#এই_কেমন_ভালোবাসা 🌺🌿
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পার্ট_৬
ওহে কী করিলে বলো পাইব তোমারে,
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে-
ওহে কী করিলে বলো পাইব তোমারে,
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে-
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ,
এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ,
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।
তিন লাইন গান টা বলে থামলো মাহির। মাহিরের কাছে আবেগ কন্ট্রোল করতে, খুশির থেকে দূরে থাকতে খুব যে কষ্ট দায়ক হয়ে উঠেছে।কাছে থেকেও মাহিরের মনে হচ্ছে খুশি অনেক দূরে, ১২ বছর তো দুরেই ছিলো মাহির খুশির থেকে এখন এতো কাছে থাকায় মাহিরের খুশি হওয়ার কথা কিন্তু কেন অশান্তি লাগছে এই মনে।খুশি কি বুঝবে না কখনো মাহির তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেই ছোট বেলা থেকে,মাহিরের একটা ভুলের জন্য আর কতো শাস্তি পাবে।
মাহির বুকে জরিয়ে রাখা ছবি ফ্রেম টা সামনে এনে দেখে মুছকি হাসে। ছবিটাই ৪ বছরের খুশি বউ সেজে আছে আর ১৪ বছরের মাহির বর সেজে। ছবি টা খুশির জেদে তোলা, খুশি কি সুন্দর ফকলা দাত বের করে হেসে মাহিরের হাত ধরে পজ দিয়েছে আর মাহির মুখ গমরা করে আছে কারন জামাই সাজতে মাহিরের মটেও ইচ্ছা ছিলো না খুশি জোর করে সাজিয়েছে।
মাহিরের মনে পরে অতীতের কিছু কথা।
১২ বছর আগে।
১৪ বছরের মাহির তার কাছে বই ছাড়া অন্য কিছুই দেখা যায় না সব সময় বই নিয়ে পরে থাকে। এই দিকে আমাদের খুশি বিচ্ছু একটা বই দেখলেই মাথা ব্যথা ব্যথা হয় কি আর জ্বর আসে তার সব সময় দুষ্টুমি করে বেরায়। মাহিরের ক্লাস সেভেন এর ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়ে নানু বাড়ি বেরাতে যায় মাহির ,মাহিরের আম্মু আব্বু। যদিও মাহির যেতে চাইছিল না তার নাকি গ্রাম ভাল লাগে না আর না যাওয়ার কারন আরেকটা আছে সেটা হলো খুশি তার অবস্থা নাজেহাল করে দিবে। কিন্তু মা এর ধমকে যেতে রাজি হয় মাহির।
বেরিয়ে পরে রামপুর গ্রামের উদ্দেশ্য, কলকাতা থেকে ট্রেনে ৭ ঘন্টা জার্নি করে মুরারায়ে স্টেশনে নেমে, বাস ধরে।বাস থেকে নেমে ১৫ মিনিট মাটির রাস্তাই হেঁটে যেতে হবে তাদের। বৃষ্টির দিন মাটির রাস্তা কাদায় ভরে আছে আর এই কাদার মধ্যে ভ্যান বা রিকশাও যাবে না অতজ্ঞায় হেঁটেই যেতে হচ্ছে তাদের। মাহির তো রেগে আগুন এই কাদার মধ্যে কি করে যাবে সে। কাধে ব্যাগ নিয়ে প্যান্ট হাটু পর্যন্ত তুলে হেঁটে যায় মাহির অনেক রাগ লাগছে তার এই জন্যই গ্রাম ভাল লাগে না মাহিরের। ১৫ মিনিট অনেক কষ্ট করে হেঁটে আসে সবাই আর একটু পরেই তার নানু বাড়ি।তখনি কানে একটা ডাক ভেসে আসে মাহিরের।
“ভাইয়ায়ায়ায়ায়া তুই এসেছিস দাঁড়া আমি তোকে নিতে আসছি , আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম ভাইয়া।
মাহির সামনে তাকিয়ে দেখে খুশি রকেটের মতো দৌড়ে তার কাছেই আসছে, এই মেয়ে যে ভাবে দৌড়াচ্ছে ব্রেক করতে পারবে কি তার ও ঠিক নেই। মাহির উল্টো দিকে ঘুরে যেই না এক পা বারাবে ওমনি পিছলে মুখ থুবরে পরে কাদার মধ্যে। ” যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়” খুশির থেকে বাছতে পালাতে লেগে নিজেই কাদায় পরল মাহির। খুশি মাহিরের থেকে পাচ হাত দূরে দারিয়ে পরে। মাহির উঠে সামনে তাকায় মাহির কে দেখে খুশি খিল খিল করে হেসে দেই। মাহির কাদায় এক দম মেখে গেছে।
“ভাইয়া তুই ভুত হয়ে গেছিস আমাদের পুকুর পারের তেতুল গাছের ভুত।(বলেই আবার হেসে উঠে খুশি)
খুশির এমন হাসি দেখে মাহির রেগে ফসফস করছে শুধু। খুশি হাসতে হাসতে পারছে না কাদায় গরাগরি দিতে। মাহির রেগে খুশির কাছে এসে খুশি কে সক্ত করে জরিয়ে ধরে। খুশির হাসি থেমে গেছে মাহির ছেরে দিতেই খুশি বলে।
” ভাইয়া এটা তুই কি করলি তোর গায়ে কাদা আর আমাকে জরিয়ে ধরলি কেন আমারও এখন কাদা লেগে গেলো। (রেগে বলে খুশি)
“আরে অনেক দিন পরে এসেছি জরিয়ে না ধরলে হয় বল।কিন্তু তোর মুখে কি যেনো নেই মনে হচ্ছে।
” কি নেই?
“ওয়েট।
বলেই মাহির নিজের মুখে লেগে থাকা কাদা হাতে নিয়ে খুশির পুরো মুখে লাগিয়ে দেয়।।
” আয়ায়ায়ায়া ভাইয়ায়ায়ায়া তুই সত্যি একটা বজ্জাত।
“পুছকি একটা মেয়ে এতো চিৎকার করিস কি করে কান টা গেল আমার এখন যেতে আমাকে।
এই বলে মাহির চলে যায় আর খুশি রেগে ফুসফুস করতে থাকে। তখনি খালামনি আর খালুআব্বু আসে খুশির কাছে,খালামনি চিনতে না পেরে বলে।
” কে তুমি মেয়ে এমন কাদায় লেপ্টে আছ কেন?(তারা একটু দূরে থাকায় কিছুই দেখেনি)
“আয়া খালামনি আমি খুশি।
” আরে পুছকি তুই এমন অবস্থা কেন তোর,,।।
“তোমার ওই বজ্জাত ছেলে করেছে নিজেও কাদায় পরেছে আর আমাকেও মাখিয়েছে।(নাক টেনে কেদে)
” আচ্ছা মামনি আমি অকে বকে দিব চল আমার সাথে।
রামপুরে জমিদার বাড়িতে যায় সবায়, মাহিরের নানা জমিদার ছিলো। গ্রামের মানুষ খুব সম্মান করে মাহিরের নানা কে। মাহিরের নানার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে মানে মাহিরের আম্মু মাহিরার বিয়ে দিয়েছে কলকাতা শহরে।আর ছোট মেয়ে মানে খুশির আম্মু মুনতাহার নিজের গ্রামেই বিয়ে দিয়েছে।
সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে মাহিরকে পুকুর পারে নিয়ে যায় অর্জুন (মামার ছেলে) মাহিরের এক বছরের ছোট । পুকুরে গোসল করে খাওয়া দাওয়া সেরে মাহির কে যে রুম দেওয়া হয়েছে সেখানে যায় এতো জার্নি করেছে ঘুমানো খুব দরকার। বেডে শুয়ে একটু চোখ বন্ধ করেছে তখনি কথা থেকে খুশি এসে মাহিরের পাসে শুয়ে পরে।
মাহির চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে খুশি।
“এই অসভ্য মেয়ে তুই আমার কাছে শুলি কেন?
” আমার তোর কাছে শুয়ে থাকতে ভালো লাগে ভাইয়া। ঘুমাতে দে আর তুই ও ঘুমা।
“তুই যা এখান থেকে আমি একা ঘুমাব আমি কাওকে নিয়ে ঘুমাতে পারি না।
” আমাকে তারিয়ে দিলে আমি কান্না করে দিব ভাইয়া আর খালামনির কাছে নালিশ করবো তখন তোকে বকা দিবে।।
“উফফ আল্লাহ শুরু হলো এই মেয়ের অত্যাচার , এখন আমাকে আম্মুর ভয় দেখিয়ে কি না কি করাবে কে জানে।
মাহির চুপ করে শুয়ে পরে অনেক ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে যায়।। রাত ৪ টাই ঘুম ভাংগে মাহিরের চোখ খুলে পাসে তাকিয়ে দেখে বিচ্ছু টা নেই। মাহির ফ্রেস হয়ে নিচে যায়। নিচে গিয়ে দেখে খুশি অর্জুনের সঙ্গে দুষ্টুমি করছে কেন জানি মাহিরের ভালো লাগছে না এটা। তাই মাহির গিয়ে অর্জুন আর খুশির মাঝে বসে পরে।অর্জুনের সঙ্গে কথা বলতে লাগে।
সবায় গল্পে মেতে আছে বড় আপা এসেছে তাই খুশির আম্মুও এসেছে নিজের বাপের বাড়ি। আর খুশি তো সব সময় ই এই বারিতেই পরে থাকে।
গ্রামের বাড়ি তে কেটে যায় কইদিন এই কইদিনে খুশি মাহির কে অনেক জালিয়েছে কিন্তু মাহিরের আগের মতো বিরক্ত লাগে নি। তবে খুশি অন্য ছেলের সঙ্গে দেখলে খুব খারাপ লাগে মাহিরের তাই এই কইদিন সব ছেলের থেকে দূরে রেখেছে খুশি কে এমন কি অর্জুনের থেকেও।
সকাল সকাল খুশি খালামনির রুমে যায় গিয়ে দেখে খালামনি আয়নার সামনে বসে সাজছে খুশি গিয়ে বলে।
” খালামনি আমাকে বউ সাজিয়ে দাও না পিলিজ(প্লিজ)।
“তুই সাজবি?
” হুম হুম।
“আচ্ছা আয়
তার পর খালামনির একটা লাল শারি পরিয়ে সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দেয় খুশি কে মেক আপ করে। খুশি কে দেখতে একদম পুতুলের মতো লাগছে। ছোট বউ। খুশি নিজেকে আয়নায় দেখে ফকলা দাতে হেসে দেই।।খালামনি বলে।
” যা মাহির কে দেকে আন আমার রুমে।
“আচ্ছা খালামনি।
বলেই শারি ধরে দৌড় লাগায় মাহিরের রুমে। মাহির একটা গল্পের বই নিয়ে পড়ছিল তখনি কেও রুমে এসেছে মনে করে সামনে তাকায় খুশিকে বউ সাজে দেখে হা হয়ে যায় মাহির। খুশি কে দেখতে একদম লাল পরি লাগছে।
” ভাইয়া খালামনি তোকে ডাকে তুই আয় এখনি আয়।(কথা বলেই মাহিরের হাত ধরে টেনে নিয়ে জেতে লাগে মাহিরকে কিছু বলার সুযোগ ই দিল না)
খালামনির রুমে।
“কখনো না আম্মু আমি এই সব পারবো না আমাকে ছেরে দাও।
” কেন পারবি না বিয়ে করতে তো আর বলি না জামাই সেজে শুধু কইটা ছবি তুলবো জাস্ট।
“কেন আমাকেই কেন জামাই সাজতে হবে।
” ভাইয়া জামাই হ না আমার তুই আমি ছবি তুলবো সুন্দর করে। (খুশি বলে)
“না মানে না।
” ঠিক আছে আমি অর্জুন ভাইয়া কে ডেকে আনি ভাইয়া জামাই সাজবে দিয়ে আমরা ছবি তুলবো।
এই বলে খুশি যেতে লাগে তখনি মাহির খুশি কে আটকে ধরে বলে।
“কথাও যাওয়ার দরকার নেই আমি জামাই হচ্ছি।
খুশি খুশিতে লাফিয়ে উঠে। খালামনি মুচকি হাসে মাহিরের জেলাস দেখে। তারপর মাহির জামাই সাজে। খুশি আর মাহিরের অনেক ছবি ক্যামেরা বন্দি করা হয়।
দিন যত যেতে লাগে মাহির খুশির প্রতি দুর্বল হতে থাকে এখন তো খুশি না চাইলেও মাহির খুশি কে নিজের কাছে ঘুমাতে বলে। মাহিরের খুশির প্রতি পাগলামি যেনো বেরেই জাচ্ছে দিন দিন এটা কেও খেয়াল না করলেও খুশির আম্মু ঠিক খেয়াল করেছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না বড় বোনের ছেলে বলে। এখন খুশি কে ছেলে তো দূরে থাক মেয়ে বান্ধবির সাথেও খেলতে দেই না মাহির। মাহির ভাবে খুশি শুধু তার ই ফ্রেন্ড অন্য কারর না। খেলতে হলে মাহিরের সাথেই খেলতে হবে যা করবে মাহিরের সাথেই।।
মাহির গ্রাম ঘুরতে গেছিল একা, গ্রাম ঘুরে এসে পুরো বাড়ি খুজে খুশি কে কিন্তু কথাও পায়না। খুশিদের নিজের বাড়ি তেও যায় মাহির সেখানেও নেই খুশি। মাহিরের রাগ যেনো মাথায় চরে বসেছে খুশি কে পেলেই মেরে ফেলবে এমন অবস্থা। মাহির আবারও নানু বাড়ি এসে সব জায়গা আরও একবার খুজে তবুও পায় না। তখন মনে পরে ছাদে দেখা হয়নি মাহিরের। মাহির দৌড়ে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে দেখে তো মাহিরের রাগ সাত আসমানে উঠে যায়। কারণ ছাদে অর্জুন আর খুশি বর বউ খেলছিলো। খুশি ফুল গাছের পাতা ছিরে রান্না করে অর্জুন কে খাওয়াচ্ছিল।
মাহির ওদের কাছে গিয়ে খুশির হাত টেনে তুলে ঠাসস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়। খুশি ভয়ে কান্না করে দেয়। অর্জুন বলে
“ভাইয়া তুমি খুশি মারলে কেন?
” তুই চুপ থাক তোকে বলেছিলাম না আমি খুশির সঙ্গে খেলবি না আর।(রেগে বলে মাহির)
“কেন ভাইয়া খুশি আমি তো রোজ খেলি এখন খেলব না কেন?
মাহির রেগে অর্জুন কেও থাপ্পড় দিয়ে বসে। খুশি আরও ভয় পেয়ে যায়, ভয়ে সেখান থেকে দৌড়ে নিচে যেতে লাগে মাহির ও খুশির পিছু নেই।
” খুশি দারা বলছি চলে গেলে তোর কপালে আরও দু:খ আছে।
খুশি দৌড়ে আসে কিন্তু নিচ তলা যাওয়ার সিরির কাছে মাহির খুশির হাত ধরে ফেলে।
“ভাইয়া ছার আমাকে আমি আম্মুর কাছে যাবো। (কান্না করে বলে খুশি)
” কথাও যাবি না তুই এখন আমার থাকবি।
“না আমি তোর কাছে থাকব না তুই আবার আমাকে মারবি।(হাত ছারনর চেস্টা করে)
” মারব না আর তুই আমার কথা শুনলে মারব না।
“না তুই ছার আমাকে।
বলেই খুশি হাত ঝারি দেই আর মাহিরের হাত থেকে ছুটে যায় খুশির হাত।কিন্তু পিছনে সিরি ছিলো আচমকা ছারায় খুশি নিজেকে সামলাতে পারে নি ওপর থেকে সিরি তে গরতে গরতে নিচে পরে যায়। তখনি মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পরতে লাগে। মাহির তো পাথরের মতো দারিয়ে আছে কি হলো এই মহুরতে কিছুই মাথায় ধুকছে না তার। যখন তার মাথায় ধুকল তখন চিৎকার করে বলে।
” খুশিইইই!!
চলবে?
(রিচেক করা হয়নি৷ বানাম ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই মন্তব্য করে বলবেন)