এ কেমন ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
522

#এ_কেমন_ভালোবাসা
পর্ব-০৩
লেখিকা-#খেয়া

চিঠিতে কী লেখা আছে, রাত।

রুদ্ধ ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল কথাটা।আমার তো ভয়ে অলরেডি গলা শুকিয়ে গেছে।

—- বিশ্বাস করেন রুদ্ধ ভাইয়া,আমি সত্যি এসবের কিছু জানিনা।

—- তুমি কী একজনের সাথে অন্যজনের প্রেম করিয়ে দিয়ে কমিশন পাও।

—- না মানে,আসলে ফারহান দীপাকে পছন্দ করে। আর দীপার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। তাই আমাকে বলেছিল যেন ওর সাথে দীপার একটু সেটিং করিয়ে দেয়।

—- এই ইডিয়েট মেয়ে, সেটিং কী ধরনের ল্যাংগুয়েজ।

—- সরি,সরি ভাইয়া। আর বলব না।

—-ওকে, গিয়ে পড়ায় মন দাও।এভাবে পড়লে মেডিকেলে চান্স পাওয়া হবেনা,বুঝেছো।

—- হুম।

অনেকক্ষণ ধরে বই নিয়ে বসে আছি।অনেক পড়েছি।আর পড়তে ইচ্ছে করছেনা।এবার তো মাথায় সব পড়া তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
একটু পরে দীপ্ত আমার রুমে এলো।এসে আমার সামনে চেয়ার টেনে বলল

—- কী ব্যাপার বলোতো।তোমার আর ভাইয়ার মাঝে কী চলছে,হুম।

—- কী চলছে মানে? একটু ক্লিয়ার করে বলবা প্লিজ।

—- কাল নিহা আপুর কথায় তোমার খারাপ লেগেছে, তাইনা।খারাপ লাগারই কথা।কাল তোমাকে এসব কথা বলার জন্য ভাইয়া নিহা আপুকে অনেক কথা তো শুনিয়েছে সাথে একটা থাপ্পর ও মেরেছে তাকে।

—- কীহহহহ,,

—- আরে লাফাও কেন।আমি সিরিয়াসলি বলছি।আর আজ তো ভাইয়া ফারহানকেও নিষেধ করেছে তোমার আশে পাশে আসতে।ভাইয়া তোমার ওপর এত প্রোটেকটিভ কেন বলোতো?

—- আমি কী করে জানবো।আচ্ছা তুমি কী জানো রুদ্ধ ভাইয়া কাকে ভালোবাসে।

—- না, সেটা তো জানিনা।তবে ভাইয়া আমাকে একবার বলেছিল যে,তার লাইফে এমন একজন এসেছে যার মায়ায় সে পুরোপুরি ডুবে আছে।এখন ভাইয়ার এমন কথার কী মানে হতে পারে বল।

“দীপ্তর এমন কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো।রুদ্ধ ভাইয়া সত্যি কাউকে ভালোবাসে।”

—- এই যে, রাত।কী ভাবছ।

—- না কিছু না।

—- তোমার নামটা কে রেখেছিল বলোতো। মানে তোমার নামে রাতও আসে আবার রাত্রিও আসে।আরাত্রি! কিউট নেম।

—- হুম।বাবা রেখেছিল নামটা।

—- ওহ।তুমি পড়ো, ভাইয়া আবার পড়া না পারলে কিন্তু খুব রেগে যায়।

—- হুম।

একটু পর রুদ্ধ ভাইয়া এলো।আমিও ভালোমতো সব পড়া দিলাম।একদম বেশি কথা বললাম না।রুদ্ধ ভাইয়াও চুপচাপ পড়িয়ে চলে গেলো।

—————–

সবকিছু নরমালি চলছে।দিন চলেছে তার আপন নিয়মে। আমার এডমিশন টেস্টের আর বেশি দেরি নেই।একদিন মন প্রাণ দিয়ে পড়েছি।রুদ্ধ ভাইয়াও যথেস্ট হেল্প করেছে।তবে একদিন আমি রুদ্ধ ভাইয়াকে যথাসম্ভব এড়িয়ে গেছি।তাকে একতরফা ভালোবেসে কষ্ট পেতে চায়না আমি।
তবে একদিন একটা জিনিস আমি প্রায়ই খেয়াল করেছি রুদ্ধ ভাইয়া কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।সে চাহনিতে শুধু একরাশ মুগ্ধতা থাকে।

আজ আমার এডমিশন টেস্ট।কাল বাবা এসেছে।আজ আমার সাথে হলে বাবা আর রুদ্ধ ভাইয়া এসেছে।তারা আমায় একদম টেনশন ফ্রি থাকবে বলছে।কিন্তু আমি একদম শান্ত হতে পারছিনা।খুব টেনশন হচ্ছে আমার।
মেডিকেলে পড়ার শখটা আমি গত দশ বছর ধরে নিজের মধ্যে পুষে এসেছি।সে ইচ্ছেটা পূরন হবে তো?

পরীক্ষা দিয়ে এসেছি অনেকক্ষণ।পরীক্ষা খুব বেশি ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে।বাবা দুপুরেই চলে গেছে।এখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে।অথচ আমার টেনশন এখনও কম হয়নি।রেজাল্ট পাবলিশ না হওয়ার পর্যন্ত ঘুম আসবেনা।
আর ওদিকে দীপ্ত খুব চিল মুডে আছে।ওর নাকি মেডিকেলে পড়ার কোনো শখ নেই।

কিছুক্ষণ পর রুদ্ধ ভাইয়া এসে বলল

—- রেডি হয়ে যাও, রাত।চলো বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।তোমার মাইন্ড ফ্রেশ হয়ে যাবে আর টেনশনও কমে যাবে।

—- আপনি সত্যি আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন?

—-হুম।

—- রাত,তুই যা।তোর মনটাও ভালো হয়ে যাবে।

—- আচ্ছা মামনি।

আমিও লাফাতে লাফাতে রেডি হতে চলে গেলাম।রুদ্ধ ভাইয়া যেই শাড়িটা দিয়েছিলেন সেটা পড়ে সুন্দর মতো তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম।আজ সিরিয়াসলি আমায় খুব সুন্দর লাগছে।যদিও নিজের সুনাম নিজের করা উচিত নয়।

—-আরে, আমার রাত মাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।একদম পরীর মতো।

—- ধন্যবাদ মামনি।

—- তুই যা,রুদ্ধ বাইরে গাড়ির কাছে আসে।

—- হুম।

বাইরে এসে দেখি রুদ্ধ ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে মোবাইল স্ক্রলিং করছে।আমাকে দেখা মাত্রই উনি খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।তার চোখে এত মুগ্ধতা আমায় মেরে ফেলতে যথেষ্ট।

—- চলেন, ভাইয়া।

—- হুম চলো।

—-কোথায় যাবে বলো?সন্ধ্যার টাইমে হাতিরঝিলে যাওয়া যায়।তোমার ভালোলাগবে জায়গাটা।

—-আচ্ছা সেখানেই চলুন।

অনেকক্ষন পর আমরা হাতিঝিলে এসে পৌঁছালাম।সত্যি জায়গাটা খুব সুন্দর।চারিদিকে এত রংবেরঙের আলো এত মানুষ দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেলো।

রুদ্ধ ভাইয়া আর আমি বেশ খানিক্ষন ঘুরলাম।আজকের দিনটাকে নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন মনে হচ্ছে।নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে সময় কাটানোর আনন্দটাই অন্যরকম।

ইদানিং কেন জানি রুদ্ধ ভাইয়ার ব্যবহারে আমার সন্দেহ হয়।উনি কী আমায় পছন্দ করেন।তাহলে উনার লাইফে অন্য একজন আছে।

—- এই যে চিন্তামনি এত কী ভাবো সারাদিন।

—- কিছুনা।

—-ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত না।

—- মানে?

—- আজ রাতে আমার কাছেও একটা রাত আছে।আমার রাত।

—- আমার রাত? মানে?

—- হুম,এই রাত একান্তই আমার।তবে তোমার পিচ্চি মাথায় এটা ঢুকবেনা, পিচ্ছি।

—- আমাকে আপনার কোন এঙ্গেলে পিচ্চি মনে হয়।

—- তা নয় তো কী।তুমি সত্যি পিচ্চি।তাহলে এতদিন কবে আমার মনের কথা বুঝে যেতে।

—- কিছু বললেন।

—- না।অনেক রাত হয়ে গেছে চলো বাসায় যায়।আম্মু টেনশন করবে।

—- হুম চলেন।

—————–

আজ এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট দিবো।প্রচন্ড টেনশনে আছি।সকাল থেকে বাবা- মা কম হলেও দশবার ফোন দিয়ে বলেছে টেনশন ফ্রি থাকতে কিন্তু আমি পারছিনা।জানিনা কী হবে।
ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছি।আজ আংকেলও হাসপাতালে যায়নি।

রুদ্ধ ভাইয়া রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছে।আর আমি বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।কিছুক্ষন পর রুদ্ধ ভাইয়া বলল

—- রাত, তুমি আসলে মেডিকেলে চান্স,,,

রুদ্ধ ভাইয়ার কথা শুনে বুঝেনিলাম যে আমি মেডিকেলে চান্স পায়নি। আমি এবার কেঁদেই দিলাম।রুদ্ধ ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল

—- আরে পাগলি, কাঁদছ কেন? তুমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছো।তোমার চান্স হয়ে গেছে।

এবার আমি আরো বেশি কেঁদে দিলাম।তবে এ কান্না আনন্দের। হয়ত এবার আমার স্বপ্ন আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে।

আংকেল এসে আমার পাশে বসে বললেন-

—- তোমার এত ভালো রেজাল্টের জন্য আমাদের কাছ থেকে একটা গিফট কিন্তু তোমার পাওনা রইল।তবে রেজাল্ট ভালো হয়েছে তোমার। কিন্তু গিফট কিন্তু আমাদের চায়।

—- আচ্ছা,আংকেল। কী গিফট চায় তোমাদের।

—- সেটা সময় এলেই বলল।তুই আমাকে কাল বলেছিলি না তুই বাসায় যেতে চাস। কাল আমি তোর বাবা আর মাকে এখানে আসতে বলেছি।কাল ওরা এলে তুই তারপর ওদের সাথেই যাস, কেমন?

—- আচ্ছা,আংকেল।

আমার কথা শেষ না হতেই রুদ্ধ ভাইয়া উত্তেজিত হয়ে বলল

—-চলে যাবে, মানে।তো সামনে কিছুদিন পর থেকে রেগুলার ক্লাস শুরু যাবে।

—- হ্যা, তখন ভালোমতো একটা হোস্টেল দেখে উঠে
যাবে।

রুদ্ধ ভাইয়াকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই কথাটা উনার মনমতো হয়নি।কিন্তু আংকেল আর আন্টির মুখে এখনো মুচকি হাসি বিদ্যমান।যার অর্থ খুব অন্যরকম।

আজ আমার মনটা খুব ভালো।আমি রুমে গিয়ে বাবা- মায়ের সাথে কথা বলে নিলাম।এখন খুব শান্তি শান্তি লাগছে।আমি বাসায় যাবে বলে এখন থেকেই ব্যাগ গোছানো শুরু করেছি।গুনগুন করে গান গায়ছিলাম আর জামা কাপড় গোছাচ্ছিলাম।তখনই রুদ্ধ ভাইয়া আমার রুমে এসে বলল

—- ব্যাগ গোছানো লাগবেনা তোমার।বাসায় যাওয়াও হবেনা তোমার।কারণ,,,,

—- কী কারণ?

—- না কিছুনা।

রুদ্ধ ভাইয়া কিছু না বলেই চলে গেলেন।আমি নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।আচ্ছা আমি চলে গেলে কী উনি আমায় মিস করবেন?
এতদিনে কী আমার প্রতি উনার একটুও ফিলিংস জন্মায়নি?

দুপুরে আন্টিকে টুকটাক রান্নার কাজে হেল্প করে এসে গোসল করে নিলাম।বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি দীপ্ত আর ক্যান্ডি বিছানায় সে আছে।আমি দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বললাম

—- কী চায়?

—- তোমার একটা ওড়না।যেটাতে তোমার গাঁয়ের গন্ধ আছে।তুমি তো কাল চলে যাবে।তাই ক্যান্ডির জন্য চাইছিলাম, আরকি।

নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।কোনো একজন তো আমায় এত পছন্দ করে।

(চলবে)