এল এ ডেইস পর্ব-৩২+৩৩

0
295

#এল এ ডেইস
পর্ব ৩২
লেখনী মাহীরা ফারহীন

টেবিলের ওপর হাত দুটো ভাজ করে তার ওপর মাথা রেখে বসে আছে ও। জানালার পর্দা উড়ছে বাতাসের ঝাপটায়। নিরব কামরা। অদ্ভুত শীতল পরিবেশ। দেয়াল ঘড়িতে ঘন্টার কাটা ছয়টা ছুঁতেই মৃদু শব্দে ঘন্টা বাজতে লাগল। রায়েদ মাথা তুলে চাইল। তারপর সোজা হয়ে বসল। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। ভালো লাগছে না এমনিই বসে থাকতে। কিছু করডেও ইচ্ছে করছে না। কাজেই উঠে গেল চেয়ার ছেড়ে। সন্তর্পণে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। রাবিত সোফায় বসে মোবাইলের স্ক্রিনে ডুবে আছে। ও দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল, ‘কোথায় যাচ্ছো ভাই?’
রায়েদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জুতা পরতে পরতে বলল,’একটু বাইরে থেকে বেরিয়ে আসছি।’ বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। রাবিত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভাবল, যাক এক ঘন্টার মধ্যে না আসলেই হলো। মাও তো এর মধ্যে ফিরবে না। এখন ও সময় মতো আসলেই হলো।’
.
.
রায়েদ প্রথমে নিজের সাইকেলটা বের করল। তারপর সাইকেলে উঠে ধীরে ধীরে বাম দিকের রাস্তা ধরে চলতে লাগল। রাস্তায় সবসময়ের মতোই যানবাহনের ভিড়। হইচই হচ্ছে ফলে শব্দদূষণ হচ্ছে। এসবের কোনো কিছুই যেন রায়েদকে স্পর্শ না করেই চলে যাচ্ছে। বিষন্নতার বেড়াজালে তমশাচ্ছন্ন মন। খালি খালি লাগছে সবকিছুই। ভাবছে, আহ দুইদিন আগে আমাদের বাড়ি থেকে ঘুরে গেল। তারপরও ক্যারোটের দেখা মিলেছে কিন্তু মাহীন যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। স্কুলে আসে যখন তাহলে আমি খুঁজে পাই না কেন? নাকি আমাকে এড়িয়ে চলছে? কিন্তু এতে আমাকে এড়িয়ে চলার মতোই বা কী হলো? এখনোও কী সেই একই রুল ফলো করবে, যে আমাকে কখনোই কিছু জিজ্ঞেস করবে না? কী ভেবে যে এমন করে কে জানে। মেয়েটাকে না দেখলেও তো কেমন কষ্ট হয়। ওফ! গত সপ্তাহে টানা কয়েকদিন চব্বিশ ঘন্টা ওকে চোখের সামনে দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ও। এসব কথার যে কী মানে বের করেছে জানি না। কিযে চলছে ওর মাথায় যে কিছু জিজ্ঞেসও করে না, দেখাও দেয় না। ওর কী আমাকে দেখতে ইচ্ছে হয় না?’ ভাবতে ভাবতেই সাইকেল চালিয়ে সামনে চলেছিল। এত গাড়ির ভিরের মধ্যেও হঠাৎ খেয়াল করল রাস্তার অপর পাশ হতে দ্রুত গতিতে সাইকেল চালিয়ে মাহীন আসছে। যদিও গাড়ির ভিরের মধ্যে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না ও। রায়েদ ওকে দেখা মাত্র যেন মনের আকাশে কালো মেঘের আড়াল থেকে এক টুকরো রোদ উঁকি দিল। ততক্ষণাৎ সাইকেল ঘোরালো এবং আরেকটু সামনে এগিয়ে গেল। একটা কালো মার্সিডিজের সামনে দিয়ে রাস্তার অপর পাশে চলে আসল। এবং উচ্চস্বরে মাহীনকে ডাক দিলো। মাহীন আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। ওর ডাকে পেছনে ফিরে চাইল। এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে অবশেষে রায়েদকে দেখতে পেলো। রায়েদও সাইকেল নিয়ে এগিয়ে গেল এবং মাহীনের পাশে এসে থামল। মাহীন কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রায়েদ বলল, ‘হ্যালো!’

মাহীন হালকা হেসে বলল,’হ্যালো।’

‘হঠাৎ এখানে তুমি?’

মাহীন এবার শান্ত কন্ঠে বলল, ‘তোমার বাসায়ই যাচ্ছিলাম।’

রায়েদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার বাসায় হঠাৎ? আমার সাথে দেখা করতে?’

মাহীন শ্রাগ করে বলল,’ আমি আসলে মিসেস মাদির সঙ্গে দেখা করতে আসছিলাম।’

রায়েদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,’মানে আমার মা?’

‘না তোমার দাদি।’

রায়েদ সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। তারপর বলল,
‘ওনার সাথে আবার কী কথা আছে তোমরা? ‘

মাহীন গাঢ় কন্ঠ বলল,’উম তোমাকে বলবো না। ওনাকেই বলবো।’

রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর বলল,’আচ্ছা চলো আমার সাথে।’

মাহীন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’তোমার বাসায়?’

রায়েদ সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,’না বাসায় না। অন্য একটা জায়গায়।’

মাহীন এবার ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,’কিন্তু কোথায়?’

রায়েদ আমুদে গলায় বলল, ‘চলো তাহলেই দেখবা।’ বলেই সাইকেল চালানো শুরু করলো। মাহীনও দাঁড়িয়ে না থেকে ওর সাথে সাথে সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে গেল। ওরা এখন ডান দিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনের রাস্তাগুলোও একই রকম। পাশাপাশি সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় দুইজনই নিশ্চুপ রইল। ওরা প্রায় পনেরো মিনিট পর প্যাসিফিক পার্কের সামনে এসে থামল। মাহীন সাইকেল থেকে নামার পূর্বেই জিজ্ঞেস করল,’আমরা পার্কে এসেছি?’

রায়েদ সাইকেল থেকে নেমে বলল,’এসেছি তো প্যাসিফিক পার্কে। কিন্তু আমরা ঠিক পার্কে যাবো না।’ মাহীন আর কিছু বললো না। ওরা দুজনই পার্কের সামনের পার্কিং এ সাইকেল রেখে আসল। স্যান্টা মনিকার সবচাইতে বড় আর্কষণ গুলোর মধ্যে একটি হলো প্যাসিফিক পার্ক। নানা দেশ থেকে নানান বর্ণের, ভিন্ন ভিন্ন কালচারের মানুষ এখানে প্রতিনিয়ত ঘুরতে আসে। ফলে প্রচন্ড ভির থাকে। তাও আবার বিকেলের সময়টাই হচ্ছে ভির হওয়ার আদর্শ সময়। চারিদিক মানুষে গিজগিজ করছে। পার্কের সামনে ওরা দাড়িয়ে আছে। দূর থেকেও সেই ল্যান্ড মার্ক ফেরিস হুইলটা দেখা যায়। রোলার কোস্টার এবং অন্যান্য রোমাঞ্চকর জিনিস তো আছেই। পার্কের পাশেই রয়েছে প্যাসিফিক পার্ক ব্রিজ। এই ব্রিজ সোজা প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। যদিও ব্রিজটা খুব বেশি একটা লম্বা নয়। রায়েদ সেই দিকেই এগিয়ে গেল। যদিও সূর্য ডুবতে কিছু সময় হাতে রয়েছে তবুও আকাশে ইতোমধ্যে কমলা, গোলাপি এবং বেগুনি রঙের মিলন ঘটেছে। সন্ধ্যায় পার্কের পরিবেশ আরোও জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে উঠে। ব্রিজের কাছে পৌঁছে একবার থামল। পুরোটা সময় মাহীন রায়েদের দিকে আগ্রহভরা দৃষ্টিতেই তাকিয়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে দৃষ্টি সরিয়ে চারিদিকের পরিবেশও উপভোগ করছে। কাঠের তক্তা বসানো চওড়া ব্রিজ। দুপাশের কালো কাঠের রেলিং দেওয়া যদিও তা খুব বেশি উঁচু নয়। ব্রিজ থেকে প্রায় চৌদ্দ পনেরো ফুট নিচে সাগরের ঢেউ আছরে পরার শব্দ শোনা যায়। গাঢ় নীল প্রশান্ত মহাসাগর কখনোই প্রশান্ত থাকে না। বেশির ভাগ সময়েই সাগর উত্তাল থাকে শুধু ভাটার সময় ছাড়া। সাগরের গাঢ় নীল রঙ এখন আকাশ ও সূর্যের আলোয় কমলাটে দেখাচ্ছে। ওরা দুজন ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে। মাহীন নিজের পকেট থেকে সেই কালো চিরকুটটা বের করল। আজ ও এটা সাথে করিয়েই এনেছিল। যদিও তা রায়েদকে দেবে এমনটা ওর পরিকল্পনায় ছিলো না।
রায়েদের দিকে বারিয়ে ধরল সেটা। রায়েদ চিরকুটটা দেখে একটুও অবাক হলো না। যেন ও প্রস্তুতই ছিলো এমন কিছুর জন্য। ধীরে ধীরে হাত বারিয়ে ওটা হাতে নিলো। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ভাবে চিরকুটটার দিকে চেয়ে থাকার পর বলল,’এটা আমারই লেখা।’
মাহীন বলল,’আমি জানি। সেদিন পিকনিকে প্রায় বলেই দিয়েছিলাম তোমাকে এটার কথা। কী জন্য জানি আর পুরোটা বলা হয়নি।’

রায়েদ নির্বিকার চিত্তে বলল, ‘তোমার ছিপে টান পরেছিল বলে।’

‘ওহ হ্যা।’

রায়েদ ঘনঘন শ্বাস ফেলছে। মাহীনের দিকে তাকাচ্ছেও না। গভীর সাগরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

মাহীন বলল,’তুমি চাইলে এর ব্যাখ্যা দিতেও পারো নাও দিতে পারো। আমি কিছু বলবো না।’ বলে অন্যদিকে চাইল। রায়েদ এবার ওর দিকে দৃষ্টি ফেরাল। বলল,
‘আচ্ছা একটা কথা বলোতো। এতকিছু হয়ে যাওয়ার পরও তুমি আমাকে কখনো কোনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন করোনি কেন?’
মাহীন বিচলিত ভাবে বলল,’আমার কাউকে কোনো ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে ভালো লাগে না। আর তুমি তো সেখানে এই কারণেই সকলকে এড়িয়ে চলতে, তাই না?’ বলে থামল এবং দূরে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে লম্বা এক শ্বাস ফেলে বলল,’আর কারোও যদি বলার মতো এমন কোনো ঘটনা থাকেও। তাহলে আমি আশা করি যে সে যখন আমাকে নিজে থেকেই বিশ্বাস করে বলতে পারবে তখনই বলবে।’
রায়েদ আবার হাঁটতে শুরু করল এবং বলল,’চলো তোমাকে আমি কিছু বলি।’
মাহীনও ঘুরে ওর সাথে হাঁটতে শুরু করলো। ওরা ব্রিজের শেষ প্রান্তের দিকে এগিয়ে চলেছে। ব্রিজের ওপর অল্প কয়েকজন মানুষ আছে। রায়েদ প্রলম্বিত শ্বাস ফেললো। তারপর শান্ত কন্ঠে বলতে শুরু করল,
‘চার বছর আগের ঘটনা। ঘটনাটা এমন ভাবে শুরু হয়েছিল যেমনটা বেশির ভাগ পরিবারের রোজকার ঘটনা। বলেছিলাম না আমরা আগে বাবার সাথে প্রায়ই মাছ ধরতে যেতাম। পিকনিকেও যেতাম। কিন্তু সেই সময় বাবা কাজের চাপে খুব একটা সময় দিতে পারছিলেন না। বাবার শরীরটাও একটু খারাপ ছিলো। তো বেশ কয়েকমাস ধরে আমি অপেক্ষা করছিলাম আমার জন্মদিনের দিনটার জন্য। বাবাও আমাকে বলেছিলেন এট লিস্ট ওই দিনটায় উনি আমাকে এবং রাবিতকে নিয়ে বাইরে যাবেন। যদিও জন্মদিন আমাদের বাসায় কখনোই পালন হতো না। আমিও জন্মদিন প্রিয় মানুষ ছিলাম না। যাই হোক, এখন সেইদিনটা আসলোও। কিন্তু বাবা আবার সেইদিন একটু অসুস্থ ছিলেন। তাই দেখে আমি আর কিছু বলিনি। তবে একটু মনতো খারাপ ছিলোই। তাই বাবা আবার আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। এদিকে মা রাগারাগি করছিলেন অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও বাইরে যাওয়ার জন্য। এবং আমাকেও বকা দিচ্ছিলেন। যদিও আমি বাবাকে বলছিলাম না থাক দরকার নেই যাওয়ার। তবুও উনি আমাকে নিয়ে বের হয়েছিলেন। মা রাবিতকে আসতে দেননি সাথে। এবং জানো কী হয়েছে?’ বলে থামল। মাহীনের হৃদয়ে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। ও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে ও কী শুনবে এর পর। অস্থিরতা এবং অজানা এক ক্লেশপূর্ণ অনুভূতি চোখের কোণে পানির সঞ্চার করছে। ঘনঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রায়েদের দিকে।

রায়েদ বলল,’আমাদের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছিল। এবং অদ্ভুত ব্যাপার কী জানো? আমি বেঁচে গিয়েছিলাম কিন্তু আমার বাবা বাঁচতে পারেননি।’
এবার মাহীনের চোখের পানি টলমল করতে করতে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরল। ও অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। রায়েদ ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর বলল,’কি হচ্ছে এসব? আমি আমার দুঃখের কাহিনী শোনাচ্ছি আর কানছো কিনা তুমি?’
মাহীন কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলল,’আমার চোখে পানি আসলে আমি কী করবো? আমি সহজে ইমোশনাল হয়ে যাই।’
রায়েদ বলল, ‘ওহ তাহলে তো আর বলা যাবে না। তোমার এই ঘটনা তো আমি জানতাম না।’
মাহীন হালকা হাসল। তারপর নিজের নাক টেনে বলল,
‘আচ্ছা এটা তো বলো এসবের মাঝে তোমার কী দোষ ছিলো যে মিসেস রহমান তোমার সাথে এমন আচরণ করেন?’
রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘আমার মা এই ঘটনার পর মেন্টালি উইক হয়ে পরেন। একটা ট্রোওমার মধ্যে চলে যান। এবং এরপর হাসপাতাল থেকে যখন বাসায় ফিরি তখন থেকেই উনি আমাকে দেখতে পারেন না। ওনার কথা হচ্ছে, আমার বাবা আমার জন্যেই মারা গিয়েছেন।’ বলে থামল। এখন রায়েদের চোখের কোণে ক্ষীণ পানির কণা জমেছে। অনেক বছর পর একেএকে প্রতিটা স্মৃতি স্বরণ করে সেই সময়ের মতোই মনটা ক্লেশপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবুও বলে গেল,’এমনকি উনি তো এটাও বলেছিলেন যে, আমার বাবার জায়গায় আমি কেন মরে গেলাম না..মাহীন বলল,
‘থাক বুঝেছি। আর বলা লাগবে না।’ মাহীন রায়েদের দিকে তাকাল। রায়েদ অন্যদিকে চেয়ে আছে। মাহীন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখনই রায়েদ আবার বলল,’কিন্তু এটাই কী অনেকাংশে সত্যি না? আসলেই তো আমিও যদি সেইদিন মরে যেতাম তাহলে আমাকে আর এসব সহ্যই করতে হতো না। অথবা আমার বাবার বদলে আমি মারা গেলে এট লিস্ট বাবা তো বেঁচে থাকতেন।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের চোখের পানি মুছল। তারপর আলতো করে রায়েদের চোয়াল ধরে এদিকে মুখ ঘোরাল। বলল,’আমাকে সবাই পাগল বলে, এদিকে তুমিও যে পাগল হয়ে বসে আছো সেই খবর আছে? এখানে কিভাবে তোমার দোষ ছিলো আমাকে বুঝাও? তোমার বাবার মৃত্যুতে তোমার দোষ ছিলো না এবং এতে কারোরই কোনো হাত ছিলো না। আল্লাহ যখন যাকে নিয়ে যেতে চায় তাকে নিয়ে যায়। এতে কী কারোর কিছু করার থাকে? তোমার বাবার আয়ু এই পৃথিবীতে অতটুকুই ছিলো। এটা তো তোমার দোষ না।’ বলে থামল। তারপর আবার বলল,’আর মিসেস রহমান এমনটা কেন বলেন জানো? কারণ আমাকে ভুল বুঝো না কিন্তু উনি আসলে এখনো মানসিক ভাবে স্টেবল নেই। সেই ট্রোওমার পর তার মাইন্ড এক জায়গায় আটকে গিয়েছে। এখন কী হয়েছে সেটা তো আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। কিন্তু তার জন্য তুমি নিজেকে দোষারোপ করছো কেন?’
রায়েদ চোখ বুঝল। কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকিয়ে বলল,’এটা আমার মাথায়ও এসেছে। কিন্তু যখন এসব ঘটেছে না তখন আমাদের বয়স অনেক কম ছিলো। ওনাকে চাইলেও কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে পারতাম না। কিন্তু যেটা যেভাবে হয়ে গিয়েছে সেটাকে তো সেভাবেই মেনে নিতে হবে।’
মাহীন রায়েদের হাত থেকে সেই চিরকুটটা নিয়ে ভাজ করল। বলল,’এটা আমার কাছেই থাকুক। এটার এখনো কাজ বাকি আছে। যাই হোক এখন আমার কথা শোনো এই ব্যাপার গুলোয় হয়তো আমার করার মতো কিছুই নেই। কারণ সবকিছুতে তো আর চাইলেও সাহায্য করা যায় না। তবে আমি কিন্তু তোমার পাশেই আছি সে যাই হয়ে যাক না কেন।’
রায়েদ হালকা হাসল। বলল,’জানি।’ তারপর বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল দুইজনই। অবশেষে রায়েদ বলল,
‘এখন বিশ্বাস হয়েছে যে আমি তোমাকে আসলেই বিশ্বাস করি?’
মাহীন ভ্রু কুঁচকে বলল,’আমি কখন বলেছি যে তোমাকে বিশ্বাস করি না। ওই দিন না নৌকায় বললাম।’
রায়েদ বলল,’আমি আমার তোমাকে বিশ্বাস করার কথা বলছি।’
মাহীন অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে বলল, ‘মানে তুমি বলতে চাচ্ছো যে এতক্ষণ তুমি আমাকে বিশ্বাস করো এটাই বোঝাতে চাচ্ছিলা?’
রায়েদ শ্রাগ করে বলল,’আর নয় তো কী?’ তারপর একটু থেমে বলল,’যাই হোক দেখো তো ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেলো আমি তোমাকে কাঁদিয়ে দিলাম।’
মাহীন বলল,’ইশ এটা কোনো কথা হলো? সপ্তাহে তিন চারবার তো কাঁদা আমার জন্য কমন ব্যাপার।’
রায়েদ ভ্রু কুঁচকে বলল,’কী? তোমার জীবনে আবার কী এমন হয় যে সপ্তাহে তিন চারবার তোমাকে কাঁদতে হয়?’
মাহীন অন্য দিকে চেয়ে বলল,’না থাক। ওটা বলাটা অনেক ইমব্যারেসিং।’
‘কী এমন ইমব্যারেসিং ঘটনা ঘটে? বলো তো?’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘হাসবে না তো?’
‘নাহ একদম হাসবো না।’
‘ আমার বই পড়ে এবং মুভি দেখে চোখে পানি আসে।’
রায়েদ হাসল। কিন্তু মাহীন ওর দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে চাইতেই হাসি থামিয়ে বলল,’মুভি দেখে আর বই পড়ে? সুপার ইমোশনাল তো তুমি।’
মাহীন বিব্রতভঙ্গীতে বলল,’তা বটে।’

দূর দিগন্তে সমুদ্র ও আকাশের মিলন স্থলে সূর্য অর্ধেক ডুবে গিয়েছে। বাকি অর্ধেকটা লাল টকটকে থালার মতো উঠে আছে। লাল টকটকে সূর্যের আলোয় সাগরে কাঁপা কাঁপা লালচে আলো পরেছে। আকাশের ক্যানভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বড় বড় ভেলার মতো মেঘগুলোও সোনালী কমলা রঙ ধারণ করেছে।
দূরে সূর্যের ওপর দিয়ে একঝাঁক সিগাল উড়ে যাচ্ছে।

ইনশাআল্লাহ চলবে।

#এল_এ_ডেইস
পর্ব ৩৩
লেখনী মাহীরা ফারহীন

মাহীন ধুপধাপ পদক্ষেপে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামল। তারপর একপাক ঘুরে বলল,
‘আহ! আমার পা দেখো মা একদম ফিটফাট! অথচ পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে আমি পাহাড়েই চরতে পারলাম না। এটা কোনো কথা হলো?’
মিসেস নাসরিন একটা ডিম ফাটিয়ে ফ্রাইপ্যানে দিয়ে বললেন,’তুই প্রতিদিন সকালে একই কথা বলিস। তুই না পাহাড়ে না উঠতে পারার ক্ষতি পূরণ স্বরুপ অন্য আরেক পাহাড় চূড়া থেকে সূর্যোদয় দেখে এসেছিস? তাহলে এত ঘ্যানঘ্যান করিস কেন?’
মাহীন রান্নাঘরের বারের ওপর উঠে বসলো। মিসেস নাসরিন বললেন, ‘আহা এখানে বসিস না। চুলার ওপর পরে যাবি তো।’
মাহীন চোখের মণি ঘুরিয়ে বলল,’কিচ্ছু হবে না মা।’
মিসেস নাসরিন ডিমের মধ্যে জিরা গোলমরিচ গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়ে বললেন,
‘আচ্ছা আজকাল তুই সন্ধ্যার পর বাসায় আসিস কেন বলতো? কতবার বলেছি না সূর্য ডোবার আগে বাসায় আসবি।’
মাহীন লম্বা এক শ্বাস ফেলে বলল,
‘উম মা ওইদিন ক্যারোটের সাথে আইসক্রিম খেতে গিয়েছিলাম। তারপর একটা ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম।’
মিসেস নাসরিন ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কোন ফ্রেন্ডের বাসায়?’
মাহীন ভাবলেশহীন ভাবে বলল,’রায়েদের।’

মিসেস নাসরিন অবাক হয়ে বললেন,’রায়েদের? ওর বাসা কোথায়?’

‘পিকো বুলেভার্ডে।’

মিসেস নাসরিন ডিম চুলা থেকে নামিয়ে নিলেন। তারপর বললেন,’ওর বাসায় কে কে আছে?’
মাহীন চোখ সরু করে মায়ের দিকে তাকাল। তারপর বলল,’তোমার রায়েদের প্রতি এত আগ্রহ কেন?’
মিসেস নাসরিন নির্বিকার কন্ঠে বললেন,’কারণ ও ভালো ছেলে।’
মাহীন বলল,’ওহ তাই। তো দুনিয়াশুদ্ধ ছেলেরা খারাপ?’
মিসেস নাসরিন বিরক্ত কন্ঠে বললেন,’তোর রায়েদের সাথে সমস্যাটা কী? তোরা আসলেই বন্ধু না শত্রু?’
মাহীন গাঢ় কন্ঠে বলল,’আমরা বন্ধু।’

মিসেস নাসরিন বললেন,’আচ্ছা এটা বল আর দ্বিতীয় দিন কোথায় গিয়েছিলি?’
মাহীন বললো,’রায়েদের সঙ্গে প্যাসিফিক পার্কে।’
মিসেস নাসরিন দুটো প্লেট মাহীনের হাতে ধরিয়ে দিলেন। এবং নিজে দুটো প্লেট নিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন,’ওহ আচ্ছা। একবার তোর কথা শুনলে মনে হয় তুই ওকে দেখতে পারিস না আবার আরেক কথা শুনলে মনে হয় ওই তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।’
‘বেস্ট ফ্রেন্ডদের মাঝে তো শত্রুতা লেগেই থাকে।’ সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলল নাইম। মাহীন বাঁকা হেসে বলল,’হ্যা খুব জানি সারা জীবন নিজের শত্রুকে বেস্ট ফ্রেন্ড যে বলে আসছিস। আজব তুই।’
তখনই মি.মোর্শেদ বেডরুম থেকে বের হলেন। এবং ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন। মিসেস নাসরিন সকলের নাস্তাগুলো জায়গা মতো রেখে দিয়েছেন। মাহীন নিজের চেয়ারে বসল। নাইমও ওর পাশে এসে বসল। মি.মোর্শেদ সকালের খবরের কাগজ খুলে বসেছেন। নাইম মৃদু কন্ঠে বলল, ‘এ্যই তুই সেই ঘটনা আমাকে কখন বলবি?’
মাহীন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘কোন ঘটনা?’
‘আরেহ ওই যে তোর কালো চিরকুটওয়ালা আসল ঘটনা টা। বল না ওটা আসলে কার ঘটনা?’
মিসেস নাসরিন বললেন,’এ্যই কিসের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছিস? আগে নাস্তা কর।’
নাইম টোস্টে এক কামড় দিয়ে বলল,’মাহীনের একটা ফ্রেন্ডের সাথে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। সেটাই শুনাবে বল…মাহীন টেবিলের নিচ দিয়ে ওকে লাথি দিতেই নাইম থেমে গেল। এবং কেশে উঠল। মিসেস নাসরিন উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,’ওফ! খাওয়ার সময় এত কথা বলিস কেন?’
মি.মোর্শেদ পেপারটা ভাজ করে রেখে বললেন,
‘কেমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে?’
মাহীনের ইচ্ছা করল নাইমকে এখনই আরো কয়েকটা কিল ঘুসি মারতে। মনে মনে ভাবল, ওফ ভাইয়া আমাকে সবসময় ঝামেলায় ফেলে। এখন আমি কী ঘটনা বলবো? কী মুশকিল।’
ভাবতে ভাবতেই বললো,’তেমন কোনো ঘটনা নয়। ও একটু বেশিই বারিয়ে বলে।’
মি.মোর্শেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর সকলে নাস্তায় মনোযোগ দিলো। মি.মোর্শেদ অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলেন। মাহীনও তৈরি হয়ে নিচে নামছে। নাইম ইতোমধ্যেই ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে গেছে। মাহীন ঘড়ির দিকে তাকাল। এখনো ক্লাস শুরু হতে চল্লিশ মিনিট বাকি। রায়েদের কাছ থেকে সেই ঘটনা শোনার পর তিনদিন পার হয়ে গিয়েছে। তবে ও সেই কথা এখনো কাউকেই বলেনি। নাইমকেও না। মিসেস নাসরিন এখন সোফায় বসে খবরের কাগজটা পরছেন। মাহীন মায়ের পাশে ধপ করে বসে পরল। তারপর জিজ্ঞেস করল,
‘টঙ্কস কোথায়? ওকে সকাল থেকে দেখলাম না।’
মিসেস নাসরিন বললেন, ‘ও তো বাগানে। ঘাস খাচ্ছে।’

মাহীন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘ঘাস কেন খাচ্ছে?’
‘বোধহয় পেট খারাপ হয়েছে। তাই।’
মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। তারপর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। মিসেস নাসরিন বললেন, ‘কিরে তুই এখানে বসে আছিস কেন? স্কুল যাবি না?’

মাহীন বলল,’হ্যা যাবো তো। এখনো সময় আছে হাতে। আচ্ছা মা তোমাকে একটা কাহিনী শোনাই?’
মিসেস নাসরিন খবরের কাগজটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললেন,’কাহিনী? তুই এখন স্কুল বাদ দিয়ে কাহিনী শোনাবি?’

‘হ্যা।’

‘ঠিক আছে শোনা কি শোনাবি।’
মাহীন এবার রায়েদের বলা পুরো ঘটনা টা বলতে শুরু করলো শুধু কার ঘটনা এটা বাদে।’ বেশ কিছুক্ষণ ধরে মিসেস নাসরিন মনোযোগ সহকারে শুনলেন। ঘটনা বিস্তারিত খুলে বলার পর মিসেস নাসরিন চিন্তিত কন্ঠে বললেন,’আরেহ তখন হোক, এখন হোক আর দুই বছর পরই হোক না কেন এই সমস্যার সমাধান একমাত্র এই মহিলাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েই হতে পারে।’
মাহীন হতাশ কন্ঠে বলল,’কিন্তু ওদেরও বয়স অনেক কম ছিলো সে সময় ফলে সেটা ওদের হাতে ছিলো না।’

‘আর ওনার শাশুড়ী?’

মাহীম দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল,’প্রথমত ওনার শাশুড়ীও ছেলে হাঁড়া হয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন। তাছাড়া তার বয়সও হয়েছে। হয়তো সেসময় তার এমন অবস্থাই ছিলো না যে সে তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে চিকিৎসা করবে।’
মিসেস নাসরিন গম্ভীর ভাবে সায় জানিয়ে মাথা নাড়লেন। ওনাকে দেখে মনে হলো তিনি খুব গভীর ভাবে কিছু একটা চিন্তা করছেন। মাহীন উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মিসেস নাসরিন কিছুক্ষণ পর বললেন,
‘কিন্তু দেখ হয়তো তার মানসিক অবস্থাটা খুব একটা বড় ধরনের কিছু একটা নয়। তবে তার প্রভাবে কিন্তু তার ছেলের জীবনটা দূর্বিষহ হয়ে গিয়েছে। তার জীবনের চারটা বছর এভাবে কষ্টদায়ক ভাবে কাটিয়েছে। সামনে আরোও কত কী সহ্য করতে হবে কে জানে।’
মাহীন উদ্বিগ্ন গলায় বলল,’কিন্তু মা ওকে কী কোনো ভাবে সাহায্য করা যায় না?’
মিসেস নাসরিন মাহীনের দিকে দৃষ্টি ফেরালেন। চোখ ভরা আগ্রহ এবং এক ক্ষীণ বেদনার রেশ নিয়ে তাকিয়ে আছে ও। মিসেস বললেন,’দেখ এখন বললাম তো একটাই উপায় তোর ফ্রেন্ডের মাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে হবে। এবং অবশ্যই যেই পরিস্থিতিতে তোর বন্ধু আছে সবচাইতে ভালো হয় যদি সেই সাইকিয়াট্রিস্ট পার্সোনাল ভাবে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করে।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিন্তিত স্বরে বলল,’সেটাই তো সমস্যা! কোন সাইকিয়াট্রিস্ট পাবে ও যে ব্যাপারটা পার্সোনাল ভাবে হ্যান্ডেল করবে? তাও তো ও নিজে কিছু করতে পারবে না কারণ ওর মায়ের সমস্যা তো ওরই সাথে।’
মিসেস নাসরিন বললেন, ‘আরেহ সাইকিয়াট্রিস্ট তো আমাদের প্রতিবেশীতেই আছে। ওর সাথে পরিচয় করায় দে তোর বন্ধুকে।’
মাহীন ভ্রু কুঁচকালো। বলল,’প্রতিবেশী বলতে? কোন প্রতিবেশী আবার সাইকিয়াট্রিস্ট? জানি না তো।’
মিসেস নাসরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মাহীনের দিকে এবং বললেন,’কী বলিস? এতদিন ধরে এখানে আছিস আর তুই জানিস না? ওই যে মহিলাকে দেখেছিস না যে তার বাচ্চাকে প্রায়ই আমাদের বাসায় রেখে যায়।’
মাহীন ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল, ‘ওই মহিলা সাইকিয়াট্রিস্ট?’
‘হ্যা। এখন আসলে মহিলা কেমন মানুষ আমি জানি না। কিন্তু তার সাথে তুই পার্সোনাল ভাবে কথা বলতে পারিস ব্যাপারটা নিয়ে। তাই বললাম।’
মাহীন উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, ‘ওহ মা অসাধারণ আইডিয়া। আমি তো জানতামই না মহিলার কথা।’ বলেই উঠে দাঁড়াল। এবং স্কুল ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বলল,’আচ্ছা দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম।’ বলেই দরজার দিকে এগিয়ে গেল। মিসেস নাসরিন উচ্চস্বরে বললেন,’তোর সেই বন্ধু কী আমাদের বাসায় এসেছিল একবারও?’
মাহীন জুতা পরতে পরতে ভাবল, এসেছিলোও এবং তোমার ফেভারিট মানুষ।’ মুখে বলল,
‘এখন বলা যাবে না।’ বলেই দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল। মিসেস নাসরিন ভাবলেন, ‘আল্লাহই জানে ওর কোন ফ্রেন্ড এত খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাহীনের ভাগ্যেই এরা এসে জোটে কেন?’

মে মাসের গরম। কড়া রোদ মাথার ওপর। তবুও হালকা বাতাসে দুলছে লম্বা লম্বা তালগাছগুলো। আকাশের অনেক ওপরে দু’একটা ঈগল উড়ে যেতে দেখা যায়। আজকাল জাম যেন বেড়েছে আরো। যত দিন যায় সব জায়গায়ই মানুষ বাড়তে থাকে। ফলে গাড়িঘোড়াও বাড়ে এবং সেই সাথে বেড়ে যায় যানজটও। মাহীন সাইকেল চালিয়ে এখন আট মিনিটে স্কুল পৌঁছল। যেখানে পূর্বে ছয় মিনিট সময় লাগত। মাহীন সাইকেল পার্কিং-এ রেখে স্কুলে প্রবেশ করল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চত্ত্বর পার করে স্কুল বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করল রোদ হতে বাঁচতে। তারপর জোরে হাঁপাতে হাঁপাতে সিঁড়ি বেয়ে দুইতলায় উঠে আসতেই দেখলো সামনে থেকে রাবিত হেঁটে আসছে। মাহীন সামনে এগিয়ে যেতেই রাবিত হাসি মুখে বলল,
‘হাই!’
মাহীন শুধু ক্লান্ত ভাবে হাত নাড়ল। তারপর ক্লান্ত পদক্ষেপে হেটে যাচ্ছে। রাবিত পেছনে ঘুরে ওর সাথে সাথে হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘আচ্ছা আমাকে একটা সাহায্য করবা?’
মাহীন ম্লান কন্ঠে বলল,’নিজেই ঝামেলার মধ্যে আছি। তোমাকে আর কী সাহায্য করতে পারি?’
রাবিত বলল,’দেখো যেভাবেই হোক আমার এবং ক্যারোটের একটা ডেট ফিক্স করে দাও।’
মাহীন হেসে উঠল। বলল,’ডেট? কিন্তু আমি তোমাদের ডেট কিভাবে ফিক্স করতে পারি?’
রাবিত বলল,’দেখো এখনতো ক্যারোট তোমাকে বেশ এডমায়ার করে। তাই তোমার জন্য এটা সহজ হবে।’
মাহীন ম্লান হেসে বলল,’এখন হয়তোবা। কিন্তু এর জন্য একটা শর্ত আছে। অন্য আর কয়েকজনকেও বলতে হবে আমাকে। আমার একা কিছু করার এনার্জি নেই।’
রাবিতকে দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে এই ওয়াদা তুলে নিলাম। কিন্তু ক্যারোটকে বলতে পারবা না এই ওয়াদা থাকবে।’
মাহীন বলল,’চিন্তা করো না। ও জানবে না।’
রাবিত এবার জিজ্ঞেস করল,’আচ্ছা সেদিন ক্যারোট আমাদের বাসায় এসেছিল কেন?’
মাহীন বলল,’ওহ হ্যা ওইটা তো বলাই হয়নি। ক্যারোট বলছিল যে, ওর মনে হয় তুমি ওকে পছন্দ করো। যদিও এটা ক্লিয়ার করে বলেনি যে ও তোমাকে পছন্দ করে কিনা। এইজন্যই তোমার সম্পর্কে এবং তোমার পরিবার সম্পর্কে জানতে তোমার বাসায় গিয়েছিল।’
রাবিত হাসি মুখে বলল,’ওয়াও গ্রেট। আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।’ বলেই তারপর অন্য একটা কক্ষে প্রবেশ করল। এবং মাহীন আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়ে আরেকটা ক্লাসে প্রবেশ করল। ক্লাসে প্রবেশ করেই দেখল, ওর টেবিলের পাশের টেবিলে সাইলোহ। সামনের টেবিলের ওপর নায়েল এবং পেছনের টেবিলের ওপর লিম জু বসে আছে। মাহীন এগিয়ে গিয়ে ওদের মাঝে নিজের ডেস্কে বসে পরল। এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সাইলোহ বলল,’হ্যালো! তুমি তো দেখি দিনের শুরুতেই ক্লান্ত।’

মাহীন ম্লান কন্ঠে বলল, ‘যেই গরম ক্লান্ত হবো না?’

লিম বলল,’হ্যালো মিস ফারুকী!’

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘হ্যালো মিস ফেন।’

লিম বলল,’এই এক মিনিট। কি বললা তুমি?’

মাহীন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘হ্যালো মিস ফেন।’

লিম জু হাসল। এবং বলল,’এটা আমার পদবি না।’

নায়েল বলল,
‘তাহলে কী তেমার পদবি?’

লিম বলল,’চাইনিজ নামের ক্ষেত্রে প্রথমে পদবি থাকে এবং পরে ডাক নাম।’

নায়েল বিস্মিত হয়ে বলল,’তার মানে এতদিন আমরা তোমাকে পদবি ধরে ডেকেছি?’

লিম হাসতে হাসতে বলল,’হ্যা। লিম আমার পদবি। যদিও এখানে ছোট বেলা থেকে এটাই সবাই ডাক নাম হিসেবে ডাকে বলে অভ্যাস হয়ে গিয়ছে।’

সাইলোহ ভ্রু উঁচু করে বলল,’ওহ ওয়াও কী সারপ্রাইজিং একটা ব্যাপার।’

মাহীন বলল,’বাই দ্যা ওয়ে। রাবিতের একটা হেল্প লাগবে।’

সাইলোহ বলল,’ওর আবার কী হেল্প লাগবে? আর সরাসরি আমাদের এসে বললো না কেন?’

মাহীন বলল,’উম কারণ এটার সারাংশটা আমিই জানি। যেটা হলো ওর ক্রাস কে।’

নায়েল বলল,’কে ওর ক্রাস?’
মাহীন হাসল। এবং বলল,’আমাদের সার্কেলের মধ্যেই একজন।’

সাইলোহ লিম জুর দিকে ইশারা করে বলল, ‘ও?’
লিম জু ভয়ার্ত চেহারা করল। মাহীন বলল,’না। ক্যারোট।’

নায়েল এবং সাইলোহ বিস্মিত হয়ে চাইল। তবে লিম জু করতালি দিয়ে উঠল। নায়েল বলল,’তো এখানে ওর কী ধরনের সাহায্য প্রয়োজন?’

মাহীন বলল,’ওকে ক্যারোটের সাথে ডেট ফিক্স করে দাও। এবং আমার জান ছাড়ো।’ বলেই হতাশ ভাবে ডেস্কে মাথা ঠেকাল। সাইলোহ জিজ্ঞেস করল,’আমরা ওর ডেট ফিক্স করবো? কিন্তু কিভাবে?’

মাহীন ডেস্ক থেকে মাথা না তুলেই বলল,’যেভাবে জেন ও লিও কে ডেটে পাঠিয়েছিলা সেভাবে। আমি আর কিছু জানি না। এখন এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
লিম উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল, ‘ওহ ওয়াও। আমি তো রেডি সাহায্য করার জন্য।’
.
.
.
.
লাঞ্চ ব্রেক চলছে। রায়েদ ক্যাফেটেরিয়ায় ফুড কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র লাঞ্চ টাইম শুরু হয়েছে। এই সময় সকল ছাত্রছাত্রীরাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে সোজা ক্যাফেটেরিয়ার দিকে ধেয়ে আসে। ফলে মুহূর্তেই ক্যাফেটেরিয়া হইচইপূর্ণ হয়ে উঠে। রায়েদ এক কাপ কফি নিলো এবং স্যান্ডউইচ নিলো। ও ঘুরে দাঁড়াতে যাবে তখনই দেখলো মাহীন কাউন্টারের দিকে হেঁটে আসছে। রায়েদকে দেখা মাত্র আরেকটু দ্রুত গতিতে এগিয়ে এলো। এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
‘মেরহাভা!’

রায়েদ বলল, ‘মেরহাভা!’

মাহীন এবার ক্যাফেটেরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একটা চিজবার্গার।’

তারপর রায়েদের দিকে ঘুরে বলল,’তুমি কী এখানে বসছো না?’

‘না। আমি লাইব্রেরিতে ফিরে যাবো।’

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ওহ হ্যা আবার লাইব্রেরি।’

ক্যাফেটেরিয়ান মাহীনকে ওর চিজবার্গার প্যাকেট করে ধরিয়ে দিলেন। মাহীন বিল পরিশোধ করে বলল,’চলো না এখানেই বসি।’

রায়েদ বলল,’না চলো লাইব্রেরিতে বসি। ওটা আরো শান্তিপূর্ণ। এখানে অতিরিক্ত হইচই হয়।’

মাহীন বলল,’ঠিক আছে। তবে জানো লাইব্রেরি বিল্ডিং এত দূরে ওখানে যেতে হবে ভাবলেই মনে হয় এখান থেকে নিউইয়র্ক যেতে হবে।’

রায়েদ হালকা হাসল। ওরা দুজন ক্যাফেটেরিয়া ত্যাগ করল নিশ্চুপ ভাবে। করিডর ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাহীন বলল,’আচ্ছা তুমি কি বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাও?’

‘উম..টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং।’

মাহীন প্রসন্ন হেসে বললো, ‘ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট।’

‘আর তুমি?’ জিজ্ঞেস করল রায়েদ।

মাহীন বলল,’আমি সাইকোলজি।’

ওরা গেট দিয়ে বের হচ্ছে মাত্র। রায়েদ বলল,
‘এইজন্য সাইকোলজি নিয়ে এত ঘাটাঘাটি করো।’

মাহীন বলল,’তা বৈকি।’

ওরা এরপর লাইব্রেরি পর্যন্ত আর কোনো কথা বললো না। সোজা লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করে তিনতলায় উঠে গেল। লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে কোণার সেই টেবিলের সামনে পৌঁছল। মাহীন ওর খাবারের প্যাকেটটা টেবিলে রেখে বলল,’আহা কতদিন এখানে আসিনি।’

‘কেউ তো তোমাকে নিষেধ করেনি আসতে।’ মাহীনের হঠাৎ চোখ পরল রায়েদের বাম হাতে। ফট করে রায়েদের হাত ধরে ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘তোমার হাত ছিলে গিয়েছে কী করে?’ বলে রায়েদের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল। রায়েদ বলল,’আজকের সকালে আমার সাইকেলের চেইন পরে গিয়েছিল। সেটা ঠিক করতে গিয়ে খোঁচা লেগেছে।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিরক্ত কন্ঠে বলল,’ কিছুই লাগাওনি ছিলে যাওয়া জায়গায়। নিজের খেয়াল রাখো না কেন?’ বলে ওর হাত ছেড়ে দিলো এবং নিজের ব্যাগ খুলতে ব্যস্ত হলো। রায়েদ সুক্ষ্ণ ফিচেল হাসি দিয়ে বলল,
‘তুমি আছো না আমার খেয়াল রাখার জন্য।’
মাহীন ওর ছোট ফার্স্টএইড বক্সটা বের করে টেবিলে রাখল। এবং বিরক্ত কন্ঠে বলল,’এটা ফ্লার্ট করার সময় না।’
রায়েদ আমুদে গলায় বলল, ‘তাহলে কখন ফ্লার্ট করার সময়?’
মাহীন ফার্স্টএইড বক্সটা খুলে স্যাভলন বের করে তীব্র কন্ঠে বলল,’তোমার স্বপ্নে।’। তারপর একটু থেমে আবার বলল,’আমার ফার্স্টএইড বক্সের সব এক্সটেনশনারি তোমার চিকিৎসা করতে করতেই শেষ হয়ে যাবে।’
রায়েদ বলল,’ওহ তাই নাকি? কিন্তু এটাই তো দ্বিতীয় বার তুমি আমার চিকিৎসা করছ।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘তোমার মনে আছে মার্চের প্রথম দিকে একদিন রাবিত তোমার চিকিৎসা করতে একটা ফার্স্টএইড কিট এনেছিল?’
রায়েদ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,’হ্যা। মনে আছে।’

‘ওটা আমার ছিলো।’ বলে মাহীন তুলায় স্যাভলন দিয়ে রায়েদের হাতের ছিলে যাওয়া স্থানটায় ছোঁয়াল।

রায়েদ বলল,’কিন্তু এই বক্স এবং সেই বক্স তো একই না।’

মাহীন বলল,’কারণ এটা অন্য বক্স।’

‘তুমি এটা পাল্টেছ কেন?’

‘কারণ আপনার ভাই কখনো আমার ফার্স্টএইড বক্সটা ফেরতই দেয়নি।’
রায়েদ হাসল। মাহীন ছিলে যাওয়া স্থানটা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিল। তারপর একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। রায়েদ ওর পাশের চেয়ারেই বসল। মাহীন স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করল। তারপর ওরা লাঞ্চ করতে বসল।
কিছুক্ষণ পর মাহীন বলল, ‘আচ্ছা প্রথম প্রথম আমি যে শোনা যেত তুমি নাকি কিছুদিন পরপর এদিক ওদিক থেকে মারামারি করে আসো। সেসবের রহস্য কী?’
রায়েদ কিছু ভাবলো। তারপর বলল, ‘মাঝেসাঝে কী মানুষের হাতে পায় লাগে না? কেটে যায় না? আমি প্রায়শই ম্যালিবু টিলা অথবা নিকটস্থ পাহাড়গুলোয় যেতাম। এবং গত বছর থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত বোধহয় তিনবার পা মচকেছে আমার। তার সঙ্গে গত বছর বিলের সঙ্গে মারামারি লেগে গিয়েছিল। এখন সবকিছু মিলিয়ে একটা গুজব ছড়িয়েছিল যে আমি নাকি কার না কার সাথে মারামারি করে আসি।’
মাহীন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। প্রসন্ন কন্ঠে বলল,
‘ওফ পারেও এরা গুজব ছড়াতে। এনিওয়েজ এতদিনে আমার কনফিউশান ক্লিয়ার হলো।’

রায়েদ বলল, ‘কিন্তু একটা ব্যাপার এখনো ক্লিয়ার হয়নি।’

‘কী?’

‘সেই প্রথম যেদিন তুমি আমাকে ফোন দিয়েছিলা তখন কিন্তু আমার ফোন রিসিভ হয়েছিল।’

মাহীন বিচলিত হেসে বলল, ‘হ্যা জানি। একটা কাঁচ ভাঙ্গার শব্দও হয়েছিল। কিন্তু এই বিষয়টা যেন উঠে না আসে তাই সেই কথা এড়িয়ে গিয়েছিলাম।’

‘এটা কোনো কথা হলো। কে এমন চিন্তা ভাবনা করে?’

মাহীন হেসে বলল, ‘আমি! যাই হোক এটা বলো যে কাঁচ ভাঙ্গার ঘটনাটা আবার কী?’

‘কী আবার তোমার ফোনটা মা ধরেছিলেন। এবং চমকে উঠে আমার হাত থেকে গ্লাস পরে গিয়েছিল। এবং পায় ফুটে গিয়েছে। তাই তো পরের দিন খোঁড়ায় খোঁড়ায় হাঁটছিলাম।’

‘ইশ আমি তোমাকে কী বিপদে ফেলে দিয়েছিলাম না?’
রায়েদ হাসল। নিজেট বার্গারে কয়েক কামড় বসিয়ে মাহীন আবার বলল, ‘আচ্ছা আমাদের পিকনিকে যেসব ছবি তোলা হয়েছে।’ বলে থামল।

রায়েদ বলল,’হুম?’

‘সেগুলো সবই গ্রুপ পিকচার। শুধু আমাদের দুইজনের একটা ছবিও নাই। এটা কোনো কথা হলো!’

রায়েদ বলল,’হুম তো গ্রুপ ছবির মধ্যে থেকে আমরা দুজন কোথাও পাশাপাশি দাড়িয়ে থাকলে সেটা কেটে নাও।’

মাহীন বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আরেহ এত ঝামেলা করা লাগবে কেন? আমরা জীবিত আছি কী করতে?’

রায়েদ বলল, ‘তাও ঠিক তাহলে কখন ছবি তুলবা?’

মাহীন নিজের সেলফোনটা বের করতে করতে বলল,
‘এখন।’

রায়েদ অবাক হয়ে বলল,’এখন কেন? দেখো আমার সেলফি ভালো লাগে না।’

মাহীন বলল,
‘আমারও লাগে না। কিন্তু এখানে আর কে আছে আমাদের ছবি তুলে দেওয়ার জন্য?’

‘ওয়েল দেখো আমরা প্ল্যান করে হ্যাঙ্গআউট এ যেতে পারি এবং সেখানে কাউকে বলে ছবি তুলিয়ে নিব। কি বলো?’

মাহীন মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,’চমৎকার! কিন্তু কোথায় যাবো?’

‘তুমি ঠিক করো।’ কফিতে এক চুমুক দিয়ে বলল রায়েদ। যদিও এতক্ষণে হট কফি কোল্ড কফি হয়ে গিয়েছে। মাহীন কিছুক্ষণ ভেবে বলল,’ডিজনিল্যান্ড?’

রায়েদ হেসে উঠল। বলল,’ওটা বাচ্চাদের জায়গা। আমি ছোটবেলায় যেতাম।’

মাহীন হাসল এবং বলল, ‘ওখানে বুড়োরাও ঘুরতে যায়। এবং প্রতিটা ডিজনি ফ্যানের স্বপ্ন থাকে একবার হলেও ডিজনিল্যান্ডে যাবে।’

রায়েদ হাসি হাসি মুখেই বলল,’তা বটে। তো তুমি এখনো ডিজনি মুভি দেখো?’

মাহীন বলল,’ছোটবেলায় দেখতাম। এখনো কয়েকটা মুভি আছে মাঝে মাঝে দেখি।’

‘ওয়েল তোমার যখন ডিজনিল্যান্ড ভালো লাগে। তাহলে ওখানেই যাবো।’

‘কিন্তু কবে এবং কখন?’

‘উম এই উইকেন্ডে যাই?’ বলল রায়েদ।

মাহীন ভেবে বলল,’এটা মেয়ের আট তারিখ। ইট মিনস চৌদ্দ তারিখ। হুম সমস্যা নেই।’

‘সময়টা তুমি বলো।’

‘বিকেল পাঁচটা। কারণ ভর দুপুরে মা বের হতে দিবেন না। এবং সকাল থেকে অনেক রোদ থাকে এবং গরমও বেশি থাকে।’

‘তা ঠিক। তাহলে বিকেল পাঁচটায় কোনো সমস্যা হবে না তো?’

মাহীন ইতস্তত করে বলল, ‘তেমন একটা না। যদিও সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরলে মায়ের কাছে একটু বকা খেতে হয়। গত দুইবারের জন্য আজকের সকালেই ধরেছিল। কিন্তু সত্য কথা বলে বেঁচে গিয়েছি।’

‘মানে? কি বলেছো?’

‘কী আবার একদিন তোমার বাড়ি গিয়েছিলাম আরেকদিন তোমার সাথে প্যাসিফিক পার্ক ব্রিজে গিয়েছিলাম।’

‘সিরিয়াসলি আর আন্টি তোমাকে কিছুই বলেনি?’

মাহীন শ্রাগ করে বলল,’নাহ বলেনি। কারণ তুমি হচ্ছো গিয়ে মায়ের ফেভারিট মানুষ। মানে তোমার সাথে ছিলাম শুনে তো মনে হয় মা আরো নিশ্চিন্ত হয়েছেন যে, তোমার সাথে ছিলাম!’

রায়েদ হেসে উঠল। বলল,’আন্টি আমাকে এত স্নেহ করেন কেন?’

মাহীন মুখ টিপে হেসে বললো, ‘সেটা তো মাই বলতে পারে।’

ইনশাআল্লাহ চলবে।