উপসংহারে ভালোবাসা পর্ব-০২

0
338

#উপসংহারে_ভালোবাসা
#পর্ব_২
#তিয়াশা_জেরিন

একটা মেয়ের কাছে মা হওয়ার অনুভূতিটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি।খুব অলস মেয়েটাও যেন ভীষণ দায়িত্বশীল হয়ে উঠে।যত্ন করে আগলে রাখে তার সন্তানকে।ঠিক তেমনি একজন পুরুষের কাছেও বাবা হওয়ার অনুভূতিটা অন্য সকল অনুভূতিকে হার মানায়।রিয়ানা আর ইফসান দুই মাস হলো তাদের সন্তান এই পৃথিবীতে এসেছে।ইফসান যখন ১ম জানতে পারলো যে সে বাবা হতে যাচ্ছে তখন যে কি খুশি তার।আত্নীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিজের বাসাতে দাওয়াত করে খাইয়েছিল।রিয়ানার অবশ্যত মনে হয়েছিল ইফসান বোধহয় একটু বেশি বেশিই করছে কিন্তু পরবর্তীতে তার ইফসানের খুশি দেখে মনে হয়েছে থাক না সে যা করছে করুক।সব তো আমাদের সন্তানের জন্যই।এরপর আর কি,রিয়ানার উপর এক প্রকার যত্নের সুনামি বয়ে যেতে লাগলো।তার কখন কি লাগবে খুটিনাটি সব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতো।ইফসান সবসময়ই রিয়ানার খেয়াল রাখতো কিন্তু যখন শুনেছে রিয়ানা মা হতে চলেছে তার সন্তান তাদের পবিত্র ভালোবাসার চিহ্ন তার গর্ভে যত্নটা যেন আরো বেড়ে গিয়েছিল।ছেলেরা বোধহয় তার স্ত্রীকে যতটা না ভালোবাসে যখন সে তার সন্তানের মা হয় তখন তাকে আরো বেশি ভালোবাসে,সম্মান করে।

রিয়ানা এসব কথাই ভাবছিল।মাঝে মাঝে তার স্মৃতির পাতায় ডুব দিতে ভীষণ ভালো লাগে।হঠাৎ তার বাচ্চার কান্নার আওয়াজে সে স্মৃতির পাতা থেকে বর্তমানের পাতায় ফিরে।অতীত থেকে তার বর্তমান কম সুন্দর না বরং আরো বেশি সুন্দর।যত দিন যাচ্ছে ইফসান যেন রিয়ানার প্রতি তার ভালোবাসাটাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।রিয়ানার এখন নিজের কাছেই বড্ড খারাপ লাগে যে সে কখনোই ইফসানের মতো করে ভালোবাসতে পারেনি।

ছেলের কান্নার আওয়াজে ইফসান ছুটে আসে।সে রিডিং রুমে তার ল্যাপটপে কি সব কোম্পানির কাজ করছিল।রিডিং রুমটা পাশেই হওয়াই বাচ্চার কান্নার আওয়াজটা তার কানে গিয়েছে।ইফসান এসে জিজ্ঞেস করে,

-“কি হলো বাবু কাঁদছে কেন,কিছুক্ষণ আগে দেখে গেলাম ঘুমোচ্ছিল তো।”

ইফসানের কথায় রিয়ানা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।ছেলেটা সামান্য কেঁদে উঠলেও যেন তার বাবা অস্থির হয়ে যায়।রিয়ানা বললো,

-“আপনার ছেলের ক্ষুধা পেয়েছে ইফসান,সে এখন খাবে।”

রিয়ানার কথায় এবার ইফসান তার চিন্তিত মুখশ্রী থেকে বেরিয়ে উত্তর দিলো,

-ওহ

এরপর বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পরও যখন রিয়ানা বাবুকে খাওয়াচ্ছিল না তখিন ইফসান জিজ্ঞাসা করলো,

-“কি হলো খাওয়াচ্ছো না কেন ওকে?এই যে বললে ওর ক্ষুধা পেয়েছে।আর ওদিকে ঘুরছো কেন তুমি?”

ততক্ষণে বাচ্চাটা একটু শান্ত হয়েছিল।ইফসানের কথায় রিয়ানা এবার একটু বিরক্তমাখা কন্ঠে বললো,

-“তা আপনি এভাবে সামনে বসে থাকলে ওকে খাওয়াবো কি করে?”

প্রথমেই রিয়ানার কথাটা বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে ইফসান আফসোসের সুরে বলে উঠে,

-“হায় রে কপাল,বউয়ের সবকিছু নিজের করে নিতে পারলেও তার লজ্জার ল টাও এখন পর্যন্ত ভাঙতে পারলাম না।আমি ব্যর্থ।”

এরপর আবার রিয়ানার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলে উঠে,

-‘তা বউ আরো কিছু দেখার বাকি আছে বুঝি..

কথাটা বলে ইফসান দুষ্টুমি হাসি হাসতে থাকে।রিয়ানা ভাবতেও পারেনি ইফসান হঠাৎ তাকে এভাবে বলবে।রিয়ানা বিস্ময়ে হা করে ইফসানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফসানের ডাকে রিয়ানার হুশ ফিরতেই সে ভীষণ লজ্জা পেল আবার ইফসানের উপর রাগও লাগলো।লোকটা জেনেশুনে শুধু তাকে লজ্জা দেয়।সে রেগে বললো,

-“এই আপনি যান তো,বাবুকে খাওয়ানোর সময় হয়ে গিয়েছে।আপনি পরে বাবুর সাথে খেলেন।”

ইফসান এরপর আর বিরক্ত না করে হেসে বেরিয়ে যায়।যাওয়ার আগে রিয়ানাকে বলে,

-“আচ্ছা রিয়ানা,ইপ্সিতা কোথায় গো?ওকে সকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি না।”

রিয়ানা ইফসানের কথার প্রতিত্তোরে বললো,

-“ও তো ভার্সিটিতে গিয়েছে আজ।সকাল সকালই বেরিয়ে গিয়েছে তার নাকি কিসবকাজ আছে আর কোনো ফ্রেন্ডের কাছে নোটসও নেয়ার আছে তাই জন্য।”

এরপর ইফসান রিয়ানার কথায় ওহ বলে বেরিয়ে যায়।ইফসান বেরিয়ে যেতেই রিয়ানা বাবুকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় এরপর ইপ্সিতাকে ফোন দেয়।দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে সুমধুর কন্ঠে কেউ সালাম দিলো।

-“আসসালামু আলাইকুম ভাবীজান।”

রিয়ানাও মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়,

-“ওয়া আলাইকুমুস সালাম ননদজী।”

এরপর রিয়ানা আর ইপ্সিতার মধ্যে কথা হতে থাকে।

-“কি করো ভাবীজান?আমার সোনা বাচ্চাটা কি করে?”

-“সোনা বাচ্চাটা ঘুমায়।আর এই যে আমি তোমার সাথে কথা বলি ননদজী।”

-“হুম।ভাবীজান মা তোমার সাথে কথা বলছে না তাই না?”

রিয়ানা আর কিছু বললো না।তার গতকাল সন্ধ্যার কথা মনে পড়ে গেল।সে সন্ধ্যার দিকে সবার জন্য চা বা কফি কিছু করে।তেমনি তার শ্বাশুড়ির জন্য কড়া করে আদা দিয়ে চা বানায় কিন্তু এই কয়মাস অসুস্থ থাকায় সে আর এমনটা করেনি আর তার শ্বাশুড়িও তাকে তেমনকিছু বলেনি।কিন্তু আজ হঠাৎ তার শ্বাশুড়ি এসে তাকে বললো যে তার নাকি মাথা ব্যাথা করছে সেজন্য তার জন্য চা করতে।রিয়ানাও হাসিমুখে চা করে নিয়ে যেতে যেয়ে হঠাৎ পা টা বেঁধে যাওয়ায় চা টা হাত থেকে পড়ে যায় এতে চায়ের কাপটা ভেঙে যায়।এই নিয়ে তার শ্বাশুড়ি কত কথা তাকে শুনিয়ে দিল।সে নাকি তার ভালো চায় না,সে ইচ্ছে করে এমনটা করেছে।কিন্তু একবারও এটা ভাবলো না যে,মেয়েটা যদি পড়ে যেত তাহলে তার কি হতো।ইফসানের জন্য যখন পাত্রী দেখা হচ্ছিল তখন রিয়ানাকে দেখে তার শ্বশুরের,ইপ্সিতার তাকে পছন্দ হয় ইফসানের জন্য।ইফসানদের মধ্যবিত্ত পরিবার।তাই তার মা চেয়েছিল কোনো একটা বেশ বড়লোক ঘরের মেয়ে তাদের বাড়িতে বউ হয়ে আসুক।আবার বিয়ের আগে তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিনিস চেয়ে নেওয়া যাবে।ইফসান আর ইপ্সিতা তাদের মায়ের এমন আচরণে বিরক্ত।তাদের মা তো মা হিসেবে সেরা কিন্তু তার মানসিকতা এমন কেন।ইফসান আর ইপ্সিতা তার মাকে বুঝিয়েও কোনো লাভ হয়নি বরং তার মা আরো উল্টো বুঝেছে আর বলেছে,’হ্যাঁ তোরাই তো এখন বুঝাবি আমায়,তোদেরকে জন্ম দিয়েছি মানুষ করেছি,তোরা বোঝাবি না আমায়।’এরপর ইফসানের রিয়ানার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে ইফসানের মা রিয়ানার সাথে খারাপ আচরণ করলে তার স্বামী আশহাব রহমান তাকে বুঝিয়েছেন,যেন সে কখনো রিয়ানার সাথে খারাপ ব্যবহার না করে।মনে রেখ,তোমারও একটা মেয়ে আছে তুমি যেটা করবে কর্মফল হিসেবে সেটাই ফেরত পাবে।এই কথাগুলো বলার পর মিসেস ইভানা একটু নরম হয়েছেন।তবু সুযোগ পেলে কথা শোনাতে ছাড়েন না।সেদিনের ঘটনার সময় ইফসান বা আশহাব রহমান কেউই বাসাতে উপস্থিত ছিল না।ইপ্সিতা ছিল সে এটার প্রতিবাদ করেছে পরে সে ঘটনাটি তার বাবা বা ভাইয়াকে জানাতে চাইলে রিয়ানা না করে দেয়।সে চায় না তার ছেলের চোখে মাকে ছোট করতে।মায়ের ভুল ছিল কিন্তু ভুলটা না হয় মা-মেয়ের মধ্যেই থাক।রিয়ানা জানে মিসেস ইভানা বাইরে থেকে যতটা কঠিন দেখায় নিজেকে ভেতর থেকে সে ততটাই নরম।সে একদিন ঠিক পারবে মায়ের সব ভুল ভেঙে দিতে,মায়ের ভালোবাসা জিতে নিতে।তার যে মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার ভীষণ লোভ।রিয়ানা এসব কথাই ভাবছিল হঠাৎ ইপ্সিতার কথায় সে বলে,

-কি হলো ভাবীজান,কথা বলছো না যে,

-“হুম।আচ্ছা ওসব বাদ দাও।তোমার কথা বলো তার সাথে দেখা হয়েছে,বলেছো তাকে?তুমি নিষেধ করেছো বলে আমি কিন্তু বাবা বা ইফসানকে কিছু জানায়নি।”

রিয়ানার কথাশুনে ইফসানা হাসিমুখে বলে,

-“হ্যা,ভাবিজান এই মূহুর্তে তুমি তাদের কিছু বলো না।আমি আগে ওকে বলি তারপর বাবা আর ভাইয়াকে বলবো।ওরা সারপ্রাইজড হয়ে যাবে বলো।”

-হুম।All the best

-“আর প্রিয়া গিয়েছে ওখানে,উনি তো আবার ঘুম থেকেই উঠতে পারেন না।”

-“না তিনি এখনো এসে পৌঁছান নি,তাকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।ভাগ্য করে একখান বেস্টু পেয়েছি দেখি কখন আসে পেত্নীটা।আচ্ছা এখন রাখি কেমন।”

-ওকে ননদজী।

এই বলে ইপ্সিতা ফোন কেটে দেয়।

_____________

মেহেরবা রেডি হয়ে নিচে নেমে যা দেখলো এতে সে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল।সে দেখলো প্রিয়া রান্নাঘরে।মেহেরাব একটু উঁকি দিয়ে দেখলো প্রিয়া কি যেন একটা রান্না করছে আর মিসেস রুহি তাকে কিভাবে কি করতে হবে সেটা বলে দিচ্ছে মানে এক কথায় শিখিয়ে দিচ্ছে।যে মেয়ে রান্নাবান্নার কথা শুনলে দশহাত দূরে পালায় সে আজ রান্না করছে।যাক ভালোই হলো প্রিয়ার হাতের বানানো কিছু খাওয়া যাবে।তার জানের হাতের রান্না যেমনই হোক তার কাছে এর স্বাদ অতুলনীয় হবে।।মেহেরাব অফিসে আজ একটু দেরি করেই যাবে যেহেতু দেরি হয়েই গিয়েছে সে ফোন করে তার পি এ কে এবং তার অফিসের যাবতীয় কাজ দেখভাল যিনি করেন তাকে ফোন করে বলে দিয়েছে আজকের কাজের ব্যাপারে তাছাড়া মিটিংটাও বারোটার দিকে।তাই সে এগারোটার দিকে বেরোবে।প্রিয়ার সাথেও কথা বলতে হবে।মেয়েটাকে কাল বড্ড আঘাত দিয়ে ফেলেছে।মেহেরবাব রান্নাঘর থেকে তার মা এবং প্রিয়ার কথা শুনতে পেলো।মিসেস রুহি প্রিয়াকে বললেন,

-‘কি রে মামণি,তুই এত সকাল সকাল কার জন্য এসব রান্না করছিস?”

মিসেস রুহির কথা শুনে প্রিয়া পাস্তা রান্না করতে করতে বলে,

-“খালামণি ইপ্সিতার জন্য ও আমার কাছে আবদার করেছে।ওকে না কি করে করি।আর ওই পেত্নীটা জানে আমি রান্নাবান্নাতে কতটা অলস ইচ্ছে করে এমনটা করে।”

-“ও তাইতো বলি বিষয়টা কি,আপনার বেস্টু খেতে চেয়েছে তাই জন্যই নইলে আপনি আর রান্না দুইটা দুই মেরু।”

মিসেস রুহির কথা শুনে প্রিয়া একটু দুষ্টুমি করে বলে উঠে,

-“আমি কেন রান্না করবো খালামণি,বিয়ের পর তো আমার জামাই আমাকে রান্না করে খাওয়াবে।শুধু রান্না কেন বাসনও ধুবে।”

মেহেরাব এতক্ষণ ডাইনিং টেবিলে বসে ছিল প্রিয়ার এমন কথা শুনে হঠাৎ তার কাশি উঠে গেল।কাশির শব্দে মিসেস রুহি আর প্রিয়া দুজনেই ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকায় মিসেস রুহি জলদি যেয়ে এক গ্লাস পানি দেন তার ছেলেকে।কিন্তু প্রিয়া গেল না।এরপর ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন,

-“কি রে তুই কখন এলি?”

প্রিয়ার না আসাতে মেহেরাবের মনটা খারাপ হয়ে গেল।অন্যদিন হলে তো মেহেরাবকে নিচে নামতে দেখলেই বলে উঠতো,’খালামণি ওই দেখো তোমার ছেলে আসছে।ধরো নাহলে না খেয়েই পালিয়ে যাবে।’সে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো,

-“এই তো কিছুক্ষণ।”

এরপর মেহেরাব তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“মা,প্রিয়া ভীষণ রেগে আছে তাই না।”

-“তো কি রেগে থাকবে না,সকালবেলা করে উঠে চলে যেতে চাইছিল আমি আর তোর বাবা অনেক বুঝিয়ে এরপর তাকে একটু শান্ত করেছি।তবু সে এখানে থাকবে না আজ না হলে কালই চলে যাবে।আজ নাকি ইপ্সিতার সাথে দেখা করতে যাবে আবার কোনো ফ্রেন্ডের বাসায় কিছু নোটসও নিতে যাবে।”

-“বললেই হলো যাওয়াচ্ছি ওকে।কিন্তু মা ও রান্নাঘরে কি করছে?”

-“ওই যে ইপ্সিতা নাকি আবদার করেছে ওর কাছে পাস্তা খাওয়ার তাই।”

এরপর প্রিয়ার ডাকে মিসেস রুহি সেখান থেকে চলে যায়।প্রিয়া রান্নাটা শেষ করে ডাইনিং রুমে আসতেই মেহেরাবকে বসে থাকতে দেখে।প্রিয়া একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখে মেহেরাব তার দিকেই তাকিয়ে আছে।প্রিয়া পাস্তাটা একটা প্লেটে বাড়ার সময় হঠাৎ বলে উঠে,

-“শুধু বেস্টুর কথা ভাবলেই হয় না,আশেপাশে আরো মানুষ আছে তাদের কথাও একটু ভাবতে হয়।”

প্রিয়া এমন ভাব করলো যেন তার কথা শুনতেই পায় নি।প্রিয়া মিসেস রুহিকে বলে রেডি হতে চলে যায়।মেহেরাবের এবার ভীষণ রাগ হলো এভাবে ওকে ইগনোর করা,যে ছেলের সাথে একটু কথা বলার জন্য মেয়েরা মুখিয়ে থাকে আর তাকে ইগনোর করছে।কথা তো বলবে আর ওকে কিছু বলার সুযোগ তো দিবে না ম্যাডাম তার রাগ নিয়ে চলে গেল।প্রিয়ার সাথে সাথে মেহেরাবও চলে যায়।

প্রিয়ার রুমের সামনে মেহেরাব দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়াও কোনো কথা বলছে না।মেহেরাবও কোনো কথা বলছে না।এদিকে প্রিয়ার দেরি হয়ে যাচ্ছে।ইপ্সিতা অনেকবার কল করেছে তাকে ফোনটা রাতে সাইলেন্ট করে ঘুমিয়েছিল আর জেনারেল মুড করতে মনে ছিল না।মেহেরাব তার দুইহাত বুকে ভাজ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হাবভাব দেখে যেন মনে হয় নায়ক।অবশ্যত দেখতেও নায়কের থেকে কোনো অংশে কম নয়।প্রিয়া বুঝলো যে এ ঘরে আর তার রেডি হওয়া হবে না সে তার জামা-কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মেহেরাব তার হাত ধরে একটানে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে তাকে দাঁড় করিয়ে দেয়।এরপর প্রিয়ার অনেকটা কাছে এসে বলে,

-“আমাকে ইগনোর করার সাহস হয় কি করে তোর?”

মেহেরাবের এমন হঠাৎ কাছে আসাতে প্রিয়ার ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগলো।সে বললো,

-“মেহেরাব ভাইয়া হাত ছাড়ো আর সরে দাঁড়াও।”

প্রিয়ার এমন অস্বস্তিটা দেখে মেহেরাব বেশ মজা পেল।সে প্রিয়ার অস্বস্তিটা আরো বাড়িয়ে দিতে বললো,

-“জানিস প্রিয়া,তোর ওই গলার তিলটার উপর না আমার ভীষণ লোভ জন্মায়।”

মেহেরাব এর আগে প্রিয়ার সাথে এমন আচরণ কখনো করেনি।তিলের উপর আবার কার লোভ জন্মায় এসব উল্টাপাল্টা কি বলছে।তবে কি মেহেরাব ভাইয়া পাগল হয়ে গেল নাকি।প্রিয়ার মস্তিষ্ক বলে উঠলো,না না এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।এরপর প্রিয়া একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে তার কাছ থেকে রেডি হতে চলে যায়।মেহেরাবও মাথা নেড়ে হেসে নিচে চলে আসে।এ মেয়েটাকে এত কেন ভালো লাগে।প্রিয়া রেডি হয়ে নিচে আসে হিজাব করলে তাকে অনেক সুন্দর লাগে সত্যি মেয়েদের যেন পর্দাতেই বেশি সুন্দর লাগে।মেহেরাব মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।কি সুন্দর তার প্রাণপ্রিয়া।প্রিয়া পাস্তাটা একটা টিফিন বাটিতে ভরে বেরিয়ে গেলে মেহেরাবও তার পিছন পিছন বেরিয়ে যায়।মেহেরাবের এমন বেরিয়ে যাওয়া দেখে মিসেস রুহি মুচকি হাসলেন।মেহেরাব বাইরে বেরিয়ে যা দেখলো এতে প্রচন্ড রাগে তার চোখমুখ লাল হয়ে উঠলো…

চলবে।