এক চিলতে সিঁদুর পর্ব-০৬

0
351

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৬
#অধির_রায়

নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে। নিয়তি চকিত হয়ে নির্বণের দিকে তাকায়৷ নিয়তির চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ নিয়তি আমতা আমতা করে বলে উঠে,
“আপনি এখনো ঘুম আসেননি৷ আপনি জেগে আছেন?”
.
নির্বণ বিছানা থেকে উঠে,
“হুম আমি জেগে আছি৷ কিন্তু তুমি আমার রুমে কি করছো?”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আপনার গায়ে কম্বল দিতে এসেছিলাম। আপনি তো কম্বল গায়ে না দিয়েই শুয়ে ছিলেন৷”
.
নিয়তিকে চারিদিকে ঘুর ঘুর করে,
“আমার খেয়াল রাখার জন্য তোমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়নি৷ তুমি এখানে কাজের লোক হয়ে এসেছো৷ তুমি তোমার লিমিটের মাঝে থাকো৷ সীমা পার করার চেষ্টা করো না৷”
.
নিয়তি মাথা নিচু করে,
“বাহিরে এখন অনেক শীত৷ গায়ে কম্বল জড়িয়ে না ঘুম আসলে আপনার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে৷”
.
নির্বণ মুখ ভেংচি কেটে,
“আমার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে কিন্তু তোমার গায়ে কোন শীতের পোশাক নেই৷ সেজন্য বুঝতে পারছো রুমে কোন শীত নেই৷”
.
“না মানে… সত্যিই তো রুমে কোন শীত নেই৷”
.
নিয়তি কথা কাটিয়ে তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে নিলেই নির্বণ আবারও নিয়তির হাত ধরে টান দেয়৷ নিয়তি নিজেকে কন্টোল করতে না পেরে নির্বণের উপর পড়ে যায়৷ নিয়তি খোলা কেশগুলো নির্বণের সমস্ত মুখের উপর পড়ে৷ নিয়তি তাড়াতাড়ি করে নির্বণের উপর থেকে উঠে যায়৷ অদূরে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
“প্লিজ আমাকে টার্চ করবেন না৷ যে আমার হাত সারা জীবন ধরে রাখতে পারবে একমাত্র সে লোককেই আমি আমার হাত ধরার অনুমতি দিব৷”
.
নির্বণ কোন কথা না বলে নিয়তির হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসে৷ নিয়তি চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে৷ এখন রাত ৮ টা বাজে। সকলের তাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি নির্বণকে রাতে খাওয়ার জন্য ডাকতে গিয়েছিল৷ নির্বণ ক্লান্ত হয়ে শুয়ে ছিল৷ নিয়তি ভেবেছিল নির্বণ ঘুমিয়ে আছে৷ কম্বল গায়ে জড়িয়ে দিতে গিয়েই নিয়তির এমন অবস্থা। নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিয়তিকে বাহিরে নিয়ে আসে৷ নির্বণ কিছু বলতে নিবে তার আগেই নিয়তি বলে উঠে,
“প্লিজ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না৷ আমি এমন ভুল আর কখনো করবো না৷”
.
নির্বণ গাড়ির দ্বার খোলে দিয়ে,
“গাড়িতে উঠে বসো৷”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“গাড়িতে কোথায় যাব৷ আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন না তো৷”
.
নির্বণ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তোমাকে গাড়িতে উঠতে বলেছি৷ গাড়িতে উঠে বসো৷”
.
নিয়তি একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে। নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে নিয়তিকে কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে দেয়৷ নির্বণ গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করে দেয়৷ নিয়তি কান্না করতে করতে বলে উঠে,
“প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না৷ আমি এমন ভুল আর করবো না৷ আমি আপনার রুমে আর কোন দিন যাব না৷”
.
নির্বণ নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আর একটা কথাও বলবে না৷ চুপচাপ বসে থাকতে পারো না৷”
নিয়তির দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে,
“চোখের জল মুছে নাও৷ এক ফোঁটাও যেন চোখ থেকে জল না বের হয়৷”
.
নিয়তি কোন কথা না বলে কেঁদে যাচ্ছে৷ নির্বণ গাড়ি নিয়ে বড় একটা শপিং মলে দাঁড় করায়৷ নিয়তি কিছুই বুঝতে পারছে না৷ গাড়ি শপিং মলে কেন নিয়ে আসলো? নিয়তি আবুলের মতো নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বণ নিয়তিকে নিজের সাথে করে শপিং মলের ভিতরে নিয়ে যায়৷ নিয়তি চকিত হয়ে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বণ নিয়তিকপ শপিং মলে নিয়ে এসে বলে উঠে,
“তোমার শীতের পোশাক যেগুলো পছন্দ হয় সেগুলো নিয়ে নাও৷”
.
নিয়তি আমতা আমতা করে বলে উঠে,
“কার জন্য শীতের পোশাক পছন্দ করবো৷ আমি তো কারোর পছন্দ জানি না৷”
.
নির্বণ মাথায় হাত দিয়ে,
“কার জন্য মানে? আমার জন্য শীতের পোশাক পছন্দ করো৷”
বিরবির করে বলে উঠে,
“মেয়েদের নিয়ে একটাই সমস্যা। তার শীতের পোশাক নেই সেজন্য নিয়ে আসলাম৷ এখন বলছে কার জন্য শীতের পোশাক কিনবে।”
.
নিয়তি একটু দূরে দাঁড়িয়ে মনে মনে,
“আপনার শীতের পোশাক নেই আগেই বললেই পারতেন। সেগুলো না বলে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে আসলেন৷ আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
.
নিয়তি নির্বণের জন্য কয়েকটি জ্যাকেট পছন্দ করে৷ কাউন্টারে জ্যাকেট নিয়েই আসতেই নির্বণের চোখ রসে গোল্লার মতো বড় হয়ে গেছে। নির্বণ চকিত হয়ে,
“তুমি ছেলেদের পোশাক পড়বে।”
.
নিয়তি চোখ বড় করে,
“আমি ছেলেদের পোশাক পড়তে যাব কেন? এগুলো তো আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। ”
.
নির্বণ দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে উঠে,
“আমি আমার জন্য নিয়ে আসতে বলেছি৷”
.
“একটু আগে তো আপনিই বললেন আপনার শীতের পোশাক নেই৷ আর আপনার জন্য শীতের পোশাক পছন্দ করতে বললেন৷”
.
নির্বণ নিজের কপালে আঙ্গুল গিয়ে দুই দিকে স্লাইড করে বলে উঠে,
“তোমার বুদ্ধি কি হাঁটুর নিচে? কিছুই বুঝতে পারো না৷ আমি তোমার জন্য শীতের পোশাক নিতে বলেছি৷”
.
নিয়তি চকিত হয়ে,
“আমার জন্য মানে? আমার শীতের পোশাক তো আছেই৷ আমার কোন শীতের পোশাক লাগবে না৷”
.
নির্বণ কিছু না বলে নিজেই নিয়তির জন্য পোশাক পছন্দ করতে থাকে৷ নিয়তি দাঁড় করিয়ে দেখক তার সাইজে ঠিক আছে কিনা৷ নিয়তি দু’চোখ ভরে নির্বণকে দেখে যাচ্ছে৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে,
“আপনি আমার এতো খেয়াল রাখছেন৷ কিন্তু আমাকেই মেনে নিতে পারছেন না৷ আমাকে একবার ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নেন৷ কোনদিন আপনাকে ছেড়ে যাব না৷
________

ছোঁয়া মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“আমি খুব খুশি হয়েছি৷ আজ এই নিয়তিকে দাদা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করেই ছাড়বে৷ মনে হয় দাদার রুমে পারমিশন ছাড়া ঢুকেছে৷”
.
নির্বণের মা উঁচু স্বরে বলে উঠেন,
“তোমার মুখে বাজে কথা ছাড়া অন্য কিছু আসে না৷ তুমি যেমন সবাইকে তুমি তাই ভাবো৷”
.
ছোঁয়া কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
“মা তুমি তোমার নীতির কথা বন্ধ করো৷ তুমি দাদাকে এখনো চিনতে পারোনি৷ দাদা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ছোঁয়াকে বের করে দিবে৷”
.
নির্বণের মা উঁচু স্বরে,
“মুখে লাগাম দাও৷ তোমার মাথা থেকে বাজে চিন্তা দূর করে দাও৷ তোমার চিন্তা ধারণা খুব নিম্ন৷”
.
ছোঁয়া কর্কশ কন্ঠে,
“মা তোমার কাছে কাজের মেয়েটা বড় হয়ে গেল। আমি তোমার কাছে কেউ না৷ তুমি আমার কথা না ভেবে তুমি কাজের মেয়ে নিয়তিকে নিয়ে ভাবছো৷”
.
ছোঁয়া রাগ দেখিয়ে খাবার টেবিল থেকে চলে যায়৷ অন্য একজন সার্ভেন্ট এসে বলে উঠে,
“ছোট সাহেব নিয়তিকে গাড়ি করে কোথায় জানি নিয়ে গেছে৷”
.
নির্বণের মা চকিত হয়ে,
“কোথায় নিয়ে যেতে পারে। চিন্তার বিষয়৷ মেয়েটা নতুন৷ একটা ভুল করেছে তাই তাকে এত বড় শাস্তি দিতে হবে৷”
________

নির্বণ নিয়তির দিকে ঝুঁকে,
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমাকে না দেখে পোশাক গুলো দেখো।”
.
“আসলে কেউ আমাকে কোনদিন এভাবে কোন শপিং মলে নিয়ে আসেনি৷ আপনিই প্রথম আপনি আমাকে শপিং মলে নিয়ে আসলেন৷”
.
“মন খারাপ করতে হবে না৷ আমি জানি তোমার সম্পর্কে সবকিছু।”
.
নিয়তি চোখ বড় করে চকিত হয়ে,
“আপনি জানেন কিভাবে?”
.
“অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ এখন থেকে আমি মাঝে মাঝে নিয়ে আসবো৷”
.
“এতোগুলো পোশাক আমার জন্য।”
.
হ্যাঁ সবগুলো তোমার জন্য৷
.
নির্বণ সেখানেই একটা শীতের সুয়েটার নিয়তির গায়ে পড়িয়ে দেয়৷ বাকিগুলো গাড়িতে রেখে আসে৷
.
নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে একটা রেস্তোরাঁয় নিয়ে আসে। নির্বণ নিয়তির পছন্দ মতো সকল খাবার অর্ডার করে৷ নিয়তি কোন ভুল করলে নির্বণ তাকে সংশোধন করে দেয়৷ নিয়তি যেন কোন সংকোচ বোধ না করে সেজন্য তাকে সব কিছুতে সাহায্য করে যাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি ভাবছে,
“আগে নির্বণ আর আজকের নির্বণের মাঝে অনেক পার্থক্য। আমি তো এমন কাউকে নিজের পাশে চেয়েছিলাম৷”
.
ডিনার শেষ করে রাত ১১ টার দিকে তারা গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে আসছে৷ হঠাৎ করে…..

চলবে…..

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কিছু কিছু ভুল এবং শব্দ চয়ন ধরিয়ে দিবেন৷