ইলশে গুঁড়ি পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
77

#ইলশে_গুঁড়ি
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ০৮ ( শেষ পর্ব )

আমার মেয়ে এসেছে, যেই কারণেই হোক এসেছে। সে এসে আমাকে কি দিয়েছে এটা তুমি জানোনা রেহনুমা। জানোনা! কতোদিন আমি শান্তিতে ঘুমাই না। যে দিন এই মেয়েটা এসেছে। সেই দিন অনেক দিন পরে আমি শান্তিতে ঘুমিয়েছি। দেখ এটাও তোমার সহ্য হলো না। আবার চাল চালতে শুরু করলে। আমি বুঝলাম! সেই দিন এতো কিছু বললে আমি চাইলেই তোমার তৈরি তাসের ঘর তখনি ভেঙে দিতে পারতাম।কিন্তু আমি দেয়নি। কেন দেইনি জানো? কারণ! আমি জানি! এইবার তোমার সামনে সেই সোজা সরল তাইয়্যেবা না। তাইয়্যেবার মেয়ে দাঁড়ানো। সে ভালো করেই জানে তাঁকে কখন কি করতে হবে। কিভাবে করতে হবে। আর সে এও জানে মাহবুব যদি তাঁর পরিবারের জন্য চুপ থাকতে পারে। তাঁর মেয়ের জন্য মুখ খুলতেও পারে। এই যে দেখো সে কিন্তু সেটাই করেছে। যে দাবার গুটি তুমি এতোদিন নিজের মতো চালিয়েছো। সেই গুটি দিয়েই সে তোমাকে মাত করেছে। মাহবুব হাত উঁচু করে দরজার দিক দেখালো।

রেহনুমা মাহবুবের হাত বরাবর তাঁকালো।সে পরে যেতে যেতেও দেয়াল ধরে দাঁড়ালো। দরজার সামনে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সে চোখ বন্ধ করে ফেললো। শরীর কাঁপছে তাঁর, মাথাও ঘুরছে। সব শেষ করে ফেলেছে সে? সব শেষ।

মাহবুব হাসলো! হেসে বললো,—
তিথি ভালো করেই জানে কাকে কিভাবে শাস্তি দিতে হয়। তোমাকে সে নানা ভাবেই দিতে পারতো। তবে নিজের তৈরি সাম্রাজ্য নিজের হাতে ধ্বংসের মতো বড় শাস্তি আর কি হতে পারে। এই পর্যন্ত তুমি যা করেছো, সব করেছো ঠান্ডা মাথায়। তুমি কি কখনও রেগেছো রেহনুমা?

না! তুমি চাল চেলেছো, সে তোমাকে চেলেছে। তোমার তৈরি খেলাঘর তোমাকে দিয়েই ভেঙেছে। কারণ! সে জানতো সে হাজার বার বললেও তাঁর মায়ের সাথে যে অন্যায় হয়েছে তা কেও বিশ্বাস করবে না। যে কালো পট্টি বছর বছর ধরে তুমি বেঁধেছো তা সহজে খুলবে না। তাইতো সে এসেছে। তা না হলে যে ঘর থেকে তাইয়্যেবা এক কাপড়ে তাঁর মেয়েকে নিয়ে চলে গিয়েছিলে সেই ঘরে তাইয়্যেবার মেয়ে কখনও ফিরেও আসতো না। যে খেলা তুমি শুরু করেছিলে সে খেলা তাইয়্যেবার মেয়ে এসে শেষ করলো। তুমি তোমার সাম্রাজ্যের দিকে তাকাও তো রেহনুমা। কি দেখতে পাচ্ছো?

মাহবুব চুপ হলো। হাঁপিয়ে গেছে সে। বড় একটা নিশ্বাস ফেললো! ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে তাঁর। কোথায় গেলে একটু শান্তি পাবে। সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থাকুক! অপরাধ করেছে সবাই ! একজনকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার অপরাধ। আর অপরাধের শাস্তি এক দিন না একদিন ভোগ করতেই হয়।
___

শোয়েব তিথির পাশে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটা এখনও শূণ্য খাঁচার দিকে তাঁকিয়ে আছে। আজ অবশ্য চোখে মুখে কোন মুগ্ধতা নেই। কেমন যেন একটা বিষন্নতার ছায়া । ভিতরে এতো কিছু হলো সে সেখানে যায়নি। শোয়েবও অবশ্য বেরোয়নি। অন্যের বাড়ির ঝামেলায় তাঁর থাকতে ইচ্ছে করে না । আরেকজনও যায়নি। সে শোয়েবের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নির্বিকার ভাবে সিগারেট খেয়েছে। যেনো বাড়ি ঐ প্রান্তের ঝড়ে তাঁর কিছু আসে যায় না। তবে শোয়েব জানে এই যে নির্বিকার, এলেবেলে, ছন্নছাড়া দেখতে ছেলেটা। এর ভিতরেই সবচেয়ে বেশি ভাঙছে, ঝড়ে ছিন্ন ভিন্ন হচ্ছে। নিজের মায়ের ঘৃণিত রুপ কারই ভালো লাগে। তবে তা কেও জানবে না। কাউকে সে বুঝতেও দেবেনা।

শোয়েব মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
— তো! তিথি প্রজাপতি! কবে উড়াল দিচ্ছেন ?

তিথি শোয়েবের দিকে তাঁকালো। তাঁকিয়ে স্বভাবিক ভাবেই বললো, — কাল! কাল সকালে।

— কখনও যদি এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাই তবে যাবো একবার আপনার কাছে। দেখবো ইউএস এর আকাশে প্রজাপতিরা কিভাবে উড়াউড়ি করে। যদিও সম্ভাবনা খুবই কম। বাবা সব করতে পারলেও আমাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলাতে পারবেন বলে মনে হয় না।

তিথি বিষন্ন ভাবে হাসলো । তবে কিছু বললো না।

শোয়েব নিজে থেকেই বললো,— আমি যাকে খুন করেছি। সে ছিলো আমার বোনের ধর্ষক আর হত্যাকারী। আপনি বললেন না। বড়লোক বাপের ছেলেমেদের বড় বড় অপরাধ ছোট মনে হয়। তাঁর টাও হয়েছিলো। তাই আরেক বড়লোক বাপের ছেলে, তাঁর ছোট ভুলের ছোট্ট একটা শাস্তি দিয়েছে। এই শাস্তির জন্য পরিণাম যাই হোক আমার কোন আফসোস নেই।

তিথি এবারো কিছু বললো না। শুধু নিষ্পলোক ভাবে তাঁকিয়ে রইলো। কি বলবে সে? এই পৃথিবীতে সব শাস্তি গুলো কি ভালো ভালো কিছু মানুষদের জন্যই?

শোয়েব একটা ডায়েরি তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিলো। তাঁর হাতেই ছিলো, সে খেয়াল করেনি। তিথি প্রশ্নবোধক ভাবে তাঁর দিকে চাইলো।

— আপনার মায়ের! আপনার মা এই বাসায় থেকে তাঁর কিছুই নিয়ে যায়নি। এই ছোট্ট ডায়েরিটাও না। এই ডায়েরিতে শুধু সে তাঁর ভালোবাসা, ভালোলাগার অনুভূতিগুলো গুলো লিখেছিলো। রেহনুমা আন্টি সব কিছুই আড়াল করেছিলেন। তবে সত্যিই কি পেরেছিলেন? এটা নোমানের কাছে ছিলো। অনেক আগে থেকেই ছিলো। এই ডায়েরিটা পড়েই সে জেনেছে কিভাবে একটা মানুষকে তাঁর সবকিছু উপেক্ষা করে তীব্র ভাবে ভালোবাসা যায়।

তিথি হাত বাড়িয়ে ডায়েরিটা নিলো। সে তাঁর মায়ের ভালোবাসার দিকটা কখনও জানতে পারেনি। সে শুধু দেখেছে, নিষ্প্রাণ একটা মানুষ কে। যে তাঁর মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য অবিরাম যুদ্ধ করছে।
সে ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে ধরলো। তাঁর মা! তাঁর মায়া মমতাময়ী মা। কি হতো তাঁর জীবন টা এমন না হলে।

সে চোখতুলে নোমানের বারান্দার দিকে তাঁকালো। সেখানে কেও নেই। শূণ্য বারান্দা! বাবা, মার কর্মফল সব ছেলে মেয়েদেরই ভোগ করতে হয় । সেটা ভালো হোক আর খারাপ।

শোয়েব টাওজারের পকেটে হাত রাখলো আর বিষন্নমাখা কন্ঠে বললো,— কখনও যদি চলার পথে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন অনুভব হয়। তখন এই ছেলেটার কথা একবার হলেও ভাববেন তিথি! সে আপনাকে ভালোবেসেছে! মাহবুব বা তাইয়্যেবার মেয়েকে নয়। সাধারণ একটা মেয়েকে। যে কিনা খুব অল্পতেই মুগ্ধ হয়।

তিথি দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে বললো,— আমি কখনও আর ফিরে আসবো না। কখনও না। কারো জন্যও না।

শোয়ের মাটির দিকে তাঁকালো আর প্রায় ফিসফিস করে বললো, — আমি জানি! আর এও জানি। আপনি না ফিরলেও একজন আপনার কাছে যাবে। সে তাঁর দেশ, পরিবার, এমনকি নিজের পরিচয়ও ছিন্ন করে যাবে। যাকে আপনি চাইলেও ফেরাতে পারবেন না।
____

তিথি দরজায় টোকা দিলো।
মাহবুব ইজিচেয়ারে শুয়ে ছিলো। সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,— এসো।
তিথি ভিতরে আসলো। তাঁর বাবার দিকে তাঁকালো। তিথির মনে হলো এই কয়েক দিনেই এই মানুষটার বয়স অনেকটাই বেড়ে গেছে।

মাহবুব উঠে বসলো! বসে বললো,— দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।

তিথি চুপচাপ তাঁর সামনে বসলো। তবে কিছু বললো না।

মাহবুব নিজে থেকেই বললো,— কাল তাহলে চলে যাচ্ছো?

— আপনি জানতেন?
— হ্যাঁ! যখন বললে ফরিদপুর। তখন একটু খোঁজ খবর করেছিলাম।

— আর কিছু জানেন নি ?

মাহবুব নিস্তেজ ভাবে তিথির দিকে তাঁকালো।

তিথির মনে হলো তাঁর সামনে বসা এই মানুষটার ভেতর ভেঙে চুরে যাচ্ছে। তবুও কি নিশ্চুপ! তিথি এখন বুঝলো সেও কেন এমন ।

তিথি তাঁর মায়ের ছবির দিকে তাঁকালো আর আপন মনেই বললো,— আমরা ভালো ছিলাম! সত্যিই ভালো ছিলাম। বাবার খামতি আমার সিধে সাদা মা কখনও বুঝতে দেইনি। এই দুনিয়াটা নিষ্ঠুর তাঁর চেয়েও বড় নিষ্ঠুর উপরে যে আছে। সে বেঁছে বেঁছে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বান্দাদেরই বেশি কষ্ট দেন। মার ক্যান্সার ধরা পড়লো। কি যে অসহনীয় যন্ত্রনা! আমি সহ্য করতে পারতাম না। দৌড়ে নিয়ে যেতাম কাছের এক সরকারি হাসপাতালে। তারাও কি করবে। দুদিন রেখে ফিরিয়ে দিতো। ক্যান্সারের চিকিৎসা করাবো, ভালো হসপিটালে যাবো টাকা কই? আমি দিশা পাই না।

ঠিক করলাম আপনার কাছে আসবো। আপনার কাছেতো টাকার অভাব নেই। অসহায় একটা মেয়ের মাকে না হয় ভিক্ষা হিসেবেই দিলেন। মা কিভাবে যেন বুঝে গেলেন। আমাকে টেনে পাশে বসিয়ে হাত ধরে কোমল সুরে বললেল, — “আমি তোর বাবার টাকায় বেঁচে থাকার চেয়ে বিনা চিকিৎসায় মরলেও শান্তি পাবো। তুই আমাকে এই শান্তি টুকু দিবি না মা? ”

তিথি বিষন্নভাবে হাসলো, হেসে বললো,— একটা মানুষ একটা মানুষকে কতোটুকু ঘৃণা করলে মৃত্যুর কষ্টকেও সুখ মনে হয় ? সেটা কি জানেন ?

তিথি ঘাড় ঘুরিয়ে মাহবুবের দিকে তাঁকালো। মাহবুব পাথরের মতো বসে আছে। তাঁর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।

তিথি চোখ ফিরিয়ে নিলো । আপন মনে আবার বললো,— তিন মাস অসহনীয় কষ্ট ভোগ করে মা মারা গেলেন। মা মারা যাওয়ায় আমি একটুও কাঁদলাম না, কষ্ট পেলাম না । মনে মনে বললাম, —যাক এবার একটু শান্তিতে ঘুমাক ।

মা মারা যাওয়ার পরে আমি হয়ে গেলাম এতিম। মা ছিলো যেমন আমি হয়ে গেলাম তেমন। ডানে বামে কেও নেই। কোন চিন্তাও নেই। তখন মনে হলো এ যে আমার মা। এতো সব থেকেও এই পৃথিবীতে কষ্ট করে গেলেন। অথচো যারা এর জন্য দায়ী তাঁরা সুখের সাগরে ভাসছে। তাঁদের ও তো একটু শাস্তি পাওয়া দরকার। তাঁদেরও জানা দরকার কষ্ট কি জিনিস।

মার পরিচিত এক স্যার ছিলেন। সে মার ব্যাপারে সবই জানতো। মা মারা যাওয়ার পরে সে এগিয়ে আসলেন। থাকতাম মার দূরস্পর্কের এক ভাইয়ের কাছে। আর লেখা পড়ার খরচ দিতেন সে ।

তিথি আবার হাসলো! অবজ্ঞার হাসি! হেসে বললো,— মাহবুব আহমেদ! বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুব আহমেদ। তাঁর একমাএ মেয়ে বেঁচে আছে মানুষের দয়ায়। ভাবা যায়?

যাক সেই স্যারই আমার জন্য সাহায্যের চুড়ান্ত করলেন। তাঁর এক পরিচিত প্রফেসর ছিলেন। যে কিনা প্রতি বছর কয়েকজন মেধাবী ছাএকে বিদেশে পাঠান। ফুল এইড দিয়ে। ফুল ফ্রি স্টুডেন্টশিপ উইথ এইড। শুধু লাগবে টিকিটের খরচ। সে কিভাবে যেন আমার জন্য সব ম্যানেজ করে ফেললেন। ডেটও পরে গেলো। তখন আমার মনে হলো। চলে যাবো।এই শহর, এই দেশ সব, সব ফেলে চলে যাবো । হয়তো এখানে ফিরে আসার দ্বিতীয় কোন কারণ থাকবে না। তাই যাওয়ার আগে হিসেবটা একটু মিটিয়ে যাই।

একজন এতো এতো অপরাধ করে সংসার, স্বামী, সন্তান নিতে শান্তিতে থাকবে আর আমি এমনিই চলে যাব? তা কি করে হয়। তাই যাওয়ার আগে একটু আগুন লাগিয়ে দিয়ে যাই। অন্তত আফসোস তো থাকবে না। তাই আসলাম। হিসেব মিটমাট করলাম।

মাহবুব চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো। তাঁর অস্তির লাগছে। যখন থেকে তাইয়্যেবার ব্যাপারে জেনেছে। তখন থেকে কি অসহনীয় যন্ত্রনা। এই যন্ত্রনার শেষ কোথায়?
সে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ঢোক গিলে বিষন্নভাবে বললো,—- আর আমার শাস্তি। সেটাতো বাকি রয়ে গেলো। তাইয়্যেবার সবচেয়ে বড় অপরাধী তো আমি।

তিথি হাসলো! হেসে উঠে দাঁড়ালো! দাঁড়িয়ে বললো, — নিজের মেয়ে নিজের বাবাকে, বাবা বলে না, এমনকি স্বীকারও করে না। মৃত্যুর সময় তাঁর লাশটাও দেখতে আসবে না। এর চেয়ে বড় শাস্তি কি হতে পারে মিষ্টার মাহবুব?

মাহবুব চমকে পেছন ফিরে তাঁকালো। তিথি তাঁকে বাবা বলে স্বীকার করে না। সে জানে! তবুও তাঁর মুখে নিজের নাম ছুরির মতো যেন বুকে আঘাত করলো।

সে করুণ চোখে তাঁর মেয়ের দিকে তাঁকালো । কি শান্ত আর মায়াবী একটা মুখ। এই মায়াবী মুখের মেয়েটাই কখনও খুব নরম আবার কখনও স্পাতের মতো কঠিন। তাঁর খুব ইচ্ছে হলো মেয়েটার মাথায় একটু স্নেহের হাত রাখতে। আর বলতে, ক্ষমা করতে হবে না। যা মন চায় শাস্তি দে। তবুও বাবার চোখের সামনে থাক।

তবে সাহস হলো না। কতো হতভাগা বাবা সে? হ্যাঁ এটাই তাঁর শাস্তি। তাইয়্যেবার দেওয়া নিরব শাস্তি। এই শাস্তি তাঁকে ভোগ করতে হবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

তিথি আর দাঁড়ালো না । সে বেড়িয়ে আসলো। তাঁর সব হিসেব শেষ।
____

তিথি বের হলো খুব ভোরে। ঠিকমতো আলোও ফোটেনি। তাঁকে শুধু বিদায় জানালো বৃদ্ধ মরিয়ম বানু। সে তিথিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো আর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শুধু বললো,— “ক্ষমা করিস দাদু ভাই। পারলে আমাদের ক্ষমা করিস।”

তিথির মধ্যে কোন ভাবান্তর হলো না। সে স্বাভাবিক ভাবেই রওনা দিলো। সে যখন রওনা দিলো তখন আকাশ থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তাঁর মার কাছে শুনেছে সেও এই বাসায় থেকে যখন বের হয়েছিলো তখনও নাকি বৃষ্টি ছিলো। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি! না! তাঁর মা বলতো ইলশেগুঁড়ি । তাঁকে বুকে চেপে এই রকমই ইলশেগুঁড়ি মাথায় নিয়ে তাঁর মা চলেছিলো এক অনশ্চিয়তার পথে। আজ সেও যাচ্ছে। সে জানে না সামনে কি আছে। তবে এটা জানে! সে তাইয়্যেবার মেয়ে। আর সব সংঙ্কটের মোকাবেলা সে করতে জানে।

গাড়ি চলতে চলতেই তিথি নিজের অজান্তেই একবার পেছনে ফিরে তাঁকালো। ভোরের আধো আলো আধো অন্ধকারে গোলাপী বাগান বিলাসের নিচে কেও একজন এসে দাঁড়িয়েছে। সে মুখ দেখতে পারলো না। তবে তাঁর হাতে থাকা অন্ধকারে জ্বল জ্বল করা সিগারেটরা ঠিকই দেখতে পেলো। আর যতোক্ষণ দেখা যায় সে তাঁকিয়েই রইলো ।

#সমাপ্ত