এই মন তোমারি পর্ব-০৪

0
194

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_০৪

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করার সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে যায় শাফায়াতের।সে চোখ খুলে দেখে সূরা তার বুকের উপর বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে রয়েছে।যা দেখে শাফায়াতের রাগ হলেও কিছু না বলে সূরা কে বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে মসজিদে চলে গেল ফজরের সালাত আদায় করতে। শাফায়াত বাইরে যাওয়ার সাথে সাথে টিপটিপ করে চোখ খোলে সূরা।তার ঘুম শাফায়াতের আগেই ভেঙ্গেছে। কিন্তু সূরা যখন দেখে সে শাফায়াতের বুকের উপর শুয়ে রয়েছে,তখন ইচ্ছা করে না উঠে ঘুমের ভাব ধরে সেভাবেই পড়ে থাকে। যদিও তার ভালো লাগছিলো আবার ভয় ও করছিলো যদি শাফায়াত তাকে বকা দেয়।কিন্তু যখন দেখলো তার বর কিছু বলছে না তখন সে মটকা মে’রে সেভাবেই পড়ে থাকলো।আর শাফায়াত কে বাইরে যেতে দেখে সে লাফ দিয়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো,

-“গতরাতে মাজেদা খালা বলেছে এটা কলঘর আর বড়লোকদের ভাষায় কি জানি বলছিলো? ও হ্যাঁ মনে পড়িছে ওশার রুম। অতঃপর সূরা ওয়াশরুমে ঢুকে বললো, বড়লোকদের ওশার রুম কত্তো সুন্দর রে বাবা।সাবান , স্নো ,পাউডার , শ্যাম্পু ,আয়না সব কিছু আছে। রাতে মাজেদা খালা আমাকে দেখায় দিছিলো কোনটা কেমন কি করতে হবে। দূর ছাতার মাথা আমি তো সব ভুলে গেছি , খালা কি কি বলছিলো? এখন আমি অযু করবো কেমনে বলে সূরা শাওয়ার এর কাছে গিয়ে বললো, আমার ঠিক মনে আছে।খালা বলছিলো এইটাই মোচড় দিলে পানি পড়বে। সূরা তৎক্ষণাৎ এক গাল হেসে শাওয়ার চালু করে দিলো।আর উপর থেকে পানি এসে তাকে ভিজিয়ে দিতে লাগলো।যা দেখে সূরা বললো, আরে আরে এই বাড়ির ছাদ ফুটো হয়ে গেল নাকি? বৃষ্টির পানি ভেতরে এলো কেমনে? এইখানে যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে তাহলে নিশ্চয় রুমের ভেতর ও বৃষ্টি হচ্ছে।তার মানে নরম তুলতুলে বিছানা ও ভিজে যাচ্ছে। পরক্ষণেই সূরা ওয়াশরুমের সামনে এসে বললো, কিন্তু রুম তো শুকনো আছে।ওহ্ তার মানে ঐ যন্ত্র টা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে ।”

-” প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে শাফায়াত মসজিদ থেকে এসে দেখে সূরা বিছানায় নেই । সূরা কে না দেখে একটু চিন্তিত হয়ে গেল শাফায়াত। তৎক্ষণাৎ তার চোখ গেল ওয়াশরুমের দিকে।ওয়াশরুমের দরজা খোলা রয়েছে।ভেতর থেকে পানি পড়ার আওয়াজ হচ্ছে। শাফায়াত কয়েক বার এই মেয়ে এই মেয়ে করে ডেকে সূরার সাড়া না পেয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলো সূরা কাকভেজা হয়ে শাওয়ার বন্ধ করার চেষ্টা করছে। শাফায়াত এগিয়ে গিয়ে শাওয়ার বন্ধ করে দিয়ে ধমকের সুরে বললো, এতো সকাল সকাল গোসল করতে কে বলেছে তোমাকে?সব কাজে তোমার পাকনামি করা লাগবে। বে’য়া’দ’ব মেয়ে একটা। জ্বালিয়ে মারছে আমাকে?”

-” সূরা ভয় পেয়ে ন্যাকা কান্না করে বললো, আমি গোসল করতে আসি নি। আমি তো অযু করতে আইছিলাম। কিন্তু যেই অযু করার জন্য এই যন্ত্র টা চালু করছি আর বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।”

-” ন্যাকা কান্না বন্ধ করে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করো।না হলে ঠান্ডা লেগে জ্বর বাঁধিয়ে নিবে।আর জ্বর হলেও সমস্যা কি? আমি তো আছিই তোমার সেবা শুশ্রূষা করার জন্য। আম্মি তো আমাকে তোমার হুকুমের দাস বানিয়ে রেখেছে।”

-“আমি তো জামা কাপড় আনি নি।ভেতর থেকে আমার একটা জামা এনে দিবি সুন্দর ব্যাডা মানুষ?”

-” না দিবো না।রাতে আম্মি কি বলে গিয়েছিলেন তোমাকে? তুই তুকারি করতে না করেছিলো । ভুলে গিয়েছো সে কথা? চার আঙ্গুলে একটা মেয়ে হয়ে শাফায়াত দেওয়ান এর সাথে সাথে তুই তুকারি করে।আর একবার যদি তোমার মুখে তুই তুকারি , ব্যাডা মানুষ শুনেছি তোমার মুখ একদম ভেঙ্গে দিবো আমি।কথাটা মাথায় থাকে যেন বলে শাফায়াত রুমে এসে দেখে কোথাও সূরার জামাকাপড় কিছু নেই।সে কি করবে বুঝতে না পেরে তার বোন নুজাইফা কে কল করে তার একটা ড্রেস দিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নুজাইফা কল রিসিভ করার আগেই নাজমা দেওয়ান তার নিজের একটা শাড়ি আর প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে এসে বললো,মেয়েটার বাড়ি থেকে ওর জামাকাপড় কিছু নিয়ে আসিনি। তাই আপতত আমার এই শাড়িটা নিয়ে আসলাম। এখনকার মতো এটা পরবে ।আর তুই আজকে সূরা কে সাথে করে নিয়ে কয়েক টা ড্রেস কিনে দিস।”

-” সরি আম্মি। আমার আজ অফিস আছে।আমি যেতে পারবো না।আপনি বা নুজাইফা গিয়ে নিয়ে আসবেন।”

-” ঠিক আছে। কিন্তু সূরা কোথায়? ওকে দেখছি না যে?”

-” ওয়াশরুমে গিয়ে দেখেন আপনার সূরা আছে।সে অযু করতে গিয়ে গোসল করে বসে আছে। বে’য়া’দ’ব অ’স’ভ্য মেয়ে একটা। শুধু মাত্র আপনার জন্য ওকে সহ্য করতে আমার। আমি কিন্তু আর সহ্য করবো না আম্মি। আপনি ওকে আমার রুম থেকে নিয়ে যাবেন। নাজমা দেওয়ান প্রতিত্তরে কিছু না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে সূরা ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।তিনি সূরা কে শাড়ি দিয়ে চলে আসতে যান এমন সময় সূরা পেছন থেকে ডেকে বললো,আমি তো শাড়ি পরতে পারি না মা। তুই কি আমাকে শাড়ি টা পরিয়ে দিবি ? পরক্ষণেই সূরার মনে হয় সে আবারো তুই করে বলে ফেলেছে। তৎক্ষণাৎ সূরা দাঁত দিয়ে জ্বিভ কে’টে বললো, ঐ মুখ ফসকে আবারো তুই বেড়িয়ে গেছে।এই আমার চোখ ছুঁয়ে বলছি আমি আর কখনো তুই করে বলবো না।”

-” মনে থাকবে তো?”

-” হ্যাঁ মা । খুব করে মনে থাকবে।”

-” নাজমা দেওয়ান মিষ্টি হেসে সূরা কে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে বললো , ড্রেসিং টেবিলের উপর আমি কিছু গয়না রেখে এসেছি। এইগুলো পরে নিচে আসবে কেমন।”

-” ঠিক আছে মা।”

-“সূরা ভেজা কাপড় বেলকনিতে মেলে দিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুড়ি ,কানের দুল পরে একটু জোরের সাথে বললো, ওমা বড়লোকদের শাড়ি চুড়ি পরে আমাকে কি সুন্দর লাগছে। একদম যেন আসমানের পরী।”

-” কিছুদিন আগে বুড়ি গঙ্গা নদীর তীরে একটা মহিলার লাশ পাওয়া গিয়েছে।যে কেসের দায়িত্ব শাফায়াতের উপর পড়েছে। শাফায়াত সেই কেসের ফাইল চেক করছিলো , এমন সময় সূরার চিৎকার শুনে আয়নার মধ্যে একটা মায়াবী চেহারা দেখে ধমকে যায়।যে চেহারার মধ্যে নেই কোনো প্রসাধনীর ব্যবহার । হঠাৎ শাফায়াতের নজর যায় সূরার হাঁটু পর্যন্ত লম্বা চুলের দিকে। চুল থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ে টাইলস ভিজে গিয়েছে। শাফায়াত কি মনে করে ফাইল বিছানার উপর রেখে হাতে একটা টাওয়াল নিয়ে সূরার পেছনে দাঁড়িয়ে তার লম্বা চুলগুলো মুছে দিয়ে বললো, যে চুলের যত্ন নিতে পারো না সে চুল এতো বড়ো রাখার কি দরকার বে’য়া’দ’ব মেয়ে?”

-” মনিরুল কাকার থেকে শুনেছি আমার বাপ নাকি আমার চুল অনেক পছন্দ করতো । তিনি আমার চুলে শ্যাম্পু করে দিতো, তেল দিয়ে চুল বেনি করে দিতো।
ছোটবেলা থেকেই নাকি আমার চুল বড়ো। অবশ্য কাকি অনেক বার চুল কেটে দিতে চায়ছে।সে বলতো আমি এতো বড় চুলের শ্যাম্পু তেল দিতে পারবো না। কিন্তু কাকা কা’ট’তে দেয় নি। প্রথম প্রথম আমার বিরক্ত লাগতো। কিন্তু পরে যখন জানতে পারলাম আমার চুল আমার বাপের অনেক পছন্দ ছিলো ,তখন আর আমার বিরক্ত লাগে নি। আমার মনে হয় এই চুলে আমার বাপের হাতের ছোঁয়া আছে , ভালোবাসা মিশে আছে বলতে বলতে সূরার চোখ ভিজে গেলো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।