এক চিলতে সিঁদুর পর্ব-০৪

0
426

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়

ট্রি টেবিলের উপর চা রেখে ফিরে আসতে নিলেই নির্বণের সাথে ধাক্কা খায়৷ নিয়তি পড়ে যেতে নিলে নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিয়তিকে ধরে ফেলে৷ নিয়তি কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে নির্বণের অজান্তেই জড়িয়ে ধরে। নির্বণ স্নান শেষ করে টু কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়৷ নির্বণের মাথার চুল থেকে টপটপ করে নিয়তির মুখে জল পড়ছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি একটা নেশার ঘোরে চলে যাছে৷ নিয়তি নিজেকে সংযত করে বলে উঠে,
“এসব কি করছেন? ছাড়েন আমাকে?”
.
নিয়তি কথা শুনে নির্বণের ঘোর কাটে৷ নির্বণ কেন বারবার নিয়তি নামের মেয়ের প্রতি আসক্তি হয়ে পড়ে? কোন উত্তর নেই নির্বণের কাছে৷ নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে এক কদম পিছিয়ে দাঁড়ায়। নির্বণ নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে বলে উঠে,
“এতো তাড়া কিসের? সাবধানে কাজ করতে পারো না৷ আজ যদি ধাক্কা খেয়ে ফ্লোরে পড়ে যেতে৷ তখন তোমার এতো সুন্দর কোমর আর থাকতো না৷”
.
নিয়তি মুচকি হেঁসে,
“খালি গায়ে না থেকে ট্রি শার্ট পড়ে নেন৷ শীতের মাঝে খালি গায়ে থাকলে আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে৷”
.
নির্বণ নিয়তির দিকে ঝুঁকে,
“আমি খালি গায়ে থাকলে তোমার সমস্যা! আমি খালি গায়ে থাকবো, কোন কিছু গায়ে জড়াবো না৷”
.
বিরবির করে,
“অসভ্য লোক।”
“এটা আপনার ইচ্ছা৷ আপনার চা; ট্রি টেবিলের উপর রাখা আছে৷ আমার অনেক কাজ আছে৷ চা খেয়ে নিচে চলে আসেন। আমি সবার জন্য সকালের নাস্তা প্রস্তুত করছি৷”
______

খাবার টেবিলে সবাই খেয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি অন্যান্য সার্ভেন্টদের মতো খাবার পরিবেশন করে যাচ্ছে৷ নিয়তি তো কাজের মেয়ে৷ তাকে এতো এমন কাজ করতেই হবে৷ সেজন্য নিয়তি খারাপ কিছু মনে করেনি৷ তাছাড়া সবার খাওয়া হলেই নিয়তি খাবার খায়৷ অন্যকে খাওয়ানোর মাঝে নিয়তি তৃপ্তি পায়৷ নির্বণের মা নিয়তিকে বলে উঠেন,
“নিয়তি আমাদের সাথে খাবার খেয়ে নাও৷ আমাদের যা লাগবে আমরা নিজ হাতে নিয়ে খাবো৷”
.
নিয়তি নির্বণের মায়ের জবাবে কিছু বলার আগেই ছোঁয়া চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
“মা তোমার বুদ্ধি দিন দিন লুপ পেয়ে যাচ্ছে৷ তুমি একজন সার্ভেন্টকে আমাদের সাথে খেতে বসতে বলছো?”
.
নির্বণের মা কিছু বলতে নিবে তার আগেই নিয়তি বলে উঠে,
“না মা! আমি পরে খেয়ে নিব৷ আপনারা বরং খেয়ে নেন৷ ছোঁয়া তুমি বসে পড়ো৷ খাবার খেয়ে নাও৷”
.
সকলে নিয়তির খাবারের প্রশংসা করল। ছোঁয়ার খাবার শেষ করার পর বলে উঠে,
“আমার প্রিয় দিদি। আমার কাপড়গুলো ধোঁয়ে দিতে ভুল না যেন৷ আমার কাজে ভুল করলে তোমার জায়গা হবে রাস্তায়৷ এই বাড়িতে তোমার জায়গা হবে না৷”
.
নির্বণ নিয়তির দিকে তাকিয়ে উপরে চলে যায়। নির্বণ কোন প্রতিবাদ করল না৷ নিয়তি জানে সে এই বাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে এসেছে৷ কিন্তু কিভাবে সবার মনে জায়গা করে নিতে হয় তা নিয়তির ভালো করেই জানা আছে৷ নিয়তি মুচকি হেঁসে,
“ছোঁয়া আমি তোমার সব কাপড় পরিষ্কার করে দিব৷ তার আগে একটা গল্প শুনাবো তোমাকে।”
.
ছোঁয়া সোফাতে বসতে বসতে বলে উঠে,
“কি গল্প শুনাতে চাও৷ তুমি ভেবে নিও না তোমার গল্পে মুগ্ধ হয়ে আমি তোমাকে এই কাজ থেকে মুক্তি দিব৷”
.
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে,
“তোমাকে কিভাবে সোজা পথে আনতে হয় নিয়তি খুব ভালো করেই জানে? আমার সাথে লাগতে আসার ফল কি হতে পারে? এবার তুমি বুঝতে পারবে ছোঁয়া।”
.
ছোঁয়া ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে,
“কি হলো প্রিয় দিদি? আমার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলে৷ ওকে চলে যাচ্ছি৷ তুমি তোমার কাজ শুরু করে দাও৷ অল দ্যা বেস্ট।”
.
ছোঁয়া চলে যেতে নিলেই নিয়তি বলে উঠে,
“আমি এটাই ভাবতেছিলাম যে,’কোথা থেকে শুরু করবো।’ তুমি বসে পড়ো৷ আমি এখনই বলছি৷”
.
নিয়তি ফ্লোরের উপর বসে বলে উঠে,
“একটা রাজকন্যা ছিল৷ ঠিক তোমার মতোন৷ দেখতে তোমার মতোই অনেক সুন্দর ছিল৷”
.
নিয়তি গল্প শোনার জন্য অন্যান্য সার্ভেন্টরাও চলে আসে৷ রুপকথার গল্প কার না শুনতে ভালো লাগে৷ নিয়তিকে সবাই ঘিরে বসে যায়৷ ছোঁয়াও গালে হাত দিয়ে ঝুঁকে পড়ে গল্প শুনার জন্য৷ নিয়তি বলতে শুরু করে,
“রাজকন্যা অপরুপ সুন্দরের অধিকারী ছিল৷ যেমনই তার রুপ ছিল তেমনই ছিল তার তেজ৷ কাউকে সে ছেড়ে কথা বলতো না৷ রাজ্যের প্রজাদের অনেক অত্যাচার করতো৷ রাজকন্যার অত্যাচারে সকলে মরিয়া হয়ে উঠে৷ কেউ রাজকন্যাকে সহ্য করতে পারতো না৷ প্রজারা ঠিক করে রাজকন্যাকে মেরে ফেলবে৷”
.
নিয়তি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে ছোঁয়া মন দিয়ে গল্প শুনছে৷ নিয়তি মুচকি হেঁসে মনে মনে বলে উঠে,
“ছোঁয়া তুমি আমার ফাঁদে পা দিয়ে দিছো? এখন তোমার অবস্থা আমি নাজেহাল করে ছাড়বো৷ তোমাকে সঠিক পথে আমি নিয়ে আসবো৷ তোমার সকল ভুল চিন্তা ধারণার পরিবর্তন আমি ঘটাবো।”
.
ছোঁয়া বলে উঠে,
“কি হলো? থেমে গেলে কেন? তারপর রাজকন্যার কি হলো?”
.
নিয়তি সকলের দিকে একবার তাকিয়ে,
“আমি একটা শর্তেই বলতে পারি৷ আমার শর্তে রাজি থাকলে আমি বলবো।”
.
সকলে এক সাথে বলে উঠে,
“কি শর্ত? আমরা সবাই রাজি আছি৷”
.
শর্তাটা হলো এই যে, “গল্প শেষ না হওয়া অব্দি কেউ এখান থেকে উঠতে পারবে না৷ ভুত এসে তোমাদের তুলে নিয়ে গেলেও না৷”
.
ভুতের কথা বলাতে সবাই গল্পের প্রতি আরো ইন্টারেস্ট হয়ে পড়ে৷ সবাই একটু এগিয়ে বসে৷ এক সাথে বলে উঠে,
“কোথাও যাব না৷ তুমি গল্পটা বলে যাও৷”

নিয়তি মুচকি হেঁসে পুনরায় বলতে শুরু করে,
“তারপর প্রজারা ঠিক করে রাজকন্যাকে মেরে ফেলবে৷ কিভাবে মেরে ফেলবে কোন উপায় পায় না? গ্রামের লোকজন রাতে ভুত সেজে রাজকন্যাক ভয় দেখাতে গেলো৷ কিন্তু রাজকন্যা ভুতকে ভয় না পেয়ে ভুতের দিকে তীর ছুঁড়ে মারে৷ কোনরকম জীবন বাঁচিয়ে চলে আসে। সকলে হতাশা হয়ে পড়ে৷ কথায় আছে না, ‘যেখানে শেষ সেখান থেকেই শুরু।’ কোন উপায় না পেয়ে ধোপানীর মেয়ে বলে উঠে,
” রাজকন্যাকে শাস্তি আমি দিব৷” ধোপানীর মেয়ের কথা শুনে প্রজারা হাসাহাসি শুরু করে৷ তাকে নিয়ে বিভিন্ন বাজে কথা সহ উপহাস করতে থাকে৷ কিন্তু ধোপানীর মেয়ে তাদের কথা কান না দিয়ে বলে উঠে, “আমি নিন্দুকের কথায় কান দেয় না৷ রাজকন্যাকে তার শাস্তির সঠিক জবাব দিব এটাই আমার মূল কাজ৷”
ধোপানীর মেয়ের আত্নবিশ্বাস দেখে সকলে তার কথা মেনে নেয়৷ বিশ্বাস না করা ছাড়া তাদের কোন উপায় ছিল না৷ কিছুতেই অত্যাচারী রাজকন্যাকে হারানো যাচ্ছিল না৷ ধোপানী মেয়ে প্রতিদিনের মতো রাজ বাড়িতে যায়৷ সেদিন শুরু রাজকন্যার পোশাক নিয়ে আসে পরিষ্কার করার জন্য৷ ধোপানীর মেয়ে রাজকন্যার সকল পোশাক অনেক সুন্দর ভাবে পরিষ্কার করে৷ যেন রাজকন্যা তার পোশাক দেখে পোশাকের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ে৷ ধোপানীর মেয়ে সকল পোশাক পরিষ্কার করার পর পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে বিছুটি পাতার গুঁড়ো লাগিয়ে দেয়৷ যেই মুহুর্তে রাজকন্যা সেই পোশাক পড়বে তখন যেন রাজকন্যার শরীর চুলকাতে থাকে৷ ধোপানীর মেয়ে সুন্দরভাবে সন্ধ্যার দিকে রাজকন্যার পোশাক দিয়ে আসে৷ খুব নিখুঁতভাবে পোশাকগুলো পরিষ্কার করাই রাজকন্যা খুব খুশি হয়৷ খুশি হয়ে রাজকন্যা পোশাকগুলোর মাঝখান থেকে একটা গর্জিয়াস পোশাক পড়ে নেয়৷ পোশাক পড়ার সাথে সাথে সারাদেহ চুলকানো শুরু হয়ে যায়৷ রাজকন্যার সুন্দর দেহগুলো ঝলসে পড়ে৷ মায়াবী চেহারা একদম বাজে হয়ে যায়৷”
.
নিয়তি কথা শেষ করে ছোঁয়ার কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে পা এগিয়ে যেতে থাকে৷ ছোঁয়া তাড়াতাড়ি করে নিয়তির পথ আটকায়৷ নিয়তি বলে উঠে,
“তুমি আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন?”
.
“তোমাকে আমার পোশাক পরিষ্কার করতে হবে না৷ আমি আমার পোশাক নিজেই পরিষ্কার করে নিব৷”
.
ছোঁয়া ভয় ভয় চেহারা দেখে নিয়তি মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“আমার কাছেও বিছুটি পাতার গুঁড়ো আছে৷ ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷ আজ তোমার পোশাকে কোন বিছুটি পাতার গুঁড়ো লাগিয়ে দিব না৷”
.
ছোঁয়া নিয়তির হাত থেকে তার পোশাক কেঁড়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে,
“আমি বললাম না আমার পোশাক আমি ধৌত করবো। যাও অন্য কাজ করো৷”
.
“তোমার তো এসব কাজ করার অভ্যাস নেই৷ তুমি পাড়বে না। তোমার হাতে ফোস্কা পড়ে যাবে৷ আর এসব পোশাক ওয়াসিং মেশিনে ধৌত করা যাবে না৷
.
“আমার পোশাক নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না৷ যাও এখান থেকে৷”
.
নিয়তি মুচকি হেঁসে ছোঁয়ার সামনে থেকে চলে আসে৷ নিয়তি যা চেয়েছিল সে তা করতে পেরেছে৷ নিয়তির হাসি দেখে মনে হচ্ছে নিয়তি বিশ্ব জয় করে ফিরে এসেছে৷ সকল সার্ভেন্ট এসে নিয়তির পাশে দাঁড়ায়। সকলে নিয়তির প্রশংসা করতে থাকে৷ সবাই বলতে থাকে,
“ছোঁয়া এতোগুলো কাপড় কিভাবে পরিষ্কার করবে? তা এবার দেখার পালা৷”
.
“হুম আমিও দেখবো ছোঁয়া কিভাবে এতোগুলা কাপড় পরিষ্কার করে৷”
.
সবাই ওয়াসরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে দেখতেছে ছোঁয়া কি করে? ছোঁয়া নিজের কাপড়গুলো ভালোভাবে পানিতে ভেজাতেই পারছে না৷ অনেক কষ্ট করে সবগুলো কাপড় সাবানের পানিতে ভিজিয়ে নেয়৷ ইউটিউব দেখে দেখে কাপড় পরিষ্কার করার ট্রেনিং নিচ্ছে৷ কাপড়ের উপর সাবান লাগাতে গিয়ে কাপড়ের পড়ে পড়ে যায়৷ যা দেখে সবাই হেঁসে উঠে৷ ছোঁয়া আর পারছে না। না পারছে ভালোভাবে কাচতে না পারছে ভালোভাবে ধৌত করতে৷ ছোঁয়ার এমন নাজেহাল দেখে সকলে বিনোদন নিয়ে যাচ্ছে৷ ছোঁয়া সকলের হাসি দেখে ওয়াসরুমের দ্বার বন্ধ করে দেয়৷
______

নিয়তি নির্বণের পছন্দের সব খাবার রান্না করে৷ নির্বণের মায়ের কাছ থেকে নির্বণের অফিসের ঠিকানা নেয়৷ নিয়তি একা চলে যেতে নিলে নির্বণের মা বাড়ির গাড়িতে করে যেতে বলেন৷ নিয়তি নাকচ করে দিলেও জোর করে বাড়ির গাড়িতে করে পাঠিয়ে দেন৷ নিয়তি নির্বণের অফিসের সামনে এসে এক কলিকের কাছ থেকে নির্বণের কেবিনের সন্ধান নেয়৷ নিয়তি নির্বণের কেবিনে এসে কেবিনের দ্বার শব্দ করে রুমে ঢুকতেই…. রহস্য খুঁজে পায়৷

চলবে….