এক ফোঁটা প্রেমের বিষ পর্ব-০৫

0
496

#এক ফোঁটা প্রেমের বিষ
#Tahmina Akhter

৫.

বাইকে বসে আছে শোয়েব। মিলি এদিক সেদিকে তাকিয়ে ভাবছে কি করা যায়?আদৌও কি কিছু করা সম্ভব? একটু আগে ওর খালা ওকে কল দিয়ে বলে দিয়েছে যেন শোয়েবের সঙ্গে চলে আসে। মিলি একটা কথা ভেবে পাচ্ছে না। ওর খালা কি করে পারল ওকে এই জল্লাদের কাছে একা ছেড়ে দিতে!

—প্ল্যান মাথায় এসে থাকলে আমাকে বলো। নয়তো এসো আমার সঙ্গে। তোমার চক্করে পরে আমার আপার রিসিপশন না মিস করে ফেলি।

শোয়েবের কথায় মিলির ধ্যান ভগ্ন হয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শোয়েবের বাইকের পেছনে উঠে বসে। শোয়েব মিররের দিকে তাকিয়ে আছে মিলির প্রতিবিম্ভের দিকে। মিলির যে অস্বস্তি হচ্ছে তা শোয়েব ভালো করে বুঝতে পারছে। তাই মিলির অস্বস্তি কাটাতে শোয়েব মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

— আমি কিন্তু ওতটা খারাপ বাইক ড্রাইভ করি না। তুমি শুধু আমার কাঁধে হাত রেখে বসে থাকলে চলবে। আমি তোমাকে তোমার গন্তব্যেস্থলে পৌঁছে দেব।

মিলি কাঁপাকাঁপা হাতে শোয়েবের কাঁধে হাত রাখল। মিলির হাতের স্পর্শ পেয়ে শোয়েব চুপ হয়ে যায়। তারপর, বাইক নিয়ে রওনা হয় যাত্রাবাড়ির উদ্দেশ্য।

শোয়েব বাইক চালানোর ফাঁকে আয়নায় মিলির মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও ড্রাইভে মনোযোগী হয়। আর মিলির আপ্রাণ চেষ্টা যেন মিলির ডান হাত ছাড়া শোয়েবের শরীরের অন্য কোনো অংশে মিলির শরীরের ছোঁয়া পায়।

মিলি-শোয়েব যখন ক্লাবে পৌঁছে যায় তখন খেয়াল করে বাইরে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে মিলির খালা জেসমিন। মিলি বাইক থেকে নেমে এক দৌঁড়ে ওর খালার কাছে চলে যায়। শোয়েব সেই আগের মতো চেহারায় গম্ভীরতা ছাপ ফেলে এগিয়ে যায় ক্লাবের ভেতরে।

মিলি আর জেসমিন একসঙ্গে ক্লাবে ঢুকে সর্বপ্রথম চলে যায় সেখানে। যেখানে সবাই নবদম্পতির সঙ্গে ছবি তুলছে। যেহেতু জেসমিনকে নূরী চেনে এবং জানে। তাই উনাকে দেখতে পেয়ে নূরী হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে,

—আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?

—ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো?

— জি আন্টি ভালো আছি। আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আছে যে ও কে?

— আরে আপা ও হচ্ছে মিলি। যার জন্য ওইদিন তোর বিদায়ের পর ভাইয়া সুমনের হাতে গুলি করেছিল।

নূরীর প্রশ্নের উত্তর ফিসফিসিশে দেয় পাশে বসা ইরাবতী। তারপর, সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,

—ও হচ্ছে মিলি। আমাদের জেসমিন আন্টির বোনের মেয়ে।

ইরাবতীর কাছ থেকে মিলির পরিচয় শুনে নূরী পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে মিলির দিকে। তার এত বিচক্ষণ ভাইটা হুট করে কি আর বিয়ে বাড়িতে এত হুই-হুল্লোর বাঁধিয়েছে? পরীর মতো মিলি নামক মেয়েটাকে তো শুধু শোয়েব নামক রাজপুত্রের সঙ্গে মানায়। নূরী যখন এইসব ভাবছিল ঠিক তখনি কোত্থেকে শোয়েব এসে মিলির পাশে এসে দাঁড়ায়।

কালো পাঞ্জাবি পরনে তার ভাইটা আর সাদা জামদানী পরনে মিলিকে একসঙ্গে দারুণ মানিয়েছে। এদের দুজনকে একসঙ্গে লোকে দেখলে শুধু ঈর্ষার নজরে তাকাবে।

আজ বাড়িতে গেলে নূরী তার আব্বার সঙ্গে শোয়েবের বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আলাপ করবে। কারণ, তার ভাইয়ের যেহেতু এই মেয়ে পছন্দ হয়েছে তাহলে আজ না হোক এক যুগ পরে হলেও শোয়েব এই মেয়েকে বিয়ে করবে। তাহলে, শুধু শুধু শোয়েবেকে এত অপেক্ষার মাঝে না রেখে ওরা ছয় বোন মিলে যা করার করবে।

খাওয়াদাওয়ার পর্ব শুরু হলে ইরাবতী, মিলি, টুম্পা, জেসমিন এবং ইরাবতীর চাচাতো ভাই আশফিন এক টেবিলে বসে পড়ে। কাকতালীয় ভাবে আশফিনের পাশে মিলি এবং মিলির পাশে জেসমিন বসা।

মিলি হয়তো এক লোকমা পোলাও মুখে দিয়েছিল।কিন্তু, খাবারটা আর চিবিয়ে গলায় নামাতে পারেনি। কোত্থেকে শোয়েব এসে আশফিনের পাঞ্জাবির কলার ধরে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে লনের দিকে। উপস্থিত সকলেই আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যায়। এমন সময় শোয়েবের আব্বা জনাব শাফায়াত আহমেদ হুংকার দিয়ে বললেন,

—শোয়েব, ভালো হবে না বলছি। আশফিনকে ছেড়ে দে। যদি ওর গায়ে একটি আঁচড় পরেছে তবে আমি তোর কি করব তোর হয়তো জানা নেই।

শোয়েব তার বাবার হুংকার শুনেও থেমে যায়নি। আশফিনকে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ঘাসের উপর। ক্লাবে আসা অনেক মেহমান লনের কাছে ভীর জমিয়েছে। শুধুমাত্র কি হয়েছে তা দেখার জন্য?

মিলি এবং ওর খালা কোনোভাবে টিস্যু দিয়ে হাত মুছে এগিয়ে যায় লনের দিকে। ভীর ঠেলে শোয়েব এবং আশফিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শোয়েব মিলির উপস্থিতি টের পেয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় মিলির দিকে। মিলি শোয়েবের এমন চাহনি দেখে জেসমিনের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

—কি হয়েছে ভাই?এমন করছো কেন?কিছু ভুল হয়েছে আমার দ্বারা?

— বল শোয়েব কি দোষ করেছে আশফিন? শোয়েব ওর বাবার প্রশ্নের উত্তরে জবাব দেয়।

— আমার কোনো কিছুর উপর কেউ নিঃশ্বাস ফেলুক এই জিনিসটা আমি নিতে পারি না। সেই জায়গায় তোমার ভাইয়ের ছেলে আমার মনের দিকে তাকিয়েছে বাজে নজরে। ওর শাড়ীর আঁচলে হাত দিয়েছে। ওর এই হাত রেখে দেয়াটা অনেক বড়ো ভুল হবে আব্বা।

কথাটি শেষ করা মাত্র শোয়েব আশফিনের হাত মুচড়ে ধরে। আশফিন এক গগনবিদারী চিৎকার দিতেই মিলি শোয়েবসহ উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

— আপনি একটা জালিম এবং বদ্ধ পাগল। এই লোকটাকে কেউ চিকিৎসা করাচ্ছে না কেন?

মিলির কথার প্রতিউত্তরে কেউ কোনো জবাব দেইনি। কারণ, শোয়েবের বাবা শাফায়াত আহমেদ নারায়ণগঞ্জ শহরের বড়ো ব্যবসায়ী। শোয়েবের মামা জিল্লুর রহমান নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য। তাই শোয়েবের এবং ওর পরিবার সম্পর্কে কারো কিছু বলার সাহস নেই।

— তুমি কার চিকিৎসার কথা বলছো মন? আমার চিকিৎসার কথা?আরে আমার এই পাগলামির মূল কারণ হচ্ছো তুমি। এই যে আমাকে জালিম বলছো তাও কার কারনে আমি জালিম হয়েছি জানো? শুধুমাত্র তোমার জন্য। আমি তোমাকে বলছি না যে আমি তোমাকে পছন্দ করি বা আমার তোমাকে ভালোলাগে। কিন্তু, আমি ব্যতিত কেউ তোমার দিকে তাকালে বা স্পর্শ করলে আমার পুরো অঙ্গে যেন কেউ গলিত সিসা ঢেলে দেয়।

মিলিকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে কথাগুলো বলে শোয়েব। শোয়েবের কাছ থেকে এমন কথা শুনে শোয়েবের বাবা,মিলি সহ উপস্থিত সকলেই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে।কারণ, যেই ছেলে কোনো একসময় কসম খেয়ে বলেছিল, সে কোনোদিনও কোনো নারীর সঙ্গে বিয়ে নামক সম্পর্কে জড়াবে না। কিন্তু, কি এমন হয়েছে যার জন্য আজ সে তার কসম ভুলে গিয়ে এই মেয়েতে মজেছে।

মিলি শোয়েবের মুখের দিকে একঝলক তাকিয়ে ওর খালার হাত ধরে ক্লাব থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়। খুব বেশি দূরে যেতে পারেনি তার আগে কারো ডাকে মিলি এবং জেসমিন থমকে দাঁড়ায়।

#চলবে