#একদিন_বিকালে_সকাল_হয়েছিলো
লেখাঃ শারমিন আক্তার সাথী
পর্বঃ ০৮
শশী উঠে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ি ঠিক করতে লাগল। শাড়ির কুচিগুলো অগোছালো হয়ে গেছে। রাযীন নিচু হয়ে বসে শশীর শাড়ির কুচির প্লেট ঠিক করতে করতে বলল,
‘মেয়েরা শাড়িতে সত্যি অনবদ্য লাগে। আপনার নামের সাথে আপনার চেহারার বেশ মিল।’
রাযীন শশীকে একটার পর একটা শক দিয়েই যাচ্ছে। শশী একটা হতভম্ব ভাব পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই রাযীন আরেকটা বোম ফেলে। ফলে শশীর সব গোলমেলে লাগছে। শশী রাযীনকে কি জব্দ করবে, উল্টো নিজে জব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! রাযীন দাঁড়িয়ে শশীর একদম কাছে গেল। এতটা কাছে যে, রাযীনের নিঃশ্বাস শশীর ঠোঁটে লাগছে। শশী সরে যেতে নিলে রাযীন ওর কাঁধে চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে শশীর আঁচলটা তুলে মাথায় দিয়ে বলল,
‘মাশাআল্লাহ্। কী চমৎকার লাগছে আপনাকে! শুনুন বিয়ে ভাঙার যত পরিকল্পনা করেছেন তা মন থেকে মুছে ফেলুন। কারণ বিয়ে আমি আপনাকেই করছি। প্রথম দেখায়ই আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি মিস শশী।’
কোনো ছেলে, মেয়ে দেখতে এসে এমন চরম অসভ্যের মতো ব্যবহার করতে পারে শশীর জানা ছিলো না! শশী রেগেমেগে বলল,
‘আপনি চূড়ান্ত পর্যায়ের অসভ্য।’
মৃদু হেসে রাযীন বলল,
‘আমি জানি।’
‘মেয়ে দেখতে এসে মেয়েকে একা পেয়ে কেউ এমন অসভ্যতামি করে?’
‘কেউ করে না, তবে আমি করি।’
শশীর রাগ হচ্ছে ভীষণ। রাগি কন্ঠে বলল,
‘আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।’
‘সো হোয়াট?’
‘আমি তাকেই বিয়ে করব।’
‘তো আমি কি আপনাদের বিয়ের কাজি হবো নাকি সাক্ষী?’
‘কিছুই হতে হবে না। আপনি শুধু সামনে গিয়ে বলবেন মেয়ে আপনার পছন্দ হয়নি। আপনি বিয়ে করবেন না। ভদ্রলোকের মতো বিয়েটা ভেঙে দিবেন।’
রাযীন কিছু একটা ভেবে বলল,
‘ওকে।’
শশী এবারও চমকালো। মনে মনে বলল,
‘অসভ্যটা এত সহজে রাজি হয়ে গেল!’
রাযীন বলল,
‘চলুন আমরা তাহলে সবার সামনে যাই।’
শশী-রাযীন রুম থেকে বের হয়ে সবার সামনে গিয়ে বসল। রাযীনকে ওর বাবা রায়হান রহমান জিজ্ঞেস করলেন,
‘রাযীন, তা তোমার মেয়ে পছন্দ হয়েছে?’
রাযীন শশীর দিকে তাকাল।
শশী মনে মনে ভাবল, বয়ফ্রেন্ড এর কথা বলায় হয়তো রাযীন সহজেই মেনে নিয়েছে। সবাই জানে, আজকাল মেয়েদের বয়ফেন্ড থাকাটা স্বাভাবিক। না থাকাটা বরং অস্বাভাবিক। শশী মনে মনে বলল,
‘যাক ব্যাটা তাহলে সবার সামনেই না বলবে। যাক ঝামেলা একসাথেই চলে যাবে।’
রাযীন শশীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
‘বাবা, শশীকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। শুধু আমার না, শশী বলেছে আমাকেও ওর পছন্দ হয়েছে। এ বিয়েতে আমাদের দুজনার কোনো আপত্তি নেই।’
রাযীনের কথায় শশীর মাথায় যেন নিঃশব্দে বাজ পড়ল। কিন্তু শশী মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই বড়রা সবাই একসাথে বলে উঠল,
‘আলহামদুলিল্লাহ্! আলহামদুলিল্লাহ্!’
শশী স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর শশী রুমে চলে আসল। রুমে এসে বাকরুদ্ধ অবস্থায় বসে রইল অনেকটা সময়। ফোনটা হাতে নিয়ে সজলকে কল করল। সজলের ফোন এখনও বন্ধ। সজলকে আবার মেসেজ করল, ‘আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজই এনগেজমেন্ট হবে।’
সজল সিন করে কিছু লিখছে। কিন্তু সজলের মেসেজ আসার আগেই লিপি এসে শশীকে নিয়ে গেল। বড়রা সবাই মিলে ঠিক করল আজই ঘরোয়াভাবে এনগেজমেন্ট হবে। শশীর পরীক্ষা যেহেতু বুধবার শেষ সেহেতু শুক্রবার আকদ। পরে সবাই মিলে বড় করে অনুষ্ঠান করার তারিখ ঠিক করবে। শুক্রবার আকদ দেয়ার কারণ হচ্ছে রাযীন রবিবার ব্যবসায়ের কাজে চট্টগ্রাম যাবে। দুই মাস পর ফিরবে। তখন অনুষ্ঠান করে শশীকে নিয়ে যাবে।
এত কিছু, এত জলদি হয়ে যাবে শশী ভাবতেও পারছে না। কষ্টে বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে ওর। টেনশনে কিছু ভাবতেও পারছে না। ভাবনার ঘোর কাটল রাযীনের স্পর্শে। রাযীন শশীকে আংটি পরিয়ে দিলো। না চাইতে সবার সামনে শশীর রাযীনকে আংটি পরিয়ে দিতে হল। বড়রা সবাই নিজেদের মাঝে কথা বলছে। কেউ ওদের দিকে খেয়াল দিচ্ছে না দেখে, শশী বিড়বিড় করে বলল,
‘আপনি কাজটা ঠিক করলেন না! আপনাকে পস্তাতে হবে খুব।’
রাযীনও বিড়বিড় করে বলল,
‘আমি তো সেই কবে থেকে তৈরি। বলতে পারেন কয়েকমাস আগে থেকেই তৈরি। তোমাকে পাবার পর যদি, তোমার ভালোবাসায় পস্তাতে হয় আমি তা-ও খুশি খুশি রাজি।’
বিস্ময় চোখে শশী, রাযীনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আপনি আমাকে আগে থেকে চিনতেন?’
‘হ্যাঁ। আমি তোমাকে বিগত সাত মাস, আঠেরো দিন আগে থেকে চিনি। জানি অবাক হচ্ছ! এটা তোমার কাছে এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হলেও আমার কাছে লাভ ম্যারেজ।’
শশী অবাক হয়ে রাযীনের চোখের দিকে তাকাল। রাযীনের চোখের তাকিয়ে শশী অনেক বেশি অবাক হলো। শুদ্ধতম ভালোবাসায় ভরা দুটি চোখ। যে ভালোবাসা ও সজলের চোখে খুঁজেছে, সে ভালোবাসা আজ রাযীনের চোখে দেখছে। শশী চোখ নামিয়ে নিল। ও তাকাবে না ঐ চোখে। তাকিয়ে থাকলে হয়তো রাযীনের ভালোবাসার বাঁধণে বাঁধা পড়ে যেতে পারে। শশী নিজ মনকে শাসিয়ে, মনে মনে বার বার বলল,
‘আমি সজলকে ভালোবাসি। আমি সজলকে ভালোবাসি। আমি সজলকে ভালোবাসি। আর আমি সজলকেই বিয়ে করব।’
সবাই যাবার কিছু সময় পূর্বে রাযীন লিপিকে চুপি চুপি বলল,
‘আপনি কেমন ভাবি?’
মৃদু হেসে লিপি বলল,
‘ওমা আমি কী করলাম?’
‘যাবার পূর্বে একবার আপনার ননদের সাথে দেখা করাবেন না।’
লিপি হেসে বলল,
‘বসেন জনাব ব্যবস্থা করছি।’
শশী তখনও রুমে বসে আছে। সজলের পাঠানো মেসেজটা বার বার পড়ছে। সজল মেসেজে লিখেছে,
”তোমার এ ট্রিকস এবার কাজ করবে না শশী। আমি জানি তোমাকে দেখতে কোনো পাত্র আসেনি। এনগেজমেন্ট তো দূরের কথা! আর যদি এসেও থাকে তবে তুমি কোনো না কোনো ভাবে বিয়ে ভেঙে দিবেই। আর যদি বিয়ে না ভাঙতে পারো, তবে এনগেজমেন্ট এর জন্য শুভকামনা। তোমার নতুন জীবন কল্যাণময় হোক। শেষে একটা হাসির ইমোজি।”
শশী যা-ই বলেছে সজলের কাছে সব মজা মনে হচ্ছে। শশী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাতের আংটির ছবি তুলে সজলকে পাঠিয়ে বলল, “আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।”
সজল একটা হাসির ইমোজি দিয়ে মেসেজ করল,”এরকম সোনার মতো দেখতে আংটি বাজারে খুব সস্তায় কিনতে পাওয়া যায়।”
সজলের কথায়, কর্মে শশীর মনটা ক্ষত-বিক্ষত আজ। আজ নিজেকে বড্ড ক্লান্ত লাগছে শশীর। বিধস্ত, পরাজিত মনে হচ্ছে নিজের কাছে। যে ভালোবাসার মানুষের বিশ্বাসটাই জয় করতে পারল না, সে তো চূড়ান্ত পরাজিত! শশী ফোনটা রেখে বাথরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো। আজও ও নিজের কান্নাগুলো ধুয়ে ফেলতে চাইছে পানির সাথেই। শশী বাথরুম থেকে বের হয়ে মুখ মুছতে নিবে তখন
লিপি, রাযীনকে নিয়ে রুমে ঢুকে বলল,
‘নে শশী চুরি করে তোর কাছে নিয়ে আসলাম। এবার কথা বলার সাথে সাথে, ফোন নাম্বার আদান প্রদান করে নে। যাতে ফোনে সারাদিন বাক-বাকুম বাক-বাকুম করতে পারিস।’
লিপি দরজা ভেজিয়ে চলে যেতে রাযীন দরজার ছিটকিনি দিয়ে বলল,
‘বলা তো যায় না কে কখন চলে আসে। বাই দ্যা ওয়ে মুখ ধোয়ার পর তোমাকে স্নিগ্ধ লাগছে শশী!’
শশী নির্বিকার চোখে তাকিয়ে বলল,
‘আপনার সস্তা প্রশংসা আমাকে গলাতে পারবে না। আমাকে বিয়ে করে আপনি মোটেও সুখী হবেন না রাযীন।’
‘সুখটা তো সৃষ্টিকর্তা কপালে লিখে রাখেন। আমার কপালে সুখ লেখা থাকলে অবশ্যই সুখ আসবে।’
শশী ভেবেছিলো সজলের কথা বলবে। কিন্তু আজ মনটা এতটা বিধস্ত ক্লান্ত যে কী বলবে? কী ভাববে? তা বার বার গুলিয়ে ফেলছে! হুঁট করে চঞ্চল শশীটা যেনো অমাবস্যার আঁধারে ঢাকা চাঁদের মতো নিস্তব্ধ র্নিজীব হয়ে গেল।
রাযীন শশীর হাত ধরে বলল,
‘শশী আমাকে ভরসা করতে পারো। তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কেবল তোমার হয়েই থাকব। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড শশী আমি এবার একটা খুবই দুঃসাহসিক কাজ করব। অসভ্যের মতো কাজও বলতে পারো!’
রাযীন শশীর কাছে গিয়ে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল। শশী পুরো বরফের মতো জমে গেলো। তাপমাত্রা মাইনাস ডিগ্রীতে অনেক বেশি নেমে গেলে পানি যেমন তরতর করে জমে যায় শশী ঠিক তেমনভাবে জমে গেল। রাযীন শশীর গালে হাত বুলিয়ে চলে গেল। শশী পাথরের পুতুলের ন্যায় ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল। মনে মনে বলল,
‘যে ভালোবাসা আমি সজলের চোখে খুঁজি সে ভালোবাসা কেন রাযীনের চোখে? না আমি রাযীনের কথা একদম ভাবব না। একদম না। আমি সজলকে ভালোবাসি। আমি সজলকে ভালোবাসি।’
রাযীনরা সবাই চলে গেলো। যাবার সময় রোমিসা শশীর রুমে এসে শশীকে জড়িয়ে ধরে বলে গেল,
‘আমার মিষ্টি ভাবি। ভাইয়া বলেছে সে আপনাকে খুব ভালোবাসে। আমরাও যাতে আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমরা সবাই তো ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি। তাই ভাইয়া যাকে ভালোবাসে আমরা সবাই তাকেও খুব ভালোবাসি। ভাইয়া আমাদের পরিবারের প্রাণভোমর। আর আপনি ভাইয়ার প্রাণ। সে জন্য আমরা সবসময় আপনাকে খুব যত্ন করে রাখব।’
শশী শুধু মৃদু হেসে রোমিসার মাথায় হাত বুলাল।
গভীর রাত সবাই ঘুমে বিভোর। তবুও কিছু প্রাণ জেগে আছে। কেউবা ভালোবাসায় বিভোর, কেউবা হারানোর বেদনায়। কিছুনা কিছু কারণে জেগে আছে কিছু চোখ। কারও চোখে ভালোবাসার মুগ্ধতা তো আবার কারও চোখে বেদানার জল। শশীর চোখে আজ বেদনার জলধারা। কেঁদে কেঁদে চোখ দুটোকে লাল করে ফেলেছে শশী। চোখ দুটো বড্ড জ্বালা করছে। তবুও চোখের জল বাঁধা মানছে না। সজলকে পাবার আশা ধীরে ধীরে শেষ হচ্ছে যাচ্ছে ওর জীবন থেকে। আজ এমন করে সব শেষ হয়ে যাবার পথে আসবে ভাবতে পারেনি ও। রাযীন নামের লোকটা ঝড় হয়ে জীবনে আসলো আর সবকিছু লন্ড ভন্ড করে দিয়ে গেল।
শশী আবার সজলকে কল করল। এবার কল ঢুকল সজল রিসিভও করল। শশী কান্নাসিক্ত কন্ঠে বলল,
‘সজল তুমি কি সত্যি বিশ্বাস করেছো না যে, আমার এনগেজমেন্ট হয়েছে?’
‘না করছি না। কারণ এর আগেও বহুবার তুমি তোমার বিয়ের কথা বলে আমাকে ভয় দেখিয়েছো। কিন্তু পরে তেমন কিছুই হয়নি।’
‘সজল তোমাকে ভয় দেখাইনি বা মিথ্যা কথা বলিনি কখনো। প্রতিবার আমার বিয়ের কথা ঘরে উঠছে, নয়তো বিয়ের প্রস্তাব আসলে আমি তোমাকে বলেছি। তুমি আমার কথা কখনো সিরিয়াসলি নাওনি। কিন্তু প্রতিবার প্রত্যেকটা বিয়ে ভাঙতে অথবা বিয়ের প্রস্তাবে না করতে আমাকে কতটা সমস্যা ফেইস করতে হয়েছে তুমি জানো? তুমি তো কখনও আমার বিয়ে ভাঙার কিংবা আমাদের সম্পর্ককে বিয়ের নাম দেওয়ার বিন্দু মাত্র চেষ্টা করোনি।
হ্যাঁ চেষ্টা অবশ্য করেছিলে একবার। আমারা যখন ২য় বর্ষে পড়ি তখন অবশ্য একটা বিয়েতে তুমি ভাঙানি দিয়েছিলে। সজল বাংলাদেশে মেয়েদের আঠারো বছরের পর ঘরে রাখতে চায় না। বিয়ের জন্য পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন সবাই উঠে পড়ে লাগে। সেখানে আমি গত তিন বছর যাবত পরিবারকে ম্যানেজ করেই যাচ্ছি। তুমি তো কিছুই করোনি।’
কঠিনভাবে সজল বলল,
‘আজব কথা বললে শশী। আমি এ বয়সে কী করতে পারি? তোমাকে নিয়ে তো বিয়ে করে নিজের ঘরে ওঠাতে পারি না। তেমন কোনো অবস্থানে আমি নেই।’
‘সে কারণেই সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকেই আমি তোমাকে সিরিয়াস হতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার কথা গায়ে মাখোনি।’
‘শশী পড়ালেখা চলা কালীন আমি পড়ালেখা ছাড়া আর কী নিয়ে সিরিয়াস হব?’
‘সজল, তোমাকে একটা কথা বলি?’
‘হুঁ বলো।’
‘আগে তোমার ভালোবাসাটা আমি যতটা উপলব্ধি করতাম ইদানিং তা পারি না। ইদানিং তোমার ভলোবাসা কেমন কৃত্রিম মনে হয়। মনে হয় না তুমি সে আগের সজল আছো? সেই সজল যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। কিন্তু বর্তমানে আমাকে নিয়ে তোমার মাঝে কোনো ফিলিংস দেখি না।’
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সজল বলল,
‘তখন মেসেজে বলেছিলে তোমার ভাই আদ্র আমার সাথে দেখা করতে চায়। তিনি কেন দেখা করতে চায়?’
শশীর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ও এত কান্না করছে, সজলের সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। একবার বলছেও না শশী তুমি কেঁদো না। অথচ শশীর মনে আছে, আগে শশী কাঁদলে সজল পাগলের মতো করত। একবার রাত দুটোর সময় সজলের সাথে ঝগড়া করে শশী খুব কেঁদেছিলো, সেদিন সেই রাতে সজল শশীদের বাড়ির সামনে এসে কল করে ওর রাগ ভাঙিয়েছিল, আর বার বার করে সজল বলেছিল, শশী যেন কখনো না কাঁদে, শশী কাঁদলে ওর হৃদয় খুব জ্বলে। সেই সজল কোথায় গেল? আজ শশী এত কাঁদছে অথচ সজলের হৃদয় জ্বলছে না? নাকি শশীর চোখের পানিতে ওর হৃদয়ের দহন শীতল হয়ে গেছে। সজল আবার বেশ জোরে বলল,
‘কী হলো বলো তোমার ভাই কেন দেখা করবে?’
কান্না দমিয়ে শশী বলল,
‘আমাদের বিষয়ে কথা বলতে।’
বোঝা গেল সজল বিষয়টায় ভীষণ বিরক্ত হয়েছে এবং রাগ করেছে। তবুও নিজের রাগ দমিয়ে বলল,
‘ঠিক আছে তবে যা কথা হবার তা তোমার ভাইয়ার সাথে বুধবার হবে। এর আগে প্লিজ তোমার নাটকগুলো বন্ধ রাখো। আমাদের দুজনারই পরীক্ষা সো প্লিজ লেখাপড়ায় মন দাও আর আমাকেও মন দিতে দাও। আর বিয়ে নিয়ে এই এক বা*লের কথা আর বইলো না। এমনি পরীক্ষার টেনশনে বাঁচি না তার উপর তোমার টেনশন নিতে পারছি না। তুমি প্লিজ পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলা বন্ধ রাখো। নিজেও শান্তিতে থাকো,আর আমাকেও শান্তিতে থাকতে দাও।’
এসব বলেই সজল কলটা কেটে দিল। শশী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজে নিকে বলল,
‘আমি তো ভুলেই গেছিলাম পরীক্ষার কথা। সজলেকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে নিজের ভবিষ্যতটা অন্ধকারে ফেলে দিচ্ছি নাতো? সজল তোমার কথাই থাক। বুধবার তোমার কথার উপর অনেক কিছু র্নিভর করবে আমার জীবনে। দেখা যাক তোমাকে ভালোবেসে আমি হারি নাকি জিতি? কেন জানি আমার মনে হচ্ছে আমার ভালোবাসা গো হারান হেরে যাবে রাযীনের ভালোবাসার কাছে! তুমি জানো না সজল রাযীনের চোখে আজ আমি যা দেখেছি, তা আমি গত এক বছর যাবত তোমার চোখে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
১১!!
শিহাব তৈরী হচ্ছে। রেনু মন খারাপ করে বসে আছে। তা দেখে শিহাব মিট মিট হাসছে।
চলবে…..