এক ফালি সুখ পর্ব-২৭+২৮

0
256

#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৭+২৮|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
অতিবাহিত হলো আরো তিনটে দিন। তূর্যের দেওয়া সেই মেসেজটা দেখেনি মৌরিন,এরপরেও তূর্য বেশ কিছু মেসেজ দিয়েছিল। সেগুলোও নিজ ইচ্ছেতেই দেখেনি মৌরিন, এগুলো দেখা মানেই নিজের সময় নষ্ট করা। এছাড়াও অন্য একটা কারণ আছে, একজন মেয়ে হিসেবে মন্র যেকোনো অনুভূতি জন্ম নিতে পারে। যা চায়না মৌরিন, তার সামনে এখনো অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে,মায়ের খেয়াল রাখতে হবে। এমন ছোটখাটো বিষয়ে দূর্বল হয়ে পরলে তো চলবেনা।

মৌরিন এর জীবন নিজ গতিতে চলে গেলেও তূর্য ঠিকই বুঝতে পারছে, তার দিনকাল ঠিক যাচ্ছে না। কাজে ঠিকঠাক মনোযোগ পাচ্ছেনা, অ্যাওয়ার্ড এর কথাতো একবার এর জন্য মাথাতেও আসছে না। অহংকার নামক বস্তুটা যেন তার ক্ষেত্রে বিলুপ্তির পথে হাটছে। তবে মায়ের সঙ্গে বেশ সখ্যতা গড়ে তুলেছে তূর্য, মৌরিন এর কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। শত অস্থিরতার মাঝেও মায়ের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা স্বস্তি পায় তূর্য, একটা ধন্যবাদ জানানো উচিৎ মৌরিনকে। কিন্তু সে যে কোনো মেসেজ ই সিন করছে না।
আগামীকাল নাটকের শেষ শুটিং। এর মাঝেই ঘটে গেছে আরো এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। দিয়া নাকি বিয়ে করছে, তবে তার হবু বর আর কেউ নয় স্বয়ং রুবেল ভাই। তূর্যের অবহেলায় মনের কষ্টে সে সু’ইসা’ইড করতে গিয়েছিল, তাকে বাঁচিয়েছে রুবেল ভাই। এরপর নাকি অনেক কিছু বুঝিয়েছে, ফলস্বরূপ তার এই কথার প্রেমে পরে গেছে দিয়া। সুন্দরি মেয়ে সে,রুবেল ও দেখতে খারাপ নয়, তবে বয়সটা একটু বেশি। তাতে আবার দিয়ার কোনো সমস্যা নেই, সে এক কথায় বলে দিয়েছে, “এইজ ডাস’ন্ট ম্যাটার”। কথাটা জানতে পেরে অনেকক্ষণ হেসেছিল শুটিং সেট এর সবাই, আবরাজ ও মনের কষ্ট ভুলে হাসছিলো তখন।

অনেককিছুই বদলে যাচ্ছে, তূর্য যেমন বদলেছে তেমনই আবরাজ এর মাঝেও পরিবর্তন দৃশ্যমান। ঝগড়া তো দূরে থাক বরং তূর্যকে নানাভাবে বোঝাচ্ছে আবরাজ, ঠিক যেন ছোট ভাই এর মতো। তাদের মধ্যে সম্পর্কটা আগে এমন ছিলোনা, ইন্ডাস্ট্রি তে আসার পূর্বে তাদের বন্ডিং খুবই ভালো ছিলো। তবে বিপত্তি বাধে আবরাজ নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার পর, আর এটা শুরু করেছে তূর্য নিজেই। আবরাজ কম বয়সেই নাটকে কাজ শুরু করে, তূর্য এসেছে দেড়িতে। মূলত তূর্যই শুরু থেকে আবরাজ কে হিংসে করতো,সেটা তার অহংকার এর জায়গা থেকেই। তার একটাই কথা ছিলো, “আমি এলে তোমরা কেউ টিকেও থাকতে পারবে না”। ক্ষিপ্ত হয় আবরাজ, সেও পাল্টা বাজি ধরে বসে। আর সেই থেকে শুরু হয় দুজনের মধ্যকার শত্রুতা।

তূর্য বারেবারে লক্ষ্য করছে আবরাজ এর ব্যাবহার, কত সহজেই পরিবর্তন হয়ে গেলো সে! কোনো কিছু না করতেই যেন দুজনের মধ্যকার শত্রুতা মিলিয়ে গেলো অনেকটা। তূর্য বুঝতে পারলো, সামান্য অহংকারের কারণেই কত সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মাঝেই। আর একজনের চুপ থাকাতে শত্রুর সম্পর্কও বন্ধুত্বে পরিণত হওয়া সম্ভব। কদিনের এই জীবনে খামোখাই যুদ্ধ বিদ্বেষ নিয়ে পরে থাকি আমরা,অথচ এগুলোর কোনো ভিত্তি ই নেই। অহং, হিংসা নামক বস্তুগুলোকে একটু দূরে সরিয়ে রাখলেই সকলে মিলেমিশে থাকা যায়। কাউকে টেনে নিচে নামাতে গেলে কখনো নিজেও উপরে ওঠা সম্ভব হয়না, বরং তাকে সঙ্গে নিয়ে এগোলেই সফলতা পাওয়া যায়।

এই বিষয়গুলো এতদিন ভাবতেও চায়নি তূর্য, কেউ তাকে বলেনি এমনটা নয়। রাতুল কথাগুলো তূর্যকে আগেও বলেছে, তন্নিও বুঝিয়েছে কয়েকবার। তবে সে কানেই নেয়নি,বিরক্ত লেগেছে এসব কথা শুনতে। কিন্তু এখন? কেউ কিছুই বলছেনা,অথচ নিজে থেকেই এগুলো ভাবছে তূর্য, ভালো লাগছে ভাবতে। ইচ্ছে করছে কারোর থেকে কথাগুলো শুনতে, বলতে গেলে একজন নির্দিষ্ট মানুষের থেকে, আর সেটাই মৌরিন।

আজকের শুটিং শেষ হলে মৌরিন এর সঙ্গেও দেখা হবেনা অনেকদিন এ। কারণ তূর্যের পরবর্তী কিছু কাজ অন্য প্রোডাকশন এর সঙ্গে,যেখানে মৌরিন থাকবে না। কথা না বললেও, প্রতিদিন অনেকটা সময় মৌরিনকে চোখের সামনে দেখতে পেতো। আগামীকাল থেকে তেমনটাও হবেনা। গায়ের রঙ বেশ ভালোই চাপা, কালো চুলগুলো খুব একটা লম্বা নয়,সবসময় বিনুনি করা থাকে, শালীন পোষাক, বাহ্যিক প্রলেপহীন মুখশ্রী, কেবল কপালের মাঝবরাবর কালো রঙের ছোট্ট টিপ। এমন আহামরি মায়াও তার মাঝে উপচে পরছে না, তাকে দেখেই কারোর হৃদয় শান্তি পাবে তেমনটাও হওয়ার কথা নয়। তবে হয়েছে তূর্যের ক্ষেত্রে। তূর্যের মতে মৌরিন অসুন্দর। মায়া, ভাবলেশহীন একটি গম্ভীর্যতাপূর্ন মেয়ে। তবুও তাকে দেখতে ইচ্ছে করে তূর্যের, তার অসাধারণত্ব ভীষণভাবে টানে তূর্যকে।

গত তিনদিনে তূর্য কোনো চিরকুট লিখেনি, তবে আজ লিখলো। না লিখে পারলোনা বলেই লিখলো। রেখে দিলো মৌরিনের ব্যাগে। শুটিং শেষ হলো সুষ্ঠুভাবেই,সকলে সকলের থেকে বিদায় নিলো। নাটকটা সুন্দর হবে, দর্শক পছন্দ করবে এই নিয়ে সবাই আশাবাদী। মৌরিনও বিদায় নিলো হাসিমুখে। দু তিনদিন ছুটি তার, আবার ফিরতে হবে তারপর, পরবর্তী কাজে বোধ হয় রাতুল থাকবে, শুনেছিল নির্ঝর ও থাকবে সেখানে। নির্ঝর কে দেখেনি মৌরিন, তবে নাম শুনেছিল অনেকবার, ইন্ডাস্ট্রি তে সে নাকি নতুন এসেছে, তবে সবাই তাকে ভালোই পছন্দ করে।

বাড়িতে এসে হাতমুখ ধুয়ে নিলো মৌরিন, রান্না করাই আছে। মারুফা খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছেল, শরীরটা খুব একটা ভালো নেই তার। নিজেও খেয়ে নিলো মৌরিন, এরপর তিনতলায় গিয়ে ভাড়াটা দিয়ে এলো। সেদিনের পর থেকে আরাফ একদম শান্ত হয়ে গেছে, দু এক সময় মৌরিন এর সামনে পরলেও তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। বেচারা ভালোই ভয় পেয়েছে, সঙ্গে বাবা মায়ের কাছে লজ্জিত ও হয়েছে।

নিজের ঘরে এসে জানালার পাশে চেয়ার টেনে বসলো মৌরিন। ব্যাগটা হাতে নিয়ে চিরকুটটা বের করলো, আগেই দেখেছিল এটা। তবে খুলে পড়া হয়নি। মেসেজগুলো এখনো পড়েনি সে, তবে চিরকুটটা পড়লো। এমনিতেও কাল থেকে তূর্য চাইলেও চিরকুট দিতে পারবে না।
বেশ বড়সড় একটা লেখা। মৌরিন চেয়ারে হেলান দিয়ে তা পড়তে শুরু করলো,

প্রিয় মৌরিফুল,

প্রথমবার প্রিয় বললাম, আগের লেখায় কখনো প্রিয় শব্দটা উল্লেখ করিনি। আজ করলাম, বাস্তবতা বুঝেই। উপলব্ধি করতে পারছি, তুমি আমার মারাত্মক প্রিয় হয়ে উঠছো। আমি মুগ্ধ হচ্ছি তোমাতে। আজ স্পষ্টতই প্রশংসা করছি তোমার,তুমি এর দাবিদার। তবে আমি অনেকটাই নিশ্চিত,বিরক্ত তুমি। সাতটা মেসেজ, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, একটাও সিন করলে না। তবে এর কারণ অন্য কিছুও হতে পারে, আর তা হলো ভয়। সবদিক থেকে নিজের সাহসীকতার প্রকাশ ঘটিয়ে এক্ষেত্রে বুঝি ভীতু হয়ে গেলে মৌরিন? যদি তাই হয় তাহলে ঠিক কি বিষয়ে ভয় পাচ্ছো তুমি? ভালোবাসা কিংবা মায়ায় জড়িয়ে পরার? নাকি স্পেসিফিকলি আমায় ভালোবেসে ফেলার?
তুমি বললে তেলে জলে মিশ খায় না। নিজেকে জলের সঙ্গে আর আমায় তেলের সঙ্গে তুলনা করছো বুঝি? কেন? আমার চাইলে ঘোলা জলের সঙ্গে তুলনা করতেই পারো। তবে তাকে স্বচ্ছ করার ও কিন্তু উপায় আছে। এক্ষেত্রে তুমি চাইলেই ছাকনী হিসেবে কাজ করতে পারো। করছো না, কিছুই করছো না তুমি। কিছু না করতেই অনেক কিছু করে ফেলছো, আমি মানুষটাই কিছুকিছু ক্ষেত্রে বদলে যাচ্ছি। নিজের সবসময়ের চাওয়াগুলোকে ফ্যালনা মনে হচ্ছে। এমন জিনিসই চাইছি যা আমি কখনো চাইনি, যেমন তুমি।
তবুও আমি এখনো ঘোলাই রয়ে গেলাম। পরিপূর্ণ স্বচ্ছ হতে পারলে আজ চিঠি লিখতে বসতাম না, সরাসরি তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম। স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতাম তোমার সঙ্গে। পারছিনা, বাঁধা দিচ্ছে আমার ইগো। কিছুই করার নেই, যা আমার মাঝে জমা হয়েছে বহু বছর ধরে। তা কি করে কয়েকদিনে সম্পূর্ন মিলিয়ে যায় বলতো? সম্ভব নয়, নাটকের মতো একদিনে নিজেকে পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা আমিতো নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইনি, না চাইতেই পরিবর্তন লক্ষ্য করছি নিজের মাঝে। ম্যাজিক এগুলো? ম্যাজিশিয়ান তুমি? তাই হয়ে থাকলে, নিজের উপর ম্যাজিক করোনা মৌরিফুল। একটু কি নরম হওয়া যায়না? নিজের অনুভূতিগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া যায়না? তুমিতো মানুষ,পাথত তো আর নও। চেষ্টা করে দেখবে একটু? ভালোবাসা শব্দটাকে রাসায়নিক মাধ্যম ধরে তেলে জলে মিশ খাওয়ানো যায় কিনা?

ইতি
তোমার চেনা আগন্তুক

কাগজ টা ভাজ করলো মৌরিন, জানালার সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। শুধু আন্দাজ করেই একটা সত্য কথা বলে ফেললো তূর্য, ভয় পাচ্ছো কিনা। উত্তরে স্পষ্টত না বলার উপায় নেই। ভয় মৌরিন পেয়েছে, একটু হলেও পেয়েছে। মায়ায় পরে যাওয়ার ভয়। মানুষটা তূর্য বলে,তেমনটা নয়। অন্যকেউ হলেও, নিজের মতো স্বভাবের একজন মানুষ হলেও এই একই ভয়টা পেতো মৌরিন। সাহসীকতা বজায় রাখতে হয়তো ব্যার্থ হতো তখনও।
মৌরিন এর কাছে মায়ায় পরে যাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম মনে হয় কথা কে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ কথা, চালচলন এ না আটকালেও আটকে যায় মানুষের কথায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি হয়ে থাকে, ভিতরে থাকা সুপ্ত অনুভূতিগুলো অতি সহজেই জেগে উঠতে চায়, চাইলেও তাদের আটকে রাখা সম্ভব হয়না।

মৌরিন অনুভব করলো, সেও হয়তো আটকে যাচ্ছে। শত কঠিনতার মধ্য থেকে নিজের অবাধ্য অনুভূতিগুলো যে ছুটতে চাইছে, তূর্যের কথার জালে ফেঁসে যাচ্ছে সে। তবুও নিজেকে সামলাতে চাইলো মৌরিন, ভালো হোক কিংবা খারাপ এই মুহূর্তে নিজের জীবনের সঙ্গে কাউকে জড়াবেনা সে। সে ভাঙতে পারেনা, নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে জানে মৌরিন। বিমোহিত হলে যে চলবেনা, অতিক্রম করতে হবে আরো অনেক পথ। নিজেকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, যেখান থেকে কেউ চাইলেই তাকে নামিয়ে আনতে পারবেনা।

________
আরো বিশদিন কেটে গেলো। এর মাঝে আরো একটি শুটিং এর কাজ শেষ হয়েছে,মৌরিন সঙ্গেই ছিলো। আলাপ হলো নির্ঝর এর সঙ্গেও, জানতে পারলো সে জ্যোতির উড বি হাসবেন্ড।
ভার্সিটিতেও মাঝেমধ্যে যাচ্ছে মৌরিন। রেগুলার যাওয়াটা সম্ভব হচ্ছেনা,এক্ষেত্রে জ্যোতি তাকে ভালোই হেল্প করছে। তূর্যের সঙ্গে আর দেখা হয়নি এর মধ্যে। এটা একটা প্লাস পয়েন্ট, হয়তো দেখা হলে,কথা হলে দূর্বল হয়ে পরতো মৌরিন। সবটাই নিজের অজান্তেই হতো, এদিক থেকে ভালোই হয়েছে।

টিউশন শেষ করে বাড়ি ফিরছে মৌরিন, রাস্তাটা একদমই অন্ধকার। আশেপাশে কোনো মানুষও নেই। আকাশে মেঘ ডাকছে, বৃষ্টি নামতে হয়তো খুব বেশি দেড়ি নেই। সেসবে পাত্তা না দিয়ে নিজ গতিতে হাঁটছে মৌরিন,ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট ধরে আছে। হুট করে সামনে থেকে আলো দেখা গেলো, একটা কালো রঙের গাড়ি এসে থামলো মৌরিন এর সামনেই। গাড়িটা তূর্যের,ভিতরেও তূর্যই বসে আছে।
তা লক্ষ্য করে অবাক হলোনা মৌরিন, আগেও দুদিন তূর্যকে গাড়ি দিয়ে এই রাস্তায় আসতে দেকেছে সে। দূড়েই থাকতো, রাস্তার অন্যপাশে দাঁড়িয়ে থাকতো তবে মৌরিন এর সামনে আসেনি।

মৌরিনও চাইলো না সেদিকে তাকাতে, স্বাভাবিকভাবেই নিজের পথে হাটতে শুরু করলো সে। তবে আজ তূর্য কেবলই বসে রইলো না, বেড়িয়ে এলো গাড়ি থেকে। তার পরনে সেই কালো রঙের শার্ট, অধিকাংশ সময় তাকে কালো রঙেই দেখা যায়। কালো রঙের মানুষ তার পছন্দ নয় অথচ জামাকাপড় এর ক্ষেত্রে তার কালোই চাই। তূর্য গাড়ি থেকে নেমেই বললো,
_”মৌরিন দাড়াও, আই ওয়ান্ট টু টক উইথ ইউ।”

থামলো মৌরিন। শান্ত থেকেই এগিয়ে এসে বললো,
_”হুম বলুন।”

আরো কিছুটা এগিয়ে এলো তূর্য। একদৃষ্টিতে মৌরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
_”আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।”

_”উত্তর? সেটাতো আগেই পেয়ে গেছেন আশা করি।”

_”সেটা কোনো উত্তর হতে পারেনা মৌরিন। ভালোবাসা কখনো মানুষের ক্যাটাগরির উপর ডিপেন্ড করতে পারেনা আই থিংক।”

মৌরিন নিচের দিকে দৃষ্টি রেখেই শক্ত গলায় বললো,
_”আপনি যেটাকে ভালোবাসা বলছেন, তার নাম কেবলই মোহ।”

অদ্ভুত আচরণ করলো তূর্য। মৌরিনকে সম্পূর্নভাবে আটকে দিয়ে একহাত রাখলো গাড়ির উপর। ভ্রুকুঞ্চিত করে অদ্ভুত স্বরে বললো,
_”বেঁচে যেতাম আমি, বিশ্বাস করো আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম যদি এটা মোহ হতো। তাহলে অন্তত আমার সবচেয়ে পছন্দের অহংকার টাকে বিসর্জন দিতে হতোনা।”

নাকে একটা বিদঘুটে গন্ধ পেতেই চোয়াল শক্ত করলো মৌরিন। বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে শক্ত গলায় বললো,
_”হাতটা সরান তূর্য।”

তূর্য হাসলো সামান্য। নিজের মুখটা আরো কিছুটা এগিয়ে বললো,
_”মরিচের গুঁড়ো কি সাথেই আছে? তুমি বললে কিনে এনেও দিতে পারি।”

বৃষ্টির ফোটা চোখে এসে পরতেই চোখ বন্ধ করে নেয় মৌরিন। তূর্য সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
_”ইউ নো হোয়াট, আ’ম আ লিটেল ড্রাংক। দ্যাটস হোয়াই তোমার এতটা সামনে দাঁড়িয়ে আছি। নাহয় আসতেই পারতাম না হয়তো।”

চোখ খুললো মৌরিন,বৃষ্টির বেগ বাড়ছে ধীরেধীরে। মৌরিন আবারো বললো,
_”আমার ব্যাপারে আরো কিছু কথা জানতে পারলে দ্বিতীয়বার সামনে আসবেন না হয়তো।”

তূর্য হেসে বলে,
_”তোমার কি মনে হয় কিছুই জানিনা আমি? এতদিনে তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড এর উপর পি এইচ ডি করে ফেললাম। ট্রাস্ট মি, সবকিছু জানার পর অনেক বুঝিয়েছি নিজেকে। তোমাকে কোনোভাবেই আমার পাশে মানায়না এটা বুঝতে চেয়েছি। কথাটা প্রতিবার উল্টে যাচ্ছে, বিপরীতে কেউ বলছে,তোমাকেই আমার পাশে মানায়। কি করি বলতো?”

কিছু একটা হলো যেন মৌরিন এর,একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তূর্যের দিকে। বৃষ্টির ফোটা বোধ হয় তার অন্তর কেও শীতল করছে ক্ষণে ক্ষনে। তূর্য আরো এগোলো,দূরত্ব কমলো দুজনের মাঝে। নিজের অধরযুগলের মাঝে তূর্যের স্পর্ষ পেতেই নিজের মাঝে ফিরে আসে মৌরিন। এক ধাক্কায় সরিয়ে দেয় তূর্যকে,নিজেও অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায় মৌরিন। আকস্মিক ধাক্কায় তূর্য টাল সামলাতে না পেরে গাড়িতে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। কি করতে যাচ্ছিল বুঝতে পেরে নিজের উপর রাগান্বিত হয় তূর্য। এগিয়ে এসে মৌরিনের উদ্দেশ্যে বলে,
_”মৌরিন আ’ম সরি, আসলে আমি..”

আর কিছু বলার আগেই ঘুরে দাঁড়ায় মৌরিন। পিছনে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
_”ইট’স জাস্ট এন এক্সিডেন্ট। আমি রিকুয়েস্ট করছি তূর্য, আমার পিছনে আসবেন না।”

কথাটা বলের সামনের দিকে পা বাড়ায় মৌরিন। তূর্য তার পিছনে ছুটতে যাবে তখনি তার চোখ যায় রাস্তার অন্যপাশে। কারোর অবয়ব আন্দাই করতে পেরে বলে,
_”কে ওখানে?”

#চলবে?