এক চিলতে সিঁদুর পর্ব-০৯

0
393

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৯
#অধির_রায়

নিয়তি চলে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিজের দিকে টান দেয়৷ নিয়তি টান সামলাতে না পেরে নির্বণের উপর এসে পড়ে। না চাওয়া সত্ত্বেও নিয়তির ঠোঁট জোড়া লেগে যায় নির্বণের কপোলে। নিয়তি নিজেকে সংযত করে উঠে যেতে নিলেই নির্বণ তার বাহুর মাঝে আটকে ধরে। নিয়তি আমতা আমতা করে,
“কি করছেন কি? এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন কেন?”
.
নির্বণ দুষ্টামির হাসি দিয়ে,
“তোমার ভালো লাগে না বুঝি৷ তুমি তো চাও আমার সাথে থাকতে৷”
.
নিয়তি নির্বণের চোখের দিকে তাকাতেই নিয়তি লজ্জা পেয়ে যায়৷ নির্বণ নিয়তি লজ্জা মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে,
“তুমি আমার জন্য এতো কিছু কেন করছো? আমি তোমাকে এতো কষ্ট দিলাম৷ কিন্তু তুমি আমার জন্য তোমার জীবনের রাত দিন এক করে দিলে৷”
.
নিয়তি নির্বণের উদরে চিমটি দেয়৷ যার ফলে নির্বণের হাতের বাঁধন খুলে যায়৷ নিয়তি সুযোগের সৎ ব্যবহার করে নির্বণ থেকে দূরে সরে আসে৷
.
নির্বণ নিজের উদরে হাত রেখে,
“নিয়তি তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না৷ তুমি আমাকে আঘাত করতে পারো না৷”
.
নিয়তি ভেংচি করে,
“আমি আপনার সাথে এমন করতে চাইনি৷ আপনি আমাকে এমন করতে বাধ্য করেছেন৷ আমি চাইনা আপনি এমন ভুল দ্বিতীয় বার করেন৷”
.
নিয়তি চলে যেতে নিলেই নির্বণ মাথা ধরে কিছুটা উঁচু স্বরে ,
“নিয়তি আমার মাথা ভিষণ ব্যথা করছে৷ আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না৷ মাথার ব্যথায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। প্লিজ আমার মাথাটা একটু মাসাজ করে দাও৷”
.
নির্বণের এমন আকুতি মিনতি শুনে নিয়তি বুঝে নেয় নির্বণের সত্যি সত্যি মাথা ব্যথা করছে৷ নিয়তি তেড়ে নির্বণের কাছে আসে৷ নির্বণের মাথায় হাত রাখতেই নির্বণ নিয়তিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে৷ নিয়তি এমন ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷ নির্বণের এমন ব্যবহার দেখে নিয়তি চকিত হয়ে যায়৷ নির্বণ নিয়তির গলায় মুখ লুকিয়ে,
“প্লিজ নিয়তি আমাকে ছেড়ে দূরে কোথায় যাবে না! আমাকে একটা সুযোগ দাও৷ আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে ছেড়ে কোনদিন যাব না৷”
.
নিয়তি নির্বণের কথা শুনে অবাক। নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তাকে এতো তাড়াতাড়ি ভালো বেসে ফেলবে৷ নিয়তি নিজের সম্মানের কথা ভেবে নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়৷ নিয়তি ঘৃণার সাথে বলে উঠে,
“আমাকে কি খেলার পুতুল মনে হয়? যখন ইচ্ছা হবে কাছে টেনে নিবেন। আবার যখন ইচ্ছা হবে দূরে ঠেলে দিবেন৷”
.
নির্বণ নিয়তির এমন অগ্নিমূর্তির ন্যায় রুপ দেখে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়৷ নির্বণ ধীর পায়ে নিয়তির সামনে এসে দাঁড়ায়৷ নিয়তি কাঁধে হাত রেখে,
“তোমার কি হলো? তুমি এভাবে কেন রিয়েক্ট করছো? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?”
.
নির্বণের কথা শুনে নিয়তি ফীক্ করে হেঁসে দেয়৷ ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠে,
“আপনার মতো ছেলেকে ভালোবাসতে যাবে নিয়তি৷ আপনি একটা চরিত্রহীন ছেলে৷ যে ছেলের মন এক নারী দিয়ে ভরে না৷ সে ছেলেকে নিয়তি ভালোবাসবে নিয়তি৷ আপনার টাকা, পয়সা, বাড়ি, গাড়ি দেখে নিয়তি প্রেমে পড়ে যাবে৷ নিয়তিকে আপনার লোভী মনে হয়৷ আপনার এসব চিন্তা ধারণা পরিবর্তন করেন৷”
.
নিয়তি নির্বণকে উচিত জবাব দিয়ে চলে যেতে নিলে আবারও নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে৷ নিয়তি এভার নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না৷ নিয়তির হাত ধরার সাথে সাথে নিয়তি নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ চোখ পাকিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে ,
“দ্বিতীয় বার নিয়তির হাত ধরার ভুল কখনো করবেন না৷ নিয়তির হাত ধরার অধিকার শুধু নিয়তির হাসবেন্ডের আছে।”
.
নিয়তি এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে দৌড় দিয়ে চলে আসে৷ বিছানা চাঁদর আঁকড়ে ধরে কান্না করতে থাকে৷ নিয়তির কান্না বাঁধ মানছে না। নিয়তি কান্না করতে করতে বলে উঠে,
“হ্যাঁ সৃষ্টি কর্তা কেন আমার জীবনে এতো কষ্ট? আমি তো চেয়েছিলাম নির্বণ আমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করুক৷ তবে আজ কেন এমন হলো? কেন আমি নির্বণকে মেনে নিতে পারলাম না?”

চোখের অশ্রু দিয়ে নিয়তির বালিশ ভেজে যাচ্ছে। চোখের জলের যদি কোন রং থাকতো তাহলে বালিশ তার প্রমাণ হতো৷ আজ নিয়তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ নেই৷ সবকিছু পেয়েও হারিয়ে ফেললো৷ এক ফোঁটা সুখের দেখাও পেল না নিয়তি৷
.
নির্বণ সেখানেই বসে কান্না করে দেয়৷ নিয়তি তো ঠিক বলেছে নির্বণ কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়৷ নির্বণের চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ নির্বণ মনে মনে বলছে,
“নিয়তি তুমি একদম ঠিক বলেছো৷ আমার মতো ছেলেদের কোনদিন ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই৷ যেসব ছেলেদের মন একটা মেয়ে দিয়ে ভরে না৷ তাদেরকে কে ভালোবাসবে? আজ আমরা সমাজে ঘৃণিত। আমাদের জন্যই আজ শত শত মেয়ে নিজের স্বপ্ন হারিয়ে ফেলছে৷ হ্যাঁ ভগবান আমাকে ভালো হবার একটা সুযোগ দেন৷”

নির্বণ কান্না করতে করতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়ে৷ কিন্তু নিয়তির চোখে কোন ঘুম নেই৷ নিয়তি ভেবে নেয় সে আর এই বাড়িতে থাকবে না৷ সে ঠিক করে তার মামার বাড়ি চলে যাবে৷ মামার বাড়ি কিছুদিন থেকে একটা জবের সন্ধান করবে৷ তারপর আর মামার বাড়ি থাকতে হবে না৷ নিয়তি কাউকে কিছু না বলে রাতে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷
.
নির্বণ নিয়তির কোন দেখা না পেয়ে ছোঁয়া নিয়তির রুমে আসে৷ ছোঁয়া রুমে এসে দেখতে পাই নিয়তি রুমে নেই৷ ছোঁয়া ভেবে নেয় তার দাদাকে নিয়ে ছাঁদে আছে৷ ছাঁদে এসেও কাউকে দেখতে পাইনা৷ অবশেষে ছোঁয়া দাদার রুমে পা রাখে৷ নির্বণের রুমে পা রাখতেই ছোঁয়ার চোখ কপালে উঠে যায়৷ ছোঁয়া চিৎকার করে বলে উঠে,
“দাদা তুমি ফ্লোরে কি করছো?”
.
ছোঁয়ার চিৎকারে নির্বণের ঘুম ভেঙে যায়৷ নির্বণ ঘুম থেকে উঠে দেখে সে ফ্লোরে শুয়ে আছে৷ ছোঁয়া নির্বণের কাঁধে হাত রেখে,
“দাদা তোমার এই অবস্থা কি করে হলো? কে করল তোমার এমন অবস্থা?”
.
নির্বণ মাথা নিচু করে,
“আমি ঠিক আছি৷ মনে হয় রাতে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম।”
.
“দাদা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলো। কি লুকাতে চাইছো তুমি? আর নিয়তি কোথায়? তাকে কোথায় তো দেখতে পাচ্ছি না৷”
.
নির্বণ চকিত হয়ে,
“মানে! নিয়তিকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি? তার রুমে খেয়াল করেছে।”
.
হ্যাঁ দাদা আমি তাকে সব জায়গায় খুঁজে দেখেছি৷ কিন্তু কোথাও নেই নিয়তি৷”
.
“তুমি তার ওয়াসরুমে দেখেছো। নিয়তি মে’বি ওয়াসরুমে আছে৷”
.
“না দাদা। আমি ওয়াসরুমে কোন জলের শব্দ পাইনি৷ তাই ওয়াসরুমে দেখা হয়নি৷”
.
“চল আমার সাথে তার রুমে।”
.
নির্বণ আর ছোঁয়া মিলে নিয়তির রুমে আসে৷ রুমে এসে নিয়তিকে দেখতে পাইনা৷ ওয়াসরুমেও নিয়তি নেই৷ ছোঁয়ার চোখ আটকে যায় টেবিলের উপর রাখা চিরকুটের উপর৷ ছোঁয়া চিরকুট নিয়ে পড়তে থাকে৷ একটু পড়ে বলে উঠে,
“দাদা নিয়তি চলে গেছে৷ সে আর কোনদিন এই বাড়িতে আসবে না৷”
.
“নিয়তি চলে যেতে পারে না৷ আমাকে ছেড়ে নিয়তি কোনদিন ছেড়ে চলে যাবে না৷”
.
“তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না মানে কি? নিয়তি এখানে স্পষ্টভাবে লিখেছে সে এই বাড়িতে আর থাকতে চাই না৷ তাই সে চলে যাচ্ছে৷”
.
নির্বণ আগ্রহ দেখিয়ে,
“আর কিছু লিখেনি৷ কেন চলে যাচ্ছে?”
.
“না আর কিছু লেখা নেই।” ছোঁয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে নির্বণের দিকে তাকিয়ে,
“দাদা তুমি কি লুকাতে চাইছো? তোমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে? তুমি কিছু কিছু করো নি নিয়তির সাথে৷”
.
নির্বণ আমতা আমতা করে,
“আমি কি করতে যাব নিয়তির সাথে৷ আমি কিছু করিনি নিয়তির সাথে৷”
.
“তোমার কথা আটকে আসছে কেন? আমি এখন ছোট নয়৷ আমি সবকিছু বুঝতে পারি৷ কি হয়েছে? আমাকে সবকিছু খোলে বল৷”
.
নির্বণ ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে৷ নির্বণ বাচ্চাদের মতো করে কান্না করে যাচ্ছে৷ ছোঁয়া নির্বণের কান্না দেখে অবাক৷ ছোঁয়া নির্বণকে বুঝানোর চেষ্টা করতেছে৷ কিন্তু নির্বণ কান্না করেই যাচ্ছে।
.

নিয়তি সকালের বাস ধরে সিলেটের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে৷ নিয়তি নিজের বাড়িতেও যেতে পারবে না৷ নিজের বাবার এমন রুপ দেখে কে ওই বাড়িতে যেতে চাই?
.
ছোঁয়া নির্বণকে বিছানায় বসিয়ে দেয়৷ নির্বণকে অভয় বানী দিয়ে বলে উঠে,
“নিয়তি কিসের জন্য চলে গেল? দাদা তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি৷ আমি নিয়তিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো৷”
.
“তুমি সত্যি নিয়তিকে ফিরিয়ে আনবে৷ কিন্তু নিয়তি কোথায় গেছে জানি না?”
.
“নিয়তি তো তার নিজের বাড়িতে যেতে পারে৷ তার নিজের বাড়ি কোথায়?”
.
নির্বণ চোখের জল মুছে,
“নিয়তি কোনদিন নিজের বাড়িতে যাবে না৷ নিয়তি ভুল করে হলেও নিজের বাবার সম্মুখীন হবে না৷”
.
“নিয়তির বাড়ি থেকে জানতে পারবো নিয়তি কার বাসায় যেতে পারে৷ তার আগে বল নিয়তির সাথে তোমার সম্পর্ক কি?”
.
আমি ছোঁয়ার হাত ধরে,
“আমি নিয়তিকে খুব ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷ আমি তাকে ভালোবাসার কথা বললে সে বাড়ি থেকে চলে যায়৷”
.
“কিন্তু নিয়তি তোমাকে ভালোবাসে না৷ তোমাকে ভালো না বাসার কারণ কি হতে পারে?”
.
“আমাকে ভালো না বাসার কারণ আমি তার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছি৷ আজ আমার জন্যই নিয়তির এমন অবস্থা৷ নিয়তিকে বাধ্য করেছি এই বাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে৷”
.
নির্বণ একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করে নিয়তির সাথে ঘটে যাওয়ার কাহিনি। নির্বণের মুখ থেকে যা শুনে তার জন্য মোটেও ছোঁয়া প্রস্তুত ছিল না৷

চলবে…..

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। একটা দুইটা করে ভুল বানান ধরিয়ে দিবেন৷ বেশি করে ভুল ধরিয়ে দিবেন না।