এক চিলতে রোদ ২ পর্ব-০৯

0
462

#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila

৯.

আম্মু কে বুঝাতে খুব কষ্ট হবে না। কিন্তু আব্বুর জন্য ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করতে শুরু করেছে। আব্বু এতো আগেই বাসায় চলে এসেছে আজ। ঢোক গিলে ভেতরে যায়। হাত পা কাঁপছে অনবরত। যতটা ভয় পেয়েছিলাম তার কিছু হলো না। আব্বু খুব সুন্দর করে কথা বললো। আর বললো কখনো যেন রাত না করি কোথাও গিয়ে। আমি মাথা নেড়ে রুমে চলে এলাম। ফ্রেশ হয়ে এসেই দেখি আম্মু বিছানায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই আম্মু আমাকে যা বললো তাতে চমকে উঠলাম। আর আমার হাত থেকে তোয়ালে ফট করে নিচে পরে গেলো।

‘ তোমার সাথে ছেলেটা কে ছিলো?’

আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। আম্মু ইহান কে দেখলো কি করে?এখন কি হবে? কি বলবো? আম্মু কি জেনে যাবে মিথ্যা কথা বলে আমি মেলায় গিয়েছিলাম। হায় আল্লাহ তাহলে তো খুব খারাপ হবে। আম্মু তেমন কিছুই না বললেও আব্বু তো খুব বকবে?

‘ কি হলো কথা বলছো না কেন? ওই ছেলেটা কে ছিলো যে তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো?’

‘আসলে আম্মু…

‘ সত্যি বলো। আমি কিছু বলবো না। ‘

মায়ের কথায় ভরসা পেয়ে সব বলে দিলাম। সব শুনে আম্মু খুশি হলেও পরে একটু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ তোমার কোন ক্ষতি হয়নি তো? ভয় পেয়েছিলে?’

‘ খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু সময় মতো ইহান না আসলে ক্ষতি হতে পারতো।’

‘ ছেলেটা তো খুব ভালো।’

‘ ভালো না ছাই। তার জন্য ই তো আমি বিপদে পরেছি তাই হেল্প করেছে এখানে ভালোর কি হলো?’

‘ কিছুনা আয় কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পর আজ।’

‘ হুম ‘

আম্মু চলে গেলো।
ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে হাতে নিয়ে দেখি তুলি রিসিভ করতেই চিন্তিত কন্ঠ ভেসে এলো। আমি ঠিক আছি আর বাসায় পৌঁছেছি বলেই কেটে দিলাম। তারপর খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

পরদিন স্কুলে এসে কারো কারো কথা বললাম না। ওদের ইগনোর করে আলাদা সিটে বসলাম। তুলি এখনো আসে নি। বাকিরা আমার কাছে এসে সরি বলেছে কারো সাথেই কথা বলিনি। আমি যথেষ্ট শান্ত লিষ্ঠ মেয়ে ওদের সাথে কখনো ঝগড়া বা উঁচু গলায় কথা বলিনি কিন্তু আজ বলেছি। ওদের কথা শুনেই ধমক দিয়েছি। আমার ওদের দেখলেই রাগে শরীর জ্বলে উঠছে। সবাই আমাকে কতো রিকোয়েস্ট করে নিয়ে গেলো আর ওরা আমার খবর না নিয়ে চলে এলো‌। এটা কোনো কথা এতোটা কান্ড জ্ঞান হীন‌। ওদের কথায় আমি রাজি হয়ে কতোটা ভুল করেছি তা হারে হারে টের পেলাম। ওরা আমাকে রাগতে দেখে আর কিছু বললো না। তুলি এসে আমার এমন রাগারাগীর কথা শুনে ঢোক গিললো। আমি ওকে দেখে ও না দেখার ভান করে আছি। ওর উপর আমার রাগ বেশি আছে । সবাই চলে গেলেও আমি কষ্ট পেতাম না ও কি করে আমাকে এভাবে ফেলে গেলো। আমার পাশে এসে বসলো আমি ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে জায়গা পরিবর্তন করলাম। ও অসহায় মুখে আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। কান থেকে হাজার বার সরি বললো আমি কথা বললাম না। দুইদিন রাগ নিয়ে থাকলাম। সারা দিন কল করে আমি রিসিভ করি না। স্কুলে এসেও কথা বলিনা।

শুক্রবার ঘুম ভাঙলো তুলির চেঁচামেচি তে। ওর চিৎকার শুনেই ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। আমার সামনে বসে আছে। ওকে দেখে এতো খুশি হলাম যে রাগের কথা ভুলে ওকে জরিয়ে ধরে কথা বলতে লাগলাম।

‘ ওই তুই আমার কল রিসিভ করিস না কেন? এতো রাগ কেনো রে বাবা সরি বলছি তো যা আর জীবনে তোর এইভাবে ফেলে আসমু না।ইহান ভাই আছে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিল উনি তোকে বিপদে পরতেই দিবে না ঠিক বাসায় পৌছে দিবে। আর তাছাড়া আমি আসতে চায়নি তোকে ফোনে পাচ্ছিলাম না তাই সবাই জোর করে আমাকে গাড়ি উঠয়েছিলো। তারপর কতো যে চিন্তা করেছি আমি জানিস। তোর সাথে কথা বলে আমি স্বস্তি পেয়েছি।

‘ এই আমি তোর সাথে কথা বলছি কেন? আমি তো তোর সাথে রাগ করেছি!

বলেই মুখ ঘুরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তুলি আমাকে জাপ্টে ধরে বললো, ‘ প্লিজ ক্ষমা কর তুই যা বলবি আমি তাই শুনবো এবারের মতো মাফ কর প্লিজ।’

‘ আচ্ছা করতে পারি একটা শর্তে!’

‘ বল কি শর্ত?’

‘ আজ আমাদের বাসায় থাকতে হবে আর এখন কান রে উঠ বস কর!

‘ এ্য্যা কি সব বলছিস আমি কান ধরে উঠবস করবো?

‘ হুম।

তুলি থাকবে বলে রাজি হলো। আম্মুকে দিয়ে ওর বাসায় কথা বলানো হলো। কান ধরে দশবার উঠবস করালাম। সারাদিন দুজন অনেক আনন্দ করলাম। রাত জেগে মুভি দেখলাম। গল্প করে একটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম পরদিন সকালেই চলে গেলো তুলি বাসায় গিয়ে স্কুলের জন্য রেডি হতে। স্কুলে গিয়ে সবার সাথে মিলমিশ করে নিলাম।

কয়েকদিন পর
একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেলো আমার চোখের সামনে।স্কুলে থেকে বাসায় ফিরছিলাম। আমি জানালা খোলা রেখে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করি। আজ ও ছিলাম। তখন একটা বাইক এর সাথে কার ধাক্কা লেগে কি বীভৎস অবস্থা। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। হাত পা থরথরিয়ে কাঁপছে। আশেপাশের লোক জড়ো হয়ে গেল। সবাই ধরাধরি করে কার থেকে একটা আহত মেয়েকে বের করে আনল। আমাদের গাড়ি তাদের গাড়ির কিছুটা সামনে ছিলো। মেয়েটিকে হসপিটালে নিতে হবে ইমিডিয়েটলি না হলে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সবাই বলাবলি করছে আর গাড়ি খুঁজছে কিন্তু গাড়ি পাচ্ছে না।আমি শুকনো মুখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। কি সুন্দর দেখতে। মেয়েটার কপালে আঘাত পেয়ে রক্ত পড়ে তার গাল বেয়ে পরছে। আকাশী কামিজ ডিজে একাকার। তখন মেয়েটিকে আমাদের দিকে আনা হলো আমি আতঙ্কে চোখ মুখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি এদিকে আনছে কেন?
লোক গুলো আমাদের গাড়ির সামনে এসে ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলছে আমাদের গাড়িতে মেয়েটিকে হসপিটালে নিতে চান। কিন্তু ড্রাইভার আঙ্কেল রাজি হতে পারছে না। কারণ তিনি ভয় পাচ্ছেন। তিনি ভাবছেন যদি আমি কিছু বলি কারণ আমি এই সবে খুব ভয় পায়। এখন ও আমি ভয় পাচ্ছি। আমার হাত-পা কাঁপছে। অসম্ভবরকম কাঁপছে। কিন্তু শুধুমাত্র নিজের ভয়ে জন্য একজন মানুষের প্রাণ চলে যাবে। না এটা হতে পারে না। আমার যত ভয় করুক না কেন! আমাদের সাহায্য করতে হবে। আমি সাহস করে এবার কাঁপা গলায় ড্রাইভার আঙ্কেলকে রাজি হতে বললাম। আর মেয়েটিকে ধরে আমার পাশে শুইয়ে দেওয়া হলো। রক্ত দেখে আমার হাত কাপছে। আমার মাথা ঘুরছে তবু আমি নিজেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম নিজেকে ঠিক রাখার। আমাদের সাথে আর কেউ আসলো না কারণ এখানে যে কয়টা পুরুষ ছিল সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। আমাকে আর ড্রাইভার আংকেলকে বলে গেল আমরা যেন ওনাকে হসপিটালে ভর্তি করে দেই আর ওনার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলল। পরিবারের কাউকে কল করার জন্য। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিলাম। ২৫ মিনিট পর আমরা সিটি হসপিটাল এসে গাড়ি থামালো।
ফোন লক করা আমি কিভাবে কাউকে কল করবো। তাই কাউকে কল করা হলো না। কিন্তু হসপিটালে এসে দেখলাম রোগীকে সবাই চিনে। তিনি নাকি ডক্টর। তার নাম ডক্টর ইমা।হসপিটাল থেকে তার বাড়িতে খবর দিয়ে দিয়েছে কিন্তু তার আগেই ডাক্তার জানালো ইমিডিয়েটলি ও পজেটিভ রক্ত লাগবে। দরকারের সময় সবসময়ই সবকিছু ফুরিয়ে যায়। হসপিটালে ও পজেটিভ রক্ত নাই এখন বাইরে থেকে আনতে হবে। হাসপাতাল থেকে লোক পাঠানো হয়েছে কিন্তু তারা রক্ত পাচ্ছে না। কারন মাথায় আঘাত পেয়েছে গুরুতুর। ওখান থেকে রক্ত ব্লিডিং হচ্ছে তারা রক্ত বের হাওয়া থামিয়েছে। কিন্তু এখনই রক্ত দিতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে এমনকি তার প্রাণ ও চলে যেতে পারে।

কিন্তু কারো রক্তের সাথে তার রক্ত মিলছে না। কি ঝামেলা? তখন আমার মাথায় এলো ও পজেটিভ তো আমার রক্তের গ্রুপ। আমি সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে সেটা জানিয়ে দিলাম। কিন্তু ডাক্তার আমার শরীর থেকে রক্ত নেবে না এত কম বয়সী কারো শরীর থেকে রক্ত নিবে না। এজন্য 18 বয়স লাগবে। আর আমার কেবল ষোলো। হায় আল্লাহ। আব্বুর অফিসে এখান থেকে কাছেই। আমি আব্বু কে ডেকে নিলাম কারণ আব্বুর রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। আব্বু এলো ১০ মিনিটে এসেই রক্ত দিয়ে চলে গেল ততক্ষণে মেয়েটির মানে ইমা আপুর বাসা থেকে কেউ আসেনি। আমাকে এখানে থাকতে বলে চলে গেল। আমিও যেতাম না আপুটার খবর নিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি যাব। তখন ইহানকে দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে এই দিকে আসছে।ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে চুলগুলো এলোমেলো ছুটে ছুটে আসছে আমাকে হয়তো খেয়ালই করেনি ডাক্তারের কাছে গেল একটু পরে জানতে পারলাম ইমা আপু উনার বড় বোন। কডিটরি সামনে এসে আমাকে দেখে কপাল কুঁচকালো।

আমি কিছু বলবো তার আগে আরো তিনজন একজন মহিলা দুইজন পুরুষ কান্না করতে করতে এলো।এসেই সেই মহিলা ইহান কে জরিয়ে ইমা ইমা বলে কাঁদতে লাগলো। উনি হয়তো আপুর মা তাই এতো কাঁদছে। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আছি।

#চলবে…….