এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-০১

0
1753

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
১.
#WriterঃMousumi_Akter

–বিহান ভাই অসভ্যতার একটা লিমিট আছে আপনি দেখছেন আমি গোসল করছি তবুও কথা নেই বার্তা নেই নক না করে চলে এলেন কেনো? তাছাড়া এটা আমার ওয়াশরুম, বলেই দ্রুত টাওয়াল পেচালাম শরীরে।ভেজা কাপড়ে খুব ই আনইজি লাগছে আমার।ওয়াশ রুমের ভেতরে চেঞ্জ করার জন্য এনে রাখা শাড়িটা দিয়ে আগে শরীর ঢেকে নিলাম।

–ওয়াশ রুমে হুট করেই প্রবেশ করা বিহান ভাই আমার কথার কোনো ভ্রুক্ষেপ করলেন না।উনি আমার কথা বলতে গেলে একদম ই খেয়াল ই করলেন না।এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুজছেন, আমার পেছনে থাকা লাল রঙের বড় বালতি টার দিকে এক নজর তাকিয়ে বালতি টা নিয়ে ট্যাবের নিচে রেখে ট্যাবের পানি ছাড়লেন।আমার কথার কোনো উত্তর ই দিলেন না।চোখে মুখে ভীষণ বিরক্তি উনার, দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছেন।মনে হচ্ছে রাগে কিছুটা ফুঁশে ফুঁশে উঠছেন,আবার মনে হচ্ছে কোনো পরিশ্রম করে এসছেন কিছুটা হাঁপাচ্ছেন।

“আমি আবার ও বললাম কি ব্যাপার কি আমার ওয়াশ রুমে কি চায় আপনার?এটা আমার ওয়াশ রুম।”

“বিরক্ত হয়েই আমার দিকে দু ‘পা এগিয়ে এসে বললেন,’তো?’এটুকু বলে থেমে গেলেন।আবার ও বললেন বেরো এখান থেকে এক ঘন্টা অপেক্ষা করছি আমি বাইরে।জাস্ট এক সেকেন্ডের মাঝে বাইরে যাবি।অপেক্ষা করতে করতে আমি বোরিং হচ্ছিলাম।ভেতরের পরিবেশ বুঝতে আয়রা কে পাঠিয়েছিলাম তুই কোন অবস্থায় আছিস জানার জন্য।আয়রা উঁকি দিয়ে দেখে গিয়ে আমাকে বলেছে অতঃপর আমি বুঝেছি পরিবেশ স্বাভাবিক আছে তারপ র ই এসছি, আন্ডারস্ট্যান্ড।তাছাড়া ফুপ্পি আমাকে বলেছে তোর গোসল শেষ হলে এই ওয়াশ রুমেই গোসল করতে।এমনিতেও তুই তো সারাজীবন ই দরজা খোলা রেখেই গোসল করিস।বাইরে রিয়া,মেহু,তোহা সবাই আছে।ওদের বাইরে রেখেই এসছি।এ
ছাড়া তুই অশালীন অবস্থায় থাকলে আমি আসতাম না। আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার ব্যবহার দেখে।উনার কাছে যেনো এই সিরিয়াস ব্যাপার টার কোনো গুরুত্ব নেই।আমি আবার ও বললাম তাই বলে আমার ওয়াশ রুমে আসবেন আপনি।

আমাকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বললেন,

“তোর বেডরুম এটা এখানে তোর ওয়াশ রুম থাকবে এটাই স্বাভাবিক।তোর বাড়িতে কি আমার বাপ ওয়াশ রুম বানিয়ে রেখে যাবে হাউ ননসেন্স ইউ দিয়া।ঠু মাস ননসেন্স।”

“এই দেখুন আপনি আমাকে একটুও ননসেন্স বলবেন না বলে দিচ্ছি।বেরোন আগে এখান থেকে বেরোন বলছি।আমি কিন্তু মামি কে ডাকবো।”

আমার কথার উত্তর দিলেন না তার মানে আমাকে পাত্তা দিলেন না উনি।এটা আমার কাছে মনে হলো উনি আমাকে নিরব থেকে অপমান করলেন।আমি চোখ বড় বড় করে উনার আপাদমস্তক তাকিয়ে দেখছি।আমার চোখের সামনেই ঘামে ভেজা শার্ট খুলতে গেলেন।শার্টের বোতাম একটা খোলার সাথেই আমি চটজলদী বলে উঠলাম, “আপনার কি একটুও কমন সেন্স নেই?দেখছেন একটা মেয়ে ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে আছে আর আপনি না বলে কয়ে প্রবেশ করলেন আবার নিজের কাপড় ও খুলছেন।”

“উনি অগ্নি চোখে তাকিয়ে বললেন,এ বাড়িতে ইউজ করার মতো আর কোনো ওয়াশ রুম নেই।তাই আমাকে বাধ্য হয়েই এখানে আসতে হয়েছে।আমার ওয়াশ রুম এই কথাটা আর কতবার বলবি।আমার কি কানে সমস্যা যে শুনতে পাই নি।”

“শুনতে যখন পেয়েছেন তখন এসেছেন কেনো?”

ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন।এই সেই চোখ জোড়া যে চোখে তাকালে অনেক মেয়ের সর্বনাশ হয় আর আমার হয় হাঁটু কাঁপুনি।উনার এই ভয়ানক রাগি চোখের ভাষা একমাত্র আমি ই পড়তে পারি।অজস্র বার এই রাগ আমি দেখেছি।জানিনা উনি কেনো আমাকেই উনার এই অন্যরকম চোখের রাগ টা দেখান।

আমাকে কিছুই না বলে দুই ভ্রু কুচকে আরো খানিক টা বিরক্তি প্রকাশ করলেন।অথচ মুখে কিছুই বললেন না।উনার চোখের চাহনিতে ক্লিয়ার উনি বিরক্ত আছেন।গামছা নিয়ে আমার চোখ খুব শক্ত করে বেঁধে দিলেন।হঠাত উনার এমন কাজ দেখে চমকে গেলাম আমি।হঠাত চোখ ই বা বাঁধতে যাবেন কেনো উনি?

“আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,কি সমস্যা কি আপনার।এইভাবে আমার চোখ বেঁধে আমাকে দেখতে চান।ছিঃআপনার এমন অধঃপতন হয়েছে।আপনার উদ্দেশ্য আমি বুঝতে পেরেছি।আমার চোখ বেঁধে সব দেখবেন তাইনা?”

“উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,আমাকে কি ক্যারেক্টর লেস লাগে তোর।ইনডিরেক্ট কি সেটাই বুঝাতে চাইছিস আমি ক্যারেক্টরলেস।”

নিশ্চুপ আমি উনার কথা শুনে।

উনি আমার চোখ বেঁধে সাওয়ার নিচ্ছেন।পানি পড়ার টুপ টাপ শব্দ শব্দ হচ্ছে।উনি সাওয়ার নিতে নিতে বললেন,

“চোখে বেঁধেছি কারণ তুই যাতে আমাকে না দেখতে পাস।তুই আর তোদের চৌদ্দগুষ্টির যত মহিলা আছে কারোর চরিত্রের ঠিক নেই।তোদের বাড়িতে কি সব মহিলারা এসছে এমনিতেই চ্যা চ্যা শব্দ করে কানের বারোটা বাজিয়েছে আর এখন তুই যেটুকু বাকি আছে সেটুকু পূর্ণ কর।ডিজগাস্টিং!এসব কারণেই এখানে আসতে মন চাই নি আমার।আমি তো জানতাম এখানের পরিবেশ টা কি হবে।নেহাত ফুপ্পির অনুরোধ ফেলতে পারিনি তাই।এনি ওয়ে তোকে নতুন করে দেখার কি আছে।এটা কি প্রথম বার যে তোকে আমি দেখলাম।”

এই যে উনার আধ্যাতিক কথা শুরু হয়ে গিয়েছে।মিষ্টার আধ্যাতিকবিদ এর আধ্যাতিক আলাপ শুরু হয়েছে।যতসব বিরক্তিকর কথা সব উনার কাছেই পাওয়া যায়।একটা জিনিস ক্লিয়ার হয়েছে উনার চরিত্রগত সমস্যা আগেও ছিলো না আজ ও নেই।আমি যে দেখার কথা ভেবেছি উনার মাথাতেও সেটা আসে নি তাইতো বললেন আমি কি তোকে প্রথম বার দেখছি।এই প্রথম একটা মানুষ কে দেখলাম যে এতটা লয়াল আর সৎ চরিত্রের।

“খুব কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ইয়ে বিহান ভাই চ্যা চ্যা কি?”

“উনি বিরক্ত কন্ঠেই উত্তর দিলেন তোর দাদার মাথা।দেখ,দিয়া এমনিতেই টায়ার্ড সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!তাছাড়া মেজাজ ও খারাপ খুব।”

উনি যত গুলো বাজে কথা বলেছেন সব গুলোর উত্তর নেওয়া টা জরুরি বাট উনিকি উত্তর দিবেন।

তার আগে উনার পরিচয় টা দেই উনি আমার ছোট মামার একমাত্র ছেলে।মামারা দুই ভাই এক বোন।বড় মামার দুই ছেলে মেয়ে বিভা আপু সবার বড়, তারপর বিভোর ভাই আর ছোট মামার একটায় ছেলে বিহান। আমি তাদের একমাত্র ফুফাতো বোন।আমার বিশাল পরিবারে অনেক গুলো ভাই বোন আমরা।আমার বাবা বড় আমরা দুই ভাই বোন,ভাইয়ার নাম আবির।মেজো কাকার তিন ছেলে মেয়ে, রুশা আপু,তোহা আপু,তিয়াস ভাইয়া,ছোট কাকার দুই মেয়ে,রিয়া আর আয়রা,বাবার একটা মাত্র বোন মানে আমার ফুপ্পি।ফুপ্পির একটায় মেয়ে মেহু।বাড়িতে মেজ কাকার বড় মেয়ে রুশা আপুর বিয়ের অনুষ্টান চলছে।বাড়িতে ইনভাইটেড আজ অনেক গেস্ট এসছে।এটা আমাদের কাজিন গুষ্টির পরিচয়।ওই যে আধ্যাতিক মানুষ উনি ঢাকা মেডিকেল এর ফাইনাল ইয়ারে পড়াশুনা করছেন আর আমি সবে মাত্র ইন্টার প্রথম বর্ষ।বয়সে বেশ খানিক টা ডিফারেন্স আছে আমাদের।যেহেতু সিনিয়র আমার উনি তাই উনাকে ভয় পাওয়াটায় স্বাভাবিক ব্যাপার।তার উপর উনি আবার কম কথা বলেন,রষ কষ হীন গম্ভীর রাগী মানুষ। আবার কাজিন দের মাঝে সব থেকে ইন্টারেস্টিং কথা উনি ই বলেন।আমাদের সবার আড্ডার মাঝে পাঁচ মিনিটের জন্য এসে হুট করেই আড্ডা টা জমিয়ে তুলেন যদিও সেটা উনার মুডের উপর ডিপেন্ড করে।উনার মতো পড়াকু ছেলে আর শান্ত শিষ্ট ছেলের বিপরিতে অবস্থান আমার।এইদিকে পড়াশুনায় ফাঁকিবাজি, আড্ডার আসরে ঘন্টার পর ঘন্টা, টিভিতে সিরিয়াল দেখা, ভীষণ চঞ্চল টাইপের মেয়ে আমি।যার ধারে কাছেও উনি নেই।সব থেকে আশ্চর্য বিষয় পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতে ওই ট্যালেন্ট মানুষ টা আমার মতো একটা বাচ্চা মেয়ের শত্রু হয়ে জন্ম নিয়েছেন।শত্রু না হলে আম্মুর মাথা খেয়ে আমাকে দিয়ে জোর করে সাইন্স নেওয়ানো হয়েছে।জীবন টা ত্যানা ত্যানা করার জন্য উনি একাই যথেষ্ট।”

“অতপরঃউনাকে আবার প্রশ্ন করলাম আপনি এত ক্লান্ত কেনো বিহান ভাই?কি হয়েছে।”

“এমনি এমনি কি কিপটা উপাধীতে ভূষিত তোরা।তোর বাপ, চাচা, ভাই একটার পর একটা কাজ দিয়েই যাচ্ছে?তোদের বাড়িতে কি আমি ইনভাইটেড গেস্ট নাকি কাজের লোক সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার।আজ যত পরিশ্রম করেছি আমার বয়সে এত পরিশ্রম করি নি।ডিজগাস্টিং।”

“এত ডিজগাস্টিং ডিজগাস্টিং করছেন কেনো?জোয়ান ছেলে একটু কাজ করেছেন তাতে কি গায়ের মাংশ কমে গিয়েছে?”

“কাজের মতো কাজ দিলে তাও মেনে নিতাম।আমার হাতে কিনা একটা কুড়াল ধরিয়ে দিয়েছে।আমি প্রথমে ভেবেছি রাজাকার রা কি আমাকে দিয়ে মানুষ খুন করাবে।পরে শুনি বাঁশ দেওয়া হচ্ছে আমাকে।মানে তোর মেজ কাকার বাঁশ বাগান থেকে ছ ছয় টা বাঁশ কাটতে দিয়েছে আমাকে, বিভোর কে আর আবির কে?কেনো এই দুই দিনের জন্য কাজের লোক রাখা যায় নি।”

“বুঝলাম তাহলে চরিত্র খারাপ বললেন কেনো?”

“বাইরে গিয়ে দেখ,কিসব মেয়েরা এসছে।কি বিশ্রি তাদের সাজগোজ।এগুলো কি মেয়ে নাকি কার্টুন বুঝলাম না।তারা আবার এসে গায়ের উপর পড়ছে।যে জিনিস আমার একদম ই পছন্দ নয়।”

“সুন্দরীরা গায়ের উপর পড়ছে এর থেকে আনন্দের বিষয় আর কিছুতে আছে বিহান ভাই।”

“দিয়া আর একটা কথা ও বললে ঠান্ডা পানিতে বেঁধে রাখবো তোকে।ঠান্ডায় না কেঁপে এত সময় বাইরে গিয়ে তো চেঞ্জ করে নিতে পারিস না কি।কানের কাছে বকবক করে আমার কান ঝালাপালা করার থেকে তোর চেঞ্জ করাটা বেশী জরুরি।এই পাঁচ মিনিটে কয়েক হাজার কথা বলেছিস।ষ্টুপিড কোথাকার তুই মানুষ হবি কবে।আমাকে অসভ্য বলছিলি এত সময়।অসভ্য মহিলাদের মতো এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে হাত দিয়ে চোখ তো খুলে এখান থেকে যেতে পারতি তাইনা?তোর হাত দুটো তো আর বেঁধে রাখিনি আমি।জ্বর, ঠান্ডা বাধিয়ে সম্পূর্ণ দোষ আমার ঘাড়ে চাপাতে চাস নাকি রাজাকারের বংশধর।ধান্দা ভালোই শিখেছিস দিয়া।ইচ্ছা করে জ্বর বাধাবি তারপর তোর বাপ আমাকে এমন ভাবে ফোন দিবে তোর সেবাযত্ন করতে যেনো তার মেয়ে অসুস্থ তাই জামাই কে ডাকছে।এক গাদা বকা দিতে দিতে চোখের বাঁধন খুলে দিলেন।”

উনি ওয়শ রুম থেকে বেরোনোর সময় বললেন,আমার শার্ট আর প্যান্ট ধুয়ে পানি শুকাতে দিস।খবর দার যেনো রোদে নেড়ে দিবি না তাহলে তোর খবর আছে।আমার চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো চমৎকার এক যুবক।যাকে দেখে সেকেন্ডে সেকেন্ডে ক্রাশ খেয়ে রমনীরা দিওয়ানা।তাকে দেখে যে আমার ও মনের মাঝে ভীষণ ভাল লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয় সেটা অস্বীকার করবো না।কিন্তু উনি এই পৃথিবীতে সব থেকে বেশী আমাকেই অপছন্দ করেন কিন্তু কেনো জানিনা আমাকে অপমান করতে পারলে দু’বার ভাবেন না।ব্লু জিন্সের উপর, ব্লু কালারের পাঞ্জাবী পরে পাঞ্জাবীর হাতা গোটাতে গোটাতে বেরিয়ে গেলেন।যাওয়ার সময় কয়েকশ ভোল্টেজ এর শর্ট দিয়ে গেলেন আমাকে।আহা!কি অপূর্ব দেখতে মানুষ টা।

মেরুন কালারের শাড়ি পরে বাইরে বেরোলাম হালকা সাজগোজ করে।বাইরে চেয়ারে বসে বিভোর ভাই,বিভা আপু,মেহু আপু,তোহা আপু,তিয়াস ভাই,আলিপ ভাই সবাই আড্ডা দিচ্ছে।আমার চুল দিয়ে পানি পড়ে ব্লাউজের পুরাটা ভিজে গিয়েছে।আম্মু আমাকে দেখেই বললো,জীবনেও কি মানুষ হবি না দিয়া।তোকে না কতদিন বলেছি চুল ভাল ভাবে মুছে তারপর ছাড়বি।আম্মুকে বললাম আম্মু এত মানুষের মাঝে আস্তে বলো প্লিজ।মানুষ কি ভাববে।আম্মু এক ধমক দিয়ে বললো,তোমার এই ভেজা কাপড় দেখে মানুষ কি ভাববে।অসভ্য মেয়ে।আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছি, তুমি আর তোমার ভাতিজা নিশ্চয় ই এক ধাতুতে তৈরি।

উঠানে গিয়ে দেখি,মেজ কাকার সাথে বিহান ভাই কথা বলছেন।এমন আদপের সাথে কথা বলছেন এখন যদি মেজ কাকাকে আমি দুনিয়ার দিব্বি দিয়ে বলি উনি আপনার নামে বাজে কথা বলেছে সেটা কিছুতেই মেনে নিবে না।গিরগিটি একটা।মেজ কাকার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই বিহান ভাই আচমকা আমার দিকে গতির সাথে ঘুরে তাকালেন।খুব অবাক হয়ে তাকালেন উনি,গভীর নজরে আমাকে দেখলেন। প্যান্টের পকেটে হাত গুজে আছেন,নিচের ঠোঁট হালকা কামরে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।ঠোঁটে হালকা হাসি।আবার ও চোখ সরিয়ে নিলেন উনি।

মনে মনে ভাবলাম বিহান ভাই কে ফাঁসিয়ে দেই একটু।ভাল মানুষ সাজা বের করছি।একটা হালকা কাশি দিয়ে বললাম,মেজ কাকু বিহান ভাই কে দিয়ে কাজ করিয়েছেন কেনো উনার মেবি রাগ হয়েছে।

মেজ কাকু বললো,বিহান আসলে অনেক ঝামেলা তো আজ তাই কষ্ট দিলাম।কিছু মনে করো না বাবাজী।

বিহান ভাই আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালেন।সেকেন্ডের মাঝে অগ্নিরুপে ফিরে এলেন।গাল ভরা হাসি দিয়ে মেজ কাকার দিকে তাকিয়ে বললেন,আরে আঙ্কেল এটা কোনো ব্যাপার না।যা করতে হয় বলবেন।আমি আপনাদের ছেলের মতো।আমরা করবো না তো কে করবে।

কি সাংঘাতিক মানুষ ভাবা যায়।কিভাবে কথা ঘুরিয়ে নিলো।এভাবেই সবার চোখের মনি উনি।আর আমি জানি উনার আসল রুপ।

বক্সে গান বাজছে সবাই সঙ্গীত অনুষ্টানে ব্যাস্ত আছে।বিহান ভাই এর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি।উনি একটু নিচু হয়ে আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন,দেখ মেয়ে টা আমাকে দেখে ক্রাশ খেয়েছে আর খেয়েই যাচ্ছে সো আমার থেকে দূরে থাক না হলে তোকে আমার জিএফ ভাববে।আমি তাকিয়ে দেখি তোহা আপুর বান্ধবী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে উনার দিকে।বিহান ভাই কে দেখে মনে হচ্ছে উনি ভীষণ খুশি মেয়েটির ক্রাশ খাওয়া দেখে।মনে মনে ভাবলাম,আমাকে এতগুলো বাজে কথা শুনিয়ে মেয়ে নিয়ে আনন্দ করবেন।দিয়া বেঁচে থাকতে সেটা হবে না।আমি একদম উনার পাশ ঘেষে দাঁড়ালাম।এমন ভাবে দাঁড়ালাম আমাকে দেখে উনার জিএফ ই মনে হচ্ছে।প্রায় আধাঘন্টা পরে বললাম বিহান ভাই কেমন অনুভব হচ্ছে বলুন তো আপনার ক্রাশ এর দিল টুট দিয়া মে।

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,এই জন্য তুই ষ্টুপিড বুঝলি।আমার নয় তোর ক্রাশ এর দিল টুটে গিয়েছে।

আমি আবার ও অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে।

উনি বললেন,আমি ইচ্ছা করে বলেছিলাম কারণ মেয়েটা ইমপরটেন্ট ছিলো না।মেয়েটার পাশে যে ছেলেটা ছিলো ওই ছেলেটা বেশী ইমপরটেন্ট ছিলো। ছেলেটা তোকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছিলো।আমি চাইনি তোকে দেখে কেউ ক্রাশ খেয়ে মারা যাক।আমি জানতাম কোনো মেয়ের কথা বললে,তুই ঠিক ই আমার পাশ ঘেষে দাঁড়াবি।আর যদি বলতাম দিয়া তোকে দেখে ওই ছেলেটা ক্রাশ খাচ্ছে তাহলে তুই ছেলেটার সাথে ভাব নিয়ে কথা বলতি সিওর।আমার চোখের সামনে কেউ তোর প্রেমে পড়বে আর তুই আনন্দে আনন্দিত হবি এটা চলবে না পিচ্চি।তোর শহরে অন্য কারো প্রেমে পড়া নিষেধ পিচ্চি।

অবাক হয়ে বললাম তাহলে কি কেউ আমার প্রেমে পড়বে না।

উনি কলার ঝাকি দিয়ে বললেন,তোর আম্মুর জামাই ছাড়া আর কেউ তোর প্রেমে পড়বে না।

চলবে,,

(আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের অনুরোধে বিহান-দিয়া জুটি ফিরিয়ে আনলাম।কেমন যেনো নারভাজ ফিল হচ্ছে।যারা সিজন ১ পড়েছেন উপন্যাসের কাহিনী কেমন দুষ্টু মিষ্টি হবে হোপফুলি বুঝবেন।তবে এই সিজনে থাকবে কিছু টুইস্ট।হ্যাপি রিডিং ভালবাসা সবার জন্য।)

“এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা” সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।