ইচ্ছে কথন পর্ব-২৫+২৬

0
563

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_২৫
২৫.

প্রিয় তরুর হাতটা চেপে ধরে। চোখ জোড়া পাকিয়ে বলতে লাগলো,

অসুস্থ কবে থেকে?

তরু প্রিয়র এমন অগ্নিবীণা তাকানো দেখে থর থর করতে কাপতে লাগলো। এমনেতেই শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। তার উপর আবার এমন শক্ত মোডে কথা বলা কেমন যেন লাগছে। তরুর কথা বলার শক্তিটুকু পাচ্ছেনা। ধরাগ্রস্ত গলায় আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,

আমাকে নিয়ে এত ভেবো না। নিজেকে নিয়ে ভাব। কারন কয়লা ধুলে কখনো ময়লা যায় না। আমিও ঠিক তেমনই। তাই আমাকে নিয়ে এত ভেবে লাভ নেই। বাঁচবোই বা আর কয়দিন। এ শহরে সাময়িক সময়ের জন্য এসেছি। ভেবেছিলাম তোমাকে ভালোবেসে আমার সবটা উজার করে দিব। পরে মরলেও যেন কোনো আপসোস না থাকে। কিন্তু দেখ ভাগ্য তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়েছে ঠিকই কিন্তু সময়টা থাকতে ফেরালো না।

বলেই তরু চোখের কোনে জমে থাকা পানিগুলো মুছলো। প্রিয় তরুর কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলো। মেয়েটা কি তাহলে আরো আগে থেকেই তার অসুস্থতার কথা জানতো। কিন্তু তাকে কেন বলছে না। প্রিয়র চোখের কোনেও পানি জমে গেল। তরুর কথাগুলো শুনে। কি হয়েছে মেয়েটার যার কারনে মেয়েটা এমন কঠিন কঠিক কথা বলছে। প্রিয় তরুর দিকে তাকালো না। কারন নিজের উপর আজ জঘন্যরকম ঘৃর্না লাগছে। কিন্তু মেয়েটা যে তাকে বলেছে আর বাচঁবেই বা কয়দিন এটা কোন প্রসঙ্গে বলা। এই একটা কথাই প্রিয়কে ভাবচ্ছে এই মুহূর্তে। প্রিয় নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না তরু?

তরু অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো। তারপর হাসি থামিয়ে বলতে লাগলো,

ছি,, কি বলছো এসব। তুমি কেন ক্ষমা চাইবে আমার কাছে। তোমার দিক থেকে তুমি ঠিক। তবে আমার দিক থেকে আমি ঠিক নেই। কারন তোমার কাছ থেকে বার বার অপমানিত হওয়ার পরেও আমি তোমাতেই আসক্ত ছিলাম। কারন আমার জীবনে যে তুমিই এক মাত্র পুরুষ ছিলে। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি প্রেম কি ভালোবাসা কি তখন থেকে তোমার নামই যপে গেছি। তোমার একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা আমাকে গ্রাস করে গেছে বার বার। যেটা থেকে এখনো নিজেকে কন্ট্রোল করার সাধ্য খুজে পাচ্ছি না। কারন বিকজ আই লাভ হিম অলসো। এখনও আমি তোমাকেই ভালোবাসি আর মরার আগ পযর্ন্ত বেসে যাব।

এতটুকু বলেই তরু থামলো। প্রিয় সবটা শুনেই যাচ্ছে। তরু আবারো বলতে শুরু করলো,

আমারও মায়ের মতো হিমোগ্লোবিন এ সমস্যা। হয়তো আমি আর তোমাদের মাঝে বেশি দিন নেই। তাই প্লিজ যে কয়টা দিন আছি সে কয়টা দিন আমাকে একটু ভালোবাসো।

তরুর কথা শুনে প্রিয়র পায়ের নিচ থেকে মাটি উঠে যাওয়ার অতিক্রম হতে লাগলো। বুক ফেটে কান্না করতে ইচ্ছে করছে৷ তরুর কিছু হলে তো সে বাঁচবে না। তরুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে পাগলের মতো বলতে লাগলো,

না,না তরু তোমার কিছু হবে না। আমি তোমার*x কিছু হতে দেবো না। তোমাকে আমি হারাতে পারবো না তরু
বিশ্বাস করো তরু তোমাতেই আমি আসক্ত।আমি তোমার কিছু হতে দিব না। দরকার হয় তোমাকে অন্য দেশে নিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করব। তবুও আমার তোমাকেই চাই। প্লিজ তরু এমন কথা বলো না প্লিজ।

প্রিয় কথাগুলো বলে যাচ্ছে। আর চোখের পানিগুলো তরুর কাধের উপর অনবরত ফেলেই যাচ্ছে। তরু বুঝতে পেরেছে প্রিয় তার প্রতি বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে কিন্তু এখন যে এমনটা হলে চলবে না। প্রিয় তরুর কাধের উপর থেকে মুখটা তুলে চোখের পানিগুলো মুছে তরুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

তুমি জানো তোমার অসুস্থতার কথা কিন্তু আমাকে বলো নি কেন?

তরু মুখটাকে মলিন করে ধীর কন্ঠে বলতে লাগলো,

মনে আছে একমাস আগে আপনি আমার গালে থাপ্পর মেরে ছিলেন।

প্রিয় মনে আছে ঠিকই কিন্তু তরুর কথার কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি। তরু বলতে লাগলো,

সেই একমাস আগে আমি দেরি করে বাসায় ফিরেছিলাম। তখন তুমি বলেছিলে কোথায় গিয়েছি। তোমার কথার জবাবে বলেছিলাম আমি নীলিমার বাসায় গিয়েছি। তবে হে আমি তোমাকে বলতাম ঠিকই। কিন্তু আমি সেদিন নীলিমার বাসায় যাইনি। আমি গিয়েছি হসপিটালে। আমার মাথাটা হঠাৎ ঘোরার পরে হসপিটালে যাই। সেখানে ডাক্তার আমাকে কতগুলো টেস্ট দেয়।পরে তার রিপোর্টে আসে আমার হিমোগ্লোবিন জনিত সমস্যা। হরমোনের কারনে শরীরে রক্ত থাকেনা। হরমোন শরীরের রক্ত চুষে নেয়। কিন্তু যেদিন তোমার হাতের থাপ্পর খেয়েছি সেদিন রিপোর্টের দেয়নি । দিয়েছিলো পরের দিন। তোমার থেকে থাপ্পর খাওয়ার পরে বুঝতে পেরেছি। তোমার জীবনে আমার কোনো স্থান নেই। যেটা রয়েছে সেটা শুধু দায়িত্ব। তাই তোমাকে আর বলিনি। ডাক্তার আমাকে বলেছিলো।আমি যেন তাড়াতাড়ি হসপিটালে ভর্তি হই।কারন ইমার্রজেন্সি আমার ব্লাডের দরকার।আমার ব্লার্ডগ্রুপ বি নেগেটিভ যেটা সহজে পাওয়া যায়না। কিন্তু তবুও ডাক্তার রক্ত যোগার করে। কিন্তু তোমার থেকে সেই থাপ্পর খাওয়ার টর বাঁচার মন মানসিকতাটা হারিয়ে যায়।তাই তোমার সামনে নিজের রোগকে চাপা দিয়ে বার বার একটুখানি ভালোবাসা টেতে চাইতাম হুটহাট জরিয়ে ধরতাম। যেটা তোমার কাছে আনইজি বলে মনে হতো। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে একটু জরিয়ে ধরলে আমার মনের তৃষ্ণা মেটাতে পারতাম না। কিন্তু কি করার অবশ্য তোমার তো এসব ভালো লাগতো না।

তরুর কথা শুনে প্রিয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। শেষে কিনা তার একটা থাপ্পর মেয়েটাকে মৃত্যু পর্যন্ত এনে দাড় করালো।তরু আবারো বলতে লাগলো,

আমি বেশি দিন বাঁচবো না। যেটা আমি বুঝে গেছি। তাই আমি চাইনা তোমাকে কোনো কষ্ট দিতে। আমি চাই যে কয়টা দিনই বাঁচি তোমার ভালোবাসা নিয়ে বাঁচি। সেটাই কম কিসের। তোমাদের সবার থেকে কথাটা লোকানোর জন্য আমি সরি। আর হে প্লিজ আমাকে হাসপাতাল নিও না। যেভাবে আছি সেভাবেই থাকতে দাও।

তরুর কথা শুনে প্রিয়র এবার রাগ হলো। জীবনে বাঁচতে হলে তরুকে তার বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারন তরু ছোট বেলায় নিজেই একদিন বলেছিলো।

স্বামী স্ত্রী উভয় দুইজন অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। এখন যদি অক্সিজেন চলে যায় তাহলে হাইড্রোজেন কিভাবে বাঁচবে। প্রিয় খুব রেগে চোখ মুখ শক্ত করে গম্ভীর মুখে বলতে লাগলো,

আগামীকাল থেকেই তোমার ট্রিটমেন্ট শুরু হবে। তার জন্য রেডি থেকো। আর আমি তো তোমাকে বল্লামই তোমার আগে আমার মৃত্যু যেন আল্লাহ লিখে রাখে।সো নেক্সটাইম মরার কথা মুখেও আনবেনা। জীবনে বাঁচতে হলে তোমাকে আমার বিশেষভাবে প্রয়োজন এতটুকুই বলে রাখলাম।

#চলবে

#ইচ্ছে_কথন
#writer_falak_moni
#পর্ব_২৬

তিনমাস হসপিটালে তরুর ট্রিটমেন্ট চলে।সেদিনের পর আফজাল চৌধুরি পরে যখন জানতে পারে তরুরও তার মায়ের মতো হরমোন জনিত সমস্যা। তখন তিনিই তারাতাড়ি করে একটা প্রাইভেট হসপিটালে ভর্তি করায় তরুকে। তারপর অনেক কষ্টে তরুর ব্লাড যোগার করে শরীরে দেয়।কিন্তু তরুর শরীরে সেই ব্লাড বেশিক্ষণ স্থগিত থাকেনা। হরমোন চুষে নেয়। এই তিন মাস প্রিয় এক নজরের জন্যও তরুর পেছন ছাড়েনি। সব সময় আঠার মতো লেগে থাকতো আর কেয়ারিং করতো । প্রিয়র এমন কেয়ারিং দেখে তরু মনে মনে বলতে লাগলো,

হায় রে ভালোবাসা। আল্লাহ যদি আমাকে বাচিঁয়ে রাখে তাহলে হয়তো আমিই পৃথিবীর সেরা নারী হবো। যার প্রতিটি ঘাটে পা মাটিতে ফেলতে হয়না। নিজ হাতে খেতে হয়না। নিজ হাতে গোসলও করতে হয়না। ইস আর যদি ৫টা বছর বাঁচতে পারতাম। তাহলে ওকে আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে উজার করে নিতাম।

তরু আনমনা হয়ে বসে আছে। প্রিয় খাবার হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে তরুর সামনে। তরু বার বার খাবেনা বলে তারিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এখন যে তাকে পুরো খাওয়ার শেষ করতে হবে। নয়তো শরীরের জন্য ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তরু আগে থেকে অনেকটাই বেটার। কিন্তু তবুও ডাক্তার বার বার বলেছে তাকে খুব ভালোভাবে কেয়ার করতে হবে। নয়তো হিতের বিপরীত হতে পারে।

আজ তরুকে বাড়ি নিয়ে যাবে। হসপিটাল থেকে তাকে রিলিজ করে দেওয়া হবে। কিন্তু হাতের ক্যানেলার খুলা যাবেনা। কারন প্রতিদিন তাকে এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে হবে। তরুকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।নাতাশার পেট এখন একটু ফুলে উঠেছে। এই তিনটা মাস নাতাশাকে তরু দেখেনি। কারন তরু নিজেই নিষেধ করেছে এই অবস্থায় নাতাশাকে হসপিটালে যেতে। গেলে পরে তরুকে এমন অবস্থায় দেখে ভেঙ্গে পরবে যেটা বাচ্চার জন্য ক্ষতি হবে। তরু বাড়িতে ফেরার পরই আফজাল চৌধুরি কল্প আর প্রিয়কে তার রুমে ডাকে সাথে দুই বৌকেও।

তরু নাতাশা বসে আছে শশুরের বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে। কল্প আফজাল চৌধুরি সোফায় বসে আছে। আর প্রিয়র কাধের উপর তরুর মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে প্রিয়। হাতে ক্যালেনার লাগানো মেয়েটাকে দেখে বড্ড কষ্ট লাগছে মনের ভেতর । কিন্তু তার হাতে যে কিছুই করার নেই। নিরবতা ভেঙ্গে আফজাল চৌধুরি বলতে লাগলো,

তরু প্রিয় আমি চাই তোমাদের ৪হাত এক করে দিতে। যদিও তোমারা বিবাহিত কিন্তু স্বামী স্ত্রী মধ্যে সবকিছুর বাহিরেও একটা সম্পর্ক থাকে। যেই সম্পর্কটা তোমাদের মাঝে নেই। তাই আমি বলছি দুই তিন দিনের মধ্যেই তোমাদের সম্পর্কটাকে পরিত্যক্ত করতে। আমি জানি যদিও বাবা হিসাবে তোমার সাথে একথাগুলো বলা আমার ঠিক না। কিন্তু না বলেও পারলাম। যদি তোমার মা থাকতো তাহলে সে বলতো। যেহেতু সে নেই তাই আমাকেই বলতে হচ্ছে। এখন তোমাদের ডিসিশন জানাও।

তরু প্রিয়র দিকে ইশারা দিল।প্রিয় তার ইশারার ভাষা বুঝে উল্টো তরুকে জিজ্ঞেস করলো আফজাল চৌধুরির সামনে,

তরু এ বিষয়ে তুমি কি বলো,

আফজাল চৌধুরির দিকে তরু তাকিয়ে বলতে লাগলো,

বাবা তোমার মুখের উপর আজও কোনো কথা বলিনি আর বলবও না। তাই তুমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছো সেটাই ঠিক বলে সম্ভোধন করি।

তরুর কথা শুনে কল্প বলতে লাগলো,,

বাবা আমি কি পানির জলে ভাইসা আসছি নাকি।

আফজাল চৌধুরি কিষ্কিন্ধ্যা করে কল্পের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো

কি কও বাজান। তুমি ভাইসা আসবা কেন।

তাহলে আমার বিয়ের কোনো সেপারেশন দেখছিনা কেন?

বাবা তুমি রাগ কইরোনা। আগে তোমার সন্তান দেশে আসুক তারপর তোমরটা ভাববো। দাদু নাতি স্বাক্ষী থেকে তোমাদের বিয়ের আয়োজন করবো। ইনশাআল্লাহ।

নাতাশা লজ্জায় মুখটাকে লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই লোকটার মুখে কোনো লাগাম নেই। যখন যা মুখে আসে তাই বলে। নাতাশা আস্তে করে চলে যায়। কল্প সেটা বুঝতে পেরে সেও পিছে পিছে যায়।

প্রিয় তরুকে কোলে করে রুমের ভেতর নিয়ে যায়। তরু প্রিয়র গলায় হাত দুটো মুঠি বদ্ধ করে রেখে বলতে লাগলো,,

তুমি খুশি তো?

প্রিয় তরুর দিকে তাকিয়ে মুখটাকে বাঁকা করে বলতে লাগলো,

উহুম, একটুও না।

কেন?

কারন তোমার এমন শরীর নিয়ে বিয়ের জামেলা এসব ভালো লাগছেনা।

তরু মুখটাকে কাচুমাচু করে বলতে লাগলো,

তার মানে আমাকে তোমার কাছে পেতে ইচ্ছে করেনা বুঝি?

প্রিয় তরুর অভিমানী গলা শুনে বলতে লাগলো,

এই তো তুমি আমার কাছেই আছো৷

কই না তো আমি তো তোমার কাছে নেই।

প্রিয় একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,,

এই তোমার কেসটা কি বল তো? কি চাইছো তুমি?

তরু মুখটা প্রিয়র বুকের মাঝে লুকিয়ে আহ্লাদী সুরে বলতে লাগলো,

কেন তুমি বুঝ না নাকি?

তুমি যদি আমাকে না বলো তাহলে বুঝবো কিভাবে।

যাও দুষ্টু কোথাকার৷

দুষ্টমি তো এখনো করলামই না তার আগেই দুষ্টু হয়ে গেলাম।

উফ আমাকে নামাও তো। কোমর ব্যাথা আসছে।

হোয়াট কোলে নিলে কোমর ব্যাথা হয় সেটা তো জানতাম না?

এত কথা বলো কেন নামাতে বলছি নামাও।

প্রিয় তরুর নাকের ডগার সাথে নিজের নাকটা ঘেসে বলতে লাগলো,

আমার বাচ্চা বউটা তো দেখছি লজ্জায় মরিয়া হয়ে যাচ্ছে।

দুষ্ট দুষ্ট দুষ্ট তুমি খুব দুষ্ট।

প্রিয় হাসতে লাগলো । তরু প্রিয়র এমন মনখোলা হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তরুকে নামিয়ে বিছানার উপর শুয়ালো প্রিয় তারপর খাবারের প্লেট এনে তরুর মুখের সামনে ধরে রাখলো। তরুও লক্ষী মেয়ের মতো পুরো খাবার শেষ করে শুয়ে পড়ে। প্রিয় সোফায় শুয়েছে তরু বেডে। কারন তরু প্রিয়কে তার পাশে শুতে দেয় না। কারন লোকটা সুযোগ বুঝেই ছোবল মারতে চায়।তাই প্রিয়কে সে তার পাশে শুতে দেয় না। আগে সম্পর্কটা ঠিকই থাকলেও ভালোবাসাটা ছিল এক তরফা। কিন্তু এখন সম্পর্ক ভালোবাসা দুটোই দুই তরফা। তাই প্রিয় চাইলেও তরু তাকে পাশে শুতে দেয়না। শুতে গেলেই তরু নানা বাহানা দেয়। তাই প্রিয়ও আর নিজ থেকে ধরা দেয়না । ভেবে রেখেছে যেদিন পরিপূর্ন ভাবে বিয়েটা হবে সেদিনই সে তরুর কাছে নিজেকে ধরা দিবে।

_________________

সকালে ঢাক ঢোলের আওয়াজে তরুর আর প্রিয়র ঘুম ভাঙ্গে। তরু তো ঢোলের আওয়াজ পেয়ে ভূত দেখার মতো করে লাফিয়ে উঠে পড়ে। যখন ঢোলের আওয়াজ স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে তখন প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

এত সকালে ঢোল বাজায় কে প্রিয় ভাইয়া?

ঢোলের আওয়াজে না যতটুকু বিরক্তিকর হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিরক্ত এখন লাগছে প্রিয়র কাছে তরুর মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনে। কিন্তু কি আর করা বৌ তো তাকে কথায় কথায় ভাই বলেই সম্বোধন করে। বৌকে তো আর পেটানো যায়না। যদি যেত তাহলে পিটে পিটে বলতো,

ভাই নয় হাই (জামাই) বলবি।

কিন্তু আদরের বৌ তো তার উপর এত কষ্ট দিয়েছে মেয়েটাকে এখন আর কষ্ট দিতে চায়না। তাই তরুর দিকে চোখ দুটো নিছক করে বলতে লাগলো,

আরে বলতে পারছিনা চল নিচে যাই।গিয়ে দেখি।

তরু আর প্রিয় উপরের তলা থেকেই দেখতে পেল।নিচে বিভিন্ন ধরনের ফুল আর লাইটিং দিয়ে পুরো ঘর সাজানো হয়েছে ।আবার একটা স্টেইজও সাজানো হয়েছে। যেখানে লেখা রয়েছে প্রিয় তরুর হলুদ সন্ধ্যায়।তরু তো খুশিতে প্রিয়কে জরিয়ে ধরলো।এটা একটা সারপ্রাইজ বলে তার কাছে মনে হচ্ছে। এত সুন্দর করে বাড়িটা সাজিয়েছে তরু অভাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে এখনো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা বাবা যে এতটা তাড়াতাড়ি সবটা এরেজমেন্ট নিজ হাতে করবে। প্রিয় বুঝতে পেরেছে শুধু বাবা নয় কল্পও বাবার সাথে হাত মিলে রাতে ঘুম হারাম করে পুরো বাড়িটা সাজিয়েছে। তরু প্রবয়কে জরিয়ে ধরেই বলতে লাগলো,

আচ্ছা নাচ গান হবে তো?

প্রিয় তরুর কথা শুনে হাবলার মতো করে তাকিয়ে রইলো তরুর দিকে। যে মেয়ে এখনো দাড়াতে গেলে আরেকজনকে ভর দিয়ে দাড়াতে হয়। সে মেয়ে নাচ গান হবে নাকি তা জিজ্ঞেস করছে। বাপ রে ভাবা যায়।

কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

কই না তো।

নাচ গান হবে কিনা।

হবে তো।

ইয়াহু। তাহলে তোমাকে নিয়ে একটা ডান্স দেবো।চমলক্কো।

#চলবে।