এই কেমন ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
775

#এই_কেমন_ভালোবাসা 🌺🌿
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পার্ট_৫

খুশি কলেজে পা রাখতেই নীল খুশির সামনে এসে দঁড়ায়। নীলকে হঠাৎ সামনে দেখে ভ্রু কুচকায় খুশি।প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় নীলের দিকে খুশি। নীল বলে,

“হাই আমি নীল।”(নিজের হাত বারিয়ে দিয়ে)

খুশি নীল কে পাত্তা না দিয়ে পাশ কেটে চলে যেতে লাগে।কিন্তু নীল খুশির হাত ধরে ফেলে।খুশি রেগে বলে,

” এটা কি ধরনের ভদ্রতা ছারুন আমার হাত।”(হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে)

“এখন তো হাত ধরলাম মাত্র।সারা জীবন ছাড়ছি না বেব।”(নীল শয়তানি হেসে বলে)

খুশি এবার নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নীলের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আশে পাশের সব স্টুডেন্ট হা করে খুশির দিকে তাকিয়ে আছে।নীল তো পুরাই আগুন রেগে।হাত মুঠো করে আছে। চোখ লাল বর্ণ ধারন করেছে।খুশি বলে,

” এই থাপ্পড় টা মনে থাকলে আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।যত্তসব ফাউল।”

“কাজ টা তুমি মোটেও ঠিক করোনি। এখন দেখো আমি কি করি।”

বলেই নীল খুশিকে ধরতে যায় কিন্তু খুশি তার আগেই দৌড়ে ক্লাস রুমে চলে যায়।নীল ও খুশির পিছনে যেতে লাগে কিন্তু পথ আটকে দাঁড়ায় মাহির। এতোক্ষন দূর থেকে সব কিছুই দেখেছে মাহির।খুশি কি করে সেটাই দেখতে চাইছিল কিন্তু থাপ্পড় মেরে দিবে এটা ভাবেনও নি। মামলা আরো গম্ভীর হওয়ার আগে মাহির চলে আসে নীলের সামনে।

” আমার পথ আটকে দাঁড়ালি কেন?সরে দাঁড়া।”(নীল রেগে বলে)

“বাহ রে তুই কলেজে এসে মেয়েদের পিছু নিবি আর আমি কলেজের ভিপি হয়ে তাকিয়ে দেখবো?” (মাহির মুচকি হেসে বলে)

” এটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার।তুই কেন আসবি?”(রেগে)

“তুই যার পিছু নিয়েছিস সেও আমার পার্সোনাল প্রোপার্টি আর তুই আমার প্রোপার্টিতে হাত দিবি আর আমি ছেড়ে দিব ভাবলি কি করে।”

মাহির এবারও মুখে মুচকি হাসি নিয়ে বলে।মাহির যে অনেক রেগে আছে তা কাউকে বুঝতেই দিচ্ছে না।রাগ করলে যে সব যাবে তার।আর কলেজের সবাই মাহিরকে সম্মান করে। কখনো মাহিরকে রেগে উলটা পালটা কাজ করতে দেখেনি কলেজে।নীল বলে,

” তোর পার্সোনাল প্রোপার্টি মানে?”

“মানে বুঝিস না?আর যারে খুশির খবর নিতে পাঠিয়েছিলি সে তোকে কিছু বলে নি?

” ওর তো কাল থেকে খবরই পাচ্ছি না।”

“পাবি কি করে আমি সরিয়ে দিয়েছি যে।”(আবারও সেই মনকারা মুচকি হাসি মুখে মাহিরের)

নীল রেগে মাহিরের কলার ধরে বলে,

” কি করেছিস তুই জাফরের”(যেই ছেলে টাকে খুশির খবর নিতে বলেছিল তার নাম)

“কুল মিস্টার নীল কুল।আমি খুনি না যে খুন করবো। কিন্তু এমন অবস্থা করেছি কমপক্ষে ১৫ দিন তো হাসপাতালে থাকতেই হবে।”(নীল এর হাত নিজের কলার থেকে ছাড়িয়ে)

নীল রাগে ফুসছে শুধু। মাহির তার সব কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কলেজের ভিপি নীল হতে চেয়েছিল কিন্তু মাহির হয়ে যায়।মাহিরের ভিপি হওয়ার কারন অবশ্য মাহিরের সৎ কাজের জন্য।কিন্তু নীল তা মেনে নিতে পারেনি।সেই রাগ তো মাহিরের ওপর আছেই আবার খুশি কে নিয়ে ঝামেলা।মাহির আবার বলে উঠে,

“খুশির ডিটেইলস জানতে চেয়েছিস না?ওকে আমি বলছি। চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রির একমাত্র মালিক, কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভিপি মাহির চৌধুরীর হবু বউ, খুশি আহমেদ। আমার পার্সোনাল প্রোপার্টি খুশি। তার দিকে হাত বাড়ানো তো দূরে থাক চোখ তুলেও তাকাবি না। নয়তো তোর শরীরের একটা হাড্ডিও ঠিক থাকবে না।”(মাহির এবার একটু রাগ দেখিয়ে শাসিয়ে বলল।তবে সেটা নীলই শুনেছে,অন্য কেউ না)

নীল অনেক রাগ আর জেদ নিয়ে বলে,

“তোর পার্সোনাল প্রোপার্টি যদি আমি নিজের নামে না লেখিয়েছি তো আমিও নীল মাহমুদ না।পারলে আটকে দেখা আমাকে।”(বলেই নীল চলে যায় সেখান থেকে)

মাহির নীলের কথায় পাত্তা না দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।তবে মাহির ভাবে আজ থেকে খুশিকে কলেজ নিয়ে আসা নিয়ে যাওয়া সে নিজেই করবে।রিক্স নিতে চায় না মাহির।

এই দিকে অথৈ কলেজে এসে দেখে পরিস্থিতি কেমন যেনো।সবাই কিছু জিনিস নিয়ে আলোচনা করছে এটাই মনে হচ্ছে। আর আলোচনা করবেই না কেন নীল মাহমুদ কে থাপ্পর মেরেছে। নীলের ও পাওয়ার কম না।কলেজে মাহিরের পরে নীল কে সবাই ভয় পায়,কারণ নীলের বাবা মন্ত্রী পদে আছে। তার ছেলেকে খুশি থাপ্পর মেরেছে। অথৈ সোজা ক্লাসে গেলো। ক্লাসে গিয়ে দেখে খুশি বসে আছে। তাই ওর পাশে বসে বলে,

” কলেজে কি আজ কিছু হয়েছে? কেমন জানি লাগে।”

“কই?”(খুশি বুঝতে পারেনি তাই বললো)

” ওই যে বাইরে সবাই কি নিয়ে যেন আলোচনা করে। বুঝতে পারছি না ঠিক। ”

“হয়তো ফ্রি তে সিনেমা দেখেছে তাই।”

” মানে?”(অথৈ বুঝতে না পেরে বলে)

“মানে হলো আমি নীল নাকি কি যেনো নাম ওই ছেলেটাকে থাপ্পর মেরেছি। আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছিলো তাই।”

” কি!”

“হ্যাঁ। ”

” তুই জানিস না কার সঙ্গে ঝামেলা পাকিয়েছিস। ছেলেটা ভালো না একদমই।”

“আমিও ভালো না। কিছু করতে আসলে আরো দুইটা থাপ্পড় বসাবো হুহহ।”

অথৈ আর কিছু বলে না।ক্লাস শেষে দুইজনে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হলো। তখনই সামনে এসে দাঁড়ায় মাহির।খুশি বলে,

“কি চাই?”

“তোকে।”

” মানে?”(চমকে মাহিরের দিকে তাকিয়ে)

“এতো মানের কিছু নেই।আম্মুর অর্ডার তোকে যাতে বাড়িতে নিয়ে যাই। আমি বলেছিলাম আপদটাকে আমার গলায় ঝুলাও কেন।তারপর আমাকে ধমক দেয় তাই বাদ্ধ হয়ে তোকে নিয়ে যেতে এসেছি।”(মাহির ফেসে একটু রাগি ভাব এনে বলে)

” আমি যাব না আপনি যান একা।আর খালামনি দেখতে পাবে না যে আপনি আমাকে নিয়ে এসছেন কি আসেননি। আমি বলে দিব মাহির ভাইয়ার সঙ্গে এসেছি। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না আর আমারও ইচ্ছা নেই রাস্তা থেকে হেটে যেতে।” (একদমে কথা গুলো বলে থামলো খুশি)

“দুই লাইন বেশি বুঝতে কে বলেছে তোকে?আর শুনলাম আজ আবার ঝামেলা করেছিস।বাড়িতে চল, শাস্তি বাকি আছে তোর।”

” মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিবেন না তো আবার?”

“আমার ইচ্ছা, এখন আয়।”(খুশির হাত ধরে)

” না না তাহলে যাবো না আগে কথা দে মানে দেন?”

“বেশি বকিস তুই, চল। বাই ছোট বোন।”(শেষের কথা টা অথৈকে উদ্দেশ্য করে বলে খুশিকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়)

এতোক্ষন নিরব দর্শক হয়ে সব দেখছিল অথৈ।ওরা চলে যেতেই নিজেও চলে যেতে যেতে বলে,

” আমারও যদি একটা খালাতো জামাই থাকতো কতো ভালো হতো ইশশ!”(মন খারাপ করে)

মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছিল তখনই কারো সঙ্গে ধাক্কা লেগে পরে যায়। অথৈ রেগে বলে,

“ওই কোন ব্যাটারে!দেখে চলতে পারিস না?”

ওপরে তাকিয়ে সামনের মানুষটাকে দেখে মুখ চুপসে যায় অথৈ এর। কারণ সামনে রোদ স্যার দাঁড়িয়ে আছে রাগি ফেস নিয়ে।একেই তো অথৈ এর দোষ মাথা নিচু করে হাঁটছিল আর উলটা বকা দিল রোদ স্যারকে।এই একমাত্র রোদ স্যার,যাকে অথৈ বাঘের মতো ভয় পায়। অথৈ উঠে নিজের চশমাটা ঠিক করে মাথা নিচু করে বলে,

” সরি স্যার আর এমন হবে না।”

“চশমার পাওয়ার বদলে নিও তুমি।আজ কাল চোখে কিছুই দেখ না। ব্যাটারি একটা।”(রোদ রেগে বলে)

” স্যার আপনি আমাকে অপমান করছেন? জানি আমি চশমা পরি তাই বলে আমাকে ব্যাটারি বলবেন? জানেন সবাই আমাকে কত্তো কিউট একটা মেয়ে বলে!”

“যারা তোমাকে কিউট বলে তারা নিজেরাই কানা।”(বলেই সেখান থেকে চলে যায় রোদ)

এই দিকে অথৈ রেগে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে আর নিজে নিজে বলছে,

“দেখে নিব তোকে স্যারের বাচ্চা।”

” আরে এই দিকে কোথায় যাচ্ছি আমরা?এই দিকে তো বাড়ির রাস্তা না।”(খুশি অবাক হয়ে মাহিরকে জিজ্ঞেস করে)

“বাড়িতে যাচ্ছি না।একটা যায়গায় যাচ্ছি।” (মাহির)

” কোথায় যাচ্ছি?”(ভয়ে ভয়ে)

“তোকে মেরে নদীতে ফেলে দিতে যাচ্ছি।বুঝলি?এখন চুপ কর।”

“হোয়াট দা ফাও কথা মাহির দা!আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন কেন? আমি কি করলাম?দেখেন আমি এখনই মরতে চাই না।এখনো বিয়ে হয়নি আমার, বাচ্চা কাচ্চাতো আমার অনাথ হয়ে যাবে। একটু তাদের কথা ভেবে আমাকে ছেড়ে দিন।আপনি বড় মামা হয়ে ভাগ্নে-ভাগ্নিকে কি করে অনাথ হতে দেখবেন? আমাকে ছেড়ে দেন ভাইয়া।”(ন্যাকা কান্না করে বলে খুশি)

খুশির কথা শুনে জোরে গাড়ি ব্রেক করে মাহির।চোখ বড় করে খুশির দিকে তাকিয়ে বলে,

“বিয়ে না হয়ে বাচ্চা কাচ্চা এলো কই থেকে?”

” ওই যে ফিউচার বাচ্চা কাচ্চার কথা বলি। ছেড়ে দেন আমাকে ভাইয়া।”

মাহির মনে মনে বলে।

“তোর বাচ্চা কাচ্চার মামা না বাবা হবো আমি।আবুল একটা!”(মনে মনে)

” ওই ভাইয়া ছেড়ে দাও না ভাইয়া।আমার সোনা ভাইয়া।”

“সোনা টা ঠিক আছে,ভাইয়া যোগ করতে হবে কেন?(মাহির বিরবির করে বলে)

” কিছু বললা ভাইয়া?”

“ওই মেয়ে চুপ করবি তুই আর কতবার বলবো ভাইয়া ডাকবি না আমায়।কথা কানে যায় না?চুপ করে বসে থাক।বাড়িতে যাচ্ছি আমরা।” (রেগে বলে)

খুশি চুপ হয়ে যায়। মাহির চেয়েছিল আজ খুশিকে নিয়ে একটু ঘুরবে। কিন্তু খুশি মাহিরের মুডের ৩৬ টা বাজিয়ে দিল। তাই আবার ঘুরে বাড়িতে যাচ্ছে মাহির। এই দিকে খুশি তো মহা খুশি তাকে মাহির মারবে না শুনে মনের আনন্দে গান গাচ্ছে।

“পানির নিচে ডলফিনটা তো জঙ্গলের মতন হেই দাদা জঙ্গলের মতন।”

“এটা আবার কি গান জীবনেও শুনিনি।”(মাহির)

” এটা ইয়ামিনের গান আমার ফেভারিট কার্টুন ক্রিয়েটর শ্রাবণী আপা।”

“ওহ আচ্ছা।আবুলের ডিম সব বুঝে,শুধু আমাকে ছাড়া।”(শেষের কথাটা মনে মনে বললো।)

চলবে?