবস্থা দেখে খুবই আফসোস করে।তবে এখন আর আফসোস করলে লাভ কোথায়।সন্তানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে তো আফসোস এই হবে।তিনি শরমে আকাশের সামনে যায় না।তবে আকাশ তার পালিত বাবার কাছে গিয়ে পায়ে ধরে সালাম করে দোয়া চায়।এবং নিজের মন থেকে সমস্ত সংশয় দূর করে ফেলে।আকাশের পালিত বাবা নিজের কর্মের জন্য মুখে কিছুই বলতে পারে না।তাই তিনি আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একাই সেখান থেকে নিজের বাসায় চলে যায়।আকাশ ও বুঝতে পারে যে তার বাবা হয়তো তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত।তাই সেও আর বিষয়টা নিয়ে বেশি একটা মাখামাখি করে না।এভাবেই দিন কাটতে থাকে।আকাশ আর আনহা এখন জমিনেই থাকে।তারা দিনের একটা টাইম করে শুধু পরী-পালকে যায়।তবে জমিনের সেই টাইমটা পরী-পালকের অনেক দিনের সমান।দেখতে দেখতে এক বছর কেটে যায়।আনহা মা হতে চলেছে।আকাশের অনাগত সন্তান আনহার গর্ভে বড় হচ্ছে।এভাবেই আরো কয়েকটা দিন কাটে।আকাশের অনাগত সন্তান দুনিয়ায় আসার সময় হয়ে গিয়েছে।তাই আকাশ আনহাকে নিয়ে পরী-পালকে চলে যায়।দু’জনেই বেশ খুশি যে তাদের সন্তান দুনিয়ায় আসবে।পরী-পালকে আসার একদিন পরেই আনহার পেইন শুরু হয়ে দায়।তাই চটজলদি পরী-পালকের ধাত্রীকে ডাকা হয়।তিনি এসে আনহার বাচ্চা দুনিয়ায় আসার কার্যক্রম সম্পন্ন করে।আকাশের ফুটফুটে একটা ছেলে হয়েছে।ধাত্রী রুম থেকে বেরিয়ে এসে আকাশেস হাতে তার বাচ্চাকে তুলে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।যেটা দেখে আকাশের মনে খটকা লাগে।তাই সে ধাত্রীকে কে জিজ্ঞেস করে,

–মাসুদা কেমন আছে?

–মহারাজ মাসুদা রানী আর বেঁচে নেই।কারন আমি বাচ্চাকে দুনিয়ায় আনার সময় উনার কন্ডিশন অনেক খারাপ ছিলো।দু’জনের যে কোনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব ছিলো।আমি মাসুদা রানীকে বাঁচাতে চেয়েছি।কিন্তু তিনি আমায় আদেশ করেছে তিনার বাচ্চাকে যেনো দুনিয়ার মুখ দেখাই।তাই বাধ্য হয়ে তিনার কথা শুনতে হয়েছে আমার।আমায় ক্ষমা করবেন মহারাজ…

–ধাত্রীর মুখে এমন কথা শুনে আমার দুনিয়াদারী যেনো ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে!তাই তাড়াতাড়ি বাচ্চাটাকে ধাত্রীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আনহার কক্ষে চলে গেলাম।সেখানে গিয়ে দেখি আনহা সত্যিই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে দিয়ে পরপারে চলে গেছে।আনহার নিথর দেহটাকে দেখে নিজেকে আর সামনে রাখা পসিবল ছিলো না।তাই তৎক্ষনাৎ আনহার কক্ষ ছেড়ে এবং পুরো পরী-পালক ত্যাগ করে জমিনে চলে আসলাম।জমিনে এসে মা’কে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতন কান্না করতে আরম্ভ করলাম।এরমধ্যেই পরী-পালক থেকে আনহার বাবা-মা আমার কাছে ছুটে এসেছে।তারা আমার কাছে বললো…

–বাবা তুমি হটাৎ করে জমিনে চলে আসলে কেন?

–কারন আনহার নিথর শরীরটা আমার পক্ষে দেখা সম্ভব হচ্ছিলো না আর।

–এই পাগল ছেলে শান্ত হও তুমি।তোমার বউয়ের কিছুই হয়নি।সে তোমাকে যাস্ট পরিক্ষা করেছে,যে তার কিছু হলে তুমি কেমন রিয়েক্ট করো।এই আনহা সবার সামনে প্রকট হ।
.
আকাশের বাবার কথায় আনহা তার বাচ্চাকে কোলে করে নিয়ে জমিনে প্রকট হয়।আকাশ আনহাকে ঠিকঠাক অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার মা’কে ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে আনহাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতন চুমু খেতে আরম্ভ করে।আকাশের এমন আচরণে আনহা বলে,

–এই আমার পাগল জামাই,একদম কান্না করে না।এই যে দেখো আমি ঠিক আছি।আমার কিচ্ছু হয়নি।আমি ধাত্রীকে শিখিয়ে দিয়েছিলাম এমনটা বলতে।কারন আমি দেখতে চেয়েছিলাম আমার কিছু হলে তুমি কেমন রিয়েক্ট করো।কিন্তু তুমি তো দেখি নাকির পানি চোখের পানি একত্রে করে ফেলেছো।

–আনহার কথা শুনে সমস্ত কষ্ট রাগে পরিণত হয়ে গেলো।তাই চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,শ্বশুর মশাই,আপনার মেয়েকে কি কোষে একটা থাপ্পড় মারতে পারি?
আপনার বদ মেয়ে আমার শরীরের কম্পন ছুটিয়ে দিয়েছে।

–না,না,বাবা মেরো না।কারন মেয়েটা তোমার অনাগত সন্তানকে জন্ম দিয়ে দূর্বলতায় ভুগছে।না হয় আমিই তাকে মেরে তার গালের চামড়া লাল করে দিতাম।

–আনহার বাবার কথায় তাকে আর মারলাম না।তবে তার কোল থেকে বাচ্চা টাকে কেড়ে নিয়ে আমার মায়ের হাতে ধরিয়ে দিলাম।তারপর আনহার কাছে গিয়ে তাকে সজোড়ে এক টান দিয়ে নিজের শরীরে সাথে লেপ্টে ফেললাম।পরে তাকে হুংকার দিয়ে বললাম,আগামীতে এমন মজা করলে তোর গালের চামড়া আমি লাল করে ফেলবো বেয়াদব কোথাকার।

–না,না,আর করবো না।আমার পরিক্ষা করা হয়ে গেছে।

–আর কোনো সময় এমন করবি না।তুই জানিস আমি পুরো আধমরা হয়ে গিয়েছিলাম।

–সরি সোয়ামি,আর কখনো এমন করবো না।

–মনে থাকে যেনো।

–হুম থাকবে।

–এতোক্ষণে গিয়ে প্রাণ ফিরে এসেছে আমার মধ্যে।আমি এখনো আনহাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি।
তখনি মা পাশ থেকে বলে উঠলো…

–তোরা দুজনই বউ জামাই পরে রোমান্স করিস।কিন্তু আগে এখন ছেলেকে সামলা।আর বেয়াইন সাহেব- সাহেবা আপনারা দু’জন বসুন।আমি আপনাদের জন্য নাস্তা পানির ব্যবস্থা করছি।

–আম্মুর কথায় আনহাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের ছেলেকে গিয়ে কোলে তুলে নিলাম।আর আম্মু নাস্তা আনতে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর তিনি নাস্তার ট্রে হাতে করে নিয়ে এসে বেয়াইন-বেয়ারের সাথে আড্ডা দেওয়ার মশগুল হয়ে গেছে।আর আমি আর আনহা নিজেদের বাচ্চাকে নিয়ে খুনসুটি করার ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।আর মনে মনে খোদার কাছে আরজি করলাম,আমাদের এই হাসিখুশি সংসার টা যেনো দীর্ঘস্থায়ী হয়।তখনি আনহা সবার আড়ালে আমার কপালে চুমু একে বললো..

–ও মোর পাগল জামাই।
তোমার দোয়া অবশ্যই খোদা কবুল করবে।

–আমি আনহার আচরণে থ হয়ে তাকিয়ে আছি!কারন সে এবারো আমার মনের কথা জেনে গিয়েছে!এর মধ্যে আবার পাশ থেকে আমার মা বলে উঠলো…

–আমি কিন্তু দেখে নিয়েছি বউ মা…..

–আম্মুর কথায় আনহা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।আর আমি আনহার লজ্জায় লজ্জিত চেহারাটা দেখে শব্দ করে হাসতে আরম্ভ করলাম।এই হাসির মধ্যেই গল্পের ইতি ঘটলো…

সমাপ্তি।

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।