এক ফোঁটা প্রেমের বিষ পর্ব-০২+০৩

0
632

#এক ফোঁটা প্রেমের বিষ
#Tahmina Akhter

২. এবং ৩.

প্রচন্ড মাথা ব্যাথার যন্ত্রনায় সারারাত এক ফোঁটা ঘুমাতে পারেনি মিলি। শুধুমাত্র লোকটার সাংঘাতিক কান্ড দেখে আর কথা শোনার পর থেকে। শুধু শুধু একটা লোককে সামান্য কারণে হাতে গুলি করবে এ কেমন লোক! আর, ওর খালা বা কেমন মানুষ? তাকে কিছু না বলে ওর মোবাইল নাম্বার অচেনা একজনকে দিয়ে ফেললো। সবচেয়ে বড়ো কথা তখন ওরা কাদের ফ্ল্যাটে ছিল?

উফফ, একসাথে এতকিছু ভাবতে ভাবতে মেয়েটা যেন পাগল হয়ে যাবে।

পরদিন সকাল দশটা.

মিলির খালা সকাল থেকে এই নিয়ে পাঁচবার মিলির রুমের দরজা নক করে আবারও ফিরে এসেছে। কারণ, মিলি বলছে ওর নাকি সারারাত ঘুম হয়নি।

কিন্তু, এখন আর জেসমিন অপেক্ষা না করে আবারও মিলির দরজার সামনে গিয়ে তিন চারবার নক করতেই। মিলি ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে এাে দরজা খুলে দিয়ে আবারও খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

মিলির খালা এগিয়ে এসে মিলির মাথার কাছে বসে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,

— তোর বাবা আর ভাইয়েরা সকাল থেকে এই পর্যন্ত বিশ বারের বেশি কল করেছে। শুধুমাত্র তোর মুখ থেকে একটি শব্দ শোনার জন্য। এখন,ওঠ। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর ওদের সঙ্গে কল করে কথা বল।

—কল দিব একটু পরে । আচ্ছা, খালা মাহিমকে দেখছি না যে?

—মাহিম তো গতকালই তোর বাবা আর ভাইদের সঙ্গে কুমিল্লায় ফিরে গেছে। আর মাহিম যদি থাকত তাহলে তোর এই অসুস্থতার খবর তোর বাবা আর ভাইয়েরা না জেনে থাকত। হয়তো, এতক্ষণে কুমিল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জ চলে আসত।

—কিন্তু, মাহিমের তো আমার সাথে আরও একসপ্তাহ পর যাওয়ার কথা ছিল। তাহলে?

মন খারাপ করে কথাটি বলে মিলি। মিলির খালা মিলির মুখের দিকে তাকাতেই খেয়াল করে দেখলো, মিলির নাক আর চোখ লাল হয়ে আসছে। তারমানে,মেয়েটা এখন কান্না শুরু করবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিলির খালা বলছে,

— আসলে, গতকাল তুই অজ্ঞান হয়ে যাবার পর দুলাভাইকে কল দিয়ে বলি, আমি তোকে নিয়ে একটু শানারপাড় আছি। মাহিমকে সঙ্গে করে নিয়ে যেন কুমিল্লায় চলে যায়। আমি তোকে নিয়ে আরও পনেরোদিন কুমিল্লায় গিয়ে ঘুরে আসব। ব্যস, তোর বাবা আর ভাইয়েরা চলে যায়।

—তুমি সাথে গেলেই চলবে। যাই আমি গিয়ে গোসল করে আসছি। তুমি খাবার রেডি করো খালা। প্রচুর ক্ষুদা লেগেছে।

কথাটি বলে মিলি শোয়া থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।

মিলি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। মিলির খালা এক প্লেট গরম ভাত আর এক বাটি গরু মাংসের তরকারি রান্নাঘর থেকে এনে টেবিলের উপর রেখে মিলির পাশের চেয়ারে বসে পরলো।তারপর, ভাতে মাংসের তরকারি মাখিয়ে এক লোকমা ভাত মুখে তুলে খাইয়ে দিলো মিলিকে।

মিলির খাওয়া শেষ হলে জেসমিন এটো বাটি আর প্লেট রান্নাঘরে রেখে আবারও ফিরে এলো মিলির কাছে।

—আচ্ছা, খালা। আমার মা দেখতে কেমন ছিল?

মিলির কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে মিলির খালা বিচলিত হলেন না। কারণ, ছোট থেকে মিলি সেই একই প্রশ্ন করে আসছে। বিশেষ করে মিলি তার মামা এবং খালাকে এই প্রশ্নটি করে। সবাই খুব যত্ন নিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়।

—তুই দেখতে অবিকল তোর মায়ের মতো। শুধুমাত্র চুলের ক্ষেত্রে মিল নেই। তোর মায়ের চুল ছিল হাঁটু অব্দি আর তোর কোমড় অব্দি।

মিলি চুপ করে রইলো। কিছু সময় পর কিছু একটা মনে পড়তেই মিলি ওর খালাকে বললো,

— খালা,আমার মোবাইল নাম্বার ওই জল্লাদ লোকটাকে তুমি দিয়েছো, কেন?

—জল্লাদ বলছিস, কেন? একজনের মোবাইল নাম্বার আরেকজনের কাছে থাকা কি মহাপাপ?

—তুমি যদি জানতে তবে বলতে মহাপাপ হবে কি-না? আল্লাহ আল্লাহ করে একবার খালি কুমিল্লা পৌঁছেতে পারলে হলো। তখন, সিম চেঞ্জ করে ফেলব।

মনে মনে কথাটি বলে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠেছে মিলির মাঝে।

—আর আমরা দুজন গতকাল কাদের ফ্ল্যাটে ছিলাম?

—কেন, শোয়েবদের ফ্ল্যাটে?

–ওহ আচ্ছা।

মিলি এই কথা শোনার পর ভাবছিল অন্য কথা।কিন্তু, এমন সময় জেসমিন বলে উঠলো।

—শোন, মিলি?

—জি।

—আজ বিকেলে আমি একটু চাষাঢ়া যাব। কিছু কেনাকাটা করতে হবে। তুই একা থাকতে পারবি তো? আর যদি না পারিস তবে ছাঁদে চলে যাস। বিকেলে এই বিল্ডিংয়ের অনেক ছেলেমেয়ে ছাঁদে বসে আড্ডা দেয়।

—হুম, পারব। কিন্তু, কেনাকাটা কেন?

—গতকাল, যে মেয়েটার বিয়ে হলো না। আগামীকাল ওদের রিসিপশনের ইনভাইটেশন দিয়ে গেছে ওর বাবা। না গেলে হয় বল তো?

— ঠিক আছে। চলে যেও।

বিকেল বেলা

মিলির খালা চাষাঢ়া উদ্দেশ্য ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যায়। তখন, মিলি ধীরপায়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে ফ্ল্যাটের মূল দরজা লক করে ছাঁদের উদ্দেশ্য সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করে।

ছাঁদের দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই শীতল হাওয়া এসে ছুঁয়ে যায় আমার শরীরে। মিলি ধীরপায়ে দুই কদম পা বাড়িয়ে ছাঁদে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো। গতকাল বিয়ের অনুষ্ঠানে মিলিকে সাহায্য করা সেই অচেনা মেয়েটি বসে একটি মেয়ে এবং দু’টি ছেলের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে।

মিলি এগিয়ে গেল মেয়েটির দিকে তারপর মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—আমাকে চিনতে পেরেছেন?

মেয়েটি ঘাড় উঁচু করে আমাকে দেখতে পেয়ে হাসিমুখে বললো,

—আরে আপনি! আপনাকে চিনব না কি করে। তা বসুন না। আমাদের সাথে বসে আড্ডা দিন। আমরা আপনাকে বোরিং ফিল করতে দিব না, মিলি।

মিলি মেয়েটির পাশে বসতেই আবারও আড্ডা শুরু হলো। আড্ডার মূল টপিক হচ্ছে,পড়াশোনা, কলেজ,ফ্রেন্ড এবং পরিবার নিয়ে।

মিলিকে পরিবার সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মিলি বলে,

— আমার মা নেই। আমার ছোট ভাই এবং আমি যমজ। মা আমাদের দু’জনকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। বাবা আর তিন ভাই নিয়ে আমাদের পরিবার। বাবা চাকরিসূত্রে কুমিল্লায় থাকেন বলে আমরা সবাই বাবার সঙ্গে থাকি।আমার বড়ো ভাই সৌদি চলে যাবে বিশ তারিখে। খালার সঙ্গে দেখা করে যেতে হবে না। তাই, বড়ো ভাই আমাদের নিয়ে এলো।

—জেসমিন আন্টি তাহলে তোমার খালা হয়।

—হুম।

পাশে বসা মেয়েটিকে উত্তর দেয় মিলি।

এমন সময় ছাঁদে একজন প্রবেশ করে। এসেই আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

—আগামীকাল দুপুর তিনটার পর থেকে এই বিল্ডিংয়ের কোনো ছেলে ছাঁদে আসতে পারবে না।

—এটা আবার কেমন কথা?ছেলেরা কেন ছাঁদে আসতে পারবে না?হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের পক্ষে আর সম্ভব হবে না এই বিল্ডিংয়ে থাকবার। সারাদিন এখানে সেখানে দৌঁড়ঝাঁপ করে যদি ছাঁদে এসে রিল্যাক্স করতে না পারি তবে কেমনে হবে!বলেন তো আসলাম ভাই?

দুটো ছেলের একটি ছেলে প্রশ্ন করলো আসলাম ভাই নামক লোকটাকে।

—যদি কারো খুব বেশি সমস্যা হয়। তাদের জন্য গেইট খোলা আছে। সোজা এই বিল্ডিং থেকে বের হয়ে গেলেই হয়। দ্যাটস ইট। আর যদি এই বিল্ডিংয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। আমার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবাইকে চলতে হবে। এখন যা ছাঁদ থেকে। কালকের পর থেকে যেন দুপুর তিনটার পর কেউ যেন ছাঁদে না আসে। যদি কেউ আসে তবে তার কি হবে তোদেরকে আর বলার অপেক্ষায় না রাখি। মাইন্ড ইট।

—জি ভাই। চলি আমরা।

শোয়েব তাদের কোনো কথার উত্তর না দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিলির দিকে।

আসাদ নামের ছেলেটি মিলির কাছে গিয়ে বললো,

—আসছি মিলি। তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াতে আমি খুবই আনন্দিত। ভালো থে..।

কথাটি আর সম্পূর্ণ করতে পারেনি আসাদ।ওর গালে সজোরে দু’দুটো থাপ্পড় পরার আওয়াজে আশেপাশের যতগুলো কাক বসে ছিল সেগুলো বোধহয় উড়ে চলে গিয়েছে!

মিলি আকস্মিক ঘটনায় ভয়ে ওর দুই গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আসাদের গেঞ্জির কলার চেপে ধরে শোয়েব বলছে,

—তোর সাহস বোধহয় খুব বেড়ে গেছে তাই না? আমার সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের সঙ্গে ফ্লার্ট করছিস!

আসাদ ভয়ে ভয়ে শোয়েবকে বললো,

—ভাই, ভুল হয়ে গেছে আমার। প্লিজ, আপনি শান্ত হন। আমি আর কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলব না।

শোয়েব আসাদের গালে আরও একটি থাপ্পড় মেরে ধাক্কা দিয়ে বললো,

—যা আমার চোখের সামনে থেকে।

ব্যস,শোয়েবের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে আসাদ সহ রিশাভ, টুম্পা তড়িঘড়ি করে ছাঁদ থেকে নেমে নীচে চলে গেল। ছাঁদে রয়ে গেলো আসলাম ভাই, শোয়েব, মিলি আর সেই মেয়েটি।

শোয়েব হাতের ইশারায় আসলাম ভাইকে চলে যেতে বললো।

আসলাম ভাই চলে গেলে শোয়েব এক পা দুই পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে শেষ।এমন সময় শুনতে পেলাম শোয়েব বলছেন,

—তুই যে ছাঁদে বসে ছেলেদের সঙ্গে আলাপ করিস এই কথা কি আমি আব্বাকে বলবো,ইরাবতী? আর, আব্বা যদি একবার আমার মুখ থেকে শুনে। তবে তো আব্বা বিনাবাক্য তোকে বরযাত্রীর গাড়িতে তুলে দেবে।

মিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ ও ভেবেছিল জল্লাদটা বুঝি ওর দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু, শোয়েবের কথা শুনে মনে হচ্ছে ওরা ভাইবোন।

—ও তারমানে এই জল্লাদ ব্যাটা ছয় বোনের এক ভাই! এই বিল্ডিংয়ের মালিকের একমাত্র গুণধর পুত্র। তাই তো উনার এত জঘন্য মার্কা ভাব।

— এই যে মিলি তুমি কি ভাবছো?

মিলির ধ্যান ভগ্ন হতেই দেখতে পেলো, ছাঁদে শোয়েব এবং সে ছাড়া আর কেউ নেই। ইরাবতী গেল কোথায়? এখন যদি মিলিকে ধাক্কা দিয়ে ছাঁদ থেকে ফেলে দেয়। তবে মিলির কি হবে? মনে মনে অসংখ্যবার আতংকের ঢোক গিলতে গিলতে মিলি বোধহয় হার্ট অ্যাটাক করবে।

#চলবে

( প্রথমবার পর্বটা লিখতে গিয়ে দূর্ভাগ্যবশত ডিলিট হয়ে যায়। সেজন্য, গল্পটা পোস্ট করতে দেরি হয়েছে। এই কারণে, আমার মন খারাপ হয় ভীষন। কিন্তু আবারও কষ্ট করে লিখে ফেললাম আপনাদের জন্য। )

#এক_ফোঁটা_প্রেমের_বিষ
#Tahmina_Akhter

৩.

—দেখুন,আ..মি কিন্তু আপনাকে কিছুই বলিনি। আমাকে প্লিজ মারবেন না। আমি মরে গেলে আমার বাবা এবং ভাইয়েরা ভীষণ কষ্ট পাবে।

কথাগুলো বলে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে মিলি।

শোয়েবের কি হলো কে জানে! কিন্তু, হটাৎ করে মিলির খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অত্যন্ত নরম গলায় বলে,

—এই মেয়ে মরে যাওয়ার কথা বলবে না। আর আমি কি একবারও বলেছি তোমাকে মেরে ফেলব?

মিলি মাথা নাড়িয়ে না বোধক শব্দের অর্থ বুঝালো।

—তাহলে,কেন ভয় পাচ্ছো?

—আপনি কেমন যেন? আপনাকে দেখলে ভীষন ভয় লাগে আমার।

মিলির কাছ থেকে নিজের সর্ম্পকে এমন কথা শুনে শোয়েব কিছুটা আশাহত হলো । মিনিট দুয়েক অতিক্রম হবার পর শোয়েব মিলিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—যাকে দেখতে তোমার ভয় লাগে। সে যদি দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা তোমার চোখের সামনে থাকতে চায়। তখন তুমি কি করবে, মিলি?

শোয়েবের কথার আগা মাথা কিছু বুঝতে পারেনি মিলি।এবং,সে বুঝতেও চায় না। শোয়েবের কাছ থেকে দূরে সরে যায় মিলি। তারপর, শোয়েবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—হুটহাট, মেয়ে মানুষের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ানো লোক আমার পছন্দ না।

কথাটি বলে এক দৌঁড়ে ছাঁদ থেকে নেমে নীচে চলে যায় মিলি। মিলির যাবার পথের দিকে তাকিয়ে শোয়েব গুনগুনিয়ে বললো,

— কিন্তু, তোমাকে দেখলে যে আমার পৃথিবীর সবচেয়ে… হতে ইচ্ছে করে।তোমার বুকের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছে হয় আমার।
এখন, আমি কি করব,মন?

শোয়েব দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে ছাঁদ থেকে নেমে সোজা বাড়ির বাইরে চলে যায়। নীচে রাখা বাইকে উঠে রওনা হয় এলাকার মোড়ের চায়ের দোকানের দিকে।

চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে বাইক থামাতেই শোয়েবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রেহান ঠাট্টার সুরে বললো,

— কি রে। তোরে তো দেহাই যায় না। প্রেমে পইরা দিওয়ানা হইয়া গেছস।

—কি যে বলিস তুই?

—সত্যি কথা কইলে দোষ আর তুমি দিওয়ানা হইলে দোষ নাইক্কা! তা ভাবিজান দেখতে কেমন?

— ওর সৌন্দর্য আমার বর্ণনা করতে ইচ্ছে হয় না। কারণ, ও একান্তই আমার। ওর সৌন্দর্য শুধু আমার। তোকে বলে লাভ নেই।

— বাব্বাহ্! এত প্রেম এতদিন কই আছিলো? তার সৌন্দর্য তুমি বর্ণনা করবার চাও না কেলা?

— শালা বলছি না একবার। মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ। আর তুই আছিস আজাইরা প্যাচাল নিয়ে।

—ক্যান কি হইচে?

—আরে গতকাল,নূরী আপার বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় আমাদের বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি দিয়ে যাচ্ছিল মিলি আর ওর খালা। কিন্তু, চারতলা ফ্ল্যাটের সুমন ইচ্ছে করে মিলির গায়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়। আমার তো এমন দৃশ্য দেখে মাথা গরম হয়ে গেছে। মিলি পড়ে যাচ্ছিল কিন্তু আমি ধরে ফেলেছি। জানিস ও ভয়ে শুধু কাঁপছিল। কিছু সময় পর যখন ও বুঝতে পারে ও আমার বুকে আছে। তখন, এক ঝটকায় আমার বুঝ থেকে সরে গিয়ে ওর খালাকে জড়িয়ে ধরে। মিলির গায়ে সুমনের স্পর্শ লেগেছে কথাটি মনে পরতেই, আমি আমার পিস্তল বের করে গুলি করে দিলাম সুমনের ডানহাতে। গুলির শব্দ শুনে মিলি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সুমনের হাতের রক্ত ব্যস অমনি সে অজ্ঞান হয়ে যায়।

—তারপর, তুই ওকে তোদের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছিস। এটাই তো। এই পর্যন্ত বিশবার শুনেছি এই ঘটনা।

—কথা এইখানে শেষ না। আজ আমাদের বাড়ির সকল সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে গিয়ে দেখি ছাঁদে মিলি, ইরাবতী, টুম্পা, আসাদ,রিশাভ বসে আড্ডা দিচ্ছিল। মিলি যখন যখন আসাদ আর রিশাভের দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা বলছিল। ঠিক তখনি রাগে আমার পুরো শরীর কেমন যেন করছিল? তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাঁদে গেলাম, আগামীকাল বিকেল থেকে বিল্ডিংয়ের কোনো ছেলে ছাঁদে যেতে পারবে না। আসাদ আর রিশাভকে বলতেই ওরা কিছুটা গড়িমসি করে মেনে নিয়েছে। কিন্তু,আসাইদ্দা কি করলো জানিস? ছাঁদ থেকে নেমে যাবি যা না কিন্তু তা না করে মিলিকে বলে কি ? মিলি তুমি অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। ব্যস, মাথায় রক্ত চেপে গিয়েছে আমার। দিলাম কলার ধরে দুটো থাপ্পড়।আসাদ আমার কাছ থেকে মাফ চেয়ে চলে গেল। রিশাভ আর টুম্পা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইরাবতী চলে যায়। সবাই চলে যাওয়ার মিলির সঙ্গে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি! ও নাকি আমাকে ভীষণ ভয় পায়। আবার, মেয়ে মানুষের কাছে ঘেঁষে থাকা লোক নাকি ওর পছন্দ নয়। ওর আমার প্রতি এমন মনোভাব জানার পর থেকে আমার মনের ভেতর কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে, দোস্ত।

শোয়েব রাস্তার পাশে থাকা থেমে থাকা একটি রিকশার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো। বন্ধুর কাছ থেকে কথাগুলো শোনার পর রেহানের মনও খারাপ হয়ে যায়।

তবুও, বন্ধুকে আত্মবিশ্বাসী করার জন্য রেহান শোয়েবের কাঁধে হাত চাপড়ে বললো,

— আমি বুঝতে পারছি না। কেন যে, তোর এক দেখায় একটি মেয়েকে ভালো লেগে গেছে?তোদের প্রথম দেখা কখন হয়েছে সেটাও এখন অব্দি জানি না।? কিন্তু, শোয়েব একটা কথা বলি দোস্ত। ভালোবাসা পেতে আর যাই কিছু করিস কিন্তু জোর করিস না। ভালোবাসা তো পাবি না বরং তুই না পাওয়ার বেদনায় কাতরাবি আর মিলি সারাজীবন তোকে ভেবে অভিশাপ দিবে।

রেহানের কথার কোনো জবাব না দিয়ে শোয়েব বাইকে উঠে চলে যায় অজানা উদ্দেশ্য। রেহান শোয়েবের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর বাড়ির পথে রওনা শুরু করেছে।

মিলির খালা যখন চাষাঢ়া থেকে ফিরে এলেন তখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে। তিনি কলিং বেল একবার প্রেস করতেই মিলি এসে দরজা খুলে ওর খালাকে জড়িয়ে ধরে। আচমকা মিলির কাছ থেকে এমন আচরণ পেয়ে আতংকিত হয়ে পরেন জেসমিন। তিনি শান্ত স্বরে মিলিকে কি হয়েে জিজ্ঞেস করলে মিলি জানায় সে এমনিতেই জড়িয়ে ধরেছে কিছুই হয়নি।

জেসমিন মিলির জন্য যা যা কেনাকাটা করেছে সব একে একে খুলে দেখালো। মিলি একনজর দেখে জানায় ওর সবকিছু পছন্দ হয়েছে। তারপর,
রাতে দু’জন মিলে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে যার যার ঘরে।

রাত তখন সোয়া দুইটা।

মোবাইলের ভাইব্রেশনের কম্পনে মিলির ঘুম ছুটে যায়। ঘুম ঘুম চোখে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো, মেসেজ এসেছে। তাও আবার জল্লাদ থুক্কু মানে জল্লাদের নাম্বার থেকে।

মিলি মোবাইল হাতে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে বসে। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজটা পড়তে শুরু করে মিলি।

” দরজা খুললে দেখবে একটি প্যাকেট রাখা আছে।প্যাকেটে যা আছে আগামীকাল রিসিপশনে তুমি তাই পরিধান করবে। তুমি মনে করো না আমি তোমাকে এমনিতেই বলছি। আমি তোমাকে আদেশ করছি। এবং, আমি যদি আগামীকাল তোমাকে আমার পছন্দসই ড্রেসে না দেখি তবে মাইন্ড ইট। আমার চোখের সামনে যদি তুমি পড়ো। তবে তোমার কি হবে শুধু সময় কথা বলবে।”

—এটা কি মেসেজ ছিল নাকি হুমকি বার্তা?

মিলি হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো।কারণ, শোয়েবের আচরণ দেখে এতটুকু সে বুঝতে পারছে শোয়েবের মনে মিলির জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে। কিন্তু, এমন লোককে এতটা প্রশ্রয় দেয়া মিলির ঠিক হবে না। তাই এখন দরজা খুলে প্যাকেট নিয়ে আসার কোনো মানেই হয় না।

—আমার খালা কি আমার জন্য কম কিছু এনেছে যে ওই জল্লাদের দেয়া ড্রেস পরতে হবে? “আমি যদি আগামীকাল তোমাকে আমার পছন্দসই ড্রেসে না দেখি তবে মাইন্ড ইট। চোখের সামনে যদি তুমি পড়ো তবে তোমার কি হবে শুধু সময় কথা বলবে।” হুহ্ শখ কত! যেন আমি তার গোলাম! আমার নামও মিলি। আমিও দেখব আপনি কি করতে পারেন মি. সরফরাজ আহমেদ শোয়েব?

মুখ ভেঙিয়ে কথাগুলো বলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে যাওয়ার জন্য চোখ বুঁজে শুয়ে পরে মিলি।

এদিকে, শোয়েব সিঁড়িতে বসে মিলিদের ফ্ল্যাটের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা কখন মিলি আসবে এবং ওর পছন্দ করা ড্রেসগুলোর প্যাকেট নিয়ে যাবে।

কিন্তু, আফসোস শোয়েব যদি একটিবার জানত। তবে, শোয়েব মিলির জন্য এভাবে সারারাত বসে অপেক্ষা করত না।

#চলবে