ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
6329

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৪

তোড়ার অবস্থা এখন পুরোই বেহাল দশা। তোড়া বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে রেয়ান্স এর স্পর্শে। সে এখনও আগের মত চোখ বন্ধ করে রেলিং এর ওপর হাত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। রেয়ান্স তোড়ার কাঁধের ওপর নিজের মুখ রেখে ছোটো ছোটো উষ্ণ স্পর্শে ভরিয়ে দিচ্ছে তোড়া কে। তোড়ার কেঁপে ওটা তাকে আরো নেশাগ্রস্ত বানিয়ে দিচ্ছে। তোড়ার কোমরে থাকা হাত টা আরো একটু শক্ত করে নিজের বুকের সাথে তোড়ার পিঠ আরো গভীর ভাবে মিশিয়ে নেয়। তোড়ার কাঁধের থেকে শার্ট নামিয়ে দিয়ে আলতো ভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করায়। তোড়া এতক্ষণ কিছুটা ঠিক থাকলেও এবার তার অবস্থা আরও করুন হতে থাকে। রেলিং এর ওপরে থেকে হাত ছুটে গিয়ে তার কোমরের ওপরে থাকা রেয়ান্স এর হাতের ওপর চেপে বসে যায়। সাথে আছে নিঃশ্বাস এর যুদ্ধ। তার মধ্যে এখন একটা আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। হ্যাঁ এটা প্রতিবারই হয় যখন রেয়ান্স তার কাছে আসে কিন্তু এবারের অনুভূতি টা যেনো আরো এক ধাপ বেশি গাড়। তোড়ার কাঁধ ঘাড় সংলগ্ন জায়গাতে রেয়ান্স এর ঠোঁটের স্পর্শের বৃষ্টি হতে থাকে।

তোড়া এই অনুভূতি আর নিতে না পেরে রেয়ান্স কে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ায়। রেয়ান্স কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। রেয়ান্স তোড়ার এমন করাতে মুচকি হেসে ফেলে। তোড়া কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। এক কোমরে রেখে অন্য হাত গালে রেখে মুখটা নিজের বুকের থেকে তুলে ধরে। তোড়া চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তার মুখের ওপর আছড়ে পড়ছে রেয়ান্স উষ্ণ নিঃশ্বাস। রেয়ান্স তোড়া কে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে তোড়ার কপালে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে গভীর এক ভালোবাসার ছোঁয়া দেয়। তোড়া চোখ খুলে দেখে তার মুখের সাথে লেগে রেয়ান্স এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে পায় রেয়ান্স এর চোখে মাদকতা তাকে ঘিরে। নেশাগ্রস্ত ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। রেয়ান্স তোড়া কে তাকাতে দেখে গালে থাকা হাত ঠোঁটের ওপর স্লাইড করতে থাকে। তোড়া কেঁপে উঠে রেয়ান্স বুকের কাছের শার্ট খামচে চোখ বুজে নেয়। সে ওই অবস্থায় বুঝতে পারে রেয়ান্স এর তার দিকে আগমন রেয়ান্স নিঃশ্বাস তার ওপর আছড়ে পড়তে পড়তে একে বারে মিশে যাচ্ছে তার মুখের সাথে। আলতো ভাবে স্পর্শ পায় রেয়ান্স এর ঠোঁটের ছোঁয়া তার ঠোঁটের ওপরে। ছোটো ছোটো স্পর্শ পায় তার ঠোঁটে। সেটা সময় নিয়ে আস্তে আস্তে গভীর হতে থাকে এক সময়ে তার ঠোঁট পুরো পুরি ভাবে রেয়ান্স এর দখলে চলে যায়। দুজন একে অপরের ঠোঁটে মেতে ওঠে। মিষ্টি স্পর্শ দেয়া নেওয়া করতে থাকে একে অপরের মাঝে।

প্রায় কুড়ি মিনিট পর সরে আসে একে অপরের ঠোঁট ছেড়ে। তোড়া রেয়ান্স এর বুকে মুখ গুঁজে রেখেই জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। রেয়ান্স এর ও একই অবস্থা তার ঠোঁটে ফুটে আছে অদ্ভূত এক ভালোলাগা হাসি। সে ও তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেই জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দুজনই স্বাভাবিক হয়ে আসতে রেয়ান্স তোড়া কে কোলে তুলে নিয়ে নিচে নেমে যায়। দুজন এর মুখে ফুটে আছে প্রশান্তির ছোঁয়া।

————-

-“রেয়ান্স তোমাকে কিছু বলার আছে। তোড়া কিছুটা আমতা আমতা করে বলে ওঠে।

-” তোড়া কি হয়েছে? কি বলতে চাও আমাকে? রেয়ান্স ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-“রেয়ান্স আসলে আমি বলতে চাইছি যে তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তো? তোড়া কিছুটা হিচখিচিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” তোড়া একটা সম্পর্কের সব থেকে মূল ভীত হচ্ছে বিশ্বাস। আর আমি আমাদের সম্পর্ক কে এমনি নেয় নি তাই আমি সম্পূর্ণ ভাবে তোমাকে বিশ্বাস করি। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” রেয়ান্স চোখের দেখা সব সময়ে সত্যি হয়না তার পিছে ও অনেক কিছু থাকে। তাই তুমি যদি আমাকে এমন কিছু করতে দেখো তাহলে কি তারপরে ও তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে। আমাকে ভুল বুঝবে না তো? তোড়া কিছুটা আটকে আটকে বলে ওঠে।

রেয়ান্স ভ্রু কুঁচকে তোড়ার দিকে তাকিয়ে দেখে তোড়া তার দিকে প্রশ্ন চোখে তাকিয়ে আছে। রেয়ান্স তোড়ার দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে তোড়ার কোমর ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের বুকের এনে ফেলে। তোড়া রেয়ান্স এর এমন করাতে কিছুটা চমকে যায়। রেয়ান্স তোড়ার মুখের ওপরে পড়া চুল গুলো কে আঙুল দিয়ে কানের পিছে গুঁজে দেয়। তোড়ার মুখের ওপর ফু দিয়ে কপালে একটা চুমু খায়।

-“ওয়াইফি আমি তোমাকে বিশ্বাস করি মন থেকে এই যে এখান থেকে ও। রেয়ান্স নিজের বুকের বাম পাশে ইশারা করে বলে ওঠে।

-” আমি জানি তুমি এমন কিছু করবে না কোনো কারো কারণ ছাড়া যাতে আমার বিশ্বাস ভেঙে যায়। আর তাছাড়া যদিও এমন কিছু হয় বা দেখি তাহলে ও আমি তোমাকে ভুল বুঝবো না। কারণ আমি জানি এর পিছে কোনো কারণ আছে। রেয়ান্স মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।

-” রেয়ান্স আমি সব সময়ই চেষ্টা করব তোমার বিশ্বাস বজায় রাখার আমি কখনও তোমার বিশ্বাস ভঙ্গ করবো না। আমি এমন কোনো কাজ করবো না যাতে আমার ওপর থেকে তোমার বিশ্বাস হারিয়ে যায়। তবে হ্যাঁ তুমি কখনো আমাকে ভুল বুঝোনা। যদি কিছু আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে নিও কিন্তু প্লিজ তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিও না আমাকে ভুল বুঝে। তোড়া কান্না ভেজা গলায় বলে ওঠে।

-“শশশশশ… ।আমি কখনো তোমাকে আমার থেকে দূরে করবো না ইনফ্যাক্ট তুমি চাইলে ও না। কোনো প্রশ্নই ওঠে না এই নিয়ে। তুমি তোমার কাজ করে যাও তবে হ্যাঁ একটা কথা সব সময়ে মনে রাখবে তুমি তোমার ইচ্ছা মত খেলতে পারো কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে কোনো কিছুর বিনিময়ে তোমার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। একটা সিম্পল আচড় এর দাগ ও আমি মেনে নেবো না। তুমি কোনও ভাবে নিজেকে হার্ট করতে পারবে না। যায় হোক না কেনো আমি তোমাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে সব কিছুর থেকে সুরক্ষিত করবো। রেয়ান্স তোড়ার মাথায় নিজের মাথা ঠেকিয়ে বলে ওঠে।

-“হুম মনে থাকবে আমার। আমি নিজেকে সুরক্ষিত রাখবো সব কিছুর থেকে। তোড়া মুচকি হেসে বলে ওঠে।

-” ওকে রেডি হয়ে নাও অফিসে বেরোতে হবে। তোমার ও তো স্টার গ্রুপ যেতে হবে। রেয়ান্স তোড়া কে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।

-“হুম । তোড়া চোখ বন্ধ করে রেয়ান্স এর বুকে মাথা রেখে বলে ওঠে।

রেয়ান্স তোড়া রাই শাহীন সকালেই লোনাওয়ালা থেকে মুম্বাই ফিরে এসেছে। তাসনীম দেওয়ান রেয়ান্স এর দাদু আর লেখা ওখানেই থেকে গেছে। মূলত এর কারণ রেয়ান্স তোড়া। তাদের এক সাথে থাকার জন্য তারা ওখানেই থেকে গেছে যাতে রেয়ান্স তোড়া নিজেদের মধ্যে কিছুটা সময় কাটাতে পারে। সমস্ত দূরত্ব কমিয়ে একে অপরের কাছে আসতে পারে তাই তারা বলে দিয়েছে তারা এখন এক মাস লোনাওয়ালা তে কাটাবে আর ওখানের সৌন্দর্য উপভোগ করবে। তাই এখন বাড়িতে শুধু রেয়ান্স তোড়া উপস্থিত।

————

স্টার গ্রুপ অফিসে অভি নিজের কেবিনে বসে আছে আর লোনাওয়ালার শুট এর সমস্ত রিপোর্ট নিচ্ছে রাই এর কাছে থেকে বেশির ভাগ তোড়ার ব্যাপার নিয়ে। আর রাই ও কৌশলে সব কিছু বলে যাচ্ছে প্ল্যান অনুযায়ী।

-“লিসেন রাই তুমি এরপর থেকে তোড়ার ব্যাপারে বড়ো ছোটো সমস্ত আপডেট আমাকে দেবে। অভি রাই কে বলে ওঠে।

-” ওকে স্যার। রাই বাঁকা হেসে বলে ওঠে যেটা অভি বুঝতে পারে না।

-“ওকে ।আর শোনো আজকে তোড়ার সমস্ত সিডিউল ফ্রি করে দাও। আর তোড়ার আমার সাথে আজ লাঞ্চ এর সিডিউল ফিক্সড করো। এটা ওর সাক্সেস এর জন্য স্টার গ্রুপ এর তরফ থেকে একটা ছোটো লাঞ্চ অফার। অভি বেশ অ্যাটিটিউড নিয়ে বলে ওঠে।

-” কিন্তু স্যার! রাই কিন্তু কিন্তু করে বলে ওঠে ।

-” কোনো কিন্তু নয়। আমি এই কোম্পানির
সি.ই.ও তাই আমি যা বলবো তাই হবে গট ইট। অভি রূঢ় ভাবে বলে ওঠে।

-“ইয়েস স্যার। রাই বলে ওঠে।

-” হুম এখন তুমি যেতে পারো। অভি বলে ওঠে।

রাই একবার অভির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বেরিয়ে যায়। আর অভি টেবিলের ওপর পা তুলে গালে হাত রেখে অদ্ভূত ভাবে হাসতে থাকে। সে তার চাল চেলে দিয়েছে এই ভাবে একটু একটু করে তোড়ার কাছে যাবে। আর তারপর তোড়া কে তার সাথে আবদ্ধ করবে যাতে কখনো তার থেকে ছুটে যেতে না পারে যখন ইচ্ছা যে ভাবে ইচ্ছা সে ভাবে সে তোড়া কে ব্যবহার করতে পারে। এই সব ভেবেই তার মুখে একটা শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে।

————–

মুম্বাই গ্লোবাল ফিউসন রেস্টুরেন্ট ভি আই পি কেবিনে সামনাসামনি হয়ে বসে আছে অভি ও তোড়া। অভি নিজের মত করে কথা বলে যাচ্ছে। আর তোড়া কোনো কথা না বলে নিজের ফোন নিয়ে দেখে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে অভি এর কথায় হু হা করছে। তোড়া কে এই মুহূর্তে দেখে মনে হচ্ছে ওবেডিয়ন্ট ভাবে সব কথা শুনে যাচ্ছে। ওদের কথার মাঝেই স্টাফ এসে ওদের খাবার সার্ভ করে দেয়। তোড়া এক হাতে ফোন ও অন্য হাতে খেতে শুরু করে আসলে সে রেয়ান্স এর সাথে ম্যাসেজে কথা বলছে। এদিকে অভি শুরু থেকেই তোড়া কে দেখে যাচ্ছে । যদিও দেখছে বললে ভুল হবে এক কথায় গিলে খাচ্ছে তার চোখ দিয়ে তোড়া কে। হটাৎ খেতে খেতেই এক হাত দিয়েই তোড়ার হাত চেপে ধরে। তোড়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে চোখ তুলে অভি এর দিকে তাকায়।

দুজনই প্ল্যান করেছে তবে সেটা যে একই পদ্ধতিতে তা কিন্তু নয় তারপরে ও সেটা জানা তো কথা নয় কারণ অভির প্ল্যান একটু একটু জানলেও তোড়ার প্ল্যান কি সেটা জানা নেই। এখন দেখার বিষয় কে কার প্ল্যানে সফল হয়। কে কার পাতা ফাঁদে পা দিতে চলেছে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৫

তোড়া কোনো কথা না বলে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আবারো নিজের খাবার খেতে থাকে। অভির যেনো হাতে চাঁদ পাওয়া ব্যাপার। তোড়ার ওই বাঁকা হাসি টা দেখে সে আরো যেনো একটু বেশি সাহস পেয়ে গেলো। এর আগে সে তোড়ার হাত ধরলে ছাড়িয়ে নিত কিন্তু আজকে তার দিকে তাকিয়ে হেসেছে এতেই সে মনে করছে সে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে প্ল্যান করতে।

তোড়া নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে আর হাতে থাকা ফোন নিয়ে ঘেঁটে যাচ্ছে। সে এখন নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেও তার ভিতরে মনে হচ্ছে যেনো একটা নোংরা পোকা যেনো তার হাতে বেয়ে বেড়াচ্ছে। তার মনে হচ্ছে যেনো তার হাতটা পুরো নোংরা হয়ে গেছে। তোড়া চুপচাপ নিজেকে শান্ত রেখে খেয়ে যাচ্ছে। তোড়া নিজের খাওয়া শেষ করে অভি এর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে একটা বাঁকা হাসে অভি এর দিকে তাকিয়ে। তার কাজ হয়ে গেছে এবার শুধু অপেক্ষার পালা।

অভি ও তোড়ার হাসি দেখে খুশি হয়ে যায় তার এটা মনে হতে থাকে তোড়া আসতে আসতে তার টোপ গিলছে। কিন্তু সে বুঝতে পারে না তার সাথে কি হতে যাচ্ছে। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই অভি ড্রপ করে দিতে চাইলেও তোড়া নাকচ করে দেয়। অভি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতেই পিছন দিকে থেকে তোড়ার কাঁধে কেউ হাত রাখে।

তোড়া পিছন তাকিয়ে দেখে রেয়ান্স দাঁড়িয়ে আছে মুখে মাস্ক চোখে সানগ্লাস পুরো মুখটা কভার করা আছে যাতে তাদের কেউ চিনতে না পারে। রেয়ান্স তোড়ার তাকানো দেখেই হাত দেখিয়ে ইশারায় ডান বোঝায়। তোড়া কোনো কথা না বলে মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার কাঁধ জড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে বসে। সামনে সিটে শাহীন ও রাই বসে আছে।

রেয়ান্স বসেই তার কাজ শুরু করে মানে তোড়ার হাত ক্লিন এর কাজ। রাই সামনের মিরর দিয়ে রেয়ান্স ও তোড়ার দিকে দেখতে থাকে। সে বুঝতে পারে তোড়া এত তাড়াতাড়ি কি করে রেয়ান্স এর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাই এর সামনে এখন কারণটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেখে তোড়ার মুখের হাসিটা কত সুন্দর লাগছে না আছে এতে কোনো অভিনয় এর খেলা এর আগে যখন তোড়ার সাথে অভির বিয়ে ঠিক হয়েছিল তখন দেখেছিল অভি এর সাথে থাকলে তোড়া নিজে কে কেমন একটা গুটিয়ে রাখত। মুখে সব সময়ে প্লাস্টিকের হাসি থাকতো। কিন্তু রেয়ান্স এর সাথে কত স্বাভাবিক আছে তার হাসির মধ্যে না আছে কোনো মলিনতা আর না আছে কোনো জড়তার ভাব।

—————

তানিয়ার নিউজ এখন টপ ট্রেন্ডিং চলছে। এটা নিয়ে মিডিয়া পাবলিক কোনো নতুন খবর বানাতে বাদ রাখিনি আর বাকি কাজ তো পাবলিক করে দিয়েছে তানিয়ার বিরুদ্ধে নানা মত পোষণ করে। আর এই সব কিছুর মাঝে তানিয়ার লেভেল ডাউন হচ্ছে আর সেই সাথে তোড়ার আপ হচ্ছে স্টার গ্রুপ কোম্পানিতে। তানিয়ার আর অভি দুজন দুজন কে যে ভালোবাসে সেটা কতটা ঠিক আর কতটা ভুল সেটা ওরাই ঠিক বলতে পারবে তবে দুজন যে দুজন কে নিজেদের ব্যবহার করতে কখনোই পিছপা হয় না। তবে এটা নিজেরাই বুঝতে পারে না সে ব্যবহার হচ্ছে না করছে।

এরই মধ্যে হঠাৎ করেই একটা নিউজ সামনে চলে আসে “স্টার গ্রুপ এর সি.ই.ও এর নতুন গোপন সম্পর্ক” তার সাথে রেস্টুরেন্ট এর কিছু ছবি যেখানে অভি এর মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আর দেখা যাচ্ছে অভি একজনের হাত ধরে আছে যাকে পুরো পুরো ভাবে দেখা যাচ্ছে না শুধু তার এক সাইট তাও ভালো ভাবে না পুরোটা চুলে ঢাকা আছে। তবে যে দুজন দুজনের হাতে হাত রেখে খাবার খাচ্ছে আর তার সাথে দেখা যাচ্ছে অভির মুখের হাসি। এখন এটাই প্রমাণ করে অভি নিজের ডেট এর সাথে লাঞ্চ করছে।

এই নিউজ সামনে আসতে পাবলিক নানা ধরণের কোথায় বলতে আছে তার সাথে তানিয়া কে জুড়ে ও কথা হচ্ছে যেহেতু তানিয়া কে কয়েক দিন আগে পর্যন্ত ও অভি এর সাথে দেখা গেছে। আর এখন আবার অভি অন্য কোনো মেয়ের সাথে। এর সাথে সাথে তাথই এর কথা ও উঠে আসছে।

“মিস্টার অভি আহুজা স্টার গ্রুপ এর সি.ই.ও কে নিয়ে এর আগেও খবর পাওয়া গেছিলো মিস তাথই মানান কে জড়িয়ে মিস তাথই এর সাথে অভি এর এনগেজমেন্ট হওয়ার পরও শোনা গেছে মিস তাথই অভি কে নিয়ে ইনসিকিওরিটিতে
থাকতো ইনফ্যাক্ট অন্য মেয়েদের নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা ও হয়েছিলো। এই খবর মিস তাথই এর মৃত্যুর পরের দিন তার বোন তানিয়ার থেকে শোনা গেছে সেখানে মিস্টার অভি ও ছিলেন। আর তার কিছুদিন পর থেকেই মিস তানিয়া কে অভি এর সাথে দেখা গেছে ঘনিষ্ট অবস্থায় আর এখন অন্য কোনো মেয়ের সাথে। সব খবর দেখে বলা যেতে পারে মিস্টার অভির এই রকম কয়েক জনের সাথে তার সম্পর্ক আছে। ”

এই রকম নানা ধরণের নিউজ ট্রেন্ড করছে। আর এর সাথেই আবারো ধামা চাপা পড়া তাথই এর খবর ও উঠে আসছে। এতদিন তাথই এর খবর বন্ধ থাকলেও এবার আবারো তাদের মধ্যে কার ঘটনা খোঁজার জন্য সব উঠে পড়ে লেগেছে তার পিছনের মৃত্যু রহস্য এখন সবার কাছে প্ল্যান মাফিক মৃত্যু বলে মনে হচ্ছে তার থেকে বড় হল সবার এখন মনে হতে লেগেছে তাথই এর মৃত্যুর পিছনে অভির হাত থাকতে পারে। পুরো দেশে এখন এই খবর নিয়ে সরগোল পড়ে গেছে

-” তাথই এর মৃত্যুর পিছনে নিশ্চয়ই এই অভির হাত আছে।

-” অভি আমার মনে হয় একটা নপুংসক তাই জন্য নানা ধরণের মেয়েদের খেলে বেড়াচ্ছে।

-“ওকে তো লাথি মেরে স্টার অকেশন গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।

-” অভির মত ছেলেদের জন্য আজকে দেশে কোনো ফেয়ার ট্যালেন্ট নেই সব কিছুই নিজেদের ভোগ বস্তু বানিয়ে নিয়েছে।

-” অভির জন্য তানিয়ার মত মেয়েই ঠিক আছে দুজনই সমান সমান দুজনের চরিত্র খারাপ।

-” এর আগে তানিয়ার সাথে দাঁড়িয়ে তাথই এর বিরুদ্ধে বলেছিলো সে ইনসিকিওরিটি ফিল করে এখন মনে হয় কথা টা ঠিকই ছিল কারণ অভির আসল চেহারা সবার সামনে চলে এসেছে। কে বলতে পারে এই চেহারা আগেই তাথই দেখে ফেলে ছিল তাই হয়তো তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

-“হ্যাঁ এটা হতে পারে যে অভি তার নিজের কালো কাজ লুকিয়ে রাখার জন্য তাথই কে মেরে ফেলেছে। কে বলতে হয়তো এর থেকেও আরো কিছু বড় আছে।

-” আমরা এর বিচার চাই তাথই এর মৃত্যুর রহস্য জানতে চাই।

-“আমরা তাথই এর মৃত্যুর রহস্য জানতে চাই

-” আমরা জাস্টিস চাই তাথই এর জন্য শাস্তি চাই তাথই এর মৃত্যুর খুনিদের।

নিউজ চ্যানেল ও সোস্যাল মিডিয়ায় এই নানা ধরনের কমেন্ট আসতে শুরু করেছে পাবলিক এর। সবাই অভির নিউজ সামনে আসতেই তারা পুরো ভাবে খেপে উঠেছে সাথে পুরোনো খবর টেনে হিচড়ে সামনে আনছে। সেই সাথে আবারো তাথই মৃত্যু রহস্য সামনে চলে এসেছে তাথই এর আগের ছবি। তার সাথে অভি আর তানিয়ার সাথে ওই রাতের পার্টির দিনের ছবি একসাথে নিউজে দেখা যাচ্ছে। সাথে ওই দিনের ওই বিল্ডিং থেকে পড়ার ভিডিও ও। অভির এই একটা খবর ভূমিকম্প ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো দেশ জুড়ে। এবার সাথে উঠে এসেছে তাথই তানিয়ার আর অভির নিউজ।

এহসান মানান নিজের মেয়ের এমন নিউজ আবারো ট্রেন্ড করতে দেখে আর তার সাথে চলতে থাকা সব খবর দেখে তিনি নিজেই এবার এর পিছনে থাকা রহস্য ভেদ করার জন্য পুলিশ লাগিয়েছে আবারো নতুন করে তাথই এর কেস ইনভেস্টিকেট শুরু করিয়েছে। তিনি যেহেতু একজন স্টেট মিনিষ্টার তাই তার অর্ডার কাজ জোরে সরে শুরু হয়েছে। এর আগে যদি এই ব্যাপারে একটু গভীরে ভাবতো তাহলে আগেই সব কিছু রহস্য এর জাল ছিড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতো।

এই খবরে সব থেকে বেশি যার ওপরে এফেক্ট পড়েছে সে হল তানিয়া তার অবস্থা এখন পুরোই চিড়ে চ্যাপ্টা । সে কি করবে বুঝতে পারছে না কারণ তাথই এর মৃত্যু রহস্য আবারো উঠে এসেছে সামনে এবার যদি কড়াকড়ি ভাবে ইনভেস্টিকেট হয় তাহলে তো তানিয়ার সব বোল খুলে যাবে। এর সাথে সাথেই সে অভির এই নিউজ দেখে প্রচণ্ড পরিমাণে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। না অভির নিউজ সামনে আসতো আর না আবারো তাথই কে নিয়ে কথা উঠতো। আর এবার তো তার ড্যাড এই কাজের পিছনে আছে সে কি করে বাঁচবে।

—————-

স্টার গ্রুপ কোম্পানিতে চিত্র টা কিছুটা উলা ঝুলা হয়ে আছে। স্টাফ দের মধ্যে ও নানা ধরণের কথা হচ্ছে। আর অভি নিজের কেবিনের এক কোনায় চুপ করে বসে আছে। কয়েকদিন আগেই যেমন ভাবে ঘোরের কোণে তানিয়া বসে ছিল আজ তেমনই অবস্থা হয়েছে অভির। এদিকে তানিয়া ও হন্তদন্ত হয়ে অভির কেবিনে ঢুকে আসে। ভিতরে এসেই অভি কে বসা থেকে টেনে তুলে গালে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। আজ যেনো সে তার ভিতরে জমে থাকা সব রাগ ঝাড়ছে অভির ওপরে। এর আগের দিন তার ওপর চোটপাট নিয়েছে আর আজ তার সময় এসেছে তাই দ্বিগুণ হারে উসুল করে নিচ্ছে। অভি এখনও হতভম্বের মত তানিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তানিয়া তার হাতে থাকা নিউজ ম্যাগাজিন নিয়ে অভির মুখের ওপর ছুড়ে মারে।

-“কে ছিল এই মেয়েটা হ্যাঁ? কার সাথে ছিলে তুমি অভি? তুমি আমার পিঠ পিছে এইসব করছো? তানিয়া চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” আমাকে তো আগের দিন বলেছিলে যে আমার কার সাথে সম্পর্ক আছে আজ তুমি বলো এগুলো কি হ্যাঁ?অভির কলার টেনে ধরে বলে ওঠে।

-” আজ তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য আবারো আমার নাম নিউজে চলে এসেছে সাথে তাথই এর খবর ও।

-“তোমার লজ্জা করেনা আমার সাথে সম্পর্কে থেকে আমার বোন কে ডাম্প করে আবারও সেই চিন্তা আমাকে নিয়ে করছো। তানিয়া চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“আমার সাথে খেলছো অভি তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমি তাথই নয় আমি তানিয়া। তাই এত সহজে আমার হাত থেকে তুমি ছাড়া পাবে না। আর আমাকে ডাম্প করার চিন্তা করলে আমি তোমাকে নির্মূলে শেষ করে দেবো একটু ও ছিটেফোটা বাঁচিয়ে রাখবো না। টেবিলে থাকা সমস্ত কিছু ফেলে দিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলে ওঠে তানিয়া।

-“তানিয়া সুইটহার্ট এই সব কিছু মিথ্যা। তুমি জানো তো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। তোমার জন্য আমি তাথই কে ছেড়েছি। তোমাকে আমার কোম্পানির টপ মডেল হিসেবে রেখেছি তোমার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ডেবিউ করার জন্য ও তাথই কে আমরা বেঁচে দিয়েছিলাম এক রাতের জন্য। এর পরেও বলবে আমি তোমাকে ভালোবাসি না। অভি তানিয়ার কাছে এসে বলে ওঠে।

-“তাহলে ওই মেয়ে কে ছিল অভি যাকে নিয়ে তুমি রেস্টুরেন্টে ছিলে? কে ছিল? তানিয়া আবারো চিৎকার বলে ওঠে।

-” তানিয়া বেবি তুমি তো জানো আমি কাজের জন্য কথা বলি এদের সাথে তাছাড়া আর কিছুনা ট্রাস্ট মি বেবি তুমি তো জানো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি আর কাউকে না। অভি তার মন ভুলানো কথায় বলে ওঠে।

-” অভি তুমি বুঝতে পারছো একবার যদি তাথই এর খবর উঠে আসে তাহলে কি হবে যদি ইনভেস্টিকেট করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আমরা তার সাথে কি করেছি ও কিভাবে মারা গেছে। তানিয়া চিন্তিত হয়ে বলে ওঠে।

-” আরে বাবা আমরা তো ওই হোটেল রেকর্ড থেকে আমাদের নাম সরিয়ে দিয়েছি তাহলে কি করে পাবে। এই নিয়ে চিন্তা নেই। অভি স্বাভাবিক ভাবে বলে ওঠে।

-” আমাদের নাম সরিয়ে দিলেও ওখানের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে যদি কিছু পেয়ে যায় ওদের কাছে যদি এর কিছু ব্যাক আপ থেকে থাকে তাহলে তো বেরিয়ে আসবে তাথই এর মৃত্যু কি ভাবে হয়েছে। কি হবে তখন আমি তো ফেসে যাবো। তানিয়া রুমের মধ্যে পায়চারি করতে করতে আনমনে বলে ওঠে।

-” মানে কি বলতে চাইছো তুমি ফেসে যাবে মানে? তুমি এর মধ্যে কোথায় থেকে আসলে? আর তাথই এর মৃত্যুর কারণ মানে তুমি কি করে জানবে? অভি অবাক হয়ে বলে ওঠে।

অভির কথা শুনে তানিয়া থতমত খেয়ে যায় সে বুঝতে পারে সে তার টেনশন এর মাঝে ভুল কিছু বলে ফেলেছে যেটা বলা একদম উচিত ছিল না। এখন কি বলে ম্যানেজ করবে। এইসব ভেবেই ভয়ে ভয়ে তাকায় অভির দিকে তানিয়া। অভি তানিয়ার এই ভীতু চেহারা দেখেই অবকাশ হয়ে যায় তার ভ্রু কুঁচকে আসে।

-“তানিয়া এমন নয়তো যে তুমি তাথই এর মৃত্যু রহস্য জানো। ওর কিভাবে মৃত্যু হয়েছে সেটা তুমি জানো। অভি ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” ওয়েট ওয়েট তানিয়া তুমিই তাথই এর মৃত্যুর কারণ নয়তো। অভি বলে ওঠে।

-“ক…কি সব বলে যাচ্ছো অভি । আমি কি করে জানবো ।আর আমি কি করে তাথই এর মৃত্যুর কারণ হবো। তানিয়া বলে ওঠে।

-“তাহলে ফেসে যাওয়ার কথা বললে কেনো? অভি ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” আরে বাবা আমি তো সেই দিন তোমার সাথেই ওখান থেকে চলে গেছিলাম। আর ফেসে যাওয়ার কথা বলতে ওই দিন রুমে যা যা হয়েছে যদি তার কিছু ব্যাক আপ থাকে তাই বললাম। তানিয়া আমতা আমতা করে বলে ওঠে।

-“ওহ আচ্ছা । তুমি চিন্তা করোনা ওই সব কিছু কন্ট্রোলে আছে অভি বলে ওঠে।

এদিকে তানিয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। অভি যে তাকে সন্দেহ করেনি এতে সে একটু নিশ্চিত হয়েছে। তাথই এর মৃত্যুর রহস্য শুধু মাত্র তানিয়া জানে আর কেউ নয় সে কোনো প্রুফ রাখেনি। হোটেল থেকে সমস্ত রেকর্ড সরিয়ে দিয়েছে কিন্তু যদি কোনো ব্যাক আপ থেকে থাকে এটাই নিয়ে তার চিন্তা কিন্তু আগে তাকে এইসব গুলো দেখে নিতে যাতে তাকে কেউ না ধরতে পারে। এটা ভেবেই মনে মনে একটু শান্তি পায়।

এতক্ষণ কেউ রুমের ভিতরে দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছিল আর ক্যামেরা বন্দি করছিলো। ওদের সমস্ত কথা রেকর্ড করার পর মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে।

-“এবার তো হবে আসল খেলা এখন আমার কাছে প্রুফ ও আছে আর চাল ও দেখা যাক শেষ হাসি টা কে হাসে।…… বলেও ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৬

আলো আধারি বারান্দার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে তোড়া। দৃষ্টি তার সামনের দিকে। রুম এর থেকে হালকা আলো এসে বারান্দায় পড়েছে। আর সাথে আছে বাইরের চাঁদ এর আলো। মৃদু বাতাসে তোড়ার চুল গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে। কিছু খুচরো চুল মুখের ওপর এসে পড়ছে। তবু ও তোড়া শান্ত হয়ে প্রকৃতি সৌন্দর্য অনুভব করতে মগ্ন হয়ে আছে। তার মুখ জুড়ে রয়েছে কিছু টা প্রশান্তির ছোঁয়া।

রেয়ান্স রুমে ঢুকতেই দেখে ড্রিম লাইট জালানো তার জন্য রুম কিছুটা অন্ধকার হয়ে আছে তবে এই আলোতে ও মায়ার সৃষ্টি হয়ে আছে। রুম এর কোথাও তোড়া কে না পেয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে তোড়া দাঁড়িয়ে আছে। রেয়ান্স জানতো এই সময় তোড়া কোথায় যেতে পারে এক রুমের বারান্দা নয় ছাদে দাঁড়িয়ে অন্ধকার উপভোগ করবে। রেয়ান্স এক পলক দেখে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অফিসে থেকে এই মাত্র ফিরেছে সে। তাই আগে ফ্রেশ হবে তার পর তোড়ার কাছে যাবে।

তোড়া রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে আছে ।মৃদু হাওয়া তার সারা শরীরে ছুয়ে যাচ্ছে । সাথে তার চুল গুলো ও এলোমেলো করে দিচ্ছে তাতে একটু ও বিরক্ত লাগছে না তার। বরং এই মুহুর্ত টা সে উপভোগ করছে হওয়ার সাথে তার চুলের খেলা। দূরের রাস্তায় স্ট্রিট লাইট এর আলো আর সাথে বড় বড় বিল্ডিং থেকে টিম টিমে আলো ভেসে আসছে । না আছে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির ঝনজাট না আছে কোনো শোরগোল। তাই তোড়া মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে এই সময়ে নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছে।

হঠাৎ করেই পেটে শীতল স্পর্শ পেতেই কেঁপে ওঠে তোড়া। ভেজা হাত তার পেটে চেপে বসেছে। কাঁধের ওপর ও টুপ টুপ করে শীতল তরল পড়ছে। তার সাথে আছে উষ্ণ নিঃশ্বাস যা আছড়ে পড়ছে তার কাঁধ ঘাড় সংলগ্ন জায়গায়। তোড়া এতক্ষণ মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে থাকলেও তার মধ্যে হঠাৎ করেই এই স্পর্শ তার পুরো শরীর কে কাঁপিয়ে দিয়েছে। সারা শরীর এর মধ্যে ঠান্ডা শিহরন বয়ে যায়। সে জানে এই স্পর্শের মালিক কে হতে পারে। এতদিনে সে রেয়ান্স এর স্পর্শ তার নিঃশ্বাস সব কিছুই অনুভব করতে পারে। তার কাছাকাছি থাকলে তোড়া টের পেয়ে যায় রেয়ান্স এর উপস্থিতি।

রেয়ান্স তোড়ার পেটে নিজের ভিজে থাকা হাত আলতো করে স্লাইড করতে থাকে। তোড়া কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে পিছন থেকেই তোড়ার কাঁধে থুতনি রেখে তোড়ার মুখের দিকে চেয়ে আছে মুগ্ধ হয়ে। এই আলো আধারিতে তোড়া কে মায়াবী লাগছে । তোড়ার বন্ধ চোখ। তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট জোড়া। তাকে মাতাল করে দিচ্ছে হাওয়ার জন্য তোড়ার চুল এলোমেলো হয়ে এসে মুখে আছড়ে পড়ছে তার জন্য বারে বারে মুখ ঢেকে যাচ্ছে এতে যেনো হওয়ার আর চুলের সাথে রেয়ান্স এর যুদ্ধ বেঁধে যায় যায় অবস্থা রেয়ান্স মুখ দেখবে আর হওয়া আর চুল দেখতে দেবে না। এতে রেয়ান্স এর মুখে বিরক্তিকর ভাব দেখা যাচ্ছ। রেয়ান্স বিরক্ত হয়ে অন্য হাত দিয়ে তোড়ার চুল গুলো নিয়ে কানের পিছে দিয়ে দেয়।

-“আর একবার যদি আমাকে আমার জান কে দেখতে বিরক্ত করিস তাহলে খবর আছে তোর। রেয়ান্স বিড়বিড় করে বলে ওঠে।

তোড়ার কাঁধে থুতনি রাখা তে রেয়ান্স এর সব কথা শুনতে পায় তোড়া। সাথে সাথে অবাক ও কেউ চুলের সাথেই ও ঝগড়া করতে পারে চুল কে নিয়েও এই মানুষটার হিংসা আবার এই চুলে সে মুখ ডুবিয়ে দেয় নেশাগ্রস্ত হয়ে। এটা ভেবেই তোড়ার মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। রেয়ান্স তোড়া কে হাসতে দেখে বুঝতে পারে তার সব কথা শুনে ফেলেছে। এটা দেখেই তার মুখে ও হাসি ফুটে ওঠে।

-“রেয়ান্স আমি ভিজে যাচ্ছি। তোমার চুল দিয়ে পানি পড়ছে। তোড়া বলে ওঠে।

-” তোমাকে ভেজানোর জন্য তো চুল মুছিনি। রেয়ান্স নেশা ভরা আওয়াজে বলে ওঠে।

-“মানে? কেনো? তোড়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে?

-” এখন তো লটারি লাগেনি তাই আমি তোমাকে আমার চুলের পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছি। লটারি লাগলে তখন আর চুলের পানি দিয়ে নয় আমার আদর দিয়ে ভিজিয়ে দেবো। রেয়ান্স দুষ্টু হেসে ফিসফিস করে বলে ওঠে।

-“অসভ্য বিড়াল চোখওয়ালা। তোড়া বিড়বিড় করে বলে ওঠেন।

রেয়ান্স এর কথা শুনে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে গাল দুটো ও লাল হয়ে গেছে। রেয়ান্স এর দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। না এই বিড়াল চোখ ওয়ালা তাকে আর কি কি বলে লজ্জা দেবে ঠিক নেই। তবু ও যে সে অন্য দিকে তাকিয়ে বেঁচে যাবে এটা ভাবা ও ভুল। রেয়ান্স তোড়ার এই অবস্থা দেখে মিট মিট করে হাসছে। হটাৎ করেই রেয়ান্স তোড়ার লাল হয়ে যাওয়া গালে একটা গভীর চুমু খায় আর এতেই তোড়া কেঁপে উঠে তার পেটের ওপরে থাকা রেয়ান্স এর হাত খামচি দিয়ে ধরে।

-“কাল তোমার অ্যাট শুট রিলিজ হবে। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” জানি।

-“আমি তো অপেক্ষায় আছি কখন তোমায় দেখব আবারো ওই লুকে। রেয়ান্স তোড়ার কাঁধে ঠোঁট দিয়ে স্লাইড করতে বলে ওঠে।

-” এমন…কেনো । তোড়া মিন মিন করে বলে ওঠে।

-“হুস হারানোর জন্য নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার জন্য। রেয়ান্স নেশা ভরা কন্ঠে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এই কথা গুলো তোড়ার মধ্যে এক অন্য রকম শিহরন জাগিয়ে দেয়। রেয়ান্স এর ভালোবাসা মাখা কথা গুলো একদম তাকে নাড়িয়ে দেয়। তোড়া কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে আর রেয়ান্স এর প্রতি টা কথা আর স্পর্শ গুলো অনুভব করতে থাকে।

-“উফ তোমার ওই লুক আমাকে ঘায়েল করে দিয়েছে। এমনিতেই আমি সব সময়ে তোমার মধ্যে ডুবে থাকি আর তোমার ওই লুক তো আমাকে শেষ করে দিচ্ছে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে। রেয়ান্স অনবরত তোড়ার কাঁধে ঠোঁট দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে।

তোড়া রেয়ান্স এমন করাতে কেঁপে কেঁপে উঠছে হাতের চাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে রেয়ান্স এর হাতের ওপর। সে যেনো মরে যাচ্ছে তার ভিতরে কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না তার শুধু মনে হচ্ছে সে সুখের সাগরে ভেসে যাচ্ছে। এই সুখের রাজ্যে পাড়ি জমিয়ে সে মরে যাবে। রেয়ান্স এই ছোট্ট ছোট্ট স্পর্শ গুলো তাকে মেরে ফেলে ভালো লাগার অনুভূতির সাথে জড়িয়ে।

—————

স্টার গ্রুপ কোম্পানীর অবস্থা আসতে আসতে অবনতির দিকে যাচ্ছে। অভি এই ব্যাপার টা যতো টা সহজ ভেবে ছিল ততটা সহজ তো নয় তার থেকেও আরো বেশি জটিল হয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি। অভি এখন কি করবে কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না। তার এখন নৌকা ডুবি অবস্থা। কোম্পানী সব শেয়ার হোল্ডারসরা নিজেদের শেয়ার ফিরিয়ে নিতে চায় আর নাহলে অভি কে সি.ই.ও এর পদে থেকে সরে যেতে হবে। কিন্তু অভি তো এই পদে থেকে সরে যাবে না তাই সবাই তাদের শেয়ার ফিরিয়ে নিচ্ছে। কোম্পানির সাথে বাকি যে কোম্পানি গুলোর কন্ট্রাক্টড সাইন ছিল সবাই ক্যানসেল করে দিচ্ছে। কোম্পানির বাকি মডেল গুলো ও নিজেদের কন্ট্রাক্টড ক্যানসেল করিয়ে অন্য কোম্পানিতে জয়েন করে নিচ্ছে। তারা যদিও একটা সুযোগ পেয়েছে কোম্পানী ছেড়ে কোনো রকম ফাইন না দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারছে নিজেদের কন্ট্রাক্টড ক্যানসেল করে। এই স্টার গ্রুপ কোম্পানিতে সব রকমের সুযোগ সুবিধা তানিয়া কে দেয়া হতো। তাদের সাথে নামেই ছিল এই কোম্পানীর নাম কিন্তু কাজে ছিল না তাই আগে ক্যানসেল করতে গেলে ফাইন দিতে হতো আর এখন সেটা নেই তাই সবাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিয়েছে। আর এতেই কোম্পানির শেয়ার নামতে নামতে শেষ হতে শুরু করেছে।

এদিকে তানিয়ার অবস্থা ও কিছুটা করুন হয়ে আছে। বাড়িতেও এখন আর তেমন একটা হাঙ্গামা করেনা। কারণ তার ড্যাড এখন উঠে পড়ে লেগেছে তাথই এর মৃত্যু রহস্য জানার জন্য। আর যেখান থেকে এই খবর বেরিয়েছে সেখান থেকেই এই মানান বাড়িতে তাথই এর দাদু আর তার মা আবারো জলে উঠেছে তাদের আবেগ নিয়ে। তারা তাদের মেয়ে কে হারিয়েছে তাই তার মৃত্যুর কারণ যায় হোক না কেনো তারা জেনে ছাড়বে আর নিজের মেয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ ও নেবে।

এই সব কিছুর মাঝেই চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে আছে অভি ও তানিয়া। তানিয়া বাইরের আর নিজের বাড়ির পরিবেশ দেখে তার মাথায় রাগ চাড়া দিয়ে উঠছে। না অভি ওই রকম কোনও খবরে ফেসে যেতো আর না আবারো তাথই এর খবর উঠে আসতো। আর এই সব কিছুর জন্য সব রাগ গিয়ে পড়ছে অভির ওপরে। তার সাথে ও টেনশন এর কম নেই যদি সে ধরা পড়ে যায়।

তানিয়া নিজের রুমে পায়চারি করছে আর ভিতর ভিতর ছটফট করছে কি করে নিজেকে বাঁচাবে ভেবেই।

-“উফ এই অভি টা সব কিছু পণ্ড করে দিলো। ওর জন্য সব কিছু আবারো জল ঘোলা হয়ে গেলো। এখন না আমার নাম উঠে আসে…। বিড়বিড় করে নিজের মনে বলে ওঠে।

হঠাৎ নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে তার মাথায় কিছু শয়তানি বুদ্ধি চলে আসে। তার এতক্ষণে থাকা সমস্ত চিন্তা নিজের মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলে।

-“অভি সব কিছু পণ্ড করেছে নিউজ এ সব জায়গায় তাথই এর মৃত্যু রহস্য এর পিছনে অভির নাম। তাহলে আমি কোথায়। বলেই জোরে জোরে হেসে ওঠে তানিয়া

-” ইয়েস আমি কোথাও নেই সব কিছু অভি করেছে। আমি তো কিছু জানি না। তানিয়া ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে ওঠে।

-“সরি অভি বেবি । আমার কিছু করার নেই। তুমি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছো। আমি তো কিছুই করিনি যা করার তুমি করেছো তাই এর ফল আমি না তুমি ভোগ করবে। আমি তো শুধু এই জ্বলতে থাকা আগুন এর মধ্যে আরো একটু খানি ঘি ঢেলে দেবো যাতে আগুন টা আরো ভালো করে জ্বলতে পারে। বলেই ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে তানিয়া।

-“অভি বেবি আব তো তুম গ্যায়ী কামসে।
.
.
.
.❤️❤️❤️
. চলবে……

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।