একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব-২২+২৩

0
445

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২২+২৩

🍁
স্কুলের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে একটা একটা করে অনেকগুলো ফুল কুডিয়ে নিয়ে বসে বসে মালা গাথে। তানিয়াকে মাথায় হাতে মালা পড়িয়ে দেয় । আঙ্গুলে বড় বড় নখ বানিয়ে দেয় । তারপর তানিয়া লাবিবার মাথায় মালা পড়িয়ে দেয় । হাতে মালা পড়ে । তারপর আবার ফুল কুড়াতে থাকে নখ বানানোর জন্য আর গলার মালা বানানোর জন্য । তানিয়া হটাৎ ভাইয়া বলে চিৎকার করে । লাবিবা সামনে তাকিয়ে দেখে তানভীর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে এদিকেই তাকিয়ে আছে । উজ্জল হাসি মুখে ছেয়ে যায় ।
তানভীর দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুই পরীর কৃষ্ণচূড়ায় নিজেকে সাজানো দেখছিলো । তানিয়ার হলুদ জামায় লাল কৃষ্ণচুড়া অনেক সুন্দর মানিয়েছে । লাবিবার লাল গাউনে লাল কৃষ্ণচূড়ার ক্রাউন পড়ে লাল পরীর মতো লাগছে । প্রকৃতি তার সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক ভাবে মানুষকে এতো সুন্দর করে তুলতে পারে তা তানভীরের জানা ছিলো না । আজ যেন প্রথম এই সৌন্দর্যের খেলা দেখছে । লাল পরীর উজ্জল হাসিটা ভোরের প্রথম সূর্যের আলোর মতো লাগছে । ছোট বেলা যেমন খেলার ছলে হা করে আলো খেয়ে নিতো সেভাবে এই হাসিটুকু মন খেতে চাইছে । এগিয়ে আসতেই তানিয়া জড়িয়ে ধরে । তানিয়াকে গাড়ি থেকে চকলেট আনতে বললে তানিয়া চলে যায় গাড়িতে । তানভীর লাবিবার সামনে দাড়াতেই লাবিবা ইয়া বড় এক সালাম দেয় । তানভীর সালামের স্টাইল দেখে হেসে ফেলে । উত্তরে বলে
– ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লহি বরকাতুহু । কে গো আপনি ?
লাবিবা কোমড় বাকিয়ে বাকিয়ে বলে
– আই এম লাবিবা তানহা এ..লিজা। ডটার অফ ইসমাইল সাবিনা ।
তানভীর হেসে ফেলে । লাবিবাও হাসে । তানিয়া এসে লাবিবার হাতে চকলেট দেয় । তানভীর এগিয়ে গিয়ে কৃষ্ণচূড়া ক্রাউনটা ঠিক করে পড়ায় । তানিয়াকে পাশে দাড়াতে বলে । দুজনকে অনেকগুলো ছবি তুলে দেয় । তানিয়ার হাতে ফোন দিয়ে লাবিবার পাশে এসে দাড়ায় । তানিয়া পটাপট কয়েকটা ছবি তুলে দেয় তানভীর🖤লাবিবা কে । বাই বলে তানিয়াকে নিয়ে চলে আসে ।
বাসায় এসে দেখে মুক্তা এসেছে । সাথে তার বাবা মাও । ওদের সাথে কথা বলতে বলতে জেমিকে নিয়ে বিনার কাছে আসে । বিনা আর মুক্তা বসে বসে গল্প করছিল । সখিনা তাকের উপর কি কি জানি রাখতেছে। বিছানায় বাবুর জিনিসপত্র, কাপড় দেখে বুঝতে পারে বাবু হোওয়ার আগেই সব রেড়ি বাবুর জন্য । এদিক ওদিক শুধু চোখ ঘুরাচ্ছে । বিনার পাশে বসে পেটে চুমু দেয় । ফিসফিস করে বলে – খালামনি .. তাড়াতাড়ি করে চলে আসো । আমার সাথে খেলবে । লাভ ইউ এত্তোগুলা । মিস ইউ ভুরি ভুরি । মুক্তা লাবিবার কান্ড দেখে হাসে ।বিনাকে জিজ্জাসা করে
– দুষ্টুটা এরোকম করে নাকি সবসময় ?
– হুম । আরো অনেক কিছু করে । দেখলে মাথা ঘুরবে তোমার ।
বিনাকে খাওয়াতে মুক্তা নিয়ে ডাইনিংএ চলে যায় । লাবিবা তাকে কি আছে দেখার চেষ্টা করে । কাপড় দিয়ে ঢাকা তাই দেখতে পাচ্ছে না । টুল এনে উপরে দাড়িয়ে কাপড় সরিয়েই দেয় এক লাফ টুলের উপরেই । -😱 5 can NIDO😋 5 can Lactrozen😋
একটা ক্যান খুলে ফেলে । ভেতরের প্যাকেট দাত দিয়ে ছিড়ে জেমি দেখে যে লাবিবা বাবুর জন‌্য আনা নিডো চামচ দিয়ে নিয়ে চেটে চেটে খাচ্ছে ।
এক চিৎকার দেয় – আম্মু……..খালামনি ভাইয়ার দুধ সব খেয়ে নিলো 📢
হটাৎ ঝটকায় হাত থেকে প্যাকেটটা ফ্লোরে পড়ে যায়। ভয়ে হাত দিয়ে বুক চেপে দেয় এক দৌড় । সাবিনা বিনা এসে দেখে যে ফ্লোরে জেমি বসে বসে কাদছে আর তার সারাসরীর সহ ফ্লোর ছড়িয়ে গুড়া দুধ পড়ে আছে । সাবিনা জেমিকে নিয়ে গিয়ে গোছল করায় ।

দেখতে দেখতে তানভীরের লন্ডনে যাওয়ার দিন চলে এসে গেছে। কয়েকদিন পর ই চলে যাবে ছেলেটা । ফিরোজ সোহানার এর জন্য মন খারাপ । তানভীর শুধু দেখে যাচ্ছে । তার ও ভীষন মন খারাপ করে । তানিয়া কে সোফায় কোলে বসিয়ে ইংরেজী পেসেজ পড়াচ্ছিলো তানভীর । সামনে ফিরোজ আর মিরাজ এসে বসলো । তানভীর একবার তাকিয়েই আবার পড়াতে থাকলো । মমতা হাতে এক প্লেট চিকেন কোরমা উইথ রাইস এনে বসে লোকমা পাকিয়ে মুখের সামনে তুলে ধরে
– হা কর তো বাবা ।
– ছোট মাম্মা আমি একটু আগে শর্মা খেলাম ।
– অনেকক্ষন হয়ে গেছে বাবা । হা কর ।
– কয়েকদিন থেকেই তোমরা এমন করছো আমার সাথে । এতো খাওয়া যায় নাকি ?
আচলে চোখ মুছে বলে
– আরতো মাত্র দু তিন দিন ই খাওয়াবো । চলেই তো যাবি ।
– আমি কি আর আসবো না ফিরে ?
– তুই আসতে আসতে যদি না থাকি আর আমি ।
– ছোট মাম্মা ভালো লাগে না কিন্তু এসব ।
মিরাজ – আহহহ মমতা চুপ করো তো । ভাবির মতো ফেস ফেস করতেছো । মেয়ে মানুষ মানেই গলে যাওয়া ।
তানভীর – তোমরাও তো কম না । মুখের উপর মেঘ নামিয়ে অন্ধকার করে আছো । আমি কি বুঝতে পারি না ? তানিয়াতো থাকবেই । এতো সফট হলে চলে ?
ফিরোজ- বাচ্চাই মাত্র দুটো । একটা তলে গেলে সেই শূন্যতা কি ভরবে?
সোহানা আসতে আসতে বলে – মমতা খাওয়ানো শেষ ? এই যে তোর ব্লাক কফি ।
তানভীরের কান্না চলে আসে । বেলা বাজে এগারটা । এর মধ্য চারবার খেয়ে নিয়েছে তাও সব রিচফুড । এতো কিভাবে আটবে পেটে ?
– মম আমি এখন খাবো না । তো কি করতে বলো তোমরা ? থেকে যেতে বলো আমায় ?
সোহানা – একটা বউ রেখে গেলেই তো পারিস ।
-কিহহ? কিভাবে সম্ভব মম ?
– সবি সম্ভব । তুই চাইলে এখনি বিয়ে করাতে পারি । অনেক ভালো ভালো মেয়ের খোজ রেখেছি । কি বলিস ?
– মম …কি আজগুবি বলো এসব ? আচ্ছা দাও একটু একটু খাচ্ছি তাও পাগলের মতো কথা বলো না । দুই লুকমা মুখে নিয়ে এক চুমুক কফি গিলে চলে যেতে থাকে । মিরাজ পেছন থেকে বলে – কথাটা আজগুবি বলে উড়িয়ে দিলি । ভাবী কিন্তু ঠিক ই বলেছে ।
থেমে গিয়ে পেছন ফিরে সোহানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। সোহানা উৎসুক চোখে তাকিয়ে থাকে ।
– ভালো ভালো মেয়ের খোজ না রেখে ভালো মেয়েটার খোজ রাখার দায়িত্বটা তোমায় দিয়ে গেলাম মম। শাশুমা তো অলরেডি হয়েই আছো ।
সোহানার মুখটা হা হয়ে যায়। এক মুহূর্তে চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলে । সবার চোখজুড়া সোহানার দিকেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায় ।

তারমানে এটা সত্যি ?? সত্যি সত্যিই আমি শাশুমা হয়ে গেছি😱
ভাবী কিছুইতো বুঝতেছিনা । কি হয়েছে সরাসরি বলোনা ।
আমাদের ছেলের বউ ইসমাইল চেয়্যারম্যানের মেয়ে লাবিবা হতে যাচ্ছে ।
কি বলছো এসব ? বাচ্চা মেয়ে । তুমি ডিফারেন্স টা দেখেছো ? এতো এতো মেয়ে রেখে শেষ মেষ এই বাচ্চাটাকেই চোখে পড়লো তানভীরের ? না না ভাবী এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না । তানভীরের সাথে কথা বলতে হবে।
মমতা আগ বাড়িয়ে বলে – মেয়েটা ভালোই লাগে আমার কাছে । খুব সুন্দরী না ..আবার অসুন্দরীও না । অনেক মায়া কাজ করে । গায়ের রং টা একটু ভালোই ঘোলাটে ।
সোহানা – এদের বয়সের ফাড়াক নয় দশ বছরের । ইসমাইল ব্যপারটা জানলে কি ভাবে নিবে ?
মিরাজ – তোমার আর ভাইয়ের বয়স ও তো দশ বছরের ই ফাড়াক ভাবী । বলেই ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছে । সাথে সবাই তাকিয়ে । ফিরোজ যদি এ কথা শুনে রেগে যায় তাহলে তো অবস্থা খারাপ । এখনো চুপ চাপ আছে দেখে আরো ভয় লাগছে । সোহানা বলে – শুনছ ?? কিছু বলো । ছেলে যে পছন্দ করে নিয়েছে ।
মিরাজ – দেখো ভাইয়া রাগ করো না । ছেলের পছন্দ।বললেই তো বিয়ে হচ্ছে না । আল্লাহ জানে সব।
ফিরোজ সামনে রাখা কফিটা হাতে নিয়ে শেষ করে । রাজিবের বিয়ের দিনের সমস্ত ঘটনা তার জানা । তানভীর রাজীবের সাথে শেয়ার করেছে । আর রাজিবের থেকে ফিরোজ জানতে পেরেছে । বরাবর এটাই হয়ে আসছিলো । রাজীবের থেকে তানভীরের সব খবর নিয়ে ছেলেকে সঠিক পথে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছে যা তানভীরের অজানা । ছেলে মেয়ে বড় হলে যা বাবা মার সাথে না বলতে পারে তা সহ সবটুকুই বেস্ট ফ্রেন্ডকে বলে। এতোদিন ঠিক ই খেয়াল রেখেছে দুজনের উপর । শেষ বার সেদিন তানভীরের ক্ষত পরিস্কার করার সময় দেখে তৃপ্ত হয়েছেন। লাবিবাই যে তানভীরের জন্য সেটা ভালো ভাবে বুঝে গেছেন । দাড়িয়ে বলে – তোমাদের কি কোনো অসুবিধা আছে লাবিবাকে তোমাদের একজন ভাবতে ?
এমন প্রশ্নে সবাই অবাক । মাথা নাড়িয়ে না জানায় । সোহানা বলে – তুমি রাজি?
– তানিয়া তানভীরকে যে চোখে দেখো লাবিবাকেও সেভাবে দেখা শুরু করো । শাশুমার দায়িত্বটা বেশিই পড়লো। রাজি কথা বললে ঠিক হবে না । সত্যি বলতে আমি যা জানি তোমরা তা জানো না ।
চশমা চোখে দিয়ে ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে বাসা থেকে ।

লাবিবা আর নুপুর এসেছে পড়ার জন্য । তানভীর পড়াচ্ছে আর লাবিবার দিকে তাকাচ্ছে । নুপুরকে বলে – কবে এসেছো নুপুর ?
– গতকাল স্যার । বই নিয়েই গিয়েছিলাম । এই লাবুর জন্য আসতে হলো ।
– কেনো ?
– পরশু স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান । তাই । লাবু নাচ দিবে ।
তানভীর ভ্রু কুচকে বলে – স্টেজে দেখার কি আছে ? ও তো সারাদিন ই নেচে নেচে বেড়ায় ।
এদিকে লাবিবা গাল ফুলিয়ে বলে – দোষটাতো আমাকেই দিলি । তুই যে ফোন দিয়ে কাদতি আমি নাচব আর তুই দেখতে পারবিনা সে জন্য । 😠
– রাগিস কেনো ? গোয়াল কি বলে তার দই টক ?
তানভীর তানিয়া হেসে ফেলে কথা শুনে ।
পড়ানো শেষে নুপুর বেড়িয়ে যায় । লাবিবা তানভীরের সাথে লেগে লেগে মাপ দিচ্ছে নিজের । বুক পর্যন্ত পৌছায় । তানভীর ভ্রু কুচকে পকেটে দু হাত রেখে বলে – কি ??
– ও স্যার আপনি এতো বড় কেন ? ডলফিনের মতো । আমার বড়ো মানুষ দেখলে ভয় লাগে ।
– আমাকে ভয় লাগে ? আমি কি তোমায় কামড় দেই ?
– না । আপনি কামড় দিলে আমি সাথে সাথেই শহীদ খামু ।
– ট্রাই করা যাক ।
হাত টা ধরে কবজির দিকে কামড় বসায় । লাবিবা এক চিক্কুরে হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিয়ে বাইরে চলে আসে । চোখে পানি ছল ছল করছে । হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছুই হয়নি । ব্যথাও তো করছে না । পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে জানালার কাচে হাত রেখে দাড়িয়ে হাসছে তানভীর । জোরে জোরে বলে
– দুষ্টু পুতুল ভিতুর ডিম ।
– আপনি খরগোসের ডিম ।
– তবেরে ….
– নাহহহ…… এক দৌড়ে গেটের বাইরে চলে আসে ।

To be continue ______

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_২৩

🍁
হলে বসে সবার রিয়ার্সেল দেখতে দেখতে বোর হয়ে যাচ্ছে লাবিবা । এখানে আর বসেথাকা চলবে না । নয়তো আমাকে রিয়ার্সেল করতে বলবে । আমিতো এখানে করবোনা । অনুষ্টানের আগে আমার নাচ আমি কাউকে দেখাবোনা তাহলে আমার নাচ পুরাতন হয়ে যাবে । আমার থেকে বেশি ভালো নাচার চেষ্টাকরবে । তাতো হতে দেওয়া যায় না কিছুতেই । লাবিবা ইজ দ্যা টপ ডান্সার☺। নুপুরটাও আসেনি । ওর নাকি বোরিং লাগে রিয়ার্সেল দেখতে । আর ভালো করেই জানে আমি রিয়ার্সেল করবো না ।
পা টিপে টিপে গ্যালারি থেকে নেমে পড়লাম । দরজায় কেউ নেই দেখেই দু হাতে গাউন উচিয়ে দৌড় । এক দৌড়ে রাস্তায় এসে থামে । মামার থেকে দশ টাকার ঝালমুড়ি কিনে হাটতে থাকে খেতে খেতে । কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না । উল্টা রাস্তায় হাটছে যে এটাও খেয়াল নেই । স্কুল থেকে আধা কি.মি. দূরে তানভীর গাড়ি থেকে লাবিবাকে দেখতে পায় ।
এখানে কেন দুষ্টু পুতুল ? এদিকে কোথায় যাচ্ছে ? আর এভাবে আনমনে হাটলে তো এক্সিডেন্ট করতে সময় লাগবেনা এক মিনিট ও ।
গাড়ি থেকে নেমে পিছু পিছু হাটতে থাকে পিছনে সাথে যে কেউ আছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই । তানভীর ও নিশব্দে পাশে হেটে যাচ্ছে । হালকা বাতাসে ইউনিফর্মের কামিজ উডু উডু করছে । আজ দুষ্টু পুতুল দুই বেনী করেছে। বুকের উপর বেনী দুটিও দুলছে । ব্যাগটা পেছনে হাটার তালে তালে দুলছে । তানভীরের বেশ ভালোই লাগছে । ঝালমুড়ি শেষ হোওয়ার পর ঠোঙা ফেলে ব্যাগ সামনে নিয়ে আসে । চেইন খুলে চাটনি বের করে মুখে দিয়ে চাটতে থাকে ।
কিছুক্ষন অতিবাহিত হোওয়ার পরও যখন দেখে দুষ্টু পুতুলের কোন খবর নেই তখন পেছন থেকে একটা বেনী টেনে ধরে ।
এরকম আনমনা হয়ে কেউ হাটে ? আমাকে অনুভব ই করলেনা তুমি । ছেলে ধরা এসে নিয়ে গেলেও তো বলতে পারবে না ।
আমি জানতাম আপনি আমার সাথে আছেন। আর ছেলে ধরা আপনাকে ধরে নিবে । আপনি ছেলে । আমি মেয়ে । আমাকে ধরবেনা ।
আমি পাশে আছি জেনেও তুমি তাকালেনা কেনো একবার ? কিছুই জানোনা ভাব নিয়ে হাটছো।
যদি ঝালমুড়ি চান ___
কিহহ???
হুম।
ওকে চলো ।
কোথায় ?
হাত ধরে টেনে উল্টোদিকে যেদিক দিয়ে এসেছিলো সেদিকে যেতে থাকে। হাত থেকে ভালুপাসার প্রান আচার পড়ে গেলে আচার আচার বলে চেচাতে থাকে । হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে । দু তিন বার বসেও পড়েছে রাস্তায় । তানভীর গাড়িতে লাবিবাকে বসিয়ে নিজেও উঠে বসে । গাড়ি স্টার্ট দেয়। পুরো রাস্তা লাবিবা চুপ চাপ তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
ও স্যার স্যার ….ও স্যার ।
বলো ।
আপনি কি আমায় নাই দেশে রেখে আসবেন ঝাল মুড়ি দেইনি বলে ?
হূম । এবার বলো কোন দেশে রেখে আসবো তোমায় ?
নায়ায়া….আমি যাবো না । আমি নামবো । আমাকে নামান । ও আব্বু..ও আম্মুনি..আমাক বাচাও । বাচাও বাচাও বাচাও😭😭😭
কান ফেটে যাচ্ছে চেচানোতে । গাড়ি সাইড করে স্টপ করতেই লাবিবা গেটে হাত দেয় ।
চুপ করে বসো বলছি 😠😠
ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায় । মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে । তাহলে কি এখানেই ফেলে রেখে যাবে ?আমিতো কিছুই চিনি না । আমার কি হপ্পে?
উফফ.. এতো চেচাও কেনো তুমি ? কানের পোকা সব মরে গেলো আমার ।
ছি ছি কানে পোকা ধরেছে । বিষ দেন না কেন কিপ্টা মানুষ ? ফুরাটন বিষ দিবেন । 220 টাকা দাম । আচ্ছা আমিই কিনে এনে দিবোনি আব্বুকে বলে ।
চুপ থাক । আজাইরা কথা মুখ থেকে শুধু বের হয় তাইনা ?
লাবিবা চুপ। তানভীরের দিকে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । তানভীর এক টানে লাবিবাকে তুলে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় । ভেজা গালের পানি হাত দিয়ে মুছে দেয় । চোখ দুটো টিস্যু দিয়ে মুছে দেয় । ফুলানো গাল দেখে মিটমিটি হাসে ।
টমেটো দেখি পেকে রসে টইটুম্বুর । কামড়ে খেতে ইচ্ছে করছে । বেচবে নাকি ?
গালে আঙুল দিয়ে ছুয়ে দিতেই নরমাল হয়ে যায়।
আপনি ভালো না । আমাকে বকেন ।
আমি কি শুধু বকি ? আদর করি না ? ভালুপাসি না ?
নাহ।
নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রক্তিম গালে আবেশে ঠোট ছোয়ায়। সে ভাবেই কিছুক্ষন ছুইয়ে রাখে । লাবিবা হালকা কেপে উঠে । তানভীরের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে । হাত দিয়ে ধরে চিমটি দিতে থাকে ঘড়িতে । গাল থেকে মুখ সরিয়ে কানে নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলে
– যে বকা দেয় সেই ভালুপাসে। যে কষ্ট দেয় সেই আদর করে । বুঝলে ?
আমি নামবো ।
লাবিবা কোল থেকে সরার চেষ্টা করতেই আটকে দেয়
-উঠবেনা । বসে থাকো ।
হাত দুটো নিয়ে নিজের গলায় জড়িয়ে নেয় ।
গাড়ি স্টাট দেয় ।
স্যার ..আমি ওখানে বসি। আমার কেমন যেনো লাগছে ।
হে‌সে দেয় তানভীর ।
– আচ্ছা যাও বসো ।

গাড়ি থামিয়ে লাবিবাকে নিয়ে হাটা দেয় । লাবিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে থাকে ‌ ।
– স্যার… আমরা তো সদরে চলে এলাম । এখানে কেনো এসেছি ? কি করবো এখানে ?
তানভীর উত্তর না দিয়ে লাবিবার হাত ধরে হাটা দেয় । নদীর পাড়ে এসে বসায় একটা চেয়ার টেনে বসায় ।পাশেই ফুচকা, চটপটি, ঝালমুরি মামা দোকান বসিয়েছে ।
মামা ঝালমুরি বানান দুশ টাকার ।
লাবিবার চোখ উপরে ।উঠে এসে বলে – এতো টাকার ঝালমুড়ি কে খাবে ?
– তুমি আর আমি খাবো ।
– খেতে পারবো তো ?
– হুম । আসো বসো ।
দুজনেই বসে ।
– স্যার ঝালমুড়ি তো আমরা স্কুলেই খেতে পারতাম । এখানে কেনো এলাম ?
– এখানের ঝালমুড়ি একটু আলাদা । অনেক টেস্টি । রেসিপিটা ও ভালো । আমি এখান থেকে খাই । তোমাকেও টেস্ট করাবো আজ ।
– স্পেশালিটি কি ?
– এখানে বুট ডাল ভর্তা করে দেয় । চানাচুর বাদাম বেশি দেয় । মশলায় পাঙ্গাস মাছের তেল আর ব্রয়লার মুরগীর মাংস এড করে । অনেক টেস্টি হয় ।
– 😱😱
বড় প্লেটের উপর পেপার দিয়ে তার উপর ঝালমুড়ি দিয়েছে। টেবিলে এনে রাখতেই লাবিবা স্মেল নেয় । দারুন একটা স্মেল । তানভীর মুচকি হেসে খেতে বলে । লাবিবার হাতে স্যানিচাইজ করে দেয় । লাবিবা প্রথমে মুখে দিয়েই ইয়াম্মি😋 বলে উঠে । বেশি টুকূ খেয়ে ফেলে । তাভীরের দিকে তাকাতেই দেখে তানভীর দাত গুলো বের করে আছে । বোতলের মুখ খুলে পানি খেয়ে বলে – স্যার কি হয়েছে ? আমি কি আপনার টা সহ খেয়ে ফেলেছি ?
তানভীর ফোন বের করে ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে লাবিবার সামনে ধরে । লাবিবা নিজের অবস্থা দেখেই চিল্লিয়ে উঠে ।
আআআআআআ এমন কি করে হলো ? এখন আমাকে কেমন দেখতে লাগছে । আমি বাড়ি যাবো কি করে? আম্মুনি আমাকে বাচিয়ে রাখবেনা এই অবস্বা দেখে । জোর করেই শহীদ খাওয়াবে । তিন দিন আগে আমাকে নিউ ইউনিফ্রম বানিয়ে দিয়েছে । এখনি নষ্ট করে ফেললাম । এখন আমার ইউনিফ্রেম কি হপ্পে?😭😭।
কিছুই হপ্পে না চলো । গাড়িতে উঠে বসে । শপিংমলের সামনে এসে থামে । লাবিবাকে নিয়ে একটা পার্লারে ডুকিয়ে দেয় । লাবিবা হাত মুখ ধয়ে এসে দেখে তানভীর একটা প্যাকেট হাতে দাড়িয়ে আছে । প্যাকেট টা লাবিবাকে দিয়ে বলে চেঞ্জ করে এসো । লাবিবা চেঞ্জ করে আসে । সুন্দর একটা সবুজ ফ্রক । ভীষন মানিয়েছে লাবিবাকে । পার্লারের একটা মেয়েকে ডেকে বলে
– এক্সকিউজ মি । ওর চুলটা বেধে দিন ।
মেয়েটা লাবিবাকে বসিয়ে দেয় । বেনী দুটো খুলে দেয় । সুন্দর করে আচড়ে বড় করে একটা খোপা করে দেয় ।তানভীরের আনা নকল দুটো সবুজ গোলাপ খোপায় সেট করে দেয় । সুন্দর লাগছে দেখে লাবিবা আয়নার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে ।
মেয়েটি তানভীরের দিক ঘুরে বলে – স্যার ম্যামকে কি একটু সাজিয়ে দিবো ।
– না থাক । লাগবেনা । জাস্ট একটু লিপিস্টিক লাগিয়ে দিন । নুড টা দিবেন ।
লাবিবাকে লিপিস্টিক লাগিয়ে আরেকবার খোপাটা ঠিক ঠাক করে দেয় । এতেই যেন অনেক সেজেছে মনে হচ্ছে । গোলাপের ন্যায় চেহারা ফুটে উঠেছে ।

পার্লারের উপরের ফ্লোরেই একটা লেডিস টেইলার্স । সেখানে লাবিবাকে নিয়ে যায় । ট্রেইলার তানভীরকে দেখেই এগিয়ে আসে ।
– ওয়েলকাম ওয়েলকাম মি. তানভীর খান । কেমন আছেন ছোট ভাই ? আমার ওয়াল্ডে হটাৎ আপনার পায়ের ধুলা পেলাম ।
– ডোন্ট কিডিং আপু । এলাম ..প্রয়োজন পড়ে গেলো আর তোমাকেও মনে পড়ে গেলো ।
– মিথ্যা বলবিনা একদম । ওমা..😱😱এ কে গো তোমার সাথে ?
তানভীরের পেছনে লাবিবাকে দেখে এগিয়ে যায় । লাবিবাকে নিয়ে সামনে এসে বলে মাশাআল্লাহ কি সুন্দর মেয়ে । তানভীর ..কি হয় তোমার ?
তানভীর মিটি মিটি হাসে। – গেইস করো ।
দুটানায় পরে যায় । লাবিবাকে তানভীরের বোন ও বলতে পারছে না । গার্লফ্রেন্ড ও বলতে পারছে না ।হবে হয়তো কোন আত্মীয় ভেবে বলে
– তোমার আত্মীয় ? ?
– তানভীর হো হো করে হেসে ফেলে । কারন সেও জানে কোনটাতেই মিলাতে পারেনি আপু ।
লাবিবা এক মনে তাকিয়ে আছে । তানভীর খেয়াল করে বলে
– কিছু বলবে ?
লাবিবা মাথা নাড়ায় ।
– বলো ।
– আপনি অনেক সুন্দর করে হাসেন ।
😱😱😱ওমা….তানভীর…. সত্যিই?
তানভীর মাথা নাড়ায় । লাবিবা কিছুই বুঝে না । লাবিবকাকে হাত ধরে নিয়ে বসায় । তানভীরকেও বসতে দেয় । লাবিবার সামনে বসে গল্প জুড়ে দেয় ।
আমি কে জানো ? আমি হচ্ছি তানভীরের আপু । আমার বাবা ফিরোজ আংকেল এর ড্রাইভার ছিলো । সেই সুবাদে ওদের বাসায় যাওয়া আসা হতো । আমাকে তানভীর সব সময় আপু আপু বলে ডাকতো । আমিও ভাই ভাই বলতাম । পাচ বছর আগে যখন আমার বাবা মারা গেলেন তখন তো আর আমি ড্রাইভিং করতে পারবোনা । কি করে চলবো বুঝতেছিলাম না । তখন আমার এই ভাই আমাকে সাহায্য করে । আজ আমি এতোবড় শপিং মলে একটা জায়গা করে নিয়েছি । এই ভাই না থাকলে এই জায়গায় থাকতে পারতাম না ।
লাবিবা – আমি এসব জেনে কি করবো ?
তানভীর কেশে উঠে ।
আপু আসলে ওর স্কুলের ইউনিফর্ম আমি নষ্ট করে দিয়েছি । এখন একটা ইউনিফর্ম বানিয়ে দাও । আমি কাল এসে নিয়ে যাবো । মাপ নাও তারাতাড়ি ফিরতে হবে ।
ফেরার সময় গাড়িতে লাবিবা অনেক চিন্তিত হয়ে আছে দেখে তানভীর জিজ্জাসা করে
– কি হয়েছে আমার দুষ্টু পুতুলটার ?
– স্যার …আম্মুনিকে কি বলবো ? আম্মুনি তো জিজ্জাসা করবে নতুন ড্রেস কোথায় পেলে আর ইউনিফর্ম কোথায় ?
– বলবে ইউনিফর্ম আমাদের বাসায় রেখে আসছো আর এটা মম তোমাকে দিয়েছে । পরে ভালো লাগছে তাই আর খুলোনি ।
– আচ্ছা ।

To be continue _____