আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-২২

0
326

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_২২

মায়াকাল আয়না থেকে শুধু মহারাজ আর মহারানীই বেরিয়ে আসেনি।তাঁদের সাথে সাথে আরো দু’জন ব্যাক্তিও বেরিয়ে এসেছে মায়াকাল আয়নার ভিতর থেকে।একজন হলো পরী-পালকের প্রহরী আতাউর।এবং দ্বিতীয় জন হলো আতাউরের সামনে ঝুঁকে যাওয়া সেই প্রহরীটা।যেটা দেখে আকাশ,আনহা,রূপন্তী তিনজনেরই মাথা খারাপ হয়ে যায়!তবে সবার থেকে বেশি মাথা খারাপ হয় আকাশের।তাই আকাশ কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আতাউরের কাছে গিয়ে তার কলার চেপে ধরে।তারপর তাকে বলে,

–কিরে শয়তানের বাচ্চা তুই এখানে কি করছিস?তোকে না অন্ধকারের দুনিয়ায় নিয়ে গিয়ে পুরোপুরি বিনাশ করে দিয়েছি।তাহলে এই মায়াকাল আয়নার ভিতর থেকে প্রকট হলি কি করে তুই?
.
আকাশের কথার কোনো উত্তর এই দেয় না আতাউর।সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু আতাউর চুপচাপ থাকলেও আনহার বাবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে নেই।সে তার পিছন থেকে জাদুই একটা লাঠি বের করে আকাশের শরীরের মধ্যে সজোড়ে একটা বাড়ি মারে।যার ফলে আকাশ ব্যথার চোটে আতাউরকে ছেড়ে দিয়ে নিচে বসে পড়ে।আনহার বাবার জাদুই লাঠির আঘাতে আকাশ প্রচন্ড রকমের আঘাত পেয়েছে।তাই তার চোখের কোনো পানি চলে এসেছে।”অন্যদিকে আনহার বাবা হুট করেই তিক্ত মেজাজি হয়ে উঠেছে।সে আকাশকে জাদুই লাঠি দিয়ে আঘাত করার পরেও থামেনি।সে আকাশকে প্রহার করার পর এখন এসে আবার তার কলার চেপে ধরেছে।আকাশের কলার চেপে ধরার পর তাঁকে ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে….

–এই তুই কে?
আর কোন সাহসে তুই আতাউরের শরীরে হাত দিয়েছিস?

–মহারাজ আমি জমিনী মানব।আর আতাউরের গায়ে হাত দেওয়ার কারন হচ্ছে,সে শয়তানের পূজারি।সে পরী-পালক ধ্বংস করার জন্য পিছনে লেগেছে।

–আতাউর এমনটা করেনি।করেছে অন্যকেউ।কারন মায়াকাল আয়নার ভিতরে বন্দী হওয়ার পর আতাউরের সাথে আমার দেখা হয়।তখন সে আমায় সবটা খুলে বলে।তাকে পাঁচশো বছরের’ও বেশি সময় ধরে নাকি এই মায়াকাল আয়নায় বন্দী করে রাখা হয়েছে।এবং তার রূপ ধারণ করে এতোদিন কোনো এক শয়তান চৌকিদারি করেছে।সো তুই না জেনে এর গায়ে হাত দিলি কেন?

–মহারাজ আমার ভুল হয়ে গেছে।

–তোর ভুলের মাফ নাই।কারন একে তো তুই আতাউরের সাথে বেয়াদবি করেছিস।দ্বিতীয়ত তুই জমিন থেকে আমাদের পরী-পালকে আসার সাহস করেছিস।এই পরী-পালকের প্রহরী কে আছো।তোমরা তাড়াতাড়ি এই জমিনী মানব’কে নিয়ে কাল কুঠরিতে বন্দী করো।ওর দুঃসাহস একদম চিরতরের মতন বের করে দিব।আমাদের রাজ্যে এসে আমাদের প্রহরীর সাথেই বেয়াদবি করা বের করছি ওর।
.
আনহার বাবার কথা মতন পরী-পালকের কয়েকজন সিপাহী এসে আকাশকে ধরে ফেলে বন্দী বানানোর জন্য।কিন্তু যখনি পরী-পালকের সিপাহী’রা আকাশকে ধরে তার হাতে হাতকড়া পড়াবে,তখনি আনহা রেগে গিয়ে তার জাদুই লাঠিটা তার বাবার আদেশ মানা সিপাহীদের উপরে ফিক্কা মারে।যার ফলে সবাই আকাশের থেকে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে।তখনি আনহা আকাশের কাছে গিয়ে তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে।এবং তার বাবা’কে বলে,

–বাবা তুমি কোন সাহসে আকাশকে পাকড়াও করার আদেশ দিয়েছো?

–মাসুদা একদম মুখের উপরে কথা বলবি না।আমি একবার যেটা আদেশ করেছি সেটাই হবে।আর তার চেয়েও বড় কথা তুই আমার মেয়ে।আর আমি তোর পিতা।তোর কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে এমন কোনো বাধ্যকতা আমার নেই।সো বেয়াদবি করা বন্ধ করে সিপাহীদেরকে তাঁদের কাজ করতে দে।

–হ্যাঁ তুমি আমার বাবা।তুমি আমার কাছে কোনো কিছু নিয়ে জবাবদিহিতা না করলেও বর্তমান এই বিষয় নিয়ে
তোমার জবাবদিহিতা করতে হবে আমার কাছে।কারন এই ব্যাক্তিটার কারনেই তুমি আজকে সহিসালামতে আছো।আর এই ব্যাক্তিটার কারনেই আজকে এই পরী-পালক পুরো দমে টিকে আছে।সে যদি আমাদের সাহায্য করতে না আসতো,তাহলে আজকে পরী-পালক জাহান্নামে পরিণত হয়ে যেতো।

–সে কি এমন সাহায্য করেছে,যে তার সেই সাহায্যের জন্য আমাদের পরী-পালক টিকে আছে?আর তুই তার জন্য আমার আদেশ পালনকারীদের বিপক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছিস?

–বাবা সে শয়তান পূজারি আতাউরকে তার হাম্বলে গিয়ে শেষ করে দিয়ে এসেছে।তুমি জানো সেই শয়তান পূজারিকে শেষ করার জন্য তার কয়টা হাম্বল অতিক্রম করতে হয়েছে?আর হাম্বল গুলায় কি ভয়ংকর প্রহরী নিযুক্ত ছিলো?

–নাহ জানি না।তুই বল..

–বাবা যে এতোদিন আমাদের পরী-পালকে ভেসভোসা বদলে দারোয়ানের রূপ ধারণ করে ছিলো,তুমি তো জানোই যে সে একটা শয়তান।আর সে আমাকে বন্দী করে তার সাথে নিয়ে গিয়েছিলো।এই আকাশ আমায় তাঁদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে।মুখোশধারী আতাউর আমায় আয়নায় বন্দী করে নিয়ে গিয়ে একটা অন্ধকারের দুনিয়ায় আঁটকে রেখেছিলো।যেই দুনিয়ায় যাওয়ার মতন ক্ষমতা আমাদের পরী-পালকের কারোর মধ্যে নেই।কারন সেখানে যেতে হলে সর্ব প্রথম সাতটা হাম্বল অতিক্রম করতে হবে।যেই হাম্বলের রক্ষিতারা অগ্নিযোগে পয়দা হয়েছে।তাঁদেরকে হারানো কারোর পক্ষেই সম্ভব না।কারন তাঁদের মধ্যে এমন অলৌকিক ক্ষমতা আছে,যে তারা চাইলে হাজার খানিক লোকজন’কে নিমিষেই ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে।সাতটা হাম্বলের রক্ষিতাই একেকজন একেকজনের চাইতে ভয়ংকর।তারপর হাম্বল অতিক্রম করে সাত নম্বর হাম্বলে আয়না রাখা ছিলো।সেই আয়নার ভিতরের এক অন্ধকার দুনিয়ায় আমি ছিলাম।এই আকাশ সব কয়টা হাম্বলের রক্ষিতাকে পরাজয় করেছে।শুধু তাই নয়,ছদ্মবেশী আতাউরকে হারিয়ে আমাকে অন্ধকারের দুনিয়া থেকে মুক্ত করে এনেছে।আর আমি মুক্ত হয়ে এসে আমার এক সঙ্গীর মাধ্যমে তোমায় মায়াকাল আয়না থেকে বের করেছি।কিন্তু তুমিই দেখি আমার সাহায্যকারীর পিছনে লেগেছো।

–ও আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে।
আচ্ছা সিপাহীরা তোমরা ওর থেকে দূরে সরে এসো।আর আনহা তুই ওকে রাজ দরবারে নিয়ে চল।ওকে পুরষ্কিত করবো আমরা।

–নাহ তার কোনো প্রয়োজন নেই।কারন এই ছেলের মাঝে কোনো লোভ নেই।তবে তুমি যেহেতু বলেছো তাকে পুরষ্কিত করবা,তাহলে তার পুরষ্কার টা তো বিফলে যেতে দেওয়া যাবে না।তাই আমিই তার পক্ষে হয়ে তোমার কাছে পুরষ্কার চাইবো।

–তোর আবার কিসের পুরষ্কার?তুই এই তো আগামীতে সব কিছুর মালিক হবি।তাহলে কি এমন চাওয়ার আছে আমার থেকে,যেটা তুই আমার থেকে এভাবে চেয়ে নিচ্ছিস?

–আমার এই ছেলেকে চাই।আমি এই ছেলেকে বিয়ে করে নিজের স্বামী বানাতে চাই।কারন এই ছেলে জমিন থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্যই এখানে ছুটে এসেছে।তবে শুধু আমাকে বাঁচানোর জন্য একা নয়,পুরো পরী-পালককে রক্ষা করার জন্য ছুটে এসেছে।তাই আমার এই ছেলেকে চাই।

–আনহা চাহিদা টা কি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
তুই হলি ভবিষ্যৎ রানী পরী-পালকের।কিন্তু তুই কিনা একটা জমিনী মানব কে বিয়ে করতে চাইছিস।এই চাহিদা তো পূরণ করা অসম্ভব।

–বাবা তুমি কি ভাবে কি করবে আমি জানি না!তবে আমার এই ছেলেকেই লাগবে।সো তুমি যদি এই ছেলের সাথে আমার বিয়ে না দাও,তাহলে আমি এই ছেলের সাথে জমিনে নেমে যাবো চিরতরের জন্য।তারপর তোমরা শান্তি মতন থেকো।

–আনহা তোর কিন্তু মুখের জবান অনেক চলছে।তুই এই ছেলের জন্য পরী-পালক ছেড়ে জমিনে নামার কথা মুখে আনলি কি করে?

–বাবা সবে তো মাত্র শুরু।এই ছেলের জন্য আমি কি কি করতে পারি তা তোমার কল্পনার ও বাহিরে।

–আনহা তুই কি এমন দেখেছিস এই ছেলের মাঝে,যার জন্য তুই আমাকে তোর মা’কে এবং পুরো পরী-পালকে তার সাথে আরো এতো বড় সিংহাসন টাকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছিস?

–আচ্ছা কারন টা বলছি।বাবা তোমার মনে আছে,আমি যখন ছোট ছিলাম,তখন তুমি আমায় সঙ্গে করে জমিনে নিয়ে গিয়েছিলে ঘুরবার জন্য?

–হুম মনে আছে।

–আমি তোমার সাথে জমিনে নেমে এই ছেলেকে দেখি।যাকে কিনা সেই এক দেখাতেই ভালোবাসে ফেলেছি।তবে পরবর্তীতে যখন বহু বছর পর আমি জমিনে নামি,তখন এই ছেলের সাথে দেখা করি।কিন্তু তখন আমার কাছে ভালোবাসার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ছিলো আমার পরী-পালক।আমি পরী-পালক রক্ষার স্বার্থেই তার কাছে গিয়েছিলাম।তার কাছে গিয়ে ভালোবাসা নামক একটা সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে ভিতরে ভিতরে পুষে রেখেছিলাম তাকে দিয়েই পরী-পালক রক্ষা করবো।কিন্তু যখন তার সাথে মিশে যাই।তখন জানতে পারি তার জীবনটা কষ্টের পাহাড় দিয়ে ভরপুর।কারন তার ভালোবাসার মানুষ তাকে ছেড়ে চলে গেছে।তার উপরে সে কিছু করেনা বিধায় তার বাসার মানুষ ও তাকে অপমান অপদস্ত করে।তাই তাকে যে কোনো এক ভাবে পরী-পালকে নিয়ে আসি।যাতে করে মায়াকাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে একটা চাকরির চাহিদা করতে পারে।কারন তাকে দিয়ে আমার পরী-পালক রক্ষা হবে।তার দুই একটা চাহিদা তো অবশ্যই পূর্ণ করতে পারি।তাই তাকে পরী-পালকে নিয়ে এসেছিলাম।
কিন্তু এই মানুষটা আমার মতন স্বার্থক বাজের মায়ায় এভাবে জড়িয়ে গেছে,যে সে মায়াকাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমায় চিরতরের জন্য চেয়েছে।সে যেনো আমার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে পারে,সে সেই চাহিদা টা করেছে।কিন্তু আমি এতো বড় স্বার্থকবাজ,যে আমি পরবর্তীতে মায়াকাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার চাহিদাটা নষ্ট করে দেই।যাতে করে আমার ইচ্ছা ছাড়া সে কখনো আমাকে আপন করতে না পারে।কারন আমার মনে তার জন্য ভালোবাসা থাকলেও সেই পরিমাণ ভালোবাসা ছিলো না,যেই ভালোবাসার কারনে আমার মন থেকে পরী-পালকের স্থান দ্বিতীয় নাম্বারে চলে যাবে।আমি বরাবরের মতই তার কাছে স্বার্থ চেয়ে এসেছি।কিন্তু এই মানুষটা আমায় ভালোবেসে সমস্ত কুল কায়নাত এক করে দিয়েছে।ছদ্মবেশী আতাউর যখন আমায় বলি দিয়ে রক্ত নিবে বেড়িবাঁধ বানানোর জন্য,তখন এই ছেলে আমার জন্য তার প্রাণ দিয়ে দিতে চেয়েছে।যাতে করে আমি বেঁচে যাই।এবং তার রক্ত দিয়ে ছদ্মবেশী আতাউর বেড়িবাঁধ তৈরী করে।যেখানে মানুষ পারলে অন্যকে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে মৃত্যু থেকে বেঁচে যায়।আর এই ছেলে কিনা আমার জন্য নিজের প্রাণ দিতেও প্রস্তুত ছিলো।সেখানে এই ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।আমি বর্তমানে এই ছেলেকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি।এই ছেলের জন্য আমার কাছে পুরো পরী-পালকের লোক এবং পরী-পালকের মতন হাজারটা সিংহাসন ফিকে পড়বে।সো আমি মরে গেলেও এই ছেলেকে ছাড়বো না।আমি এই ছেলেকেই বিয়ে করবো।

–আনহা তোর সমস্ত কথা শুনে আমার বোঝা হয়ে গেছে,যে তুই এই ছেলেকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসিস।এবং এই ছেলেও তোকে তার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।তোদের ভালোবাসার বর্ণনা দেখে আমিও তাই তুই এই ছেলেকে বিয়ে করে সুখী হ।আমি আর তোদেরকে আটকাবো না।কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়।তুই পরী আর সে মানব।তোর সাথে তার বিয়ে দিতে হলে অনেক বড় একটা নিষেবণ বা ধর্মোপাসনা করতে হবে।কিন্তু সেটা শরিয়ত মোতাবেক।কারন তোর প্রিয় মানুষটা যেই সত্তায় বিশ্বাসী।আমরাও কিন্তু সেম একই সত্তায় বিশ্বাসী।তবে তোরা দু’জন দুই রকমের।একজন হলি মানুষ,আরেকজন পরী।কোনো ধর্মোপাসনা ছাড়া তোদের বিয়ে হলে দেখা যাবে তোদের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়েছে।তাই পরী-পালকের পন্ডিত রা ধর্মোপাসনা করে কোনো বিপদ ছাড়া মিলনের পন্থা বের করুক।তারপর তোদের বিয়ে দিয়ে দিব।

–ঠিক আছে যা ভালো মনে করো তুমি।

–হুম এবার তুই ওকে নিয়ে রাজদরবারে যা।কিছুক্ষণ পর পন্ডিতরা রাজদরবারে এসে ধর্মোপাসনা করবে।

–আচ্ছা…
.
আনহান আকাশকে আর রূপন্তীকে নিয়ে রাজ দরবারে চলে আসে।আনহা চলে আসার আগে রূপন্তীর বিষয়েও তার বাবাকে একটু করে বলে।তার বাবা রূপন্তীর বিষয়টা একদম স্বাভাবিক ভাবে নেয়।রাজ দরবারে আসার পর আনহা রূপন্তীকে একটা জায়গায় বসিয়ে দেয়।তারপর আকাশকে নিয়ে একটা কক্ষে এনে তাকেও বসিয়ে রেখে সে কোথায় যেনো চলে যায়।”এদিকে আকাশ কক্ষে বসে বসে আনহার বিষয়ে ভাবছে।কারন সে আনহাকে বাঁচাতে যাওয়ার আগে চরম পরিমাণে অভিমান জমে ছিলো আনহার উপরে তার।কিন্তু সেখানে গিয়ে আনহাকে কষ্টে দেখে তার মন থেকে রাগ অভিমান অনেকটাই মুছে যায়।তার উপরে কিছু সময় আগে আনহা তার বাবাকে তার বিষয়ে যেই ভাবে বলেছে,এবং যেই ভাবে তাকে চেয়েছে,সেই ভাবে করে তার রাগ অভিমান পুরোপুরি ভাবে নিস্তেজ হয়ে গেছে।কিন্তু তার পরেও মনের কোনো এক কোনে আনহাকে নিয়ে সে পুরোপুরি স্বস্তি ফিল করছে না।কারন আনহা তাকে প্রথমে তার মতন করে ভালোবাসেনি।তার উপরে তার চাহিদাকে সে নষ্ট করে দিয়েছে।আকাশ এসব বিষয় নিয়ে বসে বসে ভাবছিলো,তখনি আনহা আকাশের কক্ষে ফিরে।আনহা আকাশের কক্ষে ফিরে এসে দেখতে পায় আকাশ মন মরা হয়ে আছে।যেটা দেখে আনহা বুঝে যায় আকাশ তার বিষয় নিয়ে কষ্ট পেয়েছে।তাই সে দরজা বন্ধ করে কোনো কথাবার্তা ছাড়া আকাশকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে আরম্ভ করে।আকাশ কোনো নড়াচড়া করছে না।আকাশের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আনহা তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

–আকাশ তুমি আমায় ভুল বুঝো না।দেখো আমি আমার নগরীকে বাঁচানোর জন্য এমনটা করেছি এটা সত্যি।আর সেই বাঁচানোটাও তোমার রক্ত দিয়ে।কিন্তু পরিবর্তীতে যখন তোমায় পুরোপুরি ভালোবেসে ফেলি,তখন এই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি।কারন তুমি আমায় কতোটা ভালোবাসো,সেটা আমার জানতে বাকি নেই।তুমি আমায় এতোটা ভালোবাসার পরেও কি করে তোমার শরীর থেকে রক্ত ঝড়াবো বলো?তাই পরবর্তীতে সেই জিনিসটা মাথা থেকে ঝেরে ফেলি।
কিন্তু তুমি হয়তো আমার সেই জিনিসটা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো।প্লিজ কষ্ট পেয়ো না।বর্তমানে আমার পরী-পালক ধ্বংস হয়ে গেলেও আমি তোমার শরীর থেকে এক চিলতে পরিমাণ রক্ত ঝরতে দিব না।এটা আমার শপথ।

–আনহার কথা শুনে মন থেকে সমস্ত অস্বস্তি দূর হয়ে গিয়েছে।কারন বর্তমানে মেয়েটা আমায় অনেক বেশি ভালোবাসে।আর তাছাড়া সে আমার খারাপ সময়ে সাথী।তবে যদিও সেটা সে তার স্বার্থের জন্য ছিলো,কিন্তু তখন তো আমার নিজেকে একা মনে হয়নি।সে যেভাবেই হোক আমায় সঙ্গ দিয়েছে।সে কখনো আমার একাকিত্ব অনুভব করতে দেয়নি।তাই তার বিষয়ে নিয়ে সব রকমের সংশয় মন থেকে দূর করে ফেললাম।আর তাকে বললাম,দেখো এবারের জন্য মাফ করে দিলাম।কিন্তু ভবিষ্যতে কখনো তুমি আমার হাত ছাড়তে পারবে না।তুমি যেখানেই যাবে আমাকে তোমার শাড়ির আঁচলে করে বেঁধে নিয়ে যেতে হবে।এক মুহূর্তের জন্যেও তুমি আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে না।

–আচ্ছা বাবা এক মিনিটের জন্যেও তোমার থেকে দূরে সরবো না আমি।এবার দেখি আমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার ভালোবাসার উষ্ণতায় রাঙিয়ে দাও।

–হুম দিচ্ছি।
.
আকাশ আনহাকে শক্ত করে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে।তারপর আনহার কপালে অনেক কয়টা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।দু’জন দু’জনের সাথে ভালোবাসায় মিশে আছে।তখনি ভয়ানক এক বাতাসে তাঁদের দরজার ছিটকিনি খুলে যায়।দরজার ছিটকিনি খুলতেই কালো ছায়ার মতন কিছু একটা দরজা দিয়ে তাঁদের কক্ষে প্রবেশ করে দু’জনের সামনে দাঁড়ায়….

চলবে….

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।