ইস্ক সুফিয়ানা পর্ব-১০ এবং বোনাস পর্ব

0
354

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ১০
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

ওনার কথাগুলো কানে পৌঁছাতেই পা থেমে গেলো আমার, উনি আমার পছন্দের খোঁজ রেখেছেন, তারমানে আমিও ওনার জন্যে স্পেশাল কেউ? হৃদকম্পন টা যেনো আগের তুলনায় একটু বৃদ্ধি পেলো আমার, মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোণে

“দাড়িয়ে গেলে কেনো রুহি?”

উনি আমার পেছন পেছন হাঁটছিলেন, তো ঘুরে তাকালাম ওনার দিকে..ফুলগুলো আলতো করে ছুঁয়েই প্রশ্ন করে উঠলাম

“আপনি আমার পছন্দের ফুল এনেছেন, আমার পছন্দের খোঁজ রাখেন আপনি আগেও হয়তো দু একবার এই কথাটা বলেছেন, তারমানে আমিও স্পেশাল আপনার জন্যে?”

উনি চোখজোড়া ছোটো ছোটো করে আমাকে দেখে বাকা হাসলেন, অধীর আগ্রহে ওনার দিকে চেয়ে আছি আমি..কোনোদিন কারো থেকে কিছু আশা করিনি, কিন্তু আজ যে জানার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে আমার.. উনি যে “স্পেশাল” শব্দটার প্রয়োগ করলেন সেটা কি আমার জন্যে ছিলো?

“তুমি কিছু খাবে রুহি?? চলো কিছু খাওয়া যাক..অনেকক্ষণ ধরে এখানে আছো, খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই!”

“নাহ, আমার খিদে পায়নি”

“খিদে পায়নি বললেই হবে? চলো আগে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক তারপর কথা বলা যাবে”

“আমার কিছু চাই না স্যার, এই মুহূর্তে শুধু নিজের প্রশ্নের জবাব শুনতে চাই আপনার কাছে”

আমার ব্যাকুলতা বুঝেছেন উনি, তবুও উত্তর দিচ্ছেন না..আমি আগ্রহভরে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে..দু হাত পকেটে গুজে এদিক ওদিক তাকিয়ে উনি বলে উঠলেন

“আজকের ওয়েদার টা সুন্দর ছিলো তাইনা? বেশি ঠান্ডা ছিলো না”

আমি এবার কিছুটা উত্তেজিত হয়েই বলে ফেললাম

“এভাবে কথা ঘোরাবেন না প্লিজ, প্রশ্নের উত্তরটা দিন না আরমান স্যার, আমি কি সত্যিই স্পেশাল আপনার জন্যে?”

“হোয়াট ডু ইউ থিংক?”

“আমি জানিনা, শব্দের প্রয়োগ তো আপনি করলেন, কার জন্যে আর কেনো করলেন সেটা এবার না হয় আপনিই বলে দিন”

ভ্রু কুচকে ফেললেন উনি, আমাকে এতটা উদগ্রীব আজ অব্দি কোনো বিষয়ে দেখেননি উনি তাই হয়তো অবাক হয়েছেন

“কি ব্যাপার বলোতো! এত্তো আগ্রহ নিয়ে তোমাকে আগে কোনোদিন দেখিনি আমাকে কোনো প্রশ্ন করতে, আজ হঠাৎ কি হলো?”

“আগে কোনোদিন কেউ এভাবে বলেনি আমায়, আপনিও বলেননি তাই প্রশ্ন করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি..আজ তো হয়েছে তাহলে জিজ্ঞাসা করতে পারিনা?”

মুচকি হাসলেন উনি,আমার গলা শুকিয়ে আসছে ওনার হাসি দেখে..লোকটা এতো মিষ্টি করে হাসে কিভাবে? ছেলেদের হাসি তো এতো সুন্দর হতে নেই, কি মারাত্বক লাগে ওনাকে হাসলে! উনি আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন

“তুমি যা ভাবছো সেটাই আমার উত্তর!”

ওনার ফিসফিসানি কথায় শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেলো, আমি যা ভাবছি মানে? আমি যে একটু বেশিই ভেবে ফেলেছি সেটা কি উনি বুঝেছেন? নাকি সব বুঝেই আমার প্রশ্নের উত্তরটা নিজের এই রহস্যময় কথার ভাজে দিয়ে দিলেন? আমি হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকালাম ওনার দিকে, ওনার কথা অনুযায়ী আমি যা ভাবছি সেটাই সত্যি ধরে নিলাম, আমি ওনার জন্যে স্পেশাল..কথাটা ভেবে নিজেরই কেনো যেনো খুব ভালো লাগলো, আজ সত্যিই ভীষণ স্পেশাল ফিল করছি! হুট করে উনি বলে উঠলেন

“এখন কি তাকিয়েই থাকবে আমার দিকে নাকি যাবেও? দেখো তোমার না হলেও আমার খুব খিদে পেয়েছে সিরিয়াসলি বলছি, কিছু খাওয়া দরকার”

আমার নজর আবার ওনার কপালের দিকে চলে গেলো, প্রশ্ন করে বসলাম

“আপনি ডক্টরের কাছে গেছিলেন তাই এখানে আসতে দেরি হয়েছে তাইতো?”

“এখনও সন্দেহ আছে তোমার? কপালে ব্যান্ডেজ আছে রুহি, তারপরও এমন প্রশ্ন করতে পারলে?”

“আমি সেটা বলিনি, আসলে কনফার্ম হলাম আপনি সত্যিই গেছিলাম ডাক্তারের কাছে নাকি নিজেই ব্যান্ডেজ করে চলে এসেছেন”

“এত্তো সন্দেহ করো কেনো তোমরা বলোতো? মেয়েদের এই একটাই দোষ, সবকিছুতেই সন্দেহ করতে শুরু করো”

কিছুটা বিরক্ত হয়েই কথাগুলো বললেন উনি, আমি হেসে ফেললাম

“এখন ছেলেরা এতো ছলচাতুরি করেন তাইতো আপনাদের সন্দেহ করাটা মেয়েদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে! দোষ কিন্তু আপনাদেরই”

“ব্যস..! শুরু হয়ে গেলো?”

“নাহ! আমি কিছু শুরু করবো না, এমনিতেই আপনি এখন উইক আছেন..আপনার তো খিদে পেয়েছে তাইনা? চলুন খাওয়া যাক কিছু..তবে হ্যা, আপনাকে আমি পানিশ করতে চাই কারণ আপনি সময়ের থেকেও অনেক দেরি করে এসেছেন”

উনি বাচ্চাদের মতো মুখ গোমড়া করে ফেললেন

“হোয়াট! পানিশমেন্ট? রুহি আমার অবস্থা তো দেখো, এরপরও তুমি আমাকে পানিশ করবে?”

“কি শাস্তি দেবো না শুনেই ভয় পেয়ে গেলেন? আরমান শাহ্ এর সব সাহস ফুস হয়ে উবে গেলো?”

“ও হ্যালো? আমি কিছুতেই ভয় পাইনা ওকে? বলো কিভাবে পানিশ করতে চাও? আমি তৈরি”

“সত্যিই তৈরি তো? না করতে পারবেন না কিন্তু পরে তাই ভেবে বলুন”

“ইউ নো হোয়াট? আমি অনেক লেজি! অতো ভাবতে পছন্দ করিনা..তুমি বলে ফেলো কি শাস্তি দেবে”

“আচ্ছা! তো আপনার শাস্তি হলো এটা যে আজকে আমি যা বলবো তাই আপনাকে খেতে হবে, কোনো রেস্টুরেন্ট এ যাওয়া চলবে না..আজ রোড সাইড ফুড খাবো আমরা”

“কি! রোড সাইড ফুড? কিন্তু রুহি এগুলো তো..”

“আপনি কিন্তু রাজি হয়েছেন তাই এখন আর কিছু বলতে পারবেন না.. নট অ্যালাউ”

“ওহ ওকে! এটা তো ইজি! আর পানিশমেন্ট যদি এতো ইজি হয় তাহলে আমার প্রবলেম নেই! তুমি যা বলবে তাই খাওয়া হবে আজ হ্যাপি?”

“একদম! তারপর আমাকে জলদি বাড়ি ফিরতে হবে, এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, চাচা চিন্তা করবে”

“চিন্তা করো না, আমি তোমাকে পৌঁছে দেবো..তার আগে চলো কি খাবে সেটা বলো, খাওয়া দাওয়া করা যাক এবার একটু”

এরপর আমরা আবার হাটতে শুরু করলাম,ওখানে একটু এগিয়েই কয়েকটা স্টল বসেছে খাবারের, তো ঠিক করলাম তার মধ্যে থেকেই কিছু খাবো.. হঠাৎ ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে পড়লেন, যেনো ব্যাথা করছে ওনার! আমি হন্তদন্ত প্রশ্ন করে বসলাম

“আরমান স্যার, আপনার খারাপ লাগে নাকি? মাথা ব্যাথা করছে? তাহলে চলুন বাড়ি যাই”

মুহূর্তের মধ্যেই আমার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলেন উনি, বোকার মতো আমি তাকিয়ে আছি ওনার দিকে

“এটুকু তেই কি অবস্থা হয়ে গেলো তোমার চোখমুখের!”

আমি রেগে গেলাম ওনার হাসি দেখে

“আরেহ! আপনি হাসছেন! আপনি মজা করছিলেন আমার সঙ্গে!”

উনি আমার রাগ দেখে আমাকে মানানোর জন্যে হাত ধরতে আসছিলেন, আমিও কম নাকি? ধরার সুযোগই দেইনি, বাজখাই গলায় বলে উঠলাম

“আপনি কি জানেন কত্ত খারাপ আপনি? এরকম কেউ করে? আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম”

“তুমি এটুকুতেই ভয় পেয়ে যাবে বুঝতে পারিনি! সরি”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না, নাক ফুলিয়ে চোখ গরম করে তাকিয়ে ছিলাম ওনার দিকে

“সরি তো! আর করবো না”

আমি কোনো জবাব না দিয়ে রেগে হাটা দিলাম স্টলের, উনিও এলেন আমার পেছন পেছন.. ওদিকে রুহির চাচা বাড়ি ফিরেছেন একটু আগেই, রুহিকে না দেখে উনি প্রশ্ন করে বসেন

“রুহিকে দেখছি না যে..এখনও ফেরেনি নাকি বাড়ীতে?”

“আপু তো একটু বেরিয়েছে, আজ আপুর বস তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছিল.. ও বাড়ি এসে রেডি হয়ে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেছে”

“কিন্তু এখন তো প্রায় রাত হয়ে এসেছে, এতক্ষণে তো ফিরে আসার কথা ওর”

“বাবা, চলে আসবে একটু পরেই..কতদিন পর গেছে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে তাই হয়তো দেরি হচ্ছে..আমি বরং একটা ফোন করে দেখি”

“হ্যা দেখ তো কোথায় আছে”

নয়না ফোন করলো রুহিকে, তখন রুহির চাচী বলে ওঠেন

“আজ যেভাবে সেজেগুজে গেছে রুহি, বন্ধুর সাথে না কার সাথে দেখা করতে গেছে সেটা তো ওই জানে”

“আহ! সবসময় রুহির ব্যাপারে উল্টোপাল্টা কথা না বললেই তোমার হয় না?”

“হ্যা, ওকে নিয়ে কিছু বললেই তো আমি খারাপ হয়ে যাই তোমার কাছে, তবে শুনে রাখো আমি ভুল কিছু বলছি না..নিশ্চিন্ত আমি ও অন্য কোথাও গেছে”

রুহির চাচা পাত্তা দিলেন না নিজের স্ত্রীর কথায়, রুহির ওপর যথেষ্ট ভরসা আছে ওনার, ওদিকে আরমানের বাবা আরমান কে ফোন করছিলো কিন্তু তার ফোন বন্ধ আসায় সিফাতকে ফোন করেছিলো..সিফাত তো মিথ্যে বলে কাটিয়ে দিয়েছে! কিন্তু মিস্টার শাহ এর যে আজ একটু বেশিই সন্দেহ হচ্ছে, কোথায় গেলো আরমান? আর মিনালই বা কিসের কথা বলতে গিয়ে থেমে গেলো?

“আমার মনে আরমানের বিয়ের ব্যাপারে এবার সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসে গেছে! আমি ওর জন্যে ২-৩ তে মেয়ে পছন্দ করেছি! আজ নিয়ে কথা বলবো ওর সাথে”

মিস্টার শাহ এর কথা শুনে মিসেস শাহ চমকে ওঠেন! হুট করে ছেলের বিয়ের জন্যে এতো তাড়া কেনো দিচ্ছেন মিস্টার শাহ বুঝতে পারছেন না মিসেস শাহ!

“বিয়ে? কিন্তু সারা না করে দেবার পর আরমান তো এখন আর বিয়ে করতে চায় না..ও আপাতত নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চায়”

“তো কে না করেছে ওকে? করুক! আমি তো শুধু এইটুকু চাইছি আমার পছন্দের মেয়েকে ও বিয়ে করুক! দ্যাটস ইট!”

“কিন্তু তোমার মনে হয় না ওর বিয়ের সিদ্ধান্ত টা ওর ওপরই ছেড়ে দেওয়াটা ভালো হবে? ছেলে বড় হয়েছে, নিজের একটা ইচ্ছা অনিচ্ছার ব্যাপার তো আছে তাইনা?”

“ছেলে বড় হয়েছে ঠিক, ওকে আমি ওর ইচ্ছেমত সব করতে দিয়েছি কিন্তু আমার মনে হয় বিয়ের ব্যাপারটা ওর ওপর ছাড়া বোকামি হবে! সে ব্যাপারে আমি যা বলবো আরমান কে তাই করতে হবে”

“কিন্তু”

“এতদিন ওকে ওর ইচ্ছেমত সব করতে দিয়েছি, তাই আমার ইচ্ছেমত অন্তত বিয়েটা আশা করি ও করবে! যাই হোক, তুমি আগেই এই নিয়ে কোনো কথা বলো না ওর সাথে.. ও এলে আমার রুমে পাঠিয়ে দিও”

আরমানের বাবা নিজের ঘরে চলে গেলেন কথাগুলো বলে, আরমানের মায়ের চিন্তা এবার আরো বেড়ে গেলো, হুট করে আরমানের বিয়ের কথা কেনো বলছে ওর বাবা? তারমানে কি উনি কিছু সন্দেহ করছেন? এদিকে নয়নার ফোন আসায় তাড়াহুড়ো করে আমরা অল্প কিছু খাবারই খেতে পেরেছি! শেষে দোসা খেতে গিয়ে ঝালে তো ওনার বেহাল দশা হয়ে গেছিলো, একেবারেই দেখি ঝাল খেতে পারেন না উনি.. বাড়ি ফিরতে হবে এবার আমাদের..উনি ড্রাইভ করছেন এক হাতে আরেক হাতে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাচ্ছেন! আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি ওনার কান্ড কারখানা দেখে

“এইটুকু ঝাল খেয়েই এই অবস্থা? তাহলে তখন বলেননি কেনো এতো ঝাল লেগেছে”

“তুমিই তো বললে যা খেতে বলবে তাই খেতে হবে! তুমিই তো ওটা অর্ডার করলে তাই আর কিছু বলিনি”

“তো আমি কখন বললাম আপনাকে ঝাল খেতেই হবে? আমি না হয় আপনার জন্যে ঝাল ছাড়া দিতে বলতাম! কিযে করেন না আপনি!”

“এখন জেনে নাও! আমি ঝাল একদম খেতে পারিনা”

“হ্যা, জেনে নিয়েছি! এরপর আপনাকে নিয়ে কোথাও গেলে মিষ্টি জিনিস খাওয়াবো শুধু”

উনি হেসে উঠলেন!

“আরে আস্তে! হাসাহাসি পরে করবেন, এখন সাবধানে ড্রাইভ করুন! আর এটা দিন তো আমার কাছে, অনেক খেয়েছেন!”

আমি ওনার হাত থেকে কোল্ড ড্রিংকসের বোতল নিয়ে নিলাম, যেভাবে উনি হাসছেন আর খাচ্ছেন তাতে যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে..দ্রুত ড্রাইভ করেছেন উনি আমাকে জলদি বাড়ি পৌঁছে দেবার জন্যে তাই দ্রুতই চলে এসেছি বাড়ির কাছে..বড় রাস্তাতেই গাড়ি থেকে নেমে গেলাম আমি, এরপর কিছুটা হাটতে হবে, উনিও বেরিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়ালেন!

“সাবধানে ড্রাইভ করবেন! আসি”

আমি আসার জন্যে তিন – চার পা এগোতেই উনি আমার নাম ধরে ডেকে উঠলেন

“রুহি”

“জ্বি”

এলাম ওনার কাছে এগিয়ে

“একটু শোনো”

“একটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম”

“জ্বি বলুন”

“শাড়িতে তোমাকে দারুন লাগে! এক কাজ করো, এখন থেকে আমার বাড়িতে যখন আসবে রোজ শাড়ি পড়েই এসো!”

“রোজ শাড়ি? অসম্ভব! আমি রোজ রোজ শাড়ি ক্যারি করতে পারবো না”

“এখন থেকেই অভ্যাস করো! নাহলে বিয়ের পর কি করবে? তখন তো না চাইলেও রোজ শাড়ি ক্যারি করতে হবে তাইনা?”

বিয়ের কথা শোনায় লজ্জা পেলাম আমি, বিয়েটা ভাঙার পর কিছুদিন তো বিয়ের কথা শুনতেই পারতাম না কিন্তু এখন ওনার মুখে বিয়ের কথা শুনলেই কেমন একটা লজ্জা লজ্জা ভাব চলে আসে আমার মধ্যে

“যখন সময় আসবে তখন দেখা যাবে, এখন এইসব নিয়ে ভেবে কি লাভ?”

“এখনি তো ভাববে, নাহলে আর কখন ভাববে?”

“আপনি নিজের চিন্তা করুন! আমার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না”

“তোমার চিন্তাই তো বেশি করে করতে হবে এখন”

“মানে?”

“আমার জায়গায় নিজেকে রেখে একটু বোঝার চেষ্টা করো তো কি বলতে চাইছি, কি বোঝাতে চাইছি”

ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি, তারপর একটু ভেবে হাত দুটো ভাজ করে দাড়িয়ে বললাম

“এখন যদি আমার জায়গায় একটা মেয়ে থাকতো তাহলে মেয়ে হিসেবে নিজেকে তার জায়গায় রেখে ভাবতে পারতাম! কিন্তু আপনি তো ছেলে, নিজেকে আপনার জায়গায় রেখে কিভাবে ভাবি বলুনতো?”

উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন

” জানো মাঝে মাঝে এমন কথা বলো না তুমি, নতুন করে তোমার ফ্যান হয়ে যাই”

“আমি সেলিব্রেটি নই যে আপনি আমার ফ্যান হবেন”

“সো হোয়াট! এটা তো জরুরি না যে তোমার ফ্যান হতে গেলে তোমাকে সেলিব্রেটি হতে হবে রাইট?”

“হুমম! বুঝলাম! এবার যাওয়া যাক তাহলে? নাকি এই ঠান্ডা আরো কতক্ষন এখানে থাকার ইরাদা আছে আপনার?

এবার কোনো উত্তর না দিয়েই উনি মুচকি হেসে আমার ডান হাতটা ধরলেন, উচু করে ধরে হাতের পিঠে আলতো করে নিজের ঠোঁটজোড়া ছুঁইয়ে দিলেন, হাল্কা কেপে উঠলাম আমি!

“তুমি একবার বললে সারাজীবনের জন্য এখানেই থেকে যাবো, কি বলো? থাকবো!”

ঠোঁট আকড়ে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা আছি আমি, লোকটার একেকটা কথা আজকে আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, কেনো বলছেন উনি এসব! উনি কি বোঝেন না একটা মেয়েকে এভাবে এগুলো বলে ওনার প্রতি তাকে কতটা দুর্বল করে দিচ্ছেন? আমাকে চুপ দেখে জনক আবারো প্রশ্ন করে উঠলেন

“কি বলো? থেকে যাবো?”

উনি যে হাত ধরে আছেন সে হাত মুঠো করে ফেললাম আমি, নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে উত্তর দিলাম

“পর্দায় কোনো রোমান্টিক সিনে হিরোর মুখে এসব ডায়লগ শুনলে লোকে খুব খুশি হবে..আপনি বরং ডায়লগ রাইটার হয়ে যান! খুব ভালো লিখবেন”

কথাগুলো বলতে বলতে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম আমি কিন্তু উনি তো ছাড়ার নামই নিচ্ছেন না, নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে..আমি ওনার চোখের দিকে তাকাতে পারছি না, অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে আছি, এর মধ্যে উনি সোজা হয়ে দাড়িয়ে হাত টেনে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন..রাস্তার মধ্যে কি কান্ড শুরু করলেন উনি! আমি চোখ বড় বড় ওনার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেই যাচ্ছিলাম তখনই, আমার কানের পিঠে চুল গুজে দিয়ে এক ঘোর লাগানো কণ্ঠে অপ্রত্যাশিত তিনটে শব্দ বলে উঠলেন

“আই লাভ ইউ”

চলবে….

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#বোনাস_পর্ব
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

ওনার বলা তিনটে শব্দ শুনে নিজেকে কোনো এক রূপকথার রাজ্যের রাজকুমারী মনে হচ্ছিলো, আরমান স্যারের মাঝে যেনো আমি নিজের স্বপ্নের রাজকুমার এর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছিলাম! খুব আনন্দ হচ্ছিলো আমার, হবে নাই বা কেনো? আমিও যে ওনাকে খুব পছন্দ করি, হয়তো ভালোও বাসি! একটু একটু করে সেটাও এখন বুঝতে পারছি..আমি পলকহীন ভাবে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখছি, ওনার চোখেমুখে তখন সীমাহীন আনন্দের ঘনঘটা! আলতো করে উনি দু গালে হাত রেখে নরম স্বরে বললেন

“আমি অতো ইনিয়ে মিনিয়ে কথা বলতে পারি না, মানুষটা বড্ড সোজাসাপ্টা কিনা! তাই সোজাসুজি বলছি যা বলার, বিয়ে করবে আমাকে রুহি? ট্রাস্ট মি, অনেক ভালো রাখবো তোমায়!”

চোখের কোণে পানি চলে এসেছে আমার, এতো খুশি যে শেষ কবে হয়েছিলাম জানা নেই, আমি ওনার হাতের ওপর হাত রাখলাম..চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে হ্যা আমিও ভালোবাসি আপনাকে, হয়তো বুঝতে দেরি হয়েছে তবে ভালোবাসি..উনি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন আমার উত্তর শোনার জন্যে, আমিও বলতেই যাচ্ছিলাম, কিন্তু হুট করেই থেমে গেলাম, মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো আমার! আমার গাল থেকে ওনার হাত সরিয়ে দিয়ে একটু সরে এসে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দাড়ালাম আমি..কি করতে যাচ্ছিলাম এটা আমি? উনি ভেবেছেন আমি হয়তো লজ্জা পেয়ে এমন করেছি

“ইটস ওকে রুহি! আমি জানি হুট করেই এগুলো বলে ফেললাম আমি, তুমি হয়তো তৈরি ছিলে না..এনিওয়ে টেক ইউর টাইম! কোনো চাপ নেই তোমার ওপর, দরকার পড়লে আরো সময় নাও! ভাবো কিন্তু শেষে উত্তরটা কিন্তু হ্যা হওয়া চাই”

আমি চুপ করে আছি, এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে থাকলেও বাস্তবতা ভুলিনি আমি..বাস্তবতা তো এটাই যে সমানে সমানে মিল হয়, সেখানে ওনার আর আমার মধ্যে তো কোনো সাম্য নেই..না টাকার দিক থেকে, না ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের দিক থেকে..তখন ওনার বাবার কথাও মনে পড়লো আমার.. উনিও তো আমাকে পছন্দ করেন না..সবদিক ভেবে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার, মন চাইছে ওনাকে বলে দেই আমার মনের কথাটা কিন্তু পারছি না..হাতে থাকা সাদা গোলাপ ফুলগুলো পিষে যাচ্ছে আমার মুঠোয় পড়ে..চোখ থেকে টপটপ পানি গড়িয়ে পড়ছে! নিজেই নিজেকে বলে উঠলাম

“এটা তুই কি করছিস রুহি? ওনার ডাকে কিভাবে সাড়া দেবো আমি! উনি কোথায় আর আমি কোথায়? উনি আমাকে ভালোবাসলেও ওনার পরিবার কি আমাকে মেনে নেবে? হয়তো না! ওনার বাবাও তো আমাকে পছন্দ করেন না..তাহলে এ সম্পর্ক কিভাবে সম্ভব?”

চোখের পানি মুছলাম আমি! অনেকক্ষণ চুপ দেখে উনি আমাকে নিজের দিকে ঘোরালেন! আমি চোখ নিচু করে আছি!

“কোনো উত্তর দেবে না তুমি?”

“ক..কি বলবো?”

উনি আমার কাঁধে দু হাত রেখে বললেন

“কেনো? তুমি জানো না কি বলতে হবে? আমি এতদিন পর সাহস করে তোমাকে নিজের মনের কথা জানালাম আর তুমি উত্তর না দিয়েই চলে যাবে?”

আমার মন চাইছে উত্তর দিতে কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে তার উল্টো..কি করবো আমি? এই দোটানা ভালো লাগছে না আমার, মানুষটাকে কষ্ট দিতে চাইনা আমি কিন্তু হুট করে মাথায় এমন সব চিন্তা এসে ভর করলো যে আমার সব আনন্দে পানি ঢেলে দিলো! কান্না পাচ্ছে ভীষণ! অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছি, উনি আরো ব্যাকুল হয়ে বলে উঠলেন

“রুহি প্লিজ! প্রথমবার কাওকে এত্তো ইম্পর্ট্যান্ট কথা বললাম! তোমার মুখে রিপ্লাই না শুনে কিন্তু যাবো না!”

এবারও নিরব আমি!

“আই লাভ ইউ সো মাচ রুহি, দেখো আমি দু দুবার বললাম! এবার তো তোমার একবার রিপ্লাই এক্সপেক্ট করতেই পারি তাইনা?”

ওনার এতো আবেদন শুনে এত্তো কষ্ট লাগছে আমার! গলা থেকে কথা বের হচ্ছে না, এই বুঝি কান্না চলে এলো আমার! ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম আমি, থমথমে কণ্ঠে বলে উঠলাম

“সরি”

আমার কথাটা নিছক মজা মনে করে ছোট্ট একটা হাসি দিলেন উনি! এদিকে আমার যে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে সেটা কিভাবে বোঝাই ওনাকে?

“সরি? এটা কিন্তু আমার “আই লাভ ইউ” এর রিপ্লাই হলো না রুহি”

“আপনার অনুভূতি বোঝা সত্বেও কোনো প্রতিউত্তর দিতে পারবো না আমি, তার জন্যে ক্ষমা করবেন”

মুহুর্তের মধ্যেই ওনার মুখের হাসি উবে গেলো, অবাক হলেন উনি

“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই উত্তর দিতে পারবে না? কেনো পারবে না? কি আটকাচ্ছে তোমাকে?”

ইতিমধ্যেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে তারমধ্যে ওনার পাল্টা প্রশ্ন আমাকে আরো এলোমেলো করে দিচ্ছে..হালকা করে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে উত্তর দিলাম আমি

“স্যার, আমি..আমি এই নিয়ে এখন কথা বলতে চাইনা, বেটার এটাই হবে এই বিষয়টা এখানেই শেষ..”

“আমি তোমাকে নিজের অনুভূতির কথাগুলো বলেছি নতুন করে সব শুরু করার জন্য, শেষ করার জন্যে নয়”

“আরমান স্যার আপনি..”

পুরো কথা শেষ করতে পারিনি আমি, ক্ষিপ্র গতিতে উনি দু হাতে আমার বাহু চেপে ধরলেন, রাগী কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন

“তারমানে কি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো তাই আমার ভালোবাসা অ্যাকসেপ্ট করবে না?”

“কি বলছেন এগুলো! আমি কাওকে ভালবাসি না আর না কোনোদিন বেসেছি”

“তাহলে আমাকে ভালোবাসতে সমস্যা কোথায় তোমার? কেনো অ্যাকসেপ্ট করবে না? রিজন দেখাও আমাকে”

“কারণ..?”

“হ্যা কারণ বলতে হবে তোমায়! কেনো পারবে না? আমরা দুজনেই একে অপরের জন্যে পারফেক্ট তাহলে সমস্যা কোথায়?”

আমি অসহায় দৃষ্টিতে ওনার পানে দেখছি, এতক্ষণ যে মুখটায় হাসি ছিলো মুহূর্তেই সেই মুখটা হিংস্র হয়ে উঠেছে শুধুমাত্র আমার একটা কথায়! উনি যে সত্যিই আমাকে অনেকটা ভালোবাসেন সেটা বুঝতে বাকি নেই আমার, আমার অস্বীকারে ওনার যে রাগ দেখা যাচ্ছে সেটাই প্রমাণ করে অনেক ভালোবাসেন উনি আমায়

“আমি তোমাকেই চাই, যেভাবেই হোক চাই, আমার কথাগুলো কিন্তু হালকাভাবে নিও না..তুমি না করলেই আমি শুনছি না”

উনি আমার বাহুজোড়া আরো চেপে ধরেন বিধায় ব্যথা পেলাম আমি, সেটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে উনি ছেড়ে দেন আমায়! অস্থির হয়ে প্রশ্ন করেন

“আ..আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি রুহি, কেনো রাগালে আমাকে বলোতো! আই অ্যাম সরি”

“আপনি বাড়ি যান প্লিজ! এখন এসব কথা বলার সময় না আর আমার মনে হয় না এসব কথা বলে কোনো লাভ..”

“কেনো লাভ থাকবে না? আমার ইমোশন, আমার ফিলিংস কিন্তু এতো ঠুনকো নয় রুহি! আর হ্যা আমিও জানি ইউ অলসো লাইক মি, তাহলে কোথায় প্রবলেম?”

আমি কিছুক্ষন চুপ রইলাম, পরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেই ফেললাম

“আমরা দুজন বলতে গেলে আলাদা মেরুর মানুষ! আপনি নিজেকে দেখুন আমার আমাকে দেখুন, কত্তো অমিল আমাদের মধ্যে..আর সমাজের মতে সামঞ্জস্যতা না থাকলে যে আজকাল সম্পর্ক এর দাম নেই”

“আমি তোমার এত শক্ত কথার মানে বুঝতে পারছি না রুহি আর প্লিজ কিছু বুঝতে ও চাইনা”

“বুঝতে হবে আপনাকে! আপনার আর আমার ফ্যামিলি স্ট্যাটাস সম্পূর্ন আলাদা..আপনি আমাকে অ্যাকসেপ্ট করলেও আপনার পরিবার কি আমাকে মেনে নেবে? একটা অনাথ মেয়েকে তারা কি নিজের ছেলের পাশে মানবে! আপনি আমাকে নিজের জন্যে পারফেক্ট মনে করলেও তারা কি মনে করবে আমি পারফেক্ট?”

“এসব কি বলছো তুমি? রুহি আমি তোমাকে ভালোবাসি, আর কি দরকার আছে? আর আমার ফ্যামিলি? আমার মা বোন দুজনেই তোমাকে পছন্দ করে”

“আর আপনার বাবা? উনি তো পরিবারের মুখ্য সদস্য! উনি মানবেন আমায়?”

“আমার বাবার মানা না মানায় কিছু যায় আসেনা রুহি, আমরা দুজন দুজনের জন্যেই যথেষ্ট..বাবার অমত থাকলে আমরা আলাদা থাকবো”

“নাহ স্যার! পরিবারের থেকে দূরে থেকে কেউ ভালো থাকতে পারে না! আমি চাইনা আমার জন্যে আপনি নিজের পরিবার থেকে দূরে যান! পরিবার না থাকার কি যন্ত্রণা সেটা আপনি বুঝবেন না..আর আপনার বাবা আপনাকে ভালোবাসেন সেটা ভুলে যাবেন না”

“তুমি আমার বাবার অপছন্দের কথা ভাবছো রুহি? আমার থেকে তোমার কাছে আমার পরিবার বড় হলো?”

“নাহ স্যার! আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে! আমি চাইনা আপনার পরিবারে আমার জন্যে কোনো অশান্তি হোক! এমনিতেই আমি আমার চাচীর সংসারে অশান্তি হিসেবেই আছি! একি ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইনা”

“আর যদি আমার বাবা রাজি হয় তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে তো?”

“মানে? আপনার বাবাকে কিভাবে..”

“সেটা আমার ওপর ছেড়ে দাও! তুমি বলো, যদি বাবা নিজে রাজি হয় আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে তাহলে রাজি হবে তুমি?

“আপনার বাবা রাজি হবেন না সেটা আপনিও জানেন তাহলে কেনো বাচ্চাদের মতো জেদ করছেন এসব কথা নিয়ে!”

আরমান স্যার নিশ্চুপ রইলেন! কারণ উনিও এটা ভালোভাবেই জানেন ওনার বাবা শুরু থেকেই আমাকে পছন্দ করেনা, শুরুর দিকে উনি তো আমাকে আরমান স্যারের ম্যানেজার হিসেবে রাখতে রাজিই ছিলেন না..আরমান স্যার জোর করে রেখেছিলেন আমাকে..কিছুক্ষণ চুপ থেকে উনি আমার হাতটা ধরে বললেন

“সেসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, সব ঠিক করে দেবো আমি”

“সম্পর্ক শুরু করার পর সমস্যা এলে তখন কি হবে? আপনি যদি নিজের আপনজনদের সামাল না দিতে পারেন? তাছাড়া আমি চাইনা আমার জন্যে আপনার বা আপনার পরিবারের কারো সমস্যা হোক”

“তুমি শুধু এইগুলো দেখলে? সোসাইটি, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস শুধু এইসবই দেখলে? আমার ভালোবাসার দাম নেই তোমার কাছে? তুমি ভালোবাসো না আমায়?”

“নাহ!”

“এভাবে বলো না রুহি! কষ্ট হচ্ছে আমার..প্লিজ সত্যিটা বলো..ভালো বাসো না?”

আমি শুধু একবার অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালাম ওনার দিকে, উত্তর দিতে পারলাম না..আমার কেনো যেনো ভয় হচ্ছিলো, আমার জন্যে না উনি ওনার বাবার অপ্রিয় হয়ে যান! ছুটে চলে এলাম আমি ওখান থেকে..উনি আমাকে ডাকছেন কিন্তু আমি দাড়াইনি, তাহলে যে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারবো না

উবু হয়ে বিছানায় শুয়ে কান্না করছি আমি, রুমের দরজা আটকে দিয়েছি কারণ আমাকে কান্না করতে দেখলে প্রশ্ন করবে সবাই কিন্তু দেবার মতো উত্তর নেই আমার কাছে..আমি জানি আরমান স্যার অনেক কষ্ট পেয়েছেন আমার প্রত্যাখ্যানে..! কিন্তু কি করবো? আমি যা করেছি সে তো ভেবেই করেছি আর আমার মতে সেটা ভুল নয়! ওদিকে মানসিক ভাবে বিদ্ধস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে আরমান..প্রথম ভালোবাসায় যে এতোটা কষ্ট পাবে জানা ছিলো না ওর! রুহির বলা কথাগুলো এখনও কানে বাজছে ওর! সোজা রুমে চলে যায় ও..ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা সব জিনিস নিচে ফেলে দেয় ও..এমনিতেই মাথা ঠিক নেই তার ওপর ড্রেসিং টেবিলের এক কর্নারে দেখলো ৪ টা মেয়ের ছবি রাখা..ওগুলো দেখেই আরো মাথা গরম হয়ে গেলো ওর! মিনালকে ডাকে ও! দুবার ডাকতেই মিনাল চলে আসে

“ভাইয়া, কি হয়েছে!”

ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরমানের সব কসমেটিকস গুলো নিচে পড়ে আছে

“একি! এগুলো এভাবে পড়ে আছে কেনো? আর তোর কপালে কি হয়েছে! দেখি”

মিনাল কাছে এগোতে গেলেই আরমান ইশারায় না করে, হাতের ছবিগুলো দেখিয়ে প্রশ্ন করে বসে

“এগুলো আমার রুমে কে রেখেছে?”

আরমান মারাত্মক রেগে আছে, মিনাল সাহস পাচ্ছে না বলার! আরমান রাগান্বিত স্বরে আবারও প্রশ্ন করে ওঠে

“একটা কথা জিজ্ঞাসা করেছি তোকে মিনাল, উত্তর দে! এই ছবিগুলো কে রেখেছে আমার রুমে?”

“বা..বাবা রেখেছে”

মন খারাপ করে বসে আছি আমি, কিছু ভালো লাগছে না! চোখমুখ ধুয়ে এসেছি একটু আগেই! নয়না আমার জন্যে খাবার নিয়ে এসেছে কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছে যে নেই আমার! উনি কষ্ট পাচ্ছেন আমার জন্যে, সেখানে আমি কিভাবে খাবো? নয়না আমার সাথেই ছিলো, একটু বাদে চাচা এসে আমার পাশে বসলেন

“কি হয়েছে রুহি? মন খারাপ মনে হচ্ছে?”

“কিছুনা চাচা..ওই মা বাবার কথা একটু মনে পড়ছিলো আর কি তাই”

“কিন্তু তুই তো সবসময় বলিস ভাই আর ভাবীর কথা মনে করে চোখে পানি আনতে চাস না..সবসময় তোকে দেখেছি নিজের মা বাবার কথা বলার সময় মুখে হাসি রেখেছিস! তাহলে আজ চোখে পানি কেনো?”

আমি চোখ নিচু করে আছি, আবারও চোখদুটো জলে ভরে উঠলো আমার

“আপু! তোমার কি বন্ধুদের সাথে ঝগড়া হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে তোমায়?এসে থেকেই মন খারাপ করে আছো কিছুই খাচ্ছো না”

“দেখি নয়না, আমার কাছে দে! আমি ওকে আজ খাইয়ে দিচ্ছি!”

“আমি খাবো না চাচা! ভালো লাগছে না”

“একটু খাও না আপু! দেখো তোমার মুখ এইটুকু হয়ে গেছে! কোথায় ভাবলাম বন্ধুদের সাথে ঘুরে মন ভালো হবে, উল্টে মন খারাপ করে এলে তুমি!

চুপ করে আছি আমি! কি বলবো ওদের! কিভবে বোঝাবো আমার মন খারাপের কারণ? আমি যে আরেকজনকে কষ্ট দিয়ে এসেছি! চাচা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

“দেখ রুহি! হয় তোকে খেতে হবে নাহলে বলতে হবে কেনো মন খারাপ করে আছিস! এত বছর ধরে আছিস আমার কাছে! আমিও তো তোর বাবার মতন তাইনা? বল না মা কি হয়েছে!”

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, এই মুহূর্তে মনের সব চাপা কষ্টগুলো বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার, তাহলে হয়তো ভেতরটা একটু হালকা হবে! চাচাকে ধরে কান্না করে বলে দিলাম সবকিছু! ওদিকে মিস্টার শাহ্ ফাইলস নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন আরমান প্রবেশ করে..ছবিগুলো মিস্টার শাহ্ এর সামনে রাখে ও

“এগুলো আমার রুমে রাখার মানে কি?”

ছেলের দিকে তাকান মিস্টার শাহ্! মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে প্রশ্ন করে বসেন

“তোর এই অবস্থা কেনো?”

“বাবা প্লিজ, আমি দ্বিতীয় কোনো কথা বলতে চাইনা! এগুলো কেনো রেখেছো আমার রুমে?”

“তোর দেখার জন্যে রেখেছিলাম! দেখে নিয়েছিস তো? তাহলে বল এর মধ্যে কাকে ভালো লাগে তোর! তার সাথেই আমি..”

“আমি একটা মেয়েকেই ভালোবাসি, তাই দ্বিতীয় কোনো মেয়ের ছবি দেখার ইচ্ছে আমার নেই”

ছেলের মুখোমুখি দাড়ান মিস্টার শাহ্!

“কিন্তু আমার এই মেয়েদের পছন্দ তোমার জন্য, এদের মধ্যে যেকোনো একজনকেই বিয়ে করতে হবে তোমায়”

“বাবা..আমি তাকেই বিয়ে করবো যাকে ভালোবাসি, অন্য কাউকে না, প্লিজ এইসব করা বন্ধ করো এবার!”

“আমি যদি খুব ভুল না করে থাকি ভালোবাসার মানুষটির নাম রুহি.. অ্যম আই রাইট?”

রুম থেকে বেরোনোর জন্য পা বাড়িয়েছিল আরমান, কিন্তু বাবার কথায় পা থেমে যায় ওর! অবাক হয়ে ঘুরে তাকায় বাবার দিকে!

“তুমি জানো আমি রুহিকে ভালোবাসি?”

চলবে…