এক চিলতে রোদ ২ পর্ব-০৭

0
515

#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila

৭.

হুট করেই লক্ষ্য করলাম ছেলে গুলো আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টি তাকিয়ে এগিয়ে আসছে। আমি তা দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। এখানে আর একা দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না। ভয়ে আমি ইহান যে দিক দিয়ে গেছে সেদিকে হাঁটা ধরলাম আর আমি মেলার ভেতরে ঢুকে গেলাম। মেলায় ঢুকেই আমার ভয় একটু কমলো কারণ এখন মানুষের অভাব নাই। এতো মানুষের মধ্যে নিজের ভয় কমলো। কিন্তু হাঁসফাঁস লাগছে নড়া যাচ্ছে না।খালি ধাক্কা খেতে হচ্ছে আমি সবার মাঝেই তুলিকে খুঁজে চলেছি কোথায় আছে ওরা। একবার দেখা পেলে তো স্বস্তি পাবো। ইহান কেও দেখছি না। আমি একটা দোকানে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ওদের খুঁজছি। দোকানে অনেক মানুষ ছেলে মেয়ে বয়স্ক সবাই আছে। তারা কেনাকাটা করছে আমি এক পা পিছিয়ে এলাম আমার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কানের দুল দেখছে আমি ও তাকালাম। তিনি লাল পাথরে দেখছে কিন্তু আমার তার হাতের নীল পাথরের দুলটা খুব পছন্দ হলো। উনি লাল ঝুমকাটা হাতে নিয়ে বাকিগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছিলো। তা দেখে আমি নিলাম হাতে আর দুলটা নিজের কানে দিয়ে দেখতে লাগলাম। খুব পছন্দ হয়েছে ব্যাগ থেকে টাকা দিয়ে আয়নার আবার তাকাতেই চমকে উঠলাম। আমার পেছনে সেই ছেলে তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। আর একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ছেলে গুলো কে দেখেই আমার হাত কাঁপতে লাগলো। আয়না সরিয়ে পেছনে তাকাতেই তারা দাঁত কেলিয়ে হাসলো। আমি ঝুমকা ব্যাগে রেখে সামনে পা বাড়ালাম। বুকে হাত গুজে হাঁটছি। আড়চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখছি তারা এখনো আমার পেছনেই আছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। ফুলের দোকানের কাছে এসে থামলাম। ছেলেগুলো আমার থেকে কিছুটা দূরে থামলো। আমি ভয়ার্ত চোখে সামনে তাকিয়ে আছি হঠাৎ করেই ইহানকে তিন দোকান সামনের সানগ্লাস এর দোকানে দেখলাম। সাথে তার বন্ধুরা তিনি চিন্তিত হয়ে কিছু বলছে তাদের। আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আচ্ছা উনি কি আমাকে খুঁজছে নাকি! উনার ফ্রেন্ডরা সানগ্লাস কিনছে আর উনি কাউকে খুঁজছে আমি সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠলাম। কিন্তু এতো মানুষ আর চেঁচামেচি এর মধ্যে আমার কথা হয়তো উনার কানে গেলো না। আমার ব্যাগ টেনে ধরেছে কেউ আমি পেছন ঘুরে তাকালাম। একটা ছোট বাবু আমার ব্যাগের পুতুল ধরে টানছে। আমি স্বস্তি পেলাম যেন।‌ভেবেছিলাম ওই খারাপ ছেলেগুলো।
আমি তারাতাড়ি সামনে তাকালাম কিন্তু এখন ইহান সেখানে নেই। আমার মাথায় হাত এবার কোথায় গেলো? এদিকে ভীড়ের মধ্যে আটকে পরেছি আমি বের হতে পারছি না। এবার আমার কান্না পাচ্ছে।‌গলা শুকিয়ে আসছে।‌তুলির জন্য আমাকে আবার বিপদে পরতে হলো। এখন এতো বড় মেলায় ওদের কোথায় পাব। আর কাউকে এখানে খুঁজে পাব না। আমাকে মেলা থেকে বের হতে হবে।

তুলি ইহান কে কল করছে কিন্তু ইহান কল রিসিভ করছে না। পাঁচটার উপরে বাজে। এবার যেতে হবে সবাই বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। তুলি একবার ঊষা কে তো একবার ইহানকে কল করছে।
ঊষার যদি কিছু হয় না না কেন যে ওকে ওই ছেলেটার কাছে রেখে গেলাম। এদিকে এক অটো চলে গেলো। রাত হয়ে আসছে। এটাও যাবার জন্য তারা দিচ্ছে কিন্তু তুলি যেতে পারছে না। ঊষাকে রেখে কি করে যাবে?

সবাই টেনেই তুলিকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। তুলি এবার কান্না করে দিলো চিন্তায়। তখন ইহান কল করলো,

‘ হ্যালো! ভাইয়া ঊষা কোথায়? আপনাকে এতো কল করলাম রিসিভ করলেন না কেন? আমরা আপনাদের না পেয়ে তো বাসায় চলে আসছি। আপনি প্লিজ ঊষাকে ওর বাসায় দিয়ে আসবেন দয়া করে। ওকে রেখে যাওয়ার আমার কোন ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু সবাই রাত হয়েছে বলে জোর করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে‌। আমি আপনাকে বিশ্বাস করে ঊষাকে রেখে গেলাম ওর বাড়িতে একটু পৌঁছে দিবেন প্লিজ।’

‘ আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না।রাখছি।’

ইহান তুলিকে কল করেছিলো ঊষা ওদের কাছে কিনা জিজ্ঞেস করতে কিন্তু এই মেয়ে তো ওদের কাছেও নাই। কোথায় গেলো। একটু দাঁড়াতে বলেছিলাম আর কোথায় চলে গেলো? কেন যে ওকে ওখানে রেখে গেলাম। এখন যদি কোন ক্ষতি হয় তাহদে আমি নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবো না।

‘ এই ইহান যাবি না।’

‘ তোরা যা আমি আসছি।’

বলেই ইহান আবার মেলায় ঢুকে গেলো। আবার সেই জায়গায় গেলো নাই। ঊষার নাম্বার ছিলো ওর কাছে তাই কল করলো কিন্তু রিং হচ্ছে নো রিসিভ।

গাছের আড়ালে লুকিয়ে আছি। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে আবসা আলোতে দেখলাম ছয়টার উপরে বাজে একটু পর আযান দিবে। আমি বের হবো কি করে এই ছেলেগুলো লুকিয়ে। ভয়ে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। মুখে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।

কারো সারা শব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে বের হয়ে উল্টো দিকে দৌড় দিলাম। কিছু দূর আসতেই কারো বুকের সাথে জোরে ধাক্কা খেয়ে কপাল ডলতে লাগলাম।
মেলার লাইটিং এ ইহানকে চিন্তে আমার ভুল হলো না। উনাকে দেখে আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। উনার বাহু খামচে ধরলাম শক্ত করে।

‘ ঊষা তুমি এখানে কি করছো? আর এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন? কি হয়েছে?’

আমি ফুপাতে ফুপাতে বললাম, ‘ ওই….

বলে সামনে আঙুল দিয়ে সম্পূর্ণ কথা শেষ করবো তার আগেই ছেলে তিনজন এগিয়ে এলো।
আমি তাদের দেখে ইহানের পেছনে চলে গেলাম। আর তার পিঠের শার্ট খামচে ধরলাম। এবার আর ইহান কিছু জিজ্ঞেস করলো না ও যা বুঝার বুঝে গেছে।

ছেলে গুলো এগিয়ে এসে বাজে কথা বলতে লাগলো আর ইহান কে চলে যেতে বললো। ইহান ওদের কথায় কিছু বললো না। একজন সাহস কর আমার কাছে এগিয়ে আসে আমাকে স্পর্শ করতে চাইলো আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। ইহান কিছু বলছে না কেন?
আমার হাত ধরে টান দিতে যাব তখন ইহান ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে বাকি দুজনের উপর ফেলে দিলো। আর তরিৎ গতিতে আমার বাম হাত ধরে দৌড়াতে লাগলো। সাথে আমিও বোকার মতো দৌড় দিলাম। পেছনে ফিরে তাকিয়ে ছিলাম একবার ছেলেগুলো ও দৌড়াচ্ছে। আমরা মেলায় এসে থামলাম। ইহান আমার হাত ছেড়ে দিয়ে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আমার মাথা ঘুরছে। কতোক্ষণ ধরে না খেয়ে আছি এজন্য আমি ক্লান্ত সাথে ক্ষুধার্ত।

‘ আর ইউ ওকে?’

আমি বললাম, ‘ আমাকে তুলিদের কাছে নিয়ে চলুন প্লিজ। খারাপ লাগছে আমার।’

‘ ওরা তো চলে গেছে।’

‘ কিহহ তাহলে আমি কিভাবে যাব। আমাকে একা রেখে ওরা চলে গেলো কেন?’

‘ চিন্তা করো না। আমি পৌঁছে দিবো। এবার বলো তো এসব কি হচ্ছিল। তুমি ওখানে থেকে চলে গেছিলে কেন? কতো খুঁজলাম তোমাকে আমি জানো?’

‘ আমার খুব খিদে পেয়েছে এখন আমি কিছু বলতে পারবো না।’

‘ আচ্ছা চলো কিছু খেয়ে নেওয়া যাক।’

‘ ওরা আবার আসবে না তো। আমি বাসায় গিয়ে খাব কতো লেট হয়ে গেছে আম্মু চিন্তা করছে মনে হয়।’

‘ এতো বার কল করলাম ধরলে না কেন?’

‘ আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না। দয়া করে আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। আপনার সাথে এজন্য তখন আমি যেতে চাই নি। সব কিছু আপনার জন্য হয়েছে।’

‘ ওয়েট ওয়েট কি বললে তুমি এসব আমার জন্য হয়েছে?’

‘ হ্যা।’

‘ এজন্য কারো ভালো করতে নাই। এখন কে বাচালো আমি না আসলে কি হতো তোমার! ধন্যবাদ দেবে তা না দোষী সাব্যস্ত করছো!’

আমি কিছু বললাম না। উনি এক নিঃশ্বাস ফেলে বললো,’ চলো ‘

একটা ছেলের সাথে বাসায় যেতে হবে। তার উপর রাত হয়ে গেছে। আম্মু কতো চিন্তা করছে কে জানে। বাসায় গিয়ে আজ খুব কথা শুনতে হবে। আর তুলিও এভাবে আমাকে ফেলে চলে গেলো। একটু চিন্তা হলো না আমার জন্য। জোর করে নিয়ে এসে এখন ফেলে রেখে গেলো।
আমি উদাস হয়ে এসব ভাবছিলাম বাইরে দাঁড়িয়ে।

‘ এই যে ম্যাডাম উঠে আসুন তাড়াতাড়ি।’

সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। ইহান বাইকে বসে আছে। আমাকে এখন এই বাইকে উঠতে হবে নাকি।
অসম্ভব এই ছেলের সাথে আমি এক বাইকে কিছুতেই যাব না।

‘ দ্রুত করো।’

#চলবে…..