একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-২৪+২৫

0
471

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২৪+২৫

🍁
রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ পড়ে রাস্তার পাশে দু চার জন ছেলেমেয়ের দিকে । হাতে লম্বা কোটা আর খড়ের পাকানো বিরা নিয়ে হেটে যাচ্ছে । কোথা থেকে একটা মেয়ে মাথায় খাচা নিয়ে দৌড়ে এসে তাদের মাঝখানে ঢুকে পড়ে । মাথাটা একটু হেলিয়ে দেখে খাচামাথায় মেয়েটি আর কেউ নয় স্বয়ং দুষ্টু পুতুল। রাস্তা ছেড়ে কাঠবাগানে ঢুকে পড়ে সবাই । তানভীরের কিউরিসিটি জাগে ।ওরা কেনো ঐ দিকে যাচ্ছে?
গাড়ি সাইড করে নেমে পিছু পিছু যায় । একটা বড় গাছের নিচে লাবিবারা দাড়ায় । একে একে ছেলেমেয়েরা গাছে উঠতে থাকে । লাবিবা নিচ থেকে গাছের ডালে পাখির বাসা দেখে আনন্দে লাফাতে থাকে ।
– উফ লাভলি…আমার টিয়া পাখি…আই ভালুপাসি। আজকে থেকে তুমি আমার কাছে থাকবে । আর গাছে গাছে কষ্ট করে থাকতে হবে না ।
তানভীর এগিয়ে এসে গাছের ডালে তাকায় । একসাথে দুটো পাখির বাসা। বাচ্চা সহ মা ও আছে। বাচ্চা গুলো বাসা থেকে মুখ তুলে নিচের দিকে তাকাচ্ছে বার বার । উপর থেকে একজন ডাক দেয়
– এই লাবু ..উঠে আয় । দেখ কি সুন্দর ।
লাবিবা মাথা থেকে খাচা মাটিতে রেখে হেলানো গাছ টায় উঠতে থাকে । একটু উঠে আর উঠতে পারে না ।
– কি হলো লাবু তারাতারি আয় ।
– উফফ বাবা ..আমি কি পারি নাকি ? আমি কখনো গাছে উঠেছি ? এখন তো পেলতে হবে । আমি তো পারি না ।
– ওও আমরা কষ্ট করে পাখি পারবো আর তুই নিয়ে পালবি ? দিবো না তোকে ।
– আমি কাদবো কিন্তু ।
– কাদোই । দেবো না তোকে । আচ্ছা আয় হাত ধর ।
লাবিবা হাত ধরে একটু একটু করে এগুতে থাকে । শ্যাওলা জমে আছে গাছে তাই পা বার বার পিছলে যাচ্ছে । কোন রকম কষ্ট করে উঠে । পাখির কাছে যেতেই পাখি ফুরুৎ। পাখির সাথে সাথে বাচ্চারাও ফুরুৎ । এবার লাবিবা কান্না জুড়ে দেয় ডালে বসেই ।
– কাদিসনা । কাল আবার আসবে । বাসা ছেড়ে কোথায় যাবে বল ? আবার ধরে দিবো ।
– আমার টিয়া😭😭
– ভ্যা ভ্যা করিস নাতো ।চল নামি । দুপুর বেলা হয়ে গেছে । জায়গা ভালো না ।
সবাই একে একে নামতে থাকে । লাবিবাও পিছলে নামতে থাকে । সমস্যা দেখা দেয় সেই জায়গায় । পিচ্ছিল জায়গা আর পেলে নামতে হয় । অন্যরা অনেক নিচে নেমে গেছে । লাবিবা নিচের দিকে তাকাতেই মাথা ঘুরে যায় । অনেক উপরে উঠে গেছে । নামবে কিভাবে ।
– আমাকে নামাও ।
– আরেকটু এগিয়ে আয় । হাত দিচ্ছি ।
পিচ্ছিল গাছে বার বার পা স্লিভ খাচ্ছে । ডালের সাথে লেগে হাতে ব্যথাও পায় । ছিলে গেছে একদম । হাত ধরেই কাদতে থাকে ।
– আরে না কেদে আরেকটু এগিয়ে আয় ।
লাবিবা আরেকটু এগিয়ে হাত ধরার জন্য ঝুকে গেল ।পা বার বার স্লিভ খাচ্ছে ।এই বুঝি পরে যাবে যাবে ভাব দেখে আর চুপ থাকতে পারে না তানভীর ।
-দুষ্টু পুতুল পরে যাবে সাবধানে ।
তানভীরের কন্ঠ শুনে নিচের দিক তাকাতেই হাত আর পা দুটোই ফসকে যায় ।
আআআআআ…..
নিচে পড়ে যেতে দেখেই তানভীর দৌড়ে লাবিবাকে ধরে নেয় । অন্য রা চিৎকার শুরু করে । তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে আসে । তানভীর বলে – পানি আনো তোমরা । সবাই পানি পানি করে বড় পুকুরের দিক ছুটতে থাকে । লাবিবা ভয়েই চোখ বন্ধ করে কাদতে থাকে । তানভীরের ডাকে চোখ খুলে দেখে তানভীরের কোলে । ব্যথায় ভয়ে আরো জোরে কেদে দেয় । কোলে নিয়েই গাড়িতে চলে আসে । গাড়িতে বসিয়ে দেয় এক ধমক – গাছে উঠতে কে বলেছিলো তোমায় ? পাখি চাই কাউকে বললেই তো এনে দে । আমাকে বললেই তো এনে দিতাম । এখন পড়ে গেলে বাচতে ? দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো ? হাত পায়ে ছিলে গেছে অনেকটা জায়গা । ছেলে মেয়েরা পানি ভর্তি জগ আর গ্লাস নিয়ে আসে । একটু পানি খায় লাবিবা । ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলে
– শোন তরা । আমি যে পড়ে গেছি কাউকে বলবিনা । আম্মুনিকেও না ।
– আচ্ছা । গেলাম আমরা ।
তানভীর তাকিয়ে আছে লাবিবার দিকে । কি মেয়েরে বাবা ..উল্টা পাল্টা কাজ ও করবে আবার বাসায় বলতেও না করবে । এদিকে তানভীর ও ভয় পেয়ে গিয়েছিলো । কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম স্পষ্ট।
ফাস্ট এইড বক্স বের করে হাতে ওষুধ লাগাতে নিলে লাবিবা লাফানো শুরু করে দেয় – জ্বলে জ্বলে ।
অগত্যা তানভীর সামনের দিক করে কোলে ভ‌বসিয়ে চেপে ধরে ওষুধ লাগায় যেন লাফাতে না পারে । এদিকে হাতে পায়ে ওষুধ লাগানোতে কামড় ধরায় লাবিবা চিল্লাতে থাকে । তানভীর মলম টা রেখে মুখ চেপে ধরে । আরেক হাতে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেয় । লাবিবার মুখ লাল হয়ে গেছে কাদতে কাদতে । ঘেমেও গেছে । তানভীর মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে ফু দিতে থাকে ।
– কামড় ধরা ভালো তো । এখনি ঠান্ডা লাগবে । আর জলবে না । জাস্ট দুই মিনিট ।
জ্বলা বন্ধ হলে ঠান্ডা লাগতে থাকে । লাবিবার কান্না একটু একটু করে বন্ধ হয় । তানভীর মুখ ছেড়ে দেয় ।
লাবিবা কে নিজের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয় । লাবিবা এখনো ফুপাচ্ছে । তানভীর কি বলবে ভেবে পায়না । এতটুকু ব্যথাতেই এই অবস্থা ।
– এতো ছোট কেন তুমি দুষ্টু পুতুল ? কিছুই কি বুঝো না ? আজ যদি পা দুটো ভেঙে যেতো তাহলে তুমি স্কুলে পারফর্মেন্স করতে কিভাবে ? চলো এখন বাড়ি যাবে ।তোমাকে সামলাতে সামলাতে আমি নাজেহাল।পেছনের প্যাকেটে তোমার ইউনিফর্ম আছে । টেডি টাও তোমার ।
লাবিবা একবার পেছনে তাকিয়ে বলে
– আমি বাড়ি যাবো না । আম্মুনি হাতে এগুলা দেখলে মারবে ।
– মারবেনা । আমি আছি । নুপুরকে বলে দিচ্ছি । আজ তোমার বাসায় পড়াবো । রাত পর্যন্ত পড়াবো । লাস্ট লেসনটা আজি শেষ করাবো।
– আজি!!! আচ্ছা ।

লাবিবার বাসায় এসে রাত নয়টা পর্যন্ত পড়ায় দুজনকে । আনিস এসে নুপুর কে সাথে করে নিয়ে যায় । তানভীর বেরোতে নিলে ইসমাইল আটকে দেয় । না খেয়ে বেরোতে দিবে না । সাবিনাকে বলে খাবার রেডি করতে । মুক্তাও আছে বাসায় । সবাইকে খাবার দেয় টেবিলে । খেয়ে দেয়ে রাত বারোটা পর্যন্ত গল্প গুজব করে সবার সাথে । সোহানার ফোন পেয়ে বলে
– কাকা কাকি এখন আমাকে যেতে হবে । ভাইয়া আমাদের বাসায় আসবেন। আমি নেই তো কি হয়েছে কাকার সাথে আসবেন ।
ইসমাইল – আজ থেকে গেলে হতো না ?
– মম ফোন দিচ্ছে । উঠি এবার । আআ আমার ওয়ালেট ….দুষ্টু পুতুলের রুমে ..দুষ্টু পুতুল ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হয় । সরাদিন যা যা করে…সাবধানে রাখবেন কাকা ।
সাবিনা- তুমি বসো আমি আনছি ।
– না কাকি আমিই আনছি । আমিতো রেখেছি আমি আনছি ।
ওয়ালেট পেকেটেই আছে । শুধু যাওয়ার সময় মায়াবী মুখটা দেখে যাওয়ার বাহানা । লাবিবার রুমে এসে দেখে তানভীরের দেওয়া টেডি জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে । পাশে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দেয় । কানের কাছ মুখ নিয়ে কয়েকবার ডাক দিতেই লাবিবা চোখ খুলে তাকায় । মাথার নিচ দিয়ে হাত দিয়ে মুখটা একটু উপরে তুলে ঘুমু ঘুমু চোখ দুটোয় ঠোট ছুয়ায় । কপালে নিজের কপাল লাগিয়ে বলে – কাল রিয়ার্সেল শেষ করে আমার সাথে দেখা করবে । বাসায় থাকবো আমি । একাই যাবে । নুপুরকে সাথে নিও না । কাল পড়াবো না।
– তাহলে কেনো যাবো ?
– চকলেট নিবে না ?
– হুম ।
– ওকে ঘুমাও । গুড নাইট ।
_________________
লাবিবা গুটি গুটি পায়ে স্কুলের দিকে এগুচ্ছে । আজ বড় রাস্তা ধরেই এসেছে । খান বাড়ির সামনে এসে সেই কালো গোলাপের গাছটার দিকে একবার তাকায় । পরক্ষনেই চোখ ফিরিয়ে নেয় । গেইটের সামনে বসে এই ঠান্ডায় কাপছে আকবর । আজ ঠান্ডা পছেড়ে খুব । সকাল হোওয়ায় ঠান্ডা লাগে । আকবরের সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বলে
– তুমি তো ভালো না । ঠান্ডায় গরম কাপড় পরোনা কেন ? সিজন পরিবর্তন । যদি ঠান্ডা লেগে যায় তখন কি করবে ? শাশুমা সেদিন তোমায় দুটো গরম কাপড় দিয়েছে ।
– কি আর করবো বলো মা । বাড়িতে নিতেই ছেলে নিয়ে গেল জ্যাকেট আর বউ নিলো চাদর । আমার জন্য কিছু থাকে না ।
– ওকে নো সমস্যা । এইটা নাও তোমার ।
গা থেকে শাল টা খুলে দিলো ।
– একি ! তোমার ঠান্ডা লাগবে মা । আমি নিবো না ।
– নিবা ধরো । এইটা কাউকে দিবা না । আম্মুনি অনেক খুজে বাইশশত টাকা দিয়ে কিনে এনেছে আমার জন্য ।
– আল্লাহ!!
– হুম। এইটা আমি তোমাকে দিলাম । আর কাউকে দিবা না । গেলাম ।
কিছুটা এগুতেই দেখে তানভীর আসছে জগিং করতে করতে । ঘেমে নেয়ে অস্থির । হাপাতে হাপাতে সামনে এসে হাটুতে দু হাতে ভর করে হেলে মুখ উপুড় করে লাবিবার দিকে তাকায় ।
– স্যার..সকাল নয়টায় আপনি জগিং করেন😱
তানভীর দাড়িয়ে বলে – আরে নাহ। ঐ দিকে গিয়েছিলাম । কয়েকজন পরিচিত কে দেখলাম তারাও জগিং করছে । চা খেলাম টং এ বসে । গল্প করতে করতে দেরি হয়ে গেলো ।
– ওও।
– গরম কাপড় পরোনি কেন ? ঠান্ডা লাগছেতো ।
– আকবর কাকাকে দিয়ে দিয়েছি । উনি ঠান্ডায় কাপছিলো ।
তানভীর উকি দিয়ে দেখে সত্যিই তাই । জ্যেকেট খুলে লাবিবার হাতে দিয়ে বলে – এটা পড়ো। কট জেক্যাট জেন্টল লেডিস উভয়ের জন্য ই ।
– আমি পড়বোনা । বলেই লাবিবা হাটা ধরে জেক্যাট তানভীরের হাতে দিয়ে । তানভীর পেছন থেকে জোর করে জেক্যাট পড়িয়ে দেয় ।
– ওকে যাও এখন স্কুলে ।
লাবিবা এগুতে থাকে । তানভীর ও বাসার দিকে হাটা দেয় । কিছুটা যেতেই আবার ফিরে দৌড়ে লাবিবার কাছে যায় । লাবিবা দাড়িয়ে পড়ে ।
– দুষ্টু পুতুল শোন আমি একটা কাজে এক জায়গায় যাচ্ছি । তুমি কাল এসো প্লিজ । তোমার জন্য চকলেট আনবো আজ ।
– ওকে😊।
– চলো তোমায় এগিয়ে দেই ।
দুজনে হাটতে থাকে ।
-স্যার একটা কথা বলবো ?
– বলো ।
– একটা গোলাপ দিলে কি হয় …
– একটাই নিবে ?
– হুম ।
– গাছ কষ্ট পাবে । পারবোনা । সরি ।
– ইটস ওকে । জানি দিবেননা । কিপটুস।
– স্কুল এসে গেছে। যাও ।

To be continue _____

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২৫

🍁
দুপুর দুটোর দিকে লাবিবা স্কুল থেকে বাসায় আসে ।তিনটার দিকে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় । বাসায় ঢুকতেই দেখে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে । লাবিবাকে দেখে তানিয়া লাবিপু লাবিপু বলে দৌড়ে আসে । লাবিবাকে নিয়ে সোহানা আসতে বলে ওদের কাছে । লাবিবাকে পাশে বসিয়ে দেয় ।
– দেখো আমার মা টার চাদ মুখ খানা । কতো মায়াবী ।
ফিরোজ মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
– লাবিবা আম্মু কেমন আছো ?
লাবিবা- আলহামদুলিল্লাহ । আপনি ? শাশুমা …আমার চাদ মুখ হবে কেন ? চাদ তো হুয়াইট কালার । আর কতো উজ্জল । আমি তো তেমন না ।
সবাই হেসে ফেলে । মমতা বলে – তুমিতো উজ্জল শ্যামা । উজ্জল শ্যামা মেয়েরাই প্রকৃত সুন্দর । মাটির ঘ্রান রুপ পাওয়া যায় ।
সোহানা – তানভীর উপরে আছে । যাও দেখা করে আসো ।
লাবিবা উঠে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসে । দরজায় নক করে সাড়া না পেয়ে ভিতর দিক ঠেলে রুমের ভিতরে চলে আসে । পুরো রুমে খোজে দেখে তানভীর নেই । বাথরুম থেকে আওয়াজ আসছে । তারমানে স্যার গোছল করছে । রুমের একেকটা আসবাব পত্র ধরে ধরে দেখতে থাকে লাবিবা । অতি সুন্দর কারুকার্যপূর্ন আসবাব পত্র যাকে বলে সেই আসবাব পত্রে পুরো রুম সাজানো । লাক্সারিজ আসবাব পত্র।
হটাৎ চোখ পড়ে দেয়ালে একটা বড় গিটারের উপর । হাত দিয়ে ছুয়ে দিতে গিয়েও ছুয়না । যদি পড়ে গিয়ে ভেঙে যায় তখন আস্ত চিবিয়ে খাবে ডলফিনটা। দরজার শব্দে পেছন দিকে ফিরে । তানভীর সদ্য গোছল করে টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হচ্ছে‌ । পড়নে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর একটা হুয়াইট কালার টি শার্ট। সাথে ফ্রেশ একটা লুক । তানভীর লাবিবাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে টাওয়েলটা সোফায় ফেলে ডোর টা লক করে লাবিবার পাশে এসে দাড়িয়ে
জিজ্জাসা করে – কখন এসছো ?
– তিন মিনিট । স্যার একটা কথা বলবো ?
– হাজারটা বলো ।
– আপনি গান পারেন ?
– একটু একটু । কেন ?
– গিটার ……..(আঙুল দিয়ে দেখিয়ে) । আমাকে শেখাবেন স্যার ?
– শিখবে ?
– হু। গান ও শুনবো ।
– আচ্ছা । খাটে গিয়ে বসো ।
লাবিবা বসে। তানভীর মাঝারি বড় একটা বক্স দেয় লাবিবার হাতে । লাবিবা আনবক্স করতেই দেখে চকলেটর পৃথিবী । খুশিতে বসেই দেয় এক লাফ । তানভীর বসে লাবিবাকে টেনে কোলে বসিয়ে দেয় । দু হাতের উপর হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে
– দুষ্টু পুতুল ..গিফ্ট পছন্দ হয়েছে ?
– এত্তোগুলা 😋।
লাবিবা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চকলেট খেতে থাকে । তানভীর কোলে বসিয়েই লাবিবার চকলেট খাওয়া দেখতে থাকে । ঠোট দুটোও চকলেটের মতো হয়ে গেছে । পেটের দিক দিয়ে হাত দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয় লাবিবাকে । ঘাড় থেকে একপাশে চুলগুলো সরিয়ে কাধে নিজের থুতনি রাখে ।
— দুষ্টু পুতুল ..
লাবিবা তাভীরের দিকে আড় চোখে তাকায় । ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতে পারে না কাধে থুতনি রাখায় ।
– আমাকে মিস করো তুমি আমি যখন তুমার সাথে না থাকি ?
– এখন মিস করি না । কিন্তু যখন ঢাকায় গিয়েছিলেন কয়েকদিন আগে তখন মিস ইউ ভুরিভুরি । আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো বার বার । আমার কাছে ছবি থাকলে দেখে নিতাম । আপনি অনেক সুন্দর । সবাই বলে আমার মামাতো ভাই তাঈফ অনেক সুন্দর । কিন্তু আপনি ওর থেকে আরো সুন্দর ।
– তুমার কি তোমার মামাতো ভাঈকেও দেখতে ইচ্ছা করে দুষ্টু পুতুল ?
– হুম । আমিতো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকি ।
– কিহহ?? 😠সুন্দর হলেই তাকিয়ে থাকতে হবে নাকি ? ছেলেদের দিকে একদম তাকাবেনা । ভাইকে সব সময় ভাইয়ের মতোই মনে করবে । কারো দিকে তাকাবেনা । আমি তোমায় আমার অনেকগুলা পিক দিবো । তুমি শুধু আমাকেই দেখবা । আর কখনো তাকাবেনা ওর দিকে বলে দিলাম ।
– কিন্তু ওর দিকে না তাকলে ও তো কাদবে । আমাকে অনেক ভালুপাসে । আমিও ভালুপাসি ।
কোল থেকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে দেয় । লাবিবা স্তম্ভিতো হয়ে যায় । তানভীরের রাগে ভয় পেয়ে চোখে জল টলমল করতে থাকে ।
– ভালুপাসি মানে ? এইটুকুন মেয়ে তুই ভালোবাসার কি বুঝিস ? তোর তো দেখা যায় গোড়েই সমস্যা। আরেকবার কাউকে ভালোবাসার কথা বলবিতো থাপ্পিয়ে গাল ফাটিয়ে দিবো । বেদ্দপ মেয়ে । দেখি তোর তাঈফের কতো রুপ ..ছবি আছে না ? ফোন বের কর । কর বের !!
লাবিবা কেদে দিয়েছে । ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ছবি বের করে তানভীরের দিকে দিতেই ছো মেরে নেয় । ছবি দেখে তানভীর চুপ । লাবিবার দিকে তাকিয়ে আছে । লাবিবা অনবরতো কাদতেই আছে । হাত দিয়ে সামনের চুল গুলো পেছনে নিয়ে বললো
– এটা তাঈফ ?
– হামম।
– ওহহ। কিউট অনেক । কতো বছর চলছে ?
– তিন বছর সাত মাস চলছে ( কাদতে কাদতে)।
ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে লাবিবার কাছে আসে । লাবিবা দু পা পিছিয়ে যায় । আর পেছোতে না দিয়ে পাজাকোলে তুলে নিয়ে বিছানায় এসে বসে । লাবিবা শক। বুকের সাথে চেপে নিয়ে চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দেয় । নাকটা লাল হয়ে গেছে । ঠোট দুটো চকলেটের মতো। লোভ সামলাতে না পেরে চকলেটি ঠোটে আলতো ভাবে ওষ্ঠ ছোয়া দেয় ।
– কথায় কথায় একদম কাদবেনা । আমিকি মেরেছি তোমায় ? চকলেট দিলাম এতো আদর করে তাও মন ভরে না ?
– বকা দিল আবার কথা ..(গাল ফুলিয়ে)।
– আর বকা দিবো না । কেমন ? তাকাও আমার দিকে ।
গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে চোখে চোখ রাখে
– আমি কি সব সময় বকি তোমায় ? একটুও কি ভালোবাসি না ?
– ভালুপাসেন আমার আব্বুর মতোই । বকাও দেন ভালুওপাসেন ।
– হুম । আব্বুর কথা যেমন শুনবে তেমনি আমার কথাও শুনবে । তোমাকে অনেককিছু বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু বললাম না । তোমাকে বলে লাভ নেই । শুধু বলবো আব্বু জেঠ্যুর কথা শুনে চলবে সব সময় । দুষ্টুমি কম করবে । বুদ্ধি খাটিয়ে যেটা ভালো কাজ সেটা করবে আর যেটা খারাপ কাজ সেটা করবেনা । ভালো ভাবে পড়া শুনা করবে ।
– আর ?
– কেউ টিজ করলে সাথে সাথে উত্তর দিবে নয়তো ওখান থেকে চলে এসে আব্বুকে বলবে । বোকার মতো গা থেকে উড়না খুলে দিয়ে আসবেনা ।
– আর ?
– ছেলে অনেক গুন সুন্দর হলেও নজর দিবে না । কথায় কথায় কাদবেনা প্যাচ প্যাচ করে । বড়ো হচ্ছো তুমি ।
– আর ?
আপাদতো এটুকুই । বাসায় যাও । বক্স নিতে না পারলে বলো পৌছে দিয়ে আসি ।
– হাটতে পারবোনা। পা ব্যথা করে ।
– কোথায়?দেখি?
– আআআ পা ধরেন কেন ? বড় মানুষ আপনি ।
– হা হা চলো ।
__________________
বড় ছড়ানো ফিরোজা কালারের মধ্যে কালো মিক্স ঘাঘরা, ফিরোজা কালারের মধ্যে ব্লাক স্টোন বসানো টপ, ফিরোজা কালো মিক্স জরজেট দোপাট্টা পড়েছে লাবিবা । স্টেজে একে একে সবার পারফরমেন্স দেখানো হচ্ছে । মুক্তা লাবিবার সিরিয়াল শেষের দিকে দিয়েছে একদম । সেজে গুজে কর্নারে বসে বসে চাটুনি খাচ্ছে । আর দরজার পর্দা সরিয়ে পারফরমেন্স দেখছে । বিশেষ অতিথি হিসেবে ইসমাইল ও আমন্ত্রিতো। তানভীর গেইটের সামনে গাড়ি দাড় করিয়ে গাড়ির ভিতর থেকেই তাকিয়ে আছে স্টেজের দিকে । এখান থেকে বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে । বিকালের দিকে লাবিবার সিরিয়াল পড়েছে । নুপুর দৌড়ে এসে মুখ থেকে চাটুনি নিয়ে ফেলে দিয়ে লাবিবাকে বসা থেকে উঠে দাড় করালো ।
– এই গান টা শেষ হলেই তোর ডাক পড়বে । তারাতাড়ি রেডি হ । শোন রিয়ার্সেল তো করিস নি । কতো করে বললাম ..তোর নাকি রিয়ার্সেল করতে হবে না এমনিতেই পারিস । দেখি আরেকটু উচিয়ে নেয় ঘাঘরাটা নয়তো পায়ের সাথে লেগে যাবে । দেখি আর দুইটা পিন লাগিয়ে দেই ।
– এতো অস্থির হচ্ছিস কেন তুই ? মনে হচ্ছে আমি বিশ্বজয় করতে যাচ্ছি আর তুই আমার রন সাজিয়ে দিচ্ছিস।
তিথি একগ্লাস শরবত হাতে এনে বলে – এটা খা তো তারাতারি । অস্থির তো হবোই । উর্মি আপু ফিট খাইছিলো একটু আগে নাচতে গিয়ে । তুই তখন চেঞ্জ করছিলি ।
লাবিবা শরবত শেষ করে ভ্রু উচিয়ে বলে – উর্মি আপু নাচতে জানে !!!!কোন জনমে তো জানলাম না। যাই হোক আই এম ওকে ।
সবাই একসাথে – অল দ্যা বেস্ট।
লাবিবার ডাক পড়তেই স্টেজে উঠে । সবাই হৈ হৈ শুরু করে দেয় । লাবিবা পুরো থানার মধ্যে ডান্স টপার এটা সবাই ভালো করে জানে । যে অনুষ্টানে লাবিবা ডান্স করবে সেই অনুষ্টানে এলাকার মানুষ ভেঙে পড়ে । সামনে একসাথে বসা ইসমাইল ,মুক্তা, মেম্বারগন আর বাকি টিচার । ইসমাইলের দিকে তাকিয়ে লাবিবা না গুনা দাত বের করে একটা হাসি দিলো । পাগলী মেয়ের এমন হাসি দেখে অন্যদিকে ফিরে একটু হেসে নিলো । মুক্তা ইশারায় বুড়ো আঙুলে অল দ্যা বেস্ট জানালো । তানভীর গাড়ি থেকে নেমে এলো । চোখে চশমা মুখে মাস্ক পড়া ছিলো । ঐভাবেই দর্শকের সাথে ভিড়ে মিশে দাড়ায় । মিউজিক অন হওয়ার সাথে সাথে লাবিবার ডান্স শুরু ।
দাইয়া দাইয়া দাইয়া রে ~ ছাম্মা ছাম্মা~ কাজরারে কাজরারে~ওরে পিয়া ..~ আজা নাচলে ~ ছমাক ছমাক ছম বাজে পায়েল ~ বারসরে মেঘা মেঘা ~ দোলারে দোলারে ………..মিক্স গানের টানা আধা ঘন্টা ডান্স করে নামলো স্টেজ থেকে । চারিদিকে হৈ হৈ পড়ে গেছে । ইসমাইল এতোক্ষনে এসে গেছে লাবিবার কাছে । বোতল দিয়ে মাথায় পানি ডালছে নুপুর । ইসমাইল বকা দিচ্ছে এতোক্ষন নাচ করার জন্য আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। টাওয়েল দিয়ে মুছতেই লাবিবা লাল মুখটা নিয়ে ঘাড় উচিয়ে বলে
– আমি ফিট খাইছি তাই না ? আমার এদিকে কিছুই হলো না আর তোমরা এমন করছো যেন আমি ফিট খাইছি ।
ইসমাইল রেগে দেয় ধমক
– চুপ কর । আর একটা কথাও বলবিনা । মাথায় রক্ত উঠে গেছে বুঝা যাচ্ছে ।
লাবিবা হা হয়ে মনে মনে বক বক করতে থাকে । আমার তো কিছুই হয়নি । আরো একঘন্টা এভাবে নাচতে পারবো আমি । শুধু শুধু ভয় পায় এরা ।
তানভীর পাশে এসে দাড়িয়ে বলে
– কাকা লাবিবার মনে হয় মাথা ঘুরাচ্ছে । ওকে বাসায় দিয়ে আসি ।
ইসমাইল বলে
– হা বাবা । আমার যেতে দেড়ি আছে । লাবিবার হাত ধরে তানভীর গাড়ির কাছে নিয়ে আসে । গাড়িতে বসিয়ে দেয় । লাবিবাতো অবাক । গাড়ি স্টার্ট দিলে বলে
– স্যার ..আপনি কোথা থেকে এলেন ?
– এখানেই ছিলাম । তোমার পারফর্মেন্স দেখলাম । অনেক ভালো ডান্স করো তুমি । দেখে বুঝাই যায় না যে তুমি ডান্স পারো ।
– আমার কিন্তু কিছুই হয়নি ।
– তোমার তেজ দেখে বুঝা যাচ্ছে । গাউন ছাড়া ঘাঘরাতে তোমাকে দেখলাম । দারুন লাগছে ।
– হা । সুন্দর না ?? এটা ডান্স করার জন্য মামাকে দিয়ে গাঙ্গিনাপাড় বাটারফ্লাই থেকে কিনে এনেছি অনেক ঘুরিয়ে ছয় হাজার টাকা দিয়ে ।
– আচ্ছা..। নামো বাসায় এসে গেছি তোমার ।
লাবিবা নামতে গেলে তানভীর ডাক দেয় ।
লাবিবা আবার বসে পড়ে । দুজনের চোখ এক হয়ে যায় ।
– দুষ্টু পুতুল ..একটা হাগ দিবে আমায় ?
লাবিবা হা করে তাকিয়ে ।
– একটা হামি দিই ?
কপালে দেখিয়ে বলে এখানে দিন ।এখানে আমার আব্বু দেয় ।
একটানে লাবিবাকে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকে । লাবিবা অবাক হয়ে যায় তানভীরের হার্ট বিট শুনে । এতো ফাস্ট কারো হার্টবিট হয় এই প্রথম ফিল করছে লাবিবা । নিজের হাতে আকড়ে ধরে তানভীর কে । তানভীর কপালে নিজের ঠোট ছুইয়ে থাকে কিছুক্ষন । লাবিবার বেশ ভালো লাগছে এভাবে থাকতে । কপাল ছেড়ে কানের কাছে মখ এনে বলে
– এই কপালে যেন শুধু আমার আর তোমার আব্বুর আব্বুর ছোয়া লাগে । আর কারো না । আর এই পুরো বডিতে যেন একটা কাকপক্ষীর ছোয়াও না লাগে সব সময় মনে রাখবে । আর …ভুলোনা আমায় ।
লাবিবা মাথা নাড়ায় । গাড়ি থেকে নেমে যেতে নিলে আবার ডাকে। লাবিবা দাড়িয়ে পড়ে ।
– কিছুনা যাও ।

To be continue ____