ইস্ক সুফিয়ানা পর্ব-১১ এবং বোনাস পর্ব

0
365

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ১১
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

“জানতাম না, তবে সন্দেহ ছিলো আগে থেকেই..আমার সেই সন্দেহ আর সত্যি বলে প্রমাণ করে দিলি তুই আরমান”

বাবার কথায় অবাক হয়ে গেছে আরমান কারণ এইসব বিষয়ে কোনোদিন ওনার সাথে আলোচনা করেনি ও, তারপরও কিভাবে বুঝলেন উনি? ধীরে ধীরে আবার বাবার সামনে এসে দাঁড়ায় আরমান..মিসেস শাহ্ ও ততক্ষণে চলে এসেছেন

“আর একটা কথা পরিষ্কার জেনে রাখিস তুই, তোর সব আবদার মানলেও এতে তোর সাথ দেবো না আমি..ওই মেয়েটা তোর জন্যে না”

রুক্ষ স্বরে আরমানের বাবা কথাটা বলেন, মিসেস শাহ্ দাড়িয়ে আছেন ওখানে, ছেলের মুখে দিকে তাকিয়ে কষ্ট হচ্ছে ওনার আর আরমান? সে তো আজ এক আঘাত পেয়েই এসেছে, সেটা সামলে ওঠার আগেই ওর বাবা আবার আরেক ঝটকা দিলেন! ছেলেটা মানসিক ভাবে একদম ভেঙে পড়েছে.. ও ধরা গলায় বলে ওঠে

“এভাবে বলো না প্লিজ বাবা, আমি ওকে অনেক ভালোবাসি আর যাকে ভালোবাসি তার থেকে বেস্ট কে হতে পারে?”

“ভালোবাসা দিয়েই সব হয় না আরমান, তুই ওকে দেখ আর তোকে দেখ! কি আছে মেয়েটার? কিছু নেই! আমি তো শুনেছি মা বাবাও নেই ওর, অন্যের বাড়ির আশ্রিতা ও! এরকম একটা মেয়েকে শাহ্ বাড়ির ছেলে ভালোবাসবে সেটাই তো ভাবনার বাইরে ছিলো সেখানে তুই বলছিস ওকে ভালবাসি?”

অবাক হয়ে মিস্টার শাহ্ এর কথাগুলো শুনছে আরমান, কিছু সময় একি কথাগুলো রুহি ও বলেছিলো ওকে! এগুলোই তো কারণ ছিলো যার জন্যে রুহি ওর ভালোবাসা অ্যাকসেপ্ট করলো না

“এসব কি বলছো তুমি? তোমার মানুষকে জাজ করার ক্ষমতা এতো লো কিভাবে হয়ে গেলো? তুমি তো এমন ছিলে না..নাকি রুহিকে আমার জন্যে মানতে পারবে না তাই এসব বলছো?”

“হ্যা তাই, ওকে আমি তোর জন্যে মানবো না..কোনদিক থেকেই ওকে তোর জন উপযুক্ত মনে হয় না আমার”

“সি ইজ এডুকেটেড, সেলফ ডিপেন্ডেন্ট, ভদ্র স্বভাবের একটা মেয়ে..তাহলে কোনদিক থেকে ওকে তোমার উপযুক্ত মনে হয় না?”

“বয়সটা এখনও তোর কম তাই তুই শুধু মেয়েটাকেই দেখছিস, আর কিছু দেখার প্রয়োজন বোধ করছিস না..ওর ফ্যামিলি ব্যকগ্রাউন্ড দেখ, কোনদিক থেকে আমাদের সাথে ম্যাচ হয় ওদের?”

“এসব দেখা প্রয়োজন মনে করিনি আমি, আর এগুলোই যদি প্রবলেম হয় তাহলে আমার সমস্যা নেই! শুধু রুহিকে চাই আমার”

“কিন্তু বিয়ের পর সম্পর্ক কিন্তু শুধু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে থাকে না, দুটো পরিবারের মধ্যেও তার বিস্তার হয়..আমাদের রিলেটিভ কি বলবে সে খেয়াল আছে তোর? আমার বিজনেস পার্টনার রা সবাই কি বলবে সে আইডিয়া আছে?”

“তোমার যদি খুব প্রবলেম থাকে রুহিকে নিয়ে তাহলে ঠিক আছে! ওকে কারো সাথে পরিচয় করাতে হবে না তোমার..আমরা অন্য কোথাও গিয়ে থাকবো, আসবো না এই বাড়িতে”

” তুই বাড়ি ছাড়ার কথা বলছিস? এটা বেশি হয়ে যাচ্ছে..”

“তোমার কথায় বা তোমার ভয়ে ওকে ছাড়বো এমন লোক দেখানো ভালো আমি বাসিনি..ওর সাথে থাকার জন্যে যা করার দরকার সব করবো”

“অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি তোর স্পর্ধা দেখে, একটা এভারেজ মেয়ের জন্যে তুই..”

“ও এভারেজ না বাবা, আমার কাছে ও অনেক স্পেশাল! অনেক! এতটা যে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না”

মিস্টার শাহ্ মিসেস শাহ্ এর দিকে তাকিয়ে বলেন

“শুনছো তোমার ছেলের কথা? আগেই বলেছিলাম আমি ওই রুহি ওকে পাগল করেই ছাড়বে..আজ দেখো আমারই ছেলে আমার সাথে তর্ক করছে তাও ওই মিডল ক্লাস মেয়েটার জন্যে

“বাবা প্লিজ ওকে নিয়ে কিছু বলবে না, ও এসবের কিছুই জানতো না যে আমি ওকে পছন্দ করি”

“ওকে ফাইন বলবো না! তোর মুখেও ওকে নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না আমি..ভুলে যা ওকে”

এবার রেগে যায় আরমান, জোর গলায় বলে ওঠে

“আমি ভালোবাসি ওকে বাবা..ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড”

“চিৎকার করে কোনো লাভ নেই আরমান, আমার মত পাল্টাবে না..আর ভালোবাসা? সেটা বিয়ের পর ও হয়েই যায়! ভালোবাসার দোহাই দিস না”

তখন আরমানের মা এগিয়ে আসে

“আরমান, বাবা শোন, এখন এসব কথা থাক! তুই চল আমার সাথে আমি তোর বাবার সাথে পরে কথা বলে নেবো”

“না মা, আমি এখুনি বাবার সাথে কথা বলবো, আজ সব কথা বলে ক্লিয়ার করেই নিতে হবে”

“ক্লিয়ার করার কিছু নেই আরমান, আমি নিজের সিদ্ধান্তে অটল! তুই তাকেই বিয়ে করবি যাকে আমি উপযুক্ত মনে করবো

“আমি ওকে ভালোবাসি জানার পরও এই অভিমত তোমার, সারাজীবন কার সাথে কাটাতে চাই সেটা ম্যাটার করে না তোমার কাছে?”

“তোকে কিছুই বলার নেই আমার, আবেগে বশবর্তী হয়ে তুই এখন নিজের ঠিক ভুল বিচার করতে পারবি না..আর ওই মেয়েটা তো..”

“রুহি বলো বাবা, একটা নাম আছে ওর..পছন্দ না করো ঠিক আছে, অ্যাট লিস্ট সম্মান তো করো কারণ তোমার ছেলে ওকে ভালোবাসে”

মিস্টার শাহ্ ছেলের আচরণে অবাক হয়ে যাচ্ছে, আজ অব্দি কোনোদিন এভাবে মুখোমুখি দাড়িয়ে কোনো বিষয়ে ওনার ছেলে তর্ক করেনি কিন্তু আজ প্রথমবার এভাবে একটা মেয়ের জন্যে প্রটেস্ট করছে নিজের বাবার সাথে, আরমানের মা বুঝতে পারছেন না ব্যাপারটা, রুহিকে আজ প্রপোজ করতে গেছিলো ওনার ছেলে তাহলে এভাবে ফিরলো কেনো? কিছু কি হয়েছে ওখানে?

“বাবা, তুমি জানো না আমি কতোটা চাই, কতোটা ভালোবাসি তাই এসব বলছো! কিছু জানো না তুমি”

“জানতে চাই না আমি কিছু..তোর মাথা যে কি পরিমান খারাপ হয়েছে সেটা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি..এসব নিয়ে তোর সাথে কথা বলা এখন বেকার”

আরমান নিরব হয়ে গেছে আপাতত,ওর বাবার কথাগুলো শুনে..সবসময় সবকিছুতে ওর বাবা ওর সাথ দিয়েছে..কোনোদিন ভাবেনি যে ভালোবাসার ব্যাপারে এভাবে সাথ দেবে না..তার ওপর রুহির প্রত্যাখ্যান এর বিষয়টা এখনও ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে.. মনটা যে ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে.. চোখ দুটো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে ছেলেটার.. মিসেস শাহ্ ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন

“আরমান বাবা! এখন থাক! অনেক কথা হয়েছে, চল এবার! রুমে চল”

“মা তুমি জানো আজ কি হয়েছে? রুহি কে আমি আমার মনের সব কথা বলে দিয়েছি..এভরিথিং! আই ওয়াজ সো হ্যাপি টুডে”

“সে তো ভালো করে কিন্তু তোর এই অবস্থা কেনো? কি হয়েছে ওখানে?”

কথাটা শুনে আরমানের বাবা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে

“ওহ! তো এতদূর চলে গেছে ব্যাপারটা? প্রপোজ করতে গেছিলি আজ তুই? আর তুমিও এটা জানতে আগে থেকেই?”

মিসেস শাহ্ মাথা উত্তর দিলো না

” মা ছেলে মিলে আগে থেকেই সব জানো শুধু আমিই কিছু জানিনা রাইট? এনিওয়ে হ্যা বলে দিয়েছে তোকে মেয়েটা নিশ্চয়ই? এই অপেক্ষাতেই তো ছিলো এতদিন”

“এখানেই তো চিনতে পারোনি তুমি ওকে বাবা, তোমার ধারণার থেকে অনেকটা আলাদা রুহি! তোমার জন্যে, শুধু তোমার কথা ভেবে আজ রুহি না করে দিয়েছে আমাকে”

ছেলের কথায় এবার কিছুটা অবাক হন, উনি তো ধরেই নিয়েছিলেন রুহি হ্যা বলেছে কিন্তু নাহ! আরমান সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিলো

“কি বলছিস তুই?”

“ইয়েস বাবা, না করে দিয়েছে আমায়! সি রিফিউজড মাই লাভ”

মিস্টার শাহ্ মারাত্মক মাত্রায় অবাক হয়েছেন, রুহি আরমানকে না করে দিয়েছে? এটা কিভাবে হয়? উনি যেভাবে জাজ করেছিলেন তাতে রুহির তো রাজি হয়ে যাওয়ার কথা..তাহলে কি সত্যিই মানুষ চিনতে ভুল হলো ওনার? মিসেস শাহ্ ছেলের কথা শুনে চমকে যান!

“কি বলছিস তুই আরমান! রুহি না করেছে তোকে?কেনো? ও ভালোবাসে না নাকি তোকে!”

“মা, ও ভালোবাসে আমাকে, আই নো দ্যাট কিন্তু আজ, ও সেটা স্বীকার করলো না কেনো জানো? এইযে একটু আগে বাবা যে মহান কথাগুলো বললো ফ্যামিলি স্ট্যাটাস নিয়ে সেগুলোর জন্যে”

বাবার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো আরমান, মিস্টার শাহ্ ছেলের মুখের দিকে চেয়ে অবাক হয়ে যাচ্ছেন! একরাশ কষ্ট, না পাওয়ার যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে ছেলেটার মুখে, যে ছেলেটা সবসময় হাসিখুশি থাকে আজ সে বিদ্ধস্ত, ক্লান্ত!

“মা তুমি জানো রুহি আমায় কি বলেছে? আমার বাবা আমাদের সম্পর্ক মানবে না, এই সোসাইটিতে নাকি একুয়াল স্ট্যান্ডার্ড ছাড়া রিলেশনশিপ টেকে না.. তাই ও আমার ভালোবাসা অ্যাকসেপ্ট করেনি এন্ড সি হোয়াট অ্যা কো ইনসিডেন্স..বাবাও আজকে ঠিক একই কথা বললো!

মিস্টার শাহ্ ছেলের দিকেই তাকিয়ে আছেন, একটা সাধারণ মেয়ের জন্যে ছেলেকে যে এইভাবে ভেঙে পড়তে দেখবেন সেটা কোনোদিন ভাবেননি উনি..আরমান অশ্রুসিক্ত চোখে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে

” ইজন্ট সি গ্রেট বাবা? তুমি ওর ব্যাপারে ভুল ভাবলেও ও কতো ভালো চিনেছে তোমায়..তোমার মাইন্ড আগেই পড়ে ফেলেছিলো ও..তাইতো তোমার ছেলেকে অ্যাকসেপ্ট করেনি!”

কথাটা বলেই আরমান বেরিয়ে আসে। রুম থেকে, কারণ যে ওর ভালোবাসার দাম দিতে জানেনা তার সাথে কথা বলার ইচ্ছে ওর নেই, হোক না সেই লোকটা ওর বাবা..মিসেস শাহ্ তখন বলে উঠলেন

“এতটা নিষ্ঠুর না হলেও পারতে তুমি! অবস্থা দেখেছো ছেলেটার? জানিনা কিভাবে ও নিজেকে সামলাবে এখন”

প্রতিউত্তর দিলেন না মিস্টার শাহ্! ছেলের কথা শোনার পর নিরবতা ওনাকে ঘিরে ধরেছে..মিসেস শাহ্ ততক্ষণে ছেলের ঘরে চলে গেছেন এদিকে আমি সব বলে দিয়েছি চাচাকে! আমি যে ওনাকে কতোটা ভালোবাসি সব জানিয়ে দিয়েছি, ওনার ভালোবাসা স্বীকার করিনি সেটাও বলে দিয়েছি! সব শোনার পর খানিক চুপ থেকে চাচা প্রশ্ন করলেন আমায়

“তুই ছেলেটাকে ভালবাসিস?”

হ্যা সূচক নাড়লাম আমি, ভালোবাসি ওনাকে এই কথা ওনার কাছে স্বীকার না করলেও নিজের কাছে অন্তত অস্বীকার করতে চাইনা আমি

“তাহলে আমি ওর বাবার সাথে একবার কথা বলে দেখি?”

“না চাচা, আমি চাইনা এই নিয়ে আর কোনো কথা এগোক! তুমি ওনার সাথে কথা বলতে গেলে উনি অপমান করবেন তোমায় আর সেটা মানতে পারবো না আমি”

“কিন্তু আপু! তুমি তো ভালোবাসো ওনাকে তাইনা? তাহলে সমস্যার কি আছে? বাবা একবার কথা বলে দেখুক না ওনার বাবার সাথে”

“তুই বুঝবি না রে নয়না, জীবনে সবকিছু এতো সহজে পাওয়া যায় না রে আর আরমান স্যার তো আমার জন্যে এমন একটা স্বপ্ন যেটা হুট করেই আমি দেখেছিলাম..কিন্তু এর কোনো বাস্তবতা নেই, পরিপূর্ণতা নেই!”

কষ্টে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে আমার, আরমান স্যারের চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছেই না.. জানিনা ওনার কি অবস্থা এখন, ঠিক আছেন তো উনি? সাথে আরো একটা ভয় হচ্ছে, উনি আবার আমাকে আজকের পর থেকে ঘৃনা করবেন না তো? অহংকারী ভাববেন না তো আমায়? জানিনা কি আছে আমাদের ভাগ্যে! চাচা হাত বুলিয়ে দিলেন আমার মাথায়

“আগেই হাল ছেড়ে দিতে নেই রুহি মা..তুই বললি আরমান তোকে অনেক ভালবাসে! আমিও তার প্রমাণ পেয়েছি..তোর বিয়েটা আটকানোর জন্য ছেলেটা কতকিছু করেছে! তখন বুঝিনি কেনো করছে! কিন্তু এখন সব পরিষ্কার আমার কাছে”

চাচার কথা শুনে আমি ঢুকরে কেঁদে উঠলাম, নয়না আমাকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো..কোনোদিন কোনো ছেলে যে আমাকে এতটা ভালোবাসবে, আমার জন্যে এতকিছু করবে সেই আশা ছিলো না আমার..আজ সেইসব পেয়েছিলাম আমি কিন্তু নিজেই ছেড়ে দিলাম..অবশ্য দুঃখ নেই আমার! কারণ আমি যা করেছি আরমান স্যারের ভালোর জন্য করেছি! আজ না হয় কাল সেটা উনি উপলব্ধি করতে পারবেন

মাঝরাত এখন! কিন্তু আমার চোখে যে ঘুম নেই, থাকবেই বা কিভাবে? মনে শান্তি না থাকলে কি চোখে ঘুম আসে? কান্না করেছি অনেক বিধায় মাথা ব্যাথা করছে, চোখ জ্বালা করছে তবুও ঘুম আসছে না..ইনস্টাগ্রামে আরমান স্যারের পেজে ঘুরছি! ওনার ছবিগুলো দেখে আরো কান্না পাচ্ছে আমার, ফলো করিনি আমি কোনোদিন ওনাকে তারমানে এই না যে দেখিনা..রোজ দেখি ওনার ছবিগুলো! ছবিগুলো দেখার সময় চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো স্ক্রিনের ওপর, আমি আঙুল দিয়ে মুছে ফেললাম তারপর স্ক্রিনে ওনার ছবিতে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম

“রেগে আছেন অনেক তাইনা আমার ওপর? আমাকে ক্ষমা করে দিন আরমান স্যার! আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি, ভালোবাসি তো, কষ্ট দিতে পারি আপনাকে? কিন্তু কি করবো বলুন! আমিও তো নিরুপায়! আমি চাইনি আপনি আমার জন্যে নিজের বাবার সাথে কোনো ঝামেলায় জড়ান”

আরমান ও আজ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে! কোনোভাবেই ভালো লাগছে না..বারবার রুহির সাথে আজ কাটানো সময়গুলোর কথা মনে পড়ছে, যখনই চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে তখনই ওর চোখের সামনে রুহির হাসিমুখটা ভেসে উঠছে! বারান্দায় দাড়িয়ে অন্ধকার আর শান্ত শহরটা দেখছে আরমান, কিন্তু ওর মনের মধ্যে যে অশান্তির ঝড় উঠেছে সেটাকে কিভাবে সামলাবে? ফোনটা হাতে তুলে রুহির নাম্বারে ফোন করে, কিন্তু ফোন বন্ধ! এটাই এক্সপেক্ট করেছিলো আরমান..হতাশ হয়ে ফোনটা রেখে দেয় ও

“আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমিও ভালো নেই রুহি, ভালো থাকতেই পারো না..আমি জানি তুমি আমাকে ততটাই ভালোবাসো যতোটা আমি বাসি তাহলে কেনো এমন করছো আমার সাথে? কেনো স্বীকার করছো না? একবার কি সব ভুলে বলতে পারো না তুমিও আমায় ভালোবাসো?”

ভালোবাসি জেনেও স্বীকার করতে না পারা, জেনেশুনে ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দেওয়া, ভালোবাসার ক্ষেত্রে এর থেকে বেশী যন্ত্রণার হয়তো আর কিছু হতে পারেনা..সেদিনের পর দেখতে দেখতে সাতদিন কেটে গেছে, আমি ওই বাড়িতে যাইনি, আর না ওনার সাথে কোনো যোগাযোগ করেছি! ওনার নাম্বার ব্লকলিস্টে ফেলে রেখেছি, উনি ফোন করলে যে নিজেকে ধরে রাখতে পারবো না আমি..আমার অবস্থা দেখে চাচা আর চাচাতো বোন বেশ চিন্তিত, চাচী অবশ্য আমার ব্যাপার নিয়ে অতো ভাবেননি সবসময়ের মতই ! আজ সকালে নয়না আমাকে বললো

“আপু, তুমি আমার সাথে আমার কলেজে চলো..এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না”

“আমি ঠিক আছি তো, তোকে আমার কথা এতো ভাবতে হবে না নয়না!”

“হ্যা দেখছি তো কেমন ঠিক আছো..রাতে ঘুমাও না ঠিকমতো খাও না..সারাদিন মন খারাপ করে থাকো এর থেকে ভালো চলো আমার সাথে..একটু হাটাহাটি করেও আসতে পারবে”

আমি ভেবে দেখলাম কথাটা মন্দ বলেনি ও, একটু মাইন্ড ফ্রেশ করা দরকার আমার..এভাবে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবো..রাজি হয়ে গেলাম আমি, নয়নার কলেজ খুব একটা দুর না, হেঁটে গেলে ২০-৩০ মিনিট মতো লাগে, আমিও ওই কলেজেই পড়তাম..তো দিয়ে এলাম ওকে..একটা ছোট্ট পার্ক আছে ওখানে, বাচ্চারা খেলাধুলা করে! তো ভাবলাম ওখানে একটু বসে থেকে যাই! পার্কের গেটের সামনে যেতেই চমকে উঠলাম আমি! আরমান স্যারকে দেখে পা টলতে শুরু করেছে আমার..মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না, মনে হচ্ছে যেনো কতো রাত ঘুমাননি, মুখটাও শুকিয়ে গেছে..ঈশ! কি অবস্থা হয়েছে লোকটার! ওনার সাথে দেখলাম সিফাত ও আছে কিন্তু আমি এখানে এই খোঁজ পেলেন কোত্থেকে উনি? ভাবার সময় পাইনি আমি, তার আগেই ছুটে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন উনি..রাগী গলায় বলে উঠলেন

“এতোটা হার্টলেস কিভাবে হলে তুমি রুহি? আমি কেমন আছি, কতোটা কষ্টে আছি! সেই খোঁজ একবারও নেবার প্রয়োজন মনে করলে না? নাকি নিজের মন থেকে সরিয়ে দিয়েছো আমাকে? ”

চলবে…

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#বোনাস_পর্ব
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

আমার খুব করে ইচ্ছে করছে ওনাকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু না, আমি তো নিজেই ওনার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করেছি, একটু একটু করে নিজেকে সামলাচ্ছি, এখন সেখান থেকে পিছিয়ে যেতে পারিনা আমি

” এটা পাবলিক প্লেস, সবাই দেখছে!”

আরমান স্যার আমাকে ছেড়ে দাড়ালো, কাতর নজরে তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে যেনো কতো কাল পর দেখছেন আমায়.. কতো যন্ত্রণা ওনার ওই দু চোখে, ওনার এই নজর আমার হৃদয়ে গিয়ে বিধছে! চোখ সরিয়ে বললাম

“কেমন আছেন আপনি?”

উনি ডান হাতে আমার গালটা ধরলেন, আমার মুখ ওনার দিকে ফিরিয়ে প্রশ্ন করলেন

“সাত সাতটা দিন, রুহি! তোমাকে ছাড়া কেমন থাকতে পারি বলো? আচ্ছা তুমি কি আমাকে ছাড়া ভালো ছিলে? না তো, তাহলে কেনো করছো আমার সাথে এমন?”

আমার গলায় দলা পাকিয়ে আসছে, ওনার এই অবস্থা দেখে সাথে কথা বলার সাহস নেই আমার! গাল থেকে ওনার হাতটা সরাতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পারলাম না, হাতটা কাপছে আমার! কি করবো? আমার ভালোবাসার মানুষটা সামনে দাড়িয়ে আছে, তাকে এতটা অবজ্ঞা করতে পারছি না

“দেখো না, কি ছিলাম আমি..কি হয়ে গেছি এই কদিনে.. শুধু তোমার খেয়ালে কতগুলো রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছি জানো?

কথা বলতে গিয়ে আটকে আটকে যাচ্ছিলেন উনি, আমার বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি কতটা কষ্ট নিয়ে বলছেন উনি এগুলো কারণ গত সাতদিন ধরে আমিও তো একই কষ্ট বুকে চেপে রেখেছি..আমি ইচ্ছে করে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম, ওনাকে এভাবে যে দেখতে পারছি না আমি.. এবার উনি দু হাতে আমার গাল ধরে আমার কিছুটা কাছে এলেন

“আমাকে দেখে তোমার কষ্ট হচ্ছে না রুহি? মন বলছে না সব ভুলে আমাকে মেনে নিতে?”

আমি এবার নিজেকে কিছুটা শক্ত করলাম, এভাবে আমি দুর্বল হয়ে পড়লে আমি ওনাকে কিভাবে আমার থেকে দূরে সরাবো? পারবো না তো! গাল থেকে সরিয়ে দিলাম এবার ওনার হাত দুটো!

“আরমান স্যার, প্লিজ! আমি সেদিনই বলে দিয়েছিলাম এই নিয়ে আমাদের মাঝে আর কোনো কথা হবেনা”

“কথা হবেনা! ব্যাস..! এইটুকুতেই কি সব ভুলে যাওয়া যায়? এতে কি অনুভূতিগুলো চাপা দেওয়া যাবে? আমার তোমার প্রতি যে ভালোবাসা আছে সেটা শেষ করে দেওয়া যাবে? এতোই সহজ নাকি?”

“সহজ নয়, তবে অসম্ভব ও নয়! সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন সব”

“কিন্তু আমি তো এখনি মানতে পারছি না..পারছি না তো নিজেকে সামলাতে..আচ্ছা তোমরা মেয়েরা পারো কিভাবে বলোতো? এতো সহ্য ক্ষমতা কি আল্লাহ শুধু তোমাদেরই দিয়েছেন? আমাদের কেনো দেননি?”

ঠোঁট কামড়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি আমি, কান্না থামিয়ে রাখতে চাইছি কিন্তু চোখের পানি কি আর আমার কথা শুনবে? বেহায়ার মতো টপটপ করে পড়েই যাচ্ছে..আমার চোখে পানি দেখে উনি মলিন একটা হাসি দিলেন

“দেখেছিস সিফাত! এই মেয়ে নাকি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে! আচ্ছা তোর তো গার্লফ্রেন্ড আছে তাইনা? মেয়েরা এত্তো জেদী কেনো তাহলে তুই তো বলতেই পারবি”

আমি ফুপিয়ে কান্না করে দিলাম এবার, উনি বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে দেখছেন আমায়, আমার চোখের পানি হয়তো ওনার এই বিরক্তির কারণ.. সিফাত এগিয়ে এসে আরমানের কাধে হাত রাখলো

“কন্ট্রোল ইউর্সেলফ আরমান..কি করছিস!”

“আমি কি করছি? ও কি করছে সেটা জিজ্ঞাসা কর..কি শান্তি পাচ্ছে ও এসব করে?”

“তোর কথা আমি বুঝতে পারছি.. তুই ওরদিকটা বোঝার চেষ্টা কর! ওর কথাও কিন্তু যুক্তিসঙ্গত! এখনকার সময়টাই এমন যে..”

“আই ডোন্ট কেয়ার সিফাত! ও একবার এগিয়ে আসুক আমার কাছে, তাহলেই আর কোনোকিছুর পরোয়া করবো না আমি..আমার শুধু ওকে চাই!”

ওনার কথা শুনে আমার কান্নার গতি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে, এতো ভালোবাসেন উনি আমায়? উনি আমার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন

“কান্না বন্ধ করো রুহি!”

“তুই ওকে বকছিস কেনো? শান্ত হ..!”

উনি সিফাতের কথায় পাত্তা দিলেন না, আমার কাছে এসে চোখে পানি মুছে বললেন

“কাঁদবে না একদম! নিজেই তো পিছিয়ে গেলে..এখন আবার চোখের পানি ফেলছো কেনো হ্যা? খুশি হবার কথা তো তোমার! অলরেডি শেষ করে দিয়েছো তুমি আমাকে আর কি চাও..নিজেও শেষ হবে এবার?”

আমি চোখ নিচু করে আছি! উনি লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিলেন তারপর দু হাতে আমার মুখটা উচু করে ধরে বললেন

“তুমিও পারবে না রুহি, কষ্ট তুমিও পাচ্ছো! তাহলে কেনো তুমি অন্যদের কথা ভেবে আমাদের কষ্ট দিচ্ছ? কি শান্তি হচ্ছে তোমার?”

আর পারছি না আমি, নিজের সাথে আমি যে ওনাকেও কষ্ট দিচ্ছি! ভুল করে ফেললাম না তো কোনো? কিছু ভাবতে পারছি না এই মুহূর্তে..আপাতত বাস্তবতাকে দূরে ঠেলে একটু শান্তি পেতে চাই আমি! নিজেই জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে! ওনার বুকে মুখ গুঁজে কান্না করলাম কিছুক্ষণ! উনিও আমাকে পরম আবেশে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে কিন্তু আমার কান্না একবারের জন্যেও থামানোর চেষ্টা করছেননা উনি! শুধু শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছেন আমায়..ওদিকে মিসেস শাহ্ আজ অফিসে যাননি, বাড়িতে থেকেই কাজ করছেন..ঐদিনের পর আরমান ওর বাবার সাথে আর একটাও কথা বলেনি, মিস্টার শাহ্ ও আর চেষ্টা করেননি ওর সাথে কথা বলার..মিসেস শাহ্ তখন আসেন, ছেলের এই অবস্থা উনি আর মানতে পারছেন না

“আরমান বাড়িতে নেই নাকি?”

“নাহ! সিফাত এর সাথে বাইরে গেছে..কদিন ধরে তো ছেলেটা বাড়ির বাইরেই বেরোয়নি..গুম মেরে গেছে একদম”

মিস্টার শাহ্ প্রতিউত্তর দিলেন না, ছেলের অবস্থা তো উনিও দেখছেন কিন্তু ঐযে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে তো নড়বেন না উনি

“আরমানের এই অবস্থা দেখতে পারছি না আর আমি.. সাতদিনে কি অবস্থা হয়ে গেছে ছেলেটার!”

“আরমান ইচ্ছে করে নিজের এই অবস্থা করেছে..মেয়েটা না করে দিয়েছে ইটস ফাইন! এর জন্যে এতো শোক পালন করার কি আছে?”

“এতো নিষ্ঠুরের মতো কথা বলো না তুমি, রুহিকে অনেক ভালোবাসে আরমান..ওকে দেখে বুঝতে পারছো না? রুহির ও জানিনা কি অবস্থা এখন”

“তোমার ছেলে এখানে বসে শোক করলেই যে ওই মেয়েটা ও ওখানে বসে শোক করবে তার মানে নেই! আরমান এতো ওভার ইমোশনাল সেটা তো জানতেই পারতাম না আমি এই ইনসিডেন্ট না হলে”

“তুমি এসবই দেখলে? ওর মণের অবস্থাটা কি একবারও বোঝার চেষ্টা করবে না? তোমার মন হয় না ছেলের সিদ্ধান্তে সমর্থন করা উচিত তোমার? ওইসব ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ভুলে মেয়েটার দোষগুণ বিচার করো..রুহি মেয়েটা কিন্তু একদম খাটি!

“তোমার কাছে খাটি মনে হতেই পারে কিন্তু আমার পারফেক্ট চাই! আবেগী হয়ে ছেলের বিয়ের ডিসিশন নেবার কোনো মানেই হয় না আর তুমি অন্তত ওকে এত মদত দিও না..পারলে বোঝাও ওকে”

“তুমি যতো সহজে কথাগুলো বলছো, আরমানের পক্ষে এগুলো মেনে নেওয়া ততো সহজ না! অবশ্য তুমি এসব বুঝবে না..তুমিও তো আধুনিক সমাজের নিয়ম কানুনের নিচে পিষে গেছো! ছেলের ভালো থাকাটা কার সাথে সেটা বোঝার চেষ্টা নেই তোমার”

মিস্টার শাহ্ এসব কথার উত্তর দিলেন না, তবে মিসেস শাহ্ ভীষণ চিন্তায় আছেন ছেলেকে নিয়ে..উনিও চান আরমান আর রুহির বিয়েটা হোক! দুজনেই এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাক! একসাথে ভালো থাকুক দুজনেই

পার্কের বেঞ্চে বসে আছি আমি আর আরমান স্যার! দুজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজমান.. নিরবতা কাটিয়ে উনি বললেন

“আমরা কেউই ভালো নেই রুহি! তাহলে কেনো এই জেদ?

“আপনার কাছে তো কিছুই গোপন করিনি আমি তবুও কেনো এই প্রশ্ন করছেন?”

“হুম জানি তো! সবার কথা ভাবছো তুমি শুধু আমার কথা ছাড়া! আমার যন্ত্রণা বুঝতে কেনো চাও না বলোতো? ভালোবাসো না আমায়? নাকি আমার কষ্ট দেখে আনন্দ পাচ্ছো?”

আমি কথাগুলো শুনেও না শোনার ভান করে আছি! আমি জানি উনি বারবার এসব কেনো বলছেন, আমাকে দুর্বল করার জন্য.. হঠাৎ উনি উঠে আমার সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসলেন, এক হাতে আমার হাতটা ধরে বললেন আকুতির স্বরে বললেন

“সব ভুলে যাও, সবকিছু! আর চলে এসো আমার কাছে.. আমি হাত বাড়িয়ে আছি তোমার দিকে..প্লিজ আমার হাতটা ধরে নাও!”

“হাত ধরলেই তো সমস্যার সমাধান হবেনা..আমি চাইনা আমার জন্যে কোনো প্রকার মনোমালিন্যতার সৃষ্টি হোক, কোনো সমস্যা হোক!”

“আচ্ছা? এতে তো তুমি মহান হয়ে যাবে! তারপর আমার কি হবে রুহি? আমি এখনি পারছি না এসব সহ্য করতে..তোমার প্রত্যাখ্যান আমাকে গত সাতদিন ধরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে! আর কতো?”

“আপনি কি ভাবেন কষ্ট শুধু আপনার হচ্ছে? আমার হচ্ছে না? হচ্ছে স্যার! তবুও আমি আপনার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি! আপনি আপনার বাবার অপ্রিয় হন আর তার কারণ আমি হতে চাই না”

“আমার বাবা কি চায় সেটার এতো চিন্তা কেনো তোমার?”

“আপনার বাবা আছে তাই আপনি বুঝবেন না, আমার তো নেই! আর আমি চাইনা আমার জন্যে কোনো বাবা আর তার সন্তানের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হোক!”

কথাটা বলেই আমি উঠে দাড়ালাম! উনিও উঠে দাড়ালেন আমার মুখোমুখি!

“একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো রুহি! হ্যা বা না তে উত্তর দেবে..তুমি ভালোবাসো আমায়?”

“স্যার আবার..”

“জাস্ট ইয়েস অর নো! আর কিছু শুনতে চাইনা”

থেমে গেলাম আমি! কিছুক্ষণ চুপ থেকে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম! ওনার কাছে উত্তরটা এক্সপেকটেড ছিলো তাই বেশি অবাক হলেন না

“তাহলে? আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি আমায় ভালোবাসো! আর কি চাই?”

“এর বাইরেও অনেককিছু আছে!”

উনি ভ্রু কুঁচকে ফেললেন! আমি মলিন একটা হাসি দিয়ে বললাম

” একটা কথা কি জানেন? আমাদের সম্পর্ক অনেকটা আকাশ আর মাটির মতো, একে অপরের মুখোমুখি তো থাকে কিন্তু কোনোদিন মিল হয় না তাদের”

উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেললেন! হয়তো রেগে গেছেন..আমিও আর কিছু বললাম না, আর কথা না বলাই ভালো আমাদের..ভাবলাম চলে আসবো তখনই আমাকে চমকে দিয়ে উনি বলে উঠলেন

“আমি সেদিন বাবাকে সব বলে দিয়েছি আমাদের ব্যাপারে..এন্ড ইউ নো হোয়াট? বাবাও সেই একই কথা বললেন যেগুলো তুমি আমাকে বলেছিলে সেদিন”

“কিহ! আপনি..আপনি আপনার বাবাকে এসব কেনো বলেছেন? স্যার আমি তো বলেছি যে আপনার বাবাকে এসব..”

“কেনো বলবো না? আরে তুমি তাকে কতো ঠিক চিনেছ আর সে তোমাকে কতটা ভুল জাজ করেছে সেটা জানাতে হবে না?”

“কি বলেছেন আপনি তাকে? আপনাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়নি তো? স্যার আপনাকে কে এইসব নিয়ে আলোচনা করতে বলেছিল ওনার সাথে? আমাদের ব্যাপার আমাদের মধ্যেই থাকতো!”

“সমস্যা যার জন্যে হচ্ছে তাকে তো সব জানাতে হতো রুহি! তাছাড়া এসব নিয়ে এখন তোমাকে ভাবতে হবে না! যদি কিছু ভাবার হয় সেটা আমার বাবাকে ভাবতে দাও”

“কিন্তু আপনি..স্যার শুনুন..”

উনি আর দাড়ালেন না, হনহন করে চলে এলেন! আমাকে যে আরেক চিন্তায় ফেলে গেলেন উনি! এতদিন শুধু ওনার চিন্তা ছিলো আর এখন আরেক চিন্তা এসে জুটলো.. জানিনা কি হয়েছে ওনাদের বাবা ছেলের মধ্যে..আল্লাহর কাছে এই মুহূর্তে একটাই মিনতি করছি আমি, ব্যাস ওনাদের বাবা ছেলের মধ্যে সব ঠিক থাকুক..যে সমস্যার আশঙ্কায় আমি সরে এলাম সেটা যেনো সত্যি না হয়

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]