একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
518

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৫+১৬+১৭

🍁
কনে বিদায়ের সময় আখি প্রচুর কান্না করে । নুপুর বোনকে ধরে অনেক কাদে । রেনু আনিস মেয়েকে ছাড়েই না । বিয়ে বাড়িতে মরা বাড়ির মতো কান্নার রোল পড়ে যায় । লাবিবাও আখির মতো চিক্কুর দিয়া কাদতে থাকে । সাবিনা মেয়ের মুখ চেপেও কান্না থামাতে পারে না । আখি কাদতে কাদতে অস্থির হয়ে যখন গলাটা একটু লো মোশনে নামিয়ে নেয় তখন সবাই অন্য কান্না শুনতে পায় । এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে লাবিবা কাদছে এই ভাবে । ইসমাইল রাগ দেখিয়ে সাবিনাকে বলে – জানোইতো কান্না দেখলে আমার মেয়ে সহ্য করতে পারেনা । ওকে এখানে এনেছো কেন ? আর মুখ চেপে ধরেছো কেন ? শ্বাস বন্ধ করে মেরে ফেলবে নাকি ?😠
সাবিনা হাত সরাতেই লাবিবা জোরে চিল্লিয়ে বলতে থাকে – আমি বিয়ে করবো না আমি কোথাও যাবো না ,আমি আব্বুকে ছাড়া কোথাও যাবো না, আমাকে তোমরা বিয়ে দিও না , আমি আমার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না , আমি বিয়ে করবো না 😭😭।
কনে সহ সবাই লাবিবার দিক বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে । এর আবার কি হলো ? কেউ কেউ বোঝাতে শুরু করে আখির বিয়ে হয়েছে । তোমার বিয়ে হয়নি । তোমাকে আমরা বিয়ে দিবো না । তুমি কান্না বন্ধ করো । কিন্তু বেচারিকে কেউ চুপ করাতে পারে না । তানভীর এসে আবার মুখ চেপে ধরে । সাবিনা ইসমাইলের দিক তাকালে তারা অসহায় লুক দেয় । তাদের মেয়ে যে এমন সেটা তো তারা ভালো করেই জানে কিন্তু আর লোকজন কি ভাববে ভেবেই টেনশনে মরে যাচ্ছে । তানভীর ইসমাইলকে ইশারা করে লাবিবাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসে । নয়তো কনে বিদায়ের অনুষ্টান না হয়ে দুষ্টু পুতুলের উথাল পাতাল কান্নার ভাব দেখতে হবে ।

চেয়ার টেনে বসিয়ে দেয় লাবিবাকে । ব্যাগে তুলে রাখা চকলেট গুলো এনে হাতে দেয় । লাবিবা ফুপাতে ফুপাতে ভেজা চোখে চকলেট খেতে থাকে । তানভীর কান্না ভেজা মুখের পানে চেয়ে থাকে । কাদলে মেয়েটাকে এত্তো কিউট লাগে ..মনে হয় কামড়েই খেয়ে ফেলি । এত্তো কিউট কেন তুমি দুষ্টু পুতুল ? তোমার এই বাচ্চামো স্বভাবের নেশাই পড়ে যাই বার বার । কোমার সরল মনটার মায়াই পড়ে যাই বার বার । তোমার দুষ্টুমি গুলোর প্রেমে পড়ে যাই বার বার । এতো বোকা কেনো তুমি দুষ্টু পুতুল ? কবে বুদ্ধি হবে তোমার ? কবে বড় হবে হবে তুমি ? আচ্ছা বড় হলে কি তুমি এমনি সহজ সরল আমার দুষ্টু পুতুল হয়েই থাকবে নাকি আজকালকার মেয়েদের মতো হয়ে যাবে ? তুমি এমনি থেকো দুষ্টু পুতুল । তুমি পাল্টে গেলে অনেক মিস করবো তোমায় । অবশ্য আমি তো থাকবোই না । ক্যরিয়ার একটা জিনিস জানো যা অর্জন করা কঠিন কিছু নয় আবার সহজ ও নয় । তবে চাইলেই অর্জন করা যায় । এক হলো তকদীর আরেক হলো তদবীর । কিন্তু এর জন্য অনেক কিছু জীবন থেকে বাদ পড়ে যায় । অনেককিছু সেক্সিফাইজ করতে হয় । কিন্তু যা ভাগ্য লেখা থাকে সেটা কিন্তু ঘুরে ফিরে তোমার কাছেই আসবে ।বড় কিছু পাবার জন্য ছোট ছোট অনেককিছু তো সেক্রিফাইজ করতেই হবে বলো । বুঝলে ??
লাবিবা এতক্ষন চকলেট খেতে খেতে তানভীরের কথা গুলো শুনছিল । শেষ কামড় টা দিয়ে হাত ঝাড়া দিয়ে বলে – হুম বুঝলাম। আব্বু বলে ক্যরিয়ারের সাথে নো কম্প্রোমাইজ । ক্যরিয়ার না গড়লে দাম নেই । কিছু একটা না করতে পারলে খাবে কি ?
– তোমার এইম কি দুষ্টু পুতুল ?
– ট্রাভেলার হওয়া ।
– তার জন্য তো অনেক টাকা প্রয়োজন । তুমি তো পড়া শুনা করোনা । জব ও তো পাবে না । আমি যতোদূর জানি কাকা তোমাকে একদম সাপোর্ট দিবে না ।
– আমি পড়বো তো । জব করবো । তারপর ঘুরে ঘুরে বেড়াবো ।
– দেখা যাবে ।
– আই সোয়ার । আমি ভালোভাবে পড়াশুনা করবো ।
– গুড গার্ল। তুমি বসে বসে চকলেট খাও আমি আসছি ।

খান বাড়িতে ফিরে আসে সবাই । বাড়ি ভর্তি লোকজন।রাজীবের আত্মীয়রাও এসেছে। তানভীরের রুমে আখি রাজীবের বাসর সাজানো হয়েছে। আখিকে রুমে এনে যাবতীয় নিয়ম পালন করানো হচ্ছে । তানভীর ফুলে সাজানো খাটের কোনায় বসে ফোন চাপছে । হটাৎ মিষ্টি একটা ভয়েজে চোখ উপরে তুলে সামনে তাকায় ।
লাবিবা ঝুলানো ফুলের মালা গুলো ধরে ধরে দেখছে আর ওয়াওও…ফেনটাস্টিক..নাইস.. উফফ লাভলি😍😍 আওয়াজ করছে । তানভীরের মেরুদন্ড দিয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায় । বুঝতে পারছেনা এটা চোখের ভ্রম নাকি অন্যকিছু ? এতোক্ষন ফোনে আজকের দুষ্টু পুতুলের পিক গুলোই দেখছিলো । যখন ওকে খাওয়াচ্ছিলো তখন তুলেছে ফোনে। তাইকি এমন সব জায়গায় দেখছে ? ইসমাইলের গলা শুনে । ইসমাইল সোহানাকে বলে – আর বলবেন না ভাবী । বাসর সাজানো দেখবে বলে লাফালাফি করছিলো । কিছুতেই আটকাতে পারছিলাম না ।
সোহানা হেসে ফেলে । লাবিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ।- ছোট মানুষ তো এসবিতো দেখবে । এসেছে যখন আজ থেকে যাকনা ভাইজান । তানিয়া আছে তানিয়ার সাথে থাকুক আজ ।
– না ভাবী তা কি করে হয় ? ওর আম্মুনি চিন্তা করবে ।আজ থাক । অন্য একদিন এসে থেকে যাবে ।
তানভীর ফোড়ন কাটে ।
– কাকা থাকনা আজ । কাল সকালে আরো কতো কি আছে ..তারপর নুপুরো আসবে । আজ থাক ।
ফিরোজ ও বলে । ফিরোজের উপর কথা বলার স্পর্ধা নেই ইসমাইলের । রাজী হয়ে যায় । লাবিবার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠে । সেই হাসিতে তানভীর ও হাসে ।খাটে হেলান দিয়ে দুষ্টু পুতুলটাকে দেখতে থাকে । বারবি গাউন ছেড়ে নরমাল গাউন পড়ে এসেছে । চুল গুলো দুপাশে দুটো ঝুটি করে বুকের উপর ছেড়ে দেওয়া । রজনীগন্ধার মালায় নাক ডুবিয়ে সুবাস নিচ্ছে । তানভীরের অচেতন মন খুব করে জানতে চায় দুষ্টু পুতুল তোমার স্মেল কি রজনীগন্ধার থেকেও সুন্দর নাকি খারাপ ? কেমন তোমার স্মেল ?

তানিয়া এসে লাবিবাকে ডেকে নিয়ে চলে যায় । তানভীর আবার ফোনে মন দেয় । রাজীব আখিকে রেখে একে একে সবাই চলে যায় । এতোক্ষন রাজীবের থেকে পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য আটকেছিলো। এখন সবাই সবার পাওনা পেয়ে চলে গেছে । রুমে শুধু আখি , রাজীব আর তানভীর । রাজীব এসে তানভীরের পাশে বসে গলা খাকারি দিতেই তানভীর তাকায়।
– হুয়াট ?
– তুই কি এখানে থাকার প্লেন করেছিস ? তোর সামনেই কি এখন আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো ?
তানভীর আশে পাশে দেখে কেউ নেই ।
– ওহ । তো এতো রাগ দেখানোর কি আছে ? আমার জন্যই তো বউটা পেলি । চাইলে এখন আমিও বউকে বুকে নিয়ে ঘুমোতে পারি ।
– সিরিয়াসলি দোস্ত ?? বিয়ে করবি ? ঢাকা গিয়েই মেয়ে দেখা শুরু তোর জন্য ।
– এখানে কি মেয়ের অভাব আছে নাকি ? বুঝবিনা তুই । তোর ব্রেইন এখন ভাবী ছাড়া কিছুই বুঝতে চাইছে না । ওকে বাই । গুড নাইট । তোরা জেগে থাক । আমি গিয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাই ।
– বিদায় হো শালা ।
– বউ পাইয়া মামা আমাক সহ্য করো না । আমিও বিয়ে করমু মামা । দেখিও ।

তানভীর তানিয়ার রুমে এসে দেখে তানিয়া আর লাবিবা ঘুমিয়ে আছে । তানিয়ার ঘুমোলে আর হুস থাকে না । নির্ভয়ে তানভীর দরজা লক করে লাবিবার দিকে গিয়ে বসে । ছোট চুল গুলো মুখের উপর পড়ে মুখ ঢেকে আছে । আলতো হাতে চুল গুলো সরিয়ে দেয় । টমোটোর মতো গাল গুলো দেখে হেসে ফেলে ।
এক হাতে ভর করে লাবিবার পাশেই সোজাসুজি শুয়ে পড়ে । মাঝখানে দু আঙুল ফাক রেখে । ঘুমন্ত মুখটাতে সারাদীনের চঞ্চলতাপূর্ণ বোকা বোকা লুকটা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । এ যেন স্নিগ্ধতা পূর্ণ মায়ায় ভরা ঘুমন্ত এক উচ্ছল কিশোরী । যাকে আজীবন দেখলেও দেখার শেষ হবে না । ঘন কালো ভ্রু জোড়া আরো ঘন লাগছে । বড় বড় পাপড়ি জোড়া খানিক খানিক নড়ে উঠছে । সরু নাকটা নিশ্বাসের সাথে সাথে বার বার ফুলে ফুলে উঠছে । চকলেটের ঠোট টা ভীষন টানছে। কামড়ে খেলেও যেন এর স্বাদ কমবে না । ঠোটের নিচে তিলটা চোখে ঘোর লাগিয়ে দিচ্ছে। আস্তে আস্তে আরো কাছাকাছি চলে আসে তানভীর । লাবিবার গরম নিশ্বাস তানভীরের সারা মুখে আচড়ে পড়ছে । হটাৎ করে লাবিবা দু হাত দিয়ে চেপে ধরে তানভীরকে । তানভীরের পায়ের উপর পা তুলে দেয় । এমন কাজে তানভীর কিছুক্ষনের জন্য থ হয়ে যায় । উঠতে গেলেই লাবিবা জেগে যাবে । এভাবেও তো থাকা যাচ্ছে না । নিজেকে যে কন্ট্রোল করা খুব দায় । লাবিবা আরো চেপে ধরে । তানভীরের খেয়াল হয় লাবিবার বেডে কোলবালিশ , টেডি বিয়ার দেখেছিলো । তার মানে কোল বালিস ছাড়া ঘুমায় না দুষ্টু পুতুল । আর কিছু না ভেবে সেও নিজের বুকে লাবিবাকে চেপে ধরে দু হাতে জড়িয়ে নেয় নিজের মাঝে । নিমেষেই এক অজানা অনেচা না চাইতেই পাওয়ার সুখে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে । শরীরের শিরা উপশিরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে জোর দিতে থাকে নিজের বুকে পিশিয়ে ফেলতে । অবচেতন মন শায় দে নিজের মন যা চায় তাই করতে । ব্রেইন বলে উঠে ভালবাসার মানুষটাকে ছেড়ে না দিতে । হালকা ঠান্ডায় উষ্ণতা পেয়ে আরো একটু বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে লাবিবা । তানভীর ও শক্ত করে ধরে ঘাড় থেকে এক হাতে চুল সরিয়ে মুখ গুজে দেয় । এতোক্ষনের চাওয়া বহু প্রত্যাশিত দুষ্টু পুতুলের গায়ের স্মেল নিতে থাকে । বকুলের সুবাসের মতো ধারালো একটা মিষ্টি স্মেল নাকে আসে । মন ভরে সেই স্মেল নিতে থাকে তানভীর ।

সকালে তানিয়ার ঘুম ভাঙে। চোখ কচলাতে কচলাতে পাশে তাকাতেই চোখ গোল গোল হয়ে যায় । মুখ ও হা হয়ে যায় । এক লাফে উঠে তানভীর কে নাড়াতে থাকে । – ভাইয়া উঠো । ভাইয়া উঠো । লাবিপুকে ছাড়ো । ভাইয়া উঠো ।
তানভীর চোখ খুলে তানিয়ার কথা শুনে লাবিবার দিকে তাকায় । হুস উড়ে যায় । তানিয়াকে বলে
– কেউ আসেনিতো ?
– তুমি লাবিপুকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছো কেন ?
-আমতা আমতা করে ।আরে আমিতো ভেবেছিলাম এটা তুই । আমি কি জানতাম নাকি ? কাউকে বলিসনা কিন্তু ।
-না বলবোনা ।আগে উঠো তো ।
– উঠছি । দরজা খোল ।
তানিয়া দরজা খুলতে যায় ।
তানভীর শেষ বারের ঘুমন্ত মুখটা দেখে নেয় । সোফ্ট উষ্ণতা ছেড়ে উঠতে মন না চাইলেও উঠতে হয় । কপালে গাড় করে একটা চুমু দিয়ে উঠে যায় ।

To be continue____

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৬

🍁
সকাল নয়টায় নুপুর বই খাতা নিয়ে হাজির । লাবিবা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি ।কেউ ডাকেও নি ওকে । নুপুর এসেই আখির কাছে চলে যায় । দুবোন কিছুক্ষন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে রাখে । রাজিব দেখেই হেসে ফেলে । গলা কেশে বলে – বুঝলে শালিকা ..তোমার আপু যেভাবে তোমাকে ধরেছে মনে হচ্ছে কলিজার ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবে । কতো ভালোবাসে তোমায় । আর আমি যে সেই কাল থেকে বলছি আমাকে একটু এমন করে ধরো ..এখনো ধরলোই না । একটুও ভালোবাসে না আমায় ।
নুপুর ফিক করে হেসে ফেলে । আখিতো লজ্জায় মরে যায় যায় অবস্থা । তানভীর রুমে ডুকতে ডুকতে বলে
– ভাবী না ধরলেও তুইতো ছাড়িস নি । ছোট ভেবে ভুল করিস না । সবি বুঝে । দাত বের করে হাসছে । এই কথাটা আমার দুষ্টু পুতুলের সামনে গিয়ে বল ..বেচারি কিছুই বুঝবে না । হা করে তাকিয়ে থাকবে । নুপুর যাও তো দুষ্টু পুতুলের ঘুম ভাঙাও।
রাজিবের দিকে তাকাতেই দেখে রাজীব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ।
তানভীর – কি?
রাজীব- তোর দুষ্টু পুতুল ?
তানভীর- কিছুনা ।
রাজীব- ডালমে কুচ কালা হে । শেষ মেষ ঐ বাচ্চাটার সাথে ?? কিভাবে পসিবল এটা ? বুদ্ধিসুদ্ধি থাকলে নয় তো মানা যেত । কিন্তু ঐটাতো ক্লাস থ্রির কিড মনে হয় ।
তানভীর – আই ডোন্ট নো ।

নুপুর এসে লাবিবাকে ঘুম থেকে তুলে । ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই সোহানা ডাকে । লাবিবা সোহানার কাছে গিয়ে দাড়ায় । সোহানা কিচেনে কাজ করতে করতে বলে – আমার মা টা কি খাবে শুনি ?
লাবিবা পেছন থেকে সোহানার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে – শাশুমা ডুডুলস খাবো । তোমার ডুডুলস অনেক মজা ।
– জানি এইটাই বলবি । তাই আগেই করে রেখেছি ।
টেবিলে বসিয়ে সোহানা লাবিবাকে খাওয়ায় । নুপুর এসে দাড়ালে নুপুরকেও খাইয়ে দেয় । তানভীর ও এসে বসে । সে নিজেও ব্রেকফাস্ট করেনি। মমতা এক বাটি সুপ দিয়ে যায় তানভীর কে । লাবিবা আর নুপুর তাকিয়ে আছে তানভীরের খাওয়ার দিকে । সকাল বেলা সুপ খাচ্ছে কেমন করে ! লাবিবা নুপুর উঠে রিডিং রুমে চলে আসে । তানভীর ও খেয়ে চলে আসে । টানা দু ঘন্টা পড়া মুখস্ত করায় । তার পর লাবিবা বাসায় চলে আসে । নুপুর আখির সাথে থেকে যায় ।
তানভীর ড্রয়িং রুমে আসতেই রাজন বলে – ভাইয়া এলাকাটা ঘুরে দেখতে চাই । তানভীর হেসে বলে – বাইক বের করবো নাকি গাড়ি ?
রাজিব – বাইক চলবে ব্রো ।
তানভীর – ডান ।

লাবিবা বাসায় এসে গেইটে ডুকবে তখনি দেখে বেলাল হাতে করে মাছের ঝুড়ি আনছে। পায়ে কাদা লেগে আছে । লাবিবা সামনে গিয়ে দেখে ঝুড়িতে বড় বড় মাছ ।
– জেঠ্যু মাছ ??
– বড় পুকুর সিচছে ।
– ও আমার আল্লাহ , তাই নাকি ? আগে বলবেনা?
এক দৌড়ে লাবিবা বড় পুকুরের দিকে যেতে থাকে । বেলাল অনেক ডাকা ডাকি করেও কাজ হয় না । বাসায় গিয়ে সখিনার হাতে মাছ দিয়ে বলে সাবিনাকে বলো দুষ্টুটা পুকুর সিচার কথা শুনে বাড়ির ভিতরে না এসেই দৌড় দিছে ।

লাবিবা পুকুরের ধারে বসে বসে মাছ ধরা দেখছে । মাঝিরা মাছ ধরা শেষে মাছ নিয়ে চলে যায় । অল্প পানির কাদায় এখনো অনেক মাছ । ইসমাইল ছেলেমেয়েদের কাদায় নেমে মাছ ধরে দিতে বলে। অর্ধেক যারা ধরে দিবে তাদের আর অর্ধেক নিজেদের । লাবিবার বয়সী জুই , গোলাপী, রিমিরাও নেমেছে মাছ ধরতে । লাবিবা ওদের মজা করে মাছ ধরা দেখে ছটফট করতে থাকে । বার বার এদিক ওদিক তাকাতে থাকে । ইসমাইলকে লক্ষ্য করে জেলেদের মাছ বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত । কাজ না শেষ হোওয়া পর্যন্ত এদিকে আর তাকাবেনা । লাবিবা একটু একটু করে পাড় বেয়ে পুকুরে নামতে থাকে । জামা একটু উপরে তুলে কাদায় পা রাখে । এক পা রাখতে একটু ডুবে । কিন্তু দু পা রাখতেই অনেকটুকু পা চলে যায় গভীরে । থ হয়ে ওমনি দাড়িয়ে থাকে । আস্তে আস্তে এগুতে থাকে। ছেলেমেয়েরা ততোক্ষনে কাদা ছুড়া ছুড়ি করছে । বেচারা লাবিবা এগুতেও পারছেনা মাছ ও ধরতে পারছেনা কাদার জন্য । হটাৎ ওর জামাতে একটু কাদা এসে পড়ে । লাবিবা কাদা দেখে চিল্লাতে থাকে -ঐ ঐ হাতির হালুয়া ,মুরগির বাচ্চা , পেয়াজের কাচামরিচ, হলুদের রসুন কাদা দিস কেন আমায় 😡 আম্মুনি দেখলে যখন বকা দিবে তখনকি তোরা বকা শুনবি 😡?
সুজন – ওখানে দাড়িয়ে থাকলে কি মাছ ধরতে পারবি ? এদিকে আয় । জামা প্যান্টে গুজে কাদায় হাত লাগা ।
লাবিবা – কিন্তু আমার গায়ে কাদা ছুড়বিনা । যদি কাদা লাগে একটা মাছ ও তোদের দিবো না ।
গোলাপী – তোর খালি হুমকি দামকি তাইনা? পুকুরের মালিক চেয়্যারম্যানের মাইয়া হইছস তাই সব সময় পাওয়ার দেখাস ‌
লাবিবা- ঐ ঐ আসছে..লাল গোলাপী hate you. পাওয়ার আছে জন্য ই পাওয়ার দেখাই । তোদের থাকলে তোরাও দেখাইতি। আমি চেয়্যারমেনের মাইয়া ..in the আসিতেছে future দেখিস এমপি মন্ত্রীর বউ ও হমু । তোরা হইতে পারবি ? তোরা সবসময় এমন কথা বলিস । তার জন্য ই তোদের সাথে মিশিনা 😣।
হে হে এইটা কে ??…
আওয়াজ শুনে লাবিবা পাড়ে তাকাতেই দেখে রাজিব রাজন তানভীর ভেটকি দিতেছে লাবিবাকে দেখে ।
তিনজনে ঘুরতে বেড়িয়ে বড় পুকুরের ধারে অনেক মানুষ দেখে দেখতে আসছিল কি হচ্ছে এখানে । এসে দেখে মাছ বিক্রি করছে । পুকুরের দিক তাকাতেই দেখে লাবিবা নিচে । হাতে পায়ে জামাতেও কাদা লেগেছে দেখে রাজন সেখানেই হাসতে হাসতে শেষ ।তানভীর রাজিব ও হাসে । লাবিবা রাগ দেখিয়ে বলে
– close up মার্কা add দিতে চাইলে মিডিয়াতে যান । এখানে কি ?
– দুষ্টু পুতুল তোমাকে দারুন লাগছে ।
– খবরদার আমাকে দুষ্টু পুতুল বলবেন না । আপনাকে দাড়ান দেখাচ্ছি …
হাতে কাদা নিয়ে রাজনের দিকে ডিল দেয় । রাজন সরে যাওয়াতে কাদা লাগে না ।
সাবিনা লাবিবাকে ডাকতে এসে দেখে পুকুরে নেমে কাদা লাগিয়েছে গায়ে । রাগে লাবিবা বলে চিল্লানি দিয়ে সামনের জড়ো করে রাখা বাশ থেকে কাচা কঞ্চা ছিড়ে ধেয়ে আসে । লাবিবা সাবিনার কঞ্চা নেয়া দেখে উল্টা দিকে কাদার মধ্যে দিয়েই দৌড় । সবিনা পেছন থেকে বলছে – দাড়া , দাড়া একবার তোর একদিন কি আমার যতোদিন লাগে । লাবিবা আরো দৌড় । সামনে অনেকেই আটকাতে চাইলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে । সামনে কে আছে তার দেখার বিষয় না । তার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে তাকে এই মুহূর্তে বাসায় গিয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা লক করতে হবে । সাবিনা তানভীরকে ইশারায় ধরতে বললে তানভীর এগোতেই ধাক্কা লেগে দুজনেই ধপাস । লাবিবা তানভীরের উপড়ে ধপাস । কোন মতে উঠে এক দৌড়। এদিকে তানভীরের গায়ে কাদা লেগে গেছে । রাজীব রাজন দুজনেই হাসতে হাসতে শেষ । সাবিনা এসে হায় হায় করতে থাকে । ইস বাবা তোমার গায়ে জামায় কাদা লাগিয়ে দিলো পাজিটা ।
রাজিব – ইস…এই অবস্থায় বাসায় যাবি কি করে ? বেলাল এসে বলে আসোতো বাবা কাদা ধুয়ে নিবে । চলো ।
লাবিবা মাত্রই গোসল করে বাইরে আসছে । এসে দেখে তানভীররা বাসায় ঢুকছে । গায়ে কাদা মাখা ।লাবিবা দৌড়ে এসে বলে – ওমা ..😱 স্যার আপনার গায়ে কাদা দিলো কে ? আপনিও আমাদের মাছ ধরতে আসছেন 😱? আপনি বললে তো আব্বু এমনিতেই বড় বড় মাছ গুলো পাঠিয়ে দিতো । কষ্ট করে মাছ ধরতে এলেন কেন ?
তানভীর রাগে কটমট করে সেট আপ বলে দেয় এক ধমক । ইচ্ছা করছে তুলে ধরে দেই এক আছাড় । ডাফার গার্ল কথাকার । পানি আনো আমার জন্য। লাবিবা ধমক খেয়ে দৌড়ে যায় পানি আনতে । ছোট বালতি করে পানি এনে মগ দিয়ে হাতে পায়ে পানি ঢেলে দেয় । উপরের জ্যকেট খুলে লাবিবার হাতে দিয়ে বলে – এটা কুইক ক্লিন করো । লাবিবা কিচেনে এসে সাবিনার হাতে জ্যেকেট দেয় ধুয়ে দেওয়ার জন্য । সাবিনা জ্যেকেট নিয়ে বেড়িয়ে আসে ধুয়ার জন্য । তানভীরদের বসতে বলে বাথরুমে চলে যায়। ধুয়ে রোদে মেলে কিচেনে এসে লাবিবাকে ফল কাটতে বলে । জুস বানিয়ে বিস্কিট নিয়ে ফ্রুটস নিয়ে ট্রে সাজিয়ে লাবিবার হাতে দেয় । লাবিবা ড্রয়িং রুমে এনে টি টেবিলে রেখেই বাইরে চলে আসে । উঠোনে বুছির মা কে দেখে শিং মাগুর মাছ কেটে দিতে । লাবিবাও টুল নিয়ে এসে বসে বসে মাছ কাটা দেখে । পানি থেকে একটা একটা করে সাবধানে মাছ বুছির মাকে তুলে দিতে থাকে ।
বুছির মা – আম্মাগো তুমি আর ধইরো না । এইগুলা একবার গালি দিলেআর রক্ষে নাই । তুমি কোমলা হাতে ধইরো না । পরে তোমার আম্মুনি বকা দিবো আমারে ।
লাবিবা – হুস হুস । কিচ্ছু করবো না । I am সাহসী😎
আমিও শিং মাগুর ধরতে পারি । এইটা সবার জানা দরকার । আহহহ…………😫
বুছির মা – কি হ ইল,কি হ ইল ? গালি দিছে তাই না । ও সাবিনা ভাবি 📣📣 আইলেন না ? আম্মাডারে শিংএ গালি দিছে ।
লাবিবা – 😭😭😭
ঘর থেকে সবাই বাইরে আসে লাবিবার চিক্কুরে । সাবিনা বকতে বকতে রুমে নিয়ে আসে । হাত দুটো ভালো করে ধুইয়ে দেয়। লাল হয়ে গেছে যেখানে গালি দিয়েছে । সখিনা গিয়ে বুছির মাকে ধোলাই দিচ্ছে কথায় বকে । মলম লাগিয়ে সাবিনা ফু দিতে থাকে । ইসমাইল হাত পাখায় বাতাস দিতে থাকে উপরে ফেন চললেও । তানভীররা নিরব দর্শক হয়ে লাবিবাকে দেখতে থাকে । কিছুক্ষন পর লাবিবা চিৎকার করা বন্ধ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে – আব্বু ব্যতা কলে .😣
লাবিবার এই বাচ্চামো ফেস আর কথায় তানভীরের ও চিক্কুর দিয়ে কাদতে ইচ্ছা করে । কাদো কাদো গলায় বলে – কাকা…কাকী..আপনারা সামলান কি করে একে ? কিভাবে এতো ধৈর্য আপনাদের ?
ইসমাইল সাবিনা অসহায় লুক দিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
________________
তানভীররা রাত করে বাড়ি ফিরেছে । তিনজনে ডিনার করে ড্রয়িং রুমে বসে মুভি দেখছে । আখি এইমাত্র এদের দেড়ি দেখে রুমে চলে যায় । রাজন মুচরামুচরি করে বলে – ভাইয়া .. এই দুষ্টু পুতুলটাকে আমার সেই লাগে । তানভীর প্রজেক্টরের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে রাজনের দিকে তাকায়।
– কিরকম সেই ? আর দুষ্টু পুতুল বলছো কেন ? ওর নাম লাবিবা তানহা এলিজা ।
– আরে ভাইয়া তুমিও তো বলো । শোননা আমি এইচ এসসি দিবো দুষ্টু পুতুল জে এস সি দিবে ।
রাজিবের টনক নড়ে উঠে । রাজন চুপ কর ।

আরে ভাইয়া তুমিও শোন । আমি তোমাদের একমাত্র ছোট ভাই । আমি তো সব তোমাদের কাছেই আবদার করবো তাই না ?

রাজন তোকে চুপ করতে বলেছি ভাই আমার । প্লিজ চুপ কর ।

ইস ভাইয়া আমি না বললে কেমনে হবে ? তানভীর ভাইয়াকে তো বলতেই হবে । ভাইয়াই পারে আমাদের সেট করে দিতে ।

রাজন চুপ কর ।
তানভীর রাজিব কে থামিয়ে বলে বলতে দে ওকে । রাজীব তানভীরের শক্ত হয়ে থাকা চেহারা দেখে রাজনকে বলে ভাই চল উপরে চল । কাল সকালে যখন চলে যাবো তখন বলিস ।

আরে ভাইয়া এখনি বলি ।
রাজন তানভীরের সামনে এসে বসে বলতে থাকে – ভাইয়া দুষ্টু পুতুলের সাথে কিন্তু আমার পারফেক্ট মেচ হবে । আমার জোস লাগে দুষ্টু পুতুলকে । বড় হলে এই মেয়ে যা সুন্দর হবে না .. নায়িকাদের মতো চেহারা । একটু গুলুমুলু বাট ব্যপার না সফট হবে অনেক উফফ শান্তি । আমি পাগল হয়ে গেছি ওকে দেখে । উজ্জল শ্যমলা রং আই লাইক ইট ,বড় বড় চোখ দেখলেই প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করে , রসগোল্লার মতো গাল দেখলেই কামড় দিতে_____
আর বলতে পারে না রাজন । তার আগেই তানভীর ডুসুম করে নাক বরাবর ঘুসি লাগায় 👊। রাজন চটকে পড়ে যায় । রাজিব আটকানোর সাহস পায় না । চুল ধরে টেনে তুলে বলে এতোদূর চলে গেছিস তুই ..আমার জিনিসে কামড় দিতে চাস ? তোর স্পর্ধা দেখে অবাক আমি । আমার জিনিসে নজর দেস 😠
ওকে দুষ্টু পুতুল শুধু আমি বলবো আর কেউ না । কারন ও আমার ” পুতুল বউ “। মাইন্ড ইট ।
রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলে – এই এলাকার জামাই তুই । আসতেই পারিস । বাট এটাকে যেন আমি আর কখনো এই এলাকায় না দেখি । দেখলে কি হবে ভালো করেই জানিস ।

To be continue___

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৭

🍁
লাবিবা পড়তে এসেছে । বাসায় না ঢুকে গোলাপ গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে । গাছের নিচে দাড়িয়ে হাটা হাটি করছে ।
উফফ ও ফুল তুমি এতো উপরে কেন ফুটো ? নিচে ডাল গুলো যে তোমার জন্য মন খারাপ করে পাতাও দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সেদিকে কি তোমার খেয়াল নেই ? তুমি এতো নিষ্টুর কেনো গো ? আমি যে প্রতিদিন এসে দাড়িয়ে থাকি তুমি কি দেখোনা ? আমার প্রতি কি মায়া হয় না ? আমি এতো ডিল দেই একটাও কি পড়তে পারো না ? আজকে একটা পড় আমার জন্য প্লিজ ।
নিচে থেকে ইটের কনা নিয়ে ডিল ছুড়তেই তানভীর বলে উঠে – আমার গাছে আঘাত করার সাহস কোথায় পেলে তুমি দুষ্টু পুতুল ?
লাবিবা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে তানভীর পকেটে দুহাত দিয়ে উদাম গায়ে দাড়িয়ে আছে । লাবিবা দেখেই হা হয়ে যায় তানভীরের বডি দেখে । এমন কেনো বডি বুজতেই পারে না । আব্বুর জেঠ্যুর তো এমন না । এক দৌড়ে বাসার ভিতর ঢুকে যায় । ব্যাগ রেখে বসে একটু । নুপুর আসতে দেড়ি করছে দেখে পা টিপে টিপে তানভীরকে যেদিকে দেখেছিলো সে দিকে যেতে থাকে । দরজায় একটু ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায় । ভিতরে উকি দিয়ে দেখে ইয়া বড় হলের মতো । এক কর্ণারে দেখে তানভীর একটা যন্ত্রের দুটো হাতল ধরে টানছে আর পেশি গুলো ফুলে ফুলে উঠছে।লাবিবা অবাক ।এসব কি 😱 । ভয় পেয়ে ডেকেই ফেলে স্যারর.. তানভীর তাকায় ।হাতে টাওয়েল নিয়ে মাথা মুখ মুছতে মুছতে লাবিবার দিকে এগোয় । লাবিবা তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে । তানভীর সামনে এসে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলে লাবিবা চুপ থেকে চোখ পিট পিট করে । তানভীর মুচকি হেসে বলে
– আজ সকাল সকাল যে …. ? এই সময়ে আমি জিমে থাকি । কাল থেকে একটু পরে আসবে কেমন? চলো ।
তানভীর ডোর লক করে হাটতে থাকে । লাবিবাও পিছু পিছু যায় । বাড়ির পেছন সাইডে চলে আসে । লাবিবার চোখ পুরো ধাধিয়ে যায় ।
– উফফ লাভলি..😍 সুইমিং পুল😱
তানভীর মুচকি হাসে । লাবিবা দৌড়ে গিয়ে বসে পড়ে পা ভেজায় । তানভীর ও লাফ দেয় । পুরো পুলে উল্টা সাতারে ঘুরে আসে । লাবিবা মুখে একরাশ হাসি রেখে তানভীরের সাতার কাটা দেখতে থাকে । তানভীর ঘুরে আসে লাবিবার কাছে । হাতে পানি নিয়ে ছুড়ে মারে ।
– আহহহ … আমি ভিজে যাবো তো ।
– সাতার পারো ? এখানে সেইফ । মন চাইলেই কাটতে পারো তানিয়াকে নিয়ে ।
– আমি সাতার পারি না ।
– কিহহ?
– হুম । আমি পুকুরে নামলেই জর আসে । আমাদের পুকুরের জায়গাটা ভালো না।
– তাহলে সেদিন নেমেছিলে কেন ?
– সবাই মাছ ধরছিল দেখে আমারো নামতে ইচ্ছা হয়েছিল তো আমি কি করব 😒
– নুপুর মনে হয় চলে আসছে । যাও গিয়ে পড়তে বস ।
লাবিবা দৌড়ে চলে যায়। তানভীর সেই কিউট কিউট পায়ের দৌড়ানো দেখে ।
রিড়িং রুমে এসে দেখে নুপুর । লম্বা একটা টান দেয় -দোস্ত………………
– জানু……………….
– কত ঘন্টা পর তোকে পেলাম ..আয় আমরা বুকাবুকি করি
– আয় জানু বুকে আয় বুকাবুকি করি ।
তানভীর রুমে ঢুকতেই দেখে এরা ইদের দিনের মতো কোলাকোলি করছে ।
– এখানে কি হচ্ছে ?
নুপু,লাবি- বুকাবুকি স্যার☺
– what is বুকাবুকি ?
– হাগ স্যার হাগ ।
– হাগ দেওয়াকে বুকাবুকি বলছো । এর ইংলিশ ভার্সন কি হবে? হাগা-হাগি।
তানিয়া মুখ ঢেকে হেসে বলে – খাস বাংলায় পটি করা🙊।
– সেট আপ😡। যাও গিয়ে পড়তে বসো সবাই ।

পড়া শেষে নুপুর লাবিবা হেলতে দুলতে রাস্তা দিয়ে হেটে যায় । রাস্তার এপাশ থেকে একবার ওপাশে যায় আবার ওপাশ থেকে এপাশ থেকে ওপাশে যায় । পিছু পিছু তানভীর ও বের হয় দুষ্টু দুইটা বাসায় ঠিকমত যাচ্ছে কিনা দেখার জন্য । রাস্তায় দুজনের কান্ড দেখে রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার অবস্থা । বেশি গাড়ি না চললেও মোটামুটি ভালোই গাড়ি চলছে । মেইন রোড বলে কথা । গাড়ি থামিয়ে জোরে হেটে ওদের পিছনে যেতেই শুনতে পায়

🎶🎶 বাপে দেই না বিয়া ..
মায়ে দেইনা সাইরা…
কিযে করি আমি একলা একটা মাইয়া ..
ঘটক দেইখা পরান যায় ..
পাত্রের ছবি দেইখা কান্দন পায় 🎶🎶
নুপুর – জানু তারপরে কি গাইমু ?
লাবিবা- দারা আবিষ্কার করতেছি ।

🎶🎶 হই হই
রাস্তা দিয়া যখন আমি যাই
মাঝে মাঝে একটা পোলা দেখতে পাই
আলতা রাঙা পায় আবার শাড়ি পড়েছে
পোলারে দেখতে কিযে সুন্দর লাগতাছে
কিউট কিউট আমার বউ মনে হইতাছে 🎶🎶
নুপু,লাবি- হাততালি .👏👏
নুপু- দোস্ত চল আমরা ঢাকা যাইগা । ক্ষুদে গান রাজে গানগাইমু । দেখবি নোবেল টা আমরাই পামু ।
লাবিবা- তুই না পাইলেও আমি সিউর পামু । গিয়ে বলমু আমি সাবিনা ইয়াসমিন শিল্পির মেয়ে । সবাই ভাববো শিল্পি ..আমি তোমাদের এই গান শুনাবো ..তোমাদের মন ভরাবো এই গানের শিল্পি সাবিনা ইয়াসমিনের মেয়ে । তারপর দেখবি সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকেই নোবেল দিবো। আমার মানেই তোর জানু । উম্মাহ হহহ😘
নুপুর – 😫😫
লাবিবা- ও আমার আল্লাহ কান্না করিস কেন ? কি হইলো ?
নুপুর – তোর গান শুইনা মুইনের কথা মনে হইল । ওরে আর দেখি না । পেটের নুপুর ,মনের নুপুর, বুকের নুপুর আর বলে না ।
এদিকে লাবিবা মুইনের কথা শুনে ফুটপাতেই বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা । পেছনে এতোক্ষন তানভীর মুখ চেপে হাসি আটকে রাখলেও এবার আর পারে না । সেও হাসতে হাসতে ফুটপাতের ঘাসের উপর বসে পড়ে । তানভীরকে দেখে নুপু লাবি দুজনেই অবাক । তানভীরের দিক মুখ করে দুজনেই বসে হা করে চোখ পিট পিট করে হাসি বন্ধ করে তানভীরের হাসি দেখতে থাকে । কেউ দেখলে নিশ্চিত বলবে রাস্তার পাশে সাধু বাবা বসে আছে আর তার সামনে দুটো চেলা বসে আছে । তানভীর অনেক কষ্টে পেট চেপে ধরে হাসি থামায় । ওদের দিকে তাকিয়ে বলে – এগুলা তোদের গান ? ভাবাগো ভাবা ..ইচ্ছে করতেছে আমিই দুইটা নোবেল কিনে এনে তোদের হাতে ধরিয়ে দেই । আর কি ??পেটের নুপুর? মুইন ? হা হা হা ..এই মুইনটাকে তো দেখতে ইচ্ছা করতেছে এখন ।
দুজনেই- do you follow আমাদের ?
– সন্ধ্যা হয়ে গেছে । চল বাসায় পৌছে দেই ।অটো নিলে কি হয় ?
লাবি- স্যার দেখেন নুপুর কতো সুন্দর । একবার নুপুর অটোতে উঠেছিলো । একটা বুইড়া third gender খালাম্মা বলছিলো ” হেই বেবি ..তুমি অনেক সুন্দর । তোমাকে আমার ছেলের বউ বানাবো । চলো আমার বাসায় যাই ।” অটো ওয়ালা ভালো ছিলো জন্য তখনি গাড়ি থামিয়েছে আর সাথে সাথেই ভয়ে নুপুর দৌড় দিছে । একবার ভেবেছেন ঐ খালাম্বা যদি নিয়ে যেতো তখন আমার ভালুপাসাটাকে কই পেতাম ?
তানভীর – সব সময় তো এক হয় না । আর থার্ড জেন্ডার রা এরকমি করে । একবার এক মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে দিয়াবাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলাম । সেখানে একদল এসে বলেছিল টাকা দে নয়তো দুজনের থেকে একজন কে নিয়ে যাবো । আমি না করেছিলাম জন্য আমাকেই চ্যাং দোলা করে নিয়ে যাচ্ছিলো আর বলছিলো সুন্দর পোলা পাইছি ..সুন্দর পোলা পাইছি। আমার ফ্রেন্ড তো ভয়ে টাকা যা ছিলো সব বের করে দিয়ে দিচ্ছিলো । আমি বার বার বলছিলামম টাকা না বের করতে । অবশেষে আমাদের কলেজের ই কয়েকজন বড় ভাইয়ের দেখা পেয়ে ডাক দেই । ওরা এসে আমাদের বাচায় ।
নুপু লাবি – 😱😱
আযানের আওয়াজ আসে কানে । তানভীর জিজ্জাসা করে – নামায পড়ো না তোমরা ?
লাবিবা – আমি পড়ি কিন্তু নুপুর পড়ে না ।
– নুপুর নামায পড়বে । আমি যেন আর না শুনি তুমি নামায পড়ো না ।
নুপুর – আমি পড়ি । কিন্তু মিসদেই বেশি । এখন তো পড়তে পারবোনা । একেবারে এশার সময়ে কাযা পড়ে নিবো ।
তানভীর – গাড়ি তে গিয়ে বসো ।
তানভীর ওদের কে নিয়ে সামনে একটা মসজিদের সামনে গাড়ি থামায় ।
– শোন । চুপটি করে বসে থাকবে । আমি নামায শেষ করে আসছি ।
তানভীর গাড়ি লক করে মসজিদে চলে যায় । ফিরে এসে দেখে লাবিবা আর নুপুর দুদিক হয়ে বসে আছে ।
– কি হয়েছে ? ঝগড়া করেছো ?
দুজনেই মাথা নাড়ায় ।
– ঝগড়া করা ভালো না । মিল হয়ে যাও এখনি ।
দুজনেই মাথা নাড়ে ।
– এখনি ভাব করে নিলে দুজনেই গিফ্ট পাবে ।
– গিফ্ট.. উফ লাভলি😍
দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে । তানভীর শব্দ করে হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয় । বাজারের পাশে দু মিনিটের জন্য গাড়ি থামিয়ে দু প্যাকেট চকলেট বক্স এনে দুজনকে দেয় । নুপুরের বাসার সামনে নুপুরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘোরায় । লাবিবাকে চুপচাপ নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেও কিছু বলে না । লাবিবার বাসার একটু আগে গাড়ি থামিয়ে নেমে পেছনের গেইট খুলে বলে নামো । লাবিবা চকলেট খাচ্ছিলো । খাওয়া বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকাতে যায় ।
তানভীর – দুষ্টু পুতুল ..তোমাকে কেমন জানি লাগছে । তুমি কি কিছু বলবে আমাকে ?
লাবিবা উপর নিচে মাথা ঝাকিয়ে আবার ডানে বামে মাথা ঝাকায় । তানভীর বুঝতে পারে ।
– তুমার যা মনে আছে সব বলতে পারো নির্ভয়ে । আমি কিছুই বলবোনা তোমাকে । যদি বলো তাহলে কাল আরেক বক্স চকলেট দিবো । বলবে তাহলে ?
লাবিবা উপর নিচে মাথা ঝাকায় । তানভীর গাড়িতে উঠে বসে গেট বন্ধ করে মুখোমুখি অনেক কাছে আসে লাবিবার ।
– বলো ।
– স্যার আপনি এতো মারামারি জানেন তাহলে ঐ third gender লোকগুলো আপনাকে নিয়ে চলে গেলো আপনি কিছুই বলতে পারলেন না কেনো ?
– তখন আমি ছোট ছিলাম তোমার মতো । তখন ক্লাস টেনে পড়তাম ।
– ওও..স্যার আপনি সত্যিই অনেক সুন্দর । আমার অনেক ভালো লাগে ।
– কি ভালো লাগে ?
– অনেককিছু ।
– বলো ।
– এই খোচা খোচা দাড়ি গুলো ।
– ধরবে ? ধরে দেখো । তানভীর নিজেই হাত দুটো দাড়িতে নিয়ে রাখে । লাবিবা হালকা ছুয়ে বলে
– এতো সফট কেন ? দেখে তো মনে হয়না এতো সফট
– আর কি ভালোলাগে বললে নাতো।
– আপনার চোখ দুটো । যখন রেগে গিয়ে লাল করে ফেলেন তখনো ভালো লাগে । কখনোই খারাপলাগে না ।
– আর ?
– আজ দেখেছি আপনার মাথা থেকে টুপ টুপ করে যখন পানি পড়ে তখন অনেক সুন্দর লাগে ।
– আর ?
– আপনার ভেজা পায়ের লোম গুলো অনেক সুন্দর লাগে ফর্সা পায়ে । আপনি এতো ফর্সা ..আমি এতো কালো কেন ? আমি কেন ফর্সা হলাম না ?
– তুমি যে নিজেই নিজের তুলনা তাই ফর্সা হওনি । তুমি যদি বড় হতে তাহলে এগুলা না দেখে দুইটা জিনিস দেখতে ।
– কি ?
– বড় হোও তারপর নিজেই জানবে । নিজেই বলবে স্যার আপনার এইগুলা খুব সুন্দর ।
– আপনি সত্যিই খুব সুন্দর ।
-বাসায় যাও । ওকে ?
– হামম।

To be continue ______