এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব-০২

0
853

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-২

বাহাতে লুঙ্গি খানিকটা উচিয়ে ধরে,ডানহাতে নিমের ডাল নিয়ে অবুঝের মতো দাড়িয়ে আরাব।করনীয় কি তা বোঝার জন্য একবার দোয়ার দিকে তাকাচ্ছে,তো একবার নিমের ডালের দিকে।দোয়া একবর্ন না বলে ওর হাতে নিমের ডাল গুজে দিয়ে রক্তমাখা গেন্জি,জ্যাকেট,ময়লামাখা প্যান্ট সবই বালতিতে করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো।আরাব বলে উঠলো,

-এইযে মিস?এটা দিয়ে কি হবে?

দোয়া পেছন ফিরলো।আরাব একটু হেসে বললো,

-তারমানে আপনি মিস,মিসেস নন।যাইহোক,পুরো নাম কি আপনার?আমি জানি আপনি বোবা নন,কথা বলেন না কেনো তাহলে?সমস্যা কোথায়?

দোয়া পুরোপুরিভাবে আরাবের দিকে ঘুরে বললো,

-হ্যাঁ,আমি মিস।পুরোনাম তাকওয়াতুল দোয়া।নিমের ডাল দিয়ে কি করবেন তার বর্ননা আমার মুখে শুনলে আপনার পোষাবে না,তাই বলিও নি।কাকাবাবুর কাছ থেকে ডেমো নিয়ে শান্ত হোন।কথা বললে কি সমস্যা সেটা বলা,বা এতোক্ষন আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া,কোনোটাই আমার জন্য বাধ্যতামুলক নয়।আপনি এখানকার ক্ষনিকের অতিথি।তাই সমাদরটা এই উত্তরগুলো দিয়েই করলাম।

দোয়ার মুখে একটানা এতোগুলো কথা শুনে একটু আটকে গেছে আরাব।পরপরই বললো,

-সমাদরটা এই কয়েকটা উত্তর দিয়ে করলেন তা কে বললো?কাল রাতে আপনি আমাকে ফেলে এসে,আবার কাকাবাবুকে পাঠিয়েছিলেন,আমার হেল্প করতে।আমার মাথায় জলপটিও দিয়েছেন আপনি।ডোন্ট ইউ থিংক,এটা সমাদরের অন্য কোনো লেভেল ছিলো?

বড়বড় চোখে তাকালো দোয়া।নিজেকে সামলে সরে আসলো ওখান থেকে।কথাগুলোর যুক্তিখন্ডন আপাতত ওর সামর্থের বাইরে।আরাব মুচকি হেসে শুধু তাকিয়ে দেখলো ওর চলে যাওয়াটা।বাড়ির সামনের সিড়ি বেয়ে উপরতলায় উঠে গেলো ও।

বাড়িটা পুরোনো ছোটখাটো রাজবাড়িই বলা চলে।রঙ উঠে যাওয়া দেওয়ালগুলোয় শেওলা পড়া,আগাছাও জন্মেছে কোথাও কোথাও।একটু দুর থেকে দেখলে বড়বড় দরজার ছোটছোট রুমগুলো পায়রার খোপের মতোই দেখা যাবে।বাড়িটার বাকি তিনপাশে দেওয়াল তোলা।দেওয়ালের ওপারে গাছ আছে কিছু।আর অনেকটা দুরে দুটো বহুতল ভবন দেখা যায়।ছোট্ট উঠোনের এককোনে তুলসি তলা,যেমনটা সব হিন্দুবাড়িতেই থাকে।আর আরেককোনে টিউবওয়েল।তিনতলা বাড়িটায় বেশ অনেকগুলো ঘর।এ সকালে বাইরে বেরিয়ে আরাব যতোটুকো বুঝেছে,যারা থাকে,সবাই ভাড়াটিয়ার দেখা চারজনের মধ্যে,দুজন ইন করা,পরিপাটি সাজের অফিস যাওয়া লোক।বাকি দুজনকে ওর গার্মেন্টস্ কর্মী মনে হয়েছে।ঘরের ভেতর থেকে অরুনাভ মুখার্জী(ব্রাক্ষ্মনসম্প্রদায় বুঝাতে”দাশ”পদবী সংশোধন করা হলো)হাঁক ছেড়ে বললেন,

-কি ইয়াংম্যান?লুঙ্গি,গেন্জি আর নিমেরডালে কম্ফোর্টেবল তো?

আরাব ভাষাহীনভাবে একবার ভেতরে তাকালো।পরপরই নিজের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো এবার।শার্টপ্যান্ট পাল্টে ওকে লুঙ্গি গেন্জিই দেওয়া হয়েছিলো পরার জন্য।করেছেও তাই।তাহসানুল আরাব,ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট তৌফিক খানের একমাত্র উত্তরাধিকার,আজ লুঙ্গি পরেছে।মা আর আপু দেখলে নির্ঘাত হেসে গড়াগড়ি খেতো।উপর থেকে দুফোটা পানির ছিটে মুখে পরায় ধ্যান ছেড়ে উপরে তাকালো।আরো তৃপ্তির হাসিতে বিস্তৃত হলো ওর ঠোটজোড়া।

বাড়িটার নিচতলা বাদে প্রতিটা তলায় ঘরে যাতায়াতের জন্য সামনে করিডর।নিরাপত্তার জন্য ওতে কোমড় অবদি রেলিংও দেওয়া।তারও খানিকটা উপরে বাধা তারে ভেজা জামা ঝেড়ে মেলে দিচ্ছে দোয়া।যেটুকো দেখা যায়,খোপা করা চুলগুলোর দুকানের সামনে দিয়েও কয়েকটা বেরিয়ে এসেছে।কিছুকিছু গালে লেপ্টে গেছে।আরাবের সাথে চোখাচোখি হতেই তাড়াতাড়ি সরে গেলো ওখান থেকে।

-চিয়ারস্!

আরাবের হাতে থাকা নিমের ডালে আরেকটা নিমের ডাল ঠেকিয়ে বললো অরুনাভ মুখার্জী।উপরতলা থেকে চোখ নামিয়ে কিঞ্চিত ভ্রুকুচকে তাকালো তার দিকে।উনি ফোকলা হেসে নিমেরডাল দেখিয়ে বললেন,

-এটা হলো দন্তমাজন।আমাদের এখানে সকালের ফ্রেশনেস এটা দিয়েই শুরু হয়।আসো,আমি শিখিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।

ওনার সাথে উঠোনটার এককোনের টিউবওয়েলের দিকে খোড়াতে খোড়াতে এগিয়ে গেলো আরাব।ট্যাপও‌ আছে ওখানে।ট্যাপ ছেড়ে বালতি ভরতে দিয়ে টিউবওয়েল দেখিয়ে বললেন,

-এটা হলো খাবার জল।আশেপাশের সবগুলো বাসার সবগুলো পরিবার এইখানেই জল নিতে আসে।এর স্বাদ,আহা!যেনো অমৃত!

আরাব হেসে বললো,

-হতেই হতো,মুখার্জী মশাইয়ের রাজবাড়ির জলাধার বলে কথা!

অরুনাভ মুখার্জী একটু বিস্ময়ে তাকালেন।ছেলেটার এই স্বাভাবিকতায় খুশি হলেন অনেকটা।বললেন,

-হ্যাঁ,এটা আ‌মার দাদা‌মশাইয়ের বাড়ি।এই রায়নগরের জমিদার ছিলেন উনি।আগে জয়েন্ট ফ্যামিলি ছিলো আমাদের।সবাই‌ মিলে একসাথে হৈহুল্লোড়ে মেতে থাকতাম।এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার দুই কাকাসহ ভাইয়েরা সবাই ভারত চলে যায়।দাদামশাইয়ের সম্পত্তি ওখানেও ঢের।তাই এদিকে কেউ ফিরে তাকায়নি,তাকাবেও না।আমিই বাবার একমাত্র ছেলে।বাবা মারা যাওয়ার পর,এখানকার সবটাই তাই আমার।

-তারমানে সত্যিই আপনি একা থাকেন?

-একা কেনো হবো?তিনতলার চারঘরের দুই পরিবার,দুইতলার চারঘরের তিনজন,নিচতলার মেসের চারজন,এরা সবাই তো আমার পরিবার!ওইযে দোয়া?দুবেলা ওর রান্নাটার সাথে স্নান সেরে আমার রান্নাটাও করতে ভোলে না।তাছাড়া ওর মতো আরো দুটো মেয়ে আছে দুইতলায়।ওরা অবশ্য ফ্যামিলি নিয়ে থাকে না।অনাথআশ্রমে বড় হয়েছে দুজনেই।ওরাও রান্না করে দিয়ে যায় কখনো কখনো।তিনতলার পরিবারগুলো মাঝেমধ্যেই নিমন্ত্রনে ডাকে,মেসের ছেলেগুলো হোটেল থেকে খাবার আনলে,আমাকে মাঝে বসিয়ে একসাথে খায়।এইতো,আমার পরিপুর্ন পরিবার।

-বিয়ে করেননি?

আনমনে কথাটা বলে ইতস্তত করতে লাগলো আরাব।অরুনাভ মুখার্জী হেসে বললেন,

-করেছিলাম তো!প্রেমের বিয়ে ছিলো আমার।অশেষ ভালোবাসায় মোড়ানো ছোট্ট একটা সংসার ছিলো।কিন্তু তা ভাগ্যে সয়নি।বারো বছরের একমাত্র ছেলেকে রেখে আমার মিসেস মারা যায়।

-আ্ আ’ম সরি।আমি,আসলে….

-আরে না না।তুমি না বললে অরুনিমা মানে আমার বউকে মনে পরেনা আমার এমনটা নয়।তাকে এতোটাই ভালোবাসি যে,দ্বিতীয় বিয়ের কথা কল্পনাও‌ করতে পারি নি।ও আছে।আমার মাঝে এখনো আছে।এমনটাই বিশ্বাস করি আমি।

কথাটা শুনে মন ভরে গেলো আরাবের।বললো,

-আপনার ছেলে কোথায়?

-ও বর্তমানে হায়ার স্টাডির জন্য ইউকে তে।আমাকেও বলেছিলো যাওয়ার কথা।যাইনি।এখন ওর ফেরার অপেক্ষাও করি না।শুধু প্রতিদিন ও ভালো আছে,এটুকো খোজ নিয়ে ভালোই আছি।এখন এসব ছাড়ো,সকালের খাওয়াটা খাবে তো নাকি?চলো,নিমের ডাল মুখে পোরো!

মানুষটাকে দেখে জীবনের অনেকগুলো রুপ দেখে নিলো আরাব।অরুনাভ মুখার্জী নিমের ডাল মুখে দিয়ে আরাবকে দাত মাজা শিখিয়ে দিতে লাগলেন।তেতো হলেও,বিষয়টা বেশ উপভোগ করছিলো আরাব।হাতের কাটাছেড়ার জন্য আস্তেধীরে নেড়েচেড়ে ওভাবেই নিমের ডাল‌ দিয়ে মুখ পরিস্কার করে নিলো।কপালের কাটা দিকটার জন্য পুরো মুখে পানি দিলো না।শুধু চোখে একটু ছিটে মেরেছে।তারপর ওভাবেই খোড়াতে খোড়াতে এসে অরুনাভ মুখার্জীর ঘরের সামনের বারান্দায় রাখা বেঞ্চটায় এসে বসলো দুজনে।

ইতিমধ্যে দুকাপ চা নিয়ে এক সাত আট বয়সের ছেলে হাজির।আরাব একবার ভাবলো,এটাই হয়তো দোয়ার ভাই।জিজ্ঞাসা করার আগেই অরুনাভ মুখার্জী কাপদুটো হাতে নিয়ে বললেন,

-কিরে সোহেল?বিস্কুট আনলি না?

-তুমি তো বিস্কুট খাও না কাকাবাবু।তোমার এই মেহমান কোন বিস্কুট খায়,তা আমি কেমনে জানুম?

আরাব হেসে বললো,

-তোমার ঘরে‌ যেটা আছে,ওইটাই আনো।

-ঘরে তো নাই।তয় আমি যে দোকানে কাম করি,ওইহানে অনেক রওমের বিস্কুট।আপনে কন কোনডা খাইবেন,হেইডাই আনুম।

ছেলেটা দোকানে কাজ করে শুনেই আরাবের চেহারার ঔজ্বল্য হারিয়ে গেলো।অরুনাভ মুখার্জী বললেন,

-যেকোনোটা নিয়ে আয়।ও সবগুলোই খায়।যা!

সোহেল দৌড়ে চলে গেলো।আরাব চুপ করে আছে দেখে উনি আবারো বললেন,

-ও সোহেল।উপরতলার এক ভাড়াটিয়ার সৎ ভাই।ওর বর গার্মেন্টসে চাকরি করে।সংসার চালাতে তাই ওকেও দোকানের কাজে পাঠিয়েছে।

-তোকে কতোবার বলেছি সিড়ি বেয়ে বেয়ে উপরনিচ করবি না!কথা শুনিস না কেনো আমার?

দোয়ার গলা শুনে সামনে তাকালো আরাব।একটা ছেলে,হাতে ব্যাট নিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে।ধমকে ধমকে কথাগুলো ওকেই‌ বললো দোয়া।হাতে খুন্তি।খোপা করা চুলের খোলা পাওয়া কিছু ঘামে ভিজে গাল,গলায় আটকে আছে ওর। অরুনাভ মুখার্জী এগিয়ে গিয়ে বললেন,

-কি হয়েছে দিয়ান?নিচে এসেছিলি কেনো তুই?

-কেনো আবার?হাতে ব্যাট!দেখে বুঝছেন না কাকাবাবু?ও খেলতে নেমেছিলো!এইযে,আপনি!আপনাকে কতোদিন কতোভাবে বারন করলে আপনি আমার কথা মানবেন বলুন তো!সকালে একটু ঘরে ছিলাম না,মা নাকি সেলাইয়ের কাজ নিতে চলে গেছে,তুইও নিচে নেমেছিস খেলবি বলে।তোরা কি চাস বলতো?আমি এভাবেই তোদেরকে বারন করতে করতে শেষ হয়ে যাই?

-এসব কি বলছিস তুই আপুনি!

-ঠিকই বলছি।ঘরে যা,গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পর!আমি যাচ্ছি মাকে ডাকতে।এসে যদি তোকে বিছানায় না পাই দিয়ান….

আরাব এগিয়ে গেলো এবার।দিয়ানের হাত থেকে ব্যাট নিয়ে দোয়াকে বললো,

-কেমন মানুষ আপনি?বাচ্চা ছেলেটা শুধু খেলতে‌ নেমেছে বলে এইভাবে বকছেন কেনো?ওর তো খেলারই বয়স এটা!কি এমন দোষের হলো তাতে?আর এখন কি শুয়ে থাকার সময় নাকি?

দোয়া চুপ রইলো।অরুনাভ মুখার্জী একটু আমতা আমতা করে বললেন,

-আ্ আরাব,তুমি যাওনা,চা টা শেষ করো।আমি দেখছি এদিকে….

-আপনিও ওনাকেই সমর্থন করছেন?এটা কেমন কথা?

-ছোটু ঘরে যা!

দোয়ার কড়া আওয়াজে আর দাড়ালো না দিয়ান।উপরে চলে গেলো।দোয়াও আরাবের দিকে একপলক সরুদৃষ্টি ছুড়ে খুন্তি হাতে নিয়েই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।কপাল‌ কুচকে তাকিয়ে রইলো আরাব।অরুনাভ মুখার্জী বললেন,

-মেয়েটার বাবা মারা গেছে অনেক আগেই।আমার এখানে আসার পর থেকে প্রতিটা মুহুর্তে ওর স্ট্রাগল দেখে গেছি।টিউশনি আর সেলাইয়ের কাজ করে সংসারটা ওই চালায়।মা ভাইয়ের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য দিনরাত কষ্ট করে।মুখ বুজে সবদিক সামলায়।ওর মা এজমার রোগী।আর দিয়ান….

-দিয়ান?

-দিয়ানের হার্টে একটা ফুটো আছে আরাব।এজন্যই ডাক্তার ওকে রেস্টে থাকতে বলেছে।এ বিষয়ে ও বা দোয়ার মা,কেউই কিছুই জানে না।অপােরেশনের জন্য টাকা জোগার করবে বলে একগুয়ে হয়ে আছে দোয়া।কিন্তু বাস্তবতাটা তো ভিন্নই।তাই মেয়েটা ওমন…

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অরুনাভ মুখার্জী।সবটা শুনে মাথা খালি হয়ে গেলো আরাবের।দোয়া স্ট্রাগলার,সেটা ও বুঝেছিলো আগেই।কিন্তু এই ক্ষুদ্র চিলেকোঠায় এতো ভারি ভারি জীবনকাহীনি জরিয়ে আছে,ভাবতেও বুকের কোথাও খামচে ধরছে ওর।অরুনাভ মুখার্জী বললেন,

-চলো খাবে চলো।মেসের ছেলেগুলো ভোরেই বেরিয়ে গেছে।তবে যাওয়ার সময় খাবার দিয়ে গেছে ‌তোমার জন্য।

আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকলো আরাব।খেতে বসে দরজা দিয়ে দেখলো দোয়া অনেকগুলো জামাকাপড় দুহাতে বুকে জরিয়ে সদর দরজা দিয়ে ঢুকছে।পেছনে মলিন চেহারার এক ভদ্রমহিলা খুন্তিটা হাতে নিয়ে কোনোমতে নিজেকে সামলে ধুকতে ধুকতে আসছেন।ওরা আড়াল হতেই খাবার শেষ করলো আরাব।অরুনাভ মুখার্জী ওর হাতে ওয়েন্টমেন্ট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

-এগুলো কাটাছেড়া জায়গাগুলোয় লাগিয়ে দিও।আমার এখন যেতে হবে।এখানকার সবাই বিপদে আপদে এই নাড়িটেপা ডাক্তারের কাছেই আসে কি না!দুপুরের আগেই চলে আসবো আমি।আর বাসায় অফিসটাইমে আর কোনো ছেলে থাকবে না দিয়ান ছাড়া।আমি দোয়াকে বলে যাবো ওকে পাঠিয়ে দিতে।থাকতে পারবে তো তুমি?

-জ্বী।থাকতে তো হবেই।আপনারা আমাকে বাচিয়েছেন,আপনাদের দাওয়াতকে কি করে উপেক্ষা করি বলুন?দুপুরের খাবার সেরেই যাবো এখান থেকে।

সৌজন্যে হেসে বেরিয়ে গেলেন অরুনাভ মুখার্জী।খানিকটা সময় রেস্ট নিয়ে ওয়েন্টমেন্ট হাতে জানালার দিকে‌ এগুলো আরাব।গেন্জিটা খুলে হাতের বুকের দিকগুলোতে লাগিয়ে নিলো নিজের মতো করে।কিন্তু পিঠের দিকে হাত পৌছাচ্ছে না কোনো মতেই।শরীর মোচড়াতেও পারছে না ব্যথায়।হঠাৎই আওয়াজ এলো,

-আমি হেল্প করি?

আরাব পিছন ফিরলো।দিয়ান এসেছে।কি নিস্পাপ হাসি ওই চেহারায়।তা দেখে হাসি ফুটলো ওর মুখেও।বললো,

-আরে দিয়ান?এসো ভেতরে।

দিয়ান ঘরে ঢুকলো।আরাব ভ্রু নাচিয়ে বললো,

-তোমার আপুনি আসতে দিলো তোমাকে?বকেনি?

-না না!কাকাবাবু বলে গেছে না!আর আপুনি শুধু আমাকে খেলার জন্য নিচে নামতে দেখলে বকে।কারো হেল্প করতে দেখলে কখনো বকে না!

-হেল্প করাটা তোমাদের এখানের সবার অস্তিত্বে মিশে আছে তাইনা দিয়ান?

দিয়ান বুঝলো না কথাটা।হাসি দিলো একটা।আরাবও হেসে দিয়ে বললো,

-ওয়েন্টমেন্ট লাগাতে পারবে?

মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো দিয়ান।সুন্দরমতো লাগিয়েও দিলো মলমটা।দেওয়া শেষে আরাব ঘুরে বসলো ওর দিকে।বললো,

-ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসো?

-অন্নেক!কিন্তু আপুনি খেলতে দেয়না।

আরাব হেসে বললো,

-দেবে।আর কয়েকটাদিন পর থেকেই খেলতে দেবে।আমি বলে দেবো তোমার আপুনি কে!

-সত্যি বলছো তুমি?আপুনিকে বলবে?আমাকে খেলতে যেনো বারন না করে!জানোতো,সদর দরজার বাইরের ছোট গলিটায় সবাই ক্রিকেট খেলে।আমি বাদে।আপুনি সবাইকে মানা করে দিয়েছে,যেনো আমাকে খেলায় না নেয়।

আরাব দিয়ানের কাধে হাত রেখে বললো,

-তুমি খেলবে দিয়ান।সবার সাথর,সবার মতো করে খেলবে।তোমার আপুনি মানা করবে না তোমাকে আর।সবাই খেলায় সাথে নেবে তোমাকে।এটা তোমার কাছে এই আরাব ভাইয়ার প্রমিস!এন্ড ট্রাস্ট মি,তাহসানুল আরাব,কোনোদিনও নিজের প্রমিস অপুর্ন রাখে না!

-ছোটু?গ্লাস শেষ করিসনি কেনো?

দোয়ার ডাক।ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোন থেকে উপরে তাকালো দিয়ান।বললো,

-ওইটুকো দুধ না খেলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হবে আপুনি?মাকে দে,নয়তো তুইই খেয়ে নে না!

দিয়ান আবারো ঘরে ঢুকলো।আর আওয়াজ আসে নি দোয়ার।কিন্তু আরাব স্থির থাকতে পারছে না!ঠিক কি ঘটছে ভেতরটায়,না নিজে বুঝছে,না কাউকে বুঝাতে পারছে।ওই আওয়াজ শুনে শান্তি লাগছে,আবার অস্থিরও লাগছে।ওই মায়াবী,মলিন চেহারাটা সামনে আসলে তাকিয়ে দেখার তৃষ্ণাও বাড়ছে,আবার মনে প্রশান্তিও অনুভুত হচ্ছে।এর কি কারন?প্রানঋণে ঋণী করে দিয়েছে,তাই?নাকি ওর এই অদ্ভুত অনুভুতিগুলোর আলাদা কোনো সমাবেশ ঘটতে চলেছে?ঠিক কোন রঙে রাঙাতে চলেছে ওকে,এই বেরঙ চিলেকোঠা???

#চলবে….

[ভুলত্রুটি মার্জনীয়]