একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-১৩+১৪

0
505

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৩+১৪

🍁
ইসমাইলের ডাকে সাবিনা চলে যায় ।ইসমাইল বলে মেহমান আসছে খাবার রেডি না করে সময় নষ্ট করছো কেন ? সাবিনা নুপুরকে বলে আয়তো মা তারাতাড়ি আমাকে হেল্প করো । লাবিবা গাল ফুলিয়ে বসে । একেতো ওগি দেখতে পারছিনা তার উপর ডলফিনের সামনে একা রেখে আম্মুনি নুপুকে নিয়ে চলে গেলো । খুব রাগ হচ্ছে এখন আম্মুনির উপর । কেউ ভালুপাসে না 😒।
তানভীর লাবিবার সামনে এসে দাড়ালো। কিছুক্ষন গাল ফুলানো দুষ্টু পুতুলকে দেখে নিলো । বিছানার উপর থেকে দুটো টেডি বিয়ার সরিয়ে বসলো । ফোনটা সামনে রেখে বললো – তোমার ফোন ফেলে চলে এসছিলে । নাও ।
লাবিবা খুশি হয়ে মাই বেবি বলে নিতে গিয়ে থেমে যায় । ফুলা মুখে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তানভীর লাবিবার দিকে হেলে লাল লাল ফুলো গাল গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে । ছোট ছোট চুল গুলো গালের উপর ছেয়ে আছে যা আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে । ঠোটের নিচে তিলটা আরো সুন্দর । তানভীর গালে আঙুলে ঠুস দিতেই লাবিবার ফুলানো বেলুন গাল পামচার হয়ে মুখ হা হয়ে যায় । যা দেখে তানভীর মুচকি হেসে বলে – টমেটো কত করে কিলো: গো ?
– হুস হুস টমেটো মানুষ খায় নাকি ? yackk…😒
– নাতো human খায় । লাল লাল টমেটো দেখে আমারতো খুব খেতে লোভ হচ্ছে । বেচবে নাকি?
– আমাদের বাগানে তো টমেটো নেই । কোথায় দেখলেন?
– তোমার বাগানেরটা চেয়েছি ।
লাবিবা অবাক হয়ে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । তানভীরের বাকা ঠোটে দুষ্টুমি ভরা হাসি ফুটে উঠে । যার আদি অন্ত বোকা পুতুলের কিছুতেই গম্য হয়ে উঠে না । তানভীর প্যাকেট টা লাবিবার সামনে রেখে বলে এগুলো সব তোমার ।
– এতে কি আছে ?
– দেখো ।
– আমি ধরবো না যদি হাতে ব্যথা পাই ।
তানভীর প্যাকেট খুলে অনেকগুলো চকলেট আর দুটো হরলিক্সের বোয়াম আর কয়েকটা চিপস বের করলো । ফ্রুটস গুলো নুপুর নিয়ে গেছে । লাবিবা মিস্টি হাসি দিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আবার গাল ফুলালো । তানভীর চকলেট গুলো লাবিবার কোলে দিয়ে বললো – সরি এক্সেপ্ট করুন রানী এলিজাবেথ । আপনার প্রজা আপনার দ্বারপ্রান্তে ক্ষমার হাত তুলে দাড়িয়েছে ।
লাবিবা মুখ স্বাভাবীক করে বলে – মেরেছে আবার আদর করতে এসেছে । চকলেট ঘোস দিতে এসেছে । তানভীর- সরি । আর মারবো না । তবে পড়া না পেলে ব্যথা দিবো ।
– আমিতো আর পড়তেই যাবো না ।
– ডেইলি চকলেট গুলো তাহলে নুপুর একাই খাবে ।
লাবিবা কেদে ফেললো । তানভীর তো অবাক । কোন কারন ছাড়াই একটা মানুষ কিভাবে কাদে ?
লাবিবা- আমি আর পড়তে যাবো না । চকলেটের লোভ দেখিয়ে লাভ নেই । আমার তো হাত নষ্ট হয়ে গেছে আমি খাব কিভাবে ? হরলিক্স গুলো চাটবো কিভাবে ?😭😭
তানভীর আরো অবাক ।চকলেট বের করে লাবিবার মুখের সামনে ধরে । লাবিবা কামড় বসায় । একটু খেয়ে বলে – yamyyy😋😋। তানভীর চোখ কুচকে বলে – by any chance ,তুমি কি হরলিক্স চেটে চেটে খাও ?
– হ্যা তো । চেটে চেটেই তো খায় । আম্মুনি বোঝে না । এক গাদা দুধের ভিতর এক চিমটি হরলিক্স দিয়ে বলে খাইতে । ঐভাবে কি মানুষ খায় ?
– এর জন্যই বলি আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা এমন খোলা মাথা কিভাবে ? বেকুব একটা গর্দভ 😠।
– আম্মুনি…😢
– চুপ থাক । হাত তেমন কিছুই হয় নি । ঠিক হয়ে যাবে । দেখি ।
– না….
তানভীর ধরতে নিলেই লাবিবা দাড়িয়ে খাটের উপর লাফ দিয়ে এই মাথা থেকে ঐ মাথা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে । তানভীর কৌশলে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে । এক হাতে ব্যন্ডেজ খুলতে থাকে । প্যাচ কম দেওয়ার জন্য সহজেই খুলতে পারে । লাবিবা অন্যদিকে ফিরে না না বলে চিল্লাতে থাকে । দুটো হাতের ব্যন্ডেজ খুলে হাত দুটো ভালো করে দেখে । এখনো লাল হয়ে আছে দেখে তানভীরের খুব খারাপ লাগছে । এমনটা সে কখনোই করতে চায়নি । দেখতে দেখতে হাতে ঠোট লাগায় । ভেজা স্পর্শে হাতের দিক তাকায় লাবিবা । কোমল নরম হাত দুটোর লাগ দাগ গুলোর উপরে তানভীর মদু ছোয়ায় অসংখ্য চুমু একে দেয় । তারপর পকেট থেকে ছোট্ট একটা মলম বের করে পুরো হাতে লাগিয়ে দেয় । আবার মলম পকেটে ডুকিয়ে রেখে দিয়ে লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে । পলকের উপর পলক ফেলছে । তানভীর গাল দুটো টেনে দিয়ে বলে
– you know what ?? আদরের মানুষদের থেকে আদর দিয়েই কিছু আদায় করতে হয় । আর soft মানুষদের সাথে always softly behaviour করতে হয় । আর যারা ভালুপাসার মতো তাদের অনেকগুলা ভালুপাসতে হয় । বুঝলে ??
লাবিবা হা করে মাথা ঝাকায় । বোঝায় সব বুঝেছে । কিন্তু আসলে কিছুই বুঝেনি সে । না বুঝেই মাথা ঝাকানো তার একটা স্বভাবের মধ্যে পড়ে যা তানভীরের অজানা ।
তানভীর – তারাতাড়ি সুস্থ হও । আঙুলে ধরিয়ে ধরিয়ে সব পড়া শিখিয়ে দিবো । জে এস সি তে গোল্ডেন চাই চাই ।
নুপুর এসে বলে স্যার চলুন জানু চল লাঞ্চ করবি । ইসমাইল ও আসে । ইসমাইল তানভীর কে নিয়ে চলে যায় । ডাইনিং এ বসতেই লাবিবা চেচিয়ে উঠে ।
– স্যার স্যার জীবানু দিয়ে হাত ধুয়ে আসুন আগে । ব্যকটেরিয়া গুলো গোল্লাছুট খেলতেছে ।আসুন আসুন ।
তানভীর লাবিবার সাথে বেসিনে যায় । লাবিবা হ্যান্ড ওয়াস দেখিয়ে বলে – স্যার হাত ধুন জীবানু দিয়ে ।
তানভীর – এইটা হ্যান্ডওয়াস দুষ্টু পুতুল জীবানু নয় ।
– ঐতো পাশাপাশি বাড়ি ওদের । একি হলো।😒
তানভীর এসে বসলে ইসমাইল, বেলাল ,লাবিবা নুপুর ও বসে । সাবিনা সবার প্লেটে খাবার দেয় । তারপর লাবিবাকে তুলে খাওয়াতে থাকে । লাবিবা নুপুরের পায়ে পা দিয়ে ইশারা করে । নুপুর টমেটোর সালাদের প্লেট নিয়ে তানভীরের প্লেটে ঢেলে দেয় । তানভীর সহ সবাই অবাক এমন কাজে । শুধু লাবিবা মিটি মিটি হাসছে । নুপুর ও অবাক লাবিবা কেন বললো টমেটো দিতে🤔 দেওয়ার পর তার চিন্তার ঝুলি খুলেছে ।
ইসমাইল – নুপুর এটা কি করলে ?
লাবিবা- আব্বু স্যার আসছে থেকেই বলছে আমি টমেটো খাব টমেটো খাব । তাই স্যারের ফেভারিট টমেটো দিলাম । স্যার আপনি খান ।
তানভীর মনে মনে -😠😠
লাবিবা-😊😊
সাবিনা লাবিবাকে ধমক দিয়ে প্লেট সরিয়ে আবার নতুন প্লেটে পোলাও দেয় ।
খাওয়া শেষে তানভীর চলে আসে । নুপুর সেখানেই থাকে লাবিবার সাথে ।

বাসায় আসতেই সোহানা বলে – কোথায় ছিলি এতোক্ষন তুই ? ফোন ধরছিস না । রাজীব সেই কখন এসে বসে আছে ।
তানভীর উপরে চলে আসে । রাজীব শুয়ে ছিলো । তানভীর পাশে এসে বসতেই রাজীব উঠে বসে ।
তানভীর – কখন এসেছিস ? ফ্রেশ হয়েছিস? লাঞ্চ করেছিস? আসছিস বললেই তো আমি আর বাইরে যেতাম না ।
রাজীব- সবি করেছি । ফোনে চার্জ ছিলো না । এখন চল ।
– কোথায় ?
– আখির বাসায় ।
– গিয়ে কি করবি ?
– তোর পরিচয়ে যাবো । আখির সাথে বোঝাপড়া আছে ।
– ওর আব্বু জানলে গন্ডগোল হয়ে যাবে ।
– গন্ডগোল করতেই তো এলাম ।
– মানে ?
রাজীব বাকা হাসি দেয় ।
– তুই কি বিয়ে করবি আখিকে ?
– হুম। অনেক ভেবে দেখলাম আখিকে ছাড়া আমার পক্ষে কিছু সম্ভব নয় । এই বয়সে উড়বেই । পাখা দুটো ছেটে দিলেই উড়া শেষ । নিজের কাছে রাখবো । ওর বাবা মা রাজী হবে আমি সিউর । প্রবলেম একটাই । মম ডেড মেনে নিবে তো 🤔
– আরে ব্যপার না । পুত্র বধূর মুখ দেখলেই সব ওকে ।
রাজীব তানভীর দুজনেই হেসে ফেলে । হাসি থামিয়ে রাজিব বলে – সত্যি বলছি দোস্ত। মারাত্মক সুন্দরী । আমার ওকে লাগবেই ।
তানভীর – রেডি হ । বের হই।

নুপুরের বাসায় আসতেই আখি দরজা খুলে দেয় । নুপুরকে সাথে নিয়ে এসেছে তানভীর লাবিবার বাসা থেকে । তানভীরকে দেখে আখি অবাক ও হয় আবার লজ্জাও পায় । দৌড়ে ভিতরে গিয়ে আনিসকে বলে – আব্বু এমপির ছেলে তানভীর এসেছে । আনিস সাথে সাথে নুপুরের মা রেনু কে ডাক দেয় । এগিয়ে এসে রিসিভ করে এদের । বসতে বলে কিচেনে চলে যায় ।রেনু ও এসে ভালো মন্দ জিজ্জাসা করে । আখি তখনি রুমে চলে এসেছিলো । ওড়নাটা ঠিক করে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো আচড়ে ঠোটে হালকা গোলাপী লিপলজ দিয়ে পারফেক্ট বলে ড্রয়িংরুমে আসে । তানভীরের পাশে রাজীব কে দেখে দু পা পিছিয়ে যায় । ভয়ে মুখ শুকিয়ে যায় । হাত পা কাপতে থাকে । বার বার মাথায় একটা কথাই আসতে থাকে তানভীর সব বলে দিয়েছে রাজিব কে তাই হয়তো রাজীব চলে এসেছে। এখন যদি আব্বুকে সব বলে দেয় তাহলে আমার কি হবে 😭 আব্বু কিছুতেই আমাকে আস্ত রাখবেনা😭।
রাজিব এক পলকে আখিকে দেখে যাচ্ছে । ভিতু চেহারায় পা কাপায় যতটুকু doubt ছিলো সম্পূর্ণ clear হয়ে গেছে । আনিস আখিকে দেখে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে রাজীব বলে – আংকেল আমরা চিনি । নুপুরের বোন তো । আগেই পরিচিতো আমরা ।
নুপুর ট্রেতে করে নাস্তা আনে । আখির আত্মার মধ্যে যেন পানি নেই । আনিস ভেতরে যেতে বলার সাথে সাথে সেখান থেকে চলে আসে রুমে । কান্নাও যেন আসছেনা মুখ দিয়ে এমন অবস্থা আখির । দরজার আড়ালে দাড়িয়ে কথা শুনতে থাকে ।
তানভীর একটা বিস্কিট মুখে নিয়ে খেতে খেতে বলে আংকেল আন্টি আপনাদের সাথে আমাদের কিছু কথা আছে । নুপুর তুমি ভেতরে যাও ।
তারপর তানভীর রাজিব দুজনে সমস্তটা বলে ।
আনিস রেনু মাথা নিচু করে বসে আছে । বড় আদরের দুই মেয়ে । এরকম খারাপ হয়ে গেছে মেয়ে যা তার ধারনার বাইরে । সামনের দুজনের সামনে তাকাতে পারছেনা । মাথা নিচু হয়ে আছে ।
তানভীর – আংকেল এতো কিছু জেনেও রাজীব চায় আখিকে বিয়ে করতে । টিনেজার রা ভুল করলে সেটা শুদ্ধ্যে নেওয়ার জন্য বাবা মা দের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় । যদিও আখির বয়স হয়নি সেহেতু টাকার জোরেই কাজটা করতে চাচ্ছি ।
রেনু- রাজীব তোমার ফেমেলি রাজী হবে তো ?
রাজীব – সেটা আমার উপর ছাড়ুন আম্মু । আমি কাল ই আখিকে বিয়ে করতে চাই । ঘরোয়া ভাবেই করুন আমার কোন অসুবিধা নেই । মেয়ে না বালিকা জানাজানি হলে সমস্যা হবে । বিয়ে হোওয়ার পর কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।
আনিস আখিকে ডাকে । আখি গুটি পায়ে এসেই আনিসের দিকে তাকিয়ে কেদে ফেলে । আনিস অন্য দিক তাকায় । যে মেয়ে এতোকিছু করতে পারে বাবার কথা ভাবে না তার চোখের পানিতে গলা শোভা পায় না । গম্ভীর গলায় বলে – আশাকরি তুমি এখন সব অশ্বীকার করবে না । কাল তোমার বিয়ে । প্রস্তুতি নাও ।
আখি- আব্বু
আনিস – আমি কিছু শুনতে চাই না ।

To be continue _____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৪

🍁

রাতে আখি রাজীবকে দেখা করতে বলে। রাজীব রাজি না হলে তানভীরের কথায় রাজি হয় । আখির বাড়ির সামনে বাশ বাগানে এসে পৌছায় রাজিব । আখি আগে থেকেই ওয়েট করছিলো । রাজীব সামনে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে অন্যদিকে ফিরে বলে
– বল কি বলবে ।
– আমি এখন বিয়ে করবো না । আমার বিয়ের বয়স হয়নি ।
– ছেলে পাগল করার বয়স তো হয়েছে ।
– দেখো হুট হাট বিয়ে করবো বললেই হয় না । আমার পরিক্ষা শেষ হক । আমার আঠারো বছর পূর্ণ হোক তারপর ধুম ধাম করে বিয়ে করা যাবে । আমি এখনি বিয়ে কি ভাবে সম্ভব ?
– তোর আঠারো বছর পূর্ণ হতে হতে তুই এক নাম্বার থেকে দুই নাম্বার হয়ে যাবি । তিন চার হতেও খুব একটা অসম্ভব কিছু না । রিজেক্ট মাল রাজিব নেয় না । বিয়ে কাল মানে কাল ই । উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবিনা । আমি কিন্তু এখানেই আছি । পা মুচরে দিবো । সাথে তোর নায়ক ইসহাক আর জহির কেও । কখন কি কার সাথে টাঙ্কি মেরেছিস সব আমার জানা হয়ে গেছে । বাসায় যা ।
– দেখো তুমি ভুল বুঝছো আমাকে । এসব তোমার কানে দিয়ে বিষ ঢেলেছে আমার নামে । অনেকের নজর আমার দিকে । অনেকেই শত্রুতা করে আমার মতো সুন্দরী মেয়েকে না পেয়ে ।
রাজীব রেগে ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দেয় । আখি একটু দুরে ছিটকে পড়ে । রাজিব এগিয়ে চুলের মুঠি ধরে বলে – এতোদিন যা যা বলেছিস সব গুলো মিথ্যা । এতোকিছু জানার পর যে তোকে আমি বিয়ে করেই এইটা তোর সাত কপাল। সবার নজর না তোর দিকে ? সেই নজর থেকে বের করার ব্যবস্থাই করছি । দু তিন দিন এই বাড়িতে থাকতে পারবি তার পর তুই বন্দি হবি আমার মহলে । শুধু আমার নজর পড়বে তোর দিকে । যা বাসায় যা । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমাকে নিয়ে সপ্ন দেখ ।
রাজিব রাগ দেখিয়ে চলে আসে ।

পরদিন সকালেই ঢাকা থেকে রাজিবের বাবা মা ভাই চলে আসে । ছেলে এই ভাবে বেড়াতে এসে বিয়ে করবে কিছুতেই মানতে পারছে না তারা । ফিরোজ তাদের বোঝিয়ে বলে । তানভীর মেয়ের ছবি দেখানোর পর তারা রাজি হয় । রাজিবের বাবা মা ঢাকা থেকেই কনের শপিং সব করে এনেছে । বেলা এগারোটার দিকে রাজিব কে গায়ে হলুদ করানো হয় । ঘরোয়া ভাবে খুব সুন্দর করে গায়ে হলুদের অনুষ্টান শেষ করানো হয় । ছেলেদের গায়ে হলুদ বেশি নিয়ম নেই । বারোটার দিকে তানভীর ,রাজিবের ভাই রাজন , তানিয়া যায় কনের বাড়ি হলুদ নিয়ে । বাড়ির ভিতর ঢুকতেই আনিস ইসমাইল সাদরে স্বাগতম জানায় ওদের । তত্ব রেখে বউ দেখার জন্য ভেতরের ঘরে আসতেই দেখে লাবিবা খাটে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে সাবিনার আচল ধরে । তানভীর এগিয়ে গিয়ে বলে কাকি দুষ্টু পুতুল কাদছে কেন ?
সাবিনা – আর বলো না বাবা … হাতে সমস্যা তাই মেহেদি দিতে পারছে না । মেহেদি পাতা বেটে সবাই হাতে দিয়েছে ও পারে নি তাই কান্না করছে ।
আচল টেনে বলে – এখন চুপ কর । দেখ স্যারের সামনে কাদে স্যার কি বলবে বল তো ? বলবে লাবি মনি পচা শুধু কাদে । চুপ করে বস তোর আন্টিকে হেল্প করতে হবে তো । সাবিনা চলে যায় । তানভীর ফোন করে কাকে যেন চকলেট আনতে বলে । পাচ মিনিটের ভেতরে এক প্যাকেট চকলেট নিয়ে একটা ছেলে আসে । তানভীর চকলেট লাবিবার সামনে রেখে একটা ছিড়ে খেতে থাকে আর বলে – yammy😋😋 খেতে চাইলে ফেস ফেস কান্না বন্ধ করতে হবে । লাবিবা আস্তে আস্তে চুপ হয়ে যায় । তানভীরের দিক তাকিয়ে বলে – স্যার আপনি ব্যকটেরিয়া খাচ্ছেন কেন ? যান জীবানু দিয়ে হাত ধুয়ে আসুন 😒 ।
– হ্যান্ড স্যনিটাইজার ইউজ করি আমি । বাই দ্যা ওয়ে আবার হাতে ব্যন্ডেজ করেছো কেন ?
– দেখবো না আমি দাগ গুলো ভয় লাগে ।
– মলম লাগিয়ে দিয়েছিলাম । খুলে দেখো হাত একদম ঠিক হয়ে গেছে ।
– না ।
– হ্যা । হাত দাও দেখি আমি খুলে দিচ্ছি । বেন্ডেজ খুললাম । ওয়াও দেখো তুমার হাত কতো সুন্দর হয়ে গেছে ।
লাবিবা দেখল সত্যিই তো ভালো হয়ে গেছে ।
– স্যার ঐটা কিসের মলম ছিলো ?
– ঐটা ব্যথা + দাগ কমানোর মলম । ফ্রান্স থেকে আনা । আমার ফ্রাকচার বেশি হয় তাই সাথে রাখি সব সময় । সেদিন ই লাগিয়ে দিতাম কিন্তু তুমি আগেই চলে আসছিলে । বিডির টাকায় তিন লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার টাকা।
-😱😱 এতো দামী মলম ।
– জি । কাজ টাও তো দামী করে তাই না ? এখন দাও দেখি তোমার হাতে বাটা মেহেদি নাকি লাগাবে লাগিয়ে দিচ্ছি আমি । আর একদম কাদবেনা । you know what ?? কাদলে তোমাকে কিউটের ডিব্বা লাগে । কিন্তু এই লুকটা সবাইকে দেখানো যাবে না । এখন চুপটি করে বসো আমি তাড়াতাড়ি মেহেদি লাগিয়ে চলে যাবো ।
– এক মিনিট দাড়ান স্যার আমি দুই মিনিটে একটা চকলেট শেষ করি ।
একটার জায়গায় লাবিবা দুই মিনিটে তিনটি চকলেট শেষ করে । বক্স সহ তার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে । তানভীরের সামনে এসে হাত পেতে দেয় । তানভীর সুন্দর করে দশ আঙুলে ১ম গিরা পর্যন্ত ভরাট করে মেহেদি দিয়ে দেয় আর তালুতে গোল বৃত্ত আকিয়ে দেয় । লাবিবা খুশিতে বাক বাকুম করতে করতে চলে যায় । আখিকে গালে হলুদ লাগিয়ে কয়েকটা পিক তুলা হয় । সব গুলো রাজীবের ফোনে সেন্ড করা হয় । রাজিব সেগুলো ওর বাবা মাকে দেখায় । তারা প্রসংসায় পঞ্চমুখ ।
__________
সন্ধ্যার দিকে ছেলে পক্ষরা কনে পক্ষের বাসায় যায় । আখিকে আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিলো । দুজন মেয়ে পার্লার থেকে এসে সাজিয়ে গিয়েছে । রুপ যেন আর ধরছে না গায়ে । বিয়েতে এমনিতেই মেয়েদের সৌন্দর্য বেড়ে যায় । রাজিবের বাবা মা আখির মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে । ছেলে বউ দেখে তাদের চোখ চিক চিক করছে । এমন রুপসী বউ পেয়ে তারা খুব খুশি । রাজিবের মা নিজের গলার হার খুলে আখিকে পরিয়ে দেয় যদিও গা ভর্তি গহনা আখির । সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলে সবাই ডাইনিং এ চলে যায় । রেনু মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে – অনেক ভাগ্য করে জন্মেছিস রে মা । আল্লাহ বেহেসতের‌‌ হুরকে আমার ঘরে পাঠিয়েছে । রুপ যেন আর ধরে না । তেমনি রাজপুত্রের মতো বর পেয়েছিস । কতো ভদ্র শ্বশুর শাশুড়ী । কতো বড়লোক ওরা । এমন ঘরে মেয়ে বিয়ে দিবো ভুল করেও যে ভাবিনি কখনো । অনেক সুখী হ মা । বুকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে । এদিকে আখিও এতোক্ষনের চাপা কান্না ধরে রাখতে পারে না ।মা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে কাদে ।সাবিনা এসে রেনুকে সরিয়ে নেয় । সান্তনা দিতে থাকে রেনুকে । রেনু এমনিতেই ব্লাডপ্রেসারের রোগী । পরে না হয় অসুস্থ হয়ে পড়লে আরেক ভেজাল ।
খেতে বসছে সবাই । সাবিনা লাবিবাকে নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য । লাবিবা খাবেনা জন্য বায়না ধরেছে । সাবিনা টেনেই নিয়ে আসছে । আসার পর থেকে তানভীরের চোখ দুটো লাবিবাকে খুজছে । দেখতে পায়নি কোথাও । এতোক্ষনে তার চোখে ধরা পড়েছে ।
চোখ আটকে যায় তানভীরের । পিংক কালার বারবি গাউন উইথ পিংক স্টোনের সিম্পল জুয়েলারি । চুল গুলো এক পাশে ছেড়ে রাখা । তাতেই যেন ফেয়ারি লাগছে । আর কোন সাজ নেই মুখে । সাজের কোন প্রয়োজন ই তো নেই । চোখ দুটো এমনিতে গাড় কালো ভাসা ভাসা অসম্ভব সুন্দর । গোলাপি ঠোট দুটো চকলেট খেয়ে চকলেট কালার করে রেখেছে । বড় মেয়েদের মতো লাগছে লাবিবাকে । তানভীর যেন এক নেশায় ডুব দিয়েছে । তৃষ্ণা মেটাচ্ছে চোখের । রাজনের ধাক্কায় হুস ফেরে তানভীরের । সামনে তাকিয়ে দেখে লাবিবা খেতে বসেছে । সাবিনা জোর করে মুখে খাবার পুরছে আর বলছে – সারাদিন না খেয়ে আছিস । একটু আগে ডান্স ও করেছিস । এবার মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কেমন হবে বলতো ? বিয়ে দেখবো নাকি তোকে নিয়ে ডক্টরের কাছে দৌড়াদৌড়ি করবো ?
মা মেয়ের খাওয়ানো দেখতে দেখতে নিজেও খেয়ে নেয় তানভীর । লাবিবা খেয়ে উঠেই নুপুরের কাছে চলে যায় দৌড়ে । তানভীর পিছু পিছু যায় । লাবিবা তানভীরকে দেখেই হাত উচু করে দেখিয়ে বলে – স্যার দেখুন আমার হাত । তানভীর এগিয়ে এসে হাত দুটো নিজের হাতে মুঠো করে নেয় । কেন জানি খুব ইচ্ছা করে সব সময় এই নরম হাত দুটো নিজের হাতে আবদ্ধ করে রাখতে । ছুয়ে থাকতে সব সময় । মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে – বাহ অনেক সুন্দর রং হয়েছে । সুন্দর লাগছে অনেক । কিন্তু হাতে কিছু পড়নি কেন ? খালি খালি লাগছে । নুপুর তোমার পিংক কালার চুড়ি আছে ?
– আছে তো ।
– লাবিবাকে এনে দাও । তোমার দু হাত ভর্তি চুড়ি কিন্তু ওর হাত যে খালি দেখোনি ?
-ও তো চুড়ি পড়ে না স্যার । তাই ।
– আনো পড়বে ।
নুপুর চুড়ি আনতেই তানভীর হাতে পড়িয়ে দেয় ।লাবিবা হাত নেড়ে চেড়ে দেখে সুন্দর মানিয়েছে অনেক । কাজী সাহেব বিয়ে পড়াবে শুনে তানভীর চলে আসে বর বউয়ের কাছে । লাবিবাও আসে । কাজী এখনো বসে নি । ফুলের মালা নিয়ে আসে রাজন । তানভীর খেয়াল করে মালা দুটো গোলাপী গোলাপের । তানভীর মালা দুটো হাতে নিয়ে যেখান থেকে ফুল নিলে মালা ছিড়বেনা সেখান থেকে দুই মালার দুটো ফুল ছিড়ে হাতে রাখে । বর বউ একে অপরকে মালা পড়িয়ে দেয় । কাজি এসে বসে পড়ে বিয়ে পড়ানোর জন্য । রেজিস্ট্রি কাগজে বর বউ সাক্ষর করে । সবাই দাড়িয়ে উপচে পড়ে দেখতে থাকে । তানভীর আখিকে দেখছে । সুন্দরী মেয়েটা বউ সাজে কতই না সুন্দর লাগছে । আচ্ছা দুষ্টু পুতুলটাকে বউ সাজালে কেমন লাগবে ? পুতুল বউ লাগবে একদম ।দেখার বড় লোভ জাগে তানভীরের । লাবিবার পাশে এসে দাড়ায় ভীড়ের মধ্যে। চুল থেকে ক্লিপ খুলে গোলাপ দুটো কানের পাশে লাগিয়ে দেয় ।
লাবিবা খুশি হয়ে বলে
– স্যার thank you attoogulla onkmuch.
কাজী আখিকে কবুল বলতে বলে । আখি বলতে দেড়ি করছে। তানভীর লাবিবার কানে কানে বলে
– দুষ্টু পুতুল তুমি কি জানো এখন বউ কি বলবে ?
– জানিতো ।কবুল কবুল কবুল ।
আখি কবুল বলে । তারপর কাজী রাজিব কে কবুল বলতে বলে । রাজিব ও বলে । সাথে সাথে তানভীর ও লাবিবার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে কবুল কবুল কবুল ।

To be continue ____