এক চিলতে রোদ ২ পর্ব-১০+১১

0
469

#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila

১০.

ক্লান্ত লাগছে অনেক তাই বাসায় চলে এসেছি। জ্ঞান ফিরতেই কাঁচের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেছি আপুটাকে। জ্ঞান ফিরেছে দের ঘন্টা পর। একজনের উপরে দেখ করতে দিবে না। ইমা আপুর মা দেখা করতে গিয়েছেন। তখন আমি চলে এসেছি। আশার আগে একটু কথা ইহান এর সাথে হয়েছে।
বাসায় আসতেই আম্মু জিজ্ঞেস করল কি অবস্থা এখন। আমি জ্ঞান ফিরেছে বললাম। আব্বু ও জিজ্ঞেস করলো। আমি ফোন ঘেঁটে ইহানের নাম্বার খোঁজে বের করলাম। তারপর ভাবলাম একবার কল করে জিজ্ঞেস করে নিবো খবর? যেই ভাবা সেই কাজ।
সেদিন কল দিয়েছিল মিসকল লিস্টে আছে। খোঁজে নাম্বার পেয়ে গেলাম আর কল করলাম। প্রথমবার রিসিভ করলো না দ্বিতীয় বার করলো।

‘হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!’

‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম।’

‘ আমাকে চিনতে পেরেছেন?’

‘হুম ঊষা থ্যাংক ইউ সো মাচ। কালকে তুমি না থাকলে কি যে হত।’

‘আমি না থাকলেও কেউ নাই কেউ আপুকে ঠিক হসপিটালে নিয়ে যেতো। তাই চিন্তা করবেন না। আপু এখন কেমন আছে?’

‘আগের থেকে বেটার। ডক্টর বলেছে বিপদমুক্ত এখন।’

‘ও আচ্ছা। তখন তো দেখা করতে পারলাম না। আর জ্ঞান ফিরেছে শুনে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল তাই চলে এসেছি।হসপিটালে থাকবে আপু?’

‘কয়দিন থাকতে হবে!’

‘ওহ।’

‘হুম। আমাকে দোকানে যেতে হবে রাখছি।’

‘ আপনি কি এখনো হাসপাতালে?’

‘ হুম!’

‘আপনি কী হাসপাতালে থাকবেন?’

‘ না মা থাকবে আমি একটু পর চলে যাব।’

‘ ওহ আচ্ছা রাখছি।’

ফোন রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। খুব টেনশন হচ্ছিল। ফোন রেখে দিলাম। এখনো চোখ বন্ধ করলে আমার সেই রক্তাক্ত দৃশ্যটা মনে পড়ে আর শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। রক্ত দেখলে আমার ভয় লাগে। আর আজকে তো আপুটা রক্তাক্ত অবস্থায় আমার পাশে ছিলো। আমি যে কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোলে করেছিলাম আল্লাহ জানে। খুব ভয় পেয়েছিলাম। আপুটা সুস্থ আছে শুনে এখন ভালো লাগছে। কিন্তু আমি বোধহয় আজকে একা রুমে ঘুমাতে পারবো না। কেমন জানি লাগছে। আমি আম্মুকে ডেকে নিলাম। আজ আম্মুর সাথে ঘুমাবো। তাই হলো আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আর আমি আম্মুকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম।

হালকা পাতলা জ্বর দেখা দিলো ভয় থেকে।পরদিন বাসা থেকে বের হতে দিলো না। কিন্তু আমি বিকেলে একবার ইমা আপুকে দেখতে যাওয়ার বায়না করলাম।

‘আম্মু প্লিজ যেতে দাও না। এখন আমার শরীর একদম ঠান্ডা দেখো তুমি।’

‘তুই তো হসপিটাল সহ্য করিস না। ভয় পাচ্ছ তাও কেন যেতে চাইছিস আবার অসুখ বাধাবি নাকি।’

‘আম্মু বিলিভ মি আমার কিছু হবে না। কালকে তো ছিলাম দেখো আমি বেশি ভয় পাইনি। আমার আসলেই এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ে ওই ভয় থেকে রাতে জ্বর এসেছিল। কিন্তু এখন আমি একদম ঠিক আছি।’

‘তোকে নিয়ে পারি না চারটা বেজে গেছে সন্ধ্যা হয়ে যাবে তো!’

‘কিছু হবে না এখান থেকে বেশি দূর না তোমাকে বললাম তো। সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো।’

‘ ড্রাইভারও নাই তোর আব্বু গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি তুই জানিস। ড্রাইভার থাকলে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারতাম।’

‘ প্লিজ।’

‘ আচ্ছা যা। রাজি না হওয়া পর্যন্ত তুই কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতেই থাকবি। তার থেকে যা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি।’

‘ওকে থ্যাংক ইউ আম্মু।’

আম্মু রাজী হতেই ড্রেস চেঞ্জ করে নীল থ্রি-পিস বের করে পড়ে নিলাম ঝটপট। তারপর বেরিয়ে পড়লাম। রিকশা নিয়ে যেতে দশ মিনিট লাগবে। হসপিটালে ঢুকে সোজা ইমা আপুর কেবিনে চলে গেলাম। আশেপাশে কাউকে দেখলাম না। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। বেডের উপর ইমা বসে আছে আর তার সামনে সেম টু সেম ইমা আপুর কার্বন কঁপি দাঁড়িয়ে তার সাথে কিছু কথা বলছে। আপু ও তার দুর্বল গলায় একটা দুইটা কথা বলছে। আমি রসগোল্লার মত বড় বড় চোখ করে হা হয়ে তাকিয়ে আছি। দুইটা ইমা আপু। এটা কি করে সম্ভব? আমি কি চোখে ভুল দেখছি নাকি সত্যি? নাকি ভূত? ইমা আপুর মতো আরেকটা ভূত কি দাঁড়িয়ে আছে নাকি। এটা সিউর আমি নিশ্চিত। হসপিটালের বেডে যে শুয়ে আছে সে ইমা আপু। কারণ তিনি অসুস্থ। আর সুস্থ স্বাভাবিক ইমা ভূত।

তখন পেছন থেকে একটা পুরুষালী গলার আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকালাম। দেখি ইহান আমার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

‘আরে ঊষা! তুমি কখন এলে?’

আমি ঢোক গিলে বললাম,,”এইমাত্র।’

‘ও আপুর সাথে দেখা করতে এসেছ?’

‘ হুম।’

‘ভেতরে না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’

‘ভেতরের আমি যাব না। আমি ভূত দেখেছি।’

‘ হোয়াট?’

‘ ভেতরে দুই টা ইমা আপু একটা ভূত আপুর সাথে কি যেন কথা বলছে। আমি ভেতরে যাবো না। আমি চলে যাই। আমি ফোন করে জেনে নেবো আপুর খবর।’

‘ঊষা, আর ইউ ম্যাড! কি সব আবোল তাবোল বকছো! ভূত আসবে কোথা থেকে! তাও আবার এই দিনের বেলা। আর ভূত বলতে কিছু নাই ওকে। আজেবাজে বকা অফ করো।’

‘ আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না কেন? দাঁড়ান আমি আপনাকে দেখাচ্ছি!

বলে ঊষা ইহানের ডান হাতের বাহু শক্ত করে ধরে টেনে দরজা থেকে উঁকি দিয়ে বলল,

‘ ওই দেখুন দাঁড়িয়ে আছে ভূতটা। একদম ইমা আপুর মতো দেখতে।’ তোতলানো কন্ঠে বলল ঊষা। ভয়ে ওর শরীর থরথর করে কাঁপছে।

ইহান ঊষার কথা ও ওর অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে দিলো। ইহানের হাসির শব্দ শুনে ইমা ইলা দুজনে দরজার দিকে তাকালো চমকে।
ঊষা ভীতু মুখ করে একবার ভেতরে ইমা-ইলার দিকে তো একবার ইহানের দিকে তাকাচ্ছে।

‘কি হয়েছে আপনি পাগল ছাগলের মত হাসছেন কেন? আমি এখানে হাসির কি বললাম? এটা সিরিয়াস কথার মাঝে কেউ হাসে অদ্ভুত!’ রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলাম।

ইহান আমার হাত টেনে ইমা আপু ও ভূতের সামনে এনে দাড় করালো। আমি ভয়ে ইহানের হাতের শার্ট খামছে ধরলাম।

‘ ঊষা সি ইজ মাই সিস্টার ইলা।আর ইমা কে তো চিনোই। যাকে তুমি কালকে হসপিটালে ভর্তি করেছো।আর তোমার বাবা যাকে রক্ত দিয়েছিল। এরা দুজন টুইন। কোন ভুত-প্রেত না এত ভয় পাওয়ার কিছু নাই।’

বলেই আবার হেসে উঠলো। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। ইহানের হাত ধরেছিলাম দেখে আমি আরো লজ্জা পেয়ে দূরে সরে দাঁড়ালাম।ইলা মেয়েটা কপাল কুঁচকে আমাকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমি তার যাওয়ার দিকে আড় চোখে তাকালাম।এরা টুইন। আমার টুইন বেবি খুব পছন্দ কিন্তু এরা তো বড়।একদম সেম টু সেম একটুও অমিল নাই। এদের তো আমি কখনোই চিনতে পারবোনা। দুজনকে গুলিয়ে ফেলতাম।

ইমা আপু তখন আমাকে ডেকে তার পাশে বসতে বলল আমি গুটি গুটি পায়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম।ইমা আপুর সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম কি অমায়িক ব্যবহার। আর কি মিষ্টি হাসি। অসুস্থতার মাঝেও তিনি হেসেছে। আমাকে তো ছোটবোন বানিয়ে ফেলেছে। এত সুন্দর ব্যবহার আমিও তার গল্প করতে করতে সন্ধ্যা বানিয়ে ফেললাম। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পেলাম বাইরে অন্ধকার হয়ে আসছে। তা দেখে আমি লাফিয়ে উঠলাম বসা থেকে।রুমে আমি আর ইমা আপু গল্প করছিলাম এতক্ষণ। কখন দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনাই।

‘আপু আজ আসি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমাকে খুব বকা দিবে আম্মু। আম্মু সন্ধ্যার আগে ফিরতে বলেছিল। এখন আমি কিভাবে যাব। বাইরে তো অন্ধকার হয়ে আসছে। আযান কখন দিল আমিতো কিছুই শুনতে পেলাম না।’

‘আমি বুঝতে পারিনা! কিন্তু তুমি চিন্তা করো না দাড়াও আমি ইহান কে কল করছি।ও তোমাকে পৌছে দেবে।’

‘ তার দরকার নাই। আমি দেখি। একাই যেতে পারবো।’

‘না না তুমি একা গেলে আমার খুব চিন্তা লাগবে। তুমি বসো আমি ইহানকে কল করছি।’

আমার কথা শুনল না জোর করেই ইহান কে কল করে ডেকে আনলো। তারপর তার সাথেই যাওয়ার জন্য বললো।

#চলবে………

#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila

১১.

আজকে ইহানকে বাসায় যাওয়ার অফার করলাম কিন্তু কিছু বললো না।‌ যে রিকশায় এসেছি সেটায়‌ই চলে গেলো। আমি তাকিয়ে ছিলাম রিকশা যতক্ষণ ছিলো ততক্ষণ। চোখের আড়াল হতেই ভেতরে চলে গেলাম। আম্মু আজ আমাকে বকলো আমি চুপ করে বকা হজম করে নিলাম দোষ আমার তাই হজম তো করতেই হবে। ইহানের সাথে এক রিকশায় আসতে খুব অস্বস্তি লেগেছে। ইহান হয়তো তা বুঝতে পেরেছিলো তাই বলেছিলো,

‘ আমার সাথে এক রিকশায় যেতে তোমার প্রবলেম হলে ও যেতে হবে। কারণ এখন আমি আরেকটা রিকশা খুঁজতে পারবো না।’

আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি ইহানের কথায় আর উনি আমার দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি আমতা আমতা করে বলি,

‘ সমস্যা নাই। চলুন।’

বলেই আমি একদম কোনা ঘেঁষে বসে ছিলাম‌। রিকশা ছারতেই আমি কিনারায় বসার জন্য পড়ে যেতে নেয় তা দেখে ইহান আমার ডান বাহু চেপে ধরে টেনে নেয় নিজের দিকে আর বলে,

‘ প্রবলেম কি তোমার? রিকশার নিচে পরে মরতে চাও নাকি? একদিন ট্রাকের নিচে একদিন রিক্সায় নিচে যতসব ফালতু!’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ আমি মরতে চাইনি সেদিন কতো বার বলবো!’

‘ ভালো। তো এখন এমন করছো কেন? আমার সাথে গা ঘেঁষলে কি তোমার গায়ে ফোসকা পরবে নাকি?’

‘ না মানে আসলে…

আমি চুপ করে যাই। কি বলবো? উনার কাছে থাকলে যে আমার বুক ধুকপুক করে, হাত পা কাঁপে, অস্থির লাগে তা উনাকে কি করে বুঝাবো। ইহান আমাকে আর কিছু বললো না। আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।আমি কথা বললেও তিনি কিছু না বলে চলে গেলো।
স্কুল থেকে ও আমি আরো দুইবার গেছি হাসপাতালে। কিন্তু পরিবারের কারো সাথে তেমন দেখা হয়নি। ইহানের সাথেও না। একদিন ইমা আপুর বাবা ছিলো। তার সাথে হালকা কথা বলেছি। কথা বলার থেকে আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম বেশি।কারণ তিনি দেখতে একদম আমার আব্বুর মতো। আমি চমকে গেছিলাম। সেদিন বাসায় এসে রাতে আব্বুকে বললাম,

‘ জানো আব্বু আজ একদম তোমার মতো দেখতে একটা আঙ্কেল দেখেছি।’

আমার কথা শুনে আব্বু ও অবাক চোখে তাকালো। আমি বললাম,

‘ ওই সেদিন একটা আপুকে রক্ত দিয়েছিলে না। তার আব্বু তোমার মতো দেখতে অনেকটা।’

‘ ও আচ্ছা। এক রকম দেখতে অনেক মানুষ আছে এই পৃথিবীতে।’

‘ আমি ভেবেছিলাম যেন আমার কাকা ওটা। আচ্ছা আব্বু আমার কোন কাকা, দাদা দাদী নাই?’

‘ আছে থাকবে না কেন?’

‘ সত্যি তাহলে আমি তাদের চিনি না কেন?’

‘ একটা ঝামেলায় তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ নাই মা!’

‘ কি ঝামেলা আব্বু?’

‘ অন্য একদিন বলবো এখন যাও ঘুমাও।’

‘ আচ্ছা।’

এসব বিষয়ে যতবার জিজ্ঞেস করেছি এক কথায় বলেছে আব্বু। কিন্তু পরে আর কিছু জানায় নি।
ফেসবুক লগইন করে ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বললাম কিছুক্ষণ তারপর কি মনে করে যেন ইহানের নাম করে সার্চ করলাম আর পেয়েও গেলাম তার আইডি। আইডি চেক করলাম। প্রোফাইলে পিক নীল শার্ট পরে স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সানগ্লাস। হাতে ঘড়ি, ব্রাউন রঙের প্যান্ট। আমি এক দৃষ্টিতে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থেকে অফ লাইন হয়ে গেলাম।

কয়েকদিন পর

রিমঝিম আপুর বিয়ে। রিমঝিম হচ্ছে আমাদের ফ্রেন্ড রিমার বড় বোন‌। বিয়েতে দাওয়াত করলো আমাদের ফ্রেন্ড সবাইকে গায়ে হলুদ থেকে। আমি রাজি আছি শুধু সমস্যা বাবা মা কে নিয়ে তারা থাকতে দিবে ত? রিমা কে বললাম তুই আম্মুকে রাজি করা প্লিজ। আমরা বিয়ে অনুষ্ঠানে খুব পছন্দ তাই যাওয়ার আগ্রহ অনেক।তুলি তো যাবেই আমিও রাজি বাকিরা সিউর নাই। রিমা আমার সাথে বাসা গিয়ে আম্মু কে কার্ড দিলো আর অনেক অনুরোধ করলো রাজি হতে। আম্মু রাজি হলো না। আমি মন খারাপ করে র‌ইলাম। তিন দিন পর গায়ে হলুদ। আমার যাওয়া হবে না। আম্মু বলেছে বিয়ের দিন সকাল গিয়ে বিকেলে আসবো। আমার ভালো লাগছে না।
রুমে এসে মন খারাপ করে র‌ইলাম। রাতে আমি মুখ গোমড়া করে র‌ইলাম। পরদিন ও আব্বু তা দেখে জিজ্ঞেস করলো আমার মন খারাপ কেন? আমি বলে দিলাম আর এবার আম্মুর জায়গায় আব্বু রাজি হলো আমাকে অবাক করে দিয়ে।আমি আব্বুকে জরিয়ে ধরে ধন্যবাদ দিলাম। একটা সুন্দর
গিফট কিনলাম।‌‌এদিকে রিমা ওর আব্বুকে দিয়ে আমার আব্বুর সাথে কথা বলিয়ে ছে। একদিন আগেই রিমা এসেই আমাকে নিয়ে গেলো। তুলি কাল আসবে ও ফুপির বাসায় গেছে নাকি।
রিমঝিম আপু ও বাসার সবার সাথে পরিচয় হলাম। সবাই খুব মিশুক আর ভালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সাথে মিশে গেলো যেন আমি তাদের বাড়ির মেয়ে আমিও তেমন করেই চলছি।
বাসায় অনেক আত্মীয় স্বজন আছে। অনেকে ভালো আবার অনেক ঝামেলা জনক। একজন আছে সারা ক্ষণ চিৎকার করতে থাকে সব কিছু নিয়ে। রিমঝিম আপু এই চেঁচামেচি তে তার হবু বর সাইদ ভাই এর সাথে কথা বলতে পারছে না তাই আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে এলো। আপুদের বাসার সাথে একটা খেলার মাঠ আছে সেখানেই বিয়ের আয়োজন হবে। আমি সেই মাঠের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে পরিচিত কাউকে দেখছি। কিন্তু কে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছি পারছি না। আপু কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাচ্ছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আবার মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখি নাই। কোথায় গেলো? খয়রে কালারের টি-শার্ট ছিলো। আমি উঁকি ঝুঁকি মেরে খুঁজছি তখন একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে কানে। আমি চমকে পেছনে তাকায়। আমার সামনে দাড়িয়ে আছে ইহান। আমি ভয় পেয়ে বুকে ফূ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলি,

‘ আপনি এখানে কি করছেন?’

‘ আমার ও তো এক‌ই প্রশ্ন তুমি এখানেই কি করছো? ‘

‘ রিমার আমার ফ্রেন্ড। সেই সুবাদে!’

‘ ওহ আচ্ছা। তা আমার দিকে ওমন হা করে তাকিয়ে ছিলে কেন?’ ভ্রু কুঁচকে বললো।

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ কি বলছেন? আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম কখন?’

‘ এই মাত্র ওই মাঠে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে না তুমি?’

‘ আপনি ওইখানে ছিলেন?

বলেই ইহানকে ভালো করে দেখলো। খয়ের টি শার্ট ওনার গায়ে তার মানে উনি‌ই ওখানে ছিলো। আর আমার কাছে চেনা চেনা লাগছে। আমি তো বুঝতেই পারিনি।

রিমঝিম আপু এগিয়ে এসে বলল, ‘ ভাইয়া তুমি এখানে কি করছো?’

‘ কিছু না। আর তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস যা রুমে যা। দুইদিন তর সইছে না!’

রিমঝিম আপু লজ্জা লাল হয়ে গেলো আর আমাকে টেনে নিচে চলে এলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম ইহান উনার কি হয় বললো খালাতো ভাই।আমি ওহ আচ্ছা বলে বিছানায় পা গুটিয়ে বসলাম।
রিমা কি জানি কাজ করছে একটু পর এসে আমাকে নিয়ে খেতে গেলো। ইহান একপাশে বসে গপাগপ খাচ্ছে আমাকে তার সামনাসামনি বসতে হলো পাশে রিমা। আমি তার সামনে খেতে লজ্জা পাচ্ছি তাই খেতে পারছি না। একটু পর পর ইহানের দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু ইহান একমনে খেয়ে যাচ্ছে। একবারও আমার দিকে বা আশেপাশে কোন দিকে তাকাচ্ছে না। আমি ভাতের মধ্যে শুধু আঙ্গুল চালাচ্ছি খেতে পারছি না তাই রিমা বলে উঠলো,

‘এই ঊষা খাচ্ছিস না কেন তাড়াতাড়ি খা। ঘুমাবো বারোটা বাজতে চলল প্রায়।’

ইহানসহ টেবিলের সবাই আমার দিকে তাকালো আমি ঢোক গিলে শুকনা ভাতে মুখে পুরে নিলাম। তা দেখে ইহান বললো,

‘বান্ধবীকে শুকনো ভাত দিয়ে রেখেছিস শুধু তরকারি দে ইডিয়েট।’

রিমা আমাকে গোস্ত মাছ সবকিছু দিয়ে দেখিয়ে বলেছে নিয়ে খেতে কিন্তু আমি নিজেই নিয়ে নি। এবার ইহানের কথা শুনে আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল ,

‘তোকে না ইচ্ছামতো নিয়ে খেতে বললাম কিছুই নিস নি কেন?’

বলেই চিংড়ি মাছ দিতে এলে আমি তাড়াতাড়ি প্লেট সরিয়ে বললাম, ‘চিংড়ি দিস না।’

‘কেন চিংড়িতে কি হইছে খুব টেস্টি হয়েছে খেয়ে দেখ!’

‘আমি চিংড়ি খাইনা! আমাকে অন্য কিছু দে!’

‘কি এত মজা চিংড়ি তুই খাস না! মিস করলি।’

বলেই গরুর দোস্ত দিলো। ইহান আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলো।
আমি গোস্ত দিয়ে গেয়ে নিলাম চলে এলাম রুমে আর ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।

#চলবে……