এল এ ডেইস পর্ব-২৬+২৭

0
309

#এল_এ_ডেইস
পর্ব – ২৬
লেখনী- মাহীরা ফারহীন

বেলা বাড়ছে। সূর্য মাথায় চড়ে বসেছে। তবে মোটেও কারো গরম অনুভূত হচ্ছে না। তাপমাত্রা যে খুব একটা বেশি নয় এ অঞ্চলে। তারওপর বনজঙ্গলে ঘেরা এ জায়গার পরিবেশ বেশ শীতল থাকে। মাউমেলের পানি থেকে স্বাদমতো মাছ ধরার পর্ব শেষ। সকলে মাত্র মাঠে এসে পৌঁছচ্ছে। পেছনে আরোও অনেকে এখনো আসছে বনের মধ্যে দিয়ে। অন্যান্যরা ইতোমধ্যেই রান্নাবান্নার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। অনেকেই আবার ক্লান্ত হয়ে নিজ নিজ তাঁবুর ছায়ায় গিয়ে বসেছে। মাহীনের পায়ের ব্যথার কারণে ও বেশিক্ষণ হেঁটে বেড়ায় না। কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম না নিলে অন্যরা ওকে চাপাচাপি করতে শুরু করে। মাহীন তাঁবুর কাছে এসে পৌছুতেই ওকে জেনেট এবং সাইলোহ বসিয়ে দিয়েছে। এরপর ওরা মাছ নিয়ে বড় টেবিলগুলোর কাছে চলে গিয়েছে। মাহীনের মনে এক অভিভূত প্রফুল্লতা ও প্রশান্তি। রোদের কিরণে ঝলমল করতে থাকা চেনা অচেনা গাছগুলোকে এক দৃষ্টিতে দেখছে সে। ঠিক আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকানো দায়। রোদের তেজে চোখ বুঝে আসে। হঠাৎ এসিসিয়া এসে মাহীনের পাশে বসলো। মাহীন চমকে উঠে সেদিকে তাকায়। বলল,

‘হেই সিয়া। তোমার মাছ ধরা কেমন হলো?’

সিয়া হালকা হেসে বলল, ‘আমি যে মাছ ধরতে পেরেছি তাতেই আমি অসম্ভব খুশি। এট লিস্ট আমার বোনদের গিয়ে বলতে পারব যে আমিও নিজের হাতে মাছ ধরতে পেরেছি।’

‘ওহ তোমরা কয় ভাই বোন?’

‘আমরা তিন বোন। আমি মেজো।’

‘ওহ ভালোই তো। বাই দ্যা ওয়ে তুমি সাইলোর কথায় সত্যি সত্যি তোমার নখ কেটেই ফেললা?’

সিয়া শ্রাগ করে হালকা হেসে বলল, ‘ইউ নো ওয়াট সবসময় ওভাবে থাকতে ভালোও লাগে না। টু বি অনেস্ট সাইলোহ খুব রুডলি কথাগুলো বললেও আমার মনে হয়েছে, যখন এখানে এসেছি তাহলে এনজয় করি। আফটার অল বাবা তো এখানে নেই।’

মাহীন কপাল কুঁচকে বলল, ‘বাবা এখানে নেই মানে? উনি থাকলে কি হতো?’

সিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘না কিছু না। বাবা এখানে থাকলে দুনিয়ার রুলস এন্ড রেগুলেশন মেনে চলতে হতো। সেটাই বলছি যে আমি স্বাধীন ভাবে এনজয় করতে পারবো।’

‘ওহ আচ্ছা। এমনিতে সাইলোর কথায় মাইন্ড করো না। ও সবার সাথেই একটু খিটখিটে আচরনই করে। বাট ও আমাদের সবারই খুব ভালো ফ্রেন্ড।’

‘হুম এমনিতে তোমরা সকলেই আমার কাছে নতুন। আগে তো কখনো তোমাদের সাথে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হয়নি।’

‘তো হঠাৎ করে? মানে এবার যে তুমি তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে ক্যাম্প শেয়ার করলা না তার কি কোনো বিশেষ কারণ আছে?’
ফট করে কথাটা বলে ফেললো মাহীন। তবে তা ঠিক হলো কী হলো না সেটা ভাবার পূর্বেই সিয়ার ভ্রু কুঞ্চিত হলো। জিজ্ঞেস করল,

‘আমার এখানে থাকাতে কী কোনো সমস্যা হচ্ছে?’

মাহীন ততক্ষণাৎ বলল,’না, না আমি সেটা বলতে চাইনি। মানে এইযে বললা তুমি আমাদের তেমন ভাবে চেনোই না। তেমনি আমিও তোমাকে চিন্তামই না। এবং তোমার আলাদা ফ্রেন্ড সার্কেল আছে। তাই ভাবলাম ওদের সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে কিনা।’

সিয়া ম্লান হেসে বলল, ‘না, না ঝামেলা হবে কেন। ওই যে বললাম না বাবা আশেপাশে থাকলে অনেক রুলস এন্ড রেগুলেশন মেনে চলতে হয়। সকলেই আমার বাবার বন্ধু অর বিজনেস পার্টনারের মেয়ে বা এমন কিছু। তাই বাবার কথায় ওদের সাথেই মেলামেশা করি। নিজে থেকে যে একটা ফ্রেন্ডশিপ হয় সেটা আমার শুধু বিল এবং ম্যাটের সঙ্গে হয়েছে। এখন এখানে এসে চেয়েছিলাম একদম আমার ইচ্ছে মতে চলবো। এবং বিল ও ম্যাট দুইজনই তো ছেলে ওদের সাথে তো আর ক্যাম্প শেয়ার করতে পারি না। তাই এখানে এসে ভিড়েছি।’
মাহীনের ওর কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলো। তাই নরম কন্ঠে বলল, ‘আমাদের দলটা খুব অদ্ভুত জানো। প্রথমে আমরা শুধু পাঁচজন ছিলাম। একজন করে আসে এবং আমাদের সাথে ভিড়ে যায়। এবং আমরা সকলকেই সাদরে গ্রহণ করি। আরোও দুইদিন আমাদের সাথে থাকলেই হয়তো তুমিও সকলের বন্ধু হয়ে যাবা।’

সিয়া হেসে বলল, ‘থ্যাঙ্কস।’

তারপর বেশ কিছুক্ষণ ওরা দুজনই নিশ্চুপ বসে রইল। অবশেষে সিয়া বলল, ‘আচ্ছা মাহীন।’

‘হুম?’

‘তোমার কারো ওপর ক্রাস আছে?’

মাহীন চমকায়িত হলো। জিজ্ঞেস করল, ‘কি? ক্রাস? মানে হঠাৎ এমন প্রশ্ন?’

‘না এমনিই জিজ্ঞেস করছি। সকলেরই তো কেউ না কেউ থাকে। তোমাকে খুব অন্য রকম লাগে তো। তাই তোমার ক্রাস কে হতে পারে জানতে ইচ্ছে করছিল।’

মাহীন ইতস্তত করে বলল, ‘রবার্ট পেটিনসন।’

সিয়া হেসে বলল, ‘আমি নর্মাল ক্রাসের কথা বলছি।’

‘আমি জানি তো। কিন্তু আমার কোনো নর্মাল ক্রাস নাই। তাই কি বলবো?’

‘মানে কেউই না? লাইক একদম লিটল ক্রাসও নাই কারোর ওপর?’

মাহীনের মনের গভীরে চলছে অন্যরকম কথা। ভাবছে
‘কাকে পছন্দ আমার? একটু হলেও? ভালো লাগে বলা যায় রায়েদকে। না, না ওইটা জাস্ট ও রহস্যময় হওয়ার কারণে ওর প্রতি বেশি কিউরিওসিটি কাজ করে। কিন্তু রায়েদের মুখটাই সবার আগে চোখে কেন ভেসে উঠল? সুন্দর মানুষদের প্রতি সবারই এট্রাকশন থাকেই। এটাই স্বাভাবিক।’

‘মাহীন?’ সিয়ার ডাকে ভাবনার গভীর জালটা ছিড়ে গেল। বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে এসে মাহীন বলল, ‘না আমার মনে হয় না। আমি না যাকেই দেখি তখনই ভেবে নিই, ও জাস্ট ফ্রেন্ড, ও জাস্ট ফ্রেন্ড, ও জাস্ট ফ্রেন্ড!’

‘ওহ মাই গড। আমি তো ভাবলাম রায়েদ তোমার ক্রাস।’

মাহীন অপ্রস্তুত হলো। যেই ভাবনাগুলো কয়েক মুহূর্ত আগেই ভেবে আসল সেটাই সিয়া ধরে ফেললো। সকলেরই কেন মনে হয় রায়েদকে ও পছন্দ করে? এমন বিশেষ কিছু কি ও করে ফেলেছে নাকি? নিজের ভাবনাগুলোও হঠাৎ তালগোল পাকিয়ে গেল। আসলেই রায়েদকে পছন্দ হয়ে থাকতে পারে ভাবনাটা মাথায় খুঁটি গেঁড়ে বসতেই হালকা গোলাপি রঙ ছড়িয়ে গেল গাল ভরে। এসিসিয়া সেটা খেয়াল করল না। সামনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ ওর। মাহীনের দিকে নয়। অবশেষে মাহীন কিছুটা অপ্রতিভ কন্ঠে বলল,

‘ধ্যাৎ এমন কিছু না। আর দয়া করে এখন তুমিও শুরু করো না।’

সিয়া ফিচেল হাসি দিয়ে বলল, ‘ওহ তো তাহলে অলরেডি অন্যদেরও এমনই মনে হয়েছে। ঠিক আছে। আচ্ছা এট লিস্ট স্কুলের কতগুলো পার্ফেক্ট বয় থাকে না। অনেকেরই তাদের ওপর ক্রাস থাকে। মানে তারা ক্রাসের সেন্টার পয়েন্ট থাকে। তেমন কাউকেও না?’

মাহীন বিরস কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘সেটা আবার কে? তুমি কার কথা বলছো? কে আমাদের স্কুলের পার্ফেক্ট বয়?’

‘ওফ না। ছাড়ো তো। জাস্ট ফরগেট ইট।’

মাহীন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। এসিসিয়া মনে মনে ভাবলো, হুম আমি যেমনটা ধারণা করেছিলাম ঘটনা তো এখানে অন্যরকম। ইট উইল বি আ ইন্টারেস্টিং গেইম টু প্লে।
.
.
চারিদিকে মাছ ভাজার মোহনীয় সুবাস ছড়িয়ে গিয়েছে। সদ্য ধরে আনা তাজা মাছগুলো এতক্ষণ ধরে সকলে যে যার যার মতো ম্যারিনেট করেছে। ঘন্টাখানেক আগেও যেই মাছরা শান্তিতে একেবেঁকে শীতল পানির নীচে সাঁতার কেটে চলেছিল তারা এখন চুলার আগুনে তেল মশলা মেখে পুরছে। মাহীনও এবার চুলার সামনে দাঁড়িয়ে মাছ ভাজার কাজে হাত লাগিয়েছে। রাবিত নিজের মাছ নিজে নিজে ভাজতে গিয়ে একপাশটা পুরিয়ে ফেলেছে। একজন ফ্রেশম্যান ছাত্রীর তো প্যানের ওপরই আগুন ধরে গেল। কে যেন বেশ কিছু মাছ ম্যারিনেট করার সময় দিয়েছে একগাদা মরিচ গুঁড়ো ঢেলে। এখন টিচাররা সেগুলো আবার ধুয়ে নিয়ে নতুন করে মসলা মাখিয়ে সেটা সামলানোর চেষ্টা করছেন। হঠাৎ কোথাও কেউ চিৎকার দিয়ে উঠছে। কেউ এর মাঝে গলা ছেড়ে গানও ধরেছে। টিচারদের কথা যেন কারোও কানেই ঢুকছে না। এতগুলো ছাত্র ছাত্রীকে পাঁচজন টিচার মিলেও সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। গজঘন্টা বাজালে বুঝি এরা থামবে। জেনেট যখন ভাজাভাজিতে হাত লাগিয়েছে, হাত ধুয়ে আসার কারণে হাত থেকে পানি পরেছে এবং তেল ছিটকে উঠেছে। বেচারির হাতে গরম তেল এসে পরায় এখন ও নিজের তাঁবুতে এসে বসে আছে। এর মাঝে এসিসিয়া আবার খুব দক্ষতার সঙ্গে শুধু নিজের মাছ নয় বরং অনেকজনেরই মাছ ভেজে তুললো। ওর ভাষ্য মতে, ওর বাসায় সকলকে পার্ফেক্ট হিসেবে গোড়ে তোলার জন্য তিন বোনকেই সব ধরনের রান্না করা শেখানো হয়েছে। বলাই বাহুল্য ব্যাপারটা সাইলোর হজম হচ্ছিলো না। অবশেষে আড়াইটার সময় সকলের ভাজাভাজি এবং বাকি রান্নাবান্না শেষ হলো। এবং সকলেই তৃপ্তি সহকরে খাওয়া দাওয়া শেষ করল। এরপর বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সকলকেই এদিক ওদিক যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলো। এতক্ষণ কেউ বনে যেতে পারবে না এমন একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। যদিও বলা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে তবুও অনেকেই তখনই এদিক ওদিক কেটে পরল। তবে বেশি দূর যাওয়া যাবে না। মাহীনদের ক্যাম্পে কেউই কোথাও গেল না। বরং ওরা সকলেই একসাথে গোল হয়ে বসলো গল্প করতে। গল্পের মূল বিষয় হচ্ছে নিকটস্থ পরিত্যক্ত দূর্গটা। বনের মাঝেই রয়েছে সেটা। রাবিত কিছুটা ভিত স্বরে বলল, ‘আমি বলছি ওখানে ভূত থাকতে পারে।’

‘ওয়াট দ্যা হেল এই ভুত টুত আবার কি ঝামেলা? ওখানে কোনো ভূত নেই।’ বলল ক্যারোট।

র‌াবিত চোখ গোল গোল করে বলল, ‘সিরিয়াসলি! তুমি এতকিছু বিশ্বাস করো আর ভূতে বিশ্বাস করো না?’

ক্যারোট ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘মানে? এসবের সাথে আবার ভূতের কি সম্পর্ক? আমি কোনো ভুতটুতে বিশ্বাস করি না।’

মাহীন র‌াবিতের পাশেই বসেছিল। র‌াবিতের হাতে গুঁতা দিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘এ্যই ভুতটুত কি হ্যা? ভুত বলতে কিছু হয় নাকি?’

‘আরেহ না না আমি ওইটা বলতে চাইনি। বলছিলাম যে ভুত না হলেও তো জ্বীন হয়। ওরা তো জ্বীনে বিশ্বাস করে না। সেই যাই হোক ওই পরিত্যক্ত দূর্গে তো জ্বীনও থাকতে পারে।’

মাহীন বলল, ‘ওহ আচ্ছা সেটা বলো।’

সাইলোহ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘র‌্যবিট এত ভয় পাওয়ার কি আছে? আমরা কি ওখানে যাচ্ছি নাকি? আমরা জাস্ট কথা বলতেসি।’

লিও বলল, ‘ওই বৃদ্ধর কথা শুনেছো না যাকে প্রায় সময় লিটল রকে ভবঘুরের মতো ঘুরে ফিরে বেড়াতে দেখা যায়।’

নায়েল বলল, ‘কারোর মাথা খারাপ নাকি যে সে ওই দূর্গে এমনি এমনি যাবে। ওই লোক আবার ঢাকঢোল পিটিয়ে সকলকে সাবধান করে দূর্গ থেকে দূরে থাকতে।’

সাইলোহ চোখের মণি ঘুরিয়ে বলল, ‘জাস্ট পাবলিসিটির জন্য করে।’

লিম জু বলল, ‘নিঃসন্দেহে বুড়োর মাথায় ভুতের বেড়াম আছে।’ ওরা সকলে হেসে উঠল। লিম জু আবার বলল,
‘তবে ওটা সেই আঠারোশো সালের শেষের দিকে তৈরি। ওফ ওখানে নাকি আসবাবপত্রগুলো এখনো ওভাবেই আছে।’

এসিসিয়া বলল, ‘দামি কোনো কিছুই নেই। শুধু অকাজের আসবাবপত্রই আছে যেগুলো এতদিনে সব ঘুনে ধরে শেষ যদি না সেগুলো অন্য কোনো ধাতুর হয়।’

মাহীন বলল, ‘তা ঠিক। কিন্তু ওটা এভাবে পরিত্যক্ত হয়েছিল কিভাবে?’

জেনেট বলল, ‘হয়েছে কি এই ব্যাপারে অনেক বিতর্ক আছে। যদিও সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা হলো…ওকে মাঝখান দিয়ে থামিয়ে দিয়ে র‌্যবিট বলল,

‘আমি বলবো! আমি বলবো!’

সাইলোহ মুখ বাঁকা করে বলল, ‘তুমি আদৌও জানো?’

রাবিত বলল,’ডোনচিউ ডেয়ার টু আন্ডারেস্টিমেট মি! পিপরাও কিন্তু হাতিকে উল্টায় দিতে পারে। আর তুমি কি জিনিস।’

লিও বলল, ‘আচ্ছা আচ্ছা এখন এটা তো বলো যে তুমি কি জানো?’

রাবিত নাটকীয় ভঙ্গিতে বলতে শুরু করল, ‘হ্যা তো ওটা একটা স্প্যানিশ দূর্গ।’

ক্যারোট মাঝখান দিয়ে বলল, ‘হ্যা ওটা আমরা সবাই জানি।’

র‌াবিত বিরক্ত গলায় বলল, ‘ওফ আল্লাহ! আমাকে বলতে তো দিবা। তো আঠারোশো পঁচাত্তর সালে একটি স্প্যানিশ সম্ভ্রান্ত লি-কুয়ের্তো পরিবার এখানে আসে এবং জায়গাটা তাদের খুবই পছন্দ হয়। কারণ প্রথমত অদূরেই ক্যালিফোর্নিয়া ও নিইউ মেক্সিকোতে দামি ধাতুর খনি ছিলো। এবং এখানে নদীর তীরবর্তী স্থান হওয়ায় আরোও সুবিধা ছিলো। তো তারা এখানে এই বাড়িটা করার পর যখন ওঠে তার কিছুদিন পর এই অঞ্চলে মহামারী দেখা দেয়। এবং একই সাথে তাদের পরিবারের তিনজন সদস্য মৃত্যুবরণ করে। এরপর শুধু মি.লি কুয়ের্তো, তার বোন এবং ছোট মেয়েটা বেঁচে ছিলো। তার বোন কিছুদিন পর চিলেকোঠার ঘরে আত্নহত্যা করেন। ছোট মেয়েটা তারও দুই বছর পর সেই চিলেকোঠার ঘরেই আত্নহত্যা করে। এবং লি-কুয়ের্তো একদম একা এই বনের মাঝে নির্জন একটা দূর্গে পরে থাকেন। পরে ব্রিটিশরা সে সময় দূর্গটা দখল করতে চায়। তবে মি.লি-কুয়ের্তো কোনো ভাবেই এর দখল ছাড়েন না। শেষে একাকিত্বে এবং এসব মানসিক চাপের কারণে তিনিও একই ভাবে চিলেকোঠার ঘরেই আত্নহত্যা করেন। এরপর ব্রিটিশরা বাঙলোটা দখল করেও লাভ হয়নি। কেউই এখানে টিকতে পারতো না। পরে সেটা পরিত্যক্ত হয়ে যায়।’

ক্যারোট চোখ কপালে তুলে টিটকারির সুরে বলল, ‘ওহ মাই গড আমি তো ভাবসিলাম তুমি পড়াশোনাই করো না এন্ড এসব ইতিহাসের ‘ই’ ও জানো না। এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল।’

র‌্যবিট ঝাঁজ ভরা কন্ঠে বলল, ‘তোমরা আমাকে ভাবোটা কি বলো তো? আমি জাস্ট অলওয়েজ ফান করতে থাকি বলে আমার দুনিয়ার কোনো খবর নাই? আমি কিছুই পারি না?’

উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ধুর ট্রু ট্যালেন্ট এর কোনো দামই নাই আজকাল।’

নায়েল বলল, ‘আরে তুমি যাচ্ছো কোথায়?’

জেনেট বলল, ‘র‌্যবিট বসো না।’

র‌্যবিট বলল, ‘নাহ থাক আমি এখানে আর বসবো না।’ বলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগল।

লিম জু নরম গলায় বলল, ‘আহারে ওকে এত আন্ডারেস্টিমেট করা ঠিক হয়নি।’

সাইলোহ বলল, ‘কো জানতো ও এত রিসার্চ করে বেড়ায়।’

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ক্যারোট তোমার কথায় ও কষ্ট পেয়েছে। তুমি গিয়ে ওকে ফিরায় আনো।’
ক্যারোট ম্লান কন্ঠে বলল,
‘আমি তো আর ওকে হার্ট করতে কথাটা বলিনি। সার্কাস্টিক ওয়েতে কথাটা বলসি। আর এমন ভানে রিএক্টও তো করে না সাধারণত।’

লিও বলল, ‘সে যাই হোক। তুমি এখন ওকে ফিরায় আনো।’ ক্যারোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল।

র‌্যবিট হাঁটতে হাঁটতে নিজের ক্যাম্পের কাছে পৌঁছে গেল। রায়েদ ঘাসের ওপর বসে সিডনি শেলডনের ব্লাডলাইন উপন্যাসটি খুলে বসে ছিলো। র‌াবিত ওর পাশে ধপ করে বসে পরল। রায়েদের কাঁধে মাথা রেখে দিয়ে বিষন্ন মুখে বসে রইল। রায়েদ ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘মাইন্ড নামক বেলুনটায় বেশি হাওয়া দেওয়ার কারণে তা ফুটে গিয়েছে দেখি।’

রাবিত বিরক্ত কন্ঠে বলল, ‘ওহ মজা করো না তো।’

‘কিন্তু কি হয়েছে তোর?’

‘কি আর? আমি পাঁচটা ভাষা বলতে পারি। এত রিসার্চ করি। এন্ড হোয়াট আই গেট ইন রিটার্ন? নাথিং বাট নেগলিয়েন্স। সকলে আমাকে অলওয়েজ আন্ডারেস্টিমেট করে।’

রায়েদ চাপা হেসে বলল, ‘তুই এত জ্ঞান অর্জন তো করিস কিন্তু কোথাও ব্যবহার তো করিস না। এবং সবসময় জোকারের মতো আচরণ করলে কিভাবে হবে? সবসময় ফাজলামো না করে মাঝে মাঝে সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করবি।’

‘ওত সিরিয়াসনেস ভাল্লাগে না আমার।’

তখনই ক্যারোট হাঁটতে হাঁটতে ওদের তাঁবুর দিকে আসছিল। রায়েদ ওকে দেখে বলল, ‘ওই দেখ তোর ফ্রেন্ড ক্যারোল আসছে।’

রাবিত ওইদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল, ‘ওর নাম ক্যারোট।’

ক্যারোল ওদের তাবুর কাছাকাছি তো এসে পৌঁছেছে, কিন্তু কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না। তাও আবার রায়েদ সামনে আছে। ক্যারোল ভাবতে লাগল, ওফ র‌্যবিটকে তো কখনো রাগ করতেই দেখিনা। ওর রাগ কি করে ভাঙ্গায় আমি কি করে জানবো? আর কারোও কথায় জীবনে রাগ করে না সেখানে আমার কথায়ই রাগ করে আমাকেই ঝামেলায় ফেলা লাগতো। মহা মুশকিল তো! আচ্ছা এমন পরিস্থিতিতে মাহীন কি করতো? ও নিশ্চয়ই অন্যরকম কিছু করতো যেটা র‌্যবিট ভাবতেও পারে না।’ ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়াল। তারপর মূহুর্তের জন্য দ্বিধাবোধ করে ধপ করে ওদের সামনে বসে পরল। এবং রায়েদের দিকে তাকিয়ে সাহস করে অভিযোগের স্বরে বলল,

‘দেখো রায়েদ তোমার ছোট ভাইকে বুঝাও যে, আমি যেই কথাটা বলেছি ওটা আসলে ওকে আন্ডারেস্টিমেট করে নয় বরং ওকে ইন্ডাইরেক্টলি প্রশংসা করে বলেছি।’ হঠাৎ করে ক্যারোটের এভাবে কথা বলায় রায়েদ হকচকিয়ে গেল। সকলে টুকটাক ওর সাথে কথা বললেও মাহীন যেভাবে ওর সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে যায় সেভাবে আর কেউ বলে না। তবে ক্যারোল হঠাৎ করে একদম নির্দ্বিধায় কথাগুলো বলে যাওয়াতে রায়েদ এবং রাবিত দুইজনই অবাকই হলো বটে।

ক্যারোল বলে গেল, ‘দেখো অন্যান্য সময় সকলে ওকে কি না কি যে বলে। অনেক সময় সবাই তো সার্কাস্টিক ওয়েতেও অনেক কথা বলে না। সেখানে কখনো কোনো মাইন্ড করলো না। আর আমি কি একটা কথা বললাম একদম মুখ ফুলিয়ে উঠে চলে আসল। এটা কোনো কথা হলো?’

রায়েদ ওর কথাগুলো শুনে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যেন হাসি না আসে। তবুও উত্তর দেওয়ার সময় হাসি হাসি মুখেই বলল, ‘ওহ তাই নাকি। র‌্যবিটের সঙ্গে ক্যারোটের নাকি অনেক প্রাচীন সম্পর্ক। তাই হয়তো অভিমান করেছে।’ বলে রাবিতের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুই এত অভিমান করতে পারিস জানতাম না তো।’

রাবিত ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে ঘাসের দিকে তাকিয়ে আছে।
রায়েদ ক্যারোলের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল, ‘তুমি একজ্যক্টলি ওকে কী বলেছিলা?’

ক্যারোল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘ও আমাদের নিকটস্থ যেই পরিত্যক্ত বাঙ্গলোটা আছে সেটার ডিটেইলস ইতিহাস শোনানোর পর আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম, ওহ গড আমি তো ভাবসিলাম তুমি পড়াশোনাই করো না এন্ড এসব ইতিহাসের ‘ই’ ও জানো না। এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল।’
তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল, ‘এখন আমি সোজা ভাবে বলেছি আমি ভাবতাম ও পড়াশোনা করে না। কিন্তু এখন জানতে পারলাম ও অনেক কিছুই পারে যেটা হয়তো ওকে দেখে বোঝা যায় না।’

রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাবিতের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘রাবিত রাগ করলে জায়গা মতো তো করবি। আমি হলফ করে বলতে পারি ওযে কি বলসে সেটা তুই বুঝিসই নি।’

রাবিত বলল, ‘আহ ভাই। আমি বুঝেছি। তবে ও সোজা ভাবেও তো বলতে পারতো। প্রশংসা কেউ অত ঘুরায় প্যাচায় করে?’ বলে ক্যারোটের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো।

রায়েদ বলল, ‘প্রথমত প্রশংসা ও নিজে থেকে করেছে। তাই সেটা বুঝে নেওয়া তোর কাজ। এখন বেশি কথা না বাড়িয়ে রাগ ঝেড়ে তোরা কোথায় বসে কি গল্প করছিলি সেখানে যা।’

বলে ওকে ঠেলা দিলো। রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। তারপর ক্যারোলের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘এরপর থেকে প্রশংসা করলে ক্লিয়ারলি করবা। লাইক ‘র‌্যবিট ইউ আর goat!’

ক্যারোল হেসে উঠে বলল, ‘নিজেকে ছাগল বলছো?’
রায়েদ নিজের বইটা হাতে নিয়ে চাপা হাসল। র‌্যবিট বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আরে নারে বাবা। এই goat সেই goat না। এই goat এর মানে ‘Greatest of all time’। এটা একটা আমেরিকান কাম ক্যালিফোর্নিয়ান স্ল্যাঙ্গ। তুমি আমেরিকান হয়েও এটা কখনো শোনোনি?’
ওরা হাঁটতে শুরু করেছে। ক্যারোল এখনো হাসতে হাসতে বলল,

‘র‌্যবিট এখন আর খরগোশ নেই ছাগল হয়ে গিয়েছে বাহ। দাঁড়াও ওদের এটা বলা লাগবে।’ বলেই দ্রুত গতিতে হাঁটতে লাগলো। র‌্যবিট প্রায় ক্যারোটের পেছনে ছুটে যেতে উচ্চস্বরে বলল,

‘এ্যই এক মিনিট এসব কি? আমি না বললাম এটার মানে কি!’

ইনশাআল্লাহ চলবে।

#এল_এ_ডেইস
পর্ব ২৭
লেখনী মাহীরা ফারহীন

‘নদীর পানি একই প্রবাহে বাহিত হতে হতে কখনো হয়তো কোথাও গিয়ে বাক নেয়। এবং এর গতিপথ পাল্টে যায়। ঠিক তেমন সকলের জীবনই একটি নির্দিষ্ট প্রবাহে চলতে থাকে। কখনো না কখনো হয়তো সেটা বাক নিয়ে নতুন কোনো পর্যায় এসে দাঁড়ায়। ভালো সময় থেকে খারাপ সময়ে এসে দাঁড়ায়। অথবা খারাপ সময় থেকে ভালো সময় এসে দাঁড়ায়। নিঃসন্দেহে বলতে পারি আমার রসকষহীন জীবনের প্রবাহ হঠাৎ করেই গতিপথ পাল্টেছে মাহীন নামক বাঁকের কারণে। ব্যপারটা প্রথমে আমার অস্বাভাবিক, অস্বস্তিকর বা অবাস্তব মনে হলেও আজকাল সেটাকে ভালোই লাগতে শুরু করেছে। দিনের পর দিন সকলের থেকে দূরে থেকে আমার মাঝে এবং সকলের মাঝে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে দিয়ে যেখানে আটকা পরেছিলাম সেটাই ছিলো আমার কমফোর্ট জোন। যদিও মাঝে মাঝে সেখানে দম বন্ধ লাগতো। না সেই দেয়াল ভাঙ্গার ক্ষমতা আমার ছিলো, না ইচ্ছা। মনের গভীরে সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো ভয়। কাউকেই আমার জীবনে প্রবেশ করতে দিতে ভয় পেতাম। এই অদৃশ্য দেয়ালটা মাহীন এসে ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার অনুমতি ছাড়াই। কী আশ্চর্য না? প্রথমে আমি মোটেও না ব্যপারটা পছন্দ করেছি, না ওকে। তবে এখন বুঝতে পারছি মাহীন কতটা ঠিক কাজ করেছে। একটা অচেনা অপরিচিত মেয়ে যে না আমাকে চেনে না আমার সম্পর্কে কিছু জানে। তা সত্ত্বেও আমার মন আমার জীবনের প্রবাহ ঠিক ধরতে পেরে আমার কমফোর্ট জোনের দেয়ালটাই ভেঙ্গে দিলো। কিভাবে? কিভাবে আমাকে এখানে সকলের মাঝে টেনে আনলো? এখন আমি চাইলেও বের হয়ে যেতে পারছি না এখান থেকে। এবং আমি চাইও না। আমি চাই মাহীন যা করছে করে যাক। আমি শুধু ওর সাথে হেঁটে যাবো। কি অদ্ভুত না ও? ও সকলকে বাধ্য করে ওকে পছন্দ করতে। যেই ওকে দেখে তার সাথেই ওর ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়? আমি যদি ওকে না দেখে না চিনে ওর সম্পর্কে জানতে পারতাম তাহলে আমার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করতাম ওর থেকে দূরে থাকতে। ওর জালে না ফাঁসতে। কিন্তু কি সুন্দর ভাবে আমি ওর সাথে জড়িয়ে গেলাম। যাই ভাবি না কেন সবকিছুতেই কিভাবে যেন মাহীন চলে আসে। ও যেন আমার মানস্পটে আঁটকে গেছে। ওকে নিয়ে ঘটা করে ভাবতে বসলেও ভাবনা শেষ হবে না। আগে যতটা সম্ভব মনের দিক থেকে ওকে এড়িয়ে চলতাম। এখন যত ওকে দেখছি তত ওর কথাই মাথায় আসছে। কেনো? ওকে নিয়ে ভাবতেও এত ভালো লাগে? ওর সাথে কথা বলতেও ভালো লাগে? যতবার চোখে পরে ওকে দেখি যে, হয় ওর কোনো বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছে বা বসে আছে বা হাঁটছে। অথচ আমি আজকাল শুধু ওকে দেখে এমনিই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেই না। বসে খেয়াল করি কিভাবে ও কথা বলছে। কিভাবে ও হাসছে। ওর চোখ ওর চুল সবকিছু। এটা কী অদ্ভুত?’
‘রায়েদ’। কারোর ডাকে ভাবনার জাল ছিড়ে গেল। দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকাতেই দেখল মাহীন ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ওই এখানে এসে হাজির হয়েছে দেখে হতবাক হলো রায়েদ। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরল। মাহীন বলল,

‘বাপরে বাপ কী গভীর চিন্তাভাবনাই না করো।’

রায়েদ নিজেকে সংযত করে বলল, ‘তুমি এখানে হঠাৎ?’

‘তুমি আমার সাথে আসো।’

‘কোথায় আসবো?’

‘আমাদের ক্যাম্পে। আমরা ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলতে বসছি।’

রায়েদ চোখ বড় বড় করে বলল, ‘সিরিয়াসলি আমি ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবো এটা তুমি ভাবলা কি করে?’

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ভাবি তো অনেক কিছুই। কিন্তু সবকিছু তুমি আসলে করতে চাইবে না তাই সেসব বাদ দাও। কিন্তু এখন আসো আমার সাথে।’

রায়েদ বলল, ‘কি জেদ এগুলো? তোমরা ফ্রেন্ডরা মিলে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবা। তার মাঝে আমি থাকলে কি ভালো লাগবে।’

মাহীন এবার ঘাসের ওপর ওর পাশে বসে পরল।বলল,
‘রায়েদ দেখো এখন পর্যন্ত তো অনেক কিছুতেই তুমি ‘আমার’ ফ্রেন্ডদের সাথেই থেকেছ। কিন্তু কিছুদিন ওদের সাথে মেলামেশা করলে ওরা ‘তোমারও’ ফ্রেন্ড হয়ে যেত যদি তুমি চাও। ওরা সকলে তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করে শুধু দেখানোর জন্য নয় আসলেই। অল ইউ নিড ইজ টু টক উইত দেম।’ বলে আগ্রহী দৃষ্টিতে রায়েদের দিকে তাকিয়ে রইল।

মাহীনকে এভাবে জুলজুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে রায়েদের হাসি পেল। আবার কী অদ্ভুত মায়াবি লাগলো ওকে। ওর দৃষ্টিতে বুঝি এমন কিছু আছে যেটা কখনোই রায়েদকে শক্ত হতে দেয়না। দেহ মন অসাড় করে দেয়। অবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হালকা হাসল। বলল,

‘আচ্ছা ঠিক আছে। চলো।’

মাহীন আনন্দে এক লাফেই উঠে দাঁড়াল। রায়েদও উঠে দাঁড়াল। সন্ধ্যা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ পূর্বে। অন্ধকার আকাশ। চারিদিকে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই যারা জঙ্গলে গিয়েছিল বেশির ভাগই ফিরে এসেছে। যারা অন্ধকার হওয়ার পর ফিরেছে তাদের টিচারদের কাছ থেকে বকাও খেতে হয়েছে। সকলেই বসে আছে বা কেউ কেউ হাঁটছে এবং গল্প করছে। মাহীন ও রায়েদ ওদের ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে গেল। সকলে এক জায়গায় জট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা এগিয়ে যেতেই জেনেট হাসি মুখে বলল,

‘গুড ইভনিং রায়েদ।’

‘ইভনিং জেনেট।’ প্রত্যুত্তরে বলল রায়েদ।

নায়েল এসে রায়েদের পাশে দাঁড়াল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি আগে কখনো ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলসো?’

রায়েদ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার পূর্বে মাহীন বলল, ‘অনেক আগে খেলতাম কিন্তু অনেক দিন খেলা হয়নি। এটাই বলতে যাচ্ছিলা না?’

রায়েদ মুচকি হেসে বলল, ‘হ্যা এটাই বলতে যাচ্ছিলাম।’

সাইলোহ এসে মাহীনের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলল ওকে। তারপর রায়েদের দিকে তাকিয়ে চিকন কন্ঠে বলল, ‘লাস্ট টাইম আমাদের ফার্স্ট সাক্ষাৎটা খুব একটা ভালো যায়নি। ইভেন ওয়ার্স্ট ছিলো। বাট এখন আশা করছি এমন কিছু আর হবে না। হ্যালো।’

রায়েদ বলল, ‘এবং কোয়েনসিকোয়েন্সটাও আলাদা ছিলো। এনি ওয়েজ হ্যালো।’

সাইলোহ হালকা হাসলো এবং অন্যদিকে চলে গেল। মাহীন বলল,’ওয়েল ওর কথাবার্তা একদম গায়ে লাগিও না। ও সবকিছুই বাঁকা ভাবে বলে।’

রায়েদ বলল, ‘তুমি একটা কাককে মধু খাওয়াও আর মাংসই খাওয়াও সেই কাক একই কর্কশ স্বরে কাকা করেই চিৎকার করবে।’

মাহীন ও নায়েল দুইজনই হেসে উঠলো। নায়েল বলল,
‘হ্যাটস অফ টু ইওর সার্কাজম!।’

মাহীন বলল, ‘আসলেই।’ তখনই এসিসিয়া এসে মাহীনকে কিছু একটা বললো। এবং মাহীন ওর সাথে হাঁটতে হাঁটতে অন্যদিকে এগিয়ে গেল। এখানে নায়েল বলল,

‘তুমি বিভিন্ন জায়গায় পার্ট টাইম জব করো না?’

‘হ্যা তা তো করি।’

‘তো সবগুলো কিভাবে ম্যানেজ করো আসলা?’

রায়েদ বলল, ‘আমি সাধারণত ছুটি খুব একটা নেই না। অনেক সময় অভার টাইমও কাজ করি। তাই যখন চার দিনের ছুটি চাইলাম, কেউ বাঁধা দিলো না। যদিও একজন একটু দ্বিধা করছিল পরে অবশ্য মেনে নিয়েছে।’

নায়েল বলল, ‘ওফ ভাগ্যিস।’ তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল, ‘কাল বোটিং করতে যাচ্ছো তো? তুমি তো এসবই আগে করতা। এখন করো কিনা জানি না অবশ্য।’

রায়েদ বলল, ‘কালকে যাচ্ছি অবশ্য। আগে তো ক্যাম্পিং ফ্যাস্টিভ্যাল গুলোয় যেতাম গাইড হিসেবে। এই সবই করতাম। তবে গত বছর যাইনি এবং এই বছর তো এখনো ক্যাম্পিং সিজন আসেই নি।’
তারপর একটু থেমে বলল, ‘তবে তোমার এসব জানার কথা কী?’

নায়েল মুচকি হেসে বলল, ‘ভুলে যাচ্ছো বোধহয় আমিও কিন্তু গাইড। মনে নেই একবার আমরা একই ক্যাম্প ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম।’

রায়েদ চোখ ছোট করে বলল, ‘টিফেনি ক্যাম্পিংয়ে? যেখানে একটা বোট ফুটো হয়ে গিয়েছিল এবং একজন ছোট ছেলে ডুবে গিয়েছিল?’

‘হ্যা হ্যা সেটাই। তোমার মনে আছে দেখছি।’ উচ্ছাসের সঙ্গে বলল নায়েল।

‘মনে থাকবে না আবার যা সব স্বরণীয় ঘটনা ঘটেছিল সেখানে।’

তখনই লিওকে উচ্চস্বরে বলতে শোনা গেল, ‘ওকে সো আমরা এখন খেলা শুরু করবো। দয়া করে সকলে গোল হয়ে বসে পরো।’

সকলেই একে একে বসে পরছে এবং একটা বৃত্ত তৈরি করছে। মাহীনও ফিরে এসেছে। এতক্ষণ রাবিতকে আশেপাশে দেখা যায়নি। সেও এখন এসে হাজির হয়েছে। সকলে বসার পর দেখা গেল রায়েদের এক পাশে নায়েল অপর পাশে লিম জু। মাহীন ওর থেকে একদম অপর দিকে। মাঝে একটা বোতল রাখা হয়েছে। বেশ বাতাস হচ্ছে। প্রথমে প্লাস্টিকের বোতল দেওয়ার কারণে সেটা শুধু উড়ে যাচ্ছিল। এবার কোথা থেকে যেন কোকের কাঁচের বোতল যোগার করা হয়েছে। রায়েদ খেয়াল করল মাহীনের একপাশে সাইলোহ বসে আছে এবং আরেক পাশে এসিসিয়া বসে আছে। ওকে দেখেই নায়েলকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল,

‘এই এসিসিয়া কি সবসময়েই তোমাদের সাথে সাথে থাকে?’

নায়েল বলল, ‘হ্যা থাকে তো যদিও ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য। সাইলোর পাক্কা ধারণা এসিসিয়া কোনো মোটিভ নিয়ে এখানে এসে ভিড়েছে।’

রায়েদ বলল, ‘তেমনটাই তো হওয়ার কথা।’

‘হ্যা এসিসিয়া যদিও একদম স্বাভাবিক আচরণ করে আমাদের সাথে। সবকিছুতেই থাকতে চেষ্টা করে। মানে আমরা যা নিয়ে কথা বলি, যাই করি সবকিছুর মধ্যেই।’

‘আর বিশেষ করে মাহীনের পেছনে লেগে থাকে না ও?’

‘হ্যা প্রায় সময় দেখা যায় ওর সাথেই কথা বলছে। তবে সেভাবে লেগে থাকতে দেখিনি।’

রায়েদ সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। নায়েল আবার বলল,
‘শেষ পর্যন্ত বেচারি মাহীন দুই শত্রুর চিপায় পরেই গেল।’
রায়েদ চাপা হাসল। তখনই সর্বপ্রথম লিম জু বোতল ঘোরাল। এবং তা ঘুরতে ঘুরতে জেনেটের দিকে মুখ করে থেমে গেল।

লিম বলল, ‘ওকে সো ট্রুথ অর ডেয়ার?’

জেনেট একটু ভেবে বলল, ‘উম ডেয়ার।’

লিমও কিছুক্ষণ ভেবে বলল, ‘তোমার এবং লিওর কাহিনী শোনাও। এটা কখনোই তোমাদের মুখ থেকে বের করা যায় না।’

ক্যারোট উৎফুল্ল কন্ঠে বলল, ‘ওহ ইয়াহ গুড আইডিয়া। আমিও শুনতে চাই।’

বাকিরাও সায় দিলো। জেনেট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো, ‘আচ্ছা তো কাহিনী শুরু হয়েছে সেভেন্থ গ্রেড থেকে।’

মাহীন বলল, ‘তোমার রিলেশনশিপে বয়স না সাড়ে তিন বছর?’

জেনেট বলল, ‘হ্যা সাড়ে তিন বছর। কিন্তু কাহিনী শুরু হয়েছে আরো আগে থেকে। তো যা বলছিলাম ফার্স্টের দিকে আমি ওদের ফ্রেন্ড সার্কেল এর মধ্যে ছিলাম না। সাইলোর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ও আমাকে ক্রিয়েটিভ ইভেন্টে জয়েন করতে ঠেলাঠেলি করে। সেটা জয়েন করার পর আমার ইভেন্ট পার্টনার থাকে লিও। ওয়েল সো প্রথমে ওর সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়। এবং ইভেন্ট শেষ যাওয়ার পরও আমরা চারজন একসাথেই থেকে যাই। আমি এবং লিও প্রায় সময় হ্যাঙ্গআউট করতাম। তো আমারই ওকে প্রথম থেকে বেশ ভালো লাগত। একদিন আমি নায়েলকে আবার এটা বলেও দিয়েছিলাম। যদিও আমি ওকে দিয়ে প্রমিজ করিয়েছিলাম ও কাউকে বলবে না। কিন্তু ও ঠিকই মীরজাফরতা করে লিওকে বলে দিয়েছে। সেটার জন্য এখনো ওর ওপর রেগে আছি।’

নায়েল মাঝখান দিয়ে বলল, ‘আরেহ! আমার কি দোষ? লিও আমার মুখ থেকে জোড়াজুড়ি করে কথা বেড় করে নিয়েছিল তো।’

সকলে হেসে উঠল। লিও বলল, ‘আচ্ছা বাকি কাহিনী আমি বলছি।’ তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা তো ওয়েল ইভেন্টের সময় হয়তো ওকে ওভাবে দেখিনি। কিন্তু পরে আমারও ওকে ভালোই লাগতো। তো একদিন কি হয়েছে সাইলোহ এবং নায়েল আমাকে ব্লাইন্ড ডেটে পাঠিয়েছে। ওদিক দিয়ে জেনেটকে ব্লাইন্ড ডেটে পাঠিয়েছে। আমাদের দুজনের কেউই জানতাম না সেটা আমরাই। পরে গিয়ে একে অপরকে দেখে রিয়েলি সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলাম। এন্ড তার কিছুদিন পরই আমরা দুজনই কনফেস করি।’

সকলে করতালি দিয়ে উঠল। রাবিত বলল, ‘ওয়াহু ইট ওয়াজ এ হোলসাম স্টোরি।’

এবার রাবিত বোতল ঘোরাল। সেটার মুখ গিয়ে থামল এসিসিয়ার দিকে। রাবিত কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই এসিসিয়া বলল, ‘ট্রুথ!’

রাবিত কিছুক্ষণ ভেবে বলল, ‘আচ্ছা তো এটা বলো যে এই মুহূর্তে তোমার সবচেয়ে বড় ডিজায়ার কি?’

এসিসিয়া কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। তারপর বলল,
‘m – f = m + f. এটাই।’

সকলেই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। র‌্যবিট কপাল কুঁচকে বলল, ‘এটা আবার কি বললা? আমি তো বুঝলামই না।’

সিয়া বলল, ‘ওয়েল দেখো এই ইকুয়েশনটা সলভ করা এখন আমার সবচেয়ে বড় ডিজায়ার। এবং এটা বুঝিয়ে বলা সম্ভব না।’

কেউ আর কিছু বললো না। এবার লিও বোতল ঘোরাল। সেটা লিম জুর দিকে এসে থামল। লিম জু বলল, ‘ট্রুথ।’

লিও বলল, ‘এখানে কী কেউ এমন আছে যাকে তুমি প্রথমে দেখতেই পারতে না। বাট এখন তার সাথে ভালো সম্পর্ক।’
লিম সাথে সাথেই বলল, ‘হ্যা আছে তো। এই যেমন র‌্যবিট। ও প্রথমে আমাকে খুব জ্বালাত তাই আমি ওকে দেখতে পারতাম না। কিন্তু ও এখন আমার খুব ভালো বন্ধু।’

এর পর সাইলোহ বোতল ঘোরাল। এবং সেটার মুখ গিয়ে ঠেকল র‌্যবিটের দিকে। র‌্যবিট বলল,

‘ডেয়ার ডেয়ার।’

সাইলোহ কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর ফিচেল হাসি দিয়ে বলল, ‘ওকে সো তোমার ডেয়ার হচ্ছে আমাদের থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি যেই গাছটা আছে সেটায় উঠে রাত এগারোটা পর্যন্ত ডালের ওপর বসে থাকা।’

সকলে হেসে উঠল। তবে র‌্যবিটের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। চক্ষু চড়কগাছ। ও বিরক্ত কন্ঠে বলল, ‘এটা কিন্তু ঠিক না। আমাকে খেলা থেকে বাদই দিয়ে দিচ্ছো?’

ক্যারোট বলল, ‘দেখো তোমাকে কেউ খেলা থেকে বাদ দিচ্ছেনা। তুমি যেখানে বসে আছো সেখানে বোতলের মুখ গিয়ে থামলে তোমাকে স্বরণ করবো আমরা।’

রাবিত অগত্যা উঠে দাঁড়িয়ে অসহায় দৃষ্টিতে রায়েদের দিকে চাইল। ওকে ওভাবে জুলজুল করে তাকাতে দেখে রায়েদ হালকা হাসল। বলল, ‘তুই তো গাছে উঠতে পারিস।’

রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওদের থেকে চার পাঁচ গজ দূরত্বে থাকা গাছটায় গিয়ে উঠতে শুরু করল। কয়েক মিনিটের মধ্যে গাছে উঠে সবচাইতে নিচের ডালটায় বসে পরল। এবার মাহীন বোতল ঘোরাল। সেটার মুখ গিয়ে থামল রাবিতের ফাঁকা স্থানে। সকলেই হেসে উঠল। লিও উচ্চস্বরে বলল,

‘র‌্যবিট গুড নিউজ। মাহীনের বোতল তোমার দিকে ঘুরেছে। কোনটা নিবা?’

রাবিত গাছ থেকে চিৎকার দিয়ে বলল, ‘একবার ডেয়ার নিয়ে ঘাট হয়েছে। জীবনে আর ডেয়ার নিবো না। ট্রুথ।’

মাহীন কি বলবে ভাবছেই তখন এসিসিয়া পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল, ‘আমাকে খুব উইয়ার্ড একটা প্রশ্ন করেছে। তুমি প্লিজ আমার হয়ে একটা প্রশ্ন করো না।’

‘কি প্রশ্ন বলো।’ শুধালো মাহীন।

‘ওকে জিজ্ঞেস করো ওর ক্রাস কে।’

মাহীন ভ্রু কুঁচকে তাকাল ওর দিকে। তারপর ভাবলো কিরে বাবা ওর মাথায় ক্রাস ছাড়া আর কিছু ঘোরে না নাকি।’ ভেবে পেছনে ঘুরে চিৎকার দিয়ে বলল,

‘র‌্যবিট তোমার ক্রাস কে?’

সকলে হেসে উঠল। রাবিত কি রিয়াকশন দিলো গাছে বসে সেটা ওরা এখানে বসে দেখতে পেলো না। রাবিত চিৎকার দিয়ে বলল,

‘মাহীন তুমি এখানে আসো। শুধু তোমাকে বলবো উত্তরটা। এখান থেকে এনাউন্স করে বলবো না।’

মাহীন হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল এবং এগিয়ে গেল গাছের দিকে। রায়েদ ভাবল, ‘এর আবার ক্রাস আছেও আমি তো জানতাম না।’
মাহীন গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়াল। রাবিত বলল,

‘আগে প্রমিজ করো ওখানে গিয়ে কাউকে বলবা না।’

‘আচ্ছা প্রমিজ।’ মুখ টিপে হাসল মাহীন।

রাবিত ইতস্তত করে লজ্জা ভরা কন্ঠে বলল, ‘ক্যারোট।’

মাহীনের চোয়াল ঝুলে পরল। চোখ বড় বড় করে চাইল। তারপর হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘কবে থেকে?’

‘আরেহ যেইদিন ওকে দেখেছি সেইদিন থেকেই।’

মাহীন এবার হাটতে হাটতে ফিরে আসলো কিন্তু ওর মুখ থেকে হাসি আর সরছে না। মাহীন ফিরে এসে বসার পর সকলে ওকে জোড়াজোড়ি করলেও ওর মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে না পেরে হতাশ হলো। এরপর এসিসিয়ার পালা বোতল ঘোরানোর। বোতলের মুখ গিয়ে থামল রায়েদের দিকে। রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ওর অপজিটে এসিসিয়া থাকাতে কিছুটা বিরক্তও হলো। তবে শান্ত কন্ঠে বলল, ‘ট্রুথ।’

এসিসিয়া বলল, ‘তোমার জীবনের সবচাইতে খারাপ দিন কোনটা?’

রায়েদ ততক্ষণাৎ উত্তর দিলো, ‘ছাব্বিশে আগস্ট।’

ওরা সকলে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে চাইল। কিন্তু কেউই বুঝতে পারল না এই তারিখটা কিসের। এরপর নায়েল
বোতল ঘোরাল এবং তা গিয়ে থামল লিমের দিকে। লিম ততক্ষণাৎ বলল, ‘ট্রুথ।’

‘লিম তুমি যদি পাঁচ লাক্ষ ডলার পাও। তাহলে তুমি সেই ডলার দিয়ে কি করবা।’

‘এমন কিছু করবো যাতে আরো টাকা আসে।’

সকলে করতালি দিলো। জেনেট বলল, ‘ওয়াইস এনসার।’
এবার রায়েদ বোতল ঘোরাল। এবং গিয়ে থামল মাহীনের দিকে।

জেনেট বলল, ‘ওহ ওয়াও!’

রায়েদ ভাবল, বাহ আমার পালায়ই মাহীন এসে পরে। মানে এতটা কোইনসিডেন্স কিভাবে ঘটতে পারে?’

মাহীন কিছুক্ষণ ভাবার পর বলল, ‘ডেয়ার।’

রায়েদ বলল, ‘তোমাকে আমার বলা যেকোনো একটা কাজ করতে হবে যেকোনো সময়। এখন বলছি না, যেকোনো সময়।’

মাহীন বলল, ‘মানে যেকোনো সময় যাই করতে বলবা তাই?’

‘হ্যা।’

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ঠিক আছে যেহেতু ডেয়ার নিয়েছি তাহলে তো করতেই হবে।’

এরপর জেনেট বোতল ঘোরাল এবং আবারও মাহীনের দিকে এসে থামল সেটা। মাহীন কাঁদো কাঁদো মুখভঙ্গি করে বলল, ‘ওফ আবার না!’

বাকিরা হেসে উঠল। নায়েল বলল, ‘বোতলটাও তোমার পিছুই ছাড়ছে না।’

জেনেট জিজ্ঞেস করল, ‘এমন একটা জিনিসের নাম বল যেটা কেউ তোমাকে উপহার দিলে তুমি সবচাইতে বেশি আনন্দিত হবা?’

মাহীন ততক্ষণাৎ হেসে বলল,’একটা মিষ্টিইই! হাসি।’

তারপরও পালা ঘুরতে ঘুরতে আরো কিছুক্ষণ খেলা চলতে থাকল। অদূরেই রাবিত গাছের ডালে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বসে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।

ইনশাআল্লাহ চলবে।