এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব-০৯

0
939

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৯

হাতের রুমালটা ঘুরাতে ঘুরাতে দোয়ার দিকে এগোচ্ছে রনোক।রনোকের পেছনে আরো দুজন।গাড়ির জন্য ওপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছে না।পেছনে তাকিয়ে বেশ অনেকটা দুরে দুজন মধ্যবয়স্ক লোককে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো দোয়া।রাস্তার ওপাশ দিয়ে এক মহিলা হেটে যাচ্ছিলেন।খানিকটা সন্দেহের নজরে চারজনের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন উনি।পরপরই বিরক্তির চেহারা করে হাটা লাগালেন।দৌড়াবে,অতোটা গায়ের জোর নেই ওর এই মুহুর্তে।দোয়া ব্যাগে হাত ঢুকালো স্প্রে বের করবে বলে।সবে মহিলাটাকে ডাকতে যাবে,হুট করেই রনোক রুমালটা একদম মুখে পুরে পেছনে বেধে দেয় ওর।গায়ের জোরে ওকে সরিয়ে দিচ্ছিলো দোয়া।মরিচগোলানো স্প্রে টাও বের করেছে।কিন্তু বাকি ছেলেদুটোর একজন পেছনে মুচড়ে ধরলো ওর হাত।ধাক্কাতে থাক্কাতে ওকে গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

আকসাৎ এরকম ঘটনার সম্মুখীন হওয়া একটা মেয়েই জানে তার মনের অবস্থা।আত্মরক্ষা বোধহয় আর সম্ভব হলো না ভেবে কেদে দিলো দোয়া।গাড়ির ব্যাকসিটে একপাশের একজন দুহাত মুড়িয়ে পেছনে ধরে রেখেছে ওর।রনোক আরেকপাশে।দোয়ার জামার বড়হাতা একটানে ছিড়ে দিয়ে রাগী গলায় বললো,

-খুব তেজ তোমার না?খুব তেজ?এই স্প্রের বোতল,আর রাস্তায় দুচারজন মানুষের আনাগোনা নিয়েই এতো তেজ তোমার?এতো তেজ?

রনোকের নখের আচড়ে হাত কেটে গেছে অনেকটা। জববলছে।প্রানপনে আওয়াজ করা আর ছোটার জন্য চেষ্টা করছে দোয়া।কিন্তু জ্বরের দুর্বলতায় আরো বেশি করে হাপিয়ে উঠছে যেনো।রনোক আবারো বললো,

-গত চারদিন হলো এই রাস্তায় ঘুরঘুর করছি।আর তুমি?কোনো পাত্তাই নেই!কোনো ভয় নেই!চোখ সরিয়ে বিনাসংকোচে আমারই সামনে দিয়ে হেটে যাও?তোমার সাহস কি করে হয় রনোকের চাওনিকে এড়িয়ে চলার?হাউ ডেয়ার ইউ?

আরেকবার ঝাড়া মারলো দোয়া। রনোক এবার গলা টিপে ধরলো ওর। রনোকের স্পর্শের চেয়ে মৃত্যুকে বারবার কামনা করতে লাগলো দোয়া।রনোক ওর গলা আরো জোরে চেপে ধরে বললো,

-চাইলেই তোমাকে শেষ করে দিতে পারি দোয়া।শরীরের টেম্পারেচার যা দেখছি,দুমিনিটও লাগবে না তোমার নাম পৃথিবী থেকে মুছে দিতে।

পরপরই ছেড়ে দিলো।কাশি উঠে গেছে এতেই দোয়ার।ভুল বলেনি রনোক।এই চারদিনে ওর উপস্থিতিকে পুরোপুরিভাবে অগ্রাহ্য করেছে ও।ভয় পেলে আরো বেশি করে ভয় দেখাবে রনোক।এমনটাই বুঝিয়েছিলো ও‌ নিজেকে।অন্তত নিজের পারিবারিক মর্যাদার কথা ভেবে পাব্লিক প্লেসে বাজে কোনো পরিস্থিতি তৈরী করবে না এমনটা ধারনা করেছিলো ও।কিন্তু ওকে ভুল প্রমান করেছে রনোক।দোয়া কাদছেই। যদি রনোককে দেখা শুধু ভয় পাওয়াটা আজকে ওর আত্মসম্মানকে বাচিয়ে দেয়,তবে পাবে ও ভয়।ভয় পেয়েই এ পথে চলবে ও।কিন্তু সে সুযোগ কি পাবে ও?বলারই কি সুযোগ পাবে? এই চলন্ত গাড়ি কোন অন্ধকারের অতলে নিয়ে যাচ্ছে ওকে ভাবতেই বুকফেটে কান্না আসছে দোয়ার।রনোক আবারো বললো,

-বাট তোমার ইগ্নোরেন্সের শাস্তি তো আমি মৃত্যু ঠিক করিনি দোয়া! তারথেকেও যন্ত্রনার কিছু ঠিক করেছি যে! যাতে প্রতিদিন মরো তুমি! আমাকে দেওয়া থাপ্পরের চেয়ে বড় অপমানে প্রতিদিন অপমানিত হও তুমি! এমন শাস্তি দোয়ারানী! এমন শাস্তি চুজ করেছি তোমার জন্য!

বিস্ফোরিত চোখে তাকালো দোয়া। রনোক বাকা হেসে বললো,

-এবার তবে সব হিসেব মেটানো যাক?

আরো উত্তেজিত হয়ে পরলো দোয়া। ওর ছটফটানি বেশ আনন্দের সাথে কিছুক্ষন দেখলো রনোক।তারপর বললো,

-ওমন করে না দোয়ারানী! কিচ্ছুটি করবো না তোমাকে আজ! বলেছি তো,তোমাকে মারবো,ভয়ে ভয়ে!ভয় দেখতে চাই তোমার চেহারায়! তাই আজ শেষবারের মতো ওয়ার্নিং‌ দিয়ে গেলাম ম্যাডাম!রনোক কে ভয় পাও!নইলে পরেরবার…

কথা শেষ না করে বাকা হাসলো রনোক।গাড়িও থামলো।ধাক্কা মেরে দোয়াকে গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো ওরা।মেইন রাস্তায়ই ছেড়েছে ওরা দোয়াকে।আসেপাশের লোকজনের অভাব নেই।সবাই দোয়াকে ওই অবস্থায় দেখে বলাবলি শুরু করে দিলো।ওড়না চাদরের মতো জরিয়ে ছেড়া হাতাটা আগে ঢাকলো দোয়া।ভীত দৃষ্টিতে চারপাশের অবজ্ঞার দিকে তাকালো।হাতের কনুই কেটে রক্ত ঝড়ছে।এক মহিলা ছুটে এসে বললেন,

-কি হলো মা তোমার? ওরা কারা ছিলো?

মহিলার দিকে তাকিয়ে তারবুকে মুখ গুজে হুহু করে কেদে দিলো দোয়া।এতোক্ষনে যেনো শ্বাস ফেলার জায়গা হয়েছে ওর।ওর সাথে তো তেমন কিছুই ঘটেনি,যেমনটা সবাই ভাবছে। তাই কারো ভাবনা নিয়ে মাথাব্যথা নেই ওর। কিন্তু রনোকের স্পর্শের কথা মনে পরতেই ভেতরটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে ওর।দোয়ার কান্নায় নুইয়ে গেলেন মিসেস ওয়াহিদ।তৌফিকাসহ বাকি সবার সাথে বাইরে বেরিয়েছিলেন ওনারা।তৌফিক ওয়াহিদ রেস্ট্রুরেন্টের বিল পে করছিলেন। উনি বাইরে এসে দাড়িয়েছিলেন।আর বাকিসব ভেতরেই ছিলো।এরইমাঝে রনোকের গাড়িটা ফেলে যায় দোয়াকে।একটা মেয়ের এই দুরবস্থায় যখন বাকিসব বলাবলিতে ব্যস্ত,না এগিয়ে গিয়ে থাকতে পারেননি উনি।অনেকটা সময় দোয়াকে কাদতে দিয়ে বললেন,

-শান্ত হও মা।আর কেদো না।অনেকক্ষন হলোই কাদছো তুমি।

দোয়া শক্ত করে ধরে রাখলো মিসেস ওয়াহিদকে।ফুপাচ্ছে।ভয় পুরোপুরি কাটে নি ওর।মিসেস ওয়াহিদ বললেন,

-তুমি চেনো ওদের?

দোয়া এবার মাথা তুললো।বাস্তবতা বুঝে চোখের পানি মুছে নিলো।নাক টেনে বললো,

-ওরা আমার সাথে কিছুই করেনি আন্টি।বিশ্বাস করুন,শুধুমাত্র ভয় দেখাবে বলে এভাবে…

আবারো কেদে দিলো। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন মিসেস ওয়াহিদ। শুধুমাত্র ভয় দেখানো মানে? কান্না থামিয়ে দোয়া আবারো বললো,

-এতোক্ষন আমাকে সময় দেওয়ার জন্য থ্যাংকস্ দিলে কম পরবে আন্টি। তবুও,থ্যাংকস্।আসছি।

মিসেস ওয়াহিদকে বলার সুযোগ না দিয়ে হাটা লাগালো দোয়া।যন্ত্রমানবীর মতো সোজা বাড়িতে ঢুকলো।উপরতলা থেকে ওর অবয়বকে দেখেই সালমা বেগম বললেন,

-দোয়া এসেছিস?নিচের কলপাড় থেকেই মুখহাত ধুয়ে আয়।ওয়াশরুমে তৃষা আছে।ওদেরটায় পানি আসছে না নাকি!

মাথা তুলে উপরে তাকালো দোয়া।তারপর তাকালো টিউবওয়েলের কাছে থাকা পানিভর্তি বালতির দিকে।এগিয়ে গিয়ে বসে গেলো ওখানেই।ব্যাগটা পাশে রেখে একের পর এক মগভর্তি পানি মাথায় ঢালতে শুরু করলো। রনোকের নখের আচড়ে হাতের কেটে যাওয়া জায়গাটা জ্বলতে শুরু করেছে।ওড়না সরিয়ে সেদিকে তাকাতেই তীব্র ঘৃনায় বুকফেটে কান্না আসছিলো দোয়ার। নিশব্দে অশ্রুবিসর্জন দিতে দিতে আরো ডলতে লাগলো কাটা জায়গাটা। গলা টিপে ধরেছিলো,সেখানটাও ডলছে।ওর কব্জি একজন মুঠো করে রেখেছিলো,সেখানেও ছাড় দেয়নি।যেনো চামড়া খুলে নিতে পারলে সুবিধা হতো ওর।

পানি পরার আওয়াজ শুনে অরুনাভ মুখার্জী ঘর থেকে একপ্রকার ছুটে বেরিয়ে এলেন। দোয়া ওভাবেই পানি ঢালছে আর কাটা জায়গাটা ডলছে। রক্তও বেরোচ্ছে ওখান থেকে।অরুনাভ মুখার্জী দৌড়ে এসে মগটা কেড়ে নিলেন ওর কাছ থেকে। চোখ তুলে তাকালো দোয়া। ভেজা চেহারার জন্য কান্নাটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে ওর। অরুনাভ মুখার্জী খানিকটা আতকে উঠে বললেন,

-কি হয়েছে তোর দোয়া? এমন করছিস কেনো?

দোয়ার হুশ ফিরলো। তাড়াহুড়ো করে ওড়না দিয়ে ভালোমতো ঢেকে নিলো আচড়ের জায়গাটা। ভেজা কাপড়েই দৌড়ে চলে এলো দোতালায় । বারান্দার তালাটা আটকানো।দুবার নাড়াতেই তা খুলে দিলো তন্নি। দোয়া একছুটে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। সবে ওয়াশরুম থেকে বেরোনো তৃষা ওর ছুটে ভেতরে ঢোকা দেখলো।মিহি স্বরে ডাকও লাগালো দোয়াপু বলে। দোয়া তোয়াক্কা করেনি।ছুটে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজা লক করে দিয়েছে।পাশেররুম থেকে সালমা বেগম,দিয়ান দুজনেই বেরিয়ে আসলো। তৃষা নির্বোধের মতো বললো,

-দোয়াপু মনে হয় কাদছিলো চাচীমা।ভিজে গেছে পুরোপুরি।

দিয়ান,সালমা বেগম দুজনেই হতবাক।দোয়ার কান্নার কোনো কারন খুজে পেলো না কেউই। নাইবা ভেজার কারন আছে।দুবার দোয়াকে ডাকলেন সালমা বেগম।ভেতর থেকে আওয়াজ এসেছে আসছি।বেশি সময় নেয়নি দোয়া।জামাকাপড় পাল্টে বেরিয়ে আসলো।সালমা বেগম বললো,

-তুই নাকি ভিজে গিয়েছিলি?কেদেছিলি?

-কলপাড়ে হাতমুখ ধুতে গিয়ে পরে গিয়েছিলাম।

-কি?দেখি দেখি,কোথায় লেগেছে?খুব লেগেছে?কিছু বলছিস না যে?

সবে দোয়ার গায়ে হাত দিতে যাবে,লাফিয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো ও।বললো,

-ব্যস্ত হয়ো না মা। কিছু হয়নি আমার।ঘুম পাচ্ছে। খেয়েদেয়ে ঘুমাবো!

মেয়ের মুখে যেনো অশ্রুতপুর্ব কথা শুনলেন সালমা বেগম।তাড়াতাড়ি সরে এসে দুপুরে রান্না করা খাবারটা বেড়ে নিলেন। আজ দোয়া এগোয়নি।চাদরের মতো করে ওড়না জরিয়ে এককোনে বসে ছিলো শুধু। রনোকের কাজটার কথা ভাবতেই শরীর জ্বলে উঠছে ওর।তাছাড়া জ্বরও বাড়ছে।মায়ের ধারেকাছে গেলেই মা টের পেয়ে যাবে, ব্যস্ত হয়ে উঠবে। তাই দুরে থাকাই শ্রেয়।খাওয়া শেষে কাথা জরিয়ে চুপচাপ উল্টোপাশ হয়ে শুয়ে পরলো দোয়া।দিয়ানও শুয়ে পরেছে ওর ঘরে।কিন্তু সালমা বেগমের মন মানতেই চাইছে না।আস্তেধীরে মেয়ের দিকে এগোলেন উনি।কপালে হাত দিয়ে পর্যবেক্ষন করে বুঝলেন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কম।কাথাটা দোয়ার গায়ে আরেকটু জরিয়ে দিয়ে সরে আসলেন ওখান থেকে।

হাতের মুঠোয় থাকা ভেজা কাপড়ের টুকরোটা আরো জোরে মুঠো করে ধরলো দোয়া। জানতো মা সন্দেহ করবে,তাই বেশ অনেক্ষন যাবত নিজেনিজেই কপাল ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিচ্ছিলো। মায়ের চলে যাওয়া দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললো ঠিকই,কিন্তু শরীর যেনো আরো বেশি দুর্বল হয়ে পরতে লাগলো।

মুখার্জি বাড়ির সামনে এসে বাইক থামালো আরাব।জরুরি কাজে আগে ল্যাবে যেতে হয়েছিলো ওকে।তাছাড়া ও জানতো ও সময় দোয়া টিউশনিতে থাকবে,তাই আগে ল্যাবে গিয়ে কাজ সেরেই আসলো একপলক দোয়াকে দেখবে বলে।বাইক থেকে চাবি খুলে সোজা দোতালায় তাকালো আরাব।আর তৎক্ষনাৎ তৃপ্তির হাসির দেখা মিললো ওর ঠোটে।বারান্দার রেলিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে উল্টোদিক হয়ে বসে কেউ।তার ঢেউখেলানো ছাড়া চুলগুলো জানান দিলো,সে দোয়া।রাতের অন্ধকার যেমন চারপাশের দৃশ্যকে গ্রাস করে,তেমনি ওই চুলগুলো আড়াল করে দিয়েছে দোয়ার সম্পুর্ন আঙিকে।

বাসার ভেতর থেকে হাসনাহেনার তীব্র ঘ্রান নাকে লাগছে।পুর্নচাদ পুর্নতার সাথেই তার কিরন বিলি করতে ব্যস্ত।খোলা সদর দরজা দিয়েই দেখা যাচ্ছে ও,নিচতলার মেসের ছেলেগুলো ফিরেছে।ঘরগোছাতে ব্যস্ত সবাই।আরেকবার দোতালার বারান্দার দিকে তাকিয়ে বাইকের চাবিটা পকেটে পুরলো আরাব।পা বাড়ালো অরুনাভ মুখার্জীর ঘরের দিকে।কিছুটা এগোতেই টুপ করে দুফোটা জল সোজা এসে ওর গালে পরলো।

চোখ বন্ধ করে সে জলকনাকে অনুভব করলো আরাব।পুরো দেহমনই প্রশান্তি অনুভব করছে তাতে।একপা পিছিয়ে আবারো উপরে তাকাতেই দ্বিতীয়বারের মতো জলের ফোটা ভিজিয়ে দিলো ওর চিকুর।গালে হাত দিয়ে পানিটুকো ছুইয়ে দিলো আরাব।স্পষ্ট বুঝতে পারছে,এ জল,দোয়ার ভেজাচুল থেকেই গরাচ্ছে।খানিকটা হাসির রেখা দেখা দিতে গিয়েও থেমে গেলো। চিন্তিত হৃদয় প্রশ্ন করে বসলো আরাবকে,এ সময় দোয়ার চুল ভেজা কেনো?এ অসময়ে কেনো গোসল করলো দোয়া?এখন গোসল করলে অসুখ করবে,এটা একবারও ভাবলো না মেয়েটা?কেনো?

-আরে আরাব!তুমি?

ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন অরুনাভ মুখার্জী।আরাব জোরপুর্বক হাসি টেনে বললো,

-জ্বী।কেমন আছেন কাকাবাবু?

-এইতো!তুমি?হাতপায়ের কাটাছেড়া…

-পুরোপুরি সুস্থ্য আছি কাকাবাবু।

-কিভাবে এলে তুমি?

-ড্রাইভ করেই এসেছি। অসুবিধা হয়নি।

অরুনাভ মুখার্জী আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন।আরাব সুযোগ না দিয়ে বলে উঠলো,

-কাকাবাবু,দোয়া?

একটা ছোট শ্বাস ফেললেন উনি।বললেন,

-আছে।ভালোই আছে।উপরে গিয়ে দেখা করে আসো?

এই দেখা করে আসো অনুমতিটাই চাইছিলো আরাব।একমুহুর্ত দেরী করলো না।সিড়ি বেয়ে চলে আসলো দোতালায়।বন্ধ কেচিগেইটের ওপারে বারান্দায় মাথা ঠেকিয়ে বসে দোয়া।রাতের আধারে চেহারা অস্পষ্ট।ওর চোখের কোনের জল দৃশ্যমান হলো না আরাবের কাছে।কারো কাছেই যাতে না হয় তাইতো ঘুমোনোর ভান করে ছিলো এতোক্ষ। বারান্দায় এসে ওড়না জরিয়ে বসেছে কান্না করার জন্য।জলপটি দেওয়াতে জ্বর কমলো নাকি আরো বেড়ে গেলো,বুঝতেই পারছে না। খানিকটা সময় নিরবে ওর ওই অবয়বকেই দেখে পার করে দিলো আরাব।এতেও শান্তি আছে।কিছুক্ষন পরই দোয়ার মা একটা জামা হাতে বেরিয়ে এলেন ভেতর থেকে।মেয়ে যে ঘুমোয়নি,টের পেয়েছেন উনি।কাধে হাত রাখতেই একপ্রকার ধরফরিয়ে উঠলো ও। তার অলক্ষে চোখের কোনার জল মুছে নিলো।সালমা বেগম বললেন,

-কিরে মা?ঘুমোসনি?

-ন্ না মানে,এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে অভ্যাস নেই তো,তাই ঘুম আসছিলো না।ত্ তুমি যাও,আসছি আমি।

বড় বড় শ্বাস ছেড়ে বললো দোয়া। সালমা বেগম ওর কাছে বসতে যাচ্ছিলো। উঠে আরো দাড়ালো দোয়া। দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে,টলছে। তবুও মাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। সালমা বেগমও দাড়িয়ে বললেন,

-এমন করছিস কেনো তুই?

-মা প্লিজ। ঘরে যাও না! আসছি আমি! বললাম তো!

দোয়া খানিকটা ধমকির সুরে বলেছে কথাটা। ওর ধমক শুনে তন্নি বেরিয়ে এলো ঘর থেকে । কিই বা করবে দোয়া?মায়ের সামনে অসুস্থ্যতা দেখানো যাবে না কোনোমতে। এদিকে দাড়িয়ে থাকাও এখন ওর জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছে। চারপাশ ঘুরছে ওর।সালমা বেগম বললেন,

-আচ্ছা শান্ত হ! যাচ্ছি আমি!

দোয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে তন্নি গেইটে তাকাতেই চকিত হলো। আরাব গেইট মুঠো করে ধরে দাড়িয়ে। সেদিনের দেখায় ওর ধারনা আরাব দোয়ার আত্নীয়। ঘরে গিয়ে চাবিটা এনে তালা খুলে দিলো। সৌজন্য হাসলো আরাব। গেইট টেনে ভেতরে ঢুকতে‌ যাবে,সালমা বেগম হাতের আধভেজা জামাটা দেখিয়ে বলে উঠলেন,

-আচ্ছা দোয়া?এই জামাটার হাতা কি করে ছিড়লো রে?এটা তো তুই টিউশনিতে পরে গিয়েছিলি!

জামাটা দেখেই সন্ধ্যের সমস্ত ঘটনা দোয়ার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।আর পারলো না নিজেকে আয়ত্ত্বে রাখতে।চারপাশ অন্ধকার হয়ে এলো ওর।ওকে টলতে দেখেই ছুট লাগিয়েছে আরাব। অজ্ঞান হয়ে পরেই যাচ্ছিলো দোয়া। কিন্তু আরাব বাহুডোরে সামলে নেয় ওকে। দোয়ার গায়ের তাপমাত্রা অনুভব হতেই মাথা ফাকা হয়ে যায় আরাবের। ততোক্ষনে সালমা বেগম দোয়া বলে আর্তনাত করে উঠেছেন। কোনোকিছুর পরোয়া না করে দোয়াকে কোলে তুলে নিলো আরাব।

#চলবে…

[ ভুলত্রুটি মার্জনীয় ]