একটি সাঁঝরঙা গল্প পর্ব-২২+২৩

0
55

#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_২২

তোয়া যখন আবিরের বিয়ের কথা আবিরকে জানিয়েছে তখন থেকে আবিরের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। প্রিয় মানুষ কি-না এত আনন্দের সাথে অন্যকারো সাথে বিয়ের কথা জানাচ্ছে! এ-ও সম্ভব!

স্থির হয়ে দাঁড়ালো আবির। তোয়া পাশ থেকে প্রস্থান করল। পাশ ফিরে তোয়াকে দেখতে না পেয়ে এবার আরও অসহায় লাগছে নিজেকে।

বিয়ের কথা উঠল। সামনের দিকের চেয়ারে বসে থাকা মধ্যবয়সী লোক। গাত্ররঙ শ্যামবর্ণ। লম্বাচওড়া দেহ। তিনি পানের পিক ফেলে জাভেদ সাহেবের দিকে তাকালেন। মুচকি হেসে বললেন,

“ভাই, মসজিদ থেকে আসার সময় যে ব্যাপারে কথা বলছিলাম সেটার ব্যাপারে কথা এগুতে পারলে ভালো লাগতো। মাশাআল্লাহ কী সুন্দর আপনার ছেলে! আমার খুব মনে ধরেছে।”

কথাগুলো সূচের মতো বিঁধলো আবিরের বুকে। চোখ বড় বড় করে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে সে। একভাবে দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না। এদিক ওদিক তাকিয়ে এক পাশে মাকে দেখতে পেল সে। দ্রুত সেদিকে পা বাড়ালো। রাবেয়া বেগম এক পাশে ইয়াদের মা’র সাথে বসে আছেন।

আবির রাবেয়া বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তাদের থেকে কিছুটা দূরেই তোয়া তার মায়ের সাথে বসে আছে। তাকে দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মায়ের কাধে হাত রাখতেই মা পিছনে ফিরে তাকালো।

“কী হচ্ছে এসব, মা?”

রাবেয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন,“কী হচ্ছে?”
“তোয়া বলল এখানে নাকি আমার বিয়ের কথা হচ্ছে!”
“বড় হয়েছিস, বিয়ের কথা হতে পারে না?”
“মা, তুমি তো জানো।”

রাবেয়া বেগম উঠে দাঁড়ালেন। ননদকে মৃদু হেসে বললেন,“আমি একটু আসছি।”

ছেলেকে হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে এলেন। এদিক ওদিক দেখে শুধালেন,

“এবার বল।”
“আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করব না।”
“কাকে বিয়ে করবি?”

“তোয়াকে।” বলেই অন্যদিকে তাকালো আবির।

রাবেয়া বেগম ফোস করে শ্বাস ছাড়লেন। ছেলের মুখপানে চেয়ে বললেন,“বিয়ে করবি ওকে জানিয়েছিস? আর বিয়ের পর দুজন কী করবি ঝগড়া? প্রতিদিন তিনবেলা ভাত খাওয়ার মতো ঝগড়া করবি আর আমি কি মিলমিশের দায়িত্ব নেব? এসব আমি পারব না। যার সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি, আমার পছন্দ হয়েছে।”

আবির রুষ্ট হলো। চোখে মুখে বিষ্ময় ফুঁটিয়ে বলল,“তুমি এমন কথা কীভাবে বলতে পারলে?”

“তুই তোয়াকে পছন্দ করিস সেটা কাকে জানিয়েছিস? তোয়াকে নাকি তোয়ার পরিবারকে? এতই যদি পছন্দ করিস তুই তোয়াকে তাহলে এই যে বিয়ের কথা হচ্ছে এটা তুই নিজেই থামিয়ে দে।”

আবির কিছুক্ষণ মৌন রইল তারপর মায়ের দিকে তাকে তাকিয়ে চাপা শ্বাস ফেলে বলল,

“আমি কীভাবে বিয়ের কথা থামিয়ে দেব?”
“তুই তোর বাবাকে বল, তুই তোয়াকে বিয়ে করতে চাস। আমার বাবা কোনকিছুতেই আপত্তি নেই। তুই যাকে নিয়ে, যার সাথে ভালো থাকবি আমি তোকে তার সাথেই বিয়ে দেব কিন্তু তোর সেটা মুখ ফুটে বলতে হবে।”
_____

ফালাক ঘুমুচ্ছে। ঘুম গাঢ় হয়নি এখনো। দরজাটা খুলে কেউ ঘরে প্রবেশ করল সেটা সে স্পষ্ট বুঝতে পারল। মুখের ওপর কারো দেহাংশের ছায়া পড়ল। আস্তে আস্তে চোখ খুলল ফালাক। দেখল সামনে নিশো দাঁড়িয়ে। ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করল সে। নিশো চকিতে বলে উঠল,

“আমি ধরব?”

ফালাক হাত বাড়িয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,“উহু, আমি পারব।”

উঠে বসলো ফালাক। সামনে, পাশে আর কাউকে না দেখে বলল,“আপনি একা এসেছেন?”
“তোয়া বলল, তোমার মাথাব্যথা করছে তাই এলাম।”
“মা কোথায়?”
“বাহিরে বসে আছে। তোমার শরীর এখন কেমন?”
“মাথা এখন একটু হালকা লাগছে। খুব মাথাব্যথা করছিল তখন।”
“ওষুধ খেয়েছ?”
“না, আমি মাথাব্যথার ওষুধটা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলি। এখন ঠিক আছি। সবাই কি বাহিরে?”
“হ্যাঁ, সবাই বাহিরে।”
“তাহলে চলুন আমরাও যাই।”
“যেতে পারবে? না পারলে তুমি শুয়ে বিশ্রাম নাও আমি যাই।”
“না, না আমি যেতে পারব। সবাই বাহিরে আছে আমার একা একা এখানে ভালো লাগবে না। ”
“ঠিক আছে চলো।”
“আপনি যান, আমি আসছি।”

নিশো আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেল। সে হয়তো বুঝল ফালাক আনকম্ফোর্ট ফিল করছে। আগে কতগুলো দিন তাকে পড়িয়েছে সে। কই আগে তো এমন হয়নি! দুজনের কথা দুজনের জানাজানির পর থেকে দূরত্ব বেড়েছে। যদিও দুজনই চেষ্টা করে দূরত্ব বজায় রাখতে কিন্তু ফালাকের চেষ্টাটা যেন একটু বেশিই। নিশোর এতে খারাপ লাগে না। একটাবারের জন্য মনেও হয় না যে ফালাক তাকে অবহেলা করছে। সবকিছুর একটা সঠিক সময় আছে। নিজেদের কাছে খোলা বই হয়ে ধরা দিতে না-হয় বিয়েটাই আগে হোক!

জাভেদ সাহেব আশেপাশে তাকিয়ে স্ত্রীর চেয়ার ধরে ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাত বাড়িয়ে নিজের কাছে ডাকলেন। আবির এক পা দু’পা করে বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। শ্বাস ঘন হচ্ছে তার। বাবাকে কী করে বলবে তোয়ার কথা? সামনের দিকেই তোয়ার বাবাও বসে আছে। শুকনো ঢোক গিলছে আবির। বাম পাশের সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল ইভা সম্ভবত তার মায়ের পাশে মাথানিচু করে বসে আছে। এই মুহূর্তে সভ্য হয়ে বসে থাকা মেয়েটাকে প্রচন্ড অসভ্য লাগছে আবিরের কাছে। কোন কথাবার্তা ছাড়া কীভাবে পরিবারকে জানিয়ে দিল! আগে এই বিষয়ে কিছু কথা তো বলে নিতে পারত! বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে এমন একটা ছেলে মনে মনে মিঙ্গেল থাকতেই পারে। প্রেমিকা না থাকুক মনে মনে বিয়ে করা বউও তো থাকতে পারে। অসম্ভব কিছু না তো!

দাঁতে দাঁত চেপে রাগী চোখে মেয়েটাকে দেখছিল আবির। বাবার ডাকে সৎবিৎ ফিরল তার। বাবার দিকে তাকাতেই সে শুনলো জাভেদ সাহেব বললেন,

“ তোমার নিশ্চয়ই কোন সমস্যা নেই।”

পূর্বের কোন কথা কানে যায়নি আবিরের। তাই কথাটা বুঝতে একটু সময় লাগল তবুও পুরোপুরি বুঝতে প্রশ্ন করল,

“কীসে সমস্যা নেই, বাবা?”
“এই যে আমরা তোমার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”
“বিয়ে? আমার?”

জাভেদ সাহেব অপ্রস্তুত হলেন। এতক্ষণ এত কথা বললেন আর এই মুহূর্তে এসে ছেলের এমন কথাবার্তা শোভা পাচ্ছে না। ভ্রু কুঁচকে ছেলের চোখে চোখ রাখলেন তিনি। চাপা শ্বাস ফেলে বললেন,

“খেয়াল কোথায় ছিল তোমার?”
“আসলে, বাবা। আমি বুঝতে পারিনি। ”
“তোমার বিয়ের কথা চলছে এখানে। ইভা আম্মাকে আমার পছন্দ হয়েছে। ভাবছি তোমাদের দুজনের বিয়ের ব্যাপারে এগুবো।”

“কিন্তু বাবা, আমি তো অন্য একজনকে পছন্দ করি।” ফট করে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো কথাখানা। আবির সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে এদিক ওদিক চাইলো। সবাই তার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। সবার চোখে সমস্ত জাহানের বিষ্ময়। সে নজর ইভাকে দেখে নিল। মেয়েটাও তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

মুখ থেকে হাতটা নামিয়ে নিল আবির। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,“বাবা, আমার বিয়ে নিয়ে সবার সাথে কথা বলার আগে আমার সাথে কথা বলে নিলে ভালো হতো না?”

জাভেদ সাহেব পারছেন না শুধু মাটির নিচে ঢুকে যেতে। ছেলে এরকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে কে জানতো! তবে তার কথাও ঠিক বলেই মেনে নিলেন তিনি। আমতা আমতা করে বললেন,

“তুমি তো বাড়িতে কিছু বলোনি। তুমি কাউকে পছন্দ করো সেটা মুখ দিয়ে বের করেছ কোনদিন?”
“আমি বলিনি আপনি জিজ্ঞেসও তো করেননি।”

জাভেদ সাহেবের মুখ শুকিয়ে গেল। পাংশুটে দেখাল। একবার ইভার বাবা আর ইয়াদের বাবাকে দেখে আবার ছেলের দিকে তাকালেন। প্রশ্ন ছুড়লেন,

“কাকে পছন্দ করো তুমি?”

আবির এই মুহূর্তে তোয়ার দিকে তাকালো। যদিও সবাই টান টান উত্তেজনায় পরবর্তীতে আবির কী বলবে সেটা জানার অপেক্ষায় আছে তবুও আবির কিছুটা সময় নিল। পরিবেশ ভারি হতে শুরু করল।

জাফর সাহেব এতক্ষণে নিরবতা ভাঙলেন। ভারি গলায় শুধালেন,

“ তোমার বাবা কিছু জানতে চেয়েছে, আবির। জানাও তাকে, কাকে পছন্দ করো তুমি?”

আবির তোয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করেই বলে উঠল,“আপনার মেয়েকে। আমি তোয়াকে পছন্দ করি।”

#চলবে…….

#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_২৩

“তোমার বাবা কিছু জানতে চেয়েছে, আবির। জানাও তাকে, কাকে পছন্দ করো তুমি?”

আবির তোয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করেই বলে উঠল,“আপনার মেয়েকে। আমি তোয়াকে পছন্দ করি।”

জাফর সাহেব এবং জাভেদ সাহেব দুজনে একসাথে দুজনের দিকে তাকালেন আর তারপর দুইজনের দুই জোড়া চোখ আবিরের দিকে চাইলো। আবির দাঁতে দাঁত চেপে মাটির দিকে তাকিয়ে রইল। ওদিকে ফালাক আর নিশো এসে দাঁড়িয়েছে তোয়াদের কাছেই। আবিরের কথা তোয়ার কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই মায়ের দিকে তাকালো। রূম্পা বেগম অলরেডি আবিরের দিকে আর তোয়ার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন। তোয়া মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

“আম্মা, পায়ের জুতা পায়েই রাখেন পিলিজ। ও নিশ্চিত বিয়ে করবে না বলে আমাকে ফাঁসায় দিচ্ছে। ও মিথ্যা বলতেছে, আম্মা।”

এই অবস্থায় মেয়ের এমন কথাবার্তায় রূম্পা বেগম কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলেন। মেয়েকে কী বলবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।

ওদিকে সবাই সিনেমার চুম্বুকাংশ দেখার অপেক্ষায় আছে। কী ঘটবে এরপর? সবাই কীভাবে নেবে বিষয়টা?

জাভেদ সাহেব ছেলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলেন। গম্ভীর গলায় বললেন,

“তোয়াকে পছন্দ করো মানে?”

“পছন্দ না, ভালোবাসি।” আবিরের অকপটে বলে যাওয়া কথায় চরম ধাক্কা খেল তোয়া। আবিরের কথাটা প্রথমে মজার ছলে নিয়েছিল। ভেবেছিল আবির এই মেয়েকে বিয়ে করবে তাই হয়তো মিথ্যে বলছে কিন্তু দ্বিতীয়বার আবিরের বলার ধরণটা মোটেও মজার মনে হচ্ছে না তার।

ওদিকে ইভা মায়ের পাশে থেকে উঠে দৌঁড়ে নিজের বাড়ির দিকে চলে গেল। তার মা-ও আর বসে রইল না। আরেকজনকে সাথে করে মেয়ের পিছন পিছন রওয়ানা দিলেন। আবির একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ইভার যাওয়া দেখল।

জাফর সাহেব কিছু বলছেন না। তিনি বিষয়টা একদমই বুঝতে পারছেন না। আবির সত্যি বলছে কি না সেটাও বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি।

জাভেদ সাহেব পুনরায় ছেলেকে প্রশ্ন করলেন,“সত্য বলছ?”
“হ্যাঁ বাবা।”
“এ কথা এভাবে বলতে পারলে?”
“না বললে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিলেন।”

ইভার বাবা লিয়াকত সাহেব এতক্ষণে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ঠোঁটে হাসি লেপ্টে বললেন,

“ভাই, ছেলেকে আর কিছু বলবেন না। ছেলে বড় হয়েছে তাদের পছন্দ থাকতেই পারে৷ তবে আমার আরেকটা প্রস্তাব আছে। ”

হাফ ছেড়ে বাঁচলো আবির। একটা বিপদ কেটে গেল। তার বিপদ অন্তত কেটে গেল। কষ্ট আর খুশি মিশ্রিত চোখে তোয়ার দিকে তাকালো। তোয়া তখনো আবিরের দিকেই তাকিয়ে আছে। আবির কিছু একটা ভেবে চোখ নামিয়ে নিল।

জাভেদ সাহেব লিয়াকত সাহেবের দিকে দৃষ্টি রেখে বললেন,“দুঃখিত বেয়াই। আমার আসলে আগে ছেলের বিষয়টা জানতে হতো৷ আমার নিজেরই ভুল হয়েছে। তাছাড়া ওরা তো বড় হয়েছে। ওদের পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা বা না লাগার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। ইভা মা ভালো থাকুক। দোয়া করি তার জীবন সুন্দর হোক।”

লিয়াকত সাহেব চেয়ার টেনে জাভেদ সাহেবের দিকে এগিয়ে এসে বসলেন। জাভেদ সাহেবের হাত ধরে বললেন,

“এভাবে বলতে হবে না, ভাই। আমি বুঝি৷ এটা এমন কোন অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যায়নি।”

আবির পাশে থেকে উচ্চস্বরে বলে উঠল,“থ্যাংক ইয়্যু আঙ্কেল।”

আবির স্থান পরিত্যাগ করবে তার আগে জাফর সাহেবের দিকে ফিরে বলল,
“চাচা, আপনার কোন আপত্তি নেই তো!”

জাভেদ সাহেব বিরক্তিতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,“গেলে তুমি!”

আবির মুচকি হেসে নিশোর দিকে এগুতে থাকে। নিশো আবিরকে আসতে দেখে নিজেও এগিয়ে এলো। সামনে এসে দাঁড়িয়ে আবিরের পেটে আস্তে করে আঘা*ত করেই বলে উঠল,

“তুই শা* লা ঠিক হলি না। বড়দের সাথে এভাবে কথা বলতে পারলি কীভাবে! আশ্চর্য হচ্ছি আমি।”
“বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল, ভাই। তোর বোনের কী হতো ভাব?”
“তোর চেয়ে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিতাম।”
“পেলে তো দিবি।”
“অহরহ।”
“প্রয়োজনে তোর বোনকে দ্বিতীয় বউ বানাইতাম তাও অন্যকোথাও বিয়ে হইতে দিতাম না, ব্রো।”
“তোকে আমি বিয়েও করাইতাম।”
“থাক ওয়াশরুম থেকে আসি, অনেকক্ষণ ভয়ে চাপ সহ্য করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
“শা লা।”

নিশো এসে ফালাকের পাশে দাঁড়ালো। ফালাক সাগ্রহে শুধালো,

“কী কথা হলো দুজনের?”
“কী আর হবে? তোমার ভাই দিন দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছে।”
“মাঝেমাঝে যেতে হয়।”
“আমাকেও যেতে বলছো?”
“প্রয়োজন হলে যাবেন না?”
“প্রয়োজন হবে কেন? বাসায় ফিরতে দাও। ওদের বিষয় আগাক, আমিও বলে দিব।”
“কাকে বলবেন? কী বলবেন?”
” তোমার বাবাকে আর আমার বাবাকে।”
“কী বলবেন?”

ফালাকের প্রশ্নের নিশো ঘাড় বাঁকিয়ে তার দিকে তাকালো। ফালাক নিজেও নিশোর দিকে তাকালো। দুজনের চোখাচোখি হতেই ফালাক চোখ নামিয়ে নেবে তখনই নিশো বলে উঠল,

“ভালোবাসি।”

বুকটা ধক করে উঠল ফালাকের। চোখটা এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ মুখে প্রফুল্লতা স্থান পেল৷ বলে উঠল,

“এভাবে বললেন কেন?”

নিশো মুচকি হেসে বলল,“তোমাকে বলিনি তো।”
ফালাক ভ্রু কুঁচকে শুধালো, “তাহলে কাকে?”
“তুমি জানতে চাইলে আমাদের বাবাদের কী বলব, তাই তো তোমাকে বলে রাখলাম যে ওটা বলব।”

ফালাক দমে গেল। নিস্তেজ গলায় বলল,
“ওহ আচ্ছা।”
“ওহ আচ্ছা?”
“তো?”
“ভালোবাসি বলব? শুনবে?”
“না, না। দরকার নেই। ওটা বলতে হবে না।”

ফালাকের কথায় খিলখিল করে হেসে উঠল নিশো। চোখ দুটো ছোট হলো। ফালাক এক পলকে চেয়ে রইল। কী সুন্দর হাসি!

আবির ফিরে আসতেই তোয়া উঠে দাঁড়ালো। মাকে বলল,“দাঁড়াও ওকে আমি দেখছি। সাহস কত বড়, আমাকে নিয়ে এসব বলল! এত বড় মিথ্যা বলতে ওর বুক কাঁপলো না! পাক্কা হারামি ওটা।”

রূম্পা বেগম মেয়েকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“বোস এখানে। তোর এসব নিয়ে ছেলেটার সাথে ঝগড়া করতে হবে না। আমিই আশ্চর্য হচ্ছি আবির এরকম ভুল করল কীভাবে!”

তোয়া অবাক হয়ে বলে উঠল,“ তুমি ওর পক্ষ নিচ্ছ! এই তুমি আমার মা! ওকে তো আমি এখনই দেখে নিব।”

রাবেয়া বেগম পাশে বসে থেকেও এতক্ষণ কিছুই বলেননি। ইভা নামের মেয়েটাকে নিয়ে বিয়ের কথা হয়েছে জাভেদ সাহেবের সাথে সেটাও তিনি জানতেন না। ছেলের সামনাসামনি কথা বলতে পারায় সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি বেশ বুঝতে পারেন, আবির তোয়াকে পছন্দ করলেও ওদের মধ্যে সেরকম নরম সম্পর্ক এখনো তৈরি হয়নি যেটা থেকে ভালোবাসা খুব সহজে আকার নিবে৷

ছেলের পক্ষ নিয়ে পরিবেশ একটু হালকা করে তোয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

“তোয়া, আবির তোমাকে আসলেই ভালোবাসে৷ ও আমাকে সে কথা জানিয়েছে। তুমি হয়তো সেভাবে ওকে দেখোনি কিন্তু আমার ছেলে কিন্তু খুব একটা খারাপ হবে না তোমার জন্য। যাও দুজন কথা বলে দেখো। ”

তোয়া নিরব হয়ে রাবেয়া বেগমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর কিছু না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আবিরের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।

“আবির, ভাইয়া।”

ডাক শুনতেই আবির পিছনে ফিরে তাকালো। হাতের ফোনটা তখনই পকেটে রেখে দিল। তোয়ার সামনা-সামনি হতে তার ভয় লাগছিল। এর আগে এমন হয়নি কখনো। এখনো ঠিকঠাকভাবে তোয়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে৷ নতুন নতুন কিছু ঘটছে তার সাথে।

তোয়া আবার বলে উঠল,
“একটু বাহিরের দিকে আসবি? কথা আছে তোর সাথে।”

এ কথা, ও কথা বলে এবার আসল কথার দিকে অগ্রসর হলেন লিয়াকত সাহেব। হেসে হেসে নিজের ছেলের গুনগান গেয়ে ফালাকের প্রশংসা করতে শুরু করেছিলেন। জাভেদ সাহেবের জন্য এবার ইশারাই যথেষ্ট হলো। তিনি বুঝলেন, লিয়াকত সাহেব যেকোন মূল্যে নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে চাচ্ছেন। মেয়ে দিতে না পেরে সোজা মেয়ে নিতে চাইছেন ছেলের বউ হিসেবে।

লিয়াকত সাহেব বলেই ফেললেন,“একটা যেহেতু হলো না, সম্পর্ক তৈরির আরেকটা উপায় আছে বেয়াই সাহেব। আপনার মেয়েটাকে আমার ছেলের জন্য খুব পছন্দ হয়েছে। দুজনকে দারুণ মানাবে।”

ফালাক আর নিশো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। লিয়াকত সাহেবের কথায় আঁতকে উঠল দুজন। নিজেদের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে একসাথে, একইসময়ে বলে উঠল,

“এদিকে একদমই তাকাবেন না। ফালাকের জন্য নিশো আছে।”

#চলবে……