এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব-০৮

0
595

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৮

আরো একটি নব্যদিনের সুচনা।ফজরের আযান শুনেই ঘুম ভাঙলো দোয়ার।আস্তেধীরে উঠে বসে হাতটা পরখ করলো।অরুনাভ মুখার্জীর ওষুধ লাগানোতে ব্যথা কমেছে অনেকটাই।নামাজ শেষ করে হাড়িপাতিল উল্টেপাল্টে বুঝলো রাতে রান্না করা খাবার মুখে তোলে নি কেউই।দেরিতে রান্না হওয়ায় টকে যায়নি এখনো।ওগুলোই গরম করে খাওয়া যাবে।ওড়না কোমড়ে বেধে ব্যান্ডেজ করা হাতেই টেনেটুনে বারান্দায় চুলোর কাছে নিয়ে গেলো সব।এটাওটা করার সময় কয়েকবার উকি দিয়েছে মা ভাইয়ের ঘরে।দুজনের ঘুমন্ত মুখ দেখেই সকালটা প্রানবন্ত হয়ে গেলো দোয়ার।

একটু বেলা গরাতেই ধরফরিয়ে উঠে বসলেন সালমা বেগম।রাতে দোয়ার চিন্তায় ঘুমোতে দেরী হয়েছিলো তার।বিছানা ছেড়ে ছুটে বারান্দায় এসে দেখলেন দোয়া সবটা সেরে গুছিয়ে নিচ্ছে।খুব একটা বেলা হয়নি।এগুলো শেষ করতে দোয়া কতো সকালে উঠেছে তার আন্দাজ করলেন সালমা বেগম।এমনই করে দোয়া।আর তারজন্য তার অপরাধবোধ থাকে প্রতিবার।এগিয়ে যেতেই দোয়া হাতের কাজ সারতে সারতে বললো,

-উঠে গেছো?আজ আমার ভার্সিটি আছে মা।কখন ফিরবো ঠিক বলতে পারছি না।তবে এসে দুপুরের রান্না করার সময় করেই আসবো।তুমি কিন্তু একদম চুলোর কাছে আসবে না।আর ছোটুকে একদম উপরনিচ করতে দেবে না।পরেটরে গিয়ে ব্যথা পাবে।আর যদি পারি বাজারটাও….

-তোর হাত কেমন এখন?

দোয়া কাজ ছেড়ে মায়ের গলা জরিয়ে ধরলো।আদুরে গলায় বললো,

-ও তো রাতেই সেরে গেছে।তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলে,তখনই!

মেয়ের গালে আলতো করে হাত ছোয়াকেন সালমা বেগম।একটু চুপ থেকে দোয়া ব্যস্তভাবে বললো,

-চলো চলো,খাবে চলো।রাতে কিছুই খাওনি জানি।ওষুধটাও খাওনি তাইনা?চলো এবার।একসাথে খাবার খাবো।

মা মেয়ে মিলে গুছিয়ে নিলো খাবার।দিয়ান উঠে গেলে একসাথে খেয়ে নিলো তিনজন মিলে।আজ একটু আগে আগেই বেরোবে দোয়া।ভার্সিটি যাওয়ার আগে একবার আশেপাশের কিন্ডারগার্ডেন দুটোতে যাবে।নতুন টিউশনির একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে।তাই খাওয়া শেষ করেই খোপা করে রাখা চুলগুলো হাতেই ঝেড়ে কোনোমতে বিনুনি করে নিলো।সালমা বেগম বললেন,

-আচড়ালিও না চুলগুলো!

-আরে মা সময় নেই!তাড়া আছে!

-কেনো আপুনি?আজ এতো আগে যাবি কেনো তুই?

দোয়া এগিয়ে দিয়ানের নাক টিপে দিয়ে বললো,

-আজকাল আপুনির আগেপরে বেরোনোর হিসাব একটু বেশিই কষছিস না তুই ছোটু?

-তো কি করবো?তো তোর বিয়ে হয়ে গেলে তোর বরকে সুদেআসলে সবটা হিসেব করে বলতে হবে না আমার?

ভেতরটা ধক করে উঠলো দোয়ার।মা ভাইকে ছেড়ে দুরে থাকার কথা তো ও স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।বিয়ে তো আরো দুরের বিষয়।দিয়ানও তো কোনোদিন এভাবে বলে নি!আজ হঠাৎ বিয়ের কথা কেনো বললো ও?ধীরস্বরে বললো,

-ব্ বিয়ে মানে?

-আপুনি মা কাল…

ওকে বলতে দিলেন না সালমা বেগম।বললেন,

-বিয়ে মানে বিয়ে।ও্ ও কথার কথা বুঝিয়েছে।এমনি শুধু…দিয়ান?যা তো একটু,তৃষার কাছ থেকে….

-ওকে বলতে দাও মা!

-আরে,এসব তো…দিয়ান যাক তৃষাকে…

দোয়া চোখ বন্ধ করে কিছুটা কড়া গলায় বললো,

-কোথ্থাও যাবি না তুই ছোটু!বল কি বলছিলি !

-দোয়া…

সালমা বেগম আর বলতে পারলেন না।দোয়ার দিকে তাকিয়ে থেমে যেতে হলো তাকে।দিয়ান একটু চাপা গলায় আমতা আমতা করতে করতে বললো,

-আপুনি,মা অরুনাভ কাকুকে কালরাতে তোর জন্য সম্বন্ধের কথা বলছিলো।

ভাষাহীনভাবে মায়ের দিকে তাকালো দোয়া।দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টায় সালমা বেগম।আগেররাতে দোয়ার বিয়ের বিষয়ে অরুনাভ মুখার্জীকে বলছিলেন উনি।বেশ বুঝতে পারছেন,যতোদিন দোয়া এ সংসারে আছে,ততদিন তাদেরকে ছেড়ে নিজেকে নিয়ে ভাবার কথা ভাববে না ও।এক নতুন পৃথিবীই ওকে এ সংসারের তিক্ততা থেকে মুক্তি দিতে পারে।কিন্তু কথপোকথনের পুরোটাই যে দিয়ান শুনে নিয়েছে,তার ধারনা ছিলো না তার।দোয়া স্ম্লান গলায় বললো,

-এটা সত্যি মা?

-দোয়া আমি…

-হ্যাঁ বা না বলো মা।

-দোয়া…

-আমাকে শুধু এটা বলো তুমি সত্যিই কাল কাকাবাবুকে আমার সম্বন্ধের কথা বলেছো কি না?

-হ্যাঁ বলেছি!কি ভুল বলেছি দোয়া?ভুলটা কোথায় আমার?আর কতোদিন এভাবে এই সংসারের পিছনে পরে থেকে নিজেকে শেষ করে দিবি তুই?আর কতো!

মায়ের কান্নারত চিৎকারে চোখের জল বেরিয়ে আসলো দোয়ারও।দিয়ান মাথা নিচু করে এককোনে দাড়িয়ে।মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে,লুকিয়ে চুরিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে চায়ের দোকান,ইটখোলা,সাইকেলের গ্যারেজ কিংবা দর্জিদোকানে কাজ জুটিয়ে নিতে।ওর বয়সী কতো ছেলেরাই তো কাজ করে ওগুলোতে।ওউ‌ না হয় গেল!পড়াশোনার বাড়তি ঝামেলাও তো নেই ওর!কিন্তু দোয়ার নজর এড়িয়ে তা কখনোই সম্ভব না।তাই এভাবেই চুপচাপ চোখের সামনে বোনের সংগ্রাম,মায়ের আক্ষেপ দেখতে হয় ওকে।সালমা বেগম আবারো বলতে লাগলেন,

-তোর কষ্ট আমার আর সহ্য হয় না দোয়া!আমাদের দুজনের জন্য কি না করছিস তুই!কিন্তু আর না!আর পাঁচটা মায়ের মতো আমিও আমার মেয়ের একটা গুছানো জীবন দেখতে চাই!একটা সুন্দর,সাজানো সংসার দেখতে চাই!যেখানে শান্তিতে,নিশ্চিন্তে থাকতে পারবি তুই!এই সংসারে তা সম্ভব না দোয়া!তোকে তো…

-আর কয়েকটা দিন সময় দাও আমাকে মা।বাবাকে দেওয়া কথার খানিকটা পালন না করে মরেও শান্তি পাবো না আমি।

শান্ত গলায় বললো দোয়া।সালমা বেগম জাপটে জরিয়ে ধরলেন দোয়াকে।দিয়ানও এসে জরিয়ে ধরেছে ওকে।কাদতে কাদতেই সালমা বেগম বললেন,

-এসব কি বলছিস তুই মা?কি বলছিস এসব?

-এ সংসারে নয়,তো দোয়া এ পৃথিবীতেও থাকবে না মা।কেনো বোঝো না তোমরা বলোতো?আমি যা,তা তো তোমাদেরই জন্য।কেনো এসব বলে বারবার পর করে দাও আমাকে?কেনো?

-দোয়া?মা আমার…আমিতো শুধু…

মাকে কথা শেষ করার সুযোগ‌ দেয়নি দোয়া।ব্যাগ কাধে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।মুখার্জীবাড়ি থেকে হেটে পনেরোমিনিটের পথ মেইনরোডটা।সরু গলির মতো এটুক রাস্তায় যানবাহন বলতে অটো,সবজিওয়ালার ঠেলাগাড়ি,সাইকেল আর রিকশা চলে।উচ্চবিত্তরা প্রাইভেট কার নিয়েও ঢুকে পরে।চোখের জল মুছলে কারো চোখে পরবে না তা!কাদতে কাদতেই স্টপেজে এসে দাড়ালো।ভার্সিটির বাস স্টপেজে থামতেই মাথা নিচু করে উঠে পরলো।মুল গন্তব্য…কিন্ডারগার্ডেন।আগে জীবিকার খোজ!জ্ঞানান্বেষন?তা নিয়ে ভাবার সময়টা কোথায়?

বিছানায় রাখা বাইকের চাবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে আরাব।মাঝখানে চার চারটে দিন বাসা থেকে,বলা চলে ঘর থেকেই বেরোয়নি ও।আজ বেরোবে।শার্টের হাতাটা টান মেরে আরেকটু উপরে তুলে চাবিটা হাতে তুলে নিলো আরাব।হুইস্টলিং করে বেরোতে যাবে রুম থেকে,গলার দিকে খোলা বোতামজোড়ার ফাকে দৃশ্যমান ক্ষতটা আয়নায় দেখে থেমে গেলো।ঠোট কামড়ে আবারো হেসে হাত বুলিয়ে দিলো মৃদ্যুভাবে।

-ব্যথা আছে এখনো?

তৌফিকার গলা শুনে পেছন ফিরলো আরাব।সত্যিই এসেছে ও।সেদিন এসে ওরা পরদিনই চলে গিয়েছিলো।বোনের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাসিমুখে বললো,

-আরে আপু?কখন আসলি তুই?

তৌফিকা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

-সবেই এসেছি।

-টুইঙ্কেল কোথায়?

-আসেনি।মুফতাহির ওকে নিয়ে বেরিয়েছে।ডে শিফট আজ দুজনেরই অফ।

-তো এখানেই আসতে বলতি ভাইয়াকে!

আরাবকে আপাদমস্তক দেখে নিলো তৌফিকা।বিছানায় বসে বললো,

-ওসব ছাড়!বললি না?ব্যথা আছে আরো?

-আরেহ্ না!টোটাল চারদিন কুয়োর ব্যাঙের মতো ঘরে পরে আছি।একঘরে হয়ে থেকে এতোটা বোরিং অবস্থা যে,ব্যথাই বিরক্ত হয়ে ছেড়ে চলে গেছে!

হাত দিয়ে ওকে বিছানায় বসার জন্য ইশারা করলো তৌফিকা।দেরি হবে ভেবে মন খানিকটা দমে যাচ্ছিলো আরাবের।তবুও তৌফিকার গাম্ভীরতায় একটু নজরসরু করতে বাধ্য হলো ও।জোর করে হাসি টেনে পাশে বসলো তৌফিকার।তৌফিকা নির্লিপ্ত ভঙিমায় বলে উঠলো,

-প্রেমে পরেছিস?

এমন সোজাসাপ্টা প্রশ্ন তৌফিকাকেই মানায় ভেবে মুচকি হাসলো আরাব।তৌফিকার উত্তরটা বুঝে নিতে খুব একটা কষ্ট হয়নি।খুশির উচ্ছাস বেরিয়েই আসছিলো।তবুও উচ্ছাসিত হওয়াটা আটকে দিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো,

-প্রেমে পরেছিস তা আমার কাছে লুকোচ্ছিস কেনো?

আরাব আরেকটু হেসে ওর সামনে হাটুগেরে বসলো।এ কয়দিনে ওর ভেতরটা যে দোয়ার নামেই শ্বাস নিয়েছে,তা বেশ ভালোমতোই অনুভব হয়েছে ওর।হ্যাঁ,ভালোবাসে ও‌ দোয়াকে।জীবনের প্রথমবার হওয়া এই প্রেমের অনুভব,কোনোভাবেই মিথ্যে হবার নয়।আরাব তৌফিকার হাতদুটো মুঠো করে নিয়ে বললো,

-লুকাই নি আপু।বরং এখন তোদেরকে বা ওকে,বলাটা কতোটা ঠিক তা বুঝে উঠতে পারছি না।

-মানে?

-পরে বলবো।তুই আগে এটা বল,তোর ভাই যে প্রেমে পরেছে,এটা তোর আন্দাজ ছিলো?নাকি মুফতাহির ভাইয়া…

-তুইতো জানিস আরাব,মুফতাহির কিছু লুকোয় না আমার কাছ থেকে।তবে তোর বিষয়গুলোতে আমার জিজ্ঞাসা করতে হয় ওকে।বাসায় আসার পর থেকেই তোর কেমন একটা অস্বাভাবিক বিহেভ নোটিশ করছি।তুই একটুখানি,না!বেশ অনেকটাই অন্যমনষ্ক।যদিও তোর কোনো ডিপ স্টাডির সময়েও এমনই করিস,তাই মা,বাবা,কেউই কিছু বলেনি তোকে।বাট আমার একটু আজব লাগছিলো।অসুস্থ্যতা যে তোকে বাসায় আটকে দিয়েছে,এটা মানাটা,আমার পক্ষে পসিবল না।তাছাড়া যে টুইঙ্কেল বলতে কিনা আরাব পাগল,তাকে অবদি সময় খুব কমই দিয়েছে।এজন্যই চলে গিয়েছিলাম আমরা।তোকে সময় দেবো বলে। মুফতাহিরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,ওকে কিছু বলেছিস কি না।শুধু বললো তোর মাথায় নাকি নতুন ভাবনা ঢুকেছে।এখন তাই আমিই আসলাম সবটা জানতে!ঘটনা কতোদুর।

আরাব আবারো হাসলো।অতঃপর দোয়ার বিষয়ে সবটা জানালো ও তৌফিকাকে।তৌফিকা বেশ খানিকটা সময় ভাইয়ের মুখের দিকে মুগ্ধভাবে তাকিয়ে রইলো।ওর বর্ননায় দোয়ার প্রতি ওর ভালোবাসা স্পষ্ট।গালে হাত রেখে বললো,

-আ’ম প্রাউড অফ ইউ আরাব।

ভ্রু কুচকে তাকালো আরাব।বললো,

-মানে?

-তুই জানিস,তুই কি।তুই জানিস,তোর কি আছে।তুই এটাও জানিস,দোয়া কে,ওর কি আছে।এসবের পরেও এভাবে কাউকে ভালোবাসা…

-আমি কিছুই নই আপু!কেনো এসব কথা বারবার তুলিস তুই বলতো?মুফতাহির ভাইয়াও বলে!কেনো বলে বলতো?আমি কি চেয়েছি কোনোদিন এসব?আমি তো আমারটুক নিয়েই খুশি।স্বল্পে তুষ্ট এক সাধারন মানুষ।অর্থবিত্তের দেয়াল তো কোনোদিনও আমার কাছে ছিলো না আপু।জানিস তো তুই!দোয়া যেমন,তা নিয়েই আমি ওকে ভালোবাসি।আমার পক্ষে কোনো কিছুর বিনিময়ে তাতে ছাড় দেওয়া সম্ভব না!

এমনটাই উত্তর প্রত্যাশা ছিলো তৌফিকার।ও জানে আরাব কেমন।ভাইকে ভালোমতোই চেনে ও।তবুও!তৌফিক ওয়াহিদের রক্ত বলে কথা!দোয়ার সবটা শুনে যা বুঝলো,মেয়েটা জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত পরিবারের প্রতি এক তুখোড় দায়িত্বশীল মেয়ে।ওর প্রতি আরাবের উপলব্ধিতে এতোটুকো খুত থাকলেও মেয়েটা ঠকে যাবে।তা জেনেশুনে কিভাবে হতে দেবে তৌফিকা? তাছাড়া এ সম্পর্কের সম্পুর্ন বিপরীতে থাকবে খোদ তৌফিক ওয়াহিদ!আরাবের বাবা!আরাবকে যে দুদিকটাই সামলে চলার মতো করে ভালোবাসতে হবে দোয়াকে!একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,

-ওকে।ওসব বাদ দিলাম,কিন্তু জারা?ওর কি হবে?

-এবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে!

ভাইয়ের রাগ বুঝলো তৌফিকা।সত্যিই তো!জারাকে তো ও কখনো ভালোবাসে নি।জারাই জেদ ধরে বসে আছে।তৌফিকা আদুরে গলায় বললো,

-আচ্ছা রিল্যাক্স!ভুল হয়ে গেছে।আর বলবো না কোনোদিনও!পাক্কা!

আরাবের মনটাই বিগড়ে গেছে ওই কথাগুলো শুনে।তৌফিকা আবারো নরম গলায় বললো,

-এটা বল আরাব,কি এমন দেখলি তুই দোয়ার মাঝে?এতোটা ভালোবাসতে শুরু করলি?আদর্শ প্রেমিকের মতো বিহেভ করছিস তুই!তোর মাঝে যে দোয়ার জন্য পাগলামি ভালোবাসা দেখছি আরাব!এন্ড ইটস্ ইনজুরিয়াস টু হেল্থ!

-দোয়ার সব আছে আপু।স্পেশালিটি শুনবি?ওই বেরঙ চিলেকোঠার সবচেয়ে রঙিন দৃশ্যপট!ভালোবাসা!তাতেই নিজেকে রাঙিয়ে নেবো আমি আপু!আর হ্যাঁ,আদর্শ প্রেমিক!ওই ট্যাগটা আমারই হবে দেখিস!তবে যতোদিন না ওকে বলতে পারছি,কি করে আমি আদর্শ প্রেমিক বল?এখন তো নিজেকে ওয়ানসাইডেড লাভার,মানে ঠেসখাওয়া টোকাই ছাড়া আর কিছুই লাগছে না!

আনমনে এতোগুলো কথা বলে নিজেই‌ বিস্মিত হলো আরাব।তৌফিকা হেসে দিয়ে বললো,

-তো বলছিস কবে?

আরাব উঠে দাড়ালো।পকেটে হাত গুজে পেছোতে পেছোতে বললো,

-বলবো আপু!আজ যেমন তোকে বললাম,ওকেও বলবো!আপাতত একপলক দেখে আসি!ভালোলাগছে না কিছুই!বাই!

আরাব বেরিয়ে গেলো।আর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তৌফিকার ভেতর থেকে।আরাবের ভাষ্যমতে যা বুঝলো,দোয়ার পরিবার নিম্নবিত্তই বলা চলে।শুধুমাত্র একারনে ওকে ওর বাবা কোনোদিনও মেনে নেবে না।এটা আরাব নিজেও জানে।তবে ভালো যখন বেসেছে,দোয়াকে ছাড়বে না ও।আর তাই এ বিষয়ে আরাবকে বোঝানোর ক্ষমতা রাখে না তৌফিকা।নিজের লাভ ম্যারেজের পর,বাবার সামনে এই বিষয়েই কথা বলার স্পর্ধা দেখানোও ওর ভাবনার বাইরে।দুঃশ্চিন্তাগুলো গা ঝাড়ছে মনের কোনে।পরিবারের দিকে আগমনী ঝড়কে আগেই উপলব্ধি করা সত্ত্বেও থামানোর কোনো উপায় করতে পারছে না।পারবেও না!

সন্ধ্যের আবছা আলো ছায়ার লুকোচুরি খেলায় মেতেছে শহর।পাখিরা আগেই ফিরে গেছে যে যার নীড়ে।হঠাৎ দুচারটে কাক উড়ে যায় কা কা শব্দ ছেড়ে।আজ না কিছু চোখে ধরছে,নাইবা কিছু কানে যাচ্ছে দোয়ার।এই চারদিনে কিন্ডারগার্ডেন,ভার্সিটি,টিউশনি,বাড়ি,বাজার দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত দোয়া।কোথাও কোনোরকমের ব্রেক পায়নি ও।আগের রাতেও ঘুমানোর সুযোগ হয়েছে মাত্র ঘন্টা তিনেক।শরীরের দুর্বলতা আর উষ্ণতায় বুঝতে পারছে,জ্বর হয়েছে ওর।রীতিমতো ধুকে ধুকতে হাটছে ও রাস্তায়।কেমন যেনো শরীর ভর ছেড়ে দিচ্ছে বারবার।কতো কষ্টে মৃত্তিকাকে পড়ানো শেষ করেছে,ওই‌ জানে।তার উপর ওর মায়ের স্লো ঘড়ি!সময়টা যেনো আরো বেশি করে থামিয়ে দিচ্ছে ওর সঞ্চারন।তবুও পা চালাচ্ছে।বাসা পৌছোতে তো হবে!

রাস্তায় হাটতে বের হওয়া মানুষ বাসায় ফিরছে।সবজি ওয়ালাটার সাথে দেখা হলো না আজ।দোয়া টের পেলো,দেরি হয়ে গেছে অনেকটাই।হাটার গতি আজ অনেকটাই কমে গেছে ওর।আরো দ্রুত পা চালানোর চেষ্টা করলো দোয়া।কিন্তু শরীর তাতে সায় দিলো না।হুট করেই একটা বড়সর কালো গাড়ি এসে একদম সামনে দাড়ালো ওর।চমকে দুপা পিছিয়ে গেলো দোয়া।ওর নিস্প্রান চোখজোড়া ভয়ার্তভাবে চঞ্চল হয়ে উঠলো সেই সাথে।গাড়ির ভেতর থেকে রনোক সাথে আরো দুটো লোকের বেরিয়ে আসতে দেখে,ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ছেয়ে থাকা রাস্তাটা অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো দোয়ার।পেছোতে পেছোতে বিস্ময়ে সামনের মানুষগুলোর নির্দ্বিধায় এগিয়ে আসা দেখছে দোয়া।আশেপাশের দু চারজন লোকের পদাচরনা যেনো গায়ে লাগছে না ওদের কারোরই!

চলবে।