এক মুঠো অনুভূতি পর্ব-১৩+১৪

0
339

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:১৩

চায়ের দোকানে পাশাপাশি বসে আছে আফরা আর ওসমান। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আফরা আড়চোখে একবার ওসমানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মেঝের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
–কি ভাবছেন, ওসমান?
–বাবার কথা ভাবছি। বাবা কিভাবে এমনটা করতে পারলো? স্যারের কথা মতো আমরা ওহির সাথে যে এমন করেছে তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারবো না। বাবা কি ভেবে এমনটা মেনে নিলো আমি বুঝতে পারছি না।
–আঙ্কেল হয়তো ওহির কথা ভেবেই এমন করেছেন।
–ওহির কথা ভেবে এখন কেনো করবে? আপনি বুঝতে পারছেন না, আফরা। যদি আশ্বিন ওহিকে খুঁজে না পেতো তখন আমরা কি করতাম? ওহির জন্য তারা আশ্বিনের উপরও হামলা করলো। এতো কিছুর পরেও কিভাবে আমরা তাদের ছেড়ে দিবো?
আফরা ওসমানের কথায় চুপ হয়ে যায়। আফরা ভালো মতোই জানে ওহির সাথে যারা এমন করেছে, ওসমান তাদের কিছু না করলেও আশ্বিন যে তাদেরকে এতো সহজে ছাড়ছে না।

এদিকে, সকাল সকাল আশ্বিনের বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে রোদ্দুর হাসপাতালে এসে দেখে আশ্বিন আর ওহি কেবিনে বসে গল্প করছে। সে চুপ করে দূর থেকে তাদের কর্মকান্ড দেখতে থাকে।
ওহি একমনে কথা বলেই যাচ্ছে আর আশ্বিন চুপচাপ একটা কমলা ছিঁড়ে ওহির হাতে দিচ্ছে। ওহি কথা বলতে বলতে কমলা মুখে দিতেই মুখটা বিকৃত করে,
–এতো টক!
আশ্বিন ওহির দিকে তাকিয়ে একটা মৃদু হাসি দিয়ে,
–টক খেলেই দ্রুত মাথার ক্ষত ঠিক হবে।
–তাহলে তো আপনারও খাওয়া উচিত। এই নিন..।
কথাটা বলেই ওহি একটা কমলা জোর করে আশ্বিনকে খাইয়ে দেয়। আশ্বিন রেগে ওহির দিকে তাকাতেই ওহি আপনমনে হাসতে থাকে।
দূরে দাঁড়িয়ে রোদ্দুর তাদের কর্মকান্ড দেখে হেসে উঠে, তখনই আফরা আর ওসমান তার কাছে আসে।
–রোদ, এভাবে একা একা দাঁড়িয়ে হাসছিস কেনো তুই?
রোদ্দুর পিছনে ফিরে তাকিয়ে আফরাকে দেখে,
–আশ্বিন আর ওহিকে দেখছিলাম।
আফরা তাদের দিকে ফিরে রোদ্দুরকে নিয়ে কেবিনে চলে আসে।
——————-

রোহান তার বাবার রুমে প্রবেশ করে,
–বাবা, হাসান স্যারের সাথে তোমার কথা হয়েছে? স্যার কি ওহির বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছেন?
–হুম। রোহান, আর কতো তুমি ভার্সিটি গিয়ে এমন সব কাজ করবে? তোমার জন্য আমার এখন হাসান স্যারের কাছে ছোট হতে হচ্ছে।
–বাবা, আমি এমনটা ইচ্ছে করে করিনি। আমি শুধু মিতুকে ভয় দেখানোর কথা বলেছিলাম।
–হাসান স্যারকে বলেছি আমি। স্যার বলেছেন উনি মিতুর ওই বান্ধবীদের এর জন্য দ্বায়ী করবেন। ভাগ্য ভাল যে ওহি’ও মুখ খুলে তোমার নাম বলবে না।
–কিন্তু বাবা, আশ্বিন ভাই..?
–আশ্বিনকে নিয়েই ভয়ে আছি আমি। আশ্বিন যদি কিছু নাও করে, আশ্বিনের বাবা এর জন্য চুপ করে বসে থাকবেন না। আর না তখন তোমার হাসান স্যার কিছু করতে পারবেন।
–এখন কি করবো বাবা?
–আপাতত আমি তোমার জন্য কিছুদিন দেশের বাইরে ঘুরে আসার ব্যবস্থা করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি তোমাকে খবর দিবো।
রোহান বাবার কথায় রাজি হয়ে চলে আসে।

বিকেলে,

ওহিকে নিয়ে সবাই তাদের বাসায় চলে এসেছে। ডাক্তার প্রথমত ওহিকে এতো দ্রুত বাড়ি ফেরার অনুমতি দিতে চাননি, কিন্তু ওসমানের অনুরোধে তিনি রাজি হন।
ওহির মা সবাইকে বসতে দিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে,
–আজ কিন্তু রাতের খাবার না খাইয়ে কাউকে ছাড়ছি না। সবাই আড্ডা দাও, আমি এখনি আসছি।
ওহি মায়ের দিকে একনজর তাকিয়ে আড়চোখে আশ্বিনের দিকে ফিরে দেখে,
–ভাইয়া, রাফিন ভাইয়া আসলো না কেনো?
–রাফিনের নাকি কাজ আছে। আমি বলেছিলাম তাকে আসার জন্য, সে বললো পরে আসবে।
ওহি কথা না বাড়িয়ে আশ্বিনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে সে মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। ওহি আশ্বিনের এমন ভাবে তাকাতে দেখে একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে জাইমাকে আলতো করে একটা ধাক্কা দেয়। জাইমা ওহির দিকে একবার ফিরে,
–ওসমান ভাইয়া, চলো সবাই মিলে লুডু খেলি।
–তোরা আর বড় হবি না, তাই না?
–আহা! ভাইয়া, নিয়ে আসো না।
ওসমান কথা না বাড়িয়ে লুডু নিয়ে আসে। তারপর সবাই মিলে মেঝেতে গোল হয়ে বসে খেলতে শুরু করে।
আশ্বিন প্রথমত খেলতে না চাইলেও পরে আফরার ধমক খেয়ে খেলতে শুরু করে। আফরা আর রোদ্দুর এক টিমে, ওহি আর জাইমা এক টিম, আশ্বিন, ওসমান আলাদা। খেলার প্রথম দিকে, ওহি সবার থেকে এগিয়ে থাকলেও শেষে এসে আশ্বিন জিতে যায়। এভাবে খেলা ঘুরে যাওয়ায় ওহি আহাম্মকের মতো আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। অপরদিকে সবাই মিলে আশ্বিনের গুণগান গাইছে।
সবাই হাসি খুশি ভাবেই সময়টা অতিবাহিত করছে।

রাতে রোদ্দুরের জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় আশ্বিনকে নিয়ে সে দ্রুত চলে যায়। জাইমা আজ ওহির সাথে থেকে যাবে। আফরা একা ফিরে যেতে চাইলে ওহির মা তাকে থামিয়ে,
–এতো রাতে তুমি একা যেতে পারবে না, মা। আজ নাহয় থেকে যাও।
–সমস্যা নেই আন্টি, আমি যেতে পারবো।
–আচ্ছা, তাহলে ওসমান তোমাকে পৌঁছে দিবে।
ওহির মা একপ্রকার জোর করেই আফরার সাথে ওসমানকে যেতে দিলেন।
পাশাপাশি রিকশায় বসে আছে ওসমান আর আফরা। দুজনেই চুপচাপ। নীরবতা ভেঙে ওসমান বলে উঠলো,
–এভাবে মাঝে মাঝে সবাই মিলে আমাদের বাসায় আড্ডা দিতে আসবেন। সবাই মিলে গল্প করলাম, ভালোই লাগলো।
–হুম, অবশ্যই। আর আন্টির কাছে মায়ের মতো ভালোবাসা পেতে তো অবশ্যই আসতে হবে। আচ্ছা, আপনার বাবাকে সকালের পর আর দেখিনি ওসমান। তিনি কি কোথাও গিয়েছেন?
–সকালে হাসপাতাল থেকেই চলে গিয়েছেন উনার ব্যাবসার কাজে। বাবা সবসময়ই ব্যস্ত।
–আমার বাবাও এমন ব্যস্ত। তবুও ব্যস্ততার মাঝে আমাকে অনেকটা সময় দেয় বাবা।
ওসমান আফরার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে। কিভাবে বোঝাবে সে যে, সবার বাবা তো আর এক রকম হয় না!
———————

ঘুম না আসায় বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে ওহি। মাথায় ব্যথার জন্য সোজা হয়ে শুয়েও থাকতে পারছে না সে। কোনমতে উঠে বসে পাশে ফিরে দেখে জাইমা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ওহি ফোন হাতে নিয়ে বারান্দার দোলনায় এসে বসে।
ঠিক এগারো’টায় আশ্বিন ওহিকে ম্যাসেজ দিয়েছিলো,
“মনে করে সময় মতো ঔষধ খেয়ে নিয়ো কিন্তু।”
ম্যাসেজ দেখে অজান্তেই হেসে উঠে ওহি।
আপনমনে আশ্বিনের কথা ভাবছিলো তখনই ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে। ওহি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আশ্বিনের ম্যাসেজ,
–ঘুমাওনি কেনো তুমি? এতো রাতে কি করছো?
ওহি কিছুক্ষণ ম্যাসেজের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে,
–পড়ছিলাম আমি। আপনাকে হারাতে হবে আমার। সবসময় আপনি কিভাবে জিতে যান, এবার তা দেখে নিবো।
–ওকে, দেখে নিও। আর প্রয়োজন হলে আমার হেল্প নিও।
–আপনাকে হারাতে আপনার হেল্প নিবো আমি? কোন প্রয়োজন নেই, ওহি একাই একশ।
–তো মিস একশো, রাত না জেগে এখন ঘুমিয়ে পড়েন। আপনি পড়ালেখাটা যে বারান্দায় বসে করছেন, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে।

আশ্বিনের ম্যাসেজ দেখে ওহির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আশ্বিন কিভাবে জানলো? দোলনা থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন তার গাড়ির উপর বসে তার দিকে হাত উঠিয়ে ইশারা দিচ্ছে। এতো রাতে আশ্বিনকে দেখে ওহির চোখ প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম।
ওহি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, এতো রাতে আশ্বিনের মতো একজন ছেলে এখানে আসার কোন প্রশ্নই আসে না। তার মানে,
–ভুততত!!
ওহি এক চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে রুমে চলে আসে। এদিকে ওহিকে এমন আহাম্মকের মতো দৌঁড়ে যেতে দেখে আশ্বিন অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে উঠে,
–কি হলো ব্যাপারটা?

আশ্বিন রোদ্দুরের বাসা থেকে ফিরে যাওয়ার সময় ওহিকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে ম্যাসেজ দেয়। কিন্তু ওহির এমন উদ্ভট আচরণ দেখে আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে বসে বাসায় চলে আসে।

এদিকে,
রাফিন ভার্সিটির সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছে, সেদিন লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে যেতেই কয়েকজন মেয়ে তাকে টেনে নিয়ে যায়। মেয়েগুলো সম্পর্কে যতটুকু সে জেনেছে তারা খুবই সাধারণ মেয়ে, ওহির সাথেও তাদের কোন প্রকার শত্রুতা নেই। অর্থাৎ, এই মেয়েদের দিয়ে অন্য কেউ একজন ওহির সাথে এমন করিয়েছে। এখন জানার প্রয়োজন হলো, সে কে!

রাফিন রকিং চেয়ারে বসে সেই হিসেব মিলাতে চাইছে। রাফিনের হাত থেকে এতো সহজে বেঁচে যাওয়া তো সম্ভব না।

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)

#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:১৪

আজ এক সপ্তাহ পর ওহি ভার্সিটি যাচ্ছে। এই কদিন রোজ বিকেলে আফরা আর জাইমা তাকে দেখতে এসেছে। রাফিনও একবার এসেছিলো ওহির জন্য এক বক্স চকলেট আর ফল নিয়ে। আশ্বিন প্রতিদিন নিয়ম করে ফোনে ওহির খোঁজখবর নিয়েছে।
ওহি রেডি হয়ে ওসমানের জন্য অপেক্ষা করতে সোফায় বসে সবার কথা ভাবতে থাকে।

তখনই মনে পড়ে সেদিন হাসপাতালে হাসান স্যারের বলা কথাগুলো,
–ওহি, আমি চাই তুমি এই ঘটনা এখানেই চেপে রাখো। ঘটনাটা ভার্সিটিতে ছড়িয়ে পড়লে অনেক ঝামেলা হবে। ভার্সিটির সম্মান যেমন নষ্ট হবে, তেমনই তোমারও ক্ষতি হবে।
–আমার ক্ষতি হবে? এতো কিছুর পরেও আর কি ক্ষতি হতে পারে স্যার?
–ওহি মা, আমি জানি আমার কথাগুলো বলা ঠিক হচ্ছে না। কেননা, আজ তোমার জায়গায় আমার মেয়ে স্নেহা থাকলে, আমিও তাদের শাস্তির জন্য ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এখানে তোমার একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, রোহানের বাবা! উনি উনার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তাদের হাত অনেক উপর পর্যায়ে আছে, আমরা চাইলেও কিছু করতে পারবো না।
–তাহলে কি রোহানের কোন শাস্তিই হবে না স্যার? আজ নাহয় আমি চুপ করে থাকবো, কি বিশ্বাস আছে পরদিন ভার্সিটিতে সে আবারও আমার সাথে এমন কিছু করবে না।
–হুম, তাদের শাস্তির একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আর, আমি এই বিষয়টা খেয়াল রাখবো, ওহি। আমার মনে হয়, রোহানের বাবা তাকে এই ভার্সিটি থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে। এতোকিছু হওয়ার পর রোহানও আর তোমার ক্ষতি করবে না।
–আমার বাবা এই নিয়ে কিছু বলেছেন, স্যার?
–তোমার বাবা আমার কথায় রাজি হয়েছেন। কিন্তু তোমার ভাইয়া রাজি হচ্ছে না। ওসমানকে বোঝাও ওহি। একজন মেডিকেলের স্টুডেন্ট সে, সামনে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত। এসবের মাঝে নিজেকে জড়িয়ে নিতে নিষেধ করো, কারন রোহানের বাবার উপর কোনো বিশ্বাস নেই আমার। আশা করি, আমার কথাটা বুঝতে পারছো ওহি।
ওহি হাসান স্যারের কথায় চুপ হয়ে যায়। তার এমন এক ভুলের জন্য এতো বড় এক ঝামেলা হয়ে যাবে জানা ছিলো না তার। স্যার চলে যেতেই ওহি দূর থেকে ওসমানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

–কি ভাবছিস এতো? ভার্সিটি যাবি না?
ওসমানের কথায় ওহির ধ্যান ভাঙে। এক লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে,
–যাবো না মানে? তোমার এতোক্ষণ লাগে ভাইয়া? চলো জলদি…।
ওহি আর কথা না বাড়িয়ে ওসমানের সাথে চলে আসে। পথে ওসমান বারবার করে বলে দিয়েছে,
–ভালোভাবে মনে রাখ, কেউ যদি তোর কোন প্রকার বিরক্ত করে তাহলে সাথে সাথেই আমাকে ফোন দিবি। সবসময় জাইমার সাথে সাথে থাকবি। বুঝেছিস?
–বুঝেছি তো ভাইয়া!

ওহি কথাটা বলেই ভার্সিটির ভেতর চলে যায়। ওসমান ওহিকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসতে নিতেই আফরার সাথে তার দেখা হয়।
–কেমন আছেন ওসমান?
–এইতো ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? আপনাকে তো এই কদিন ধরে দেখাই যাচ্ছে না।
–আমি তো রোজই ওহির সাথে দেখা করতে গিয়েছি। তখন অবশ্য আপনি বাসায় ছিলেন না।
–হুম, শুনেছি ওহির কাছে। অবশ্য দেখা না হওয়াটা কিন্তু স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো।
কারন কথায় আছে, সুন্দরী কোন মেয়েকে রোজ রোজ দেখতে পারা’টা নাকি সৌভাগ্যের প্রতীক। আর সৌভাগ্যের এই তালিকায় আমি প্রথমেই বাদ পড়ে যাই।
ওসমানের কথায় আফরা হেসে উঠে। আফরাকে হাসতে দেখে ওসমানও হেসে উঠে। আফরা হাসি থামিয়ে একবার চায়ের দোকানের দিকে তাকিয়ে,
–চা খাবেন?
–আপনি যখন বলেছেন তখন না করার তো প্রশ্নই উঠছে না। কিন্তু এখন না, ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার। ক্লাস শেষে বিকেলে নাহয় চায়ের আড্ডা দিবো। ঠিক আছে?
আফরা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে। ওসমান তাকে বিদায় দিয়ে চলে যেতেই আফরা অপলক ভাবে ওসমানের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকে।

এদিকে,

ক্লাস শেষে একসাথে ফুচকার দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে সবাই। ওহি এতোদিন পর ভার্সিটি এসেছে এই উপলক্ষে আজ ফুচকা পার্টি করছে সবাই।
ওহি আসার সময় রাফিনকেও তাদের সাথে নিয়ে এসেছে। আশ্বিন বিষয়টা মেনে নিতে না চাইলেও ওহির জন্য আর কিছুই বলেনি সে।
ফুচকা অর্ডার দিয়ে সবাই বসে গল্প করছিলো তখন ছোটু এসে সবার সামনে ফুচকা দিয়ে যায়। ওহি আর জাইমা মুহূর্তেই ফুচকা খেতে শুরু করে।
আর আশ্বিন একটা ফুচকা খেয়ে চুপচাপ ওহির খাওয়া দেখছে। ওহির অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই, সে আপনমনে খেয়ে যাচ্ছে।
–আশ্বিন, খাচ্ছিস না কেনো তুই?
আফরার কথায় আশ্বিন তার দিকে ফিরে কিছু না বলে নিজের প্লেট থেকে কয়েকটা ফুচকা তুলে ওহির প্লেটে দিয়ে দেয়। আশ্বিনের এমন কাজে ওহি অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। আশ্বিন তাকে এভাবে তাকাতে দেখে,
–নাও খাও। আমার ফুচকা খুব একটা পছন্দ না। তাই তোমাকে দিয়েছি।
আশ্বিনের কথায় ওহি খুশি হয়ে খেতে শুরু করে। এদিকে, রোদ্দুর আর আফরা দুজন আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসছে। আশ্বিন সেদিকে দেখেও কোন পাত্তা দেয়না।
ওহি খুশি হয়ে একটা ফুচকা মুখে দিতেই হঠাত রাফিনও তার প্লেটে কয়েকটা ফুচকা তুলে দেয়। রাফিনের এমন কাজে ওহি আর আশ্বিন তার দিকে ফিরে তাকায়।
রাফিন হেসে উঠে ওহির চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে,
–অসুস্থ মানুষের বেশি বেশি খেতে হয়। তাছাড়া ফুচকা আমারও তেমন পছন্দ না।
রাফিনের কথায় ওহি তার প্লেটের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা তুলে আশ্বিন আর রাফিনের দিকে একবার তাকায়।
হঠাত করেই রাফিনের এমন কাজে রোদ্দুর আর আফরা চোখ বড় বড় করে তাদের দিকে তাকায়।
রাফিন আর আশ্বিন একে অপরের দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে আছে।
———————–

ভার্সিটির মাঠের কাছে বড় গাছটার নিচে একা বসে আছে আশ্বিন। তখন রাফিনের এমন কাজে নিজের রাগ অনেক কষ্টে সামলে রেখেছে সে। তাই এই মূহুর্তে একা থেকে নিজেকে শান্ত রাখতে হাতে কয়েকটা কাগজ নিয়ে ভালোভাবে সেগুলো খেয়াল করছে সে। হঠাত ওহির কণ্ঠ শুনতে পায়। ওহি দৌঁড়ে আশেপাশে তাকে খুঁজছে,
–আশ্বিন ভাইয়া! আশ্বিন ভাইয়া!
–আমি এখানে।
আশ্বিনকে দেখে ওহি দৌঁড়ে এসে তার পাশে বসে পড়ে। আশ্বিন একনজর ওহির দিকে তাকিয়ে হাতের কাগজ দেখতে দেখতে,
–কি হয়েছে? এভাবে ডাকছো কেনো? কি চাই?
–আপনাকে চাই!
ওহির কথায় আশ্বিন চমকে উঠে ওহির দিকে ফিরে তাকায়। ওহি এতোক্ষণ হাসি হাসি মুখ করে থাকলেও এই মাত্র কি বলেছে সেটা মনে হতেই,
–না মানে আমি বলতে চেয়েছিলাম, আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
আশ্বিন মাথা নামিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে,
–বলো।
–আশ্বিন ভাইয়া, আপনি চলে আসার পর একটা মজার ঘটনা হয়েছে। জানেন কি হয়েছে?
ওহি কথাটা বলেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে থাকে। আশ্বিন কাজ ফেলে কপাল কুঁচকে ওহির দিকে তাকিয়ে,
–এভাবে হাসছো কেনো?
–আমার হাসি আসছে। আমি বলতে পারছি না।
কথাটা বলে আবারও হাসতে থাকে। এদিকে আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। কিছুক্ষণ পর ওহি হাসি থামিয়ে আশ্বিনের হাতের কাগজের দিকে উঁকি দিয়ে,
–কি করছেন আপনি?
–তোমার সাথে কারা এমন করেছে তা খুঁজে বের করেছি আমি। রোহান আর মিতু! সব প্রমাণ সহ এগুলো এখন স্যারের কাছে জমা দিবো। তুমি জানো? স্যার দুইজন মেয়েকে এর জন্য দ্বায়ী করে ভার্সিটি থেকে বরখাস্ত করেছেন। অথচ আসল দোষী হলো রোহান আর মিতু।
–আশ্বিন ভাইয়া, আপনি কিছুই করবেন না। এগুলো আমাকে দিন।
ওহি আশ্বিনের হাত থেকে কাগজগুলো নিয়ে ছিঁ/ড়ে ফেলে। আশ্বিন অবাক হয়ে,
–আরে? এটা কি করলে ফাইজা?
–আমি আপনাকে বলেছিলাম ওই ঘটনার কোন কিছুই আমি আর মনে রাখতে চাই না। আর না এর সাথে জড়িত কারো কোনরূপ শাস্তি চাই। তবুও আপনি এসব করেছেন।
–রোহান আর মিতুকে এতো সহজে ছেড়ে দিতে বলছো তুমি?
–আমি কিছুই চাই না। আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আমি আর এই নিয়ে কথা বাড়াতে চাই না।
–তুমি না চাইলে নাই। আমি এগুলো স্যারকে জমা দিবো। রোহানের শিক্ষা না দিয়ে আমি থামছি না।
–আশ্বিন ভাইয়া! আপনি আমার কথা কেনো শুনতে চাইছেন না? আপনার সাথে আমি আর কোন কথাই বলবো নাহহ। কথা বন্ধ!
ওহি রেগে হুরমুর করে উঠে সেখান থেকে চলে যায়। আশ্বিন অবাক হয়ে ওহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ওহি যেতে যেতেই আপনমনে বলে উঠে,
–কেনো বুঝতে চাইছেন না আশ্বিন ভাইয়া, আমি চাই না এর জন্য আর আপনার কোন ক্ষতি হোক।
ওহি কথাটা বলেই ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়।

–চলবে(ইনশাআল্লাহ)