#এক_বরষায় [৩৩]
জেরিন আক্তার নিপা
______________
সাদাফ বোনের সাথে ধারার বাবার ঘরটিতে বসে আছে। সে চোখ ঘুরিয়ে ঘরটির আসবাব দেখছে। শফিকুল ইসলাম এনাদের হঠাৎ আগমনে কী বলবেন বুঝতে পারছেন না৷ তবে এনাদের বক্তব্যে স্পষ্ট মহিলাটি তার ভাইয়ের জন্য ধারার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। মেয়ের বিয়ে নিয়ে তিনি এখনও তেমন ভাবে কিছুই ভাবেননি। মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। ভালো একটা সুপাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে হবে। কিন্তু তার এই মেয়েটিকে ছাড়া তিনি তার জীবন সংসার কল্পনা করতে পারেন না। তিনি যেখান থেকেই ফিরুক বাড়িতে এসে সবার আগে তার বড় মেয়েটিকে দেখতে চায়। রোহানের মা বলছেন,
-ধারাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। আমার ছেলেকে পড়ায় ও। ওর কথাবার্তা আচার ব্যবহারে ওকে আমি বিশেষ পছন্দও করি। আসলে এ যুগে ওর মতো মেয়ে হয় না।”
শফিকুল ইসলাম মেয়ের প্রশংসা শুনে গর্ববোধ করার সাথে খানিকটা লজ্জিতও হলেন। ছোটবেলা থেকে দুই মেয়ের একজনের উপরও তিনি নজর দেননি। বলা যায় বাবা হবার কোন দায়িত্বই পালন করেনি। আজ ওরা পড়াশোনা করে যতটুকু এসেছে বা যেটুকু শিষ্টাচার শিখেছে তা সম্পূর্ণই নিজেদের গরজে। ধারা নিজের সাথে ছোট বোনটাকেও উচ্ছনে যেতে দেয়নি। এই অল্প বয়সে শক্ত হাতে সংসারটাও ধরে রেখেছে।
রোহানের মা তার ভাইটিকে দেখিয়ে বললেন,
– আমার ভাই। ওর নাম সাদাফ। ডাক্তারি পাস করেছে। আমরা আসলে যে কারণে এসেছি তা হলো, আপনার মেয়েকে আমি আমার ভাইয়ের বউ করে নিতে চাই। আমার ভাই বলে বলছি না। ছেলে হিসেবে ওর মতো আরেকটি ছেলে পাওয়া দুষ্কর। আপনার মেয়ের জন্য আমার ভাই সবদিক দিয়েই যোগ্য।”
শরিফুল ইসলাম ছেলেটিকে দেখলেন। ছেলেটা লম্বা চওড়ায় স্বাস্থ্যে এমনকি চেহারায় সব দিক দিয়েই ভালো। কিন্তু শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে তো আর মানুষ চেনা যায় না। কে জানে ছেলেটির চরিত্র কেমন হবে। তার মেয়েকে ভালো রাখতে পারবে কিনা কে জানে। শরিফুল ইসলাম আসলে মেয়েকে জিজ্ঞেস না করে কোন কথা দিতে চাচ্ছেন না। দেখা গেল মেয়েই যদি এখন বিয়ের জন্য রাজি না হয়। তিনি কোন কথা বলছেন না দেখে রোহানের মা আবার বলল,
-আপনি কিন্তু কিছু বলছেন না। আজই কোন পাকা কথা দিয়ে ফেলতে হবে এটা বলছি না। আপনারাও আমাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন। তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে কিছু একটা হবে। একটা কথা বলে রাখা ভালো। আমার ভাইয়ের কিন্তু ধারাকে বেশ পছন্দ। এখন ধারার মতামত কী সেটা জেনে…
ওদের কথার মাঝে তখনই দাদী এই ঘরে আসে। দাদীর পেছনে জেসমিনও এসেছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছেলেটাকে দেখে জেসমিনের গা জ্বলে গেল। সাদাফের চোখও জেসমিনের উপর পড়ল। আশ্চর্য হলো সে। এই মেয়েটা কি এই বাড়িতে থাকে? ধারার কিছু হয় নাকি ও! তাহলে সেদিন যে বলল ধারা ওর কেউ হয় না। এক পাড়ায় থাকে তাই চিনে। ঠিকানাও বলেনি সেদিন। দাদী ঘরে এলে শফিকুল ইসলাম বললেন,
-আমার মা।”
রোহানের মা একগাল হেসে দাদীকে সালাম দিলেন। জেসমিন ঘরের ভেতর ঢুকলো না। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকল। রোহানের মা ওকে দেখলে দাদী বললেন,
-আমার ছোট নাতনি।”
‘ছোট নাতনি!’ তার মানে তো ধারার বোন। এই বাড়ির মেয়ে। সাদাফ মনে মনে ভাবল, শালিকা তুমি তাহলে সেদিন আমাকে মিথ্যা বলে ঘোল খাইয়েছ! কিন্তু আমি তো ঠিকই তোমাদের বাড়ি চিনে গেছি। তোমার বোনের টানে এপর্যন্ত ছুটেও এসেছি। সাদাফ জেসমিনের দিকে তাকিয়ে হাসলে জেসমিন ওর সামনেই মুখ মুচড়ে দিল। সাদাফ নিঃশব্দে হেসে ফেলল।
বাবার কথা শুনে জেসমিনের রাগ উঠছে। বাবা এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলছে কেন? সরাসরি কেন বলছে না, না আমার মেয়েকে আমি বিয়ে দিব না। আপনারা আসতে পারেন। বাবাকে দেখে জেসমিনের মনে হচ্ছে বাবা হয়তো আপুর বিয়ের জন্য রাজি। দাদীকে নিয়ে যা ওর ভরসা। দাদী বলছেন,
-আমরা আসলে ধারার বিয়া নিয়া এহনও তেমন কিছু ভাবি নাই। মা হারা মাইয়া ওরে বিয়ে দিয়ে দিলে আমরা কারে নিয়া থাকব।”
রোহানের মা হেসে বললেন,
-সেটা তো সব মেয়েদের বেলাতেই এমন দাদী। আমিও তো আমার বাবা মা’র একমাত্র মেয়ে। আমাকে কি বাবা মা নিজের কাছে রাখতে পেরেছে? ধারা আমাদের কাছে গেলে মেয়ের মতোই আদর পাবে।”
জেসমিনের ইচ্ছে করছিল সে নিজেই বলে, এত তেল দিচ্ছেন কেন? বাজারে তো তেলের টান পড়ে যাবে। আপনারা যতই মিষ্টি কথায় চিঁড়া ভেজাতে চান, আমার বোনের বিয়ে আপনার ভাইয়ের সাথে কোনকালেই দেব না।
জেসমিন বাবার সামনে কিছু বলার সাহস পেল না। সে বোনের কাছে চলে এলো। ধারা ওদের আসতে দেখেছে। এবং ওরা কোন উদ্দেশ্য এসেছে এটাও বুঝতে পেরেছে। ছেলেটাকে প্রথম দিনই না করে দিয়েছিল, আমার পেছনে আসবেন না। ছেলেটা তার কথা শুনে তার পেছনে না এসে যে বোন নিয়ে বাড়ি চলে আসবে তা কে জানতো! জানলে এটাও বলে দিত, আমাদের বাড়িতেও আপনি আসবেন না।
-বাবাকে কিছু বলছিস না কেন তুই?”
জেসমিনের কথায় ধারা দরজার দিকে তাকায়। জেসমিনের কেন এত রাগ হচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। মুনতাসীর ভাই বাড়ি গিয়ে হারিয়ে গেল নাকি? এখনও ফিরছে না কেন? ওর অনুপস্থিতিতে কি আপুর বিয়েটা হয়েই যাবে।
-বাবা কেন ওদের ঘরে বসিয়ে রেখে আলাপ জুড়ে দিয়েছে! এখনও চলে যেতে বলছে না কেন?”
ধারা তীক্ষ্ণ চোখে বোনকে দেখল। কিছু বোঝার চেষ্টা করে বলল,
-তোর কী হয়েছে?”
-আমার কী হবে? কিন্তু তোর বিয়ে হয়ে যাবে এটা শিওর।”
-হলে হলো তাতে তুই এত উত্তেজিত হচ্ছিল কেন?”
-কই উত্তেজিত হচ্ছি! আর তুই কি বিয়েতে রাজি?”
-রাজি, অরাজি কথা না। তোর ব্যাপারই তো আমি বুঝতে পারছি না। তুই চাস না তোর বোনের বিয়ে হোক?”
-কেন চাইব না! অবশ্যই চাই। হাজার বার চাই। কিন্তু সেটা আমার পছন্দের ছেলের সাথে। বাবার ঘরে বসে আছে ওই ছেলেটার সাথে না।”
ধারা কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-তোর পছন্দের ছেলে! তোর পছন্দের কেউ আছে নাকি?”
-থাকবে না কেন?”‘
-শুনি তো কে সে!”
-কে আবার মুনতা… বলতে বলতে থেমে গেল জেসমিন। আপুটা কী ভীষণ চালাক! কীভাবে কথার প্যাঁচে ফেলে তার পেটের ভেতর থেকে আসল কথা বের করে নিতে চাচ্ছে। জেসমিন থেমে গেলেও ধারার ধারালো নজর এখনও ওর মুখের উপরে। জেসমিনের পছন্দের “ম” দিয়ে তো একটা মানুষের নামই। ওই মানুষটার সাথে বোনের বিয়ে দিতে চায়!
আপুর তরবারির ধারের মতো দৃষ্টির সামনে থেকে জেসমিন দৌড়ে পালিয়ে বাঁচল। আপু যেভাবে তাকিয়েছিল মনে হচ্ছিল এক্ষুনি এক গ্লাস পানির সাথে টুপ করে গিলে ফেলবে তাকে।
ওরা চলে যাচ্ছিল। জেসমিন ওদের সামনে পড়ে গেলে মহিলাটি মিষ্টি করে হেসে বলল,
-তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমাদের বাড়িতে যেও একদিন কেমন?”
জেসমিনও হেসে মাথা নাড়াল। মনে মনে বলল, কচু যাব। গেলেও বোম নিয়ে গিয়ে বাড়িটাই উড়িয়ে দিয়ে আসব। বোন চলে গেলেও সাদাফ গেল না। জেসমিনকে দেখে চোর ধরে ফেলা হাসি দিয়ে বলল,
-সেদিন ঠিকানা দিলে না তবুও তো তোমাদের বাড়ি চিনে চলে এলাম।”
এই ছেলে এরকম গায়ে পড়া! এর সাথে আপুর বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না। ইচ্ছে করছে এক ঘুষি দিয়ে এর নাক ফাটিয়ে দিতে। সাদাফ আশেপাশে তাকাচ্ছে। জেসমিনের দিকে একটু ঝুঁকে এসে গলার স্বর নিচু করে বলল,
-তোমার বোনটা আমাকে দেখে কোথায় লুকিয়ে আছে হবু শালিকা? আমার সামনে আসতে কি ও লজ্জা পাচ্ছে? আচ্ছা ঠিক আছে। একেবারে বিয়ের দিনই নাহয় দেখব।”
****
জেসমিন যদি মুনতাসীর ভাইয়ের ঠিকানা জানতো তাহলে কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে হলেও খবর পাঠাতো। মুনতাসীর ভাই আপনি যত জলদি পারেন চলে আসুন। দেরি করে এলে কিন্তু পরে পস্তাবেন। আমি একা তো আপুর বিয়ে আটকাতে পারব না। কিন্তু আফসোস সে তো মুনতাসীর ভাইয়ের বাড়ি কোথায় এটাই জানে না। বাবাকে জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে। মুনতাসীর ভাই তো বাবার বন্ধুর ছেলে।
শফিকুল ইসলাম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তিনি ঠিক করে উঠতে পারছেন না এই পস্তাবে কি তার রাজি হয়ে যাওয়া উচিত! ধারার মতামত নিয়েই ওদের কিছু একটা জানাবেন। অনেক বছর আগে বাবার দেওয়া কথা রাখতে বন্ধুর ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিয়ে তিনি কি ভুল করবেন। দুইটা দিন এসব নিয়েই ভাবলেন তিনি। ধারার দাদী ছেলেকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বললেন,
-মা আমার কী করা উচিত আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।”
-বোঝাবুঝির তো কিছু নাই শফু। তোর বাপ কথা দিয়া গেছে, ধারার বিয়া মুনতাসীরের সাথেই হইব।”
-আব্বা যখন কথা দিয়েছিল তখন তো পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল মা। এখন তো সময় পরিস্থিতি সবই পাল্টেছে।”
-তার মানে তোর বাপের কথা রাখবি না তুই?”
-আব্বার কথা রাখতে গিয়ে আমি তো আমার মেয়ের ভবিষ্যত অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারি না। মুনতাসীর ছেলে হিসেবে খারাপ আমি এটা বলছি না। এইরকম একটা ছেলের সাথে আমি চোখ বন্ধ করে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যেতাম। কিন্তু..
-কী কিন্তু? ওই ছেলেরে তোর এতই পছন্দ তাইলে কিন্তু কেন আবার বাপ?”
শরিফুল ইসলাম অসহায় ভাবে হাসলেন। তার চোখ জোড়া পানিতে টলমল করছে।
-আমার মেয়ে দুইটার কোন দোষ না থাকলেও আমার করা পাপের শাস্তি ওদেরও ভোগ করতে হচ্ছে। যে কারণে আমি আমার বাপের ভিটামাটি ছেড়েছি। এতগুলো বছর ধরে অচেনা অজানা মানুষের সাথে বসবাস করছি। এখন আমি কীভাবে আমার মেয়েকে অতীতের সেই সময়ে নিয়ে দাঁড় করাই। মুনতাসীরের সাথে বিয়ে হলে ধারাকে আবার ওই জায়গায় ফিরে যেতে হবে। ওখানকার মানুষগুলো আমার মেয়ের জীবনটকে অভিশপ্ত করে তুলবে।”
-তুই হুদাই হুদাই চিন্তা করতাছোস বাপ। মুনতাসীর ধারারে বিয়া কইরা এখানেই থাকব।”
-দরকার কী মা? আমার মতো ছেলেটাকেও ওর বাপের ভিটা ছাড়তে হবে। তার থেকে ভালো আব্বা কী কথা দিয়েছিল আমরা তা ভুলে যাই। তাছাড়া নজরুল তো নিজে থেকে আমাদের কাছে আসেনি। মুনতাসীরেরও হয়তো ওসব কথা মনে নেই। আমার মেয়েটা জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে মা৷ ওর ভবিষ্যতটা সুন্দর হোক আমি এটাই চাই। বাবা হিসেবে আমার আর কিছু চাওয়া নেই।”
ছেলে যা বলছে ভুল তো কিছু বলছে না। ওখানকার মানুষের ছোঁচাল বিষাক্ত কথা থেকে বাঁচতেই তো ওরা রাতারাতি ঘরবাড়ি বেচে এখানে এসে উঠেছে। এখন যদি মুনতাসীরের সাথে ধারার বিয়ে হয় তাহলে ছেলেটা বউ নিয়ে বাড়িতে উঠবে এটাই তো স্বাভাবিক। ধারার পরিচয় পেলে অনেক বছরের পুরোনো কথাও মানুষ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করবে। যে মা’কে মেয়েটা মৃত মনে করে সেই মা’র জন্যই আবার ওর জীবনে কষ্ট নেমে আসবে। মুনতাসীর যদি মেয়েটাকে বিয়ে করে এখানেই থেকে যেত! কিন্তু এই অন্যায় আবদার ছেলেটার কাছে করা যাবে না। এখন তাদের বাড়িতে আছে সেটা চাকরির খাতিরে। সারাজীবন তো আর এখানে থেকে যাবে না ছেলেটা। একদিন না একদিন তো নিজের বাড়ি ফিরেই যাবে।
****
বাবাকে ধারা কতটা ভালোবাসে তা কোনদিন শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবে না হয়তো। বাবাও জানবে না। আসলে আর পাঁচটা বাবা মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয় তাদের সম্পর্কটা তো তেমন মা। ওই মানুষটা বাবার জীবন থেকে চলে যাবার পর বাবা নিজের দু’টো মেয়ের কথাও একপ্রকার ভুলেই গেছিল হয়তো। দিনের পর দিন বাইরে থাকতো। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরতো। দাদাজান কোনোদিনও ওই অবস্থায় তাদের দুই বোনকে বাবার সামনে যেতে দেয়নি। এভাবেই কখন যে বাবার সাথে তাদের বিশাল একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল। সেই দূরত্ব এখন আর কোনকিছু দিয়েই মিটানো যাবে না। কিন্তু তার বিয়ের ব্যাপারে বাবা তার মতামত জানতে চেয়েছে ভেবেই ধারার চোখ ভিজে উঠছিল। বাবা চাইলে তার মতামত না নিয়েও তার বিয়ে ঠিক করে ফেলতে পারত। ধারা ঠোঁট কামড়ে ধরে অনেক কষ্টে কান্না চেপে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শরিফুল ইসলামও মেয়ের সামনে কেমন যেন থিতিয়ে যান। মেয়েকে কি তিনি ভয় পান? এটা তিনি আজও বুঝতে পারেননি। ইতস্তত গলায় তিনি বললেন,
-মা তুমি যা চাইবে সেটাই হবে। তোমার চাওয়ার বাইরে কোনোকিছু হবে না। তোমার মতামতই সব। এখন তুমি কী বলো মা?”
ছুটে গিয়ে বাবার বুকে পড়ে চেপে রাখা চোখের জল ছেড়ে দিয়ে ধারার বলতে ইচ্ছে করছিল,
‘বাবা, কতদিন পরে তুমি আমাকে মা ডেকেছ? কোন দরকার ছাড়া কেন তুমি আমাকে ডাকো না? তুমি সবসময় কেন আমার সাথে এভাবে কথা বলো না? কেন আমাদের থেকে দূরে থাকো? আমরা তো কিছু চাই। না আমরা দুই বোন ছোট থেকেই তোমার ভালোবাসা চেয়েছি শুধু। তুমি কেন আমাদের মাথায় হাত রেখে একটিবার বলোনি, মা গো তোমরা একা না। তোমাদের বাবার ছায়া এখনও তোমাদের মাথার উপরে আছে।”
ধারা চাইলেও এসব কথা কখনও বাবাকে জানাতে পারবে না। বাবার বুকে মাথা রেখে কেঁদে কেঁদে নিজের কষ্ট গুলো বলতে পারবে না। শরিফুল ইসলাম এখনও মেয়ের জবাব জানার অপেক্ষায় আছেন। ধারার থুতনি বুকের সাথে লেগে আছে। তার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা পানি মাটিতে পড়ল। ঠোঁট কামড়ে রুদ্ধ গলায় বলল,
-তুমি যা বলবে আমি তা-ই করব। তুমি আমার জন্য যেটা ভালো মনে করবে আমি সেটাই মেনে নেব। আমার জীবনের সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তোমার আছে বাবা।”
চলবে_
এক বরষায়
পর্ব -৩৪
জেরিন আক্তার নিপা
___________
আজ ধারাদের বাড়ির পরিবেশ কিছুটা অন্যরকম। সকাল থেকেই কোনোকিছুর আয়োজন চলছে। অনেকদিন পর আজ দাদী রান্না গেছে। ধারা মানা করলেও তিনি শোনেননি। ধারা বলেছে, আমি পারব দাদী। তুমি বলো কী কী রাঁধতে হবে। দাদী সেই কথা কানে না নিয়ে বললেন,
-আমি জানি তোর রান্ধনের হাত আমার থেইকাও ভালো। কিন্তু আজ তুই কোন রান্নায় হাত লাগাইতে পারবি না। আগুনের কাছে খাড়াইয়া না থাইকা ঘরে যা।”
ধারা দাদীর সাথে তর্ক না করে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দাদী আজ তার কোন কথা শুনবে না। ধারা আরও কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলো। ঘরে এসে দেখল জেসমিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। কোথাও যাচ্ছে নাকি ও? এমনিতে তো বাড়িতে থাকলে সারাদিন চুল খোঁপা করে ঘুরে বেড়ায়। বকেও চুল আঁচড়ানো যায় না। আলনা থেকে একটা কাপড় নামাতে গিয়ে বাকি কাপড় গুলোও এলোমেলো করে রেখেছে। অন্য সব দিন হলে জেসমিনের এই কাজের জন্য ধারা ওকে বকতো। কিন্তু আজ কিছু বলল না। নামিয়ে রাখা কাপড় ভাঁজ করতে করতে বলল,
-কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”
জেসমিন বোনের দিকে না ফিরেই আয়না দেখতে দেখতে বলল,
-হু।”
-কোথায় যাচ্ছিস?”
-কলেজে।”
-কলেজে! ছুটির দিনেও তোর জন্যে কলেজ খোলা রেখেছে?”
জেসমিন থেমে গিয়ে ভাবল, সত্যিই তো। আজ তো শুক্রবার। শুক্রবারে কলেজে যাবে এই বাহানা অন্তত দেওয়া যায় না। তারপরও জেসমিন গলায় আগের মতই তেজ রেখে বলল,
-কলেজে গেলেই যে ক্লাস করতে হবে এমন তো কোন কথা নাই। ছুটির দিনেও মাঠে অনেক ছেলেপুলে থাকে। ওদের সাথে ফুটবল খেলব।”
জেসমিনের রাগের কারণ ধারা জানে। সে বাবার কথায় রাজি হয়ে গেছে এজন্যই তার উপর রেগে আছে। জেসমিন চায় না ধারা এই ছেলেকে বিয়ে করুক। দাদীকে বলে, তাকে বলে কোনোভাবেই বিয়ের কথাবার্তা আটকানো গেল না দেখেই এরকম করছে। জেসমিন নিজে নিজে বিড়বিড় করছে,
-আমি বাড়িতে থাকলে কী? আর না থাকলেই কী? আমার কথার কি কোন দাম আছে? আমি না করলেও তো মানুষ বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যায়। তাই আমার বাড়ি থেকে চলে যাওয়াই ভালো।”
জেসমিন সত্যি সত্যিই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। কোথায় গেল বলে না গেলেও ধারা জানে জেসমিন এখন নয়ন ভাইয়ের কাছে যাবে। আচ্ছা নয়ন ভাই কি জানে আজ যে ধারাকে দেখতে আসবে। ছেলের বাবা মা’র তাকে পছন্দ হলে আজই পাকা কথা হয়ে যাবে। হঠাৎ করে ধারার কেনই যেন ধারার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এসব কিছুই ধারা চায় না। তবুও তার না চাওয়াতেও একের পর এক ঘটনা গুলো হয়ে যাচ্ছে।
****
জেসমিন নয়নদের বাড়িতে এসে বসে আছে। নয়ন ভাই বাড়িতে নেই। কাজের সময় কাউকেই পাওয়া যায় না। সারাবছর নয়ন ভাই আপুর পেছন ছাড়ে না আর এখন আপুর বিয়ের হয়ে যাচ্ছে আর তাকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মুনতাসীর ভাইও নয়ন ভাইয়ের মতোই। বাড়ি যাবার নাম করে সেই যে গেল আর আসার সময় হচ্ছে না। এসে দেখবে আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। এদের সাথে এটাই হওয়া উচিত। দু’জনের চোখের সামনে দিয়ে ওই ছেলেটা আপুকে বিয়ে করে নিয়ে চলে গেলেই এদের শিক্ষা হবে। তখন পথে পথে বসে কান্না করবে।
সাদাফের মা, বাবা, বোন আর ওর এক চাচা এসেছে। ওদের হাতে মিষ্টি আর পান সুপারি দেখে মনে হচ্ছে নতুন জামাই এই প্রথম বার শ্বশুরবাড়িতে এসেছে। অথচ এখনও বিয়েই ঠিক হয়নি। ধারা বিরক্ত হলেও কিছু বলল না। জেসমিন বাড়িতে নেই। দাদী বুড়ো মানুষ। তাই মেহমানদের আপ্যায়ন করার সকল দায়িত্বই তার উপর পড়েছে। ধারা সাদাফের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট নেওয়ার সময় সাদাফ ওকে দেখে মিষ্টি করে হাসল। এই হাসিও ধারার কাছে বিষের মতো লাগল। এই ছেলেটাকে বিয়ে করলে বাকিটা জীবন এর এই বিষের মতো হাসিই সহ্য করতে হবে। ধারা কি এখনই না করে দিবে? বিয়েটা সে করবে না।
****
নয় দিন পর মুনতাসীর ফিরে এসেছে। ছোট ভাইয়ের কল পেয়ে বাড়িতে গিয়েছিল। বাবা নাকি অসুস্থ। ভেবেছিল বাবাকে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরবে। তারপর বাবা সুস্থ হলে এবাড়িতে আসার কথা বলবে। কিন্তু তার ভাবনার মতো কিছুই হলো না। বাড়ি ফিরে দেখল বাবার সময় প্রায় শেষের দিকে। তাকে দেখার জন্য মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছিল। যে রাতে সে বাড়ি গিয়েছে সে রাতেই বাবা চলে গেল। বাবাকে হারিয়ে ছোট ভাইকে সামলিয়ে মুনতাসীরের নিজের ছোট্ট পৃথিবীটাও এলোমেলো হয়ে গেল। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ফিরতে আজ নয় দিন। তার বাবার মৃত্যুর খবর এবাড়ির কাউকে জানানো হয়নি। বাসে তার ফোনটা চুরি হয়ে গেছে। শোকের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ভেবেছিল শফিকুল কাকাকে জানাবে। তারপর দেখা গেল ফোন চুরি যাওয়ায় এই বাড়ির সাথে যোগাযোগের পথও বন্ধ হয়ে গেল। কারো ফোন নাম্বারই মুখস্ত নেই। বা অন্য কোথাও তোলা নেই। একমাত্র এখানে এসেই খবরটা জানাতে হবে।
বাড়িতে পা রেখেই মুনতাসীর বুঝলো বাড়ির পরিবেশ আজ অন্যরকম। ধারার বাবার ঘরে অচেনা কয়েকজন মানুষকেও দেখল।
দাদীর পিড়াপীড়িতে ধারাকে শাড়ি পরতে হয়েছে। সে ঘর থেকে মুনতাসীরকে দেখে বাইরে বেরিয়ে এলো। মুনতাসীরও ধারাকে দেখল। আজ দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেলেও কেউ দৃষ্টি সরিয়ে নিল না। মুনতাসীরকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত লাগছে। টেনশন কয়েকদিনের অঘুমে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। মাথার চুল, মুখের চেহারাও উসকোখুসকো। পরনের শার্টটাও আজ ভাঁজ পড়া। সবসময় পরিপাটি থাকা মানুষটাকে আজ এভাবে দেখে ধারার বুকের ভেতরটা কেমন করতে লাগলো। কী হয়েছে মানুষটার? বাড়িতে কিছু ঘটেছে? এরকম লাগছে কেন?
ধারার বাবা আজ বাড়িতেই আছেন। বাড়ির পরিবেশও অন্যরকম। অচেনা লোকগুলোর হাসির আওয়াজ, খোশগল্প শোনা যাচ্ছে। ধারা বাড়িতে শাড়ি পরেছে। মুনতাসীর হয়তো বুঝেছে। এক মুহূর্তে তার মুখের চেহারা বিষাদের কালো ছায়ায় ছেয়ে গেল। বুকের ভেতরটা অসহনীয় অবর্ণনীয় ব্যথা গ্রাস করে নিল। অনেকটা সময় ধারার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল। পাথরের মতো ভারী পা দু’টো টেনে নিজের ঘরে চলে গেল।
ধারাও নড়তে পারল না। ওভাবেই আরও কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে রইল। মুখে কোন কথা না হলেও চোখে চোখে দু’জনের মাঝে আজ অনেক কথা আদান-প্রদান হয়ে গেল।
****
-না না, তোমাকে কিছুই করতে হবে না নয়ন ভাই। তুমি আপুর বিয়েতে কোন গানে নাচবে সেটা ঠিক করো। হিন্দি গান, বাংলা গান, নাকি ইংলিশ গান। আর সেই দিনের অপেক্ষা করো যেদিন আপুর বাচ্চারা তোমাকে মামা ডাকবে। তুমি ভাগ্নেদের কাঁধে চড়িয়ে দোকানে নিয়ে গিয়ে চকলেট কিনে দিবে।”
জেসমিন রাগে ফেটে পড়ে কথাগুলো বলছে। নয়ন দৃশ্য গুলো কল্পনা করতে লাগল। চোখের সামনে ওই দিনটা দেখতে পাচ্ছে, ছোট্ট ছোট্ট ফুটফুটে দুইটা ছেলেমেয়ে দু’দিকে নয়নের দুই হাত ধরে বায়না করছে, মামা চকলেট খাব। মামা আইসক্রিম খাব। নয়ন মামা, চিপ্স খাব। মামা কোলে নাও।”
সজোরে মাথা ঝাঁকিয়ে চোখের সামনে থেকে কল্পনার সাদাকালো চিত্র সরিয়ে দিল। না, না। এই ছেলের সাথে কিছুতেই ধারার বিয়ে হতে পারে না।
নয়ন উঠে দাঁড়াল। জেসমিন বিরক্ত হয়ে বলল,
-যাচ্ছ কোথায়?”
-তোদের বাড়ি।”
-এখন আর গিয়ে লাভ কী? এতক্ষণে হয়তো শুভ কাজ সেরে ফেলেছে।”
-ওই পোলার ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরাই দিব। ধারারে বিয়ে করার ওর স্বপ্ন আমি দুঃস্বপ্ন বানাই দিব।”
জেসমিন খুশিতে নেচে উঠে মনে মনে বলল,
-এইতো নয়ন ভাই অ্যাকশনে নেমেছে। এটাই তো চাচ্ছিলাম। সাব্বাস নয়ন ভাই। তুমি থাকতে আমার কোন চিন্তাই নাই।”
জেসমিন এখনও উঠছে না দেখে নয়ন ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-বইসা আছোস ক্যান? আমার সাথে যাবি না?”
জেসমিন লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তার মুখ হাসি হাসি। সে ঠিক জানতো নয়ন ভাইকে ধরলেই কাজ হবে। অন্তত মুনতাসীর ভাই না ফেরা পর্যন্ত।
-বাবা আমার কথা জানলে ঠ্যাং ভেঙে ফেলবে নয়ন ভাই।”
-ঠ্যাং তো ভাঙমু ওই পোলার। কত বড় সাহস! তোর বাপ কিছু জানব না। তোর বোন কী কয়?”
-অতি মাত্রায় ভালো মানুষি দেখাতে গিয়ে বাবার কথাতে রাজি হয়ে গেছে।”
-ছেলে পছন্দ হইছে? দেখতে কেমন?”
জেসমিন এমন ভাবে মুখ বাঁকাল তাতেই নয়ন বুঝে গেল। হাসল নয়ন।
-চল ব্যাটার বিয়ের শখ মিটিয়ে আসি।”
*****
সাদাফের বাবা মা’র ধারাকে এতই পছন্দ হয়েছে পারলে উনারা আজকেই ধারাকে ছেলের বউ করে নিজেদের সাথে নিয়ে যায়। কিন্তু শফিকুল ইসলাম মেয়ের বিয়েতে কোনরকম তাড়াহুড়ো করতে চান না। তাই আজ শুধু পাকা কথাই হলো। বিয়ে হবে আরও পনেরো দিন পর৷ ছেলের বাবা মা’র কোন চাওয়া নেই। তারা শুধু মেয়েটাকেই চান। সাদাফের মা ভ্যানিটিব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা বক্স বের করলেন। শুভ কাজ যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই ভালো। তাই উনারা আজই মেয়েকে আংটি পরিয়ে রেখে যাবেন। ধারা পাথরের মূর্তির মতো মানুষ গুলোর সামনে বসে থাকলেও তার মন এসবে সায় দিচ্ছে না। সবকিছু বড্ড জলদি হয়ে যাচ্ছে। বিয়েটা সে কেন করছে? যাকে সে পছন্দই করে না তার সাথে সারাটা জীবন কীভাবে কাটাবে? ধারা এখন উঠে দাঁড়িয়ে বলবে, দুঃখিত বিয়েটা আমি করতে পারব না। আমাকে ক্ষমা করবেন। আমার আরও আগেই বলা উচিত ছিল।
এঘরে মুনতাসীরের আগমনে ধারার ভাবনার সুতো কাটে। মুনতাসীরের উপস্থিতিতে দাদী, শরিফুল ইসলাম দু’জনই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। শরিফুল ইসলাম উনাদের সাথে মুনতাসীরের পরিচয় করিয়ে দিলেন। যে ছেলের সাথে ধারার বিয়ে হবে মুনতাসীর তাকে নজর দেখল। তারপর তার চোখ ধারার উপর এসে আটকালো। কাউকে কিছুই বলল না মুনতাসীর। শুধু ধারাকেই দেখে গেল। ধারা না তাকিয়েও বুঝতে পারছে মুনতাসীর তাকেই দেখছে। ধারা সংকোচে আরও কুঁকড়ে গেল। মহিলাটা মুনতাসীরের সামনে ধারার হাতে আংটি পরিয়ে দিল। ধারা কোনোরকম আপত্তি করল না। মুনতাসীরের মুখের ভাব শান্ত হলেও তার চোখ দু’টো বড্ড জ্বালা করছে। বুকের ভেতরটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগলে। যা কখনও তার ছিলই না সে জিনিস অন্য কারো হওয়াতে এত কষ্ট হচ্ছে কেন? এত চেষ্টার পরেও ধারার মনে জায়গা করতে পারেনি এটা তোর তারই ব্যর্থতা। নিজে ভালোবাসা ধারাকে বোঝাতে পারেনি এটার দায় তো ধারাকে দেওয়া যাবে না।
মানুষ গুলো চলে গেলে শরিফুল ইসলাম মুনতাসীরের মুখের দিকে তাকাতে পারলেন না। নিজেকে আজ তার বড় অপরাধী লাগছে। মেয়ের বিয়ে তিনি এই ছেলেটার সাথে দিবেন কথা দিয়েও সেই কথা রাখলেন না। মুনতাসীর কী জানতো? না, জানলে নিশ্চয় প্রতিবাদ করতো। শরিফুল ইসলাম বাধোবাধো গলায় বললেন,
-ফিরতে এত দেরি করলে। বাড়িতে সব ঠিক আছে তো বাবা? তোমার বাবা…
তিনি কথা শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই মুনতাসীর বলল,
-বাবা মারা গেছেন।”
শরিফুল ইসলামের মাথাটা টলে উঠল। হাতের কাছে চেয়ারটা ধরে বসে পড়লেন তিনি। স্তব্ধ হয়ে গেছেন তিনি। দাদীও কিছুই না বোঝার মতো মুনতাসীরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই সহজ কথাটার অর্থ যেন তিনি বুঝতে পারেননি। কথাটা কানে যেতেই ধারা ঝট করে একবার মানুষটার মুখের দিকে তাকালো। এতক্ষণ আটকে রাখা অশ্রু এবার তার অবাধ্য হয়ে উত্তাল জলোচ্ছ্বাসের রূপ নিল।
চলবে_